ক্লিমেন্তিনের মৃত্যুর পর।

সুমাদ্রী এর ছবি
লিখেছেন সুমাদ্রী (তারিখ: রবি, ০২/০৬/২০১৩ - ৮:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার এখন নিজেকে বর্ষার পর পিচ উঠে গিয়ে গর্তে ভরে যাওয়া সড়কের মত মনে হয়। হৃদয় বল, মন বল- আমার সমগ্র অস্তিত্বে এখন শুধু ক্ষত আর ক্ষত। একটা বিশাল ক্লান্তি। ঝড়ে বিধ্বস্থ ফসলের মাঠের মত এলোমেলো হয়ে গেছি। ক্ষতগুলো সারতে ক'দিন লাগবে জানিনা, আদৌ সারে কিনা কে জানে।অনেকে বলে, সময় সমস্ত শোকের অসুখ সারিয়ে তোলে। আমি নিজেও বলেছি একথা কয়েকজনকে, এখন মনে পড়ছে। কিন্তু আমার উপর আঘাতগুলো এসেছে একটার পর আরেকটা। একটা হারানোর বেদনার দাগ শুকোতে না শুকোতেই আরেকটা শোক এসে ঠিক ঐখানেই ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। ক্লিমেন্তিনের রক্তহীন ফ্যাকাশে শরীরটাকে কফিনের বাক্সে পুরে ক্যাথলিক চার্চের পেছনের বহু পুরোনো সিমেট্রিতে কবর দিয়ে এসেছি গত সপ্তাহে। আজ কত তারিখ? ক্লিমেন্তিন মারা গিয়েছিল এপ্রিলের ১৪ তারিখ। আমার চোখের সামনেই ছটফট করছিল সে। নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। আমি ওর কষ্টটা কমানোর জন্য বারবার ডাক্তারের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করে যাচ্ছিলাম। সারাহ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। আমি কী করতে পারতাম? কী করতে পারতাম? ক্লিমেন্তিন আমার হাতটা ধরে ছিল শেষ পর্যন্ত। কখন যে ওর বুকের ওঠানামাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমার খেয়ালই হয় নি। আমার মনে হয়েছিল ওর ব্যাথাটা বুঝি কমে গেছে। বুঝি সে ঘুমিয়ে গেছে ঔষুধের প্রভাবে। ডাক্তার এন্ড্রু এসে যখন আমাকে ' সরি ' বলল তখনই আমার মনে হল আগামীকাল থেকে আমার দুনিয়াটা অন্যরকম নিঃসঙ্গ হয়ে যাবে।

ক্লিমেন্তিনের অসুখটা ধরা পড়ার পরপরই আমাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল ওর চান্স খুব কম। তারপরও আমি প্রতিদিন চেষ্টা করেছি স্বাভাবিক মানুষের জীবনের ছন্দটা ধরে রাখতে। অফিসে যেতাম। পলকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ক্লিমেন্তিনের শরীরটা ভাল থাকলে আমরা তিনজনই একসাথে বল নাচের পার্টিতে যেতাম। ওর শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছিল দ্রুত। ও নিজেই সেটা টের পেত। তবু কোথাও কিছুর নড়চড় হয়নি এমন ভাব রেখে সে নাচত, কথা বলত হাসিমুখেই। কেউ অবশ্য ওকে তার অসুখের ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করত না। করলে ওর আত্মবিশ্বাসটা ভেঙ্গে একেবারে খানখান হয়ে যেত। আমি বন্ধুদের আড্ডায় নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝে যেতাম। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতাম। এর ওর সাথে টুকটাক আলাপও করতাম। আমি বোধ হয় ভুলে যেতে চেয়েছিলাম যে সামনে যেকোন একদিন, খুব কাছেই সেই যেকোন একদিনটা, আমাকে হতবিহবল হয়ে যেতে হবে। আমি হয়ত এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম সেই প্রশ্নগুলোকে যাদের মুখোমুখি হলেই আমি মুখ থুবরে পড়ে যাব। ক্লিমেন্তিনও একই কাজ করে যাচ্ছিল কি? ওর চেহারায় কোন উদবেগ, দুঃশ্চিন্তার ছাপ দেখতাম না। পলের সাথে খেলত বেশ। রাঁধতে গিয়ে ডলি পার্টনের গান গাইত। নিয়ম করে ঔষুধগুলো খেত। আমাকে কখনও জিজ্ঞেস করেনি সে এসব ঔষুধে আদৌ তার অসুখটা সারবে কিনা। আমি অনেকদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ও যখন স্নানঘরে যেত তখন দরজায় কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করেছি ভেতর থেকে আসা কান্নার শব্দ। না, ক্লিমেন্তিন হয়ত আমার মতই ভুলে যেতে চেয়েছিল সেই যেকোন একদিনটার কথা।

ক্লিমেন্তিনকে আমি ভালবেসে বিয়ে করি নি। যাকে ভালবেসেছিলাম তাকে অনেকগুলো কারণেই বিয়ে করাটা সম্ভব হয় নি আমার। আমার সবসময় মনে হয়েছে বিশাল একটা প্রতারণা করে চলেছি আমি। নিজের সাথে। ক্লিমেন্তিনের সাথে। প্রতি মূহুর্তে যে প্রশ্নটা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত তা ছিল, '' ক্লিমেন্তিনকে আমি কখনও ভালবাসতে পারব কি? '' যে মেয়েটি দীর্ঘদিন আমার পাশে থেকেছে, আমায় ভালবেসেছে, অনুপ্রেরণা দিয়েছে তার জায়গায় আরেকটি মেয়ে যাকে আমি কখনও জানার সুযোগ পাই নি তাকে আমি কীকরে ভালবাসব? চার্চে আমি যাই না তেমন একটা খুব। তারপরও আমি কনফেশন করতে গিয়েছিলাম। ফাদার বলেছিল, '' ইউ আর নো সিনার মাই চাইল্ড। আ ভিক্টিম অফ সারকামস্ট্যান্সেস। নোবডি ইজ টু বি ব্লেইমড। একসেপ্ট ইউর লাইফ। লাভ। '' ক্লিমেন্তিনকে ভালবাসার চেষ্টা করে গেছি এরপর থেকে আমি। ভালবাসার চেষ্টা করে গেছি নিরন্তর। অথচ ভালবাসতে পারছি কিনা জানতাম না। আমার সবসময় নন্দিতার কথা মনে হত। ক্লিমেন্তিনের বাঁ গালের একটা তিল আমাকে নন্দিতার কথা মনে করিয়ে দিত। নন্দিতার সাথে শেষবার দেখা হওয়ার দিনটি আমার কেবল মনে পড়ে যেত। নন্দিতার হৃদয়টা ভেঙ্গে দিয়েছিলাম আমি। সে বলেছিল, '' আমাকে ছেড়ে যেওনা নীল, প্লিজ। নোবডি উইল লাভ ইউ দ্যা ওয়ে আই ডু। লাইফ ইজ নট ফেয়ার। ইটস নট ফেয়ার।'' নন্দিতাকে ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়েছিল আমার। অথচ নন্দিতা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারিনি কখনও। ক্লিমেন্তিনকে কখনও নন্দিতার কথা বলা হয় নি। একদিন বই গুছাতে গিয়ে সে আমাদের একটা গ্রুপ ছবি দেখতে পেয়েছিল। ক্লাসের এক কোনায় কয়েকজন বসে তুলেছিলাম ছবিটা। নন্দিতা ছিল আমার পাশেই। ক্লিমেন্তিন শুধু বলেছিল, '' তোমার বন্ধু বুঝি? খুব সুন্দর চুল।'' আমি কোন উত্তর দিতে পারি নি। ছবিটা আমি তারপরদিনই আমি সৈকতকে দিয়ে এসেছিলাম। সৈকত রসিকতা করে বলেছিল, '' কী, বউয়ের হাতে ধরা পড়েছে নাকি পুরোনো প্রেমের কিচ্ছা?'' সৈকতকে আমি শুধু বলেছিলাম, '' নারে, ক্লিমেন্তিন শান্ত মেয়ে। সী ডিডিন্ট ওয়ান্ট টু নো এনিথিং এবাউট হার।''

ক্লিমেন্তিনকে আমি চেষ্টা করে গেছি ভালবাসার। নন্দিতাকে চেষ্টা করে গেছি ভুলে থাকার। পলের জন্ম হওয়াটাকে আমি কি আমাদের ভালবাসার ফল বলব? ওর খুদে চোখগুলো আমার। ওর কপাল, নাক, ঠোঁট সব ওর মায়ের। ওর হাঁটার ভঙ্গিমা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। ওর হাসিটা ক্লিমেন্তিনের হাসির মতই। পলের সমগ্র অস্তিত্বে আমি আর ক্লিমেন্তিন মিশে গেছি। আমি পলকে ভালবেসেও ক্লিমেন্তিনকে ভালবাসার চেষ্টা করে যেতাম। কখনও জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে নি ওকে, আমাকে সে ভালবাসে কিনা। কিংবা অন্য কাউকে ভালবেসেছে কিনা। ক্লিমেন্তিনের কোন অভিযোগ যেন নেই। জীবনটা তার কাছে অত জটিল নয়। এক অদ্ভুত সরলতা মেয়েটার মধ্যে। আইকনের সামনে গিয়ে প্রার্থনা করা, রাঁধতে গিয়ে ডলি পার্টনের গান গাওয়া, পলকে নিয়ে খেলা করা, আমার টাইটার নটটা তুলে দিতে দিতে চোখের দিকে তাকানো- ওর এসব দেখতে গিয়ে কোথায় যেন আমি একটা কিসের সংকেত পেতাম। মনে মনে বলতাম, '' ক্লিমেন্তিনকে আমি ভালবাসতে শুরু করেছি। ''

পল বড় হতে শুরু করেছিল, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল, আমরা একসাথে বেড়াতে যেতাম সমুদ্রের ধারে। কখনও শিশু পার্কে। নন্দিতার বিয়ের খবরটা সৈকত জানিয়েছিল এসময়। আমার কোথায় যেন কী একটা হয়ে গিয়েছিল। নন্দিতার কথা একেবারেই ভুলে যাই নি। '' নোবডি উইল লাভ ইউ দ্যা ওয়ে আই ডু '' কানে বাজত। ক্লিমেন্তিন তবে আমায় কার মত ভালবাসে? ওকেই বা আমি কার মত ভালবাসি? পল খুব মা ন্যাওটা হয়ে উঠেছিল। শিশুটাকে যে ভালবাসতাম এ ব্যাপারে মনে কোন সন্দেহ ছিল না। ওর খুদে চোখগুলো আমার। ওর কপাল, নাক, ঠোঁট সব ওর মায়ের। পলকে দেখলেই আমি ক্লিমেন্তিনকে দেখতে পেতাম। এ সময়টাতেই একদিন ক্লিমেন্তিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার যখন আমাকে বলল, অসুখটা একটু খারাপ তখনই আমার মনে একটা ঝড়ের আভাস টের পাচ্ছিলাম আমি। খারাপ মানে কতটুকু খারাপ? কী হতে পারে এর পরিনাম? ডাক্তার এন্ড্রু যখন টেস্টগুলোর রিপোর্ট দেখার পর আমাকে বলল, অসুখটা ওর সারা শরীরে বেশ ভালভাবেই ছড়িয়েছে, তখন আমি আনাড়ির মত জিজ্ঞেস করেছিলাম, '' কিন্তু ক্লিমেন্তিন বাঁচবে তো? ও মরে গেলে আমার পলের কী হবে? আমার কী হবে?'' আমার হয়ত সেদিনই প্রথমবারের মত মনে হয়েছিল ক্লিমেন্তিন আমার অস্তিত্ব জুড়ে আছে ঠিক যেমন করে পলের মধ্যে তার বাবা-মা দু'জনই মিশে আছে। আমার মনে হয়েছিল, ক্লিমেন্তিন আমার নির্ভরতা হয়ে গিয়েছিল। ওকে ছাড়া আমি পলের মতই অসহায় হয়ে পড়ব। ক্লিমেন্তিনকে আমি ওর অসুখের মাত্রাটা সম্পর্কে কিছুই জানাই নি। আমার হঠাৎ মনে হয়েছিল আমাকে ক্লিমেন্তিনকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেই হবে। কেননা ক্লিমেন্তিন আমার স্ত্রী। আমাদের সন্তানের মা। মনে হচ্ছিল ক্লিমেন্তিনকে ছাড়া আমার জীবনটা আরো অর্থহীন হয়ে পড়বে।

ক্লিমেন্তিনকে নিয়ে আমি দু'বছরে শুধুই ছুটেছি। বদলেছি হাসপাতালের পর হাসপাতাল। ক্লিমেন্তিনের শরীরটা যতই ম্লান হয়ে যাচ্ছিল ততই আমার ছোটার গতি বেড়ে যাচ্ছিল। এত এত ডাক্তার, হাসপাতাল আর ঔষধের নাম মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল আমার। আমার ব্যাবসাটা টিকবে না আমি জেনে গিয়েছিলাম। আমি ঋণে আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছিলাম। পল মাঝে মাঝে উদাস গলায় বলত, '' মা আমাক কোলে নাও।'' আমি পলকে কোলে নিয়ে বেড়াতে বের হলে ও চিৎকার করে কাঁদত, মায়ের কাছে যেতে চাইত। আমি ক্লিমেন্তিনের দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাতাম। ওর চোখে কোন বিষাদ নেই। ও কোন গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে থাকত না। তখনও মাঝে মাঝে সে রান্না করত, কিচেনে গুনগুন করে গাইত সেই ডলি পার্টনের গান '' জোলিন ''। আমি জানতাম, সে ভুলে থাকতে চাইছিল ওর প্রাণশক্তির হেরে যাওয়াটাকে। ও শুধুমাত্র মনে রাখতে চাইছিল ওর বেঁচে থাকাটাকে। এমনকি মাঝে মাঝে শিরায় ঐ ঔষুধটা নিতে গিয়ে কষ্টে যখন সে নীল হয়ে যেত তখনও সে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে আমায় বলত না, '' আমাকে যেতে দিও না নীল, আমি বাঁচতে চাই।''

ক্লিমেন্তিন আমার হাতটা ধরে রেখেছিল। হয়ত তার মনে হয়েছিল আমাকে ধরে থাকলে তার মৃত্যু আসবে না কিছুতেই। ডাক্তার এন্ড্রু যখন বলল, আর কিছুই নেই, তখন আমার প্রচণ্ড বেদনায় কান্না পায় নি। আমি শুধু অপলক তাকিয়ে ছিলাম ক্লিমেন্তের ম্লান মুখটির দিকে। মেয়েটি কোন অভিযোগ করেনি কখনও। আমার সাথে সাথে ছুটেছেই কেবল। হঠাৎ আমার মনে হল, সে ছুটে চলার শেষ হল এখানেই। মনে হল, কে যেন বিশাল এক তরবারি দিয়ে এক ঘায়ে আমার শরীরের একটা অংশকে আলাদা করে ফেলল হঠাৎ। ক্লিমেন্তিনকে ভালবাসতে পেরেছিলাম কি শেষ পর্যন্ত? সেও কি আমায় পেরেছিল ভালবাসতে? ওকে বাসায় নিয়ে আসা হল যখন পলকে বোঝানো হল, ওর মা গভীর ঘুমে ডুবে আছে। পল বলল, '' আমিও মা'র সাথে ঘুমাব।'' বলেই এক লাফে সে বিছানায় উঠে ক্লিমেন্তিনের গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। আমার মনে হল, আমার পিঠে-বুকে-পেটে কে যেন একের পর এক ছুরি মেরে যাচ্ছে। আমি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। মনে হল, আমি একদম অসহায় হয়ে গেছি। নিঃশেষ হয়ে গেছি।


মন্তব্য

একলহমা এর ছবি

আমার কাজের জায়গায় আমার এক সহকর্মীকে লড়ে যেতে দেখছি রোজ - তার স্ত্রী টার্মিনাল ক‌্যান্সার পেশেন্ট। সে যে কি এক আশ্চর্য অবিশ্বাস‌্য লড়াই তা নিজের চোখে না দেখলে আন্দাজ করা সম্ভব ছিল না। আপনার লেখায় তার খানিকটা আভাষ আছে। তবে গল্পের মূল বিষয় আলাদা। সমাপ্তিতে সেটি মনে হয় আরো একটু জায়গার দাবী রাখে। লেখার ছন্দ/ধরণ ভালো লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব কাছ থেকে একজনকে লড়তে দেখেছি ক্যান্সার এর সাথে।।।।।।। গল্পটা ভাল লাগলো

তারেক অণু এর ছবি

ভালো লাগল, ভাষাটা আর একটু ঝরঝরে হতে পারত মনে হল। প্রথমে ভেবেছিলাম অনুবাদ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, লেখা চলুক।

দীপ্ত এর ছবি

টানা পড়ে গেলাম। সুন্দর ঝিরঝিরে বর্ণনা, ছুঁয়ে গেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।