এসো শিখি কোয়ান্টাম মেকানিক্স! (পর্ব ২)

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: বুধ, ১৪/০১/২০০৯ - ৪:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনুবাদের দারুন হ্যাপা। অবশ্য সাইন্টিফিক কিছু অনুবাদ করা বেশ সহজ। সমস্যা যা কিছু তা ওই পরিভাষা নিয়ে। আর সাহিত্য অনুবাদ! সেই জিনিস শিখতে আরো তিনচারবার  জন্ম নেওয়া লাগবে। তারপরও ফাইনম্যানের কোন লেকচার অনুবাদ করতে গেলে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তার লেকচারের যে সাহিত্য গুন সেটা অনুবাদে ধরা মুশকিল। পাঠকের কাছে তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আর কোন প্রশ্ন বা অস্বচ্ছতা থাকলে কমেন্ট আশা করছি। আপনি কি বুঝলেন সেটাও লিখতে পারে। তাহলে একটা ভালো আলোচনা হতে পারে সব কিছু নিয়ে। ইদানিং সব কিছুতেই ভূমিকা করার বদ অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে তাই আর ভূমিকা করব না। শুধু আগের পর্বের [লিঙ্ক] একটু রিক্যাপ...
 
আগের পর্বে আমরা জেনেছি কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের সাধারণ ইনটুইশনের সাথে ঠিক যায়না। তাই এটা শিখতে সব চেয়ে বেশি সাহায্য লাগে ‘প্রথা বিরুদ্ধ’ কল্পনা শক্তির। আর অন্য সব তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের আলোচনার মত এই আলোচনাতেও আমরা কিছু ‘থট এক্সপেরিমেন্টের’ সাহায্যে ধাপে ধাপে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সেই (কল্পনা নির্ভর বাস্তব) চিত্র দেখতে চাইব। আসলে আমরা এস,এস,সি লেভেলে যখন প্রথম নিউটনের সূত্রগুলো শুনি আমাদের সেটা মেনে নিতে তেমন কষ্ট হয়নি। অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, কেন দুইটি বস্তুর আকর্ষন তাদের দুরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক? কেন ঘনের ব্যস্তানুপাতিক না? আরো স্মার্ট কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারে যে কেন এটা বর্গ হতে হবে কেন 2.7 বা অন্য কোন সংখ্যা না? তার পরও সেটা শিখতে আমাদের সমস্যা হয়নি। কারণ স্বীকার্য(Postulate) বা স্বতসিদ্ধ(axiom) গ্রহন করা তখন সহজ ছিল। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমস্যা হল এটা (গাণিতিক ভাবে) ‘প্রমাণ’ করা সম্ভব না। পুরো ব্যাপারটাই দাঁড়িয়ে আছে কিছু স্বীকার্যের (Postulates of Quantum Mechanics) উপর। আর এই স্বীকার্যগুলো আমরা শিখতে বাধ্য হই এমন একটা বয়সে যখন আমরা সবাই কিছুনা কিছু গাণিতিক পরিনতি(Mathemetical Maturity) লাভ করেছি। আর এই পরিণতির সাথে সাথে আমাদের মধ্যে জন্ম হয়েছে ‘নতুন যে কোন কিছুকে আমাদের জানা জিনিসের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করার স্পৃহা’। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের স্বীকার্যগুলো একে তো প্রচন্ড কাউণ্টার ইন্টুইটিভ (ধারণার সাথে মোটেই মেলেনা) তার উপর এটা হচ্ছে প্রকৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য। তাই এসব স্বীকার্যগুলো আমরা প্রমাণ করতে চাইবো(পারবো) না। বরং এদের উপর দাঁড়িয়ে আমরা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের আরেকটু গভীরে এগিয়ে যেতে চাইবো। এই আলোচনায় আমাদের লক্ষ্য এইসব স্বীকার্যের মূল বক্তব্যটা জানা। এবং বাস্তব ঘটনার(উদাহরণের) সাথে তাদের যোগাযোগ স্থাপন। সেই সাথে নিজের ‘ক্লাসিকাল’ চিন্তার সীমাবদ্ধতা কিছুটা কাটানো। আমাদের প্রথম থট এক্সপেরিমেন্ট ( বুলেট পরীক্ষা- অনুচ্ছেদ ১-২) এর সাহায্যে আমরা দেখেছি বুলেটের (যেটা একেক বারে একটা করে আসে) ব্যতিচার হয়না। “ব্যতিচার হয়না” এই দাবী কেন করা হল সেটা আমরা এই পর্বে বুঝতে পারব তরঙ্গ পরীক্ষার মাধ্যমে। এছাড়াও আরো দুইটি অনুচ্ছেদ থাকছে। তাদের বিষয়ে হিন্ট দিয়ে এখনই মজা নষ্ট করতে চাচ্ছিনা। তাহলে পড়তে থাকুন, হ্যাপি কোয়ান্টাম মেকানিক্স!
 
 
১-৩ তরঙ্গ পরীক্ষা (An Experiment With Waves)
 
এখন আমরা পানির তরঙ্গ নিয়ে একটা পরীক্ষা করব। পরীক্ষার উপকরণগুলো চিত্র ১-২ এ দেখানো হয়েছে। পুরো পরীক্ষাটাই হবে একটা অগভীর জলাধারে। “তরঙ্গ উৎস”(wave source) হিসাবে আমরা একটা ছোট্ট বস্তুকে ব্যবহার করছি। তরঙ্গ সৃষ্টি করার জন্য যেটাকে একটা মোটরের সাহায্যে নিয়মিত ছন্দে উপর-নিচে দোলানো হবে। এই আলোড়ন পানির উপরিতলে বৃত্তাকার তরঙ্গমুখের তরঙ্গ সৃষ্টি করে(অর্থাৎ পানির বৃত্তাকার ঢেউ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে)।  আগের মতই এই উৎসের ডানদিকে দুই ছিদ্র বিশিষ্ট্য একটা দেওয়াল আছে। তার পরে আরো ডানে আছে আরেকটা “গ্রাহক দেওয়াল” (absorber)। গ্রাহক দেওয়ালটা এমন, যে সেখান থেকে কোন তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়না। প্রতিফলন ঠেকানোর জন্য আমরা গ্রাহক হিসাবে খাড়া দেওয়ালের বদলে বালির একটা ঢালু সৈকত ব্যবহার করতে পারি। গ্রাহকের (absorber) সামনে আমরা একটা ‘ডিটেক্টর’ স্থাপন করব যাকে x-অক্ষ বরাবর উপর নিচে করা যায়।(মনে রাখতে হবে এই পরীক্ষায় x-অক্ষ হচ্ছে নিচ থেকে উপরের দিক)। ডিটেক্টর হিসাবে আমরা এমন একটা যন্ত্র কল্পনা করে নিতে পারি যা এই তরঙ্গের উচ্চতা মাপতে পারে। এই যন্ত্রের রিডিং(পাঠ) যেন তরঙ্গ তীব্রতার (intensity) সমানুপাতিক হয়, সে জন্য যন্ত্রের স্কেলকে ঢেউয়ের উচ্চতার বর্গ অনুযায়ী ক্যালিব্রেট( calibrate) করা হয়েছে। তাই আমাদের এই ডিটেক্টরের রিডিং তরঙ্গের মধ্য দিয়ে কি পরিমান শক্তি প্রবাহিত হচ্ছে (অথবা আরো ভাল ভাবে বললে, কি হারে ডিটেক্টরে শক্তি পৌছাচ্ছে) তার সমানুপাতিক।
 
আমাদের এইসব তরঙ্গ উপকরণ নিয়ে প্রথমেই যে জিনিসটা আমরা লক্ষ্য করি তা হল, তরঙ্গের তীব্রতা যেকোন মানের হতে পারে। উৎস যদি খুব অল্প নড়াচড়া করে তাহলে ডিটেক্টরেও খুবই অল্প তরঙ্গ দেখা যাবে। উৎসের নড়াচড়া বাড়লে তরঙ্গের তীব্রতাও বাড়তে থাকবে। তারমানে, তরঙ্গের তীব্রতা যেকোন মান ধারণ করতে পারে। এই তীব্রতা কোন ‘নির্দিষ্ট মানের’ ধাপে  ধাপে (Discrete Steps) বাড়ে/কমে না। এর মান তাই ক্যালকুলাসের ভাষায় continuous (অবিচ্ছিন্ন)। এতে কোন ‘lumpiness’ বা ‘খন্ডভাব’ নেই।

চিত্র ১-২:: পানির তরঙ্গের ব্যতিচারের পরীক্ষা (চিত্র বড় করতে ক্লিক করুন)

এখন যদি আমরা তরঙ্গ উৎস একই ভাবে চালু রেখে x-এর বিভিন্ন মানের জন্য ‘তীব্রতা’ (intensity) এর পাঠ(reading) নেই, তাহলে আমরা চিত্রের (c) অংশে I12 সূচিত মজার একটা কার্ভ (লেখ) পাই।
 
I12 এর মত কার্ভ কিভাবে তৈরি হতে পারে তা আমরা ভলিউম ১ এ তড়িৎচৌম্বকিয় তরঙ্গের ব্যতিচারের (Interference of electromagnetic waves) আলোচনায় দেখেছি [নিচে অনুবাদকের নোট ১ দেখুন]।  এক্ষেত্রে আমরা দেখি যে, মূল তরঙ্গ ছিদ্রের কাছে এসে অপবর্তিত(diffracted) হচ্ছে এবং সেখান থেকে নতুন বৃত্তাকার তরঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে। এখন যদি আমরা একটা ছিদ্র বন্ধ করে শুধু অন্য ছিদ্র খোলা রেখে আবারো পাঠ নেই, তাহলে চিত্রের (b) অংশের মত সদামাটা কিছু তীব্ররতার লেখচিত্র (intensity carve) পাই। এখানে I1হচ্ছে শুধু ১ নং ছিদ্রের জন্য তীব্রতা(যেটা আমরা পাবো ২ নং ছিদ্র বন্ধ রেখে) এবং I2 হচ্ছে শুধু মাত্র ২ নং ছিদ্রের জন্য প্রাপ্ত (১ নং ছিদ্র বন্ধ রেখে) তীব্রতার লেখ।
 
এখান থেকে আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি যে উভয় ছিদ্র খোলা রেখে প্রাপ্ত তীব্রতা I12 নিশ্চিত ভাবে I1 এবং I2 এর যোগ ফলের সমান নয়। আমরা বলি, এখানে দুইটি তরঙ্গের ‘ব্যতিচার’ (Interference) হচ্ছে। যেসব স্থানে I12 কার্ভের ম্যাক্সিমা (বেশি উচু) সেসব স্থানে উভয় তরঙ্গ একই দশায় (in phase) পৌছাচ্ছে। এর ফলে সেখানে ‘গঠনমূলক ব্যতিচার’ (constructive interference) হচ্ছে। গ্রাহক দেওয়ালের (absorber) যে সব স্থান থেকে একটি ছিদ্রের দুরত্ব ও অন্য ছিদ্রের দূরত্বের ব্যবধান তরঙ্গদৈর্ঘের পূর্ণ গুনিতক যেসব স্থানে আমরা গঠনমূলক ব্যতিচার পাই। ফলে তীব্রতা কার্ভের উচ্চতা সেখানে সব চেয়ে বেশি (সঠিক ভাবে বললে গুরু মানে বা maxima তে) থাকে।
 
যেসব স্থানে তরঙ্গ দুইটি বিপরীত দশায় পৌছায়( অর্থাৎ ফেজ পার্থক্য π হয়) সেসব স্থানে প্রাপ্ত লব্ধ তরঙ্গের বিস্তার দুইটি বিস্তারের পার্থক্যের(difference) সমান। এই ঘটনাকে আমরা বলি “ধ্বংসাত্বক ব্যতিচার” (destructive interference)। একারণে এইসব স্থানে তরঙ্গের তীব্রতা কম থাকে। গ্রাহক দেওয়ালের যেসব বিন্দু থেকে প্রথম দেওয়ালের ছিদ্রদুটির দূরত্বের পার্থক্য অর্ধতরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বেজোড় গুনিতক(odd multiple of half-wave) সেসব স্থানে ধ্বংসাত্বক ব্যতিচারের ফলে আমরা I12 এর লঘুমান(minima) পাই।
 
পরিমানগত ভাবে(quantitatively) I1, I2 এবং I12 এর সম্পর্ককে আমরা এভাবে প্রকাশ করতে পারি রাখতে পারি – ১ নং ছিদ্র দিয়ে ডিটেক্টরে পৌছানো পানির তরঙ্গের তাৎক্ষনিক উচ্চতাকে প্রকাশ করা হবেh1eiωt(এর বাস্তব অংশ) দ্বারা, যেখানে সাধারণত h1 একটি জটিল সংখ্যা। তরঙ্গের তীব্রতা হবে পানির গড় বর্গ উচ্চতার(mean square height) সমানুপাতিক। জটিল সংখ্যা আকারে লিখলে পরমমানের বর্গ |h1|2 এরসমানুপাতিক। একই ভাবে ছিদ্র ২ এর জন্য উচ্চতা h2eiωt  এবং তীব্রতা |h2|2 এর সমানুপাতিক। যখন দুইটি তরঙ্গ একই সাথে ক্রিয়াশীল তখন পানির তাৎক্ষনিক উচ্চতা হয় (h1+h2)eiωt এবং এর তীব্রতা হয় |h1+h2|2  সমানুপাতিক। আমাদের বর্তমান হিসাবের জন্য আমরা যদি সমানুপাতিক ধ্রুবক গুলোকে অগ্রাহ্য করি তাহলে ব্যতিচারী তরঙ্গের যে সম্পর্কগুলো আমরা পাই তা হল:
I1=|h1|2
I2=|h2|2
I12= |h1+h2|2 … …  (1.2)
বুলেট পরীক্ষার( সমীকরণ 1.1) ফলাফলের সাথে এই ফলাফলের পার্থক্য আমরা সহজেই দেখতে পাচ্ছি। এখন আমরা যদি |h1+h2|2   কে ভেঙ্গে লিখি তাহলে পাই,
|h1+h2|2 =|h1|2+|h2|2+2|h1||h2|cosδ ………. ………. (1.3)
 
এখানে δ হচ্ছে h1এবংh2এর মধ্যে দশা পার্থক্য (phase difference)। তীব্রতার হিসাবে লিখলে,
I12= I1 + I2+2√( I1I2)cosδ ……… ……… (1.4)
এখানে শেষক্ত পদটি হচ্ছে ব্যতিচারী পদ (interference term)
 
যাক, পানির তরঙ্গ নিয়েও অনেক হল। আমরা অন্তত এটুকু জানতে পারলাম যে, এর তীব্রতা যে কোন মানের(any valued) হতে পারে এবং এটা ব্যাতিচারী(shows interference)।
 
১-৪ ইলেকট্রন পরীক্ষা (An Experiment With Electrons)
এখন আমরা ইলেকট্রন নিয়েও এই ধরনের একটা পরীক্ষা কল্পনা করব। চিত্র ১-৩ এ পরীক্ষার উপকরণগুলো দেখা যাচ্ছে। এক ছিদ্র বিশিষ্ট একটা ধাতব বক্সের মধ্যে একটা টাংস্টেন তারকে তড়িৎ প্রবাহের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হবে। এখন যদি ধাতব বক্সটির সাপেক্ষে টাংস্টেন তারের তড়ৎ বিভব ঋনাত্বক হয়, তাহলে তার থেকে নিক্ষিপ্ত ইলেকট্রন ধাতব দেওয়ালের দিকে ধেয়ে আসবে এবং এদের কিছু কিছু ছিদ্র পার হয়ে বাইরে ছুটে যাবে। এই ধাতব টাংস্টেন তার ওয়ালা এক ছিদ্র বিশিষ্ট ধাতব বাক্সকে আমরা ব্যবহার করব ইলেক্ট্রন গান হিসাবে। এভাবে এই ছিদ্র পার হয়ে আসা সব ইলেকট্রনের শক্তিই (প্রায়) একই মানের হবে। এখানেও ইলেকট্রন গানের সামনে একটা দুই ছিদ্র বিশিষ্ট পাতলা ধাতব দেয়াল(wall) আছে। এই দেয়ালের ডানে আরো একটি দেয়াল আছে যেটাকে আমরা বলব “স্থিতি দেয়াল” (backstop)। স্থিতিদেয়ালের সাথেই আছে একটা নড়নক্ষম (movable) ডিটেক্টর। ডিটেক্টরটা হতে পারে একটা গাইগার(geiger) কাউন্টার, আরো ভাল হয় যদি হয় লাউড স্পিকারের সাথে যুক্ত একটা ইলেকট্রন প্রবর্ধক (electron multiplier)।
 
এখনই বলে নেওয়া ভাল যে এই পরীক্ষা নিজে করতে যাওয়া ঠিক হবে না(আগের দুইটা অবশ্য চেষ্টা করে থাকতে পারে কেউ কেউ)। এই এক্সপেরিমেন্ট এভাবে কখনই করা হয়নি। সমস্যা হচ্ছে পরীক্ষা উপরণগুলো এত ছোট স্কেলে(আকারে) তৈরি করতে হবে যে তখন আর আমরা যেই ইফেক্ট দেখতে আগ্রহী সেটা দেখা সম্ভব হবেনা। আসলে আমরা এধরণের একটা “থট এক্সপেরিমেন্ট” (thought experiment) করতে যাচ্ছি কারণ এরকম একটা সেট আপ কল্পনা করা সহজ। রেজাল্ট কি হবে সেটা আমরা জানি, কারণ এধরনের অনেক এক্সপেরিমেন্ট (যেখানে স্কেল ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এমন ভাবে ঠিক করে যাতে ইফেক্ট গুলো পর্যবেক্ষন করা সম্ভব হয়) ইতিমধ্যেই করা হয়েছে।
 
এই পরীক্ষায় প্রথমেই যে জিনিসটা আমারা খেয়াল করি তা হলো, লাউডস্পিকার থেকে আসা তীক্ষ্ণ “ক্লিক ক্লিক” শব্দ। প্রতিটা ক্লিকই পুরোপুরি একই রকম। মানে “অর্ধ বা অসম্পূর্ণ ক্লিক” (half-click) বলে কিছু নেই।
 
আমরা আরো খেয়াল করি যে, ক্লিকগুলো আসছে খুব এলোমেলো ভাবে। অনেকটা: ক্লিক.........ক্লিক-ক্লিক...ক্লিক.........ক্লিক......ক্লিক-ক্লিক......ক্লিক... এরকম। গাইগার কাউণ্টারে ঠিক যেভাবে শোনা যায়। আমরা যদি বেশ কিছুটা সময় ধরে (প্রায় কয়েক মিনিট) এই ক্লিকগুলো গুনি এবং এর পরে আরেকবার একই সময় ধরে আবারো ক্লিক গুনি তাহলে দেখা যাবে দুইবারের প্রাপ্ত সংখ্যা প্রায় সমান। অর্থাৎ আমরা চাইলে ক্লিক শোনার একটা গড় হার হিসাব করতে পারি (প্রতি মিনিটে এত ক্লিক, এভাবে)।

চিত্র ১-৩:: ইলেকট্রনের ব্যতিচার পরীক্ষা (চিত্র বড় করতে ক্লিক করুন)

আমরা যদি এখন আমাদের ডিটেক্টরটাকে উপর-নিচে সরাতে থাকি তাহলে একেক অবস্থানে একেক হারে ক্লিক শুনব। কিন্তু প্রত্যেকটা ক্লিকের আকার বা জোর (loudness) একই রকম থাকবে। আমরা যদি ইলেকট্রন গানের টাংস্টেন তারের তাপমাত্রা কমিয়ে দিই তাহলে ক্লিক শব্দের হার কমে যাবে কিন্তু এখনো প্রতিটা ক্লিক শুনতে একই রকম লাগবে। এখন আমরা যদি স্থিতিদেয়ালের কাছে দুইটা ডিটেক্টর রাখি তাহলে দেখব যখন একটা ডিটেক্টর ক্লিক করে তখন অপরটা ক্লিক করেনা। মানে কখনই দুইটা ডিটেক্টর একসাথে ক্লিক করেনা (অবশ্য কখনো কখনো দুইটা ক্লিক এত কাছাকাছি সময়ে হবে যে আমাদের কানে হয়তো সেটা ধরা পড়বে না)। এ থেকে আমরা যে উপসংহারে পৌছাব সেটা হলো স্থিতিদেওয়ালে(backstop) যাই পৌছাক না কেন, একেক বারে একেক টুকরো(পূর্ণ খন্ড) করে আসে (arrives in “lumps”)। প্রতিটা টুকরো একই আকারের। এবং তারা স্থিতিদেওয়ালে একে একে পৌছায়। আমরা বলব: “যখন ইলেক্ট্রন আসে তখন একই আকার আকৃতিতে আসে”(comes in identical lumps) [বুলেট পরীক্ষা দ্রষ্টব্য]
 
আমাদের আগের বুলেট পরীক্ষার মত এখানেই আমরা এখন একটা প্রশ্নের উত্তর খুজব- “স্থিতি দেয়ালের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন x-দূরত্বে ইলেক্ট্রনের একক(lumps) গুলো পৌছানোর আপেক্ষিক সম্ভাব্যতা(relative probability) কত?” আগের মতই আমরা ইলেক্ট্রন গানকে একই রকম(একই হারে ক্রিয়াশীল) রেখে স্থিতি দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ক্লিক এর হার পর্যবেক্ষণ করব। কোন নির্দিষ্ট x স্থানে একটা ইলেক্ট্রনের একক(lump) পৌছানোর সম্ভবনা ঐ x-এ প্রাপ্ত গড় ক্লিক সংখ্যার সমানুপাতিক।
 
চিত্র ১-৩ এর (c) অংশে আমরা যে চমৎকার কার্ভটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে এই পরীক্ষায় পাওয়া সম্ভাব্যতার কার্ভ! হ্যা, ইলেকট্রন ছুড়ে মারা এবং স্থিতি দেওয়ালের পৌছানোর প্রক্রিয়া বুলেটের মত হলেও এর কার্ভ পানির তরঙ্গের মত! ইলেকট্রনের মজাটা এখানেই।
 
 
 
১-৫ ইলেকট্রন তরঙ্গের ব্যতিচার ( Interference of Electron Waves)
 
এবার তাহলে চিত্র ১-৩ এর কার্ভ(লেখ)টাকে আমরা বোঝার চেষ্টা করি। দেখা যাক, ইলেকট্রনের আচরণ বুঝতে পারিকিনা। প্রথমেই আমরা বলব যে, যেহেতু ইলেকট্রন একেক বারে একেকটা করে আসে, সেহেতু প্রতিটা ইলেকট্রন নিশ্চই হয় ১নং অথবা ২নং ছিদ্র পার হয়ে আসবে। এই কথাকে আমরা একটা “প্রস্তাবনা” (proposition) আকারে লিখে ফেলি:
 
প্রস্তাবনা A : প্রতিটা ইলেকট্রন, হয় ছিদ্র ১ অথবা ছিদ্র ২ দিয়ে পার হয়।
 
প্রস্তাবনা A কে ধরে নিলে স্থিতি দেয়ালে পৌছানো সব ইলেকট্রনকে দুইটা দলে ভাগ করা যায়। ১) যারা ছিদ্র ১ হয়ে আসে, এবং ২) যারা ছিদ্র ২ হয়ে আসে। তাই, নিশ্চয়ই আমাদের দেখা কার্ভটা (চিত্র ১-৩ (c)) এই ১) ও ২) প্রকারের ইলেকট্রনের জন্য পাওয়া পৃথক কার্ভের যোগফল হবে। তাহলে পরীক্ষা করে দেখা যায় এই ধারণা সঠিক কিনা। প্রথমে আমরা ছিদ্র ১ থেকে আসা ইলেকট্রনের জন্য পাঠ নিব। এর জন্য আমরা ২ নং ছিদ্র বন্ধ করে নেব। ক্লিক করার হার থেকে আমরা P1 পাই। এই পরীক্ষার ফলাফল চিত্র ১-৩ এর (b) অংশে P1 নামে চিহ্নিত আছে। একইভাবে আমরা ছিদ্র ২ থেকে আসা ইলেকট্রনের জন্যও সম্ভাব্যতার কার্ভ P2পাই। এই ফলাফলও চিত্রে দেখানো হয়েছে।
 
এটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, যে উভয় ছিদ্র খোলা রেখে প্রাপ্ত ফলাফল P12 একে একে পাওয়া ফলাফল P1 এবং P2 এর যোগ ফলের সমান নয়! পানির তরঙ্গের পরীক্ষার মত করে আমরা বলতে পারি এখানে “ব্যতিচার ঘটছে” (there is interference):
ইলেকট্রনের জন্য:  P12 ≠P1+P2
……. .(1.5)
 
কিন্তু এরকম একটা ব্যতিচার সম্ভব হলো কি করে? হয়তো আমরা ভাববো, “হুম, তারমানে, ইলেকট্রন যে একের পর এক কখনো ছিদ্র ১ আবার কখনো ছিদ্র ২ পার হয়ে আসে তা আসলে সত্যি নয়। প্রথমে তারা দুই টুকরো হয়ে যায় এরপর...” কিন্তু তা কি করে হয়!! হতেই পারেনা। আমরা দেখেছি তারা সব সময়ই পূর্ণ (একেকটা) একক আকারে আসে। “আচ্ছা, তাহলে হয়তো কিছু ইলেকট্রন প্রথমে ছিদ্র ১ দিয়ে পার হয়, তারপর ঘুরে আবার ছিদ্র ২ দিয়ে, এবং এরপর আরো কয়েকবার এভাবে ঘুরাঘুরি করে, অথবা আরো জটিল কোন পথে চলে... এরপর যখন ছিদ্র ২ বন্ধ করা হয় তখন আমরা আসলে ১ নং থেকে আসা ইলেকট্রনের স্থিতি দেয়ালে পৌছানোর সম্ভবনা বাড়িয়ে দিই(কারণ এরা আর তখন ২ নং দিয়ে বেরিয়ে ঘোরাঘুরি করতে পারেনা) এবং এর মাধ্যমে সেই ইলেকট্রনদের স্থিতি দেওয়ালে পৌছাতে একরকম বাধ্য করি...”। কিন্তু দেখা যাচ্ছে-
 
স্থিতি দেওয়ালের উপর এমন কিছু বিন্দু আছে, যেখানে উভয় ছিদ্র খোলা থাকা অবস্থায়ও ইলেকট্রন পৌছানোর হার কম, কিন্তু যখন কোন একটা ছিদ্র বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন সেই হার আবার যায় বেড়ে! তারমানে একটা ছিদ্র বন্ধ করাতে অন্য ছিদ্র দিয়ে পার হওয়া ইলেকট্রনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যদিও ইলেকট্রন গান একই ভাবে ক্রিয়াশীল।
 
 আরো লক্ষ্যকরি, P12স্থিতি দেয়ালের কেন্দ্রে P1+P2 এর থেকেও প্রায় দ্বিগুন! এই বেশী ইলেকট্রন পৌছানোর এলাকাতে আবার একটা ছিদ্র বন্ধ করার কারণে অন্য ছিদ্র দিয়ে পার হওয়া ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে! তাই ইলেকট্রনগুলো দুইটা ছিদ্র দিয়েই ঘুরেটুরে কোন জটিল পথে স্থিতি দেয়ালে পৌছায় এরকম ধারণা থেকে উভয় ঘটনা ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।
 
পুরো ব্যাপারটাই রহস্যজনক! আর এই ঘটনা যতবারই দেখা হয় ততই আরো বেশি রহস্যজনক মনে হয়। একেকটি ইলেকট্রন একবার ছিদ্র ১ দিয়ে গিয়ে তারপর ছিদ্র ২ দিয়ে ঘুরে তার পর আবার একটা জটিল পথে চলে P12 এর এই রহস্যজনক আকৃতি দিয়েছে, এধরনের অসংখ্য থিওরী তৈরি করার অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রচেষ্টাই কখনো সফল হয়নি। কোন থিওরীই P1 ও P2 এর সাপেক্ষে P12 কে ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
 
তারপরও, P1 ও P2 এর সাথে P12 কে সম্পর্কিত করার ম্যাথমেটিক্স খুবই সিম্পল। কারণ P12 এর কার্ভ চিত্র ১-২ এর I12 এর মতই তাই এর গণিতও সেটার মতই সরল হবার কথা। স্থিতিদেওয়ালে (backstop) কি ঘটছে সেটা বর্ণনা করা যায় দুইটা জটিলসংখ্যার(complex number) সাহায্যে যাদেরকে আমরা বলব φ1φ2 (এরা অবশ্যই x এর ফাংশান)। φ1 এর পরম মানের বর্গ হচ্ছে শুধু ছিদ্র ১ খোলা রেখে প্রাপ্ত ইফেক্ট। অর্থাৎ,  P1 =| φ1|2এবং একই ভাবে শুধু ২ নং ছিদ্র খোলা রেখে প্রাপ্ত ইফেক্ট পাই φ2থেকে যেখানে P2 =| φ2|2 । এবং দুইটি ছিদ্র খোলা রেখে প্রাপ্ত মিলিত ইফেক্ট (ক্রিয়া) পাই P12= |φ1+φ2|2 থেকে। ম্যাথমেটিক্সটা সেই পানির তরঙ্গের মতই! ( আসলে প্লেটের ছিদ্র দিয়ে ইলেকট্রন আগুপিছু করলে এধরণের একটা সিম্পল ম্যাথমেটিক্স পাওয়া সম্ভব না)
 
এখান থেকে আমরা যা বুঝি তা হল: ইলেকট্রনগুলো একেকটা একক আকারে আসে (comes in lumps) কিন্তু এই একক(lumps) গুলোর আগমনের সম্ভাব্যতার বিস্তৃতি (probability distribution) তরঙ্গের তীব্রতার বিস্তৃতির মত। আর এখান থেকেই আমরা ধারণা করতে পারি “ইলেকট্রন কখনো কণিকার মতো আবার কখনো তরঙ্গের মত আচরণ করে”
 
একটা মজার ব্যাপার হল, আমরা আগে থেকেই ক্লাসিক্যাল তরঙ্গের তীব্রতা হিসাবের জন্য তরঙ্গের বিস্তারের বর্গের গড় মান নিই, যেখানে হিসাব সহজ করার জন্য জটিল সংখ্যাকে একটা গাণিতিক ট্রিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, কোন ‘ট্রিক’ না, জটিল সংখ্যার ব্যবহার অপরিহার্য। শুধু বাস্তব অংশ দিয়ে কাজ হবেনা [ক্লাসিক্যাল তরঙ্গের ক্ষেত্রে জটিল সংখ্যা অপরিহার্য ছিলনা শর্টকাট হিসাবের বুদ্ধিছিল মাত্র]। যদিও উভয় ক্ষেত্রেই ফর্মুলা দেখতে একইরকম, তাই এখানে এটা একটা টেকনিকাল ব্যপার।
 
এখানে ইলেকট্রন আগমনের সম্ভবনা যদিও ঠিক (P1+P2) না। তারপরও এটা বেশ সিম্পল। কিন্তু প্রকৃতি যে ঠিক এভাবেই কাজ করে, সেই দাবিতে অসংখ্য অস্পষ্ট ব্যপার রয়েছে। আমরা এখন এইসব অস্পষ্টতা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
 
প্রথমত, যেহেতু আমাদের ‘প্রস্তাবনা A’ অনুযায়ী -‘কোন একটা বিন্দুতে ইলেকট্রন আগমনের সম্ভাব্যতা ১ নং ছিদ্র দিয়ে আগমনের সম্ভাব্যতা ও ২ নং দিয়ে আগমনের সম্ভাব্যতার যোগফলের সমান’- এই ধারণা সত্য নয়, তাই নিঃসন্দেহে প্রস্তাবনা A মিথ্যা। এটা সত্যি নয় যে ইলেকট্রন হয় ছিদ্র ১ অথবা ছিদ্র ২ দিয়ে আসে। এই উপসংহারকে অন্য একটা পরীক্ষার সাহায্যে টেস্ট করা যায়। [আমরা পরের পর্বে সেই পরীক্ষা দেখব]

(চলবে)


মন্তব্য

হাসানুল [অতিথি] এর ছবি

হুমমম, পুরাটা পড়লাম। খারাপ না, ভালই লিখেছিস। চালিয়ে যা। নতুন লিখা আসলে লিঙ্ক দিস।

স্পর্শ এর ছবি

দেব।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রণদীপম বসু এর ছবি

তুমি কি কুয়াশা, ধোঁয়া ধোঁয়া ধোঁয়া.....!!

আমি নাই..! উপর দিয়ে চলে গেছে..! একটাও আমারে ভেদ কইরা যাইতে পারে নাই..!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্পর্শ এর ছবি

ঠিকাছে, দেঁতো হাসি
এইটা বাচ্চাদের জন্য লেখা! আমাদের জন্য না, খাইছে আমি আপনি তো বুড়া হয়ে গেছি। মন খারাপ
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রণদীপম বসু এর ছবি

যাক্, সান্ত্বনা পাইলাম..! ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্পর্শ এর ছবি

খাইছে
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অনিকেত এর ছবি

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমস্যা হল এটা (গাণিতিক ভাবে) ‘প্রমাণ’ করা সম্ভব না।

কথাটা ঠিক না। আমার মনে হয়, আপনি 'অন্য কিছু' বোঝাতে চেয়েছিলেন এখানে। কো মে পুরোপুরি ভাবেই গাণিতিক। এইটা সত্য যে তার কিছু ফলাফল আমাদের সহজাত ধ্যান ধারনার বিপরীত---কিন্তু সেইগুলো সবই কিন্তু গাণিতিক ফলাফল। স্রোয়েডিঙ্গার এর সমীকরন সমাধান করে আমরা জানতে পারি পরমানু-জগতের আচার-বিচারের কথা। পরমানুর সংখ্যা বেড়ে গেলে গণিতটা জটিল হয়ে যায়---কিন্তু তার জন্যে তো আমরা অন্য উপায়ও খোলা রেখেছি।

প্রসঙ্গতঃ স্মর্তব্য আলফা কণার কোয়ান্টাম টানেলিং এর ব্যাপারটা।
আলফা কণা যে শক্তি নিয়ে পরমানুর ভেতরে বাস করে সেই শক্তি নিয়ে পরমানু থেকে বেরিয়ে আসা---আর বামন হয়ে চাঁদ হাতে পাওয়া একই জিনিস। কিন্তু কো-মে এর গাণিতিক সমাধান আমাদের জানায়---যত অসম্ভবই হোক না কেন-----যে কোন পঙ্গু ডিঙ্গিয়ে যেতে পারে পাহাড়।

আবারো দুঃখিত বিশাল মন্তব্য করে ফেলার জন্য।

অনুবাদ ভালো হচ্ছে।

চলুক।

স্পর্শ এর ছবি

হুম এই লাইনটা লেখার সময় আমিও ভাবছিলাম যে, যা বলতে চাচ্ছি ঠিক ভাবে বলতে পারছি কিনা।

'গাণিতিক ভাবে প্রমান করা সম্ভব নয়' বলতে আমি পস্টুলেটগুলোকে নির্দেশ করেছি। যদিও স্রডিঞ্জার ইকুয়েশন থেকে গাণিতিক ভাবেই অন্য সব ফলাফল ডিরাইভ করা হয়, কিন্তু এই স্রডিঞ্জার ইকুয়েশনটা কিন্তু বানানো হয়েছে 'ট্রায়াল আন্ড এরর' পদ্ধতি তে। একবার এই ইকুয়েশন আর তার সঙ্ক্রান্ত কিছু 'স্বীকার্য' (postulates) মেনে নিলেই [অনেকটা ঈমান আনতে হবে আরকি :-s] আমরা 'এর উপর ভিত্তি করে গাণিতিক ভাবেই' অন্য আর সব কিছু ব্যাখ্যা করতে পারব। এই ইকুয়েশন এত মৌলিক একটা 'আবিষ্কার' যে এটাকে প্রমান করা সম্ভব নয়। ইউক্লিডিয় জ্যামিতি তে যেমন কিছু স্বতসিদ্ধ (axiom) এর উপর আর সব দাঁড়িয়ে থাকে অনেকটা সেরকম। আমরা জ্যামিতিতে সব ফলাফল গাণিতিক ভাবেই পাই। কিন্তু কখনোই প্রমান করতে যাইনা যে "দুইটি সমান্তরাল রেখা কখনোই পরস্পর ছেদ করবে না" এটা ধরে নিয়েই আমাদের গাণিতিক অভিযাত্রা।

এ বিষয়ক তথ্য সূত্র আমি শিঘ্রই দিয়ে দিব।(সময় পেলেই)

আমার (ফাইন ম্যানের লেখা) এই অনুবাদ কৃত চ্যাপ্টারে তাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সেইসব জটিল গানিতিক ম্যানিপুলেশন নিয়ে ততটা কথা বলা হয়নি। আমরা কিছু পরীক্ষার সাহায্যে এর পোস্টুলেট গুলোর সাথে পরিচিত হতে চাইছি মাত্র। একবার এই পরিচিতি হয়ে গেলে এবং এদের মূল বক্তব্য আমরা জেনে গেলে। বাকি কোয়ান্টাম মেকানিক্স গাণিতিক ভাবেই ধাপে ধাপে শেখা যাবে। হাসি

আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। বড় মন্তব্যের জন্য বারবার দুঃখ করছেন কেন!! মন্তব্য বড় হলেই ভালো। ভালো ভাবে আলোচনা করা যায়। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

বজলুর রহমান এর ছবি

গাণিতিকভাবে প্রমাণ-অযোগ্য এর স্বীকার্যগুলো, তবে কাউন্টার-ইন্টুইটিভ কিনা আমি নিশ্চিত নই। ঢাবির নতুন উপাচার্য হিসাবে মিডিয়ার পছন্দ আরেফীন সিদ্দিক, এবং কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সাদা-কালো ( দুঃখিত, নীল) উভয় দলের কাছে প্রিয়, অর্থাৎ সাদারা এবং তাদের দোসররা গেল কয়েক বছর যেসব অন্যায় করেছে, তার হিসেব নেবেন না। মানে, তিনি এখানেও আছেন, ওখানেও; কোয়ান্টাম তরঙ্গের মত। অনেকেই এ দর্শন মেনে জীবনে সফল হন-- প্রকৃতির নিয়ম। গণিতে মাল্টিভ্যালিঊড লজিক থাকলেও, প্রয়োগের ক্ষেত্র সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।

স্পর্শ এর ছবি

হা হা। তার মানে দেখা যাচ্ছে এ ধরণের ঘটনা থেকে আপনার মধ্যে এমন কিছু ইনটুইশন তৈরি হয়েছে যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স আপনার কাছে আর 'কাউন্টার ইনটুইটিভ' কিছু না।

কিন্তু আমি রাজনীতি বুঝিনা মন খারাপ
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শামীম এর ছবি

ছোট কালে (১৯৯৩ সালে) রাগ করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটা বাংলা বই কিনেছিলাম বই মেলা থেকে (বাংলা একাডেমী) ... কারণ গল্পের বই কিনলে পড়ার আগেই ছিনতাই হয়ে যেত।

বাংলায় সেই সময়ে কেনা দুইটা বই এখনও সাথে আছে - পড়া হয় নাই কখনোই।

১. কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান - সুনীলকুমার গোলদার। প্রকাশক: বাংলা একাডেমী

২. নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যা পরিচিতি - হারাল্ড এ. এংগে। অনুবাদ: ডঃ শাহজাহান তপন এবং রানা চৌধুরী। প্রকাশক: বাংলা একাডেমী।
---

তোমার এই সিরিজটা এই পর্বে পড়া শুরু করেছিলাম। অর্ধেক পড়েই পালালাম আপাতত। সময় করে আগের পর্ব থেকেই পড়বো আবার।

যতটুকু পড়েছি তাতে - অনুবাদ ভালো হয়েছে। দুই এক জায়গায় হয়তো কেউ হোঁচট খেতে পারে ... ব্লগের ফীডব্যাক থেকে ওগুলো রিভিউ করে নেয়া যাবে।

চলুক
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

স্পর্শ এর ছবি

দুয়েক যায়গায় আসলে আমিই হোচট খেয়েছি। ফাইনম্যানের লেখাগুলোয় একটা ইনফরমাল টোন আছে(অনেকটা গল্প বলার মত)। তাই আমিও চেষ্টা করেছি সেই টোনটা ধরে রাখতে। ঠিক সেভাবে পারিনি। তার পরও এই সিরিজ তাই ফর্মাল বিজ্ঞানের প্রবন্ধের মত না।

তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলেন পুরোটা। ফীডব্যাকও জানান। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কীর্তিনাশা এর ছবি

১ম পর্ব এখনো পড়া শেষ হয় নাই। ঐটা শেষ করে তবে এইটা ধরবো।

আপনি লিখতে থাকুন স্পর্শ চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

স্পর্শ এর ছবি

মিয়া এই বলে ফাকি দিচ্ছেন বার বার!!
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শিক্ষানবিস এর ছবি

অসাধারণ লেখা। অনুবাদও সুন্দর হচ্ছে। রহস্যের জটগুলো এমনভাবে খোলা হচ্ছে যে মিস্টরি ফিল্মের স্বাদ পাচ্ছি।
ইন্টারের বইয়ে "দ্বি-চির পরীক্ষা" নামে একটা বিষয় ছিল। গত পর্ব পড়ার সময় সেই পরীক্ষার কথা মনেই হয়নি। তাই ব্যতিচারের নীতি কিভাবে মানা হচ্ছে না সেটা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল। এ পর্ব শেষে আর কোন সন্দেহ নেই। সবকিছুই পরিষ্কার হয়েছে। আসলে ব্যাপারটা যে অতিমাত্রায় রহস্যময় সেটাই পরিষ্কার হয়েছে।
ক্লাইম্যাক্সের অপেক্ষায় রইলাম।

স্পর্শ এর ছবি

হ্যা আমরা প্রায় ক্লাইমেক্সের দোড় গোড়ায়। কেবল ইলেকট্রনে অদ্ভুত আচরণ শুরু হয়েছে। একটু পরে( পরের পর্বে) ব্যপারটা আমাদের হতবাক করে দেবে। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কুবের [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় স্পর্শ, খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। দয়া করে মাঝপথে বন্ধ করে দেবেন না কিন্তু।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।