বহিরঙ্গ ।।।৭।।।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/১০/২০১১ - ৫:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্রিটিশ লেখক জুলিয়ান প্যাট্রিক বার্নসের নতুন বই ‘দা সেন্স অব এন এন্ডিং’ ২০১১ সালের ম্যানবুকার পুরস্কার জিতেছে। এবারের বিচারক প্যানেল রিডেবল বা পাঠযোগ্য একটি বইকে পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে কিছুটা জোর দিয়েছেন। ‘দা সেন্স অব এন এন্ডিং’’কে ম্যানবুকারে ঘোষিত করার পেছনে এর স্বল্প আয়তন (মাত্র ১৭৬ পৃষ্ঠার বই। অনেকে সমালোচক একে উপন্যাস না বলে নভেলা কিংবা বড়ো আকারের ছোটোগল্প হিসেবে বিচার করছেন) আর সহজপাচ্য ভাষার ব্যবহার অনেক সমালোচক কারণ হিসেবে দেখছেন। ব্রিটিশ সমালোচকেরা এই বই নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও আমেরিকার কিছু ক্রিটিক এই বইকে ম্যানবুকার পাওয়ার যোগ্য বলে মানতে পারছেন না। জুলিয়ান বার্নস তাঁর বই-এর নাম ধার করছেন একই শিরোনামের একটা প্রবন্ধের বই থেকে। Frank Kermode ঐ ননফিকশনের লেখক।

বইয়ের অধ্যায় দুইটি। উপন্যাসের বয়ান উত্তম পুরুষে। মুখ্য চরিত্র টনি ওয়েবস্টার প্রথম অধ্যায়ে তার চল্লিশ বছর আগেকার স্মৃতিচারণ উল্লেখ করেছেন। তারা তিন বন্ধু একজন নতুন ছেলেকে বন্ধু হিসেবে পায়। টনি, অ্যালেক্স আর কলিনের সাথে যুক্ত হয় চতুর্থ জন অ্যাড্রিয়ান ফিন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণনা করা আছে প্রোটাগনিস্টের বর্তমান সময়। তখন তিনি ষাটোর্ধ্ব। ডিভোর্সি। কন্যার পিতা।

বার্নসের ভাষা বুদ্ধিদীপ্ত, সহজ। উপন্যাস শুরুর প্রথম পৃষ্ঠায় বিচ্ছিন্ন কিছু কিছু স্মৃতি নিয়ে এক একটা বাক্য। ধারাবাহিক কোনো কিছু নয়, এমনকি সব স্মৃতি যে একবারে চোখে দেখা তাও না। লেখকের বর্ণনা আর তার মধ্যে থেকে যাওয়া স্মৃতিচারণের ফাঁকফোকর পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে।

I remember, in no particular order:
– a shiny inner wrist;
– steam rising from a wet sink as a hot frying pan is laughingly tossed into it;
– gouts of sperm circling a plughole, before being sluiced down the full length of a tall house;
– a river rushing nonsensically upstream, its wave and wash lit by half a dozen chasing torchbeams;
– another river, broad and grey, the direction of its flow disguised by a stiff wind exciting the surface;
– bathwater long gone cold behind a locked door.
This last isn’t something I actually saw, but what you end up remembering isn’t always the same as what you have witnessed.

সেন্ট্রাল লন্ডনের স্কুলে সেই সময়কার জীবন ছিল অনেকটা সরল । টাকা, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ফ্যাশন বা মেয়েবন্ধু সময়কে তখনো কেড়ে নেয়নি। তারা চার বন্ধুই ছিল পড়ুয়া। অ্যাড্রিয়ান তাদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকস ও কৌশলী। টনি পড়তো অরওয়েল ও অ্যালডস্‌ হাক্সলির বই। কলিনের পড়ার তালিকায় ছিল বোদলেয়ার আর দস্তয়েভস্কি। অ্যালেক্সের পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে রাসেল আর ভিটগেনস্টাইন। অ্যাড্রিয়ান থাকতো কামু আর নীৎসা নিয়ে। সাহিত্য নিয়ে ভাবাগোণার সময় তাদের ছিল। সাহিত্য কি কি নিয়ে, টনি ভাবছে এভাবে:

The things Literature was all about: love, sex, morality, friendship, happiness, suffering, betrayal, adultery, good and evil, heroes and villains, guilt and innocence, ambition, power, justice, revolution, war, fathers and sons, mothers and daughters, the individual against society, success and failure, murder, suicide, death, God. And barn owls.

টনি ওয়েবস্টারের নিজের ইতিহাস বর্ণনায় তার মাথায় থেকে যাওয়া স্মৃতিটুকুর বর্ণনা পাই। স্কুল শেষ হয়ে যাওয়ায় অ্যাড্রিয়ান চলে যায় কেম্ব্রিজে পড়তে। টনি কম খ্যাত একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে শুরু করে। ভেরোনিকা ফোর্ড নামের এক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক হয়। টনি একটা ছুটি কাটাতে যায় ভেরোনিকার পরিবারের সাথে। কিন্তু সেখানে তার অভিজ্ঞতা সুখকর হয় না। সম্পর্কটাও আর বেশিদিন টেকে না। পরে একসময় টনির এই সাবেক প্রেমিকার সাথে অ্যাড্রিয়ানের সম্পর্ক হয়। এর কিছুদিন পরেই বাইশ বছর বয়সে অ্যাড্রিয়ান আত্মহত্যা করে।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে ষাটোর্ধ্ব টনির কাছে একটা আইনি সংস্থা থেকে চিঠি আসে। ভেরোনিকার মা তার উইলে টনির জন্য দুটো জিনিস রেখেছেন। পাঁচশো পাউন্ডের একটা চেক আর অ্যাড্রিয়ান ফিনের ডায়েরি। ডিভোর্সি টনির একাকি জীবনের (achieved a state of peaceableness, even pracefulness) শান্তির মধ্যে এই ঘটনা একটা ঝড় তোলে। দ্বিতীয় অধ্যায় জুড়ে থাকে টনির মধ্যে থেকে যাওয়া স্মৃতি আর আসল ঘটনার টানাপোড়েন। বার্নসের ভাষা, বাক্য ব্যবহারে পরিমিতিবোধ উপন্যাসের মূল শক্তি। বইটা পাঠককে ভাবায়। নিজের মধ্যে থেকে যাওয়া স্মৃতি কিংবা ভুলে যাওয়া নিয়েও পাঠক ভাবিত হয়।

জুলিয়ান বার্নস মৃত্যুময়তার লেখক। মৃত্যুকে প্রোটাগনিস্টের চেহারায় দেখতেই হয়তো তাঁর আগ্রহ।

অ্যান্ড দেন ইউ ডাই।

বহি
The Sense of an Ending
Julian Barnes
176 pages
Knopf
October 5, 2011

--
বহিরঙ্গ ||| ৬ |||


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

আরে বাহ! হাসি

বুকার পাওয়ার আগে বার্নসের নাম শুনি নাই, পড়িও নাই কিছু (কত বই বাকি রয়ে গেল, নেট থেকে বই নামায় সেইভ করে রাখি - পড়া আর হয়ে উঠে না)

অমিতাভের Sea of Poppies আর আডিগার white tiger দুইটাই মনে হয় ২০০৮ এ বের হয়েছিল। white tiger নামক ফর্মুলা বই বুকার জিতে ঐ বছর। কষ্টের চোটে ঢক ঢক করে তিন গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে ফেললাম। পুরস্কারে কিছুই যায় আসে না অমিতাভের, কিন্তু কট্টর ভক্তদের যাতনা বাড়ে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'সী অভ পপিজ' পড়ি নাই তবে 'হোয়াইট টাইগার' পড়েছি। আদিগা এখানে কোন কিছুকে বাড়িয়ে বলেছেন বা রঙ লাগিয়েছেন এমনটা নয়। ঘটনাগুলো এখনো এমন। উন্নাসিক ভারতীয়দের চোখে ব্যাপারগুলো কিছুটা অস্বস্তিকর হয়তো। হয়তো উন্নাসিক সাহেবরা এখনো ভারতীয়দের এভাবে দেখতে চায়। তবু আমার কাছে আদিগাকে ঠিক বলেই মনে হয়েছে।

পুরষ্কার-টুরষ্কার নিয়ে খামাখা মাথা ঘামিয়ে কী লাভ? লেভ তলস্তয়, ল্যু স্যুন, জীবনানন্দ দাশ, মাক্সিম গোর্কি ....... এমন এক মাইল লম্বা লিস্ট বানানো যাবে যারা পুরষ্কৃত হন নাই। আবার অযোগ্য নামের (নামগুলো বললাম না) দশ মাইল লম্বা লিস্ট বানানো যাবে যারা পুরষ্কৃত হয়েছে। পাঠক জানে তাকে কার বই পড়তে হবে বা কী পড়তে হবে।

যাকগে, তিন গ্লাস লেবুর শরবত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আর তাতে কিঞ্চিত ভদ্‌কা বা জিন মেশালে সেটা মনের জন্যও ভালো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

হাসি
পাঠকের ভালবাসাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার - সন্দেহ নাই। তবু নামকরা পুরস্কার একটু অন্যরকমভাবে অর্থবহ - একরকম মার্কেট মানদন্ড বলতে পারেন। এই আরকি!

লেবুর শরবত আমার খুব খুব প্রিয় দেঁতো হাসি আপনার নির্দেশনা ফলো করতে হবে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অমিতাভ একটা না একটা সময় পাবেনই।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

বার্নস-এর নাম আমিও আগে শুনি নি। বইটা পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পড়ে ফেলুন। ইপাব লাগলে জানায়েন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জে পি বার্নস পড়ি নাই। এই ফ্ল্যাপ/বহিরঙ্গ পড়েও বিশেষ আগ্রহ জাগল না। কেন? এই পোস্টটা দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বইয়ের আলোচনার মতো হয়ে গেছে। বার্নসকে চেনার শুরুটা হবে বা এই বইটা কিছুটা বোঝা যাবে এমন ভাবে পোস্টটা লেখা হয়নি।

সাহিত্য নিয়ে বার্নসের ভাবনা পড়ে মনে হলো তার মধ্যে বড় যৌগিক-জটিল বাক্য লেখার প্রবনতা আছে নাকি? তাহলে আমি গেছি!

বহিরঙ্গে ইংরেজীতে লেখেন এমন desi লেখকদের (শব্দটা নিন্দার্থে বলিনি) বইয়ের আলোচনা বেশি করে চাই। ইংরেজী সাহিত্যের, বিশেষত জনপ্রিয় ধারার ইংরেজী সাহিত্যের, ভবিষ্যতের একটা অংশ এনারা নিয়ন্ত্রণ করবেন বলে মনে হচ্ছে।

"অ্যান্ড দেন ইউ ডাই" মানে কী?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ছোটোগল্প সঙ্কলন "দা লেমন টেবল" পড়ার পরেই বার্নসের ব্যাপারে আগ্রহী হই। এর পরে পড়ি "দা সেন্স্‌ অব এন এন্ডিং"। বুকার পাবার পরে যা যা রিভিয়্যু পড়া যায় পড়েছি। নিউ ইয়র্কার এটাকে পাত্তাই দেয় নাই। 'ব্রিফলি নোটেড' এর মধ্যে ৮/১০ লাইন লিখে সারছে। ইংল্যান্ডের রিভিয়্যুগুলা বেশ উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে। লন্ডন রিভিয়্যু অব বুকস এটার সমালোচনা করেছে উত্তরাধুনিক কায়দায়। অন্যান্য প্রায় সব সমালোচনা সহজ সরল ভাষায়। ১/২ টা আবার স্পয়লার। তাই সব মিলিয়ে এই বইকে প্রচারের জন্য মনে হয়েছে ফ্ল্যাপই সহি।

পাঠযোগ্যতা এইবারের বুকারের একটা ফ্যাক্টর। বার্নসের লেখার মধ্যে একটা ফ্লো আছে। পড়া ধর্লে ভালোই এগোয়।

ইংরেজিতে ফিকশন লেখেন এমন desi/বাংলাদেশি লেখক/লেখিকা আপাতত একজনই। তাহমিমা আনাম। খাইছে

শেষ বাক্যটা কিছুই না। অনেকটা নটে গাছটা মুরালো। "দা লেমন টেবল" পড়ার পরে আমার এই কথাটাই মাথায় এসেছিল। আই ডাই বা উই ডাই না। অ্যান্ড দেন ইউ ডাই। লেখক। পাঠক। ইউ। আই/উই।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ইংরেজিতে ফিকশন লেখেন এমন desi/বাংলাদেশি লেখক/লেখিকা আপাতত একজনই। তাহমিমা আনাম।

না, না! আমি আনাম ম্যাডামরে বুঝাই নাই। উনার জন্য বহিরঙ্গ লাগে নাকি? আলু পেপার আর তার আংরেজী ভাই ইস্টার পেপার আছে কী করতে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

Shazia Omar নামে একজন বেশ লিখতে শুরু করেছিল। পেঙ্গুইন থেকে তার প্রথম বই বের হয়: like a diamond in the sky বেশ আলোচনাও হয় ফেইসবুক, ব্লগে, পত্রিকার পাতায়। এখন মনে হয় হারিয়ে গিয়েছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি তো মুর্খ... অনুবাদ ছাড়া পড়তে পারি না... অনুবাদায়ে ফেলেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।