ব্রেঁসোর বালথাজার

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ৩০/১০/২০০৯ - ৩:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বন্ধুবান্ধব আমার খুব একটা কোন কালেই ছিল না। স্কুল, কলেজে বা ভার্সিটিতে যে বন্ধু হয়নি তা কিন্তু না, তবে বেশি দিন টিকেনি। কেন জানি যাদের সাথে মিশতাম তাদের সাথে আমার খুব একটা বনতো না। আমার চিন্তার মাপে কেউ ছিল না। হয় বড়ো ছিল নয়তো ছোট। তাই বন্ধু বানালাম নিজেকেই। আমার বাবাকে পেপার ছাড়া কিছু পড়তে দেখি নাই। যেমন দেখিনি খবর আর ক্রিকেট ছাড়া টিভিতে অন্য কিছু দেখতে। মা নানান গল্পের বই পড়তেন। সেখান থেকে আমার বই পড়ার বাতিক শুরু।

প্রাইমারিতে কুয়াশা সিরিজ পড়তাম পাগলের মত। পরে মাসুদ রানা। তিন গোয়েন্দার ও ভক্ত ছিলাম। মজার ব্যাপার কমিকস্‌ পড়েছি হাই স্কুলে উঠে। বন্ধু সজলের কাছ থেকে নিয়ে প্রথম পড়লাম বেতাল সিরিজ। তারপর অনেকদিন চললো কমিকস পড়ার নেশা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের হাত ধরে বাইরের দেশের বই প্রথম হাতে পেলাম। তাও হাইস্কুলে । ইংরাজিতে পড়ার কথা মাথায় আসে নাই তখনো। বাংলা অনুবাদ পরেই কাত। ভার্সিটি আসার পর আস্তে আস্তে দু চারটা ইংরাজি বই পড়া হল। শুনলে হাসবেন, আমার প্রথম পড়া ইংরাজি বই কামুর আউটসাইডার। তারপর নানান কিছু পড়া ধরলাম।বাংলা সাহিত্যের যা যা হাতে পেলাম পড়ে যেতে লাগলাম।ইলিয়াছ শেষ করে ধরলাম ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’। ছফার ক্লাসিক। ছফা যেমন ‘পেডাগজি অফ দা অপ্রেসড’ পড়ে রক্তবেগ তরঙ্গিত হয়েছিলেন আমার তেমনি ফানা হলো ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’ পড়ে । আস্তে আস্তে ছফার সব বই পড়া হয়ে গেল। ছফার সাথে মোলাকাতের প্রচন্ড ইচ্ছা জেগেছিলো। আফসোস, ছফা মারা গেলেন তার আগেই।

বালথাজার সিনেমায় এনি য়োজেমস্কিবালথাজার সিনেমায় এনি য়োজেমস্কি

হলিয়ুড বাদে ফরেন অন্যান্য সিনেমায় আমাকে হাতেখড়ি দেন জহির রায়হান ফিল্ম সোসাইটির সাব্বির ভাই। ২০০৩ সালে। ২০০৫ পর্যন্ত অনেক ছবি দেখলাম উনার ক্লাবে। এর মধ্যে মুভি প্লাস আমার ক্ষুধা আস্তে আস্তে মেটাতে শুরু করেছে। কুস্তুরিকা, কিয়ারোস্তামি, পানাহি, বিলি অগাস্ট, গদার, ফেলিনি, বার্গম্যান, ওজো, কুরোশোয়া, কুবরিক, পোলানস্কি – এক অন্য জগৎ। তাও যে সব পাওয়া যায় তা নয়। মনে আছে লুই মালের ‘আ ডিনার উইদ আন্দ্রে’ ঢাকার নানা ডিভিডির দোকানে অনেক খুঁজে ও না পেয়ে মেলা হা হুতাস করেছি। টরেন্ট দিয়ে নামানো ও মহা ঝামেলা। আমার পাড়ায় ব্রডব্যান্ডের ছিল খুবই করুণ হাল।

সেই নামানো মুভির মধ্যে ব্রেঁসোর বালথাজার (Au hasard Balthazar) আমার মাথা থেকে কখনো সরে না। আমার বিশেষণ ব্যবহারে নলেজ কম। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলা যায়- বেলথাজার দেখে আমি সাব দড় হয়ে গেছিলাম। প্লট - একটা গাধার বেড়ে উঠার কাহিনী। গাধাই মূল চরিত্র। পার্শ্ব চরিত্রে ছিলেন এনি য়োজেমস্কি। একটু বলি , হ্যাঁ। য়োজেমস্কি ব্রেঁসোর এই ছবিতেই কেবল কাজ করেছেন। বিয়ে করেছিলেন ডাকসাইটে নির্মাতা গদারকে । বার বছর সংসার করার পর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। পাসোলিনির দুটা সিনেমাতে ও তিনি অভিনয় করেছেন।

বালথাজার নামটা রেখেছিল মেরি (এনি য়োজেমস্কি)। তার বেড়ে উঠার সাথে সাথে মালিক বদল হতে থাকে। নানান অত্যাচার-জুলুম সামলে কোনমতে বাঁচে থাকে বালথাজার। কাহিনী কেবল গাধার কষ্টের মধ্যে থেমে থাকে না। তার আশেপাশের মানুষের দুঃখের বয়ান সেখানে বিশদে আসে।বিশেষত মেরির। আপনারা চাইলে এই রিভিউ পড়তে পারেন।

বালথাজার দেখার পর অন্য সিনেমা দেখতে গেলে মন দিতে পারতাম না। পরে আর মাসখানেক কোন ছবিই দেখা হয় নাই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওইটাই আবার দেখা শুরু করতাম। ব্রেঁসো যে ব্রেঁসো – সেটার মালুম হয়েছিল বেশ ভালোভাবেই।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনার এই লেখাটা ভালো লেগেছে। খুব ঝরঝরে। আরও লিখুন নিয়মিত।
সিনেমাটা দেখতে হবে দেখছি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

যূথচারী এর ছবি

আপনি নিশ্চয়ই সিনেমার সাথে যুক্ত, ব্রেসোঁ তো সিনেমার ছাত্র ছাড়া খুব কম লোকেই দেখে। সিনেমা নির্মাণের সাথে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও আমি তার সবগুলো সিনেমাই দেখেছি, বলাই বাহুল্য, ব্রেঁসো দেখার পর অন্য যে কোনো সিনেমার ওপরের ব্রেঁসো-র গুলোকেই রাখতে হয়। বালথাজার আমার নিজের পছন্দের তালিকার এক নম্বর ছবি। তার পরেরগুলোও ব্রেঁসোর-ই। তারপর অন্যরা।

সিনেমার কোনো বিশ্লেষণ করেন নাই, এটাই বেশি ভালো লাগলো। আমি আপনার লিংক-এ ক্লিক করে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম, ব্রেঁসোর সিনেমার একটা থার্ড ক্লাস আলোচনা আবার পড়তে হয় কিনা। কিন্তু আপনার আলোচনা পড়ে সেটা কেটে গেল। ব্রেঁসো আসলে শব্দে প্রকাশের বাইরে (অথবা দুঃসাধ্য)। অনুভূতিতে সরাসরি কাজ করে সেটা।

ধূগোদা'র মতোই বলছি- নিয়মিত লিখুন। আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে লেখাটার পরের কিস্তিগুলো দিন।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

অতিথি লেখক এর ছবি

যূথচারী ভায়া,

আমি ও আপনার মতো। কেবল সিনেমা দেখার সাথে হাড়ে হাড়ে যুক্ত। বুয়েট গণপতিরা আমারে কারণ বিহীন কারণে এক বছরের জন্যে পাঠ-ইস্তফা ঘোষণা করে। বোধকরি আটানব্বই কি নিরানব্বই সালের ঘটনা।সে সময়ে আমি নানান সিনেমা দেখে সময় কাটাতে থাকি। আমার সে সময়ের আবিষ্কার ব্রেঁসো। মারফত, বিজ্ঞাপনপর্বের ব্রেঁসোর উপর একটা
বই। পরে একদিন নীলক্ষেতে পাই আইজেনস্টাইনের ফিল্মফর্ম। ইংরাজি
ভার্শান। মা বাবারে কিছুকাল কই নাই বুয়েটের কাসুন্দী। পোলাপান ক্লাসে যাইতো। আর আমি ঘুরতাম নীলক্ষেতে, আজিজে। তয় মন্দ হয় নাই। বিশ্বজোড়া পাঠশালার ছাত্র হয়ে গেলাম আর কি। ইস্তফাকাল শেষ হবার পর বুয়েটের পুরা পাঠ শেষ করি।

তা আস্তে আস্তে এই করে ফিল্ম নিয়া পোকা ব্যাপকভাবে মাথায় দানা বাঁধে।
দেখতে দেখতে দেখোয়ার হয়ে গেলাম।

আমার লেখা একটু ডিস্লেস্কিক ভাবাপন্ন। এক কথা বলতে গিয়া অন্য লাইনে চলে যাই। ফিল্মফর্ম পড়ে আমার ব্রেঁসোজ্ঞান পুরা হয়।পরে ছবি দেখে ফানাপ্রাপ্তি।

আপনারে সেলাম। পুরানা অনেক কথা মনে করায়ে দিলেন।

ব্রেঁসোর সব সিনেমা দেখছি। একটা ছাড়া। 'দা ডেভিল প্রবেবলি'।

কিস্তি ২ জমা দিছি। আপাততঃ সচল- গোত্রপিতাদের হাতে।

শুভাশীষ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মাঝে মধ্যে সন তারিখ নিয়ে গোলযোগ লাগে। সাব্বির ভায়ের পাঠশালায় আমার প্রবেশ বোধ করি ২০০৩ সালে নয়। ২০০০ কি ২০০১ এর দিকে হয়তো। তথ্যবিভ্রাট না , স্মৃতিবিভ্রাট হয়ে গেছে।

শুভাশীষ দাশ

সাফি এর ছবি

ভাল কিসু ছবির নাম নিমু সেমিস্টার শেষ হওনের পরে, ততদিন থাইকেন

অতিথি লেখক এর ছবি

সাফি বেরাদর,

ইঠিকানা দিয়েন। পাঠায় দিমুনে।

শুভাশীষ দাশ
subasidhdas at hotmail

সাফি এর ছবি

নিজের ঠিকানা কি ঠিক দিলেন? নাকি s আর d উলটপালট হয়ে গেছে? খাইছে আমাকে চিঠি দিতে পারেন, rajputro @জিমেইল এ।
ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই তো।

subasishdas at hotmail

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।