কবিরাজ কাহিনি-২ ( শেষ পর্ব)

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৩/০৬/২০১২ - ৯:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবিরাজ কাহিনি-১
শুয়ে পড়েছি যে যার বিছানায়। কিন্তু লাইট নিভাইনি তখনো। সাম্যের মাথায় চিন্তার ঝড় তখনো বয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি। আমার মাথাও থেমে নেই।

অনেক অনেক ঘটনা একসাথে জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কবিরাজের ভেলকি, রায়হান নামের রহস্যময় লোকটা, সার্কাসের কারেন্ট কাণ্ড, চাকু ছুঁড়ে ভয় দেখানো- সব সূত্রগুলো জোড়াতালি দিয়ে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই একটার সাথে একটা মেলাতে পারছি না।

ব্যাগ থেকে 'প্রোফেসর শঙ্কু' সংকলনটা বের করে পড়ার চেষ্টা করলাম। পারলনাম না। ঘুম এসে জেঁকে বসেছে দু'চোখে। সাম্যের দিকে তাকিয়ে দেখি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে একটা টিকটিকি একটা মথ পোকাকে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনে হচ্ছে সাম্য সেটাই দেখছে। কিন্তু আমি জানি ও চিন্তার জগতে ডুবে আছে।

আমি বিছানা থেকে উঠে জামাটা খুলে আলনায় রাখতে যাব, দেখি পকেটে টাকার মতো কী যেন রয়েছে। বের করে দেখি, সার্কাসের টিকিট। এনুমামার বিশেষ পাশের টিকিট। অবহেলাভরে টেবিলের ওপর রাখলাম সেটা। হঠাৎ সাম্য ভূত দেখার মতো চেঁচিয়ে উঠল, 'আসিফ! টিকিটটা আমাকে দে-তো!'

আমি ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম। কিছু আন্দাজ করতে না পারলেও টিকিটটা দিলাম ওর হাতে। ও কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। তারপর বলল, 'সার্কাসটার নাম কী বলত?'

'কেন, রয়্যাল ব্যাঙ্গল সার্কাস!' বেশ অবাক হলাম আমি এ প্রশ্ন কেন?

ও বলল, 'হয়নি?'

'তাহলে?'

'দ্য রয়্যাল বেঙ্গল সার্কাস।'

ওই হলো, 'যে লাউ সেই কদু।'

'উহু, লাউ কদু এক নয়।' হালকা মেজাজে বলল সাম্য। 'লাউ গোলগাল, কদু লম্বা।'

'তাতে কী?'

'সেদিন এনুমামার বাড়িতে যে ছবিগুলো দেখেছিলি মনে আছে।'

'আছে।' জবাব দিলাম। 'এর মধ্যে পাঁচটা কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতে ওঠা।'

'পাঁচটা নয়, চারটে। একটা হোটেলের লবিতে ওঠা।'

'হুঁ হুঁ, মনে পড়েছে।’ বেশ জোর হয়ে গেল কথাটায়। 'গ্রুপ ছবি।'

'গ্রুপের পেছনের দেয়ালে একটা ব্যানার ছিল মনে আছে?'

'আছে।' বললাম আমি। ‘ব্যানারে লেখা ছিল 'আনন্দ ভ্রমণ : কক্সবাজার ১৯৮২।'

ও বলল, 'এই তো। এমন স্মরণশক্তিই তো চাই গোয়েন্দা সহকারীর! ব্যানারের লোগোতে কী লেখা ছিল মনে আছে?'

এবার আমি ধরা খেয়ে গেলাম। লোগোতে কয়েকটা ইংরেজি শব্দ ছিল। কিন্তু কী ছিল মনে নেই। সাম্যই মনে করিয়ে দিল। 'টি আর বি এস এল' তারপর টিকিটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, 'দেখ, এটা কী।'

টিকিটের দিকে তাকিয়ে দেখি সেই একই লোগো এবং তাতে লেখা- ‘টি আর বি এস এল’।

'তার মানে দ্য রয়াল বেঙ্গল সার্কাস... ' আমি আটকে- গেলাম, সাম্য সেটা ছাড়িয়ে দিল- 'লিমিটেড' ।

'তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো...?' জবাবের আশায় আবার সাম্যের চোখে চোখ রাখলাম। '৮২ সালের ঐ আনন্দ ভ্রমণটা ছিল এই সার্কাস পার্টির? তার মানে, সেকাল থেকেই এনুমামার সাথে সার্কাস পার্টির সম্পর্ক?'

জবাব পেলাম না। সাম্যের মোবাইলটা বেজে উঠেছে। ফোন রিসিভ করল ও। ওপাশের কণ্ঠটা শুনতে পেলাম না। সাম্য যা বলল-

'তাই।'

'ঠিক আছে। তুই খেয়াল রাখিস কে কে আসে?'

'ওরা রওনা দেয়ার পর তুইও আসিস তবে কেউ যেন না জানে।'

ফোন কেটে দিল সাম্য।

'কে রে?' আমি কৌতুহল দমন করতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।

'রকিব। ওকে কাল আসতে বললাম। কবিরাজের খেল খতম হবে কালই। তবে রকিবের নামটা যেন একবারও উচ্চারণ করবি না। আমার সামনেও না কারও সামনেই না।'

'ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাপারটা কী বলবি তো!'

'এখনই বলতে পারব না। রহস্যের জট এখনো ছাড়েনি। তবে সকাল হতে হতে ঠিক ছাড়িয়ে ফেলব। তুই এখন ঘুমো।'

ঘুম আসত কিনা জানি না। সদ্যই বড় অসুখ থেকে সেরে উঠেছি। ডাক্তারের ওষুধ চলে আজও। ঘুমের দিকেও তারা নজর রেখেছেন।

ছয়

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, সাম্য ঘরে নেই। ঘুম থেকে উঠতে যে দেরি করে ফেলেছি তাও নয়। রিমি মামি অর্থাৎ একরামূল মামার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি জানালেন, তিনি কিছুই জানেননা। আমি ওর মোবাইলে কল দিলাম। ফোন বন্ধ। চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিছু হলো না তো?'

সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবারের সময়ও পার হয়ে গেল। এর মধ্যে কয়েকশ' বার ফোন দিয়েছি। সংযোগ পাচ্ছে না। কিছুটা রাগ হলো। আরে বাবা একা একাই যদি গোয়েন্দাগিরি করবি তাহলে আমাকে আনা কেন? অন্তত মামিকে একটা কথা জানিয়ে যেতে পারতিস!

এনুমামাকে ফোন দিলাম। তিনিও জানেন না। তাকে একবার আসতে বললাম, কিন্তু তিনিও নাকি বাসায় নেই। কী কাজে বাইরে আছেন। এখন আসতে পারবেন না বা বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যাবে না। শেষমেষ একরামূল মামাকে ফোন দিলাম। হাসপাতালে শতেক ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি আমার কল রিসিভ করলেন। আমাকে চিন্তা করতে নিষেধ করে জানালে, কী একটা কাজে নাকি সাম্য চুয়াডাঙ্গায় গেছে। বিকেল তিনটের সময় আমার মোবাইলে সাম্যের কলা এলো। আমি মেজাজ দেখিয়ে দু-একটা কড়া কথা বলব ভেবেছিলাম। ও তাড়াহুড়ো করে বলল, 'শোন, এক্ষুনি কবিরাজের বাড়িতে চলে যা। রকিবও থাকবে ওখানে। কিন্তু মনে রাখিস, এমন ভান করবি যেন তোরা কেউ কাউকে চিনিস না।'

কথাগুলো কোনোরকম শেষ করেই ও লাইন কেটে দিল। আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল। তবে ওর কথামতো গেলাম কবিরাজের বাড়িতে।

আজ ভিড় কম। আজ চুয়াডাঙ্গা জেলার রোগি দেখবে। চুয়াডাঙ্গার চেয়ে আমাদের গ্রাম কবিরাজের বাড়ি থেকে অনেক অনেক দূর। তাই চুয়াডাঙ্গার রোগি কম দেখে অবাকই হলাম। ছোট খাটো একটা জটলা। আধঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে রোগি। ভিড়ের মধ্যে এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজলাম। কিন্তু সাম্য বা রকিব কাউকেই পেলাম না। কবিরাজ মহিলা আমাকে দেখেও দেখল না। অগত্যা জটলার পেছনে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে লাগলাম।

মিনিট দশেকের মধ্যেই রকিব এসে হাজির। আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম। ও চোখ সরিয়ে নিল। ওর সাথে গোঁফ দাঁড়িতে ভূষণ হওয়া এক হ্যংলা লোক। সিরিয়ালে নাম লেখানোর সময় লোকটা বলল, 'আমার এই ভাগ্নে রোগি।'

সেদিনের সেই ভোম্বলমতো লোকটা ওর হাতে একটা নম্বরযুক্ত টোকেন ধরিয়ে দিল।

মিনিট দশকের ভেতরে কবিরাজের উঠোন একেবারে খালি হয়ে গেল। সিরিয়াল এলো রকিবের। মহিলা ওকে দেখে যেন চিন্তায় পড়ে গেল। 'তোমার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার কোট পাড়ায়।'

রকিব বলল, 'হয়নি, ঠিক করে বলুন।'

'তাহলে উজিরপুর।' মহিলা মিনমিন করে বলল

'এখনো হয়নি। যাক, আমার নামটা বলুন।'

'শহিদ।' জবাবে বলল কবিরাজ মহিলা।

'নামটাও ঠিক হয়নি। আমার অসুখটা কী? বলুন।'

'তোমার- তোমার-' মহিলা রীতিমতো তোতলাতে শুরু করল। 'তোমার আমাশয় আছে। পাঁচ বছর ধরে ভুগছ। কোমরে ব্যাথাও আছে।'

'জীবনে কখনো পেটের পীড়া হয়নি আমার।' জোর গলায় বলল রকিব। 'আবার গাছেও চড়তে পারি বাঁদরের মতো। অতএব আমার কোমরে ব্যাথা হওয়ার সুযোগই নেই।'

'আছে।' মহিলার গলা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। 'তুমি বুঝতে পারো না। কোমরের ব্যাথাও আছে। ছোটবেলায় তোমার মা কোমরে শরিষার তেল ডলতে গিয়ে ব্যাথা পাইয়ে দিয়েছিল। সেই ব্যাথা আজও আছে।'

'না নেই।' দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিল রকিব।

'আছে, তুমি মিথ্যে বলছ। আমাকে ফঁসাতো চাও না?' বলে তাকালো ভোম্বলমতো লোকটার দিকে।

ভোম্বল ও আরেকজন সহকারী এসে রকিব ওর মামাকে হাত ধরে টানতে টানতে বের করে দিল। ওরাও ভালো মানুষের মতো কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা মাইক্রোবাসের হর্ন শুনতে পেলাম। দশ-বারোজন লোক ঢুকল কবিরাজের বাড়িতে। একি! সবাইতো আমার চেনা লোক। আমাদের গ্রামের। আজ তো আমাদের গ্রামের রোগি দেখার কথ নয়! তবে?

দশবারোজনের দলের আগে আগে রয়েছে আবুল হাসেম নামের লোকটা। ইনিই আমাদের গ্রামের প্রথম রোগি। তাঁর রোগ সারার পরই গ্রামে কবিরাজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে যে-ই আসে আবুল হাসেমের কাছে কবিরাজের খোঁজ খবর নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে বিশেষ অনুরোধে আবুল হাসেম নিজেও আসেন। আজ যেমন এসেছেন। বাকি দশ বারো জন লোকের বেশিরভাগই গাঁয়ের খেঁটে খাওয়া মানুষ। দুই-একজন গৃহস্থ ধরনের। আবুল হাসেমের হাতে একটা র‍্যাপিং মোড়ানো বাক্স। আমাকে দেখে তিনি বললেন, 'আরে আসিফ! তুমি কখন এসেছ? আমাকে জানালে এক সাথে আসতাম।'

'আমি এসেছি গত বৃহস্পতিবারে।' জবাবে বললাম। 'সাম্যের সাথে কাটাখালি গ্রামে সাম্যের এক মামার বাড়িতে আছি।'

আমার কথা শেষ হতে না হতেই সাম্য এসে হাজির। আবুল হাসেমকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে দুম করে একটা প্রশ্ন করে বসল, 'আমাদের গ্রামের রোগি তো আজকে দেখার কথা নয়। আপনারা এলেন যে?'

আবুল হাসেম সাময়িক ভড়কে গেলেন। পরক্ষণে সামলে নিয়ে বললেন, 'আজ চুয়াডাঙ্গা জেলার রোগি দেখেন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার রোগি কম তাই বিশেষ অনুরোধে রাজি করিয়ে কিছু রোগি এনেছি।'

'চুয়াডাঙ্গায় রোগি কম না আপনারর মতো আবুল হাসেম নেই?' মুখের ওপর টাটকা কথাটা বলে দিল সাম্য।

ভেবেছিলাম লোকটা রেগে যাবেন। কিন্তু রাগলেন না। বরং মোলায়েম গলায় বললেন, 'আমি আসি কেন? মানুষের যদি কিছুটা উপকার হয় এজন্য। নতুন রোগিরা তো এই জায়গা ভালো চেনে না তাই আমাকে ধরে।'

'আপনার হাতে ওটা কী?' সাম্যের তীর্যক প্রশ্ন।

লোকটা থতমত খেয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে বলল, 'আমাদের গ্রামের এক ধনি লোকের অসুখ সেরেছেন কবিরাজ আম্মা। ধনি লোকটা তার নাম ছড়াতে নিষেধ করেছেন। তাই নাম বলছি না- কবিরাজ আম্মাকে তিনি কিছু উপহার পাঠিয়েছেন।'

'কিন্তু আমি তো জানি আপনার কবিরাজ আম্মা কারো উপহার নেন না। এই তো সেদিনও এক লোককে ফিরিয়ে দিলেন।'

'হ্যাঁ নেন না। তবে যার প্রতি তিনি বেশি সন্তুষ্ট থাকেন তার উপহার তিনি গ্রহণ করেন।'

'আচ্ছা, আপনার কবিরাজ আম্মা কী সত্যিই অন্তর্যামী, মুখ দেখেই লোকের নাম ধাম বলে দিতে পারেন?'

'হ্যাঁ পারেন। কেন তোমাদের নামধান বলতে পারেননি?'

'পেরেছেন,' সাম্য জবাব দিল। 'তবে রকিবেরটা পারেননি।'

'রকিব কে?' আবুল হাসেমের প্রশ্ন।

'এই রকিব! এদিকে আয়।'

রকিব আমাদের থেকে একটু দূরে ছিল। সাম্য ডাকতেই কাছে এলো।

'একে চেনেন?'

'চিনি।' আবুল হাসেমের ছোট্ট জবাব।

'এর পরিচয় বলতে পারেননি আপনার কবিরাজ আম্মা।'

'কী জানি? হয়তো ওই সময় ‘তেনা’রা আশে পাশে ছিলেন না?'

'তেনারা কারা?' এবার আমি মুখ খুললাম।

'জ্বিনে হুজুর-রা আর কি!'

ওদিকে থেকে আবুল হাসেমের ডাক পড়ল। তিনিও সটকে পড়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। 'শোনো তোমাদের সাথে পরে কথা বলছি, আগে ওই রোগিদের ব্যবস্থা করে আসি।'

'সাম্য, আসিফ! তোমরা এখানে? হে হে হে... অথচ আমি তোমাদের খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে, গেছি বুঝলে কিনা...' এনুমামরও আবির্ভাব ঘটল।

'মামা, আপনি সারাদিন কাথায় ছিলেন?' আমার প্রশ্ন।

'আর বোলো না! ব্যস্ত ছিলাম। জমি-জায়গা নিয়ে একটা ফ্যাসাদ আছে। মেহেরপুর যেতে হয়েছিল... বুঝলে কিনা তোমার ফোন পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। তাই কাজ ফেলে ছুটে এলাম। হে হে হে...'

'মামা, আপনার কবিরাজ কিন্তু ধরা খেয়ে গেছে।'

'মানে!' চমকে উঠলেন এনুমামা।

'এ হচ্ছে রকিব।' এনুমামার সাথে রকিবের পরিচয় পর্বটা শেষ করল সাম্য। 'আমাদের বন্ধু। এর নাম ঠিকানা কিন্তু বলতে পারেননি কবিরাজ মহিলা।'

'কিন্তু তোমাদেরটা তো পেরেছিল।'

'মনে হয়, আমরা এখানে আসব কবিরাজ আগেই জানত। সব রোগিদের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটে। কিন্তু মহিলার কাছে রকিব একেবারে অচেনা। তাই ওর নাম ঠিকানা বলতে পারেনি।'

'তার মানে কেউ আগে থেকে জানিয়ে দেয়, বলছ?' এনুমামা বললেন।

'হ্যাঁ, সাম্যের জবাব। 'যেসব গ্রামে তার নাম ডাক আছে সেসব গ্রামে মহিলার এজেন্ট আছে। তারাই বলে দেয়।'

'তোমাদেরটা কে বলেছে বুঝতে পেরেছ।'

'নিশ্চিত নই, তবে আবুল হাসেম নামে একটা লোক আমাদের গ্রামের রোগিদের নিয়ে আসে, সেই লোকও হতে পারে।'

'কিন্তু এতে কবিরাজের কী লাভ। সে তো টাকা পয়সা নেয় না।'

'লাভ, আজকে দেখলাম আবুল হাসেম একটা বড় প্যাকেট উপহার নিয়ে এসেছে। কোনো এক বড়লোক রোগি নাকি পাঠিয়েছে উপহারটা। মাসে এরকম দু-চারটা উপহার সে পায়। তাই অন্য রোগির কাছ থেকে ফিস না নিলেও দিব্যি চলে যায়।'

'এতো রোগির নাম ঠিকানা এজেন্টের মুখে শুনে গড়গড় করে বলে যাওয়া কি সম্ভব?' এবার আমি সাম্য কে প্রশ্নটা করলাম।

'সেটাও বুঝতে পেরেছি, কীভাবে করে। ইচ্ছে করলে এখন ভরা মজলিশে বলেও দিতে পারি। কিন্তু ঝুঁকি আছে। এলাকাটা ভালো নয়। তাছাড়া কবিরাজের সহযোগীরাও তার আশেপাশে আমাদের আর ঘেঁষতে দেবে বলে মনে হয় না।'

'তুমি অবশ্য যুক্তির কথাই বলেছ-' এনুমামা বললেন। 'তাছাড়া পুলিশের সাহায্যও পাবে না বুঝলে কিনা ... এতবড় ব্যবসা যে ফেঁদে বসেছে নিশ্চয়ই সে পুলিশের শেল্টার পায়... বুঝলে কিনা...'

'ঠিকই বলেছেন মামা।' সাম্য বলল। 'মহিলাকে এভাবে ধরতে যাওয়া বোকামী হবে। তার চেয়ে আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো।'

'তাই যাও।' সাম্যকে সমর্থন করে বললেন এনুমামা। 'খামোখা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই... বুঝলে কিনা...'

সাম্য আর এনুমামার কথাবার্তা শুনে আমি হতাশ হলাম। তীরে এসে তরি ডুবল। সখ করে সাম্যের সাথে এসেছিলাম রহস্য সমাধান করতে। এভাবে খালিহাতে ফিরে যেতে হবে ভাবিনি। হঠাৎ আমার মনে পড়ল সার্কাসের কথা। সাম্যকে বললাম 'সার্কাসের ষড়যন্ত্রকারীদেরও তো ধরতে পারি সাম্য?'

'না না, তার আর দরকার হবে না।' সাম্যকে সুযোগ না দিয়েই বললেন এনুমামা। ঝামেলা মিটে গেছে। বুঝলে কিনা...'

এনুমামার কথার ফাঁকে সাম্য চোখ ইশারা করে আমাকে চুপ করে যেতে বলল। আমিও আর কথা বাড়ালাম না।

'বরং চলো আজ আরেকবার স্রেফ সার্কাস দেখে আসি।' এনুমামা প্রস্তাব করলেন।

সাম্য রাজি হয়ে গেল। রকিবকে নিয়ে চললাম সার্কাস দেখতে।

সাত

সার্কাসে আগের দিনেরই পুনরাবৃত্তি। আজ আর অত ভালো লাগছে না। কিন্তু সাম্যকে দেখলাম তন্ময় দেখছে। অনেক কসরৎ দেখার পর যথারীতি শুরু হলো মধ্যবিরতী। এনুমামা চলে গেলেন ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে। সাম্যকে দেখলাম আমাদের গ্যালারির উত্তর পাশের একটা ছেলেকে তীক্ষè নজরে দেখছে। কেন? বুঝলাম না।

'আসিফ দ্যাখ, ছেলেটা ফোনে কথা বলছে। অথচ ওর হাতে মোবাইল নেই!'

'তাহলে হেডফোনে কথা বলছে।' আমি ঝটপট জবাব দিলাম।

'কিন্তু হেডফোনের তার কোথায়?'

'তাই তো?' খেয়াল করলাম ছেলেটার হেডফোন আছে ঠিক কিন্তু হেডফোনের কেবল নেই। সাধারণ হেডফোনে দু'কানের জন্য দুটো স্পিকার থাকে। কিন্তু এই ছেলেটার এক কানে মাত্র একটা স্পিকার। তাও ঠিক স্পিকারের মতো দেখতে নয়। কম্পিউটার পেনড্রাইভের মতো।

'এবার বুঝেছি!' সাম্য বলল। 'ওটা ব্লুটুথ হেডফোন। ওয়ারলেস। তাই তারের প্রয়োজন হয় না।'

তাই তো! ব্লুটুথ হেডফোনোর কথা আমারও জানা ছিল। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এসব সাধারণত কম দেখা যায়। তাই বস্তুটা এতোদিন চোখে পড়েনি।

'এখন বল তো,' সাম্য বলল, 'মহিলা কেন সব সময় আঁটোসাঁটো ঘোমটা দিয়ে থাকে।'

'কী জানি মাথায় খেলছে না আমা...' কথা শেষ করতে পারলাম না। সাম্য ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল, 'শশশ।'

চুপ হয়ে গেলাম। চোখ তুলে দেখি এনুমামা ম্যানেজারের সাথে দেখা করে ফিরে আসছেন। 'বুঝলে কিনা,' মুদ্রাদোষ দিয়ে শুরু করলেন এনুমামা। 'সার্কাসের সব ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেছে। এই ক'দিনে আর কোনো অঘটন ঘটেনি। হয়তো তোমাদের দেখেই। ওই যে রায়হান নামের লোকটা, আমাদের পেছনে ফেউয়ের মতো লেগেছিল। ওই লোকটাও সটকে পড়েছে। মানে তোমাদের ভয়ে হে হে হে... ভেবেছে সিআইডির সাথে যোগাযোগ আছে তোমাদের।'

সাম্য প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেল। ততক্ষণে খেলা আবার শুরু হয়েছে। আমরা খেলা দেখায় মন দিলাম।

শো শেষ হলো সাড়ে দশটার। বাসে উঠে সোজা দরবেশপুর স্টপেজে। ওখান থেকে কাটাখালি পাঁচ কিলোমিটার। রাত অনেক হয়েছে অটো মিশুক পাওয়া গেল না। খুঁজে পেতে একটা রিক্সা-ভ্যান মিলল। কিন্তু ভাড়া চাইল দ্বিগুন। অগত্যা তাতেই উঠে পড়লাম।

কৃষ্ণপক্ষের ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। চারদিকে ঘন গাছপালায় ঠাসা বুনো মাঠ। কোথাও কোথাও কসমষে অন্ধকার বাঁশাবন কারো হাতে টর্চ নেই। তবে ভ্যানের নিচে লাগানো হারিকেনের আলোয় পথের দু'পাশে ভুতুড়ে আলো-আঁধারির খেলা চলছে। মাঝে মাঝে গাছের-গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে দূরের কোনে বাড়ির বৈদ্যুতিক বাঁতির কাঁপা কাঁপা আলো। তক্ষক আর ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরাম কিড়িকিড়ি ডাক যেন রাতের নিস্তব্ধতা মুছে দেয়ার নিস্ফল প্রয়াস। বুনো ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে নিকষ কালো অন্ধকারের বুকে ফুটে আছে অজস্র জোনাকির তারা। দূরে কোথায় কোন মাঠের ভেতর 'হুক্কা হুয়া' স্বরে ডেকে উঠল এক পণ্ডিতজি। তার জবাবে আরেকটা। তারপর কয়েকটা। এরপর চারপাশে শুধু 'হুক্কা হুয়া' রব! 'শিয়াল যখন ডাকে সব মাঠেই ডাকে'- বাদটার প্রমাণ পেলাম আরেকবার। কী অদ্ভুত ওদের ডাকের যোগসূত্র!

যোগসূত্রের কথা মনে হতেই আনেকগুলো রহস্যের কথা মনে পড়ে গেল এক সাথে। কবিরাজের ভণ্ডামি, সার্কাসের ষড়যন্ত্র, আমঝুপির চাকু ছোঁড়া কাণ্ড, রায়হান নামের লোকটার রহস্যময় আচরণ। অন্ধকার রাস্তায় চলতে চলতে এমন সাতপাঁচ ভাবছি, হঠাৎ আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল, মনে হলো অন্ধকারে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে কোনো আততায়ী। এমনিতেই এলাকাটা সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য, তারপর মহামানবে পরিণত হওয়া এক মহিলা কবিরাজের অলৌকিক কর্মকাণ্ডে নাক গলিয়েছি। কেমন শিরশিরে অনুভূতি হলো দেহমনে। হঠাৎ আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সক্রিয়তা প্রমাণ করতেই যেন অন্ধকারের বুক চিবে ভেসে এলো একটা কণ্ঠ- 'থামো।'

টর্চের আলো পড়ল আমাদের ভ্যানের ওপর। তারপর আবার সেই অন্ধকারের আওয়াজ, 'একপাও নড়বে না। বুক ঝাঝরা হয়ে যাবে।' কণ্ঠটা থামতেই জ্বলে উঠল আরো কয়েকটা টর্চ। তবে সেগুলোর আলো আমাদের ওপর পড়েনি। পড়েছে রাস্তায় দাড়ানো কালো মুখোশ পরা একদল মূর্তির ওপর। সবার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। একটু এদিক-ওদিক হলে যে বুক ঝাঝরা হয়ে যাবে, সেকথা অবিশ্বাস করার কিছু নেই।

'এই যে নয়া শার্লক হোমস; তুমি নেমে এসো।' কর্কশ কণ্ঠটা সাম্যের উদ্দেশ্যে বলল। তারপর এনুমামার ওপর টর্চের আলো ফেলে বলল, 'হাড়গিলে বুড়ো মশাই, তুমিও নামো।'

তারপর আমার দিকে টর্চের মুখ ঘুরিয়ে বলল, 'তুমি থাকো, খোকা। তোমাকে আমার দরকার নেই। তাছাড়া কেবল তো অসুখ থেকে সেরে উঠেছো। যাও বাড়ি ফিরে বিশ্রাম করেগে। তোমার বন্ধুটিকে আর বিটকেল বুড়োটাকে নিয়ে গেলাম। আসলে এছাড়া আমার উপায়ও ছিল না।'

আমরা এখনো পর্যন্ত টুঁ শব্দটি করিনি। সাম্য আর এনুমামা ভ্যান থেকে নেমে পড়েছে। সাম্য আমার উদ্দেশ্যে বলল, 'ফিরে যা। আমাকে নিয়ে ভাবিসনে। কপালে যা আছে তাই হবে।'

ওর কণ্ঠ একেবারে স্বাভাবিক। ভয়ডরের লেশমাত্র নেই। টর্চের আলোয় এনুমামার চেহারাটা একবার দেখার সুযোগ পেলাম। ভয়ে আতঙ্কে একেবারে কুঁকড়ে গেছেন।

অস্ত্রধারীরা সাম্য আর এনুমামাকে একটা কালো রঙের মাইক্রোবাসে তুলল। মাইক্রোবাসটা এতক্ষণ চোখে পড়েনি। রঙের কারণে। ভয় আতঙ্কের মধ্যেও আমার মনে হলো গাড়ির নম্বর পেল্টটা দেখে নেয়া উচিত। কিন্তু হতাশ হলাম। পর্যাপ্ত আলো তো নেই-ই, তবু মনে হলো গাড়িটায় কোনো নম্বর-প্লেট নেই।

সাম্য আর এনুমামাকে নিয়ে চলে গেল গাড়িটা। হাঁ করে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই আমার। এতক্ষণ খেয়াল করিনি, দুজন অস্ত্রধারী রয়ে গেছে তখনো। এগিয়ে এসে তাদের একজন বলল, 'চলো খোকা, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। এই ভ্যানওয়ালা, চালা।'

একরামুল মামার বাড়ির ফটকে এসে অস্ত্রধারীরা ভ্যান থেকে নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। পাহাড় সমান কষ্টের বোঝা নিয়ে ঢুকলাম ঐ বাড়িতে। একা দেখে একরামূল মামা অবাক হলেন। গুছিয়ে বলতে না পারলেও অনেকটা সময় ব্যায় করে একরামুল মামাকে পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করলাম।

একরাশ আতঙ্ক এসে ছায়া ফেলল তার চেহারাতেও। তিনি থানায় ফোন করলেন, র‌্যাব ব্যাটালিয়নে ফোন করলেন। তারা আশ্বাস দিলো, দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাম্য আর এনুমামাকে উদ্ধার করতে সবরকম চেষ্টায় তারা করবে।

বিছানায় শুয়ে কি আর ঘুম আসে? নিজেকে মনে হলো এই দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যর্থ মানুষ। আমি যখন ক্যান্সারে ভুগছিলাম তখন সাম্যের বুদ্ধির জোরেই চিকিৎসার টাকা জোগাড় হয়েছিল। আজ ওর জন্য কিছু করতে পারব না!

র‌্যাব পুলিশের আশ্বাসেও আস্থা নেই আমার। র‌্যাব নামের দেশের দুর্ধর্ষ বাহিনির যত দাপটই থাকুক এই এলাকায় সেটা অচল, তা ভালো করেই জানি। বহু চেষ্টা করেও চোখের পনি আটকাতে পারলাম না। মানল না কান্নার বাঁধও।

আট

সাম্যদের ড্রয়িংরুমে আসর বসেছে। আসরের সভাপতি স্বয়ং সাম্যের ছোটমামা। স্কুলের দশবারোজন বন্ধুও আছে। আছে পাড়ার কিছু উৎসাহী মানুষও। কীভাবে কবিরাজ কাহিনির সমাপ্তি ঘটে সে গল্প শুনতে চায় সবাই। আরো তদন্ত আর নিরাপত্তার স্বার্থে গোপন রাথা হয়েছে ব্যাপাটা। মিডিয়া জানে কিডন্যাপাপদের হাতে এনুমামা এবং সাম্য এখনো বন্দী।

'প্রথমেই আসি কবিরাজের কথায়।' ব্যাখা শুরু করল সাম্য। ‘প্রাথমিক ঘটনা সবার জানা। তবে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম কবিরাজের অলৌকিক কার্যকলাপের কথা। কিন্তু গ্রামের লোক যেভাবে একের পর এক ভেঙ্গে পড়ছে তাতে কৌতুহল আর দমাতে পারলাম না। আমাদের কথা শুনেই কবিরাজ হড়বড় আমাদের নাম ধরে ডাকল, তখনই বুঝেছিলাম আমাদের খবর সে আগেই পেয়েছে। খবরদাতা যে জ্বিন নয়- এ বিশ্বাস আমার শতভাগ। প্রথমেই ভেবেছিলাম আমাদের গ্রামে তার এজেন্ট আছে, তারা যেভাবেই হোক জেনে গেছে আমাদের আসার কথা এবং তারাই জানিয়ে দিয়েছে।'

'কিন্তু চেহারা না দেখেই বলল কীভাবে?' বললেন পাশের বাড়ির করিমচাচা।

'ভেবেছিলাম ঘরের দেয়ালে কোথাও কোনো ফুঁটো টুটো আছে। সেখান থেকে দেখেছে।'

'তারপর?' বললেন এনুমামা।

'তারপর, যখন রোববার মহিলার সাথে আমরা দেখা করলাম তখন একটা বিষয়ে আমার খটকা লাগল। মহিলার মোবাইলে কল এসেছিল, সেইসময় ডান হাত দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল। অবাক হলাম আমি। ডান হাত দিয়ে যখন ফোন রিসিভ করল, তার মানে সে ডানহাতি। কোনো ডানহাতি মানুষ ফোন রিসিভ করে বাম কানে ধরে না। যদি ডান কানে কোনো সমস্যা থাকে তাহলে অন্যকথা। বুঝলাম, নিশ্চয়ই ডান কানে কোনো সমস্যা আছে বা বা বামকানে এমন কিছু আছে, ফোন ধরতে অসুবিধা হবে। সন্দেহটা যে ঠিক তার প্রমাণ পেলাম আঁটোসাটো ঘোমটার কারণে। এতো ভিড় সামলে সবসময় ঘোমটা ধরে রাখা অসম্ভব ব্যাপার। মনে হলো ঘোমটা সেফটি পিন দিয়ে ব্লাউজের সাথে লাগানো। দ্বিতীয় দিন রকিবকে নিয়ে গিয়ে সেই সন্দেহের প্রমাণও মিলল।'

'দাঁড়া, দাঁড়া!' ওকে থামিয়ে বললাম। 'এখানে একটা কথা থেকে যাচ্ছে। রকিববে নিয়ে তুই গিয়েছিলি মানে, ওর সাথে গোঁফ-দাড়িওয়ালা হ্যাংলামতো একটা লোক দেখেছিলাম!'

'ঠিকই দেখেছিস।' বলল সাম্য। 'তবে আমার ছদ্মবেশ ধরতে পারিসনি। যাক ভালোই হলো, ছদ্মবেশটা যে নিখুঁত হয়েছিল তার প্রমাণ অন্তত পেলাম।'

'ছদ্মবেশে!' হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি।

'হ্যাঁ ছদ্মবেশ।' বলে সাম্য আবার চলে গেল মূল প্রসঙ্গে। 'কানের সমস্যাটা যে কী কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না। শেষবার সার্কাসে গিয়ে বুঝে ফেললাম ব্যাপারটা।'

'কী ব্যাপার?' বললেন ছোটমামা।

সাম্য পকেট থেকে একটা ব্লুটুথ হেডফোন বের করল। কাটাখালি থেকে ফেরার সময় চুয়াডাঙ্গা নিউমার্কেট থেকে দুটো ব্লুটুথ হেডফোন কিনেছিল। একটা আমার জন্য, আরেকটা ওর।

'একটা ছেলে সার্কাসে এই হেডফোন দিয়ে কথা বলছিল।' বলল সাম্য। 'আসিফকে দেখিয়েও ছিলাম। কিন্তু এনুমামা ফিরে আসায় ওকে আর খুলে বলার সুযোগ পায়নি। আসলে এই হেডফোনই কবিরাজের জ্বিনে হুজুর।'

'মানে?' অবাক চোখে তাকালাম ওর দিকে।

'মানে, মহিলার ঘরের ভেতরও একটা মোবাইল আছে। আছে একজন অপরাটেরও। যেমন আমাদের গ্রামের কথাই যদি বলি, তবে আবুল হাসেমের কথা চলে আসে সবার আগে। সে রোগিদের কবিরাজের সামনে রেখে চলে যায় অন্যকোন খানে। সেটা এমন জায়গা যেন মহিলা কোন রোগি দেখছে, সে সেখান থেকে স্পষ্ট দেখতে পায়। আবুল হাসেম তার ফোন থেকে কল দেয় মহিলার ঘরে লুকানো ফোনে। মোবাইল অপারেটর সেটা রিসিভ করে সংযোগ দেয় মহিলার কানে লাগানো হেডফোনে। এখানে আবুল হাসেমই হলো আসল 'তেনা'রা অর্থাৎ জ্বিনে হুজুর।'

কথা শেষ করে সাম্য এবার ব্লুটুথ হেডফোনের কারিশমা দেখালো।

'আচ্ছা এটা না হয় কবিরাজের ফন্দি বুঝলাম। এনুভাইয়ের ভূমিকাটা কী?' মুখ খুললেন ছোটমামা।

'সত্যি বলতে কী?' আবার শুরু করল সাম্য। 'এনুমামা কবিরাজের ব্ল্যাক ম্যাজিকের কথা যখন বললেন তখনও আমি তাকে সন্দেহ করতে পারিনি। তবে কবিরাজ যখন হড়বড় করে সব বলে দিচ্ছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল কবিরাজ আমাদের নাম ঠিকানা জানার কথা নয়। আমরা গ্রামে কাউকে বলেও আসিনি। যে লোকটা কবিরাজকে আমাদের কথা বলেছে সে নিশ্চয়ই এনুমামামাদের বাড়ির লোক। সে আমাদের ভালো করেই চেনে।

আমঝুপিতে আমার মাথা লক্ষ্য করে যখন চাকু ছোঁড়া হলো তখনই বুঝলাম, দক্ষ লোক ছাড়া এতো নিখুঁতভাকে এ কাজ কেউ করতে পারে না। আনাড়ি লোক হলে আমার মাথায় লেগেও যেতে পারত। কিন্তু যে লোক তাকে পাঠিয়েছে সে তা চায়নি।

সার্কাসের চাকুবাজদের পক্ষেই কেবল এ কাজ করা সম্ভব। কিন্তু সন্দেহ করব কাকে। রায়হান নামের লোকটাও হতে পারে। তারপর যখন সার্কাসে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ঘটল, এনুমামা বললেন ষড়যন্ত্র চলছে। আবার রায়হান নামের লোকটার সাথে সেখানেও দেখা হয়ে গেল। তাছাড়া কবিরাজের বাড়িতেও ছদ্মবেশে তাকে দেখেছি। চাকু ছোঁড়ার সময় সে নীলকুঠিতেই ছিল। তখন লোকটাকে আর সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখতে পারলাম না। সেই সাথে একটা ব্যাপারেও নিশ্চিত হলাম সার্কাসের বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর কবিরাজের উদ্ভট কর্মকাণ্ড আর আমাকে চাকু ছোঁড়ার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে।

তারপর সার্কাসের টিকিটে যখন 'টিআরএসএল' লোগোটা দেখলাম, তখনি বুঝে ফেল্লাম কে আমার মাথা লক্ষ্য করে চাকু ছুঁড়েছিল। একই লোগো দেখেছিলাম এনুমামার পারিবারিক অ্যালবামে।

রাতে যখন একরামূল মামা হাসপাতালের ডিউটি শেষে ফিরলেন তখন তার কাছে জানতে চাইলম এনুমামা কখনো সার্কাস দলের সাথে যুক্ত ছিলেন কিনা। একরামুল নিশ্চিত জানাতে পারলেন না তবে, ১৯৭৮ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি নাকি নিরুদ্দেশ ছিলেন। আমার বুঝতে বাকি রইল না, এ সময় তিনি, 'দ্য রয়াল বেঙ্গল সার্কাস'-এ চাকরি করতেন। এবং ধরে নিলাম সার্কাসে তিনি চাকুবাজী করতে। এই ধরে নেয়াতে সুবিধা হলো আমঝুপিতে কে আমার দিকে চাকু ছুড়েছিল, সেটা নিশ্চিত হয়ে গেলাম।'

'তার মানে এনুভাই চাকু ছুড়েছিল, বুঝে গেলি।' ছোটমামা বললেন।

'হ্যাঁ এনুমামায় চাকু ছুঁড়ে আমাদের ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন, যেন আমরা এলাকা ছেড়ে চলে আসি।'

'তাতে তার লাভ?'

'লাভ! বলছি সে কথা। চাকু ছুঁড়েছে কে- সে কথা যখন বুঝলাম তখন অন্যসূত্রগুলোও এর সাথে জোড়া লাগাতে চেষ্টা করলাম। বিশেষ করে কবিরাজের ভণ্ডামি। ধরেই নিয়েছিলাম কবিরাজকে সরাসরি শেল্টার দেয় এনুমামা। এ থেকে তিনি একটা লাভের অংশ পান। কিন্তু আমরা গিয়ে তাকে ডিস্টার্ব করছি, তাই তিনি চাকু ছুঁড়ে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। যখন শুনলাম কবিরাজ টাকা পয়সা নেয় না তখন লাভের গুড় খাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হলো। তাহলে কী কারণে কবিরাজ মহিলাকে শেল্টার দিচ্ছেন তিনি- অন্যভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করলাম। কিন্তু সবকিছু তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছিল রায়হান নামের লোকটা। তবু একটা যুক্তি খুঁজে পেলাম। রায়হান যদি এনুমামার লোক হন তাহলে আমার চিন্তা ঠিক পথে এগোতে পারে।'

'রায়হান এনুমামার লোক হয় কী করে? তিনি ওকে দেখে চোখমুখ এমন করছিলেন যেন আপদ সরলেই বাঁচেন।' বললাম আমি?

'সেটা তার অভিনয়ও হতে পারে।' যুক্তি দেখালো সাম্য। 'পরে বুঝলাম অভিনয় নয়। সত্যিই লোকটাকে দেখে এনুমামা বিচলিত হচ্ছিলেন।'

'কেন?' ছোটমামার প্রশ্ন। প্রশ্ন আমারও।

'বলছি।' লম্বা একটা দম নিয়ে বলল সাম্য। 'লোকটাকে আমারও সন্দেহ হয়েছিল সে কথা আগেই বলেছি। আমি তক্কে তক্কে ছিলাম তাকে একা পাওয়া যায় কিনা। পেয়েও গেলাম। যেদিন সকালে আমাকে খুঁজে পাচ্ছিলি না, সেদিন। রাত দুইটার দিকে কে যেন আমার বিছানার পাশের জানালাটায় নক করে। 'কে?' জানতে চাইলে উত্তর এলো, তিনি রায়হান। আমি জানালা খুললাম তিনি আমাকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বললেন। আমি ভয় পেলাম না, ততক্ষণে প্রায় বুঝে ফেলেছি। আসল কালপ্রিট কে। তাই বেরিয়ে গেলাম তিনি আমাকে এমন কিছু তথ্য জানালেন তা আমরা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল। তাপপর তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন চুয়াডাঙ্গার ডিবি অফিসে। তারপর বললেন সব ঘটনা-

'এলাকায় হঠাৎ করেই স্বর্ণ, হীরা, মাদক বিশেষ করে ইয়াবা আর হিরোইন চোরাচালানের হার বেড়ে গেছে এবং সেটা রয়্যাল বেঙ্গল সার্কাসটা আসার পরই। আমরা এই এলাকার সব পুরেনো পত্রিকা আর জেলার অপরাধের নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছি যখনই সার্কাসটা এখানে আসে, তখনই এসব ব্যবসা বেড়ে যায়। কেন জানি সন্দেহ হলো সার্কাসের পেছনে অন্য ব্যবসাও জড়িত আছে। সার্কাসটা গত পাঁচ বছরে যেখানে যেখানে গেছে সব জায়গার তথ্য সংগ্রহ করলাম। ফল একই, যেখানেই সার্কাস সেখানেই চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম। শুধু তাই নয়, ওসব এলাকায় সন্ধান করে আরেকটি তথ্যও পেয়েছি। যেখানেই সার্কাস সেখানেই তোমাদের এনুমামার আনাগোনা। অতএব তোমার এনুমামাই হয়ে উঠলেন মূল সন্দেহভাজন।'

রায়হান সাহেবের বক্তব্য শেষ হলে আমি আমার এই ক’দিনের সব অভিজ্ঞতার কথা বললাম। বললাম কবিরাজ মহিলার ভণ্ডামি আর টেকনিকের কথা। তারপর বন্ধু রকিবের কথা বললাম। রকিব আমাকে আগেই জানিয়েছে আবুল হাসেম দলবল নিয়ে সকালে নাকি রওনা দেবে কবিরাজের বাড়িতে। সাথে থাকবে একটা উপহার বক্স। গ্রামের কোনো এক ধনী রোগি নাকি সন্তুষ্ট হয়ে গিফট বক্সটা পাঠিয়েছে। তাই গিফট বক্সটা যদি কব্জা করা যায় তবে অপরাধীরা বমাল ধরা পড়বে।

তারপর এনুমামাকে কীভাবে পাকড়াও করতে হবে সে ছকও কষলাম তাঁর সাথে বসে। কিডন্যাপ নাটকটাই পছন্দ হলো।'

'কিডন্যাপটা নাটক ছিল!' চরম বিস্মাভিভূত চোখে তাকালাম সাম্যের দিকে।

'হ্যাঁ নাটক। সাম্য বলল যে দলটা আমাদের কিডন্যাপ করেছিল তারা মোটেও কিডন্যাপার নয়, ডিবির দল। যিনি আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে নির্দেশ দিচ্ছিলেন তিনি রায়হান সাহেব।'

বিস্ময়ের পর বিস্ময়ের পর্দা নামছে যেন আমার সামনে।

'আরো আছে।' আরেকবার দম নিয়ে বলল সাম্য। 'এনুমামার লোকজনও ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিল পথের মাঝে। ডিবির দল সময়মতো না এলে আমাকে আর তোকে পরপারে পাঠিয়ে দিত ওরা।'

ভাবলাম, সে সময় আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের জেগে ওঠাটা অকারণ ছিল না তাহলে।

'ডিবির লোক আগে ওদের পাকগাড় করে। তারপর কিডন্যাপ নাটক।' বলল সাম্য।

ছোটমামা এতোক্ষণ তন্ময় হয়ে শুনছিলেন, এবার তিনি মুখ খুললেন, 'কবিরাজ মহিলা আর আবুল হাসেমের কী হলো?'

আমরা সার্কাসে যাওয়ার সাথে সাথে ডিবির একটা দল গোপনে অভিযান চালায় কবিরাজের বাড়িতে। আবুল হাসেমসহ আরো তিনজন এজেন্ট ধরা পড়েছে। সাথে দশটা গিফট বক্স। কোনোটাতে সোনার বার, কোনোটা হিরা বোঝাই, কোনোটাই হিরোইন। সাথে মহিলাকেসহ বারোজন সহযোগী। ব্লুটুথ হেডফোন ও মোবাইল সেটও জব্দ করে ডিবি।'

'আমাদের গ্রামে যে আরো এজেন্ট ছিল তারা তো আটক হয়নি?' প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম আমি।

'করিম চাচা!' প্রতিবেশীকে বলল সাম্য। 'এই দু'দিন মালেক মুন্সি আর হামিদ খাঁর চেহারা দেখছেন কেউ একবারও?'

'না তো!' করিম চাচার বিস্ময় মিশ্রিত জবাব।

'সেই রাতে ডিবির একটা দল আমাদের গ্রামেও অভিযান চালিয়েছিল। অত্যন্ত গোপনে। শুধু তাই নয় অন্য যেসব গ্রামে কবিরাজের এজেন্ট ছিল সবাইকে আটক করা হয়েছে।'

'তাহলে এই হলো কবিরাজের কারামতি।' বললেন ছোট মামা। 'মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে ক'দিন টেকা যায়- এই প্রশ্নটা যদি ভণ্ডদের মাথায় আসত তাহলে বারবার একই ঘটনা ঘটত না।'

গল্প শেষ। আসর ছেড়ে সবাই যখন উঠতে যাবে, তখনই সাম্যের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। সাম্য 'না না, ধন্যবাদ' বলে ফোনটা রেখে দিল। কার ফোন জিজ্ঞেস করার আগে আগেই ও বলল, 'মেহেরপুর জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ফোন কলেছিলেন। আমাদের নাগরিক সংবর্ধনা দিতে চায়। আমি 'না' করে দিয়েছি। ইদানিং নাগরিক সংবর্ধনা, গণ সংবর্ধনার নামে যে অপসাংস্কৃতি চালু হয়েছে তা দেখলে আমি নিজেই লজ্জা পায়।'


মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

ভাল হয়েছে। কিন্তু এমন হয়না মাঝে মাঝে যে গল্পে রহস্য ভেদ শেষে পাঠক মনে মনে গোয়েন্দা কে 'সাব্বাস' বলে উঠে, সেরকমটা হলে খুব খুশি হতাম।

চালিয়ে যান ভাইডি চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
চলবে

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সাফি এর ছবি

চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কালো কাক এর ছবি

ভালো লাগলো চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

খুশি হলাম

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

স্পর্শ এর ছবি

দুই পর্ব একসাথে পড়লাম। দারুণ লাগলো! হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

অনেক অনেক ধব্যবাদ

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল হয়েছে।
-গ্যাগটেম্প

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নবীন_পান্থ এর ছবি

দারুন। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো।।।।।।।।।।।।।।।।।।। চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
যাক কিছুটা হলেও জমাতে পেরেছি তাহলে...

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

চালিয়ে যান- চলুক

কড়িকাঠুরে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কালো কাক এর ছবি

একসাথে পড়লাম দুইটা। ভাল্লাগসে চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধব্যবাদ, পড়ে মন্তব্য করার জন্য

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আমিও একসাথে দুটো পর্ব পড়লাম।
ভালো লাগল। হাসি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

দীপ্ত এর ছবি

জমজমাট কাহিনী। একটানে পড়ে ফেললাম দুই পর্ব।
গোয়েন্দা কাহিনী আরও আসুক।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
দেখা যাক চালাতে পারি কিনা... হাসি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।