বন্ধুকে লেখা একটি চিঠি

শুভপ্রসাদ এর ছবি
লিখেছেন শুভপ্রসাদ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০০৯ - ১০:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় হাসিখুশি,
আজ ছুটি। কলেজ নেই, কিন্তু প্রচুর কাজ ছিল। কিছুই করতে পারলাম না। ছ’টা বড় লেখা লিখতে হবে বিভিন্ন কাগজের জন্য। কিছুতেই লেখায় মন বসছে না। স্বাতী এসে ফিরে গেছে বলে মন খারাপ আর তাই লিখতে পারছি না, এমনটা নয়। মন খারাপ হয়ে আছে এমনিতেই। কেন খারাপ হচ্ছে জানলে তো মন ভালো করার জন্য একটা ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যে অসুখ তুমি বুঝতেই পারলে না, তার চিকিৎসা করবে কি করে? কিন্তু এমনটা মাঝেমাঝেই হয়।

হঠাৎ একদিন সকাল থেকেই দেখা গেল হয়ত মন খারাপ। আকাশের দিকে তাকালেও মন উদাস হয়ে যায়, দমকা বাতাস এসে গায়ে লাগলে মনে হয় কে যেন সব এলোমেলো করে দিল। সূর্যাস্ত দেখলে মনে হয় কোথাও কেউ প্রিয়জন হারালো। তখন ইচ্ছে করে শৈশবে ফিরে যেতে, ইচ্ছে করে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের ফিরে পেতে। ইচ্ছে করে ছেলেবেলার ছেলেখেলার দিনগুলোতে গিয়ে অকারণ হাসতে থাকি, অকারণ ছুটে বেড়াই, অকারণ থমকে বসে পড়ি।

কিন্তু বন্ধু ! জীবন যতটা সুন্দর মোহময়, ততটাই নিষ্ঠুর। উজাড় করে যা-ই দেয়, নিঃস্ব করে সব নিয়ে যায়। বল তো কেন হারিয়ে গেল শৈশবের দিনগুলি, কেন চলে যায় যৌবনের উদ্দাম উচ্ছাস। আমার শৈশব কেটেছে শিলঙের পাহাড়ে আর ঝর্ণার ধারে। পুজোর সময় যখন প্রথম শীতের ছোঁওয়া লাগত, তখনই একবার মনে আছে রাত্রির নিস্তব্ধতার বুক চিরে অনেক দূর থেকে ভেসে এসেছিল সদ্য বেরোনো হিন্দি ছবির গান ‘কাঞ্চি রে কাঞ্চি রে’। তখনই বা তার কাছাকাছি কোনও একদিন একই ভাবে ভেসে এসেছিল ‘ফুলোকা তারোকা সবকো কহনা হ্যয়’। ফেব্র“য়ারি মাসে বসন্ত যখন আসি আসি করছে তখন শিলঙের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে যেত সারাদিন দমকা বাতাস। আমাদের শিলঙ-টাইপ বাড়ির টিনের চালের আলগা কোনও প্রান্ত বাতাসের ধাক্কায় একঘেয়ে আওয়াজ করে যেত। তখন খুব বিরক্ত লাগত, এখন ওই আওয়াজটাই বারবার শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।

আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে ছোটবেলার সেই রোববারের দুপুরগুলিতে ফিরে যেতে, যখন দুপুরের ঘুম সেরে বাবা লেপটাকে চাদরের মত গায়ে জড়িয়ে আমার দিদিদের বলত, হারমোনিয়ামটা নিয়ে এসো তো। বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্কেল ধরে কখনো গাইতো কমলাকান্তের মাতৃসঙ্গীত, ‘শ্যামাধন কি সবাই পায়রে কালীধন কি সবাই পায়‘ অথবা ‘মহারাজ, একী সাজে এলে হৃদয়পুর মাঝে’। আবার কখনো গাইতো আমাদের পরিবারের সকলের প্রিয় শচীন দেব বর্মনের ‘ওরে সুজন নাইয়া, কোন বা কন্যার দেশে যাওরে চান্দের ডিঙ্গি বাইয়া’। দূরে পাহাড়ে সন্ধ্যা নামতো। একটু একটু করে বাতি জ্বলে উঠত বিভিন্ন বাড়িতে। আমি বালিশে শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে দূরের প্রসবিনী সন্ধ্যাকে দেখতাম আর বাবার গান শুনতাম। কেন চলে গেল ওই দিন? আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে জানো এসব কথা ভাবতে ভাবতে।

মানুষের জীবনটা এমন কেন? আমরা কোত্থেকে আসি বলতো, আবার কোথায় চলেই বা যাই। এই যে সুবাস মাখি গায়ে এই যে বোধের মধ্য দিয়ে কেটে যায় একটা জীবন এই যে কত রঙে রঙে ভরে ওঠে সারাজীবন ধরে আমাদের প্রাণমন, কোথায় যায় এসব। আর সব যদি মাটিতে বা ছাইয়ে মিশেই যেতে হয়, তবে এত রঙে রঙে ভরে ওঠা কেন? কেনই বা তবে আকাশের বিস্তার, সমুদ্রের রহস্য, কেনই বা ফুল কেনই বা গাছের ছায়া রোদের মায়া কেনই বা তবে তুমি নারী? কি? কি? ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না।
তবু ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো। সত্যি, তিন সত্যি। ভালো রেখো, ভালো রেখো, ভালো রেখো- পৃথিবীর সব বন্ধুদের সব বন্ধুরা যেন ভালো রাখে।
মায়ায় মায়ায় আজ এটুকুই।
শুভ


মন্তব্য

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো!

srirup এর ছবি

বেশ হয়েছে।

নিবিড় এর ছবি

চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।