ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, শ্রমিক হত্যা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন প্রতিরোধের হরতালে সিপিবি-বাসদ আর বামমোর্চাকে অভিনন্দন

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: সোম, ২৪/১২/২০১২ - ১১:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সব কিছুর একটা প্রপার টাইম থাকে। কথাটা বাবা খুব বেশি বলতো। আমি শুনতাম। এখনো শুনি। কিন্তু জীবনে খুব বেশিবার এই উপলব্ধি কাজে লাগাতে পারি নাই।

গত ১৮ ডিসেম্বর সিপিবি,বাসদ আর বামমোর্চার সফল হরতালের সাথে সাথে আমার একটা পোস্ট লিখে ফেলার কথা ‌ছিল। ধুনেফুনে একটা সপ্তাহ চলে গেল। আসলে অনেকদিন না লিখলে কীবোর্ডের সামনে বসে ঝট করে লিখে ফেলা ব‌্যাপারটাই পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতি আমার আজ থেকে না ওবামা ক্ষমতায় আসার আগে থেকে চলছে। সমাধান জানি না।

১৮ তারিখের হরতাল ভালো হয়েছে। জ্বালাও পোড়াও ‌ছাড়াও যে হরতাল সম্ভব ১৮ ডিসেম্বরের হরতালটা তার একটা উদাহরণ হয়ে রইল। সেটা ক্ষমতাসীন সরকারের সহায়তায় হয়ে থাকলেও উদাহরণ উদাহরণই। ভবিষ‌্যতে যখন ‌ছাত্রলীগ/‌ছাত্রদলের পাণ্ডারা বলবে, "আমার কি বাম লিপস্টিক পার্টি যে ভাঙচুর ছাড়া হরতাল করবো?" তখন তাকে যুক্তির ফাঁদে ফেলতেও সুবিধা হবে। কারণ যত নাশকতাই হোক হরতাল বা ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা অসম্ভব। হরতাল নিষিদ্ধ করা প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করার সমার্থক। নিষিদ্ধ করলে সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে হরতাল হবে। সুতরাং হরতাল পালনের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের উদাহরণ আসাটা জরুরি ছিল।

তবে ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের সব থেকে বড় অর্জন হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবী সামনে আসা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৫ম এবং ৭ম সংশোধনী বাতিল হলেও ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের সময়ে ক্ষমতাসীন দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করে নাই। কোন বিচারে করে নাই সেইটা ক্ষমতাসীন সরকারী দল জানে। করে নাই এটাই ঘটনা। করার সম্পূর্ণ সুযোগ সেই সময় ক্ষমতাসীন সরকারের ছিল। সুপ্রীম কোর্ট আগেই রায় দিয়েছে। সেই রায়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি/রাষ্ট্রধর্ম এইসব বিষয়ে ছাড় দেবার কোন কথা ছিল না। সেই সময়ে অল্প যে কজন মানুষ প্রতিবাদ করেছে তাঁদের প্রায় সবাই বামপন্থী। কিন্তু যতটা প্রতিবাদ সেইসময়ে সরকারের এই প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্তগুলিকে ঠেকাতে পারতো তার কিছুই হয় নাই। প্রতিবাদ বলতে পত্রপত্রিকায় কিছু লেখা। আর তাতে হাহুতাশ ছাড়া তেমন কিছু দেখতে পাই নাই। প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল তখন। এখনও চলছে। কিন্তু যেটা একেবারে ২০০৯ সাল থেকে অত্যন্ত জরুরি ছিল সেই দাবীসমূহের সমন্বয়ের ব্যাপারটা দেখা গেছে গত ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের দাবী নামায়। এদিক থেকে বামমোর্চার দাবীনামা সিপিবি-বাসদের দাবীনামার থেকে সম্পূর্ণ। সিপিবি-বাসদের দাবীনামায় ফুলবাড়ি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এশিয়া এনার্জিকে বহি:স্কারের দাবী ছিল না। কেন ছিল না তার ব্যাখ্যা সিপিবি-বাসদের লোকজন বলতে পারবেন। কিন্তু এই দাবীগুলির সম্মিলিত প্রকাশ খুবই জরুরি ছিল। ২০০৯ সাল থেকে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গণদাবী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া শুরু হলো তখন থেকেই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, দুর্নীতি দমন, ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ এই বিষয়গুলিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীর বিপরীত সমান্তরালে দেখিয়ে আসছিলেন কেউ কেউ। অথচ এর প্রতিটি দাবীই সঠিক এবং কোনটাই কোনটার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী কখনোই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী থেকে আলাদা ছিল না।

১৮ তারিখ হরতালের পর বিভিন্ন ব্লগে এবং দুএকটি পত্রপত্রিকায় যে গুটিকয় বিরূপ সমালোচনা এসেছে তারা কেউই সিপিবি-বাসদ বা বামমোর্চার সাথে জড়িত নন। তারা নিপাট কলাম লেখক। কর্পোরেট সংবাদ পত্রের উচ্চপদস্থ কেউ অথবা এনজিও মালিক অথবা উত্তরাধুনিকতা কপচানো কিছু বুদবুদ, যারা দেড় দশক ধরে আল্লারাখা সমাজতন্ত্রের ভাঙ্গারেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন। দাবীগুলির এই সমন্বিত প্রকাশ ছিল এইসব আল্লারাখা সমাজবাদীদের গালে টেনে চটকানা মারার মতো। সেখানেই তাদের যাবতীয় জ্বালা-পোড়া-সিনসিনানির রহস্য।

ঐ হরতালের কোন সমালোচনা যদি থেকে থাকে সেটা হরতালের টাইমিং। এই হরতালটা আরো আগে হতে পারতো। হওয়ার বাস্তব প্রয়োজন ছিল। তাজরীন গার্মেন্টসে ১২৫ জন শ্রমিক পুড়ে মরার সাথে সাথে এই দলগুলি সরাসরি শ্রমিক শ্রেণীর পাশে দাঁড়িয়ে কঠোর কর্মসূচী দিতে পারতো। ২০১১ সালের সংবিধান সংশোধনের সাথে সাথে রাস্তায় নামতে পারতো । সেদিক থেকে দেখতে গেলে ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ বেশ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। এই বিলম্বের ক্ষতি এই দলগুলি কীভাবে পুষিয়ে নেবে বা আদৌ নিতে পারবে কিনা সেটা তারা নিজেরাই ভালো জানেন।

বামমোর্চার দাবীনামার সমর্থক হিসাবে আমার ন্যুনতম প্রাপ্তি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে একটা সফল রাজনৈতিক কর্মসূচী। এই হরতালটা হতে পারে কমিউনিষ্ট, সমাজতন্ত্রী দাবীদার দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাইলস্টোন। এরপরের কাজ হচ্ছে ঐ দাবীনামাকে নির্বাচনী কর্মসূচীতে পরিণত করে ঐক্যবদ্ধভাবে ৩০০ আসনে জনসংযোগ। জনগণ বহুদিন থেকেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুষ্টচক্র থেকে বের হতে চাইছে। পারছে না কোন শক্ত বিকল্প কর্মসূচীর অভাবে। নির্বাচনের আরো বছর খানেক সময় আছে। বামমোর্চা, সিপিবি, বাসদের সম্মিলিত দাবীগুলিকে রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসাবে জনগণের কাছে তুলে ধরে ম্যাণ্ডেট চান। বামপন্থী রাজনীতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার সেটাই কার্যকর পথ।

প্রাসঙ্গিক খবর/লেখাগুলি >

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-18/news/314199

http://bdnews24.com/bangla/details.php?id=214006&cid=3

http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=261616

http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&archiev=yes&arch_date=18-12-2012&type=gold&data=news&pub_no=1095&cat_id=1&menu_id=0&news_type_id=3&news_id=308715#.UNiWLXfNnTo

http://www.sangbad.com.bd/?view=details&archiev=yes&arch_date=19-12-2012&type=gold&data=Hotel&pub_no=1269&menu_id=13&news_type_id=1&val=118082

প্রতিক্রিয়াগুলির লিঙ্ক :

ফরহাদ মজহার

ফারুক ওয়াসিফ


মন্তব্য

অরফিয়াস এর ছবি

সুমনদা, আমার দেখা মতে, আমাদের দেশের বামপন্থী বেশ কয়েকটা দল, আবার এদের মাঝে উপদল এবং বিভক্তি। এটা অনেক বড় একটা সমস্যা। এদের নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হতেই হবে, তাহলে সংঘবদ্ধভাবে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তিশালীভাবে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে। বিভক্ত না থেকে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে দেশে বাম রাজনীতি একটি শক্তিশালী ধারার সূচনা করতে পারতো অনেক আগেই।

তবে এটাও ঠিক আগের থেকে ভালো অবস্থানে আছে বামপন্থী দলগুলো। বেশ কিছু ইস্যুতে তারা প্রধান বিরোধী দলগুলোর থেকে যথেষ্ট ভালোভাবে সাধারণ জনগনের সাথে মিলিত হয়ে রাজপথে নামতে পেরেছে এবং সফল হয়েছে। এবারের হরতাল দেরিতে হলেও একটা শক্তিশালী পদক্ষেপ এবং সফল উদাহরণ। রাজপথের রাজনীতিতে এখন ব্যর্থ বিরোধী দলগুলো যেখানে সহিংসতাকে হাতিয়ার করতে চাইছে সেখানে গণসংযোগের মাধ্যমে এবং গণজাগরণের মাধ্যমে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বাম দলগুলো। আমি একে পূর্ণ সমর্থন এবং সাধুবাদ জানাই।

এখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার সময়। এটা বাম দলগুলো যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে পারবে ততই মঙ্গল।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সবুজ বাঘ এর ছবি

বিশ্লেষম ঠিকাছে। আমারও একই মত। তবে তাজরীনের পরপর হরতালে দিলে সরকারি দলের ডাং খাওয়ার চান্স ছিল কি ছিল না এইটা একটা বিরাট ছিলছিলা

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঐসময় ডাং খাইলে তার পলিটিক্যাল ছিলছিলা খুবই ভালো হইতো।

সিয়াম এর ছবি

বুঝলাম না একজন সভ্য সমাজের মানুষ হয়ে আপনি হরতান সমর্থন দেন কিভাবে।
কোন উদ্দেশ্যেই, কোন দলের হরতালই কাম্য নয়।

হরতাল কোন আন্দোলনেরই একটা টুল হতে পারে না।
এটা স্রেফ জনগনকে জিম্মি করে কৃত্রিম সান্ত্বনা লাভের একটা প্রচেষ্টা।

হিমু এর ছবি

আপনি হরতালের বিকল্প কিছু টুল বাতলে দিন না। সবাই উপকৃত হবেন।

সিয়াম এর ছবি

আমি সাধারণ জনগন, খালি ভাল আর মন্দের পার্থক্যটা বুঝতে পারি। আমার কাজ পথ বাতলানো না। যারা মহান, সমাজ-দেশ-জাতির সূর্যসন্তান তারা পথ বাতলাবেন।

হিমু এর ছবি

ভালো কোনটা?

সিয়াম এর ছবি

হরতাল না করাটা। জনগনের কষ্ট হয়।

হিমু এর ছবি

জনগণই তো হরতাল করে। নাকি বাইরের দেশ থেকে লোক এসে হরতাল করে যায়?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার চেনাজানা সব সভ্য দেশেই হরতাল বৈধ। হরতালকে ম্লেচ্ছভাষায় জেনারেল স্ট্রাইক বলে।

সিয়াম এর ছবি

সেসব দেশে কি জেনারেল স্ট্রাইকের সময় জোর করে যানবাহন বন্ধ করানো হয়? হয়ে থাকলে দয়া করে (অনুরোধ) সেসব দেশের নাম জানাবেন।

হিমু এর ছবি

এখানে একটু দেখেন।

সিয়াম এর ছবি

জবাব তো পেলাম না। পৃথিবীর কোন কোন (উন্নত) দেশে হরতাল করে যানবাহন বন্ধ করা হয়?

হিমু এর ছবি

জার্মানির কথা বলতে পারি। এখানে হরতালের আগে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়, তখন বাস-ট্রাম বন্ধ থাকে। ট্রাম লাইন আগলে সমাবেশ করতে দেখেছি অনেকবার। আরো দেশের নাম চাইলে আপনি গুগলে সার্চ দিন। গুগলে কীভাবে সার্চ করতে হয় না জানলে এসে বলবেন, সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

সিয়াম এর ছবি

আমারে গুগল সার্চ কিভাবে করতে হয় সেটা শেখানোর আগে নিজে লুঙ্গির গিঁট বাঁধতে শেখেন, ঐটাই আগে দরকার আপনার। হরতাল করে যেভাবে দেশের গিঁট খুলে ফেলছেন তাতে লুঙ্গি খুলে পায়ে পরতে বেশি দেরি নাই।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনি কি "লুঙ্গিম্যান" !! চিন্তিত

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হিমু এর ছবি

আচ্ছা ভাইয়া, শিখে ফেললাম। আপনারটা খুলে গেলে আমাদের কাছে আসবেন ভাইয়া। বেন্ধে দিবো।

স্যাম এর ছবি

তবে ১৮ ডিসেম্বরের হরতালের সব থেকে বড় অর্জন হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবী সামনে আসা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৫ম এবং ৭ম সংশোধনী বাতিল হলেও ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের সময়ে ক্ষমতাসীন দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করে নাই। কোন বিচারে করে নাই সেইটা ক্ষমতাসীন সরকারী দল জানে। করে নাই এটাই ঘটনা। করার সম্পূর্ণ সুযোগ সেই সময় ক্ষমতাসীন সরকারের ছিল। সুপ্রীম কোর্ট আগেই রায় দিয়েছে। সেই রায়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি/রাষ্ট্রধর্ম এইসব বিষয়ে ছাড় দেবার কোন কথা ছিল না।

চলুক চলুক

(লেখা পড়তে অনেক ভাল লাগল)

দাবীগুলোর সাথে আছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

বামপন্থিদের হরতাল কিছুটা হতাশ করেছে আমাকে বিশেষত সাধারণ মানুষের মাঝে এটা সরকারি হরতাল হিসেবে আখ্যা পাওয়ায়। সরকারের সমথৃনের বিষয়টা মৌন হলে এটা হতো না। এটা আওয়ামি লীগের স্ট্যান্ডবাজি যাতে ধরা দিয়েছে বামরা। যুদ্ধাপরাধীদের ইস্যুকে পেছনে দিয়ে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধেল দাবি সামনে আনলে উদ্দেশ্যটা সফল হতো বহুলাংশে। এটা প্রত্যাশঅর অপূর্ণতা সঞ্জাত হতাশা।
মহাজোট আমলের প্রথম হরতালও কিন্তু বামদের আহ্বানেই হয়েছিল। তেল গ্যাস ইস্যুতে। তখন সরকার আগ্রাসি ছিল যে কারণে আহত হয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিল, অনেকেই আটক হয়েছিল। সংবিধঅন সংশেঅধন নিয়েও সমাবেশ ও আন্দোলন হয়েছিল। কোনও অংশে কম বলা যাবে না। আরও তীব্র হতে পারত এবং হলেই ভাল হতো সন্দেহ নেই। কিন্তু মিডিয়ার আনুকূল্য ছিল না। যা এখন দেখঅ যাচ্ছে বেশ ভালভাবে।
নেই নেই করেও বাম আন্দোলন পথ করে নিচ্ছে শত বিবাদ সত্ত্বেও। কিন্তু নিজস্ব প্রচার যন্ত্র না থাকায় তা পেছনে পড়ে থাকছে। লেখা ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।

স্বয়ম

হিমু এর ছবি

যুদ্ধাপরাধীদের ইস্যুকে পেছনে দিতে হতো কেন?

সাবেকা  এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল চলুক

সাম্য এর ছবি

চলুক

ফারুক ওয়াসিফের প্রতিক্রিয়াটা পড়ে আসলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, এই দুঃখ যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না উনি, কথায় কথায় দীর্ঘশ্বাস। (আচ্ছা, উগ্র সেক্যুলারিজম কী?)

হিমু এর ছবি

বুদ্ধিজিগোলো ফারুক গুয়েবাড়া এখন ফরহাদ মগবাজারের লুঙ্গিকে তার বিপ্লবের তাঁবু বানিয়ে ফেলেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশে থাকি বলে সিপিবি-বাসদ-বামমোর্চার এই হরতালটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। গত বছর বাম দলগুলোর ডাকা জাতীয় সম্পদ রক্ষার হরতালটিও এভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। উভয় হরতালে আমি ফার্মগেট, শাহ্‌বাগ, মৎসভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক, মগবাজার, সাতরাস্তা, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, বিজয়নগর এই এলাকাগুলো সকাল থেকে দুপুর অব্দি ঘুরে দেখেছি। আমি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি, তাদের কথা শুনেছি। রাস্তায় কাজ করা নানা ধরনের শ্রমিক, চায়ের দোকান আর ছাপড়া রেষ্টুরেন্টে খেতে আসা মানুষের আলোচনা শুনেছি। আমার এই দেখা ও শোনা থেকে যা উপলদ্ধি তার কিছু বলি।

বামদের ডাকা হরতালগুলো যে খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ডাকা হয়েছিল সেটা নিয়ে কারো দ্বিমত করার উপায় নেই। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য যে হরতাল ডাকা হয়েছে সেই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। হরতালের দিনেও পল্টন, মুক্তমঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে হরতালকারীদের সমাবেশ প্রায় অনুপস্থিত। অথচ হরতালের আগে তো বটেই হরতালের দিনেও শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝানো যেতো কেন এই হরতাল, কেন সবার এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। এ’ব্যাপারে সহজবোধ্য ভাষায় লেখা লিফলেট বিতরণ করা যেত। এই বোঝানোর ব্যাপারটি না থাকায় “সরকারী হরতাল”, “নিজেগো মাইনসে ডাকছে তো হের লাইগা পুলিশে রাস্তা আটকাইসে”, “সরকারে তো আর নিজে হরতাল দিতে পারে না, হের লাইগা বাস বন্‌” - এই জাতীয় কথা শুনতে হয়েছে।

সরকারী-বেসরকারী মিডিয়া বামদের কর্মসূচীকে সহায়তা করে প্রচারণা চালাবে এমন অবাস্তব চিন্তা করি না। কিন্তু এই সব মিডিয়ার ঘাড়ে ভর না করেও অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। কিন্তু গত বেয়াল্লিশ বছরে তা হয়নি। জনগণের রাজনীতি করা দলদের মুখের ভাষা বা লেখার ভাষা সাধারণ মানুষের বোধের অগম্য এই কথাটা তাদের বোঝানো যায়নি। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হতে হতে আজকে একটা মহাসমুদ্র হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ অনেক দিন ধরে বিকল্প খুঁজছে। তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তারা ধনাত্মক পরিবর্তন চায়। এমন উর্বর ক্ষেত্রে জনমুখী কর্মসূচী নিয়েও অপরিমিত রাজনৈতিক উদ্যোগের জন্য জমি নিষ্ফলাই থেকে যাচ্ছে।

যত নেতা তত মত, তত দল তত পথ করে করে, নিজেদের মধ্যে গালাগালি আর হালাল করাকরি নিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আরো রিসোর্স নষ্ট হচ্ছে তৎসম-তদ্ভব ভাষায় বস্তা বস্তা রাজনৈতিক সাহিত্য লিখে-ছেপে-প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষের কাছে ফিজিক্যালি না পৌঁছাতে পারলে, তাদের বোধগম্য ভাষায় কথা বলতে না পারলে, তাদের সাথে মিশে-কাজ করে তাদের সমস্যার প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে না পারলে সময় নষ্ট-সুযোগ নষ্টের এই অন্ধচক্র চলতেই থাকবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিক এই আলোচনার অপেক্ষা করছিলাম। গণসংযোগটাই আসল কথা। আর তার জন‌্য লোকবলের চাইতেও জরুরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের সহজে বুঝে উঠবার মতো কর্মসূ্চী। জনগণের সঙ্গে কমিউনিকেশান গ্যাপটা কাটিয়ে ওঠার বিকল্প নাই।

টুকরোটাকরা দলবাজীগ্রুপিং থাকবেই। অন্তত বামদিকে সেটা আটকানোর রাস্তা আমার জানা নাই। কিন্তু সেগুলিসহই বৃহত্তর ঐক‌্যের উদাহরণ তৈরি হচ্ছে এখন পৃথিবীর বহু জায়গায়। বাংলাদেশে সিপিবি,বাসদ আর বামমোর্চার বিরোধ যে পর্যায়ের তার থেকেও অনেক বেশি বিরোধ নিয়ে ইউরোপের আর দক্ষিণ আমেরিকার বামদলগুলি জোট করে এবং গুরুত্ব পাবার মতো পরিমাণে আসন পায়। ভারতের বামফ্রন্টের ভেতরেও প্রচুর মতভেদ আ‌ছে। তারপরেও প্রগতিশীল রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে তারা কার্যকর নির্বাচনী জোট করতে পেরেছে। এর পেছনেও আমার মতে কমিউনিকেটিভ কর্মসূচী ভুমিকাই আসল।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত, গণসংযুক্তি ভয়াবহ পর্যায়ে। তবু আশাবাদি। বামধারার সমর্থক যারা আছেন তারা যদি সহ শক্তি হিসেবে নিজেদের সামনে নিয়ে আসেন তা হলে এই প্রচার বা, অন্তর্গত সংকট কমতে শুরু করবে।েএখানে দুটি বিষয় কাজ করে- ১। বামশক্তির উপর মানুষের আস্থা না থাকা এবং এ কারণে মৌন সমর্থকরা দূরে থাকা। ২। সমর্থন ও জনসলপ্তার কারণে ভেতর থেকে ক্রমে ক্ষয়ে যাওয়া। অন্যান্য সংকট এর পাশাপাশি এ দুইএর ফলে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সংগঠনগুলো। সংগঠনের দায় চুড়ান্ত কিন্তু এতে মৌন সমর্থকদের দায়টা এড়ানো যায় না কিছুতেই।
একটা সম্মীলন হলে উত্তরণ দ্রুত হতে পারতো।

স্বয়ম

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মৌন সমর্থকদের আকর্ষণ করার দায় দলগুলিরই।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক চলুক

হুমম ভালো উদাহরণ এবং ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হোয়ার পথে আরেকটু আগানো গেলো ধরে নিতে চাই।


_____________________
Give Her Freedom!

দুর্দান্ত এর ছবি

সব কিছুর একটা প্রপার টাইম থাকে।

ঐ হরতালের কোন সমালোচনা যদি থেকে থাকে সেটা হরতালের টাইমিং।

সহমত। ২০০৮ ও ২০১১ সালের ইস্যু নিয়া ২০১২ সালে এসে কেন হরতাল ডাকা হল, সেটা পাবলিকের কাছে ভেঙ্গে বলার দরকার ছিল।

আরেকটা সমস্যা হল গণ বিচ্ছিন্নতা। ঢাকার কথাই যদি বলি, ছাত্র ও শ্রমিকদের কাঁধে ভর করা হরতাল ডাকা 'বাম' বুঝতে পারেনি যে শাহাবাগ থেকে ছাত্র সংখ্যাধিক্যের পাল্লা এখন ঢাকার আরো উত্তরে অবস্থিত। হরতালের আগের গণসংযোগ ও হরতালের দিনের সমাবেশের কিছু অংশকে মিরপুর, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় সক্রিয় থাকতে হত।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

২০০৮ এর ইস‌্যু কোনটা? সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়া আলোচনার শুরু ২০০৯ এ। মাঝে চার বছর ঐ রায় স্থগিত ছিল।
বিলম্বের পক্ষে বামদিক থিকা কোন যুক্তি নাই। এইটা ওরা ভুল কইরা ফালাইছে। সেইটারে ওদের কোনভাবে ম্যানেজ করতে হবে।

শ্রমিকদের যে অংশগ্রহণ টঙ্গীতে দেখা গেছে সেইটা ইতিবাচক। কিন্তু ঢাকা শহরের ভিতরে শ্রমিকদেরকেও ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত রাখার প্রয়োজন আছে। শাহবাগ, পল্টন কেন্দ্রিকতা চট করে পাল্টানো যাবে না। পাল্টানোর রাস্তা ভাবতে হবে এটা ঠিক।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

জানা হল অনেক কিছু। চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অথচ এর প্রতিটি দাবীই সঠিক এবং কোনটাই কোনটার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী কখনোই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী থেকে আলাদা ছিল না।

চলুক

তাজরীন গার্মেন্টসে ১২৫ জন শ্রমিক পুড়ে মরার সাথে সাথে এই দলগুলি সরাসরি শ্রমিক শ্রেণীর পাশে দাঁড়িয়ে কঠোর কর্মসূচী দিতে পারতো।

চলুক

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

প্রতিক্রিয়াগুলির লিঙ্কে কমরেড উমরকেও যুক্ত করেন বদ্দা ।তিনি আমারদেশে লিখেছেন
সরকারের বেনামি হরতাল সফল হয়েছে

একই দিনে উমর সমকালেও লিখেছেন : "বাহ্যত এই হরতাল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ইত্যাদির বিরুদ্ধে হলেও এটা যে আসলে একটি সরকারি হরতাল এতে সন্দেহ নেই। সরকারের নৌচলাচল মন্ত্রী ও নৌশ্রমিকদের এক সরকারি সংগঠনের সভাপতি এই হরতালে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন। তাছাড়া এটা সফল করার জন্য সরকারও বিআরটিসির কোনো বাস আজ রাস্তায় নামায়নি। পুলিশও হরতাল সফল করার জন্য তৎপর রয়েছে। তারা নিজেরাই ব্যারিকেড দিয়ে এবং অন্যান্য উপায়ে চলমান গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এই 'বিজয়ের মাসে' শুধু বিরোধী দলই হরতাল করছে না, সরকার নিজেও বেনামিতে হরতাল ডেকে এটা সফল করার জন্য সব রকম কলকাঠিই নাড়ছে। এই হরতাল বেশ ভালোভাবেই সরকারের সঙ্গে কিছু তথাকথিত বামপন্থির চক্রান্তমূলক যোগাযোগের বিষয়টিও বেশ ভালোভাবেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।"

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।