ক্ষুদে ব্যাঙের আস্তানায়

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ৩১/০৫/২০১৫ - ৬:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

IMG_1912

পৃথিবীর সব প্রাণীদেরই বোধহয় ছোট বড় আছে। ছ-সাত ফুটি বিশালাকার মানুষ যেমন আছে, আছে চার-সাড়ে চারফুটি পিগমি মানবও। প্রায় সব গোত্রভুক্ত প্রাণীদের দানাবাকৃতির আর ক্ষুদ্রাকৃতির দেখা মেলে।
আজ আমি ক্ষুদে ব্যাঙের গল্প শোনাবো। ছোটবেলায় প্রচুর দেখেছি ব্যাঙগুলো। বড়দের জিজ্ঞেস করলে বলত ব্যাঙাচি। কিন্তু বড় হয়ে জানালাম পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ আর ব্যাঙাচির বেশ পার্থক্য আছে। ব্যাঙের জীবনের পাঁচটা পর্যায় থাকে। ব্যাঙ উভচর প্রাণী। ডিম পাড়ে পানিতে। চাকবেঁধে ডিমগুলো উভচর কোনও গাছপালার গোড়ায় লেগে থাকে। তারপর ডিম ফুটে অদ্ভুত ধরনের বাচ্চা বের হয়। একে ঢেডপোল বলে। ঢেডপোলের মাথা ও লেজ থাকে। মাথাটা গোলাগাল। মোটা মোটা দুটো চোখ আছে। মুখ আছে। এরা কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। ঢেডপোলের মাথার সাথে লম্বা একটা লেজ। দেহ বা ধড় বলতে কিছু নেই। মোটকথা ঢেডপোল দেখতে ক্ষুদ্র একটা ঝাড়ুর মতো।

তারপর ধীরে ধীরে ঢেডপোলের দুটো পা গজায়। পা দুটো থাকে মাথার কাছাকাছি। এটা ব্যাঙের জীবচক্রের তৃতীয় পর্যায়! চতুর্থ পর্যায়ে ব্যাঙের চেহারা হয়ে যায় অনেকটা সরিসৃপের মতো। এ সময় কিছুটা ব্যাঙের আকৃতি পায়। লেজটাও অনেকখানি ছোট হয়ে আসে। পেছনের পা দুটোও গজায়। কিন্তু ব্যাঙের চেয়ে গিরগিটির সাথে মিল বেশি থাকে। ব্যাঙের এই অবস্থানকে বলে ইয়ংফ্রগ।

IMG_1914
এরপরেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ। অতএব আমরা যে ছোট ছোট ব্যাঙগুলো দেখেছি ওগুলো আসলে কী? আর যাই হোক ব্যাঙাচি নয়। ওটা আসলে ক্ষুদের জাতের কোনও পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ।
এখন আর গ্রামে তেমন থাকা হয় না। তাই গ্রামীণ মাঠের ক্ষুদ্র প্রাণীদের চোখের দেখাটাও দেখতে পারি না। ২০১৫ বইমেলায় পর বাড়ি গিয়েছিলাম। সাথে ক্যামেরা-ট্রাইপড তো আছেই। উদ্ভিদ ও পাখিদের ছবি তুলব। সাথে কীটপতঙ্গ আর মেঠোপ্রাণীরাই বা বাদ যাবে কেন?

IMG_1900

কে যেন খবর দিল, সকালে নদীর পাড়ে শামুকখোলের আড্ডা জমে। তাই সাতসকালে খালাতো ভাই পারভেজকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ইছামতীর দিকে।
নদীর কিনারে ধানক্ষেত। তারপর পাশে উভচর উদ্ভিদ পসরা। একটা কেশবদাম ফুল দেখে থেমে গেলাম। ক্যামেরা নিয়ে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। তারপর অসাধারণ কিছু ছবি উপহার দিল প্রকৃতি ও ক্যামেরা। রাতভর শিশির জমছে ঘাসের ডগায়। ধানের শিষের মুক্তোদানার মতো শিশির বিন্দু। অবধারিতভাবে তখন কবিগুরুর চরন মনে পড়ে গেল--

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু!

ঘাসের শিশির পায়ে ঠাণ্ডা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। অন্যরকম শিহরণ জেগে উঠল দেহমনে। তারপর এক পা করে এগোই ওই ছোট ছোট ঘাসের ফাঁক দিয়ে কী যেন উচ্চিংড়ের মতো লাফিয়ে পালিয়ে যায়।

IMG_1905
খেয়াল করে দেখি উচ্চিংড়ে নয়। ছোট্ট ছোট্ট ব্যাঙ। এতদিনে আবার দেখা। পারভেজকে বললাম, ‘থাম, ছবি তুলব।’
তুললাম ও। কিন্তু এই ছবি দেখালে কেউ বিশ্বাস করবে না এগুলো এত ছোট।

IMG_1922
অতএব একটা ধরে হাতে তুলে নিলাম। ধরলাম আমের পাতা দিয়ে, যাতে কষ্ট না পায় ব্যঙটা। ব্যাঙ যখন লাফিয়ে চলছিল তখন আমের পাতা সামনে ধরলাম। বেচারা ওর ওপর উঠে পড়ল।

IMG_1919
তারপর পাতা থেকে পানি ঢালার মতো করে হাতের তালুতে ঢাললাম।

IMG_1909
ব্যাটা কিছুতেই ছাতের ওপর থাকবে না। লাফিয়ে পালাতে চায়।

IMG_1906
তাই বেশ কয়েকবার কয়েকটাকে পাকড়াতে হয়েছে। অপূর্ব সব ছবি দিয়ে গেছে ব্যাঙগুলো।

IMG_1897
প্রিয় সচল, এই পিগমি ব্যাঙটার স্থানীয় ইংরেজি, বৈজ্ঞানিক কোনও নামই আমার জানা নেই। এশিয়ায়াটিক উদ্ভিদ ‘ বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ’-এর পঁচিশ তম খণ্ডে বাংলাদেশের বাঙগুলোর পরিচিতি আছে। তাতে সবচেয়ে যে ছোট ব্যাঙের হদিস পেলাম, দৈর্ঘ্য ৩ সেন্টিমিটিার। আমাদের এই ব্যঙাটা ১ সেন্টিমিটারের বেশি নয়, তা ছবি দেখেই আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া বইয়ের ওই ব্যঙয়ের চেহারাও এর মতো নয়। কোনও সচল যদি ব্যঙটার নাম পরিচয় জানেন, দয়া করে মন্তব্যের ঘরে জানাবেন।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ছোটবেলায় এরকম ছোট-ছোট ব্যাঙ দেখেছি বলে মনে পড়ে।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

অনেকেই দেখেছেন, অধিকাংশই এদেরকে আমার মতো ব্যঙাচি ভাবেন।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

এমন কি হতে পারে না তিন সেমিঃ টাই এটি? যা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে..……আপনি তার এক সেমিঃ রুপটা দেখলেন।
এ্যানি মাসুদ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

না, দুটি কারণে। তিন সেমির চেহারা, শরীরে স্পটগুলো একেবারেআ আলাদ। আর ব্যাঙ আর কীটপতঙ্গের লাস্ট স্টেজটা একবারেই পুর্ণতা পাই। আমি নিজে দেখেছি প্রজাপতি মূককীট থেখে বেরোই একেবারেই পূর্ণাঙ্গ শরীর নিয়ে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরান দিনগুলো আবার ফিরে ফিরে আসছে । ধন্যবাদ । চলুক লেখা হাসি গুরু গুরু

মোস্তফা কামাল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ভাই আপনি কোন মোস্তফা কামাল। আমার এক বন্ধুর নাম কিন্তু আপনার সমনাম। ছোটবেলায় আমার সবকাজ প্রায় একসাথে করতাম।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।