টুকরো টুকরো লেখা ৭

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ০৭/১১/২০০৮ - ১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বুদ্ধি হওয়া থেকে শুনে আসছি এরকম অবস্থায় মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে? ভানু বন্দোপাধ্যায় এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। তিনি আঙ্গুল দেখিয়েছিলেন ভেজাল বিষের দিকে। আমার কেমন মনে হয় বেঁচে থাকা অনেকটা সাপের বিষের নেশার মতো। মরতে মরতে ঝুলে থাকায় পিনিকপ্রাপ্তি। আমি হয়তো সেই নেশাতেই আছি।

১.

শেষ পর্যন্ত ওবামা পাশ করলো। ওবামা পাশ করলেই সে একদম দুনিয়া পাল্টাইয়া ফালাবে এরকম চিন্তার কোন বাস্তব কারণ নাই। অন্তত গত শদেড়েক বছরের অভিজ্ঞতা থিকা দেখলে এই নির্বাচনের ফলাফলে খুব বেশী আশাবাদী হওয়া মুশকিল। মোটে চল্লিশ বছর পিছে গেলেই কেনেডি আর মার্টিন লুথার কিং এর ডেডবডি দেখা যায়। বারাক মিয়া চাইলেই নিওলিবারেল পাগলা কুত্তারে খেদাইতে পারবো না। বড়জোর কিছুদিনের জন্য বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মিষ্টিবাঘ সাজাইয়া রাখতে পারে। তারপরেও পাগলা কুত্তার চাইতে মিষ্টিবাঘরে আমরা ভালো পাইয়া অভ্যস্ত। ভোটের রাজনীতির এই সীমাবদ্ধতা আমরা আপাতত অনতিক্রম্য বইলা ধইরা নিছি। এখন বাজারের পরিস্থিতি ভালো না। কয়দিন পরিকল্পিত হিউম্যান ফেইস দেখানো জরুরি। তাতে কিছু লোকের উপকারও হয়। আমারো হয়তো হবে। হয়তো হবে না। যাদের হবেনা তারা যেই দুই চাইর জনের হবে সেই বিজ্ঞাপনে অন্তত কিছুটা শান্তি পাইবো। এই বাজারে মাগনা শান্তিই বা দেয় ক্যাঠা?

এর একটা আলামত দেখলাম আইজকা কামলা থিকা ফিরার পথে ট্রামস্ট্যান্ডে। দেখি জার্মানীর কুলীন সাপ্তাহিক ডী ৎসাইটের এক কোনায় ইয়ুর্গেন হাবারমাসের একটা ছবি। সাবটাইটেলে লেখা নিও লিবারেলিজমের যূগ শ্যাষ দেঁতো হাসি আমার হাসি কান পর্যন্ত বিস্তৃত হইতে হইতে ট্রাম মিস করলাম। আমার প্রতিক্রিয়াশীল চোখ টিপি মার্কসবাদী চৈতন্যমতে যখনই সফেদ মুরুব্বিরা মার্কেটে কোন নতুন পলিসি ইঞ্জেক্ট করতে যায় তখনই আগে কোন না কোন বুদ্ধিজীবিরে নস্ট্রাডামুস সাজাইয়া সামনে পাঠায়। বৃদ্ধসম্মতিতে ভবিষ্য হালাল হয়। এইটা অবশ্য খারাপ না। ইউনিভার্সিটিতে নতুন নতুন প্রজেক্ট হয়। ফান্ড আসে। আমরা ফান্ড শুঁইকা ভালো থাকার সম্ভাবনা ওম্ এ রাখি।

২.

১০৯ এ থাকতো মানুয়েলা ফ্রানৎস্ । প্রায় সাড়ে ছয় বছর ছিল এই ডর্মে। যাওয়ার আগের দিন পার্টি দিছিল। ও যাওয়াতে এমনিতেই মন খারাপ। এইটা ঠিক সিজনাল মনখারাপ না। মানুয়েলার মতো প্রতিবেশী যার থাকে সে বোঝে।

অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদিন দেখি ১০৯ থিকা বিরিয়ানির গন্ধ আসে। মাথা খারাপ করা গন্ধ। তাড়া থাকায় বাইরে চইলা গেলাম। মন খারাপ হইলো কোন পাকি আসার সম্ভাবনায়। যেই মসলায় বিরিয়ানি রানছে সেইটা পাকি মসলা। এই বছরের শুরুর দিকে আফগান দোকানে রাধুনী আসার পর থিকা বাংলাদেশী ছাত্ররা প্রায় সবাই পাকি মসলা বর্জন করা শুরু করছি। সুতরাং গন্ধের পার্থক্য খুব ভালো বুঝি।

এর দিন দুই পরে বাইরে লনে গেছি বিড়ি খাইতে সেই সময় দেখি ভিতরে বারান্দার এক কোনায় কে জানি চাদর মুড়ি দিয়া হিটিং সিস্টেমের উপর বইসা আছে। কানে মোবাইল। দরজা একটু ফাঁক কইরা শুনলাম আমার না জানা কোন ভাষায় কথা হইতেছে। তবে ভাষাটা দক্ষিণ এশীয়। সম্ভবত: পাঞ্জাবী। ঘন্টা দেড় পরে আরেকটা বিড়ি খাইতে আইসা দেখি কথা তখনো চলে। একটু পরে দেখি বাইরে আসে। আংরেজীতে জিগায় কেমুন আছেন? কোন রূমে থাকেন? বাড়ি কৈ ইত্যাদি। কইলাম। জানলাম তার বাড়ি সিন্ধু। তবে সে অমুসলীম। মাতৃভাষা মাড়োয়াড়ি।

পরদিন ওর ডিপার্টমেন্টের এক বাংলাদেশী ছাত্রের কাছে শুনলাম, এই ছ্যামড়া মাসে ৯০০ ইউরো স্কলারশীপ পায়। তারপরেও আবার ভক্সওয়াগনে কামলা দেয়। তৎক্ষণাৎ বুঝলাম বাইরে লনে বইসা দেশে কথা বলার আসল কারণ ঘরে হিটিঙের খরচ বাঁচানো। বারান্দার হিটিঙের উপর কাঁথা গায় দিয়া রাতে ঘন্টা দুই তিন বইসা তারপর লেপের তলে গেলে অরে আর শীত লাগায় ক্যাঠা? এই কাহিনি সেদিন হিমুরে কইতেছিলাম। হিমু কয়, মাক্ষিচুস্ । আমি কইলাম আস্তে কইতে। নাইলে বাইর হইয়া আইসা জিগাইবো, কিছু বললেন?


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

১.
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আসলে কতোটা ব্যক্তি আর কতোটা ইন্সটিটিউট? তবে ওবামার জয় একটা ঘটনা। আমার অন্তত ভাবনার অতীত ছিলো। তারে অভিনন্দন। তবে আমেরিকার চরিত্র পাল্টায়া ফেলবে সেই আশা আমি করি না। দেখা যাউক।

২.
হো হো হো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

১। সিএনএন এ বলছিল আমেরিকা সেন্টার-রাইট দেশ থেকে সেন্টার-লেফটের দেশে পরিনত হয়েছে। বামের দিন কি এসেই গেল তবে?

২। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দিনকাল এতই খারাপ হইছে যে এখন প্রোটেকশানিজমরেও বামপন্থা মনে হয় দেঁতো হাসি



অজ্ঞাতবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি
হিমু এর ছবি

আহ, মানুয়েলা মন খারাপ । বড় বেশি মিষ্টি সে।

মাক্ষিচুস দেখলাম মোবাইল পর্যন্ত বাইরের সকেটে চার্জ দেয়। ও মনে হচ্ছে ইউটিলিটি বিল পুরাটাই ফেরত পেতে চায়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এখনি আবার দেখলাম।



অজ্ঞাতবাস

রণদীপম বসু এর ছবি

ওবামার জয়ে উনিশ-বিশের কোন পবিবর্তন ঘটলেও ঘটতে পারে, পনের-বিশের নয় তো অবশ্যই।

তবে আমাগো দেশের নেতা-নেত্রীরা যদি তাগো নির্বাচনোত্তর এড্রেসগুলা দেইখা কিছু শিখতে পারতো, তাইলেই ওবামার বিজয়টা বা মার্কিনী ইলেকশানের একটা ফজিলত অন্তত আমরা পাইতাম।

কিন্তু কচু খাওয়াই চুড়ান্ত পরিণতি যাগোর, তাগো উপর আশা করাটা কি ছ্যাবলামো হইয়া যায় না ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মানুয়েলা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত লেখা হোক... দেঁতো হাসি

তানবীরা এর ছবি

আমিও মিষ্টি মানুয়েলার খবর জানতে চাই। কিছু হইলেতো প্রেতিবেশিনী হিসেবে আমার উপড়ই দ্বায়িত্ব আইসা পড়ব।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হা হা হা
এক্কেবারে হাছা কথা। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সুমন চৌধুরী এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।