দেশ উন্নয়ন ভাবনা - শেষ পর্ব

স্বাধীন এর ছবি
লিখেছেন স্বাধীন (তারিখ: মঙ্গল, ২০/১০/২০০৯ - ২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সংবিধান ও স্বাস্থ্যসেবা

শিক্ষার পর মৌলিক যে চাহিদাটি মানুষের প্রয়োজন তা হল স্বাস্থ্যসেবা। আমি সুস্থ আছি সেটা যে কত বড় নিয়ামক সেটা আমরা অসুস্থ হবার আগ পর্যন্ত বুঝিনা। বিজ্ঞানের অনেক অগ্রগতির পরও এখনো অনেক রোগই রয়ে গেছে আমাদের চিকিৎসার বাহিরে। তাই মৃত্যুকে আমরা জয় করতে পারিনি এখনো। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পরিবারের যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পরে তখন সেই মানুষটির সুস্থতার জন্য পরিবারের সদস্যরা সর্বপ্রকার চেষ্টাই করে। এটাই মানবের স্বাভাবিক ধর্ম।

একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল মানুষের সমান চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। শুধু মাত্র অর্থের অভাবে কোন প্রাণ বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুকে বরণ করবে সেটা হতে পারে না। তাই সকলের সমান স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দায়ভার রাষ্ট্রের। এমন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিতে হবে যেন সকল চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে, তা রাষ্ট্র পরিচালিত হোক বা ব্যক্তিগত ভাবে পরিচালিত হোক, জনগণ সমান স্বাস্থ্যসেবা পায়। তার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।

একটি কেন্দ্রীয় ভাবে পরিচালিত বীমা এই কাজে সাহায্য করতে পারে। ব্যবস্থাটি এমন হবে যে সকল জনগণ তার স্বাস্থ্য সেবার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রকে প্রতি মাসে প্রদান করবে। যদি কোন মাসে সে অসুস্থ হয় তবে তিনি সরাসরি যেকোন ডাক্তার এর কাছে যাবেন এবং চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজনীয় তা তিনি করবেন। এর সকল খরচ রাষ্ট্র সরাসরি উক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রকে প্রদান করবে। এই বীমা ব্যবস্থা পরিসংখ্যানের কিছু নিয়ম মেনে চলে। ধরা হয় যে, প্রতি মাসে দেশের সকল জনগণ একত্রে অসুস্থ হয়ে পড়বে না। কিন্তু যেহেতু সবাই প্রতি মাসে তাঁদের কিস্তি প্রদান করে থাকে, তাই যারা অসুস্থ হয়নি তাঁদের টাকা দিয়ে অসুস্থদের চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। এখন, আপনি নিজেও যদি কোন এক সময় কঠিন অসুস্থ হোন, আপনিও চিকিৎসা পাবেন। ব্যাপারটি অনেকটা নিজের ভবিষ্যতের অসুস্থতার কথা চিন্তা করে সব সময় অল্প অল্প করে অর্থ সঞ্চয় করে রাখা।

তবে এরকম একটি ব্যবস্থা রাতারাতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও নীতিমালার প্রয়োজন। একটি সমন্বিত তথ্যকেন্দ্র থাকতে হবে যেখানে প্রতিটি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। পুরো স্বাস্থ্যসেবাকে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কের মাঝে নিয়ে আসতে হবে। দূর-চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুরুতে আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য কিছু বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই দরিদ্র, যাদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে না আবার বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে সবসময় ভর্তুকি দিয়েও রাষ্ট্র চলতে পারবে না। এই সমস্যা আমাদের সর্ব ক্ষেত্রেই থাকবে। এ কারণে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় না বাড়িয়ে সত্যিকার অর্থে কিছু করা কষ্টকর হবে। তাই অর্থনীতিকে শক্তিশালী করাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সংবিধান ও অর্থনীতি

মানুষের বাকী মৌলিক চাহিদা গুলো হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। এই সবগুলো সরাসরি জীবিকার সাথে সম্পর্কিত। এক কথায় বলা যায় একজন মানুষ চায় তাঁর একটি জীবিকা অর্জনের পথ থাকবে যা দিয়ে সে তাঁর এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারবে। মানুষ আসলে কি খুব বেশি কামনা করে? সে চায় সমাজে তাঁর জন্য একটি কাজ থাকবে, যে কাজ দিয়ে সে তাঁর সংসারটিকে সুন্দর ভাবে চালাতে পারবে। পরিবারের সকল সদস্যের মাঝে খাবার তুলে দিতে পারবে। সন্তানদের শিক্ষার আলো দিতে পারবে। পরিবারের কোন সদস্য অসুস্থ হলে তাকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে। পরিশেষে নিজে যখন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে, তখন তাঁর সন্তান বা রাষ্ট্র তাঁর দেখাশুনা করবে।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি একটি জটিল ব্যবস্থা। আমরা আজ একটি জটিল ধাঁধার মাঝে আছি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী একজোট হয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় মানুষকে শোষণ করে। আবার সম্পূর্ণ সমবায় ব্যবস্থায় কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজের শ্রম ব্যয় না করে সমবায় ব্যবস্থার সুবিধে নিয়ে অর্থনীতির চাকাকে স্থবির করে দেয়। এখন এই দুই দ্বন্দের মুক্তি হল মিশ্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু ঠিক কতটুকু সমবায় আর কতটুকু ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা একটি গতিশীল অর্থনীতির জন্য প্রযোজ্য সেটা বের করাই আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য।

সমাজে বিভাজন নেই সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। সমাজে অধিক কর্মক্ষম ব্যক্তি আছে আবার কম কর্মক্ষম ব্যক্তি আছে, অধিক মেধাবী আছে আবার কম মেধাবী আছে, অধিক বয়সী বা অভিজ্ঞ ব্যক্তি আছে আবার কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি আছে, কারিগরী ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি আছে আবার নন-ঢেঁকি ব্যক্তি আছে। সুতরাং বিভাজন কিছুটা থাকবেই। তবে বিভিন্ন পেশাবিদদের বেতন স্কেল ভিন্ন না করে অভিন্ন করার পক্ষপাতিত্বে আমি। বেতন স্কেলের বিভাজন কেবল মাত্র হবে কর্মক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও মেধার ভিত্তিতে। লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এক ধরনের ব্যবস্থা প্রণয়ন করা যেতে পারে। সেখানে কর্মী, কর্মকর্তা ও মালিকশ্রেনী সকলের নুন্যতম মূল বেতন থাকবে অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কর্মক্ষমতার অনুপাতে। তারপর বছর শেষে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ সকলে সমান ভাবে ভাগ পাবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী, কর্মকর্তা, মালিক সকলেই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হবে। এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা অনেক বেশি থাকবে।

অর্থনীতিকে সবল করতে হলে দেশের আমদানি ও রপ্তানীর মাঝে ভারসাম্য থাকতে হবে। আমদানীকে কমিয়ে রপ্তানী যত বাড়ানো যাবে তত অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। এখন আমদানী কমানোর অনন্য উপায় হচ্ছে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো। সর্বক্ষেত্রে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করা। তার জন্য প্রয়োজন দেশীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো যা বিশ্ববদ্যালয়গুলোতে গবেষনার মাধ্যমে হতে পারে। দেশীয় প্রয়োজন মেটানোর পর, উদ্বৃত্ত দেশের বাহিরে রপ্তানী করা। আমরা যদি কোন পণ্য রপ্তানী নাও করতে পারে, শুধু জনসম্পদ রপ্তানী করেই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি।

রাষ্ট্রের যদি কোন খাতে বিনিয়োগ করতে হয় তবে বিনিয়োগ করা উচিত দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য। মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া উচিত দেশীয় কল-কারখানা গড়ার জন্য। বিনিয়োগ করা উচিত জনসম্পদ রপ্তানী খাতে। মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া উচিত পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের জন্য এবং বিদেশ গমণের ব্যয়ভার বহনের জন্য। বিনিয়োগ করা উচিত তথ্য প্রযুক্তিতে। দেশের সকল জনগণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা উচিত। দেশের সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে একটি নেটওয়ার্কের মাঝে নিয়ে আসা উচিত। সকল সরকারী/বেসরকারি কর্মকাণ্ড অন্তর্জাল ও মোবাইল এর আওয়তায় নিয়ে আসা উচিত। বিনিয়োগ যদি করতে হয় তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা উচিত। গবেষণায় করা উচিত। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় করা উচিত।

শেষ কিছু কথাঃ

অনেকেই লেখাগুলো পড়ে ভাবতে পারেন পুরোটাই ইউটোপিয় চিন্তাভাবনা। আবার অনেকেই এর মাঝে সোস্যালিষ্ট চিন্তাধারণার ছায়াও পেতে পারেন। হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিন্তাগুলো স্বপ্নের মতই। দেশের যে কোন উন্নতি সম্ভব, এমন ধারণা পোষণকারী খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু আমি বলবো অসম্ভব কোন কিছুই নয়। আমি যে সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেছি, তা পাশ্চাত্যের অনেক উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যমান। তাঁরা উন্নত এজন্য নয় যে তাঁদের সমাজ ব্যবস্থা উন্নত। তাঁরা উন্নত কারণ, তাঁরা নিজেদের দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করেছে। এ কারণে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করাই হবে আমাদের মৌলিক লক্ষ্য। আবার অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শাসন ব্যবস্থা সব এক অপরের উপর নির্ভরশীল এবং সম্পর্কিত। একটি ব্যতীত অন্যটিকে উন্নত করা সম্ভব নয়। তাই আসলে প্রয়োজন একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। প্রয়োজন গণমানুষের মৌলিক চাহিদার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা এবং একটি স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থা, যেন একটি গতিশীল অর্থনীতি পাওয়া যায় এবং সেই সাথে সকলের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়।

সোস্যালিজমের ছায়া পেতেই পারেন, কিন্তু তাই বলে উন্নত দেশগুলো কিন্তু সোস্যালিষ্ট দেশ নয়। বরং বলা যেতে পারে মিশ্র অর্থনীতির দেশ। ধীরে ধীরে সকল রাষ্ট্রই এই সমাজ ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে। আবার এই সমাজ ব্যবস্থাও যে ত্রুটিমুক্ত তা নয় কিন্তু। এখনো উন্নত দেশগুলোর মাঝে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব বিরাজমান, কারণ আমাদের প্রকৃত গনতন্ত্রের অভাব। বর্তমানে যে গণতন্ত্র বিরাজমান তা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের হাতে জিম্মি। এই কথাটি উন্নত, উন্নয়নশীল সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য। এই অসাধু চক্রটি জনগণের সামনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মুখোশ নিয়ে আসে, কিন্তু আদতে তারা শোষনের যন্ত্রটি ঠিকই চালু রাখে। তাঁদের আসল উদ্দেশ্য একটিই - জনগণের করের টাকায় জীবন ভোগ (বিভিন্ন রাজনীতিবিদগণ ও ঋনখেলাপীদের হাজার কোটি টাকার সম্পদ দ্রষ্টব্য)। এরা তাই ঋণ খেলাপী হয়েও বড় বড় দলের অর্থের জোগানদার, এরাই দেশের অর্থনীতির নীতি নির্ধারক। এরা তাই দেশের কোন মৌলিক পরিবর্তনে বিশ্বাসী নয়। এ কারণেই যে সরকারই ক্ষমতা আসুক, শাসন ব্যবস্থা একই ভাবেই চলে।

রাজনীতিবিদগণ ধীরে ধীরে এই অসাধু চক্রটির শোষনের যন্ত্র হয়ে উঠে, কখনোবা নিজেই চক্রটির অংশ হয়ে যায়। এই অসাধু চক্রটিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং এদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বিদ্যমান শাসন যন্ত্রে সেটি কখনই সম্ভব হবে না। আমাদের প্রয়োজন একবিংশ শতাব্দীর জন্য নতুন একটি দল গঠন করা যারা জনগণের সামনে বিকল্প হয়ে আসবে। এটি হতে হবে সম্পূর্ণ এই প্রজন্মের হাতে তৈরি। এদের কাজ হবে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এই অসাধু চক্রটিকে চিহ্নিত করা এবং জনগণের কাছে এদের মুখোশ খুলে দেওয়া। এভাবে আগামী দশ বা পনের বছরে যদি এই দলটি জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারে তবেই কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব। অন্যথায় এক শ্রেনীর মানুষ শুধু সম্পদের পাহাড় গড়বে আর অধিকাংশ মানুষ শুধু বেঁচে থাকার জন্যই প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে চলবে এবং ঈশ্বরের দোষারোপ করে চলবে।


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

এক প্রকার জোর করে শেষ করে দিলাম এই সিরিজটি। মাথার পোকাগুলোর জন্য নিজের পিএইচডির কাজ ব্যহত হচ্ছিল। এখন কিছু দিনের জন্য বিরতিতে যাবো। সবাইকে ধন্যবাদ, যারা এই সিরিজটি পড়েছেন এবং দেশ নিয়ে চিন্তা করছেন। আসুন সবাই মিলে কাজ করি, চিন্তাগুলো এক অন্যের সাথে ভাগ করি, এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

রাগিব এর ছবি

কর্মী, কর্মকর্তা ও মালিকশ্রেনী সকলের নুন্যতম মূল বেতন থাকবে অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কর্মক্ষমতার অনুপাতে। তারপর বছর শেষে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ সকলে সমান ভাবে ভাগ পাবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী, কর্মকর্তা, মালিক সকলেই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হবে। এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা অনেক বেশি থাকবে।

এইটা একেবারেই ইউটোপীয় চিন্তা, তা লিখতে গিয়ে দেখি আপনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন। লভ্যাংশ সমান ভাবে বন্টন করার এই পরিকল্পনা নিতে গেলে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় ঠেকবে। কারণ বিনিয়োগকারী (মালিক) দের কোনো incentive থাকছে না এখানে।


মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া উচিত দেশীয় কল-কারখানা গড়ার জন্য।

ধরা যাক আমি স্বল্প হোক আর বেশিই হোক, সুদ করে ঋণ নিয়েছি ফ্যাক্টরি খোলার জন্য। এখন যদি বলা হয় যে মালিক হিসাবে আমি পাবো অতটুকুই, যতটা একজন কর্মী পাবে, তাহলে আমি কেনো ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিবো? এই লাইনটি অন্য অংশের বিরোধী হয়ে গেলো না?

----

"রাষ্ট্র সব করবে" "দেখাশোনা করবে" এই সিস্টেমের বড় সমস্যা হলো, এটা অত্যন্ত অদক্ষ একটা ব্যবস্থার জন্ম দেয়। আর তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও উদ্যমকে পিছিয়ে দেয়। কমিউনিস্ট আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অদক্ষ অর্থনীতি এই ব্যাপারটার একটা বড় উদাহরণ।

----


তার জন্য প্রয়োজন দেশীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো যা বিশ্ববদ্যালয়গুলোতে গবেষনার মাধ্যমে হতে পারে।

এইটার সাথে পুরোই একমত। আমাদের দেশের সমস্যা হলো, বিদেশী "সমাধান" এনে জোর করে চাপানো হয়, যা দেশীয় সমস্যার ক্ষেত্রে কাজে লাগে না। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ সেটা সরকারের ফোকাস নয়। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অমুক তমুক বানাবার চাইতে কৃষি, পুরকৌশল, পরিবেশকৌশল, এসব বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দেয়া দরকার, কারণ এগুলোই বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক সমস্যা। পাবলিকের টাকায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ঝাঁকে ঝাঁকে বানিয়ে কাজের কাজ বা সমস্যা সমাধান কমই হচ্ছে, একটা দুইটা বা ১০০টা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কম হলে দেশের সমস্যা বেড়ে যাবে না, কিন্তু কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন হলে বিপুল প্রভাব পড়বে সারা দেশে।

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

স্বাধীন এর ছবি

লভ্যাংশ সমান ভাবে বন্টন করার এই পরিকল্পনা নিতে গেলে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় ঠেকবে। কারণ বিনিয়োগকারী (মালিক) দের কোনো incentive থাকছে না এখানে।

এখানে একটু পরিষ্কার করি। আমি যেভাবে চিন্তা করছিলাম, লভ্যাংশ যদি সকলে পায় তাহলে ঋণের বোঁঝাও সকলে বইবে। অন্য কথায় ঋণের বোঝা হবে সেই প্রতিষ্ঠানের। তাই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার পরই লাভ হিসেব করা হবে এবং সেই লভ্যাংশ সকলে পাবে। আর মালিক শ্রেনী তাদের কাজের লোড এবং রিস্ক ফ্যাক্টর ধরে মূজুরী ঠিক করবে, তখন তাঁরাতো এমনিতেই বেশী পাচ্ছে। কিন্তু সবাই মিলে কাজ করায় প্রতিষ্ঠানের যে লাভ হচ্ছে তার কিছু অংশ যদি কর্মচারীদের দেওয়া হয় তবে আমারতো মনে হয় কাজে গতিশীলতাই আসবে এবং প্রতিষ্ঠান আরো বেশি লাভ করবে ভবিষ্যতে। কোম্পানী লাভের এক অংশ আবার নিজেরা বিনিয়োগ করতে পারবে।

স্বাধীন এর ছবি

রাগীব
ন, চিন্তা করে দেখলাম যে তোমার কথাই ঠিক। লভ্যাংশ ভাগের ব্যাপারটি যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে ল্ভ্যাংশ বোনাস হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু ঢালাওভাবে সেটা অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে মনে হয় খাটানো যাবে না। তারচেয়ে বরং কর্মী/কর্মচারীদের নুন্যতম মুজুরী বাড়ানো, সুযোগ সুবিধে বাড়ানো সেগুলো ইম্পলিমেন্ট করা বাস্তব সম্মত হবে।

গৌতম এর ছবি

স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে পরিকল্পনার কথা বলছেন, সেটার বাস্তবায়ন খুবই সম্ভব। এবং যতদূর জানি, কিউবা ও বেলজিয়ামের স্বাস্থ্যব্যবস্থাটা ঠিক এরকমই। যদিও রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিক দিয়ে দুটো ভিন্ন মেরুর দেশ- কিন্তু দুটো দেশই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

স্বাধীন এর ছবি

কিউবা'র কথাটি আমি জানিনে। তবে কানাডায় আছে। সুইডেনেও মনে হয় আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সবকিছুতে রাষ্ট্র তথা সরকারের উপর নির্ভরতা কমাতে পারলে ভাল হয়। নাগরিকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেটা শিক্ষার মাধ্যমে হধতে পারে। সরকারের দায়িত্ব হবে ব্যক্তি বা সামষ্টিক পর্যায়ের উদ্যোগকে উৎসাহিত করা। রাষ্ট্রযন্ত্র প্রায়শই নিয়মকানুন বিধিনিষেধের বেড়াজালে মানুষের কাজে বাধা দেয় কিংবা নিরুৎসাহিত করে। এসব ব্যাপারে আরো উদার ও সহজ হতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আকাশ কুসুম স্বপ্ন না দেখে বাংলাদেশের উপযোগী কোন সমাধান আমাদের বের করতে হবে। না হলে এই চিন্তা এবং স্বপ্নগুলো শুধু মস্তিষ্কেই থাকবে। তবুও বলি দেশের মঙ্গল চিন্তায় আপনার এই স্বপ্ন আমাকে বেশ ভালোভাবেই জারিত করেছে।

মহসীন রেজা

স্বাধীন এর ছবি

রাষ্ট্র সব করবে কেন? কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংবিধানের মূলনীতিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব কতটুকু হবে তা নির্দিষ্ট করা থাকতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগটুকু রাষ্ট্রের করা উচিত। আর স্বাস্থ্যসেবাটি পরিচালনা। স্বাস্থ্যসেবা চলুক ব্যক্তিগত ভাবে, কিন্তু সমন্বয় হোক কেন্দ্রীয় ভাবে। সকলের জন্য সমান স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য এ ছাড়া উপায় নেই। আর অর্থনীতিও চলবে ব্যক্তিকেন্দ্রীক। কিন্তু এখন যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি নির্ধারণ করে সেরকমই চলবে। শুধু দেশীয় প্রযুক্তি ও দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার বিনিয়োগ করবে গবেষনায় আরো বেশি। দেশীয় শিল্পের জন্য ঋণের প্রবাহ বাড়াক। বিদেশীরা এসে যদি এখানে বিনিয়োগ করে আর দেশের স্বল্প মুজুরীর সুবিধে নিয়ে তারা লাভ করে এবং সেই লাভের অর্থ বিদেশে চলে যায়, তবে শুধুমাত্র কিছু লোকের কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাঁদের আমরা এত বড় সুবিধে দিব কিনা সেটাও আমাদের আবার চিন্তা করা উচিত। বরং দেশীয় বিনিয়োগের জন্য দেশীয় উদ্দোক্তাদের ঋণ দিক। আর নির্বিচারে বিদেশী পন্যের প্রবেশ আমাদের অর্থনীতির ক্ষতি করে বলে মনে করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আর নির্বিচারে বিদেশী পন্যের প্রবেশ আমাদের অর্থনীতির ক্ষতি করে বলে মনে করি।

এই বিষয়টা একটা স্বাবলম্বী অর্থনীতির জন্য খুব জরুরী -- দেশজ পণ্যের ব্যবহার। আমরা বিদেশী মোবাইল ফোন ব্যবহার করি, সেটা ঠিক আছে। আমি অনেককে দেখেছি যারা কিনা একটা বিদেশী 'সেবিং ক্রীম' বা 'টুথপেস্ট' পর্যন্ত কিনতে বিভিন্ন শপিং মলে যান। বাজার ব্যবস্হাপকরা বলেন, এটা ব্রান্ডিং। ব্রান্ডিং কি শুধু বিদেশী জিনিসের হয়, দেশে উৎপাদিত পণ্যের হতে পারে না? কেউ হয়ত বলবেন, দেশে 'ভাল মানের' পণ্য তৈরি না হলে কী করা।

একটা জনগোষ্ঠীর ভোগের আকাঙক্ষা তার উৎপাদনের সক্ষমতাকে অতিক্রম করলে বোধ করি তার আর স্বাবলম্বী হওয়া হয় না।

তবে আশার কথা হলো, ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।