ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি

সুমাদ্রী এর ছবি
লিখেছেন সুমাদ্রী (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৮/২০১৪ - ২:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্রী একটা অনুভূতির বোঝা হঠাৎ চেপে বসে যখন ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি শহরটাকে ভিজিয়ে দেয় বিকেলের খানিক পর। মানুষগুলো তখন অসম্ভব ধন্দে পড়ে যায় আর একটু একটু করে রাস্তাগুলোয় জমে উঠে জঘণ্য কালো কাদা। এই ষোল তলা দালান থেকে দেখা যায় অদূরে ঝাপসা আরেকটা শহর। আসলে ঠিক অন্য শহর নয়, এ শহরেরই উপকন্ঠ। ক্লাসের দিকে এগুবো বলে যেই নীচে নেমে এসেছি, খেয়াল হল আমার বাদামী-সাদা প্যান্ট। সুতরাং পুরোটা এলিফ্যান্ট রোড আমি হেঁটে গেলাম পা টিপে টিপে বিশেষ কায়দায়, এটা আমি রপ্ত করেছি বহুদিনে, এরকম হাঁটায় কাদার ছাঁট উঠে প্যান্টের পেছনটায় ফুটকির আঁক বসাতে পারে না। ক্লাস শেষ হয়ে যাবার পর আমি মিনিটখানেক সময় ধরে সাদা বোর্ডটা ঘষি কেবল, মুছে ফেলতে চাই যা কিছু লিখেছি তার সমস্ত চিহ্ন, কিংবা আরেকটু সময় ব্যস্ত রাখতে চাই নিজেকে কোন একটা ছুতোয়, কিছু একটা মিছেতে। এরপর শুধু দীর্ঘ একটা নির্জন থিকথিকে কাদামাখা পথের মত সামনে পড়ে থাকবে জানি ঐ বিশ্রী অনুভূতিটা। কাফেতে গিয়ে দেখি কোনায় পড়ে আছে বুড়ো পিয়ানোটা, সেদিন কেউ ছিল না দেখে বেশ কিছুক্ষণ বাজালাম তোড়ী, যদিও রাগটা নাকি ভোরের। গ্যালারিতে একটা জলরঙের প্রদর্শণী চলছে ক'দিন ধরে, ঢুকে দেখি আমি ছাড়া আর কোন ছবি দেখার লোক নেই। ছবিগুলোর ভেতরেও বৃষ্টি, ভাগ্যিস শহরে নয়, নদীতে। বৃষ্টিহীন ছবিগুলোতে পুরোনো ঢাকার গলি, তার ঝুলছে, রিক্সা। ইচ্ছে ছিল মন্তব্যের খাতায় কিছু একটা লিখব, যে কোন একটা কিছু, আরও কিছুটা সময় ভুলে যাব যে বাইরে বেরুলেই অপেক্ষমান বিশ্রী একটা অনুভূতি। প্রশংসা পড়তে পড়তে বিরক্তি চলে আসে, ফলে কোন কিছু লেখা হয় না। আমি বেরিয়ে এসে চলে যাই বোতলটাকে খালি করে ফেলতে। ইদানিং পিঠের এক কোনায় ব্যথা হয়, কিডনি-ফিডনিতে গণ্ডগোল কিনা কে জানে। এসব কাজ শেষ হয়ে গেলে আমাকে বেরুতেই হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে যেতে থাকা ধানমণ্ডির রাস্তায়। বেরিয়ে আমি উদভ্রান্তের মত চতুর্দিকে তাকাই কেবল, পাশ দিকে ছুটে যায় আব্দুল্লাহপুর বা গুলশানগামী বাস, তবু আমার সমস্ত চেতনা জুড়ে শুধু একটাই অনুভূতি। বিশ্রী। বিশ্রী। কী বিশ্রী! তখন আর মনে থাকে না আমার বাদামী-সাদা প্যান্ট। ওভারব্রীজের ওপরে গিয়ে কল লিস্টে খুঁজতে থাকি এমন কাউকে যার সাথে কথা বলা যায় কিছুক্ষণ। পাই না। ফোনটাকে ইচ্ছে করে ছুঁড়ে মারি আব্দুল্লাহপুর বা গুলশানগামী বাসগুলোর মাঝে। কোথাও গিয়ে কিছু একটা করব ভাবি। কোথায় যাব, কে আছে ওখানে? এ শহর আমার আপন লাগে না, বন্ধু নেই, গীটারের দোকানে গিয়ে মিনিট দশেক গীটার বাজাতে চাইলে দোকানী আমাকে মারতে আসবে। ষোল তলায় ফিরে আসি। রুমি বলে, চল বেরিয়ে আসি, হেঁটে আসি কিছুটা। আমরা ঝিরঝির বিষন্ন বৃষ্টির ভেতর হেঁটে যাই। গতকাল সামনের মসজিদ কলোনীর যে মেয়েটা সুইসাইড করেছে তার কথা মনে এল। ইস্ত্রির দোকানের লোকটা আমাকে বলেছে প্রেমগত ঝামেলায় গলায় ফাঁস দিয়েছে মেয়েটা। হঠাৎ খুব পড়তে ইচ্ছে হল মেয়েটার সুইসাইড নোট। আমার মানিব্যাগে এখনও রেখে দিয়েছি পুরোনো চিরকূট। আজিজে গিয়ে শর্মা খেলাম বহুদিন পর। শেষবার শর্মা কিনেছিলাম আফ্রিকায়। লেবানীজরা বলত, ' শাওয়ারমা '। রুমি একটা গল্প বলে যেতে লাগল। আমি মেয়েটার কথা ভাবছিলাম। বিশ্রী এই অনুভূতিটা হয়ত ওকেও খেয়ে ফেলছিল। রুমিকে বলছিলাম লিফটে উঠার সময়, এমন অনেকেই আছে যারা কোন কারণ ছাড়াই দেখা যাবে হ্ঠাৎ লাফ দিয়েছে তের তলা থেকে। কেউ জানতেও পারবে না কী কারণ কারণ এদের পকেটে কোন চিরকূট থাকে না। রাতে মা ফোন করেছিল, বলল, আমেরিকার সে শহরে আকাশে আজ যুদ্ধ বিমানের মহড়া চলছে। লাল-নীল-সবুজ ধোঁয়া উড়িয়ে সাঁই সাঁই করে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমানগুলো। মা বলল, রাতে ঘুম আসে না তাঁর, কান্না পায়, কেবলই কান্না আসে তাঁর।


মন্তব্য

অমি_বন্যা  এর ছবি

চলুক

তাহসিন রেজা এর ছবি

অপূর্ব আপনার গদ্য। মুগ্ধপাঠ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

নিবিড় এর ছবি

সুমাদ্রী'দা আপনার বর্ণনা ভংগি চমৎকার।

আরেকটা কথা, লেখক হিসেবে হয়ত কোন নির্দিষ্ট কারণে আপনি লেখাটা পুরো এক প্যারায় লিখেছেন তবে ব্লগের লেখাগুলো যখন কম্পিউটারের মনিটরে পড়তে হয় তখন প্যারা ভাগ করা না থাকলে পাঠক হিসেবে পড়তে একটু কষ্ট হয়। যদি গল্পের কোন উদ্দেশ্য ব্যহত না হয় তাহলে হয়ত প্যারা করে দিলে পাঠক হিসেবে পড়তে সুবিধা হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব উপভোগ করেছি লেখাটি।
Golam Ali Rubel

বন্দনা এর ছবি

কেমন মন কেমন করা লেখা সুমাদ্রীদা।

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক কতদিন পর লেখলেন বলেন তো? চিন্তিত

সবাই অলস কিংবা ফাঁকি দিলে চলবে হাসি ?

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সুমাদ্রীী, বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি, আপনার লেখায় একটা বিষণ্ণতার সুর। একঘেয়েমি ও হতাশার ছবি দেখতে পাই আপনার প্রকাশভঙ্গির মাঝে। জীবনে পরিবর্তন আনুন। কোনদিন হয়তো আপনিই...। পকেটে থাকবেনা কোন নোট।
মাফ করবেন। ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।

গান্ধর্বী এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে। কিন্তু ইলশে গুঁড়িতে ঘেন্না ধরে গেল গত কদিনে।

আপনি বোধ হয় কবিতা লিখছেন না অনেকদিন।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক এর ছবি

এত বিষণ্ণ একটা লেখা! পড়ে আসলেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল মন খারাপ

ফাহিমা দিলশাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।