বিপ্লব স্পন্দিত বুকে

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ০৭/১১/২০০৮ - ৬:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৭ নভেম্বর। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে একটা করে ৭ তারিখ থাকে। অনেক ৭ নভেম্বর অনেক কিছু ঘটে থাকে। বাংলাদেশে ৩৩ বছর আগে এক সাতই নভেম্বর সিপাহিরা পথে নেমে ছিল। অফিসারদের রক্ত চেয়ে তার তড়িৎ পরিণতি ঘটেছিল প্রতিবিপ্লবে।

একানব্বই বছর আগে রুশদেশে আরো এক সাতই নভেম্বর এসেছিল। পৃথিবীর প্রথম শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্র, প্রথম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাতই নভেম্বর। জানা ইতিহাস মোতাবেক সেই নভেম্বরের বিপ্লবই পুঁজিবাদী সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বৃহত্তম প্রতিরোধ। মার্কস-এঙ্গেলস ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যায় বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার নিয়ম প্রয়োগ করে পুঁজির সঞ্চয়ন আর বিকাশকে বুঝতে চেয়ে আবিস্কার করেছিলেন উদ্বৃত্ত শ্রম শোষনের বিপরীতে বিকাশমান ক্রমবর্ধমান সর্বহারা শ্রেণীকে। ঊনিশ শতক জুড়ে সর্বহারা শ্রেণী বিকশিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান পুঁজির সাথে তাদের লড়াইও বিকশিত হয়েছে ১৮৪৮ থেকে প্যারিস কমিউনে, প্যারিস কমিউন থেকে ইউরোপের দেশে দেশে। ১৮৪৮এ কমিউনিস্ট লীগের ঘোষনাপত্র "কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার" লেখেন মার্কস-এঙ্গেলস যৌথভাবে। ১৮৬৪ তে প্রথম শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক গঠিত হয়। কর্মপদ্ধতি আর বিশ্বদৃষ্টির বিতর্ক থেকে জন্ম নেয় ১৮৮৯ তে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক। সকলেই সর্বহারা শ্রেণীর বিশ্বজনীনতায় মোটামুটি একমত ছিলেন। কিন্তু সময়ের আশু কর্তব্য নির্ধারণে টানাপোড়েন চলতে থাকে। এই মুহুর্তে কী করণীয় সেই প্রশ্নের পরিস্কার জবাব দেবার চেষ্টা করেন ভ্লাদিমির উলিয়ানভ লেনিন ১৯০১ সালে "কী করিতে হইবে : সময়ের জলন্ত জিজ্ঞাসা" নামের একটা চটি বইতে। রাশিয়ান সোশাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা লেনিনের সাথে একমত হন। রুশভাষায় বলশেভিক অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ।

লেনিনের থিসিস দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের অর্ন্তবিরোধ তীব্রতর করে। পুঁজির একচেটিয়াকরণ প্রক্রিয়ায় বাজার দখলের লড়াই থেকে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৬ তে লেনিন সাম্রাজ্যবাদ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। বাজার দখলের লড়াই থেকে প্রথম সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানের বিতর্কে বিলুপ্ত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক।

১৯১৭'র ফেব্রুয়ারীতে জারের পতন ঘটে। মেনশেভিকরা ক্ষমতায় বসে। পুরনো ক্যালেন্ডার মতে ২৫ অক্টোবর, নতুন ক্যালেন্ডার মতে ৭ নভেম্বর বলশেভিকদের নেতৃত্বে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন সাংবাদিক জন রীডের দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন নামের বইয়ে পাওয়া যাবে বিপ্লবের মহাকাব্যিক বর্ননা।

সর্বহারা বিপ্লবের তত্ত্ব, তত্ত্ব থেকে বাস্তব অনুশীলনের রূপ পায়। শুধু ব্যাখ্যায় নয় কার্যত: পৃথিবীকে বদলে দেবার যে কথা মার্কস বলেছিলেন থিসিস অন ফয়েরবাখ এর একাদশ থিসিসে, ১৯১৭'র ৭ নভেম্বর ছিল প্যারিস কমিউনের পরে তাঁর প্রথম সংগঠিত বাস্তব প্রয়াস। ৭ নভেম্বরের রুশ বিপ্লব প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থামিয়ে দেয়। ১৯১৯ সালে বৈশ্বিক সর্বহারা বিপ্লবের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয় তৃতীয় আন্তর্জাতিক। দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হতে থাকে.........

এই ইতিহাস এবং পরবর্তী ইতিহাস সবাই জানেন। তৃতীয় আন্তর্জাতিক আর সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটোই এখন ইতিহাস। লেনিনের সেদিনকার জবাবও ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার পরবর্তী রসায়নে ক্রমশ: প্রাসঙ্গীকতা হারিয়েছে হারাচ্ছে। কিন্তু সময়ের জ্বলন্ত প্রশ্ন নিভছে না। পুঁজির কেন্দ্রীভবন আর সেইসূত্রে বাজার সম্প্রসারণ বিচিত্র চেহারায় তাঁর অ্যান্টি থিসিসের বিকাশকেও থামিয়ে দিতে পারছে না। ঈশ্বরের মতোই মনোপলি সহায়ক আধ্যাত্তিকতা প্রান্তিক মানুষের রক্তকে বরাবরের মতো তাঁদের মেন্যুতে মেইন কোর্স হিসেবে রেখেছে রাখছে।

সুতরাং শোষণমুক্তির সংগ্রাম থেমে যাবার কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। সংগ্রামের পথে ইতিহাস একই সাথে প্রেরণা আর বস্তুগত অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণের উপাত্ত। ইতিহাস বিরোধীতার তত্ত্বে আনন্দনাড়ু কাটুক মহাজনের মোটা বেতনের নায়েবগোমস্তারা। কৃশ থেকে কৃশতর কামলারা পেটের দায়েই ইতিহাস ঘেঁটে দেখছে দেখবে।

প্রত্যেক সময়ের নিজস্ব কী করিতে হইবে বর্তমান। এই সময়ে যারা এই সময়ে এই জ্বলন্ত প্রশ্নের জবাব যারা খুঁজছেন ১৯১৭'র ৭ নভেম্বর তাঁদের কাছে জীবিত।

বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক!

Internationale - Sheffield Socialist Choir

পিট সীগার গীত ভার্সনটিও দিলাম :

lInternationale (French) - Pete Seeger


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৭ নভেম্বর ঠিকাছে... কিন্তু অক্টোবরের ২৬ না ২৫ হবে বস? একটু খিয়াল কইরা কইবেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

খিয়াল করলাম। ঠিক্করা হৈল।



অজ্ঞাতবাস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দেঁতো হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

ঈশ্বরের মতোই মনোপলি সহায়ক আধ্যাত্তিকতা প্রান্তিক মানুষের রক্তকে বরাবরের মতো তাঁদের মেন্যুতে মেইন কোর্স হিসেবে রেখেছে রাখছে।

প্রত্যেক সময়ের নিজস্ব কী করিতে হইবে বর্তমান

কেউ বলে না, আমাদের কী করিতে হইবে না ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আপনে শুরু করেন....চোখ টিপি



অজ্ঞাতবাস

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনেক দিন পর শ্লোগানটা দেখলাম, কমরেড। ধন্যবাদ। আরো ধন্যবাদ বিস্তারিত লেখার জন্য। আপনার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছেঃ "বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক, মেহনতি মানুষের জয় অনিবার্য"।



তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক, মেহনতি মানুষের জয় অনিবার্য



অজ্ঞাতবাস

সুমন সুপান্থ এর ছবি

সুতরাং শোষণমুক্তির সংগ্রাম থেমে যাবার কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

হুম

বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক!

---------------------------------------------------------

'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আজকালকার স্যুট্টাই পড়া অর্থনীতিবীদরা শোষণের অনুপস্থিতি প্রমাণ করতে গিয়া অনেকে জাগামতো হাগতেও ভুলে যান। অজান্তে হেগে ফেলেন থিসিসের উপর। আরপর সেই হাগুপাদুতত্ত্ব নিয়ে গরীবদেশে এঞ্জিওরা ন্যাংটা নাচে।
তাই কথাটা জানান দিতে খোঁচাতে হয়। খুব আপন উপকারী বন্ধুকেও ঠাস করে একটা চটকানা কষিয়ে জানান দিতে হয় দারিদ্র শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র শোষণের ফলাফল.....



অজ্ঞাতবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।