নানা ধরনের পুনর্মিত্রতার জ্ঞানচর্চা চালু হচ্ছে চারিদিকে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানী গুণী গবেষকেরা সহজ সরল কথা না বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধকে হালকা করানোর নানান আজগুবি তত্ত্ব তথ্য হাজির করছেন একের পর এক। তারা নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে নৃশংসতা, ধর্ষণ, গণহত্যার পেছনের লোকজনদের দিকে জমে থাকা ঘৃণার ভার হালকা করতে চান। এই জ্ঞানী গবেষকেরা কখনো যুদ্ধাপরাধের শাস্তির পক্ষে সোচ্চার থাকেন না। যুদ্ধের দামামায় রক্তলিপ্সু হয়ে ওঠা অমানুষদের মধ্যে সামান্য মানবিক বিচ্যুতির বেশি কিছু এরা টের পান না। তারা নিজেদের মানবিকতা সরিয়ে রেখে আমাদেরকে তাদের মাপের মানবিকতার জামায় ঢোকাতে চান। আর এই গোত্রের একজন নতুন সংযোজন গবেষক ইয়াসমিন সাইকিয়া।
প্রথম অধ্যায়ের শুরুর বাক্যেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ‘সিভিল ওয়ার’ হিসেবে অভিহিত করেন ইয়াসমিন সাইকিয়া, তবে একটু কায়দা করে। তাঁর ভাষ্যে এই যুদ্ধকে একটি সুনির্দিষ্ট যুদ্ধ হিসেবে মানা যাবে না। এখানে ঘটেছিল পূর্ব বনাম পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ঘটা গৃহযুদ্ধ বা সিভিল ওয়ার, ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, বাংলাভাষী ও উর্দুভাষীদের মধ্যকার যুদ্ধ আর সাথে ঘটেছিল অন্য একটা যুদ্ধ যার নাম ‘লৈঙ্গিক যুদ্ধ’ বা নারীর প্রতি ঘটে যাওয়া অবমাননাকর এক কালো অধ্যায়। একাত্তরের যুদ্ধকে সিভিল ওয়ার হিসেবে যারা চালাতে চান, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইয়াসমিন সাইকিয়া প্রথম প্যারায় আবারো উল্লেখ করেছেন- এই সিভিল ওয়ার শেষের দিকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধে পরিণত হয় যখন ভারত এসে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়।
ইয়াসমিন সাইকিয়ার এই বক্তব্যে মারাত্মক ভুল আছে। বাংলাদেশ ২৫ মার্চের পর থেকে পাকিস্তানের অংশ ছিল না, ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে নিজেকে পরিচিত করেছে। ফলে মার্চ থেকে শুরু করে ঘটে যাওয়া নয় মাসের যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে যারা প্রচার করতে চান, তাদের ইতিহাস-জ্ঞানে ঘাটতি আছে। একাত্তরের যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া আরেকটা অপপ্রচার। এই যুদ্ধের বিভীষিকার নয়টি মাস পার করেছেন বাংলাদেশের জনগণ, ভারতের জনগণ নন। ডিসেম্বর মাসের শেষ কয়েকটা দিনের আগে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নৃশংস ও প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সেনাদের সাথে সম্মুখ সমরে লড়েছে আমাদেরই সাহসী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা, ভারতের কেউ এসে সেই যুদ্ধ লড়েনি। ফলে আমাদের বিপ্লব কখনোই বেহাত হয়েছে- এই কথা বলা যাবে না। এখানে শুদ্ধ বাক্য একটাই- একাত্তর সালে পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশের নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে রাষ্ট্র বাংলাদেশ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আগ্রাসী ও পরদেশ পাকিস্তানকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেছিল। ইন্দিরা গান্ধির একটা কথা এখানে প্রাসঙ্গিক। তিনি ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে বলেছেন-
এই যুদ্ধকে ‘সিভিল ওয়ার’ বলে পার পাওয়া যাবে না, এখানে সাধারণ মানুষদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের ওপর গণহত্যার জোয়ার বইয়ে দেয়া হয়েছে। (গুহ ২০০৭:৪৫৬)
বাংলাদেশের যুদ্ধ নিয়ে এই তিনটি দেশের মানুষের ভাবনার কথা বলেছেন ইয়াসমিন। বাংলাদেশের কাছে এই যুদ্ধ বিজয়ের গাঁথা। ভারতের কাছে তা পাক-ভারত যুদ্ধের বেশী কিছু নয়। উল্লেখ্য, উন্নাসিক ভারতীয়রা ‘বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিলাম’ টাইপের ওঁচা ঢেকুর এখনো তোলেন। পাকিস্তানিদের বেশিরভাগের ধারণা- ঐ যুদ্ধ ব্রাদার(!) বাংলাদেশিদের গাদ্দারির কারণে হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক শোষণ চালিয়েছে, নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে, গণতন্ত্র ধুলিস্যাৎ করেছে- দুই দেশের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টির কারণ জানতে ইচ্ছুক লেখিকা এইসব কারণের দিকে মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। তার বদলে তিনি ইনসানিয়াত বা মানবতা বা মনুষ্যত্ব সম্পর্কিত তাত্ত্বিক ভাব-গাম্ভীর্যের দিকে পাঠকের দৃষ্টি সরান। আফ্রিকায় ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিয়েলেশান কমিশন’-এর উদাহরণ দিয়ে পুনর্মিত্রতার পথে আসার আহ্বান করেন। এদিকে যুদ্ধাপরাধ করেছে এই লোকগুলোর প্রতি তার ঘৃণা তো নেই-ই, বরং একাত্তরের খুনী হানাদারদের একজন নাদের আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বহর দেখে অবাক হতে হয়। শর্মিলা বসুকে কয়েক ধাপ পেরিয়ে তাঁর বইয়ের জন্য তিনি নিয়েছেন ১২৩ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার।
কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতা ছাড়া শর্মিলা, রুবাইয়াত আর হালের ইয়াসমিন সাইকিয়ার চলে না। ঐ সময়ের ইনসানিয়াতের একমাত্র ব্যবসায়ী এই কবি মহোদয় ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের গণহত্যা চালানো নিয়ে গোটা দুয়েক কি তিনেক কবিতা লিখেছেন। তার কবিতা ফাঁদার বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের রক্তমেশা শাক, সবজি, ঘাস থেকে রক্তের দাগ কবে মুছবে সেটা নিয়ে। হারাধন পাকিস্তানের একমাত্র মানবিক পুত্র কবিবর ফয়েজকে জ্ঞানীগুণী গবেষকেরা ছাড়ছেনই না। সাইকিয়ার বই থেকে সবজি কবিতা পড়ি না হয়-
When shall we see the beauty of verdant green, once again
How many monsoons will it take to wash away its patches of blood.
(সাইকিয়া ২০১১:২০)
বইটাতে কি নেই সেটাই প্রশ্ন! লালন, রুমি, রুমির মসনবী, ভক্তি সংগীত- সাইকিয়া ইনসানিয়াতের আসল গোমর ধরার কতোই না চেষ্টা করেছেন। একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানিরা যখন পাইকারি দরে মনুষ্যত্ব লাটে উঠিয়ে বসেছিল- সেটার প্রতি তীব্র কোনো বিবমিষা তার বক্তব্যে নেই। সাইকিয়ার সাথে ইনসানিয়াতের জ্ঞান নেই কিছুক্ষণ-
The language of insaniat or manushyata that survivors draw upon can serve as the cultural and conceptual term to interpret this demand for humanization. The terms and concepts encompassed by humanity, humaneness, and humanism are often used to convey in a simple sense the meaning of insaniat, although they represent only a small fraction of the varied connotations. … The shared language of insaniyat resonates even today throughout the Urdu-, Hindi-, and Punjabi-speaking regions of north India and Pakistan, particularly in the genres of music called qawwali (Sufi utterances) and bhajan (Bhakti devotional composition). In Assam, where I am from, manabata (insaniyat) is a proudly used idiom that Assamese claim is a local ethical philosophy. When people in the subcontinent refer to insaniyat they usually mean it as the capacity for recognizing the shared human status, which informs their actions and promotes understanding and facilitates relationship with others. Human beings, in order to retain their insaniyat, have to develop a vigilant outlook not to lose awareness of the Other, because it is in the other’s well-being that the survival of the self is possible.(সাইকিয়া ২০১১:২৪)
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনামটা অদ্ভুত। ক্রিয়েটিং দা হিস্টরি অব ১৯৭১। একাত্তরের ইতিহাসের পুনর্নিমাণ করতে চান ভদ্রমহিলা। শর্মিলা বসুর মতো ইয়াসমিন সাইকিয়াও কিছু কেস স্টাডি হাজির করে একটা উপসংহারে পৌঁছাতে চান। আর এটাও ঘোষণা করতে থাকেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক মানের ভালো গবেষণা আগে কখনো হয় নাই। এখানে যুদ্ধরত দুটি পক্ষের কথা ঠিকমতো শোনা হয়েছে। উপরসর্বস্ব এইসব কথার কোনো ভিত্তি বইয়ের মধ্যে পাওয়া যাবে না। প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্ধে একটা পক্ষ শোষিত ও নির্যাতিত, অন্য পক্ষটি শোষক ও নির্যাতক। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষনের মাধ্যমে নিজেদের পুষ্ট করেছে পাকিস্তান। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাত্রে মিলিটারি নামিয়ে গণহত্যার সূচনা করে তারা। প্রশিক্ষিত ও পাকিস্তান থেকে উড়ে আসা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্রশস্ত্রের কাছে নির্বিচারে মরতে থাকে বাংলাদেশের জনগণ। নিজেদের বাঁচাতে ও দেশকে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্ত করতে মরণপণ যুদ্ধে নামে এদেশের জনগণ। বিহারিরা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে হত্যা, ধ্বংস, লুটপাট, ধর্ষণে একাত্ব হয়। আলবদর, রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় জামায়াত ও ইসলামপন্থী লাখখানেক লোক। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামীদের যুদ্ধ করতে হয়েছে এই তিনটি প্রধান পক্ষের বিপক্ষে। পাকিস্তানের সহিংস হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে অহিংস আন্দোলন কাজে দিবে না। যুদ্ধ করতে গিয়ে বাঙালিদের হাতে রাজাকার, আলবদর, বিহারি, খানসেনা হত হয়েছে। কিন্ত সেটা পাকিস্তানের ত্রিশ লক্ষ বাঙালি গণহত্যার সাথে তুলনায় নগণ্য। আর পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবে এদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা বইয়ে দিতে চেয়েছে নিজেদের শোষকরূপ বজায় রাখতে। এইসব ঐতিহাসিক স্বীকৃত সত্যকে এড়িয়ে দুই পক্ষের যুদ্ধের হতাহতদের সমান পাল্লায় মাপার এই বদভ্যাস থেকে জ্ঞানবুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও সরে আসেন না রুবাইয়াত-সাইকিয়া-বোসেরা।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু থেকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ কোন্দলের কারণগুলো যথাসম্ভব মিহি ভাষায় বর্ণনা করেছেন লেখিকা। নির্মোহ থাকার কথা বলে পাকিস্তানের প্রতি মোহাবিষ্ট থাকার নমুনা এগুলো। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ লাগার কারণ বর্ণনা করতে করতে হঠাৎ তিনি চলে আসেন বর্তমানে। জানান- আড়াই লক্ষ বিহারি বাংলাদেশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেনেভা ক্যাম্পে। এরপর আস্তে আস্তে যুদ্ধের হালকা-পাতলা বর্ণনা। তারপর একসময় জানান- বাঙালিদের মতে এই যুদ্ধে দশ লক্ষের মতো হত হয়েছে। এই দশ লক্ষ সংখ্যাটি তিনি কোথায় পেলেন সেটাও একটা রহস্য। এই প্যারার শেষেও আবার জেনেভা ক্যাম্প ও মানবেতর জীবনযাপন। এদিকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে আড়াই লক্ষেরও অনেকগুণ বেশি বাংলাদেশি। খোদ জেনেভা ক্যাম্পের আশেপাশের বস্তিগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবনযাপনের দিকে চোখ তুলে তাকালেই তা দেখা যাবে।
একাত্তরের বাঙালি হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলতে চান না সাইকিয়া। এই তথ্যের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালি জেনারেল আবুল মায়াসকে-
পূর্ব পাকিস্তানে ফ্যাক্টরি প্রোডাকশনের মত করে গণহত্যার মেশিনপত্র কাজে লাগানো হয়নি, আর সেখানে কেবল একটা পক্ষই হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয় নাই। পূর্ববর্তী ঘটনাবলি থেকে জনতার মধ্যে এক ধরনের সহিংস আচরণ নানা ফিকিরেই প্রকাশ পাচ্ছিল। বন্ধু, সহকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক, প্রতিবেশি, পরিচিত- পরষ্পরের মধ্যেই কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছিল। এর পেছনে এদের নিজের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা, লোভ, রাজনৈতিক দর্শন নানা কিছু জড়িয়ে ছিল। পাকিস্তানি সেনা সাথে ভারতীয় সেনারাও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের পেছনে কেবলমাত্র একটা বিশেষ পক্ষকে দায়ী করা অসম্ভব। পাকিস্তানি পাঞ্জাবি সেনা, বাংলাদেশের জাতীয়বাদী গুণ্ডা, বিহারি, পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে থাকা বাঙালি, ভারতীয় সৈন্য এরা প্রত্যেকেই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একযোগে দোষী। (সাইকিয়া ২০১১;৪৮)
আবুল মায়াসের বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচারের বেশী কিছু নয়। গণহত্যার সংজ্ঞায়ন ইয়াসমিন সাইকিয়া জানেন না, এটা মানতে পারিনা। ত্রিশ লক্ষ বাংলাদেশিকে হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করে দেয়ার ঘোষণা শোনা গিয়েছিল ইয়াহিয়ার মুখে। একটা পরিকল্পিত গণহত্যাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুশীল চেহারা দেয়ার এই প্রচেষ্টা নিন্দাজনক।
১৯৭১ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি ভুট্টোর এলাকা লারকানাতে ইয়াহিয়া একটা সভা ডেকেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে পরাস্ত করতে সেখানে একটা গণহত্যার পরিকল্পনা করা হয়। রবার্ট পেইনের বইতে এশিয়ান টাইমসের বরাত দিয়ে ইয়াহিয়ার একটা দম্ভোক্তি ছাপানো হয়েছে- “Kill 3 million Bengali. The rest will eat out of our hands.” … রবার্ট পেইন তাঁর বইতে বাংলাদেশের কসাই টিক্কা খানের হুংকারের কথা উল্লেখ করেছেন- “ পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের দরকার জমি, মানুষ নয়।” তিনি আরো উল্লেখ করেছে নিয়াজি বাংলাদেশের লোকজনকে বানর, মুরগী ইত্যাদি নামে ডাকতেন। বাংলাদেশ নিম্নাঞ্চলের এলাকা বলে এখান থেকে নিচু জাতের মানুষ বেরোয় বলে তাঁর ধারণা ছিল। হিন্দুরা তার কাছে কীটের বেশী কিছু ছিল না , ইহুদিদের মতো এদেরকেও পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার কথা তিনি বলতেন। তথ্যমন্ত্রী রয়দাদ খান ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছেন- “Putting some fear of God in Bengali and to purify the Bengali race and culture by arabising the Bengali script.” বাংলাদেশি জনগণকে নিয়ে যেসব অপমানজনক ও হীন মন্তব্য পাকিস্তানি জেনারেল ও রাজনীতিবিদেরা করতেন সেটা ইহুদির প্রতি করা নাৎসিদের করা অপকর্মের সমতুল্য।(খান ২০০৯: ৪৮-৪৯)
ইয়াসমিন সাইকিয়া উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি (WCFFC) যুদ্ধাপরাধীদের একটা তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেখানে ১,৫৯৭ যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে ৩৬৯ জন পাকিস্তানি মিলিটারি, ১,১৫০ জন্য রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির লোকজন, আর ৭৮ জন বিহারি। ইয়াসমিন সাইকিয়া এই তালিকায় কোনো জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধার নাম দেখেন নাই দেখে অবাক হয়েছেন। তিনি এই তালিকার বৈধতা নিয়েও তাই প্রশ্ন তুলেছেন। আর তার পক্ষে তোলাই স্বাভাবিক।
ইয়াসমিন সাইকিয়ার একটা গবেষণা প্রবন্ধ ‘Beyond the Archive of Silence: Narratives of Violence of the 1971 Liberation War of Bangladesh’ বাংলায় অনুবাদ করে দৈনিক সমকালে ধারাবাহিকভাবে ছাপিয়েছিলেন ফারুক ওয়াসিফ। একটি ব্লগ পড়ে জানতে পারি, অন্যান্যদের মধ্যে ইয়াসমিন সাইকিয়ার লেখা পড়েও তিনি উপকৃত হয়েছেন। অথচ এই গবেষণা প্রবন্ধ পড়ে ইয়াসমিন সাইকিয়ার ভবিষ্যৎ অসাধু উদ্দেশ্য আন্দাজ করা যায় । ফারুক ওয়াসিফ ইয়াসমিন সাইকিয়ার এই অসাধারণ কাজটি বই হিসেবে প্রকাশিত হলে অনুবাদ করতে আগ্রহী ছিলেন। তার সেই আগ্রহ অটুট আছে কিনা জানি না। বইটি পড়ে বোঝা যায়, সাইকিয়া পাকিস্তানের প্রতি তার দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করেছেন ইতিহাস বিকৃতি করে। পাকিস্তানও দায়িত্বশীলতার সাথে ইয়াসমিন সাইকিয়ার গুরুত্ব স্বীকার করেছে, ঘটা করে তার বই প্রকাশ আর উপযুক্ত সম্মাননা দিতে তারা কসুর করেনি।
(ক্রমে)
সূত্র
১। Saikia, Yasmin, Women, War, and the Making of Bangladesh: Remembering 1971, Duke University Press Books, August 10, 2011
২। Guha, Ramachandra, India After Gandhi: The History of the World's Largest Democracy, Ecco, aFirst Edition First Printing edition, July 24, 2007
৩। Khan, Adil, The Destiny Of A Child Is The Mystery Of Creation, Author House, May 31, 2009
৪। Saikia, Yasmin, Beyond the Archive of Silence: Narratives of Violence of the 1971 Liberation War of Bangladesh, History Workshop Journal, Issue 58, Autumn 2004, pp. 274-286
৫। http://www.nirmaaan.com/blog/faruk-wasif/5796
৬। http://www.sachalayatan.com/faruk_wasif/22979
৭। http://www.sachalayatan.com/shubinoymustofi/16790
মন্তব্য
বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র মানে কেবল ভোটাধিকার, প্রচার যন্ত্র কেবল ক্ষমতাধারীর পৃষ্ঠপোষক, সাংবাদিকতা মানে মূলত চোখ বন্ধ কানে শোনা সংবাদ পরিবেশন, যুদ্ধপরাধীরা বুক ফুলিয়ে হাঁটে আর মুক্তিযুদ্ধ আর তার ইতিহাসের কথা বলা যখন রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট পাবার পন্থা, তখন কয়েকজন ব্লগার আর ব্লগিং এর পরিবেশ আমার আস্থা আদায় করে নেয়, যেখানে কিছু মানুষ এখনও মিথ্যে কে মিথ্যে বলেই চেনে, মিথ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, আর সত্য অনুসন্ধান করতে চায়, তুলে ধরতে চায়, কেবল নিজের ব্যক্তিস্বত্তা আর আবেগের কাছে সৎ থেকে। ধন্যবাদ আপনাকে আরেকজন শর্মিলা বসুর কান্ডকারখানা তুলে ধরার জন্য।
একটা মিথ্যে দশবার বললে সত্যি হয়ে যায়, এই চিন্তায় যারা বিশ্বাস করে, তাদের একবার বুঝে ওঠা দরকার, মিথ্যা সত্য হিসেবে পরিচিত হবে তখনই, যখন সত্যিকারের মানুষগুলো আর নিশ্বাস নেবে না পৃথিবীর বাতাসে। সত্যিকারের মানুষগুলো যতক্ষণ বেঁচে আছে, ততক্ষকণ এদের ঈশ্বরও মিথ্যাকে সত্যি করে দিতে পারবে না।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার অপরাধে অপরাধী পার পেয়ে যাওয়া পাকিস্তানি জেনারেলরা শেষ বয়সে এসে সিরাম ব্লোজব পাচ্ছে।
আপনাকে ধন্যবাদ একটি জরুরি বিষয় সামনে আনার জন্য। আচ্ছা, মনে একটা প্রশ্ন প্যাঁচ কষতে থাকে, এসব গবেষণার স্বীকৃতি বা অর্থজোগান যারা দেয় সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে তার বিরোধিতা করে না কেন। কিংবা আমাদের সভাপতি পদলোভী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এগুলোর বিরুদ্ধে কী করছেন ? শর্মিলা বসু বা ইয়াসমিন বা 'মেহেরজান'এর সুতা কাদের হাতে এসব খোঁজ করার দায়িত্ব তো সরকারের, নাকি তারা এগুলোর খোঁজ রাখার সময়ই পায় না । আমাদের দেশেও যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বড় বেশি মানবাধিকারের কচকচানি চলছে । এসব ব্যাপারে সরকারের কোন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি আছে বলে মনে হয় না।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
ক্ষমতাসীনদের মধ্যেই অনেক ট্রোজান হর্স ঘাপটি মেরে আছে - ইদানিং তাদের কারো কারো কথাবার্তায় সেটা বুঝা যায়।
****************************************
না, সরকার এইসব কমিশনহীন খাতে তার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ব্যবহার করবে বলে মনে হয় না। কাজগুলো আমাদেরই হাতে নিতে হবে।
পড়ছি।
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
কিছু বেজন্মার জন্য সভ্যতার ইতিহাস সবসময় কলঙ্কিত, এর গবেষনার কাগজ দিয়ে প্রাতঃকৃত্য সারতে পারলে শান্তি পেতাম
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মুশকিল হলো বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অনেকেই এদের এইসব গবেষণা পড়েই তৃপ্ত হয়ে যেতে পারে। দেশে, বিদেশে ক্রমাগত যেসব দালাল তৈরী হচ্ছে এরা বেশ পরিচিত এবং এদেরকেই মানুষ চেনে বেশি, সেই তুলনায় বাংলা ব্লগের পাঠক সংখ্যা কত সেটা আমার জানতে ইচ্ছে করে। আমরা লেখা পছন্দ হলে ফেসবুকে শেয়ার দেই, জনে জনে বলি কিন্তু তাতেও কতজন সেটা জানতে পারে, এর বাইরেও বেশিরভাগ মানুষই দেখি এইগুলা নিয়ে ভাবিত না, তারা নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত।
উপায় কি? একটা ম্যাসিভ প্রচারণা চালানোর উপায় কি? শুধুমাত্র লিখে, ছড়িয়ে দিয়ে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের একদমই ‘নিজস্ব হাইপোথিসিস’ এর ভিত্তি করে যে ‘আগে থেকে তৈরী করা’ উপসংহারে পৌছুনো তার প্রতিরোধে আর কি করার আছে আমাদের?
ইনসানিয়াতকো মাক-সুদ ....
একই প্রশ্ন।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
হ।
উপায় আছে। এদের লেখা অ্যাকাডেমিকভাবে মোকাবেলা করা এবং সেটা ইংরেজিতে। কিন্তু সেই কাজের জন্য যেই শ্রম আর সময় দরকার সেটা বের করাই মুশকিল।
কিন্তু এর কোন বিকল্পও নাই!
ইহুদী, আর্মেনিয়ানসহ অন্যদেরও এটা করা লেগেছে (তাদের কিছু বিশেষ সুবিধা সত্ত্বেও)। আমাদের আরো বেশি লাগবে। আমাদেরটা আর কেউ করে দিবে না। আমরা না পারলে হবে না। সোজা কথা। বরং ফাকিস্তানি থেকে শুরু করে তাদের মিত্র/সহমর্মী/ভাড়াটেরা ফাঁকা মাঠে একের পর এক গোল দিয়েই যাবে। এটাই মনে হচ্ছে বাস্তবতা।
****************************************
যতটা বুঝি, একাডেমিকভাবে মোকাবেলা’র বেলায় রেফারেন্স জিনিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার এই পোস্টে কিংবা আগের পোস্টেও দেখেছি আপনি শর্মিলা বসু কিংবা রুবায়েতকেও রেফারেন্স দিয়েই মোকাবেলা করেছেন। আমি খুব নির্দিষ্টভাবে যদি বলি, কিছু অত্যাবশ্যকীয় রেফারেন্সকে কিভাবে একাডেমিক জায়গাগুলোতে একদম মানদণ্ড হিসেবে দাড় করিয়ে দেয়া যায়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের আর্কাইভ ছড়ানো-ছিটানো কিন্তু আছে।
সময় নেই আমারও, কারোরই নেই। খুব বেশি কিছুনা করে শুধুমাত্র লিংকগুলো জড়ো করে সেগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া যায়না? রেফারেন্স দুর্বল বলে যদি একজন প্রতিবাদ করে কোন সেমিনারে কিংবা প্রেজেন্টেশন এর সময় এবং তার হাতে যদি পর্যাপ্ত লিংক থাকে,এইসব ভণ্ডদের ন্যাংটো করে ছেড়ে দেয়া যাবে।
আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমাদের ‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়’ আছে, ’মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ আছে, অনেককিছুই আছে, কিন্তু আমাদের ‘প্রোএকটিভ’কর্মী নেই, নেই ভবিষ্যতে কি কি করতে হতে পারে এই নিয়ে ভাবার কিংবা কাজ করার মানুষ। সবাই শুধু বড় বড় কথা বলেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্রমাগত এই নিয়ে লড়বার মত হ্যাডম নেই কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে হ্যাডম এর কথা বলে ব্যবসা করতে সবাই ওস্তাদ।
একটা কিছু করা দরকার শুভাশীষদা, নইলে ক্রমাগত শুধু এদের সংখ্যাই বাড়বে আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একদিন আমাদের বলবে -‘তোমরা বেঁচে থাকতে কথা বলা ছাড়া আর কি করছিলা’।
কম পরিশ্রমেই কি করা যায় প্রথমে?
আরো একটা ব্যাপার আছে। বাংলাদেশিরা রিসার্চ করলে পাকিস্তানিরা বলে, এটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয় নাই। শর্মিলা, ইয়াসমিন এরা কেস স্টাডি নিয়ে নিরপেক্ষ রিসার্চের বাহানা শুরু করলে বাংলাদেশের লোকজন এদেরকে তথ্য দিয়েছে, লুকোছাপার কিছু নেই বলে যা জানানো দরকার জানিয়েছে। পাকিস্তানিদের সাথে যখন তারা তথ্য নিতে গেছে, তখন সম্মাননা, আপ্যায়ন, উৎকোচের ঠেলায় গবেষণা ঠিক নিরপেক্ষ না হয়ে একেবারে পাকিপক্ষ হয়ে গেছে। পাকিস্তানিরা এখন বলে, রিসার্চ করেছে দুইজন প্রতিষ্ঠিত স্কলার, দুইজনের কেউ পাকিস্তানি বা বাংলাদেশি নয়, বরং ভারতীয়। সুতরাং এদের কথাবার্তা বায়াসড্ হতে পারে না। মিথবাস্টিং এ এতো এতো টাকা ওড়ে দেখে ভারতীয় আরো কিছু একাত্তর স্কলার এদিকে পা বাড়াবে সেটা অনুমান করছি।
আপনার কথা মেনে নিয়ে জানতে চাই - এই স্কলাররা বাংলাদেশে আসলে তারা নিশ্চিতভাবে কারো কারো না সাথে যোগাযোগ করে, তাদের সহায়তা নিয়ে তারপর তাদের কাজগুলো করে। এবং কেন যেন মনে হয় সেই সহায়তাকারী মানুষেরা বাংলাদেশেও কম বেশি পরিচিত, খুব বেশি অপরিচিত হতেই পারেনা - সুবিধাবাদী সবাই রসুন এর বাজারেই থাকে।
একটা কিছু দাড় করানো যায়না, যেমন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে গেলে (বিদেশি), অন্তত একটা কোন জায়গা থেকে তার কনটেন্ট দেখা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তেমন কোন স্থান হতে পারে ?
হয়তো খুব বেশি ভাবছি কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে এখন না ভাবলে খুব বেশি দেরী না হয়ে যায়!
আমার ও এক-ই প্রশ্ন, এসব একপেশে, বিক্রি হয়ে যাওয়া গবেষকদের মোকাবেলা করার উপায় কি? ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, ভালো প্রকাশক থেকে এভাবে একপেশে,মিথ্যা প্রকাশণা বের হতে থাকলে এক সময় এসব-ই সব জায়গায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হতে থাকবে, তখন এসব মিথ্যা আরও জেঁকে বসবে। আমাদের কি এমন কোনও গবেষক বা বুদ্ধিজীবি নাই যিনি এসবের জবাব দিয়ে কোন প্রকাশনা বের করতে পারেন?
****************************************
facebook
দুর্দান্ত। এরা সত্যিই সত্যকে ঢাকার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কখনো কখনো মনে হয় এরাওতো এক ধরণের অপরাধী?
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা।
ডাকঘর | ছবিঘর
খুবই জরুরি একটা লেখা। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
এই বিষয়গুলো নিয়ে সচলে যে লেখালেখিগুলো হচ্ছে, সেগুলোকে একত্রিত করে বই প্রকাশ করা যেতে পারে। ব্লগের চেয়ে সেটা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছুবে নিশ্চয়ই। এদের এই অপপ্রচারগুলোর বিরুদ্ধে স্থায়ী কিছু প্রমাণপত্র থাকা উচিত।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
এই যে নষ্ট-ভ্রষ্ট হিউম্যানিজম এইটা পশ্চিম থাইকা আসছে। গোড়ার কথা। পাকি নষ্টামিকে সঙ্গত কারণেই তাদের অ্যাকাডেমিয়া আদর করবে। আগে বলত সাদারা মানব, বাকিরা মানবেতর। মানবেতরকে মানব কইরা তুলতে দুনিয়া দখল করা দরকার। আর এই কালে, এগ্রেশন জায়েজ করতে বিশেষ প্রকৃতির 'ইনসানিয়াত' প্রচার করতে হয়। সকলের ভিতরেই খারাপ-ভালো দুইই আছে এইটা বইলা তারা বুঝাইতে চায়, 'খারাপ' আর এক্সক্লুসিভলি খারাপ নাই। অর্থাৎ ইনসানিয়াতই যেইখানে ভালো-খারাপের মিশেল, সাদা-কালোর তফাৎটাই যেইখানে ঘোলা, সেইখানে নিপীড়ক আর নিপীড়িতের ফারাক কী? তারা এক (আবুল মায়াসের উদ্ধৃতি এইটা ভালো উদাহরণ)। নিপীড়কও ইনসান। তাই আজকের দুনিয়ার আমেরিকা আর পাকিস্তানের ইনসানিয়াতের নামতা পড়ি। (এই বিচারে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার যে নিজস্ব টার্মে 'মানবতাবিরোধী' অপরাধকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার সাহস দেখাইছে, এইটা ঐতিহাসিক অর্জন।)
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ইনসানিয়াত নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞামিক চিন্তাভাবনার প্যারালেলে একটা অফটপিক চিন্তা মাথায় আসছে। বিজ্ঞাম তো ভালোবাসাবাসির মধ্যে হরমোনের গন্ধ পায়। এখন যদি এইরকম হয়, ধরেন বিজ্ঞাম প্রমাণ করলো যুদ্ধকালীন সময়ে ধর্ষক, গণহত্যাকারি, নিপীড়কের এদের শরীরে একটা বিশেষ রকমের ঘৃণাঘৃণির হরমোন ছাড়ে, তখন কি হবে? ইয়াসমিন সাইকিয়া, বোস, রুবাইয়াত তো খুশিতে লাফ দিয়ে উঠবে। গবেষণা প্রবন্ধ বাজারে ছাড়বে, দোষ ঐ বিশেষ হরমোনের। আর পাকিস্তানি পাঞ্জাবিদের শরীরে এই হরমোন অল্পতেই বেড়ে যায়। ব্লা ব্লা ব্লা।
অফটপিক, মানুষের আবেগ গায়েবী কিছু তো নয়। সবকিছুই নিয়মে বাঁধা। সব আবেগের পেছনেই তাই ওই হরমোন অথবা তার আত্মীয়স্বজনের কেরামতি। মানুষ 'ডিজাইনড'। বাকি সব প্রাণিও।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঐটা ফান কমেন্ট ছিল। ইমোটিকন দিতে ভুলে গেছি। ইল্লি।
বিজ্ঞাম নিয়া ফান করলে গুনাহ হয়।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নাৎসীজম, এ্যান্টি-সেমিটিজম ইত্যাদির (বিশেষ করে ইহুদী-বিরোধিতার প্রেক্ষিতে, এমনকি স্রেফ ইস্রায়েল-বিরোধিতার প্রেক্ষিতেও) ক্ষেত্রে কি তারা সেটা বলে তেমন একটা ? তাদের, বিশেষ করে মার্কিনি, এ্যাকাডেমিয়া কি ইহুদী/ইস্রায়েল বিরোধী সিরিয়াস সমালোচনা বা ইস্রায়েল-বিরোধী ফিলিস্তিনি কার্যকলাপের নৈতিক/বৌদ্ধিক/এ্যা্কাডেমিক/রাজনৈতিক সমর্থন প্রসঙ্গে এই বিশেষ প্রকৃতির 'ইনসানিয়াত'-এর বা সাদাকালো-ঘোলাকরণের ব্যাপক প্রচার/প্রসারের সমর্থন বা প্রশ্রয় দেয় ? নাকি তারা এটা শুধু নিজেদের ও নিজেদের সমর্থক ও সমর্থিতদের জন্যই 'এক্সক্লুসিভলি' বরাদ্দ রাখে ?
****************************************
সাদাকালোর মূল আউটলাইনটা বজায় থাকে।দুষ্ট লোকে পচা কথা বললে পরেইসেনা ঘোলা-কারবারিরা ঘোল খা্ওয়াইতে চায়। তার আগ পর্যন্ত সাদা ও কালা, সাদা আর কালাই থাকে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
যন্ত্রণার শেষে নাই! ডার্ক স্কলারের সংখ্যা দুনিয়ায় আশংকাজনকহারে বাড়তেছে! কয়দিন পরে এরা ন্যায়ের সার্টিফিকেট দিবো!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কয়েকদিন পরে কি, এখনই দিতেছে। কয়েকদিন পর এইসব কথা বললে ‘দ্বীপান্তরের সার্টিফিকেট’ ধরিয়ে দেয় কিনা সেইটাই চিন্তার বিষয় .. কলিকালে জন্ম নিয়াতো দেখি বিনোদনের অভাব নাই!
ডার্কজাস্টিস মুভিটা কেন জানি খুব পছন্দ হইছিলো ..
এই সব গবেষণা, প্রকাশনা, সভা-সেমিনার, প্রচার-প্রচারনার অর্থায়ন কারা করে, কীভাবে হয় এসব নিয়ে আগেও প্রশ্ন তুলেছিলাম এখনো প্রশ্ন তুলছি। আমি মোটা বুদ্ধির মানুষ। আমি বুঝি খুঁটির জোরে ছাগল নাচে। সরাসরি পয়সার সাপ্লাই না থাকলে সাইকিয়া-বসু-রুবাইয়াতরা নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে এসব করতে যাবে না। যারা অর্থায়নগুলো করে তাদের লাভের হিসাবটাও পাকা হবার কথা। সেই লাভটা কীভাবে তুলে নেয় সেটা জানাটাও দরকার। এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলে এদের কনফ্রন্ট করাটা সোজা হতো। এখন অদৃশ্য শক্তির সাথে লড়তে হবে। আর কিছুদিন পর পর নতুন নতুন সাইকিয়া-বসু-রুবাইয়াতদের আবির্ভাব হতে থাকবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইয়াসমিন সাইকিয়া একাত্তর ও নারী নিয়ে গবেষণার জন্য কি একটা রিসার্চ স্কলারশিচ পেয়েছিলেন। হাজার পঁচিশেক ডলারের মতো। ইয়াসমিন সাইকিয়াকে বাংলাদেশে সম্মাননা, অতি মাত্রায় আপ্যায়ন কিংবা উৎকোচ দেয়ার কিছু নাই। সে তার মতো কিছু কিছু কেস স্টাডি করেছে। ভারতীয় স্কলার একাত্তর নিয়ে গবেষণা করতে আসলেই পাকিস্তানিরা আগে থেকেই টার্গেট করে। পাকিস্তানে যাওয়ার পরেই বাংলাদেশ থেকে যা পায় নাই, সেটা বেশিমাত্রায় পেয়েছে। ফলে কাণ্ডজ্ঞান আর ঠিকমতো রাখা সম্ভব হয় নাই। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে ইনসানিয়াত খুঁজতে খুঁজতে সে হয়রান হয়ে গেছে। পাকিস্তানিদের লুকানোর অনেক কিছু আছে বলে তারা এইসব সো-কলড্ প্রতিষ্ঠিত গবেষকদের পেছনে রূপি খরচা করবে। তারপর বলবে, দ্যাখো এইসব কথা কিন্তু আমরা বলতেছি না, বলতেছে ভারতের স্কলারেরা। এরা এমনে এমনে কথা বলতেছে না, এরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তথ্য নিয়ে এইসব বলতেছে। ব্লা ব্লা ব্লা।
আমাদের স্ট্র্যাটেজি কি হওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন।
প্রথমে শর্মিলা বোস, তারপর ইয়াসমিন সাইকিয়া— এই সিরিজের পাইক্যা অ্যাপোলজিস্ট তৈরী হওয়ার কাহিনিটা কী? সিরিজ ঠিক থাকলে আরেকজন উঠে আসবে, খুব শীঘ্রই।এবারে হয়তো কিছুটা উত্তর থেকে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মেগামিথ্যাবাদী মিস বোস তো রেপের প্রসঙ্গ উঠলেই "ওটা ইয়াসমিন সইকিয়া'র বইতে বিস্তারিত পাবেন, আমি ওই প্রসঙ্গে যেতে চাই নি" বলে পাশ কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। তা এনার বই ওই বিষয়ে কী বলে?
পরের পর্বগুলোতে আসবে।
শর্মিলা রুবাইয়াত সাইকিয়া মিলে যা শুরু করেছে, মনে হচ্ছে আগামীতে 'রাজাকারের মানবতা' বিষয়ে গবেষণা করে এরা 'শান্তির নোবেল' রেসে পাল্লা দেবে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
পরের পর্ব কই?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
নতুন মন্তব্য করুন