লস্ট ইন ট্র্যান্সলেশান

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২২/১১/২০০৭ - ৬:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

বিতর্ক হচ্ছিল ইংরেজী মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম নিয়ে। একজন বলেছেন ভাষার মাধ্যমে ওয়েল ইনফর্মড হবার কথা। পাশাপাশি জার্মান সাহিত্য থেকে বেছে বেছে তীরন্দাজ তার সুচারু অনুবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছেন। এত কিছুর মাঝে একটা খবর চোখে পড়লো যেটা দেখে মনে হলো, আমাদের দেশে এমনটা যদি করা যেতো...

কয়েক বছর আগে জাতি সংঘ আরব দুনিয়ার পশ্চাদপদতার কারণ অনুসন্ধান করে একটি রিপোর্ট বের করেছিল। পরে সেই রিপোর্ট তারা বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রকাশ করতে থাকে। লেখকরা আরব দেশেরই - সমাজ বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক , সাংবাদিক ইত্যাদি। ২০০২ সালে প্রকাশিত প্রথম রিপোর্ট, সেখানে আরব দেশগুলোর বেহাল অবস্থার পেছনে তারা তিনটি বড় কারণ ('three deficits') দর্শান - ব্যক্তি স্বাধীনতার অভাব, নারী স্বাধীনতার অভাব এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারের অভাব।

তিনটি অভাবই তারা নানা ভাবে খতিয়ে দেখেন। তৃতীয় অভাবটি - জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারের অভাব - বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একটি ইন্টারেস্টিং তথ্য বেরিয়ে পড়ে। গত হাজার বছরে যতগুলো বইপত্র বিদেশী ভাষা থেকে আরব ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এক মাত্র স্পেনেই এক বছরে তার থেকে বেশী বই অনূদিত হয়ে থাকে। বহির্বিশ্বে জ্ঞানের যে অবারিত প্রবাহ, তা থেকে ২৫ কোটি লোকের আরব জাতি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। হাইনরিখ ব্যোল কি লিখেছেন কিম্বা আলবেয়ার কাম্যু কিম্বা স্টিফেন হকিং কিম্বা রিচার্ড ডকিন্স, এমনকি দান্তে, সার্ভান্তেস, কালিদাস বা রবীন্দ্রনাথ - এই সব কিছুই আরবদের নাগালের বাইরে। যদি কেউ জানতে চায় তাহলে তাকে আগে ইংরেজী বা লেখকের মূল ভাষা শিখে নিতে হবে।

এই দূরবস্থা নিরসনে আবু ধাবির শেখ সাহেব একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন - কালিমা প্রজেক্ট। উদ্দেশ্য একটাই - দুনিয়ার নানা দেশের ভাষা থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলো অনুবাদ করে আরবদের সামনে তা তুলে ধরা। প্রথম ধাক্কায় একশোটি বইয়ের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তাতে অনেক কিছুই আছে - সফোক্লিসের নাটক, ভার্জিল-এর কবিতা, স্পিনোজার দর্শন, কীন্স-এর অর্থনীতি, গিবন-এর ইতিহাস, ফাইন্‌ম্যানের বিজ্ঞান, ল্য কর্বুসিয়ে-এর স্থাপত্য, হাইন্‌লাইনের সাইন্স ফিকশন, মুরাকামির উপন্যাস। (এমনকি আরবদের জন্যে অবশ্যপাঠ্য লরেন্স রাইটও লিস্টে আছেন।) প্রথম ধাক্কার পরে আরো একশো, তারপর আরো একশো, এভাবেই অনূদিত লাইব্রেরি গড়ে উঠবে। এরকম একটি উদ্যোগের প্রশংসা না করে উপায় নেই, এরকম উদ্যোগের সুফল ছাড়া কুফলও নেই কোন।

*

বাংলাদেশের অবস্থা হয়তো আরবদের মত অত খারাপ না। বাংলায় অনুবাদ একেবারে কম নেই। সেবা হোক আর কলকাতাই হোক, বিদেশী সাহিত্যের বড় বড় কাজগুলির অনেকগুলোই বোধ করি বাংলায় এত দিনে অনুবাদ হয়ে গেছে, সেটা মলিয়ের থেকে শুরু করে শার্লক হোম্‌স পর্যন্ত। দেশে সাধারণ পাঠকের ইংরেজীর গড় মানও আরবদের থেকে ভাল। কিন্তু যতই বর্তমানের দিকে আসি, ততই অনুবাদের সংখ্যা, পরিধি আর মান কমে আসে। ফিকশন বাদ দিলেও নন-ফিকশনের দিক দিয়ে আমাদের যে দৈন্য, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে হারে জ্ঞানের প্রসার হচ্ছে পৃথিবীতে, সে হারে আমাদের অ্যাক্সেস বাড়ছে না।

হয়তো ঢালাওভাবে স্কুলে সবাইকে ভালো ইংরেজী শিখিয়ে এর নিরসন করা যায়, কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব না। তারপরেও অত দাম দিয়ে কে বা বিদেশী বই কিনতে পারবেন। একদা উৎসুক পাঠকদের জন্যে বৃটিশ কাউন্সিল উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। সেই বৃটিশ কাউন্সিল এখন IELTS টেস্ট সেন্টার হয়ে পয়সা বানানোর ধান্দায় ব্যস্ত। লাইব্রেরীর এখনকার কালেকশানের অবস্থা ব্যাড়াছ্যাড়া। শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরীতে কিছু বই আছে, সত্তরের দশক পর্যন্ত বেশ ভালো কালেকশান ছিল ওদের। কিন্তু সেগুলার উপর ধুলার আস্তরণ দেখে বোঝা যায়, যে বইগুলা এক দশকে হয়তো একবার নাড়াচাড়া করা হয় - বা তারও কম। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অবস্থাও অনেকটা একই।

তার চেয়েও বড় কথা যে ইংরেজীতে যত সহজে একটা বই বোধগম্য হবে, আত্মস্থ হবে, স্বাভাবিকভাবেই নিজের ভাষায় সেটা অনেক বেশী সহজবোধ্য হবে। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে বর্তমানের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বা গুরুত্বপূর্ণ লেখালেখির সাথে শুধু এলিট বা ইংরেজী জানা শ্রেণীরই বেশী যোগাযোগ আছে। ইনফরমেশন মনোপলির সৃষ্টি হয়েছে। ইন্টারনেট এসে হয়তো আমাদের কূপমুন্ডকতা কিছুটা কেটেছে, কিন্তু সেটা খুব বেশী না। আর বিদেশী টিভি থেকে মেকী উচ্চারণে হাই-বেবি আর হিন্দি বলা ছাড়া পোলাপান আদৌ কিছু শিখেছে কিনা, জানা নেই।

সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রনালয় বা বাংলা একাডেমী কি কালিমার মত একটা উদ্যোগ নেবেন? হাজারো মিটিং-সেমিনার হয় বছরে, অনেক টাকা খরচ করে। সেই বাজেট থেকে যদি প্রতি বছর পঞ্চাশটি গুরুত্বপূর্ণ বইও রেগুলার অনুবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাতে পাঠককূল অনেক লাভবান হবে। সেটা বাংলা একাডেমীর নিজস্ব অনুবাদ ব্র্যান্ড হিসেবেও তারা বাজারজাত করতে পারেন। প্রতি বছর বই মেলায় যেমন। ফান্ডিং-এর প্রশ্ন উঠলে - নানা কর্পোরেট নানা কাজে টাকা ঢালে, তাদেরকেও এই কাজের ফান্ডিং-এ টেনে আনা যায়। যেভাবে এই কাজ সম্ভব হয়। কিন্তু উদ্যোগটা বাংলা একাডেমীর মত একটা নামী সংস্থা থেকেই আসা উচিত।


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

গত হাজার বছরে যতগুলো বইপত্র বিদেশী ভাষা থেকে আরব ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এক মাত্র স্পেনেই এক বছরে তার থেকে বেশী বই অনূদিত হয়ে থাকে। বহির্বিশ্বে জ্ঞানের যে অবারিত প্রবাহ, তা থেকে ২৫ কোটি লোকের আরব জাতি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।

অনেক আরবের সঙ্গেই আলাপ করে তাদের (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) শিক্ষার অনগ্রসরতা আর সাধারণ জ্ঞানের স্বল্পতা বিষয়ে একটা ধারণা করতে পেরেছিলাম, কিন্তু ওদের যে এতো দুরাবস্থা, তা কিন্তু জানতাম না।

ভালো কথা। আপনার এই লেখা থেকে নিজে লেখার একটা আইডিয়া পেলাম। ধন্যবাদ। লেখাটি ছাড়ছি একটু বাদেই।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

অথচ মজার বিষয় হলো যে প্রাচীন গ্রীসের দর্শন বা বিজ্ঞান আমাদের হাতে আসতো না, আরবদের সাহায্য ছাড়া। এক হাজার বছর আগে তারাই সে সব গ্রন্থ সংরক্ষণ করে রেখেছিল তাদের নানা লাইব্রেরীতে, গ্রীকদের অনুবাদ করা আর তাদের আইডিয়া পরিবর্ধণ করে গণিত আর বিজ্ঞানের সম্প্রসারণও তাদেরই কাজ। কয়েক শতক পরে ইউরোপীয় রেনেঁসার সময় শিল্প-সাহিত্য বিকাশে এই সব বাঁচিয়ে রাখা পুঁথি-পুস্তক বিরাট কাজে লেগেছিলো।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

মজার ব্যাপার সেই আরবেরা আর সেই পুঁথি নিয়ে চর্চা করেনি, ইউরোপিয়দের হাতে তুলে দিয়েই শান্ত থেকেছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

খুব ভাল লেখা। আমি ভাবছি আমার ইংরেজী ব্লগে এ নিয়ে একটা লেখা লিখব। আমি নিজেও অনুবাদের কাজে খুবই ইন্টারেস্টেড। যখনই কোনো ভাল ইংরেজী বই পড়ি, মনে হয় কত লোকে শুধু ইংরেজী পড়তে পারে না বলে এই বই পড়ার সুযোগ পায় না। জ্ঞান তো ভাষার সম্পত্তি নয়, থাকা উচিতও নয়। জ্ঞানকে যদি ভাষার জাল থেকে মুক্ত করতে হয় তাহলে অনুবাদ ছাড়া রাস্তা নেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ব্লগানোর দুঃসাহসটুকু বাদ দিয়ে পূর্ণ সহমত। হাসি

তীরন্দাজ এর ছবি

বেশ কিছু অনুবাদ শেষ করার পর একটি জার্মান সংগঠন (গ্যেটে ইনস্টিটুটের কোন শাখা) খুজে বের করলাম, যারা অনুবাদ গ্রন্হ প্রকাশনায় অনুদান দেয়। কপি রাইট থেকে শুরু করে ছাপার খরচ অবধি। ওদের সাখে যোগাযোগ করার পর জানালো, ওদের অনুদান চীনা আর আরবী ভাষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। একটু অবাক হলাম। বাংলা ভাষার পাঠকের সংখ্যা কি কম?
হয়তো পিছিয়ে আছে বলেই এগিয়ে নেবার প্রচেষ্টা!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

দিগন্ত এর ছবি

আসলে বাংলা ভাষীরা ইংরেজীও জানে - এরকম একটা তথ্য সর্বজনবিদিত হয়ে গেছে। তাই যারা কোনো বিদেশী ভাষা জানেনা বলে ধরে নেওয়া যায়, তাদেরই এখানে মনে হয় প্রায়োরিটি দেওইয়া হচ্ছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাগিব এর ছবি

আমার সেই ভাঙা রেকর্ড, পুরানা প্যাচাল নিয়ে হাজির হয়ে, আবারো বলছি, আপনারা এই উদ্যমটাকে অব্যাহত রেখে বাংলা উইকিপিডিয়াতে একটু হাত দেন। বেশি কষ্ট করারও দরকার নাই ... কেবল ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে একটা দুইটা নিবন্ধের একটা প্যারার ৫টা বাক্যও দিনে অনুবাদ করে দেন। এক বছরে বাংলা ভাষার সেরা বিশ্বকোষ নামানো যাবে।

উল্লেখ্য, এইরকম ভাঙা রেকর্ড বাজাতে বাজাতে যেই গুটি কয়েক মুরগী ধরতে পেরেছি, সেই সব উদ্যমী পোলাপানের হাতে ধরে দেড় বছরে ১৬,০০০ ভুক্তি এসেছে। (নিবন্ধ বললাম না, কারণ আরো অনেক কাজ বাকি, but this is a great start)। কাজেই ভাইসব, আপনারা পুরা বই অনুবাদের চঠিন কাজ শুরু করার আগে দিনে অন্তত ইংরেজি উইকিপিডিয়ার একটা নিবন্ধের ১টা প্যারা অনুবাদ করে দেন। ভাষার কারূকাজের দরকার নাই, মোটামুটি হলেই চলবে।

ইন্টারনেটে হালনাগাদ বিশ্বকোষ না বানাইলে কিন্তু বছর কয়েক পরে আমাদের অবস্থাও আরবদের মতোই হবে। আমাদের আবার "কালিমা" প্রজেক্টের ফান্ডিং করার মতো আরব শেখ-টেখ তো আর নাই ... মন খারাপ

কোথায় যোগ করবেন? এইখানে দেখতে পারেন।
----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

রাগিব,
বাংলা উইকি দেখেছি, প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। তবে আমার মনে হয়েছে যে সেখানে লেখালেখির কাজ বোধ হয় একটু disorganized ভাবে এগুচ্ছে। নিবন্ধের রেঞ্জ বিরাট কিন্তু বেশীর ভাগ নিবন্ধই খুব ছোট আকৃতির। সেটার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নই। উইকি-ধারার পরিপন্থী হবে, কিন্তু আমার মনে হয় কালিমার মত আপনারাও একটা বাঁধা লিস্ট নিয়ে শুরু করতে পারেন - ধরেন FA বা GA গুলো থেকে। যেমন প্রথম ধাক্কায় ২০টা FA আগাগোড়া অনুবাদ করে ফেলবেন, তারপরে আরো ২০ ইত্যাদি। এখন তো দেখি প্রতি সপ্তাহে প্রচুর FA পাশ হচ্ছে। বাংলা উইকির নিবন্ধের গড় মান এতে অনেক উন্নত হবে, এবং বাংলা উইকির যে সীমিত জনবল তারও সবচেয়ে ভাল ব্যবহার হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার দুই পয়সা। হাসি
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুজিব মেহদী এর ছবি

পোস্টটা থেকে অনেক কিছু জানলাম। খুবই সুন্দর পোস্ট।

আপনারা অনুবাদের দায়িত্ব নিলে আমাদের হয়ত আরবদের মতো দুরবস্থা হবে না। ভালো যে 'কালিমা প্রজেক্ট' ওদের দুরবস্থা ঘুচাতে উদ্যোগ নিয়েছে, আমাদের এরকম উদ্যোগ কই? বাংলা একাডেমীর কত কিছুই করা দরকার, কিন্তু করছে না। একাডেমীর যেসব অনুবাদ বই ছিল তার অধিকাংশেরই আর পুনর্মুদ্রণ হয় নি। চাইলেও সেসব বই আর সংগ্রহ করা যায় না।

বাংলাদেশে এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানই এক্ষেত্রে বেশি কাজ করছে। যেমন ঐতিহ্য, সন্দেশ...

ফান্ডিংয়ে কর্পোরেট সেক্টরকে রাজি করানো গেলে তো খুবই ভালো হবে।
....................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মুজিব ভাই, মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। ঐতিহ্য বা সন্দেশের মত প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে চমৎকার হয়। তবে এই রকম বই হুমায়ুনের মত বেস্ট-সেলার হবে না, সেটা জেনেই আগানো উচিৎ। আর যে জিনিসটা দরকার, তা হচ্ছে দক্ষ অনুবাদকের। ঝরঝরে অনুবাদ না হলে সেটা পাঠকের হৃদয়গ্রাহী কেমনে হবে? স্পনসর হিসেবে টেলিকম-দের টোকা মেরে দেখা যায়। একেকজন তো টাকার সাগরে ভাসতেছে। তাদের থেকে অল্প কিছু খসাতে পারলেও হয়। ফিলিপস কম্পানী এক সময় সাহিত্য পুরস্কার স্পনসর করতো। নতুন ফিলিপস কে হবে?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

??? এর ছবি

বাংলাভাষায় অনুবাদ প্রকাশনার বাজার যথেষ্ট ভাল এবং বেশ বনেদি। কলকাতায় তো বলার অপেক্ষা রাখে না, খোদ ঢাকাতেও ষাট দশকে অবিশ্বাস্য সব অনুবাদ গ্রন্থ বেরিয়েছে। কল্পনা করা যায় মিলান কুন্ডেরার উপন্যাস "জোক" বা ইলিয়া ইরেনবুর্গের "ফল অব পারী" র বাংলা অনুবাদ ঢাকা থেকে বেরিয়েছিল ষাটের দশকেই। তাছাড়া নীটশের "জরথ্রুস্ত বললেন", ইউজিন ওনীল-এর নাট্যসম্ভার, টেনেসি উইলিয়ামস এবং থর্নটন ওয়াইল্ডার এর নাটক, রবার্ট ফ্রস্ট, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, নেরুদা প্রমুখের কবিতাসহ আরো কত কত বই! তবে সোভিয়েত প্রকাশনার অনুবাদ যেমন প্রগতি নিজে করেছে, আবার মার্কিন সাহিত্য অনুবাদের ক্ষেত্রে ফ্রাংকলিন বুক প্রোগ্রাম এখানকার প্রকাশকদের দিয়ে করিয়েছে। নিঃসন্দেহে ওদের সম্মানি আকর্ষণীয় ছিল, নইলে শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, সৈয়দ আলী আহসান, ফতেহ লোহানীর মত লোকেরা কাছা বেঁধে অনুবাদে নেমে পড়েছিলেন কেন?

অনুবাদের বাজার এখনো যথেষ্ট রমরমা। বিশেষত বিখ্যাত বই অর্থাত্ যেগুলো নোবেল বুকার পুলিত্জার পায় সেগুলো অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রকাশকরা অনুবাদকের কাছে রীতিমত ধর্না দেন। ব্যক্তিগত একটা স্মৃতি মনে পড়ছে। সম্ভবত ১৯৯২ সালে ডেরেক ওয়ালকট নোবেল পান। সেসময়ে সারা বিশ্বেই প্রায়-অপরিচিত তিনি, ঢাকায় তো বটেই। আর তখন ইন্টারনেট লভ্য ছিল না এখনকার মত, ফলে ওয়ালকটের কোনো লেখা খুঁজে পাওয়া দুরূহ ছিল। ঘটনাচক্রে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের জার্নাল সেকশনে আমার যাতায়াত ছিল এবং সেখানে লন্ডন ম্যাগাজিন নামক একটি জার্নাল ঘেঁটে একদা আমি ডেরেক ওয়ালকটের ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। সেটি তাঁর নোবেল পাওয়ার বেশ আগের ঘটনা। এমনকি আমি ওর লেখা ফটোকপি করে একটা ছোট বুকলেট বানিয়েছিলাম যেখানে ওর নাতিদীর্ঘ একটা ইন্টারভিউও ছিল। ডেরেক নোবেল পাওয়ার অব্যবহিত পরেই অংশত তার লেখা খুঁজে পাওয়ার নিদারুণ ক্রাইসিস আর অংশত আমার নিজের অর্থনৈতিক প্রয়োজনের বশবর্তী হয়ে ঐ পান্ডুলিপিটি আমি এক সন্ধ্যায় শাহবাগে নিলাম চড়াই। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সাতআটটি কবিতা আর দুই পৃষ্ঠার একটি সাক্ষাতকার একহাজার টাকায় বেচে দিতে সক্ষম হই। সপ্তাদুয়েকের মধ্যেই উপরোক্ত মালমশলার অনুবাদ বাজারে বই আকারে পৌঁছে যায়।

..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

??? এর ছবি

দারুণ প্রস্তাব ইমরুল! এবং এটাই সময়োচিত। বাংলা ভাষায় জরুরি অনেক বইয়ের অনুবাদ সম্পন্ন হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু অপরাপর ভাষায় বাংলা ভাষার সাহিত্য অনুবাদ একদমই হচ্ছে না বলতে গেলে। এটা বরং একটা প্রস্তাব হতে পারে, অত্যন্ত জরুরি একটা প্রস্তাব সচলবাসীদের কাছে, বাংলাসাহিত্যকে আপনাদের জানা অন্যান্য ভাষায় তুলে ধরুন। কাজের কাজ হবে সেটা।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

নিঘাত তিথি এর ছবি

ভাল্লাগছে পোস্ট এবং পরিপূরক আলোচনা।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুজিব মেহদী এর ছবি

ইমরুলের প্রস্তাবটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রেক্ষিতে সুমন ভাইয়ের সুপারিশটিও। এখন কেবল বহুভাষী সচল ভাইদের সদিচ্ছাটা দরকার।

...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।