হাইতি থেকে বাংলাদেশ- কী ভাবছি আমরা?

শেখ নজরুল এর ছবি
লিখেছেন শেখ নজরুল [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৫/০১/২০১০ - ৭:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র হাইতি এখন মৃত্যুপুরী। গত মঙ্গলবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশটির প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আশংকা করা হচ্ছে এর পরিমান একলক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের হচ্ছে অসংখ্য মৃতদেহ।

হাসপাতালের মর্গে লাশের স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাস্তার ওপরে রাখা হয়েছে সেইসব মৃতদেহ। পাশাপাশি চাপাপড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে আসছে বেঁচেথাকা মানুষের আর্তনাদ। তাদের খুঁজে বের করতে হিমসিম খাচ্ছে সরকার ও ইতোমধ্যে সেখানের পৌঁছানো উদ্ধার কর্মীরা। ভূমিকম্পে আহত হয়ে কিংবা অক্ষত থেকে যারা বেঁচে আছেন তাদের জন্যও নেই খাবার, বিশুদ্ধ পানীয়জল। প্রচণ্ড শীতে সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে রাতের পর রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।

স্থানীয় রেডক্রস তাদের সহায়তা দিচ্ছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাজ করতে অভ্যস্ত হলেও তারাও এ ধ্বংসলীলার ধাক্কায় যেন নির্বাক! অন্যদিকে এত বড় দুর্যোগে উদ্ধার কাজ চালানোর মতো ভারী যন্ত্রপাতি ও চিকিতসা সহায়তা প্রদানে যথেষ্ট দক্ষ জনবলও নেই এই দরিদ্র দেশটির।

ভূমিকম্পের সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট বাসায় না থাকায় তিনি প্রাণে বাঁচলেও হাইতির ক্যাথেড্রাল ধসে পড়েছে এবং প্রধান ধর্মযাজকের কার্যালয়ে পোর্ট অব প্রিন্সের আর্চবিশপ জোসেফ সার্জ মিওর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পোর্ট অব প্রিন্সের বিখ্যাত হোটেল 'দি মন্টানা'র ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন হোটেলটির মালিক। এমন অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনা প্রতিনিয়ত উম্মোচিত হচ্ছে।

এই হৃদয় বিদারক ঘটনার পূর্বাপর হয়তো সবার জানা। অনেকে তাকিয়ে আছেন টিভির পর্দায় আর আহত হচ্ছেন। অন্তর থেকে সমবেদনা জানাচ্ছেন।

অভিজ্ঞমহল জানেন, ভূমিকম্পপরবর্তী উদ্ধারে ততপর হওয়া, চিকিতসা ও খাদ্যসহায়তা প্রদান ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। পুর্নবাসেনের বিষয়টি বেশ পরের অধ্যায়। ঠিক সেইসব সমস্যার মুখোমুখি এখন হাইতি। যেখানে ধ্বংস্তূপের নিচে বেঁচেথাকা মানুষগুলোকে তাদের পক্ষে উদ্ধার করা প্রায় সম্ভব হচ্ছে না।

হাইতির এ ভূমিকম্পের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকম্প প্রবণতার বিষয়টি একটু মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা যায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ বর্তমানে ভূমিকম্পপ্রবণ জোনে অবস্থান করছে। গত তিন বছরে দেশের ভেতরে ও আশপাশের প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৭ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম এলাকায় রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৬ মাত্রা এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু ভূমিকম্পের সর্বনিম্ন মাত্রা ছিল ২.৪। ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ এলাকায় ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৭। ঢাকার আশপাশের ১০৮ কিলোমিটার এলাকায় যে মৃদু ও অতিমৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয় তার মাত্রা ছিল ২.৮ ও ২.৯।

বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ঘন ঘন মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘন ঘন মৃদু ভূমিকম্প থেকে এক সময় ভয়াবহ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে যে ভূখণ্ডে বাংলাদেশ অবস্থান করছে সেখানে অষ্টাদশ শতাব্দীতে দুবার এবং ১৯১৮ সালে একবার বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। অনেক বছর বিরতির পর ১৯৬০ সাল পরবর্তী এ দেশে ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিকট অতীতে বাংলাদেশে ছোট থেকে মাঝারি মাত্রার বেশ কিছু ভূমিকম্প অনুভূত হলেও তাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ঘন ঘন মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আগামী ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শক্তিশালী কোন ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৭৬২ সালে সংগঠিত বেঙ্গল আরাকান ভূমিকম্পের প্রত্যাবর্তনের সময় ২৫০ বছর পর। অথ্যাত ২০১২-২০২০ সাল।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। দ্বিতীয় জোন হিসেবে দেশের মধ্যাঞ্চল এবং তৃতীয় জোন হিসেবে দণি ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মতে, এর মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্ব সংলগ্ন অঞ্চলের ভূগর্ভে বেশকিছু ফাটল চিহ্নিত হয়েছে। এসব ফাটলগুলোই ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।

ভূমিকম্পের দুটি বলয়- সার্কাম প্যাসিফিক এবং এলপাইডের মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে এলপাইড বলয়ে অবস্থান করছে। বলয়টি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উত্তর দিক হতে হিমালয়ের হিন্দুকোষ, ককেসাস পর্বত থেকে আটলান্টিক অজর দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূমিকম্পের এলপাইড বলয়ের দুইটি অংশ ইন্দো-অস্ট্রেলিয়া এবং বার্মিজ পয়েন্টঘেষে বর্তমানে বাংলাদেশ জোনে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট ছোট বেশ কিছু ফাটল আছে। এর মধ্যে যমুনা বহুমুখী সেতুর প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফল্টটি বগুড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। কুষ্টিয়া ও পাবনার মধ্যদিয়ে টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহের ফল্টও বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের জাফলং জিরো লাইনের বড় ফাটল বাংলাদেশে ভূমিকম্পের জন্য হুমকিস্বরূপ। আবহাওয়া দফতরের রেকর্ডমতে, ১৮৯৭ সালের ১২ জুলাই ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উতপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে। সে সময় বর্তমান সিলেট বিভাগের অর্ধেকের বেশি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। পাহাড়ি এলাকা হলেও সিলেটে ছোট-বড় অসংখ্য হাওরেরও সৃষ্টি হয়। ১৯৫০ সালের ১৬ আগস্ট ভারতের অরুণাচল প্রদেশে উতপন্ন ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথই পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

বেশ কিছুদিন যাবত বৃহত্তর ঢাকার মধ্যাঞ্চল ডেঞ্জার জোনে অবস্থান করছে মর্মে বিশেষজ্ঞদের আশংকা করছেন। ১৯৩৫ সালে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক সিসমিক জোনিং ম্যাপ প্রণয়নের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশও অনুরূপ একটি মানচিত্র প্রণয়ন করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশকে ৩টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সিলেট-ময়মনসিংহের প্রায় সবঅংশ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কিছু এলাকা। এর পরের অবস্থান হিসেবে ঢাকা, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা প্রভৃতি জেলাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়।

দুর্ভাবনার বিষয় হচ্ছে, যে হাইতিতে এমন একটি মারাত্মক ভূমিকম্প ঘটে গেল সেখানে কিন্তু বাংলাদেশের মতো সে ধরণের কোন আশংকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে কি এর চেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞ বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে? আশা করি না, নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টদের রক্ষা করবেন। তারপরও প্রকৃতি যদি তার ওপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ হয়- তবে কী করার থাকবে আমাদের; মৃত্যু, চীতকার পার হয়ে কেবল উদ্ধার ততপরতায় অংশগ্রহণ কিংবা নির্বাক দর্শক হওয়া ছাড়া!

তাই বলতে চেষ্টা করছি, পরিস্থিতি বিবেচনায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ভীষণ জরুরি। এখনই প্রয়োজন দুঘর্টনাপরবর্তী উদ্ধার কর্যক্রম সম্পর্কে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা গেলেও কি মাত্রায় এটি আঘাত হানবে সেই পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। ফলে দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতনতা এবং আধুনিক বসবাস পদ্ধতিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বিল্ডিং নির্মাণ প্রয়োজন। জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে শহরাঞ্চলে নতুন ইমারত নির্মাণকালে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা বিশেষ জরুরি। ইতিমধ্যে নির্মিত বিল্ডিং যা ভূমিকম্প সহনীয় নয়, তা চিহ্নিত করে দ্রুত সংস্কার করা না হলে যে কোন ছোট আকারের ভূমিকম্পেও অসংখ্য প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে।

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভূমিকম্পপরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের উপকরণ স্বল্পতা। সামান্য অগ্নিকাণ্ডের উদ্ধার ততপরতা যেখানে অপ্রতুল সেখানে ভূমিকম্পের মতো এত বিশাল ধংস্বযজ্ঞ মোকাবেলা আধুনিক উদ্ধার উপকরণ ছাড়া অসম্ভব। ভূমিকম্প রোধ সম্ভব না হলেও উদ্ধার কার্যক্রমের পূর্বপ্রস্তুতির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় মানুষকে ভূমিকম্প পূর্বাপর প্রাথমিক করণীয় সম্পর্কে সচেতন করার বিষয়ে শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণে গুরুত্বারোপ জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গণের ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক শিক্ষাদানে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয় ভুমিকম্পের অন্যতম প্রধান কারণ চিহ্নিত। অথচ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা কিংবা উন্নয়ণে যথাযথ পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয় নয়। পাহাড় ধ্বংস গাছকাটা, নদীশাসনের মতো পরিবেশ বিরুদ্ধ ঘটনা অহরহ ঘটছে। এ নিরোধে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও প্রয়োগ নেই। ফলে ভূমিকম্পের পূর্বেই আমরা বহু দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। প্রাণ ও সম্পদহানীর ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। অন্যদিকে উদ্ধার ততপরতার অপ্রতুলতায় বিপন্ন জীবন স্বাভাবিক রূপ নিতে পারেনি।

তাই ভূমিকম্পের মতো বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ থেকে প্রাণ ও সম্পদ বাঁচাতে উদ্ধার কার্যক্রমের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ ছাড়া জনগণের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হবে; এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। বন্যা, প্রলয়ঙ্করী ঝড় সম্পর্কে বাংলাদেশীরা সম্যকভাবে অবগত থাকায় এ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য জনগণ ও সরকারি মহলে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ভবনাদি মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প সহনযোগ্য নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ। বাংলাদেশ বর্তমানে ভূমিকম্পপ্রবন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় দ্রুত জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বহুতলভবন ডিজাইন ও নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা অবশ্যজরুরি। বিশেষকরে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা দরকার। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও তার মাত্রা যেহেতু নির্ধারণ যায় না সে ক্ষেত্রে দুর্যোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা ও নিরাপদ বসবাস পদ্ধতি অবলম্বন করারও কোন বিকল্প নেই। তবে অবশ্যই ভূমিকম্পপরবর্তী উদ্ধার ততপরতার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতেই হবে।


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

আমার জানামতে ঢাকা বড় ভূমিকম্পের এপিসেন্টার হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে সোনারগাঁও বা ৩৫ মাইল রেডিয়াসে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৩০% ভবন তা নিতে পারবে না (প্রথম আলো অনুযায়ী)।

ভবনগুলো সতর্ক নাগরিকদের ৭ মাত্রা উপযোগী করা উচিৎ, বিশেষত বহুতলগুলো। না করতে পারলে সামনে হাইতির মত বিশাল ধাক্কা খাওয়ার বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়লে সেটা ঠিক কাজের হবে না।

এটায় যেহেতু ব্যক্তি-উদ্যোগে কাজ হবে, নিজেদের বাসা-বাড়িগুলোর দিকে আগে নজর দেয়া দরকার। আমরা সামনে কনকর্ডের একটা ফ্ল্যাটে যাবো, সামনের বছর আরকি। ১৭ তলায় আমাদের ফ্ল্যাট। কনকর্ডের কাগজপত্রে লেখা সাড়ে ছয় মাত্রা পর্যন্ত সামলাতে পারবে (বা এরকমই, সঠিক মনে নেই)। সাত হলে তাহলে তো ধ্বসে পড়বে। মন খারাপ

হয়তো একবার এরকম হাঁতুড়ির বাড়ি আমাদের লাগবেই। ১৯৭০ এর সাইক্লোনে মারা যাওয়া ১০ লাখ বনাম আইলা-সিদরে সীমিত আহত-নিহতের কথা ভাবুন। আমরা মনে হয় না ঠেকলে শিখি না।

সামনে আর্কিটেকচার পড়ে নিজের জন্য ৮ মাত্রা-উপযোগী বাড়ি বা খড়-পাতার ঘরে বসবাসের চিন্তাভাবনা শুরু করা দরকার।

হাইতির ঘটনার অনেক দার্শনিক ইম্পিক্লেশনও আছে। এটা নিয়ে কারো লেখা দরকার। জীবন যে কি ভঙ্গুর, কি সীমিত, এটা তার প্রমান।

শেখ নজরুল এর ছবি

চাকরিসূত্রে আমার জাপান যাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। সময়টাও ছিলো ওসাকার দুর্যোগপরবর্তী। সেখানকার বর্তমান স্থাপনাগুলো ইস্পাতকৌশলে নির্মিত হয়েছে। আর ফাউন্ডেশনে সেফটিফ্যাক্টর হিসেবে স্প্রিং তো আছেই। সবকিছু মেনে নির্মানকাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও তারা দুর্যোগ এড়াতে পারছে না। আর আমাদের এখানে তো কোন নিয়মই মানা হয়। ব্যক্তিপর্যায়ে আমরা অল্পতে সবকিছু সারতে চাই। সে ক্ষেত্রে সেফটিফ্যাক্টর নিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচের সমার্থ যেমন নেই তেমনি সবকিছু যেন গাসহা হয়ে গেছে। তাই ভয়টা একটু বেশি।

ঢাকার ক্ষতির বিষয়ে আপনার বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়; এখানে মাত্রাতিরিক্ত নির্মাণের ফলে ভূগর্ভস্থ স্তরে একটা চাপ আছে। তাছাড়া যে স্তরকে পানি স্থির রাখে সে স্তরও কিন্তু অনেক নেমে গেছে; তাই দুর্ঘটনা অনেক দূরেও ঘটলে সামান্য প্রতিক্রিয়ায় বড় শহরগুলোতে বিপর্যয় নামতে পারে।শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

জাগরযন্ত্রী এর ছবি

এরকম একটি লেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম ।

শেখ নজরুল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন। নিরাপদে থাকবেন।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আমরা বাংলাদেশিরা সম্ভবত দুর্যোগের মুহুর্তে ফায়ার-ফাইটিং এ অভ্যস্ত জাতি। আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই আগে থেকে সাবধান হবার অভ্যাস কম। সাইক্লোনের ক্ষেত্রে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান আর পূর্বাভাস আরো বেশি বিশ্বাস যোগ্য করার দরুন ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমে গেছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূলের লোকেদের আর সরকারের বুদ্ধি হতে অনেক সময় লেগে গেছে। ভুমিকম্পের ক্ষেত্রে সেই সময়ত পাওয়া যাবে না।

শেখ নজরুল এর ছবি

সহমত। তবে যে সব ক্ষেত্রে আমরা দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি সে সব ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তাই হয়তো কিছুটা নিস্তারও পেতে পারি। কিন্তু ভূমিকম্পের মতো কোন বড় দুর্যোগ যদি সংগঠিত হয় তবে তা মোকাবেলার যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে রাখা দরকার।
ধন্যবাদ আপনাকে।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

তানভীর এর ছবি

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।

দেশের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পেও বিশেষ-অজ্ঞ হইলে তো অসুবিধা; কারণ আবহাওয়ার সাথে ভূমিকম্পের কোন সম্পর্ক আছে কখনো শুনি নাই হাসি

সম্ভবত ভূতত্ত্ববিদদের কথা বলছেন, নাকি? আমাগোও একটা ভূতো আছে কিন্তুক...হুমম

প্রাসঙ্গিক পোস্টঃ ভূমিকম্পে কী করণীয়

শেখ নজরুল এর ছবি

ঠিকই বলেছেন, এটি ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞদের বলার কথা। কিন্তু আমার জানামতে, বাংলাদেশে বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞ মানুষ মানেই তিনি সব বিষয়ে জানেন। এটিই দেখে আসছি। যিনি একটু বেশি বলতে পারেন, তাকেই অভিজ্ঞ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এখানেও তাই হয়েছে।

ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল এর ছবি

এখানে তাই। একটা হলেই হলো। বলছে এটিই তো অনেককিছু। ধন্যবাদ আপনাকে।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

নাহার মনিকা এর ছবি

হাইতির ভূমিকম্পের খবর দেখছি, মৃত্যু, মানুষদের অসহায়তা, বিভীষিকাময় ধবংসাবশেষের ভেতরে আটকে থাকা মানুষের আহাজারি আর বাইরের মানুষের টেকনোলজিহীন উদ্ধার পরিকল্পনা নিয়ে বিতন্ডা দেখছি (তখনো বাইরের সাহায্য এসে পৌঁছেনি)। দেখতে দেখতে স্বার্থপরের মত আমার পুরানো আতংক ফিরে এলো- যদি দেশে, ঢাকা শহরে এরকম হয়?

দরকারী লেখা লিখেছেন। ধন্যবাদ।

শেখ নজরুল এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আমরা অন্যদের অসহায়ত্ব দেখেই নিজেদের কথা ভাবতে শুরু করি। অবশ্য এটি বেশিদিন থাকেও না।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল এর ছবি

মন্তব্য-এর জন্য ধন্যবাদ।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাবিয়ে দিলেন নজরুল।
মধুবন্তী

শেখ নজরুল এর ছবি

ভাবনার সময়ও যে দেবে না। 'তোমার আমার মৃত্যু হবে সামান্য কারণে'
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

সাইফ তাহসিন এর ছবি

ইয়ে, মানে...
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

শেখ নজরুল এর ছবি

ভয় পেলে আমি দুঃখিত।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

অতিথি লেখক এর ছবি

শেখ নজরুল ভাই, খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন সামগ্রিকভাবে বিষয়টি। আপনার লেখার প্রথম অংশ হৃদয়কে নাড়িয়ে গেলেও শেষ অংশে এসে কিছুটা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লাম নিজের অস্তিত্বের ভবিতব্য নিয়ে।
নজরুল ভাই, আপনার লেখায় কিছু শব্দে 'ৎ' এর অনুপস্থিতি দেখা গেছে।

ভাল থাকুন ভাই।

শেখ আমিনুল ইসলাম

শেখ নজরুল এর ছবি

ধন্যবাদ। খণ্ড ত দিলে এই সমস্যা হয়।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।