টুকরো টুকরো লেখা ১৮

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/১২/২০০৯ - ৪:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কথা তাই যা মাথায় ঘোরে। বলতেই হবে এমন না। মাথায় যতকিছু ঘোরে তার একদুই চিমটি বলা হয়। বাকিটা ছ্যাড়াব্যাড়া পড়ে থাকে মগজের এখানে সেখানে। কোনটা বলার আর কোনটা হারাবার তার স্কেলের বেঁটে বেঁটে দাগগুলি বহুদিন মুছে গেছে। কখনো আন্দাজে দাগাদাগি করি বেশীরভাগ ডোন্টো কেয়ার।

যে কথাগুলি বলা হয় নাই তার কোন টোট্যালিটি নাই। থাকার কথাও না। থাকলে পরের কথাগুলি কখনোই বলা হতো না। কথাগুলি আসলেই কি পরের? আপাত: পরিত্যক্ত চিপাগল্লিতে ভুদাই পড়ে থাকা কোন কথা কয়েক যুগ পেরিয়ে কুড়িয়ে আনলেও কি সেটা পরের কথাই হয়? হ্যা হয়। আগের কথা খুঁজে পেতে বলাই নতুন কথা। তবে তার সামাজিক যাথার্থ থাকতেই হবে এমন না। তাই স্কেলটা মূলত পিঠ চুলকাতে ব্যবহার করি। পিঠটা অবশ্যই নিজের।

সামাজিক যাথার্থ না থাকলে আর সারবস্তুতে কী হবে? আছে তো! এই যে বলে যাচ্ছি এইটাই সারবস্তু। বস্তুর ধারাবাহিক প্রতিফলনের অনিয়মিত ধারাবাহিক প্রকাশ। হয়তো এর থেকে কুটেবেছে বিকাশের লেখচিত্রও এঁকে ফেলা যেতে পারে। আমি পারি না।

১.

গত সপ্তাহান্তে তুমুল তুষারপাতের পর গতকাল থেকে আবার কুৎসিৎ আবহাওয়া। সোমবার ভোররাতে মাইনাস ১৫ থেকে এক লাফে প্লাস চার। সারাদিন ধরে জমে থাকা বরফ গলে রীতিমতো বিশ্রী অবস্থা। আজ বরফগলা জল কিছু কমলেও আকাশ মুখ কালো করে ছিল। তার সাথে প্রতিদিনকার নেতি মার্জ করে মেলানকলির বদলে কেমন যেন সাইকেডেলিক আবহ তৈরী করে দিলো। এরকম পরিস্থিতিতে খুব বড় ফ্রেমে কিছু ভাবতে চেষ্টা করি। যাতে ব্যক্তি আমিকে কায়দামতো আড়াল করা যায়। না গেলেও নিদেনপক্ষে না দেখার ভান করা যায়। ভান ছাড়া তো আর কথা নাই।

জুতার নিচে বরফগলা জলের শব্দ একেক সময় একেক রকম ধুনফুন শব্দবৃত্তের মাত্রাগুলিতে অস্থায়ী বৃত্তাংশের পথ দেখাচ্ছিল। টুকরো টুকরো নিরর্থক শব্দগুলি প্রথমে ছোঁয়াছুঁয়ি তারপর রুটি তারপর বাজারের কাছাকাছি আসতে আসতে রাগবী খেলা শুরু করে দিলো। তারপর সদাহাস্য বিক্রেতার সামনে অতি সীমিত ক্রয়ক্ষমতা, চৈতন্যে খেলতে থাকা বৃত্তগুলিকে ইনক্রেডিবল হাল্কের মতো টেনে সোজা করে দিলো। এক ঝটকায় ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো এতোক্ষণের ধুনফুন বৃত্তাংশের সম্ভাবনাগুলি। তারপর বরাবরের মতো ডেগচী-মুখো হয়ে বাড়ি ফেরা।

২.

জুতা -
তোকে পশ্চিমবঙ্গে
কেউ কেউ জুতো বলে,
পাবনার পথেঘাটে জুইতে;
কোনটাই জুইতের থাকে না
যখন জাগামতো ফুটা হয়
ক্ষয় কিংবা
আধামুফতে পাওয়া
অদক্ষ সুকতলী ফুঁড়ে
আষাঢ়ের গাবতলী হয়ে
সস্তা উলের মোজা ভিজে চুপচুপ

কিংবা

রসুনের গন্ধ
রান্নার আগে অথবা
সঠিক ঢেঁকুরের পরে
কতটা পৃথক?
নিছক
এই সওয়ালই কি ছিল
আরব্য রজনীর সেই
কোতোয়ালের?

কিংবা

ট্রামস্টপে মহব্বত
ধূমালী কিম্বা বেতাল যৎ
তেহাই কিম্বা ফিরতি গৎ
পিনিক ছুটায় যাত্রা ফের
গুষ্টি কিলাই মাত্রাদের

অথবা

আজকে তোমরা যতই সাজো
যিশুর ছাগল যিশুর ভেড়া
কিংবা বক্র শিঙের ম্যারা,
কালকে তোমার খাস্তা আযাব
টেবিলভরা কোফতা-কাবাব।।

সারদিন যতকিছু মাথায় ঘুরেছে তার মধ্যে এই কয়েকটাই বোধ হয় আস্ত পাওয়া গেল। অবশ্য এগুলি আস্ত কি আস্ত না তার বিচার কে করবে বা যে করবে তাকে বিচারকের ছাড়পত্র কিডা দিয়েছে ইত্যাদি অজ্ঞাত।

৩.

বাড়ি এসে সচলে ঢুকি। এটা পড়ি সেটা নাড়ি। আবার বাইরে যাই। বিড়ি খাই। একবার এই মোচড় দেই আরেকবার ঐ মোচড় দেই। তারপর সেই মোচড় দিতে মেরুদণ্ড মটমট করে ওঠে। ডিম দিয়ে ভাতভাজা খাই। খেতে খেতে মনে হলো যাই আবার সচলে। মুরগীর ডিম খেয়ে ঘোড়ার ডিমের মতো দুর্লভ কিছু একটা লিখি। টাইপিংটা অন্তত খানিক প্র্যাক্টিস হবে।

৪.

এরকম ক্রমশ পরবর্তী দিনগুলি খরচ হতে থাকবে। গুড়গুড়গুড় গড়িয়ে হামা দিতে দিতে গোষ্ঠমামাও খেপে যাবেন একদিন। ততদিন বসে বসে চাক্কা ঘোরাই দেখি .........

ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা : উইকি মিডিয়া


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাড়ি এসে সচলে ঢুকি। এটা পড়ি সেটা নাড়ি। আবার বাইরে যাই। বিড়ি খাই। একবার এই মোচড় দেই আরেকবার ঐ মোচড় দেই। তারপর সেই মোচড় দিতে মেরুদণ্ড মটমট করে ওঠে। ডিম দিয়ে ভাতভাজা খাই। খেতে খেতে মনে হলো যাই আবার সচলে। মুরগীর ডিম খেয়ে ঘোড়ার ডিমের মতো দুর্লভ কিছু একটা লিখি। টাইপিংটা অন্তত খানিক প্র্যাক্টিস হবে।
এই জায়গায় এসে হেসে ফেললাম।

নিজের পিঠ চুলকানির জন্য লেখা হলেও দিনকাল কোথায় কার কেমন যাচ্ছে সেটা জানাটা এখন মনে হয় দিনের অংশ হয়ে গেছে।

শশাঙ্ক বরণ রায় এর ছবি

"পিনিক ছুটায় যাত্রা ফের
গুষ্টি কিলাই মাত্রাদের"

অথবা

"কালকে তোমার খাস্তা আযাব
টেবিলভরা কোফতা-কাবাব।।"

খুব ভাল লাগল।

মগজের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা, বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া অথবা মৃতপ্রায় - প্রতিটি কথার মুক্তি ঘটুক আলোয় আলোয়! নইলে আর কিসের 'বাক স্বাধীনতা'!!

সবুজ বাঘ এর ছবি

একটা নতুন কতা কউ একটা নতুন কতা কউ

মামুন হক এর ছবি

কমিতাটাই সবচে ভালো লাগলো পড়তে, গাঁইগুঁই না করে কেমন জানি মোলায়েম মাখনের মতো গলে গেল, খাপে খাপ।

বাউলিয়ানা এর ছবি

সত্যিকারের একটা ব্লগ পড়লাম অনেক দিন পর।
ধন্যবাদ।
হাসি

রানা মেহের এর ছবি

একদম ডিসেম্বরের আবহাওয়ার মতো লেখা মন খারাপ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার পর আমারো বলতে ইচ্ছে করছে একদম ডিসেম্বরের আবহাওয়ার মতো লেখা

বোহেমিয়ান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।