নব আনন্দে জাগো

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ০১/০৭/২০১৫ - ৭:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেখতে দেখতে আটটা বছর পার করে নবম বছরে পা দিল আমাদের সচলায়তন। বাংলা ভাষায় কমিউনিটি ব্লগিঙের বয়সও প্রায় দশ। প্রথম দুতিন বছরে কয়েকটা ব্লগের মনোপলি, ঝাঁকে ঝাঁকে হুজুগে ব্লগের জন্ম-বিলুপ্তি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন সব কিছু পেরিয়ে সচলায়তন বেঁচে আছে। আদর্শিক অবস্থান, ব্লগিঙের নিজস্ব অন্তর্নিহিত শক্তি, বেশ কিছু ব্লগারের স্রোতের বিপরীতে চলার ঘাড়ত‌্যাড়ামি, নতুন করে আরো কিছু ঘাড়ত‌্যাড়া ব্লগারের আবির্ভাব এই সবই সচলায়তনের টিকে থাকার এক একটা খুঁটি। সব থেকে ইতিবাচক তথ‌্য হচ্ছে এই খুঁটিগুলি সময়ের সাথে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

গত নয় বছরে ব্লগিঙের সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আমার ব্যক্তিগত মতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি। বাংলা ভাষায় কমিউনিটি ব্লগিং শুরু হবার যূগে আইআরসি চ্যাট, ইয়াহুর চ্যাটরুম, বাংলা ক্যাফে, বাংলা চ্যাট, আড্ডাক্যাফে, হাইফাইভের দাপট। প্রথম বছরে কমিউনিটি ব্লগের সাথে কথায় কথায় এইসবের তুলনা করা হতো। তুলনা করতেন মূলত যারা ঐ সময় তাদের নষ্ট করার সময়টুকু ঐসব চ্যাটরূম বা হাইফাইভে দিয়ে অভ্যস্ত ছিলেন। ব্লগে টাইপ করার যে জায়গাটুকু থাকে তাতে টুকটাক আলাপসালাপের থেকেও বেশি কিছু, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ এমনকি আস্ত একটা উপন্যাসও লিখে ফেলা যায়। ঐ জায়গাপ্রাপ্তি দুইরকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ঊষালগ্নের ব্লগারদের মধ্যে, এক. লেখার ইচ্ছা এবং যোগ্যতা ছিল কিন্তু লেখা হয়ে ওঠে নাই, ব্লগের মাধ্যমে এইরকম বেশ কিছু মানুষের লেখালেখি শুরু, দুই. লেখার ইচ্ছা যতটুকু কী করে লিখতে হয় (ধৈর্যও এর আওতায় পড়ে) শিখবার ইচ্ছা তারথেকেও কম আবার ব্লগিং ভালোও লাগে অন‌্যকিছুর থেকে এখানে অনেক নাটক অনেক মজা সুতরাং একটা কিছু টাইপ করি মনোভাবের মানুষের লেখালেখি। বাংলা ব্লগিঙে দশ বছরের সক্রিয় পর্যবেক্ষণে কিছু এক নম্বরকে দুনম্বর এবং ভাইসভার্সা হতে দেখেছি ঠিক, তবে কপালে ভাঁজ টেনে দিয়েছে প্রায় সব একনম্বরের ২০০৬ এর দ্বিতীয়ার্ধে জন্ম নেওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আসক্ত হয়ে পড়া। এদের মধ্যে অনেকেই তখন নষ্ট করার সময়ের অর্ধেকটা বা তারও বেশি ফেইসবুকের জন্য বরাদ্দ রাখতে থাকেন, বাকিরা হয় পুরোই ফেইবুকাসক্ত হয়ে পড়েন বা নষ্ট করার মতো সময়কে দ্বিগুণ করে নেন। সব মিলিয়ে ব্লগিঙের গতিশ্লথ হয়ে আসতে থাকে। যে হারে পুরনো লেখকরা ব্লগে ক্রমশ নিষ্ক্রিয় বা শ্লথ হয়ে পড়েন নতুন ব্লগারের আগমন তার থেকে আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসতে থাকে। অনেকে প্রকাশ্যেই বলতে থাকেন, ব্লগিং আর মজা লাগে না। ফেইসবুকে একটা রসালো স্ট্যাটাস দিলে লাইক এবং মন্তব্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা পরিসংখ্যানের বিচারে ব্লগের থেকে অনেক বেশি। তাতে লেখকের টাইপ করতে হয় কয়েকটা লাইন। অর্থাৎ বিনিয়োগ কম মুনাফা বেশি। অবধারিতভাবে ব্লগে মানসম্পন্ন লেখা অতীতের তুলনায় দীর্ঘতর বিরতিতে আসতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এতে করে আদতে কতটা লাভ হচ্ছে সেটা তর্কসাপেক্ষ হলেও ব্লগের ক্ষতির দিকটা এখানে স্পষ্ট।

প্রসঙ্গটা নতুন না। বছর পাঁচেক ধরে ঘুরেফিরে আসছে। এই তর্কে কেউ কেউ ব্লগফেইসবুক দুটোই ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ স্থায়ীভাবেই ব্লগিং থেকে সরে গিয়েছে। কিছু পুরনো ব্লগার, যারা কোনভাবেই ব্লগের নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না তাঁরাই ঘাড়ত্যাড়ামি করে বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন। নতুনরাও আসছেন। অবশ্যই আসছেন। আরো আসতে হবে। আরো অনেক অনেক নতুন ব্লগার প্রয়োজন। লেখার মান এবং সুনির্দিষ্ট ব্লগিং কমিউনিটির আদর্শিক ভিত্তিমূলের সাথে আপোষ না করেই এই চাহিদা মেটাতে হবে। না মিটবার পরিণতি অতি ভয়াবহ।

পুরনো ব্লগাররা সক্রিয় হউন। নতুনরা লিখতে শুরু করুন। সচলায়তন নবম বর্ষে পা দিতে পারার রাজনৈতিক অর্থ ব্লগ কোন সস্তা সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম না। ব্লগ টিকে আছে লেখার জায়গা হিসাবে। সামাজিক যোগাযোগ থাক আত্মীয়বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে, অনলাইনে লেখার জন্য থাকুক শুধুই ব্লগ। ব্লগের লেখা সামাজিক যোগাযোগের থেকেও বেশি কিছু। যতটুকু বেশি, ততটুকুর প্রয়োজন ফেইসবুকারের স্বল্পমেয়াদী লাইকবাণিজ্য থেকে অনেক অনেক বেশি।

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক।

মাভৈ:


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক।

মাভৈ:

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আয়নামতি এর ছবি

মেদহীন স্পষ্ট লেখা হাততালি

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক।

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শুভ জন্মদিন সচলায়তন! হাততালি

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক। চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

সবার পক্ষে ব্লগার হওয়া সম্ভব না কিন্তু সবাই চাইলেই ফেসবুকার। ব্লগ লিখতে যে খাঁটুনি আর পড়ালেখাটা লাগে তার সিকি ভাগও ফেসবুকে লাগে না। ফেসবুকের লেখার স্থায়িত্ব কদাচিৎ হলে ব্লগের তথ্য সমৃদ্ধ কিংবা যাদুকরি লেখার স্থায়িত্ব চিরকালের। যারা বেশি লাইক আর বেশি মন্তব্যে খুশিতে গদগদ হয়ে যায় তারাই ব্লগ ছেড়ে ফেসবুককে বেশি গুরুত্ব দেয়। সমাজে যতদিন অন্যায়-অবিচার থাকবে, মানুষ কে যতদিন কোন ভাবনা ভীষন ভাবে ভাবাবে, কাঁদাবে, হাসাবে ততদিন ব্লগিং বেঁচে থাকবে, থাকতেই হবে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ফেইসবুকে একটা রসালো স্ট্যাটাস দিলে লাইক এবং মন্তব্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা পরিসংখ্যানের বিচারে ব্লগের থেকে অনেক বেশি। তাতে লেখকের টাইপ করতে হয় কয়েকটা লাইন। অর্থাৎ বিনিয়োগ কম মুনাফা বেশি।

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক। সাথে ব্লগাররাও। হাসি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক।

চলুক

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

শিশিরকণা এর ছবি

ফেসবুকে বারো হাত লম্বা ইশটেটাস লিখতে ভালো লাগে না। অত কিছু বলার থাকলে গুছিয়ে গাছিয়ে এখনো ব্লগেই তুলি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

এক লহমা এর ছবি

আমি একটু নিরিবিলি খোঁজা মানুষ। ঐ খোমাখাতা আমার জন্য নয়। খাতা খোলা থাকায় যারা খাতায় খাতায় ঘোরে, আত্মীয়-বন্ধু-পরিজন, তাদের বিচরণ দেখতে পাই, এইটুকুই। নিজের জন্য সচলায়তনের এই কোণটুকু পেয়ে আমি বেঁচে গেছি। এটা ঠিক যে খোমাখাতায় আমি যা ইচ্ছে খুশী লিখতে পারি, আর, এখানে কিছু নিয়মের বেড়া আছে। কিন্তু সে বেড়া আমার ভাল লেগেছে বলেই ত এখানে এসেছি, আছি। নিজেকে ব্লগার বলে দাবী করার মত এলেম হয়ত হবে কোন দিন, না হলেই বা কি, এই পরিবারে আছি, আমার ভাল-লাগা লেখালেখির, মনন-এর সাথে মিলে-মিশে, আমার এতেই চলে যাবে।

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সুবোধ অবোধ এর ছবি

চলুক
ব্লগিং বেঁচে থাক, সচলায়তন বেঁচে থাক...

অতিথি লেখক এর ছবি

“ব্লগ টিকে আছে লেখার জায়গা হিসাবে।অনলাইনে লেখার জন্য থাকুক শুধুই ব্লগ।”-----অনেকে আছেন যারা ব্লগে লেখেই লেখক
ব্লগ বেঁচে থাক
Jaraahzabin

নাশতারান এর ছবি

ঠিকাছে

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শুরুর আমল থেকে ব্লগ এখন অনেক পরিণত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি ব্লগের একটা উপকার করেছে, আজাইরা লোকজন আর আজাইরা লেখা কমেছে কিছুটা। ফেইসবুক ইত্যাদি কখনোই ব্লগের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে না, দুইটার চরিত্রই আলাদা। বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে ব্লগ তৈরি হোক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

ব্লগিং বেঁচে থাক। সচলায়তন বেঁচে থাক।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভ জন্মদিন সচলায়তন।
পুরনোরা আরো বেশী করে লিখুক আর
নতুনেরা তা’তে উৎসাহিত হয়ে লেখার গতি বাড়িয়ে দিক।
নতুন মাত্রা যোগ হোক।
বিকশিত হতে থাকুক বাংলা ব্লগের জগৎ সচলের ত্বরণে।
-এম আর নাইন

বৃষ্টি স্নাত কবি এর ছবি

শুভ জন্মদিন সচলায়তন।

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নজমুল আলবাব এর ছবি

ব্লগ একটা পরিণত প্রকাশ মাধ্যম হিসাবে টিকে থাকবে। প্রভূখণ্ডের মতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

বেঁচে থাক হাসি

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।