অণুবাক্য - কৈশোরের

s-s এর ছবি
লিখেছেন s-s (তারিখ: শনি, ০২/০২/২০০৮ - ৬:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উদরপূর্তি করিয়াই যদি জীবনযাপনটুকু সারা হইতো তাহা হইলে তো সকলেই কুসুম হইতো
- গজাননী উবাচ

[বাংলা একটা উবাচ পড়লাম আজ,তার তাগিদেই লেখা। ষোল বছর বয়সটা সব মানুষের কাছেই বিষম ইন্টারেস্টিং একটা সময়। আমার ষোল বছর বয়সে লেখা অনেকগুলো অণু এমনকি পরমাণু বাক্য সেদিন খুঁজে পেলাম অনেক পুরোনো একটা খাতায়,বালখিল্য ভেবে ফেলে দিতে গিয়েও কি ভেবে মায়া লাগলো, ভাবলাম রেখে দেই। আজ মনে হলো,থাক,টাইপ করেই ফেলি - - -
এই লেখাগুলো আমার তীব্র ও তুমুল কৈশোরিক প্রেমের ছেলেমানুষিকে মনে করিয়ে দিলো,খুব সুখে ছিলাম তখন,মজার নির্ভার ছেলেমানুষি দুনিয়া। সচলের ছেলেমানুষ পাঠকদের জন্যই শুধু, এর সাহিত্যমূল্য নিয়ে মাথা না ঘামানোই উত্তম। আর কাব্য বলাটাও বালখিল্যের নামান্তর,তাই বাক্য সমষ্টি হিসেবেই থাক। হায় ষোল,কবে ফেলে এসেছি তোমাকে,ফিরে তো যাওয়া যায়না যে আর সেখানে - - ]

=================================
** গাছটা নুয়ে জলের গায়ে আঁকিবুকি কাটছে
পৃথিবীতে এর চেয়ে মহত কোনো শিল্পসৃষ্টি নেই**

**ঝাল খেয়েছি একটু আর টক খেয়েছো তুমি
কষ্টেসৃষ্টে হলেও বলি:দুষ্টুমি দুষ্টুমি !!**

** পুতুল নিয়ে খেলবো আমি জ্যান্ত পুতুল চাইনা
বাচ্চাকাচ্চা অসহ্য সব পিনপিনে সব কান্না
আমি তোর বাবু হবো,তুই আমার বাবাই
তুই আর আমি - যাক জাহান্নামে সবাই !**

** আসমুদ্রহিমাচলঘেঁষে চলে গেছে যেই পথ
সেই পথে আমি নিরন্তর চলি,খুঁজি তোমাকে
অসম্ভবের সৌধচূড়ায় তোমার হাতে অলীক গোলাপ দেবো বলে ।। **

**উফ্,ক্লাসগুলো এত লম্বা কেনো?
কখন শেষ হবে?
আইসক্রীমটা কখন খাবো?
দু'জন মিলে,চেটেপুটে?? **

** এই পৃথিবীর বিশাল খাতায় হরেক রঙের মেলা
সূর্য ডোবার রাঙা আলোয় স্নাত সন্ধ্যেবেলা
জীবনজগত যা দিয়েছে তার ছোঁয়াকে যেচে
বলতে যেন পারি,বড় সুখেই ছিলেম বেঁচে। **

** মানো,তোর চশমার গোল ফ্রেমটা
বোকা বোকা তোর হাসিটা
আর টমেটো পেঁয়াজ ধনেপাতা দিয়ে চানাচুর
ভীষণ ভালোবাসি,হি হি হাসি!**

** রজনীগন্ধা ভালোবাসি না
দোলনচাঁপা না হলে তোর কপালে আজ
একটাও চুমু নেই - প্রমিস!**

** রোদের মধ্যে গণগণে আঁচ তপ্ত কড়াই দুপুর
চাচ্ছি ভীষণ মেঘ গর্জন বৃষ্টি টাপুর টুপুর
অনেকটা পথ হেঁটে এলে
শুধু আমায় দেখবে বলে
রোদের তাতে লালচে মুখ
দেখতে পেয়ে বিষম সুখ
বর্ষা না হোক আমার পায়ে বাজছে বাদল নূপুর।**

**উনিশশো আটানব্বই - দু'হাজার আট
দশ বছর পর তুই আমাকে
ঠিক এই রকম কোলে বসিয়ে
বাবুসোনা বলবি?বল্ না?**

[রচনাকাল ১৯৯৭-১৯৯৯]

ss ফেব্রুয়ারি ২,২০০৮। রাত ১০টা ৫৯ মিঃ।


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভাল্লাগলো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

s-s এর ছবি

আপনাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা, হাসি

শুভাশীষ
=================================

"জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান"

স্নিগ্ধা এর ছবি

এই লেখাগুলো আমার তীব্র ও তুমুল কৈশোরিক প্রেমের ছেলেমানুষিকে মনে করিয়ে দিলো,

আমাকেও দিলো হাসি তীব্র সে সময়......

তবে সময় আমাকে কি শিখিয়েছে জানেন?

"No better love than love with no object,
no more satisfying work than work with no purpose,

If you could give up tricks and cleverness,
that would be the cleverest trick! "

s-s এর ছবি

উফ্ স্নিগ্ধা - দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর্
ভালোবাসিবারে দে মোরে অবসর

কি তুমুল মিষ্টি আর দুষ্টু সেই দিনগুলো - ক্লাস পালাতে না পেরে ক্লাসের ভেতরই চিরকুট চালাচালি,আর নুরা পাগলার হাতে ধরা পড়ে গিয়ে বিষম খাওয়া -- হাঃ হাঃ হাঃ ---- :-)- - -

দারুণ আনন্দের - তাই না?হাসি

=============================
"জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান"

অতিথি লেখক এর ছবি

রজনীগন্ধা ভালোবাসি না
দোলনচাঁপা না হলে তোর কপালে আজ
একটাও চুমু নেই - প্রমিস!**

বর্তমান ২২ বছর বয়েসেও তো আমি এমন করে লিখতে পারবোনা হাসি

-স্বপ্নাহত

s-s এর ছবি

চিন্তা নেই,সবে তো ২২,৩২ হোক,৪২ হোক না হলেও ৫২ তে পৌঁছে নিশ্চয়ই পারবেন। নিশ্চয়ই ---
কৈশোরের দুষ্টু মিষ্টি আবেগগুলোকে কি ছটফটানিতে যে তরতর করে লিখে ফেলতাম ফটাফট - ভাবলে নিজের কাছে ই লজ্জা লজ্জা হাসি পায় আবার ওই ছোট্ট মানুষটাকে মিস্ ও করি খুব। এক সময় আমরা সবাই ওই মানুষটার জায়গায় ছিলাম,তাই না?হাসি

===================================
"জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান"

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারতো মাঝে মাঝে মনে হয় এখনো অই জায়গাতেই আছি। হো হো হো

-স্বপ্নাহত

সৌরভ এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে।

কিন্তু এইসব পোস্টে কমেন্ট করা থেকে আমি পালিয়ে বেড়াই, কারণ নিজের অদ্ভূত মনে করতে না চাওয়া স্মৃতিরা আমাকে বড্ড পোড়ায়, আর
সময় অন্যভাবে স্মৃতিমুদ্রার উল্টোপিঠ গুলো বড় নির্মম করে দেখিয়ে দিয়ে আমাকে উপহাস করে।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সবজান্তা এর ছবি

ভালো লাগলো, বেশ ভালো লাগলো !

আমার কৈশোর কেটেছে প্রেমহীন। তাই হয়ত এই অনুভূতিগুলিকে কোনদিনও দেখিনি, কিংবা শুনিনি তাদের নিরন্তর ফিসফাস।

কিন্তু আজ হঠাৎ এই অনুকাব্যগুলি পড়ে মনে হচ্ছে, কৈশোরের সেই অনুভূতিগুলি হাত পা মেলে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তারা আমার কতদিনের চেনা !

অবুঝ পাগলামির সেই দিনগুলিকে নতুন করে দেওয়ার জন্য, আপনাকে বিশাল একটা ধন্যবাদ !

( সেই সাথে যিনি এমএসএনে লিঙ্কটা দিয়েছেন, তাকেও ধন্যবাদ ! )
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অন্দ্রিলা এর ছবি

s-s লিখেছেন:
আর নুরা পাগলার হাতে ধরা পড়ে গিয়ে বিষম খাওয়া -- হাঃ হাঃ হাঃ ---- :-)- - -

আপুউউউউউউ!

আপনি কি আইবিএ-এর???

অণুকাব্য সম্পর্কে নো কমেন্ট। এগুলি পড়লে দুঃখ উথলায়ে উঠে।

পুনশ্চঃ অনেকবার এসে অণুকাব্যগুলি পড়ে গেছি, তবে কী লিখবো তা ভেবে পাইনি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।