কাছে দূরে

শুভপ্রসাদ এর ছবি
লিখেছেন শুভপ্রসাদ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৪/২০১০ - ৭:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পুরোনো লেখালেখি ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎই গত পুজোর সময় লেখা একটি নিবন্ধে চোখ পড়ল। মনে হল সময় চলে গেলেও এই লেখার বৃহত্তর তাৎপর্য হারিয়ে যায় নি, বরং রয়েই গেছে। সেই ভেবেই প্রায় মাস ছয়েক আগের একটি লেখা পাঠকদের কাছে হাজির করলাম।
****** ******* ******** ********
যে বছর ঈদ ও পুজো পাশাপাশি পালিত হয়, সেবার অন্য এক অনুভূতি হয় আমার। ধার্মিকতা নিয়ে যদিও আমার কোনও আগ্রহ নেই, কিন্তু উৎসবে আগ্রহ রয়েছে। এবার আবার ঈদ পুজো পাশাপাশি। যদিও এই মুহূর্তে শহর শিলচর থেকে আমি অনেক দূরে, তবু কল্পনায় দেখি শিলচরের নাজিরপট্টি সেন্ট্রাল রোড দেওয়ানজি বাজারের দোকানগুলিতে হিন্দু মুসলিম সকলে একসাথে ভিড় জমিয়েছেন নতুন জামা কাপড় কেনার জন্যে। একসাথে উৎসব একসাথে আনন্দ উপভোগ একসাথে ব্যস্ততা- সব ঘটছে আলাদাভাবে যার যার সমাজে, কিন্তু একই সময়ে দুটো উৎসব হওয়ায় অজান্তে একটা অংশীদারীত্ব গড়ে উঠছে। অফিস কাছারি স্কুল কলেজ বা যার যার কর্মস্থলে অভিজ্ঞতা বিনিময় হচ্ছে কথায় কথায়, আর একটা সেতু গড়ে উঠছে। আমরা যারা হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও বেহায়ার মত ভবিষ্যতের একটি মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখি, একটি ভোরের প্রত্যাশায় রাত জাগি, পরস্পরের এই হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমাদের স্বপ্নের বীজ যেন অঙ্কুরিত হয় এই অসময়েও আমাদের মনে। কত কত ভাবনা জড়ো হচ্ছে এই মুহূর্তে মনে। সব যে গভীর চিন্তার উৎস থেকে জন্ম নেওয়া কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা তা নয়। মাঝে মাঝে কৌতুকবোধও হয় নানা কথা ভেবে। আমাদের শিলচরে শারদোৎসব এলে দোকানে দোকানে ব্যানার টাঙানো হয়, শারদ অভিনন্দন। ঈদ এলে ওই দোকানগুলিতে ব্যানার ঝোলে, ঈদ মোবারক। এবার কী ঝুলছে কে জানে? নিয়মে দুটোই ঝোলার কথা। মনে পড়ছে, একবার দেখেছিলাম, এক দোকানি টাকা বাঁচানোর জন্য একই ব্যানারের এক পিঠে শারদ অভিনন্দন ও অন্য পিঠে ঈদ মোবারক লিখিয়ে রেখেছিলেন। যখন যে উৎসব আসে তিনি তখন তেমন তেমন ব্যানার ঘুরিয়ে দেন। আমার কৌতুকবোধ হচ্ছে এটা ভেবে, এবার কী করবেন শিলচরের সেই দোকানি। তিনি কোন পিঠ সামনের দিকে রাখলেন কে জানে!

শিলচরের রাস্তাঘাট ভাঙা। এ নিয়ে আমাদের রাগের শেষ নেই। বলা বাহুল্য, সেই রাগ বেশিরভাগ সময়েই বিপথগামী। যাদের এই রাস্তা তৈরি করা কিংবা ভাঙার সাথে কোনও সম্পর্ক নেই, তাদের ওপরই বেশিরভাগ সময় যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ে। আর যারা এগুলো তৈরি করার সময়ই অদূর ভবিষ্যতেই ভেঙে পড়ার সব আয়োজন করে রাখেন ও নানা ধরনের নাটুকেপনা করেন কাগজে কাগজে টেলিভিশন চ্যানেলে, তাদের প্রতি আমাদের সীমাহীন ক্ষমা। পুজো কাছে এলে সব না পাওয়াকে গ্রাস করে দেয় মানুষের দু’টি প্রধান উৎকণ্ঠা । এক, পুজোয় আলো থাকবে তো? দুই, ভাঙা রাস্তাগুলো পুজোর আগেই ধুলো মাটি কাদা যা হোক দিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে নির্বিঘেœ বাইক বা অটো বাহিত হয়ে ঘুরে বেড়ানোর মত উপযৃুক্ত করে রাখা হবে তো? প্রধান উৎকণ্ঠা মূলত এগুলো ঘিরেই। এটুকু হয়ে গেলেই বিজয়ীর হাসি মুখে নিয়ে কাগজে কাগজে বিজ্ঞাপন দেবেন শুভেচ্ছা জানিয়ে অপদার্থরা।

আমার এতকাল একটা হীনমন্যতা কাজ করত শিলচরে থাকাকালীন, আমরা হিন্দু মুসলিমরা পরস্পরের অন্দর মহলের খবর খুবই কম রাখি। এটা হয়ত সত্যই। তবু ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে যে উদাসীনতা ঘিরে আছে পরস্পরের সমাজ সম্পর্কে তার নিরিখে আমরা বোধহয় অনেকটাই ভালো আছি। আমাদের বরাক উপত্যকায় রমজান মাস এলে মুসলিম সমাজে কি কি ঘটনা ঘটছে এবং কি কি আচার অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে গড় হিন্দু পরিবারের স্পষ্ট না হলেও একটা ধারণা রয়েছে। ছোট বেলা থেকে ইস্কুল কলেজে পাশাপাশি পড়াশুনা করে, পরে চাকরি জীবনে পাশাপাশি চাকরি করে পরস্পরের সমাজের বৈশিষ্ট্যের দিকগুলো সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়ে যায়। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে আমাদের চাহিদা ছিল আরও বেশি, মনে হত আমরা এখনও পরস্পরের সম্পর্কে অনেকটাই কম জানি।

এখন পশ্চিমবঙ্গ নিবাসী হওয়ার পর দেখলাম, এখানে পারস্পরিক চেনাশোনাটা আমাদের চেয়েও কম। সমাজে রাজনীতিতে পেশাগত জগতে মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চয়ই রয়েছে হিন্দু মুসলিমের। কিন্তু পরস্পরের সমাজ সম্পর্কে, বিশেষ করে গড় বাঙালি হিন্দুদের বাঙালি মুসলিম পরিবারগুলিতে এই মাসে কৃত্য আচারগুলি সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। বরাক উপত্যকায় যেমন পুজো এলে পত্রপত্রিকাতে ধর্মীয় এবং সামাজিক নানা বিষয় নিয়ে অনেক নিবন্ধ বেরোয়, তেমনি ঈদ এলে কম হলেও বেশ কিছু লেখালেখি হয় পত্রপত্রিকায় এর ধার্মিকতা নিয়ে, উৎসবের দিক নিয়ে। কিন্তু আশ্চর্য, পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যম। চ্যানেলে চ্যানেলে কাগজে কাগজে শুধু, পুজোর ক’দিন বাকি, পুজোয় কোথায় যাবেন, কি খাবেন, সেলিব্রিটিরা পুজোয় কি করবেন, মহালয়া রোববার না সোমবার, এ নিয়ে পণ্ডিতদের সাক্ষাৎকার, মতামত, এগুলোতেই সংবাদ মাধ্যম সরগরম। অথচ রমজান মাস চলছে, ঈদ আসছে, খবরের কাগজে তার কোনও ইঙ্গিত নেই। এই রাজ্যেরই এক বড় অংশের মানুষ যে এখন একটি ধর্মীয় কৃত্য পালন করছেন, কিছু দিন বাদেই মেতে উঠবেন একটি উৎসবের আনন্দে, তা কোনও সংবাদ মাধ্যমের বিবেচ্য বিষয় নয়। পুজোয় যদিও কি খাবেন এ বিষয় নিয়ে কোনও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই, তবু এবারের পুজোর সেরা খাবার, এ ধরনের শিরোনাম দিয়ে খবর বেরোচ্ছে, বেরোচ্ছে ফিচার। কিন্তু মুসলিমদের বিভিন্ন ঈদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্তুর সম্পর্ক রয়েছে। এই ঈদে যেমন সেমুই, কোরবানির ঈদে যেমন মাংস। পশ্চিম বাংলার সংবাদ মাধ্যম এ সমস্ত বিষয়ে নীরব। অথচ এই রাজ্যের একাধিক জেলায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেদিন কয়েকজন হিন্দু সহকর্মীর সাথে কথা বলছিলাম, যারা দশকের পর দশক ধরে মুসলিম সহকর্মীদের সাথে পাশাপাশি বসে কাজ করে আসছেন। অবাক হয়ে গেলাম তাদের কথা শুনে, রমজান মাসে উপোস করার ব্যাপারটা ছাড়া আর প্রায় কোনও বিষয়েই তাঁদের বিশেষ কোনও ধারণা নেই।

এ সব দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ে বাল্যের কথা শৈশবের কথা। সমস্ত হীনমন্যতা সত্ত্বেও মনে হয় আমাদের বরাক উপত্যকার সমাজে পরস্পরকে চেনা জানার বিষয়টা খুব একটা কম নয়। ছোটবেলায় রমজান এসেছে বুঝতাম, যখন দেখতাম প্রায় রোজ অফিস ফেরতা বাবা জিলিপির ঠোঙা নিয়ে ঘরে ঢুকত। খেতে না চাইলে বলত, খাও, খাও, রমজান মাসের মত ভালো জিলিপি সারা বছর খুঁজেও পাবে না। রমজান মাসে আমাদের প্রতিদিনের বিকেলের টিফিনের খাদ্যে জিলিপি ছিল বাঁধা। স্কুলে বন্ধুরা ঘন ঘন থুতু ফেলতে যেত বাইরে, বলত, এ সময়ে আমাদের থুতু গিলে ফেলাও নিষেধ। একবার প্রচণ্ড মারকুটে এক বন্ধুর সাথে কি একটা কথা নিয়ে আমার মারামারি লাগে প্রায়। হঠাৎ সে বলল, রমজান মাসে মারামারি করব না। আব্বা বারণ করেছে, এখন সব কাজ করব, কিন্তু মনে শান্তি রাখতে হবে। এভাবেই খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দু’টি সমাজ পাশাপাশি থাকলে যে ভাবে পরস্পরের প্রতি জানা শোনা বেড়ে চলে, এভাবেই জেনেছি, রোজা মানে কি, সিয়াম সাধনা মানে কি, জেনেছি শরিয়ৎ, হকিকৎ, তরিকৎ ও মারিফতের নাম। এমন কি, ক্লাস ফাইভে একবার আমার একই বেঞ্চের বন্ধু নুমানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমরা তোদেরকে গালি দিলে বাঙাল বলি(আমার পশ্চিমবঙ্গীয় বন্ধুরা আঁতকে উঠবেন, এখানে এই গালাগালটা আমারই প্রাপ্য), তোরা আমাদের ওপর রেগে গেলে কি বলে গালাগাল দিস? সে নির্দ্বিধায় জানাল, আমরা তোদের মালাউন বলে গালি দিই। কত নিষ্পাপ বন্ধুত্ব হলে এমন একটি তথ্যেরও বিনিময় হতে পারে।

আমাদের সরকারি উচ্চতর বালক বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের সংখ্যাগত বিন্যাসের একটি বৈশিষ্ট্যের জন্যেই হয়ত এমনটা ছিল। কি ক্লাসে, কি কমনরুমে, একটা যৌথ সমাজ ছিল। তার মানে এটা নয় যে ছাত্রদের মধ্যে কোনও অশান্তি বা শিক্ষকদের মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক গোপন টানাপোড়েন ছিল না। সরকারি বিদ্যালয়ে মারামারিরও বেশ একটা ভালো দুর্নাম ছিল। আজ সেন্ট্রাল রোড ভার্সাস তারাপুর, সঙ্গে মধুরবন্দ। কাল জানিগঞ্জ ভার্সাস মধুরবন্দ, সঙ্গে তারাপুর সঙ্গী। ক্লাস ছুটির পরের এই মারামারিগুলো কখনও কখনও খুব খারাপ মোড়ও যে নিত না, তা নয়। স্ট্যাব ও মার্ডার শব্দের তফাৎ, ইংরেজি ক্লাসে নয়, এসব মারামারির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েই জেনেছি। এগুলো তো ছিলই, এগুলো না থাকলে তো আর স্বপ্নের সমাজের জন্যে হা পিত্যেশ করে থাকতে হতো না সমাজ-রাজনৈতিক কর্মীদের। নীচতা, ক্লীবতা ছিলই, কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ছিল একটি যৌথ সমাজ। যখন বুক অবধি শুভ্র শ্মশ্র সাদা টুপি আকাশি লম্বা কুর্তা ও চোস্ত পরিহিত তফজ্জুল আলি স্যার রামায়ণ বলে যেতেন অনর্গল, বলতেন বঙ্কিমচন্দ্রের গদ্যের তিনি ভক্ত, তখন ক্লীবতা নীচতা হার মানে ভালোবাসার পৃথিবীর কাছে। ক্লাস নাইনে ওঠা মানে ছিল সরস্বতী পুজো ও মিলাদ মহফিলের দায়িত্ব। তখন থেকেই আমাদের মনে একটা বড় বড় ভাব। আমাদের ক্লাসের যৌথ সমাজেই ঠিক হল, আমরা সরস্বতী পুজোয় পেট ভরে প্রসাদ খাওয়াব। তোরা মিলাদে কি খাওয়াবি বল? হতোও। আমরা মিলাদের দিন অপেক্ষা করতাম কখন, হালুয়া ও বনরুটি বিতরণ শুরু হবে। একই ভাবে, পুজোর দিন, রাস্তায় অপেক্ষারত বন্ধুরা, কখন অঞ্জলি শেষ হবে, প্রসাদ দেওয়া শুরু হবে। কোনো সমাজতাত্ত্বিক হয়ত বলবেন, এখানে মিলিত জীবন কোথায়? এতো সমান্তরাল জীবন। হোক না সমান্তরাল জীবন, তবু তার মাঝখানে একটা স্বাভাবিক সহজাত সেতুও তো ছিল।

আমাদের সেই শৈশবে স্কুলে মারামারি ছিল ঠিকই, কিন্তু এখানে ওখানে প্রতিদিন চার্চ পোড়ানো মিশনারি পোড়ানো আর দিল্লি বোম্বের ব্লাস্ট ছিল না। রামমন্দিরও ছিল না, ইণ্ডিয়ান মুজাহিদিনও ছিল না। তখন সন্ত্রাস ছিল মিজোরাম আর নাগাল্যাণ্ডের পাহাড়ে বন্দী। ওখান থেকেই খবর আসতো গোলাগুলির, আর শান্তনু ঘোষের সংবাদ প্রতিবেদন পড়ে আমাদের ইন্সারজেন্ট শব্দের সাথে পরিচিতি।
এবার রমজান মাসে দিল্লির আকাশে বোমা বিস্ফোরণের কালো মেঘ, এখন শারদোৎসবের উৎসবের সময়ে কর্ণাটকে একের পর এক চার্চে চলেছে অগ্নিসংযোগ, হামলা। এখন রমজান মাসে কাইফি আজমির আজমগড় হয়ে গেল সন্ত্রাসবাদের নাকি আঁতুড়ঘর, এখন শারদোৎসবের প্রাক দিনগুলিতে নানাবতী কমিশনের পা কেটে জুতোর সাইজ ঠিক করা প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদীর মুখে বিজয়ীর হাসি। এই অন্ধ সময়ে বুকের ভেতর খুঁজে বেড়াই দু’িট মানুষকে। একজন যাকে আমি দেখেছি, আরেকজন যাকে আমি দেখি নি। যাকে দেখি নি, তিনি বিনিময়ের তাড়না থেকেই কি বাংলা ভাষায় কোরান অনুবাদ করেছিলেন। সেই গিরিশচন্দ্র সেন, যাকে লোকে বলত মৌলবী গিরিশ। যাকে দেখেছিলাম, এখনও যে কোনও দুঃস্বপ্নের রাতে যিনি আমার স্বপ্নে আসেন, আর আসেন বলেই আবার ভোরের আলোয় প্রত্যয় খুঁজে পাই। সেই তফজ্জুল আলি স্যারকে, দেখি তিনি অনর্গল বলে যাচ্ছেন রামায়ণ, আর আমরা দুষ্টু ছেলেরা ক্লাসে কথা বললে, মাঝপথে উঠে পিঠে বসিয়ে দিতেন একটি বিশাল কিল। ওই কিলে আওয়াজ হত বেশি, ব্যথা পেতাম কম। স্নেহশাসন বোধহয় এমনই হয়।

এই রমজানে এই পুজোয় দেখছি দেশের ওপর ঘনিয়ে আসছে আরো কালো মেঘ। রাজনীতির অঙ্গনে যারা নতুন সমাজ গড়ার লড়াই করেন তারা কিভাবে লড়বেন এই মেঘের বিরুদ্ধে তারাই জানেন। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি সামাজিক লড়াই, আর সেখানেই গুরুত্ব বাড়ে সামাজিক সহজাত স্বতস্ফূর্ত মেলামেশার। সে জন্যেই বড় বেশি প্রয়োজন মৌলবী গিরিশদের, প্রয়োজন প্রত্যেকের বাল্যে শৈশবে একেকজন তফজ্জুল আলি স্যারের। এখন, উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম ছেলেরা বিস্ফোরক তৈরি করছে, উচ্চ শিক্ষিত হিন্দু পরিবারের ছেলে মেয়েরা গুজরাটে দাঙ্গার সময় মুসলিম দোকানির জিনিসপত্র লুঠ করে বাড়ি ফেরে আনন্দে, মেয়েরা প্রতিবেশির বাড়ি পোড়াতে ছেলেদের হাতে পেট্রোল তুলে দেয়। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের আগে এই দেশ মুসলিম বোমাবাজও দেখেনি এই হারে, শিক্ষিত হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের এমন হিংস্র রূপও দেখে নি। এমন অসময়ে প্রবাসে থেকে বারবার মনে পড়ে ঘরের কথা, শৈশবের কথা, বাল্যের কথা, কৈশোরের কথা।


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ছোটবেলায় আমি হিন্দু-মুসলিমের যে সম্প্রীতি দেখেছি, এই বড়বেলায় সেটা দেখতে পাই না। মানুষের মাঝ থেকে পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। দৌড়ের ওপর পড়লেও লেখা ভালো লেগেছে।
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

সাবিহ ওমর এর ছবি

আমি ছোটবেলায় দুর্গা প্রতিমা দেখে যা ভয় পেয়েছিলাম, জীবনে ভুলবোনা হা হা হা...কিন্তু প্যাড়া খাবার জন্য ঠিকই হা করে বসে থাকতাম হে হে...

নাশতারান এর ছবি

লেখা বেশ ভালো লেগেছে।

মিশনারি স্কুল-কলেজে পড়েছি। ধর্মীয় বৈচিত্র্য অনুভব করেছি, বিভেদ কখনোই নয়। সেই চোখ দিয়ে যখন ধর্মীয় উন্মাদনা আর রাজনীতি দেখি, ভীষণ দুর্বোধ্য আর হাস্যকর ঠেকে। পাহাড়ে বাঙ্গালীর আগ্রাসন দেখে বিস্মিত হই। পাহাড়িরা যে অবাঙ্গালী, সংখ্যালঘু সে বোধই তো কখনো তৈরি হয়নি আমার ভেতর। আমার আদিবাসী বন্ধুদের পরিবারই হতাহত হচ্ছে আমাদের বাঙ্গালিপনার আঘাতে। ভাবতে কষ্ট হয়।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।