নীল পাহাড়ের দেশে- ২য় পর্ব

শাব্দিক এর ছবি
লিখেছেন শাব্দিক [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৪/২০১৩ - ৮:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বর্ণমন্দির থেকে বের হয়ে আমরা মধ্যাহ্ন ভোজনের জায়গা খুঁজতে লাগলাম। আমাদের দলের নতুন সদস্য উজ্জ্বলের উপদেশে “ফিস্ট” নামের রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। বান্দারবান এসে পোলাউ করমা খাওয়ার আগ্রহ কারও দেখা গেল না। তার চেয়ে সাদা রূপচাঁদা মাছ, চিংড়ী শুঁটকী ভর্তা (যদিও আমি এই দলের না), টাকি মাছের ভর্তা আর সবজি ভাজি হ্যাঁ ভোটে জয়যুক্ত হল। মাছের স্বাদের তুলনা নেই। ঢাকার প্রিজারভেটিভ দেয়া তিনদিনের বাসি মাছ আর সবজির চেয়ে এখানকার খাবার অমৃত লাগল। তবে একই দলভুক্ত সবাই একসাথে রাঙ্গামাটিও ভ্রমনের কারণে স্বীকার করতে বাধ্য হল রাঙ্গামাটির মত এ অঞ্চলেও মরিচ সস্তা।

এরপর তিনটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম মেঘলা’র উদ্দেশ্যে। সূর্যাস্তটা যে করেই হোক দেখতে হবে নীলাচল, সেভাবে প্ল্যান করা। মেঘলার সামনে সম্প্রীতির সাইনবোর্ডটা সবার দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছিল। ঢুকতেই চোখে পড়ল বড়সড় পিকনিকের দল, শুক্রবার হওয়াতে প্রচুর লোকের ভিড়। সিড়ি দিয়ে অনেকটা নীচে নেমে যেতে হল। এরপর চোখে পড়ল ঝুলন্ত ব্রীজ। বেশ নড়বড়ে, আর আমার মত দুঃসাহসী মানুষদের জন্য বেশ উৎসাহজনক। হাউকাউ করে কষ্টেশিষ্টে পাড় হচ্ছিলাম ঝুলন্ত সেতু (তখনও জানি না আগামীকাল আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে)।

DSC_0316

DSC_0317

DSC_0081

DSC_0323

DSC_0333

DSC_0332

DSC_0350

DSC_0349

ওপারে বেশ কয়েকটা ভাস্কর্য দেখতে পেলাম, খোলা আকাশের নীচেই, আর পাহাড় ঘেরা উপত্যকার অংশটুকু, কিছু কিছু জায়গা দেখলে আর শহরে ফিরে যেতে মন চায় না। কিছুদূর হাঁটার পর ছোট্ট একটা বাজারের মত দেখতে পেলাম, যেখানে ডাব, তেঁতুল, কলা বিভিন্ন ফল বিক্রি হচ্ছে।

DSC_0356

DSC_0354

DSC_0357

mgh

DSC_0358

jm

এতখানি রাস্তা পাড় হয়ে আমরা বেশ তৃষ্ণার্ত। কচিডাবের পানি খাওয়ার জন্য যথার্থ সময়। এরপর দেখা গেল ক্যাবলকার। বাংলাদেশে এই জিনিষ আগে দেখি নাই। যাই হোক ত্রিশ টাকা পারহেড ভাড়া দিয়ে উঠে পড়লাম সবাই। একটা লেক পাড় হয়ে আবার এপাড়ে ফিরে আসলাম আমরা, লেকের সৌন্দর্য অবলোকন ছাড়া আর কোন এক্সাই্টমেন্ট পেলাম না। এরচেয়ে ঢের অ্যাডভেঞ্চারাস ছিল ঝুলন্ত সেতু পাড় হওয়াটা, যা কিনা আবার পাড় হতে হবে, এই ব্যাপারে আমার সাথে সবাই একমত হল। ছোট একটা ‘সাফারি’ নামের চিড়িয়াখানাও ছিল, পথে যেতে যেতে দেখলাম। খাঁচা বন্দী এইসব জীবজন্তুর প্রতি আমার তেমন আগ্রহ নেই, তাই ছবি তোলা হয়নি।

DSC_0363

DSC_0365

DSC_0366

DSC_0367

DSC_0369

DSC_0377

DSC_0395

এরপর আরো একটা ঝুলন্তসেতু (অপেক্ষাকৃত শক্তপোক্ত) পাড় হয়ে আমরা চান্দের গাড়ীর কাছে চলে আসলাম।
পরবর্তী গন্তব্য নীলাচল। বেশ খাড়া পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে চান্দের গাড়ী উঠে চলছিল। যেহেতু আমি ড্রাইভিং সীটে বসেছিলাম না, তাই সিরাজ ভাইয়ের উপড় ভরসা করে গাড়ীর গ্রিলের ফাঁকে মাথা বের করে দাঁড়িয়ে হইচই করতে সমস্যা হচ্ছিল না।

DSC_0401

DSC_0423

নীলাচল পৌঁছে প্রথমেই দেখা হল এক গাতক ভাইয়ের সাথে, যার গান আর ঢোলের আওয়াজ পুরো পরিবেশ আর প্রকৃতিকে মুখরিত করে রেখেছিল।
“নিশা লাগিলরে, বাঁকা দুনয়নে নিশা লাগিল রে”
এরপর
“বন্দে মায়া লাগাইসে, পিরীতি শিখাইসে”।

মৌ এত মুগ্ধ ছিল যে উনার কাছ থেকে ওকে সরানোই যাচ্ছিল না। বলল, সে আর যাবে না, ওখানেই বসে গান শুনবে। তোরা উপরে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখে ফেরার পথে আমাকে নিয়ে যাস।

bn

বেশ খানিক ধাপ উঠে নীলাচলের উপর পৌঁছলাম। নীলাচল নামটা যথার্থ তা আশেপাশের রূপ দেখে যে কেউ মানতে বাধ্য। চারপাশ ঘিরে পাহাড়, শীতের শেষভাগের হালকা কুয়াশা যেন নীল শাড়ির আঁচলে নিবিড়ভাবে ছেয়ে রেখেছে পাহাড়ী বনগুলো ছোট্ট হয়ে আসা স্বর্ণ মন্দিরের চূড়াটাও উঁকি মারছে দূরে। ছোট ছোট ঘরবাড়ি সমেত পাহাড়ি গ্রামগুলি দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। মন ছুটে যায়, কোন দূর অজানা পাহাড়ি মেঠো পথে।

DSC_0432

DSC_0444

DSC_0480

DSC_0502

DSC_0484

আমাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, যে উদ্দেশ্যে আসা সেই পড়ন্তবেলার সূর্যদেবতার দর্শন পেতে। তার আগের মুহূর্তগুলি কন্যাসুন্দর আলোয় বুলিয়ে নিয়ে গেল পুরো নীল শাড়ীর আঁচলখানি।

DSC_0538

DSC_0466

DSC_0485

DSC_0486

DSC_0510

আর সূর্যাস্ত, সে আর নতুন করে কি বলব, প্রতিদিনই একই সূর্য আস্ত যায়, তারপরও তা যেন মনে হয় পূর্বে হয়নি, পৃথিবীর প্রতিটি অংশে এর রূপ ভিন্ন, অবর্ণনীয়, অকৃত্রিম, অভূতপূর্ব কেন, প্রকৃতির এ রহস্য হয়ত চিরদিনই অমীমাংসিত থেকে যাবে।

DSC_0511

DSC_0516

DSC_0519

DSC_0509

DSC_0518

DSC_0539

DSC_0506

সূর্যাস্তের পর আমরা ফিরে আসলাম নীড়ে।

DSC_0885

রিসোর্টে ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে ইফতি বের করল তাশের প্যাকেট। রাত তিনটা পর্যন্ত নাকি টোয়েন্টিনাইন চলবে। কারণ তিনটার সময় আমাদের নীলগিরি রওনা হবার কথা সূর্যোদয় দেখতে। কিন্তু দু/ এক রাউন্ড চলার পর আমরা আর চোখের পাতা খোলা রাখতে পারলাম না।

(চলবে)


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

বান্দরবান, বগা লেক, নীলগিরি, নীলাচল গিয়েছি। তবে কিছু শখ অপূর্ণ থেকে গেছে। ইচ্ছে ছিল সাঙ্গু নদী ধরে নৌকা করে থানচি না কোথায় পর্যন্ত যাওয়া যায় - সেখানে যাব। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কন্সার্নের কারনে আমার স্থানীয় বন্ধুবান্ধবদের প্রবল আপত্তিতে সেটা আর সম্ভব হয়নি। নীলগিরিতে আর্মির আউটপোস্টে দুর্দান্ত লোকেশনে কয়েকটা কেবিন আছে - ওখানেও দুএকটি দিন থাকার খুব ইচ্ছে ছিল। সুযোগ হয়নি।

আপনার সিরিজটা খুব ভাল লাগছে। চলুক

****************************************

শাব্দিক এর ছবি

সাঙ্গুনদীতে নৌকা চড়া আমারও হয়নি, তার উপর শুকনা মৌসুম এ যাওয়া হয়েছে যেহেতু, নদীতে পানি খুব কম ছিল। আরো যাবার ইচ্ছা আছে বান্দরবান। শীতে এবং বর্ষায়।
লেখা পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

রংতুলি এর ছবি

ভালো লাগলো শাব্দিক! চলুক চলুক

শাব্দিক এর ছবি

ধন্যবাদ রংতুলি সাথে থাকার জন্য। হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাহ! এবার দেশে আসলে বান্দরবান যেতেই হবে!

বটতলার উকিল

শাব্দিক এর ছবি

হাসি অবশ্যই যাবেন। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ টুরিস্ট স্পট বান্দারবান।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মেঘা এর ছবি

যাই নাই এখনো মন খারাপ কবে যাবো তাও বুঝতেছি না। অণু ভাইয়া বিদেশ বিদেশ ঘুরে তাই হিংসা করা বাদ দিয়েছি কিন্তু মানুষ দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমি যেতে পারলাম না দেখলে হিংসা লাগে মন খারাপ আমি এতো হিংসুক কেন?

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

শাব্দিক এর ছবি

অনুর সাথে আলিফ লায়লার জ্বিনভুতের তুলনা করা উচিত, কোন মানুষের না। দেশে দেশে কই ঘুরলাম? একবার একটু গেলাম তাও যদি মানুষ নজর দেয়। মন খারাপ আমি তো ঘরে বসে সুন্দর সুন্দর লেখা লিখতে পারি না মন খারাপ ।পোস্টাব কি?

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মনি শামিম এর ছবি

মেঘা, রাজশাহী আসবেন?

শাব্দিক এর ছবি

আপনি রাজশাহী নাকি। আমি তো ভাবলাম এখনো রোমবাসী।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মনি শামিম এর ছবি

আসছি। এই সেপ্টেম্বরেই চলে আসছি পাকাপাকিভাবে। আর ইয়ে, আমি আসলে রোমবাসী নই, বোলোনিয়া বাসী। শাব্দিক, আপনার সাথে দেখা হচ্ছে তো ঢাকায়?

শাব্দিক এর ছবি

ও হ্যাঁ পোস্টএ বলেছিলেন বোলোনিয়ায় আছেন, ভুলে গেছিলাম। চলে আসেন তাড়াতাড়ি হাসি , কি আছে বিদেশে?

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মনি শামিম এর ছবি

তাড়াতাড়ি আসছি শাব্দিক। আপনার সাথে দেখা করতে হবেনা? আর ঘুরাঘুরি? রাজশাহীর ব্যাপক এলাকা চষে ফেলতে হবে তো! খনি আছে শাব্দিক, খনি!

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আমাকে ছাড়া ঘুরাঘুরি চলবে না, বলে দিলাম। শয়তানী হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

দারুন আপু দারুন।
আকাশের ছবিগুলো অসম্ভব সুন্দর এসেছে আপু।
আমার কপাল দেশে থাকতে কোথাও যাওয়া হয়নি। মন খারাপ
এইবেলা খালি দেশে এসে নেই। তারপর আমিও ...

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

শাব্দিক এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
হুম, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা কেউ বোঝে না।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

শাব্দিক এর ছবি

ইউ আর ইন ডিয়ার। হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মেঘা এর ছবি

মনি ভাই আসবো দেঁতো হাসি কবে যাবো বলেন।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মনি শামিম এর ছবি

মেঘা, আমি তো সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দেশে আসবো। তখন একসাথে রাজশাহী ঘুরে আসার পরিকল্পনা আঁটতে হবে, বুঝলে? তোমাকে রাজশাহীতো দেখাবোই আর তোমার প্রিয় অণু ভাইয়ার বাসাতেও নিয়ে যাবো, ঠিক আছে?

মনি শামিম এর ছবি

চমৎকার কম্পোজিশন আপনার, কিছু ছবি ভালো কম্পোজিশনের গুণে মন ছুঁয়ে যায়। ধন্যবাদ শাব্দিক। বান্দরবন গিয়েছি, সময় কম থাকার কারণে বগা লেক দেখা হয়নি। আপনার ছবি দেখে উৎসাহ পাচ্ছি। এবার যাবো।

শাব্দিক এর ছবি

ধন্যবাদ মনি ভাই। বগালেক পরের পর্বে আসছে। এটা তো মেঘলার একটা লেক।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

চরম উদাস এর ছবি

বাহ, লেখা ছবি দুটাই সুন্দর

শাব্দিক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।