ঝড়ো ব্লগ ০০২ - বাংলাদেশের টর্নেডো ও কালবৈশাখী

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: শনি, ০৫/০৪/২০০৮ - ৯:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস- এ সময়টায় আমরা টর্নেডো, শিলাঝড় এবং কালবৈশাখীর আনাগোনা দেখি। এগুলোর প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হলেও এ সময় এদের প্রকোপ বেশী হবার প্রাথমিক কারণ একটাই। বেশী জটিল ব্যাখায় না গিয়ে খুব সাধারণভাবে বলা যায়, শীতের শেষে বসন্তের এ সময় হতে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র মৌসুমী বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। শীতের শেষে তখনো বিরাজমান ঠান্ডা ও শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে আসলে এটা বায়ুমন্ডলকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলশ্রুতিতে এ সময় বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ের প্রকোপ দেখা যায়, যা কালবৈশাখী নামে পরিচিত। হাজার হাজার বছর ধরে ভৌগলিক কারণে নিয়মিত এটা হয়ে আসছে বিধায় কালবৈশাখী এখন আমাদের বর্ষবরণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই কালবৈশাখী ঝড়- যেটা আসলে সাধারণ বজ্রঝড় (Thunderstorm) বৈ কিছু নয়, তার সাথে ক্ষেত্রবিশেষে আবহাওয়ার আরো কিছু উপাদান যোগ হয়ে টর্নেডো সৃষ্টি হয়। সাধারণ বজ্রঝড় যখন টর্নেডো সৃষ্টির জন্য অনুকূল একটি ঘূর্ণনশীল বজ্রঝড়ে পরিণত হয় (যার নাম Supercell), তখন তা থেকে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। কাজেই শিলাঝড়কে এই প্রক্রিয়ার একটি উপজাত বলা যায়।

যারা টর্নেডো, সাইক্লোন, কালবৈশাখী সব গুলিয়ে ফেলেন তাদের জন্য সহজ একটু ব্যাখা দিচ্ছি। সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় হয় সমুদ্রে, তাই শুধু উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়, যেমন- সিডর। কালবৈশাখী হচ্ছে সাধারণ বজ্রঝড়- এতে বায়ুপ্রবাহ থেকে autoসরলরৈখিক (straight line winds), সাধারণ ঝড়ে যেমন হয়। অপরদিকে, টর্নেডো হচ্ছে স্থলভাগে সৃষ্ট বায়ুস্তম্ভ যা প্রচন্ড বেগে ঘুরতে থাকে এবং খুব অল্প সময়ের জন্য ক্রিয়াশীল থাকে (পাশে ছবি)। স্বল্পস্থায়ী হলেও বায়ুর প্রচন্ড গতিবেগের জন্য টর্নেডোর ধ্বংসক্ষমতা অতি ব্যাপক। চলার পথে সবকিছুই এটা গুঁড়িয়ে দেয়।

আমাদের দেশের অধিকাংশ ঘরবাড়ী যেহেতু নাজুক, সাধারণ কালবৈশাখী ঝড়েও এগুলো সহজে আক্রান্ত হয়। এছাড়া কালবৈশাখী পরিস্থিতি থেকেই যেহেতু পর্যায়ক্রমে টর্নেডো সৃষ্টি হয়, তাই চাক্ষুষ বা রেডারে দেখা সম্ভব না হলে কোন এলাকা কালবৈশাখী নাকি টর্নেডোতে আক্রান্ত হয়েছে, অনভিজ্ঞ সাংবাদিকদের পক্ষে তা ঠিকভাবে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেক সময় প্রকৃতপক্ষে টর্নেডো না হলেও পত্রিকায় আমরা দেখি টর্নেডো হয়েছে। বাংলাদেশের টর্নেডো ইতিহাস নিয়ে যাঁরা পুরনো পত্রিকা বা আর্কাইভ ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন তারা গবেষণার জন্য এটিকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অথচ একটু সচেতন হলে ঝড়ের ধ্বংস-নমুনা (damage pattern) দেখে খুব সহজেই এ পার্থক্য চিহ্নিত করা যায়। কালবৈশাখী বা সাধারণ ঝড়ের বায়ুপ্রবাহ থাকে সরলরৈখিক, কাজেই এ থেকে আক্রান্ত ঘরবাড়ি, গাছপালা শুধু একদিকে হেলে থেকে। অন্যদিকে টর্নেডোর বায়ুপ্রবাহ হচ্ছে ঘূর্ণন (rotating), টর্নেডো আক্রান্ত গাছপালা-বাড়ীঘর দেখেই এই ঘূর্ণনের ব্যাপারটা আঁচ করা যায়।

টর্নেডো পূর্বাভাস

শুরুতে বলেছি, কালবৈশাখী পরিস্থিতির সাথে ক্ষেত্রবিশেষে আরো কিছু উপাদান যোগ হয়ে সুপারসেল ঝড় এবং পরবর্তীতে টর্নেডো সৃষ্টি হয়। এর একটি উপাদান হচ্ছে ড্রাই লাইন (Dry line) বা শুষ্ক রেখার উপস্থিতি। শুষ্ক রেখা হচ্ছে পাশাপাশি দুটো ভূখন্ডকে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ভিত্তিকে বিভাজনকারী একটি কাল্পনিক রেখা। শীতের শেষে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা গরমে দ্রুত খটখটে ও শুকনো হয়ে ওঠে; কিন্তু বংগোপসাগরের সন্নিকটস্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের আবহাওয়ায় যথেষ্ট আর্দ্রতা থাকে। ফলে মার্চ-মে এই সময়টায় প্রায়শই শুষ্ক রেখার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। চিত্রে বাংলাদেশ-ভারত পশ্চিম সীমান্তের কাছে শুষ্ক রেখার অবস্থিতি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া এ অঞ্চলে হিমালয়ের অবস্থিতির কারণে ৫০০ মিলিবার উচচতা তথা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ৬ কিমি উচচতায় যে শক্তিশালী বায়ু প্রবাহিত হয় (যার নাম ৫০০ মিলিবার জেট) তা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায় (চিত্রে)। এর প্রভাবে এ সময় এ অঞ্চলে পশ্চিমা বায়ু (westerlies) স্বাভাবিকের চেয়ে আরো বেশী বেগে প্রবাহিত হয়। এ কারণে দেখা যায় কালবৈশাখী ঝড় সাধারণত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শুরু হয় এবং এর ইংরেজী নাম রাখা হয়েছে Nor’wester.

আবহাওয়ার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বিশ্লেষণ করে শুষ্ক রেখার উপস্থিতি টের পেলে আবহাওয়াবিদরা সতর্কতা জারী করেন যে আগামী কিছুদিন ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে এবং সুপারসেল ঝড় ও টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে। নজরে রাখার জন্য এবং জনসাধারণকে সাবধানে থাকতে বলার জন্য এসময় অনেক ক্ষেত্রে ঐ এলাকায় ‘টর্নেডো ওয়াচ বক্স’ ইস্যু করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ টর্নেডো ও কালবৈশাখীর ক্ষেত্রে কোনরূপ সতর্কতাই প্রদান করে না (ইদানীং অবশ্য কিছু কিছু পত্রিকায় দেখছি আগেই জানানো হচ্ছে)। যুক্তরাষ্ট্র National Weather Service-এর আবহাওয়াবিদ জোনাথন ফিঞ্চ বিগত কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশের টর্নেডো নিয়ে গবেষণা করে আসছেন এবং প্রতি বছর মার্চ থেকে মে অর্থাৎ টর্নেডো মৌসুমে তাঁর ওয়েবসাইট থেকে স্বেছ্বাশ্রমের ভিত্তিতে এ ধরণের পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। বছর দেড়েক আগে ফিঞ্চের একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, এখান থেকে পড়ে দেখতে পারেন।

সুপারসেল ঝড়গুলো রেডারে সহজেই ধরা পড়ে। আমেরিকায় কোন এলাকায় যখন সুপারসেল সৃষ্টি হয়, তখন ঐ এলাকার জন্য টর্নেডো ওয়াচ (Tornado Watch) ইস্যু করা হয়, মানে টর্নেডো সৃষ্টি হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যে কোন মূহুর্তে টর্নেডো হতে পারে। ঢাকার আবহাওয়া ভবনের উপরেও ফুটবলের মত একটা বিশাল রেডার আমরা সবসময় দেখি। এটা আদৌ কাজ করে কি না, বা কাজ করলেও কেন টর্নেডো ওয়াচ দেয়া হয় না, তা আমার বোধগম্য নয়! সব সুপারসেলেই যে টর্নেডো হয়, এমন নয়। হবে কি না কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। সাধারণত সুপারসেলের সামনের অংশে শিলাবৃষ্টি হয়। তাই বজ্রঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টি হলে বুঝতে হবে সুপারসেলের বড় অংশ আছে পেছনে এবং টর্নেডো উৎপত্তির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। টর্নেডো এতই ক্ষুদ্র যে অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদ ছাড়া রেডারে টর্নেডো সনাক্ত করা খুব দুরুহ। তাই টর্নেডো ওয়াচ ইস্যু হলে বিভিন্ন জায়গায় স্টর্ম চেজার পাঠানো হয় টর্নেডো হয়েছে কিনা দেখার জন্য। সুপারসেল থেকে টর্নেডো সৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া মাত্র অর্থাৎ সুপারসেলের মেঘ থেকে বায়ুস্তম্ভ ভূমিতে নেমে আসার সাথে সাথে টর্নেডো ওয়ার্ণিং (Tornado Warning) ইস্যু করা হয়। এর অর্থ কেউ একজন টর্নেডো দেখেছে এবং এটা ঐ এলাকায় আঘাত হানতে আসছে, অতএব এখন নিজেকে রক্ষা করতে হবে। মারাত্মক কোন টর্নেডো শহরের দিকে আসতে থাকলে নগরবাসীদের সাইরেন বাজিয়ে নিরাপদ অবস্থানে যেতে বলা হয়। এখানে স্টর্ম চেজারের প্রাপ্ত খবর থেকে টর্নেডো ওয়ার্ণিং ইস্যুর ব্যাপারটা একটু বলি। মেঘ থেকে টর্নেডো বায়ুস্তম্ভ ভূমি স্পর্শ করার ঘটনাকে বলে টাচ ডাউন (Touch Down)। টর্নেডো ওয়াচ ইস্যু হবার পর থেকে আবহাওয়া অফিসে সবাই উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করে স্টর্ম চেজারের কাছ থেকে এই শব্দটা শোনার জন্য (আমেরিকান ফুটবলেও টাচ ডাউন একটা জনপ্রিয় শব্দ)। টর্নেডো মাটিতে নেমে আসা মাত্র স্টর্ম চেজার অফিসে জানিয়ে দেয় ‘টাচ ডাউন’ ‘টাচ ডাউন’। সাথে সাথে টর্নেডো ওয়ার্ণিং ইস্যু করা হয়।

সতর্কতা

টর্নেডো হলে বেজমেন্ট বা ভূগর্ভস্থ কোন ঘরে যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। আমাদের দেশে যেহেতু ঘরবাড়ীতে বেজমেন্ট রাখা হয় না, তাই আশেপাশে জানালা নেই এমন কোন রুমে কম্বল বা লেপ মুড়ে আশ্রয় নেয়া ভাল। এক্ষেত্রে বাথরুম বা ক্লজেটই হতে পারে এরকম জায়গা। কম্বলের ব্যাপারটা হল যদি কিছু ছিটকে আসে তা থেকে প্রটেকশনের জন্য। টর্নেডোর সময় উড়ন্ত বা ছিটকে পড়া বস্তুগুলো মারাত্মক অস্ত্রে পরিণত হয় এবং হতাহতের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে এসব দ্বারা আক্রান্ত। জোনাথন ফিঞ্চ ও আশরাফ দেওয়ান ১৮৩৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পূর্বভারতে ৮৬ টি টর্নেডো নথিবদ্ধ করেছিলেন। এগুলোর অবস্থান থেকে (নীচে ছবি) বাংলাদেশের টর্নেডো উপদ্রুত এলাকা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। মার্চ থেকে মে এই সময়টায় ঝড়ের পাশাপাশি প্রচুর বজ্রপাতও হয় এবং অনেক লোক বজ্রপাতে মারা যায়। এ সময় ঝড় হলে তাই বাইরে ঘুরাঘুরি না করাই ভাল। এছাড়া লঞ্চডুবি হয়েও প্রচুর যাত্রী নিহত হন। মার্চ থেকে মে- এই তিন মাস তাই একান্ত দরকার না হলে লঞ্চযাত্রা পরিহার করুন। আর যদি যেতে হয়, ভাল করে আবহাওয়ার খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর যাত্রা করুন।

ইতিহাসগতভাবে বাংলাদেশে এপ্রিলের দ্বিতীয় থেকে শেষ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডোগুলো হয়েছে। পহেলা বৈশাখ (১৪ ই এপ্রিল) ১৯৬৯ সালে ঢাকা ও কুমিল্লার কাছে টর্নেডোতে প্রায় ৯০০ লোক নিহত হয়েছিল। এখন লোকসংখ্যা বেড়েছে সে তুলনায় অনেকগুণ। কাজেই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকরতম টর্নেডো হয়েছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ২৬ শে এপ্রিল, ১৯৮৯ সালে। প্রায় ১৩০০ লোক এতে নিহত হয়েছিল। ফিঞ্চ ও আশরাফ দেওয়ানের সনাক্তকৃত ৮৬ টি টর্নেডোর মধ্যে ৩০ বা ততোধিক লোক নিহত হয়েছে এমন টর্নেডোর সংখ্যা ৪৩ টি। এর ৭৫% টর্নেডো সংঘটিত হয়েছে এপ্রিলের প্রথম ২০ দিনের মধ্যে। এ ধরণের সময়ে জনগণকে সচেতন করতে নানা দেশে জাতীয়ভাবে ‘টর্নেডো সচেতনতা সপ্তাহ’ এবং অন্যান্য কর্মসূচী পালন করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে এ ধরণের কর্মসূচী নেয়া এবং মিডিয়ায় প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করা যেতে পারে।

টর্নেডো নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে বাংলা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ দেখতে পারেন

বাংলাদেশের টর্নেডো নিয়ে ইংরেজী নিবন্ধ

সিরিজের প্রথম পর্বঃ বাংলাদেশের ঝড়

চিত্র সৌজন্যঃ উইকিপিডিয়া ও জোনাথন ফিঞ্চ


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

বাংলা উইকির নিবন্ধটি পরিপূর্ণ করার জন্য অভিনন্দন। আরেকটু খাটলেই সেটাকে নির্বাচিত নিবন্ধে উন্নীত করা যাবে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

তানভীর এর ছবি

হুম। সেটা মুহাম্মদ (শিক্ষানবিস) এন্ড গং-এর হাতে ছেড়ে দিয়েছি হাসি

=============
"আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে"

শিক্ষানবিস এর ছবি

একেবারে ছেড়ে দিয়েন না। কি করতে আবার কি করে ফেলি। তবে কাজ শুরু করচি শীঘ্রই। এ মাসে বেশ কিছু নির্বাচিত নিবন্ধ করে ফেলা দরকার। কারণ "এ মাসের নির্বাচিত" নিবন্ধের ভাণ্ডার খালি হয়ে গেছে।

তানভীর এর ছবি

ফিঞ্চের বাংলাদেশের জন্য এ মৌসুমের (মার্চ-মে, ২০০৮) পূর্বাভাস দেখা যাবে এই লিংকে

আগামী কয়েকদিনের পূর্বাভাসঃ

April 3 no risk of high end severe storms
April 4 no risk of high end severe storms April 5-11 no risk of high end severe storms

updated on Apr 02 2008

=============
"আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে"

তানভীর এর ছবি

আপনাকেও পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসলে উদ্দেশ্য এটাই। ভাব নিয়ে বন্ধুমহলে এ বিষয়ে বেশী বেশী জ্ঞান বিতরণ করুন হাসি । যদি প্রয়োজনের মূহুর্তে কারো কাজে লেগে যায়, তবেই এ লেখা সার্থক। আমাদের দেশে ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ও লঞ্চডুবিতে যত লোক মারা যায়, আর কোন দেশে এমন হয় না! অথচ এ সময়টা একটু সাবধানে চললেই এসব অমূল্য জীবন রক্ষা পায়।

=============
"আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে"

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সাইক্লোন-টর্নেডোর পার্থক্য আসলেই জানতাম না। মনে পড়ে গেলো, বাল্যকালে 'সমুদ্রে সাইক্লোন' নামে একটি লেখা পাঠ্য ছিলো। এখন মনে হচ্ছে নামকরণটি ঠিক শুদ্ধ ছিলো না - সাইক্লোন যেহেতু শুধু সমুদ্রেই সম্ভব।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দুর্দান্ত এর ছবি

সুন্দর সিরিজ। বেশ কিছু নতুন তথ্য পেলাম।
আপনি নিশ্চই NOAA র পৃষ্টপোষকতায় করা ভেচি আর সডেনের কাজটা দেখেছেন। তারা বলছেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়লে পৃথিবীর ঝড়টড় নাকি কমে আসবে। আসলেই তাই?

তানভীর এর ছবি

এই কাজটা ওভাররেটেড। তাঁরা যেটা বলছেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলে পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে যেমন আটলান্টিক এলাকায় ভার্টিকাল উইন্ড শিয়ার বাড়বে। এটা বাড়লে সাধারণত যেটা হয় তা ঘূর্ণিঝড় ফর্মেশনে বাধা দেয় (সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়লেও ভার্টিকাল উইন্ড শিয়ার বেশী থাকলে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে না)। তাই তারা ধারণা করছেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলে সমুদ্রে ঝড়-টড় এগুলো কমে আসবে।

কিন্তু সমস্যা হল এই উইন্ড শিয়ার কিন্তু পৃথিবীর সব ক্রান্তীয় অঞ্চলে বাড়বে না। আমি যে প্লট দেখেছি তাতে আটলান্টিক এলাকায় এটা বাড়বে দেখানো হলেও ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় কিন্তু কম। তার মানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য এই রিসার্চ অনুসারেই আমাদের এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আরো বৃদ্ধি পাবার কথা। ওভাররেটেড বললাম এই কারণে, এদের মডেল অনুযায়ী যেহেতু আটলান্টিক এলাকায় উইন্ড শিয়ার বাড়বে দেখানো গেছে তাই নোয়া এবং সরকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান লাফালাফি শুরু করেছে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলে ঝড় কমে আসবে (এদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র মানেই পুরো পৃথিবী এবং আমেরিকান সরকার কার্যত গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে কিছু আছে তা স্বীকার করে না)।

আমার গুরু এমআইটির অধ্যাপক কেরি ইমানুয়েল এই উইন্ড শিয়ার বাড়লে সমুদ্রে ঝড়-ঝাপ্টা কমে আসবে এই ধারণার একদম বিপক্ষে। তিনি তার সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন সমুদ্রে তাপমাত্রা বাড়লে তা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিমাত্রা শতকরা ৬৫ ভাগ বৃদ্ধি করে। অপরদিকে উইন্ড শিয়ার বাড়লে তা এই শক্তিমাত্রা মাত্র ১২ ভাগ হ্রাস করে (স্মৃতি থেকে বলছি; সংখ্যা অল্প একটু এদিক ওদিক হতে পারে)। কাজেই তাপমাত্রা ও উইন্ড শিয়ারের নেট এফেক্টে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলে সমুদ্রে ঝড় এবং এর শক্তিমত্তা বাড়বে বই কমবে না। যদিও এ বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসে নি।

পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

= = = = = = = = = = =
তখন কি শুধু পৃথিবীতে ছিল রং,
নাকি ছিল তারা আমাদেরও চেতনায়;
সে হৃদয় আজ রিক্ত হয়েছে যেই,
পৃথিবীতে দেখ কোনখানে রং নেই।

দ্রোহী (মডুরামেরা বেশী মন্তব্য করতে দেয় না) এর ছবি

মাস দেড়েক আগে আলা-ফাকিং-বামায় একটা কঠঠিন টর্নেডো ওয়ার্ণিং দিল!!

আশেপাশের সবাই দেখলাম হুড়াহুড়ি করে ইউনিভার্সিটিতে চলে গেল শেল্টার নিতে। বাংলাদেশে থাকতে কত ঝড়-ঝাপ্টা রাস্তায় থেকেই মোকাবেলা করলাম। সুতারাং শেল্টার নেবার কথা ভাবতেই লজ্জা লাগা শুরু হল। এইটুকু ঝড়ে আবার শেল্টার! লুঙ্গির আবার চেইন!! অতএব, যখন টর্নেডো হচ্ছিল আমরা তখন সালসা দিয়ে পট্যাটো চিপস্ খাচ্ছিলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।