ঝড়ো ব্লগ ০০১ - বাংলাদেশের ঝড়

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৩/২০০৮ - ২:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুরুতেই বলে রাখি এটা ঝড়-তুফান বিষয়ক একটি পরীক্ষামূলক সিরিজ। হিমুর প্ররোচনায় বিগত কিছুদিন থেকেই এ বিষয়ে লেখার কথা ভাবছি। ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে ‘টর্নেডো ও কালবৈশাখী মৌসুম’ শুরু হওয়ার আগেই এর কিছু পর্ব ছাড়ব। কিন্তু পত্রিকায় দেখছি ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে ঘূর্নিঝড় সিডরের তান্ডবও আমরা দেখেছি। মূলত বাংলাদেশের ঝড় নিয়েই এ সিরিজ সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসখ্যাত পৃথিবীর বিভিন্ন ঝড়, দুর্যোগ নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে। তবে যেহেতু পরীক্ষামূলক, তাই এর কোনকিছু ছাড়াই সিরিজটির অকালমৃত্যুও হতে পারে হো হো হো । সেজন্য মূলত আমার অলসতাই দায়ী থাকবে।

ঝড়-তুফান ইত্যাদিকে আমরা সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ (natural disaster) হিসেবে চিহ্নিত করি, যদিও সংজ্ঞামতে এটা ঠিক নয়। একটা ঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাও হতে পারে। প্রকৃতিতে যখন একটি ঝড় সৃষ্টি হয়, তখন মহাবিশ্বের আর দশটি প্রাকৃতিক ঘটনার মতই এটি একটি প্রাকৃতিক বা নৈসর্গিক ঘটনা (natural phenomenon)। এরপর এটিকে বলা যেতে পারে একটি প্রাকৃতিক আপদ (natural hazard)। কখন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, প্রাকৃতিক আপদে পরিণত হয়? উত্তর হচ্ছে, যখন মানুষের জীবন ও সম্পদ এর দ্বারা হুমকি বা ঝুঁকির (risk) মুখে থাকে। একটা উদাহরণ দেই। আপনি আকাশে উল্কা খসে পড়তে দেখলেন। আপনার চিত্তচাঞ্চল্য ঘটল, খুশী হয়ে বললেন, বাহ কি সুন্দর! এই উল্কা পতনের ঘটনা, যা দেখে আপনি আনন্দিত হলেন- একটি নৈসর্গিক বা প্রাকৃতিক ঘটনা। হঠাৎ খবর পেলেন বায়ুমন্ডল ভেদ করে এই উল্কা ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। আপনি নিজের জান-মাল নিয়ে চিন্তিত হলেন এবং প্রাকৃতিক ঘটনাটি তখনই প্রাকৃতিক আপদে পরিণত হল। চিন্তা করে দেখুন পৃথিবীর সব মানুষ যদি অন্য কোন গ্রহে থাকে এবং পৃথিবীতে যদি আগের মতই ঝড়, সাইক্লোন, হারিকেন ইত্যাদি হতে থাকে তবে এগুলোকে কি প্রাকৃতিক আপদ বা দুর্যোগ বলা হবে? অবশ্যই না, এগুলো তখন হবে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ঘটনা যেহেতু কোন মানুষ ঝুঁকির মধ্যে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি সমুদ্রে কোন হারিকেন সৃষ্টি হলে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য এক ধরনের বিমান পাঠানো হয়। এগুলোকে বলে ‘হারিকেন হান্টার্স’। আশ্চর্যজনকভাবে, ঘূর্নিঝড় কেন্দ্রের আবহাওয়া থাকে কিন্তু খুব শান্ত ও ঝকঝকে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে এই বিমানগুলো ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে তাৎক্ষণিক উপাত্ত (real time data) সংগ্রহ করতে autoথাকে। বাইরের পৃথিবীর যখন আতংকে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, তখন এই ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে থাকা এই বিমানে আরোহী অনেকের মতে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের শান্ত, সমাহিত দৃশ্য, এত সুন্দর মেঘের বলয়ের চাইতে সুন্দর কোন ঘটনা এরা জীবনে দেখে নি (ছবি- হারিকেন হান্টার থেকে তোলা ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার কেন্দ্রের চারপাশের মেঘবলয়, সৌজন্য-উইকিপিডিয়া)। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে থেকেও এদের জন্য এটা তাই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যেহেতু তারা এটা থেকে কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই, কিন্তু অন্যদের জন্য এটি প্রাকৃতিক আপদ। উদাহরণটা মনে হয় ঠিক হল না। তবে আশা করি যা বুঝাতে চেয়েছি, বুঝতে পেরেছেন। প্রাকৃতিক ঘটনা এবং আপদ তো হলই, তাহলে এগুলোকে কখন আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলব? বলব তখন, যখন ঝড়-তুফান সত্যি সত্যি আঘাত হেনে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি করবে। যত বেশী ক্ষয়-ক্ষতি করবে, দুর্যোগ তত বেশী হবে। প্রাকৃতিক আপদ এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে পার্থক্য আসলে সম্ভাবনার। প্রাকৃতিক আপদ যখন হয়, তখন এটি থেকে দুর্যোগ হতে পারে এরকম একটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সম্ভাবনা পর্যায়ে থাকে, ততক্ষণ আমরা এটিকে বলি প্রাকৃতিক আপদ। যখন সম্ভাবনাটি সত্যি হয়ে যায় অর্থাৎ মানুষ এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয় তখন এটি পরিণত হয় প্রাকৃতিক দূর্যোগে।

সাইক্লোন সিডরের কথাই বলি। সিডর যখন সৃষ্টি হয়েছে তখন এটি ছিল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়গুলো (সাইক্লোন/হারিকেন) আসলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে যে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়, তা মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কাজেই ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন এসব অভিশাপ নয়, বরং বলা যায় আশীর্বাদ। বরং মানুষ তার কাজ-কর্মের মাধ্যমে যত বেশী প্রকৃতিকে উত্তপ্ত করবে, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য এসব শক্তিশালী ঘূর্নিঝড় বেশী বেশী সৃষ্টি হবার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে, যেটা নিয়ে ইদানীং বিজ্ঞানী মহলে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে (ঘূর্নিঝড় ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন)। যাই হোক সিডর যখন শক্তিশালী হয়ে ভূ-খন্ড অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভারত উপকূল অভিমুখে আসার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল, তখন এটি পরিণত হয়েছে প্রাকৃতিক আপদে এবং ১৫ই নভেম্বর, ২০০৭ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি করার ফলে এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি করেছিল। যদি সিডর উপকূলে আঘাত না হেনে সমুদ্রে মিলিয়ে যেত, তবে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোত না। আমরা বলতাম প্রাকৃতিক আপদটি কোন দুর্যোগ সৃষ্টি ছাড়াই বিদায় নিয়েছে। বছরে কিন্তু এরকম অসংখ্য সাইক্লোন সমুদ্রে সৃষ্টি হয়ে সমুদ্রেই মিলিয়ে যায়।

সিরিজটা টর্নেডো, কালবৈশাখী, শিলাঝড় দিয়ে শুরু করব ভেবেছিলাম। প্রাকৃতিক ঘটনা, আপদ, দুর্যোগ ইত্যাদির ব্যাখা এবং মাঝখানে সাইক্লোনের কথা বলে হয়ত আরো কনফিউজড করে দিলাম। বাংলাদেশের ঝড় বা সব ঝড়কেই উৎস হিসেবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- স্থলভাগের ঝড় যেমন টর্নেডো, কালবৈশাখি, শিলাঝড় ইত্যাদি এবং সামুদ্রিক ঝড় যেমন ঘূর্নিঝড় ইংরেজিতে সাইক্লোন বা হারিকেন বা টাইফুন (নামকরণ নিয়ে ব্যাখা পরবর্তী কোন এক পর্বে দেব)। ঘূর্নিঝড় বলতে সাধারণভাবে ক্রান্তীয় (tropical) অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ই বুঝায় অর্থাৎ কর্কট ও মকর ক্রান্তির মধ্যবর্তী অঞ্চলের সমুদ্রের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়। এ অঞ্চলে বা এর কাছাকাছি অবস্থিত বিভিন্ন দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদির উপকূলভাগ তাই ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের বাইরে এবং মেরু অঞ্চলেও দুর্বল প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কেন এগুলো দুর্বল এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় কেন এত শক্তিশালী- এগুলোর ব্যাখাও পরের কোন পর্বে দেব। তবে ঘূর্ণিঝড় বলতে আমি সাধারণভাবে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ই বুঝি এবং এ সিরিজেও তাই ব্যবহার করা হবে।

আগামী পর্বে বিস্তারিত টর্নেডো, কালবৈশাখী এবং এসময়ে কি করণীয় ইত্যাদি নিয়ে লেখার আশা রাখি এবং এরপর আশা রাখি সামুদ্রিক ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বয়ান করার। বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে এই সময়টাকে টর্নেডো মৌসুম বলা হয়। আমরা এসময় প্রচুর কালবৈশাখী ও শিলাঝড়ও হতে দেখি। মজার ব্যাপার হচ্ছে টর্নেডো, কালবৈশাখী, শিলাঝড় ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও, এগুলো হবার প্রাথমিক কারণ কিন্তু একই এবং একটি বিশেষ সময়েই অর্থাৎ মার্চ-মে এই সময়টাতেই বাংলাদেশে এগুলোর প্রকোপ বেশী দেখা যায়। কিন্তু কেন? থাকছে আগামী পর্বে। এছাড়া বাংলাদেশের দ্বিখন্ডিত ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম খন্ড অর্থাৎ বর্ষা-পূর্ব ঘূর্ণিঝড় মৌসুমও শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখাও থাকবে সিরিজের আগামী পর্বগুলিতে।

আপদ নিয়ে লিখতে লিখতে আপদ এবং বিপদ নিয়ে বঙ্কিম চন্দ্রের বিখ্যাত একটি ঘটনা মনে পড়ল। প্রখ্যাত সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দু’জন স্মাতকের একজন এবং ব্রিটিশ রাজের একজন ডাকসাইটে সরকারী কর্মকর্তা। কোন এক পরীক্ষায় (সিভিল সার্ভিস নাকি বিশ্ববিদ্যালয় এখন মনে নেই) তার প্রশ্নকর্তা ছিলেন একজন ইংরেজ সাহেব, পরীক্ষার বিষয় বাংলা! ইংরেজের প্রশ্ন ছিল, ‘হোয়াট ইজ দ্য ডিফারেন্স বিটুইন বিপড এন্ড আপড?’ বঙ্কিম পড়লেন বিপাকে। খানিক ভেবে উত্তর দিলেন অনেকটা এইরকম-‘মনে কর, তুমি ঝকঝকে দিন দেখে নদীতে স্টীমার চেপে বসলে। হঠাৎ আকাশ ছেয়ে গেল মেঘে, ঝড় শুরু হল, স্টীমার দুলতে শুরু করল, এটা হল বিপদ। আর এই যে আমি বাঙ্গালীর ছেলে হয়ে তোমার মত ইংরেজ সাহেবের কাছে বাংলা পরীক্ষা দিচ্ছি, এটাকে বলে আপদ’। উত্তরে ইংরেজ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কিনা জানা যায় নি, তবে বঙ্কিম পাশ করেছিলেন!


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আশা করছি এইসব ঝড়তুফান সিরিজের শেষ দেখে ছাড়বেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাতুল এর ছবি

আপদ বিপদের এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাছে আমাদের উপকূলের মানুষেরা একটু বেশীই অসহায়।
স্বল্প বাজেটের মাঝে এত বড় বড় প্রতিকুল দুর্যোগগুলিকে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করতে পারি?

তানভীর এর ছবি

সরকার এবং জনসাধারণ আন্তরিক হলে কিন্তু স্বল্প বাজেটেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা সম্ভব। সিডরও সেটা দেখিয়েছে। সুন্দরবনের মত উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী থাকায় কিন্তু এবার ক্ষয়-ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। পুরো উপকূলজুড়ে এরকম বেষ্টনী গড়ে তোলা কিন্তু তেমন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এখন কী আর বন তৈরীর জন্য মানুষ এসব দখল করা জমি ছেড়ে দেবে?

অর্থনীতি উন্নত হতে থাকলে যখন সাধারণ মানুষ শক্ত ঘর-বাড়িতে থাকা শুরু করবে, ঝড়-তুফানে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাও তখন আপনা-আপনি কিছুটা কমে আসবে। দালানকোঠা বাদে বেশীর ভাগ ঘর-বাড়িই এখন দুর্বল অবকাঠামোর, যেগুলো কোন বিল্ডিং কোডের মধ্যে পড়ে না। সাধারণ ঝড়ই এগুলো মোকাবেলা করতে পারে না, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো আরো পরের কথা। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের চাইতে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে বেশী মানুষ মারা যায়। জলোচ্ছ্বাস সমুদ্রেই প্রতিহত করার অনেক আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, যদিও প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ। এসব যতদিন সম্ভব না হবে, দুর্যোগের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে অতি দ্রুত লোকজন সরিয়ে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চারটি ধাপ- প্রস্তুতি, প্রশমণ, উদ্ধার ও ত্রাণ, পুনর্বাসন। পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা থাকলে স্বল্প বাজেট নিয়েও এ চারটি ধাপে অনেক কাজ করা সম্ভব, যেটা দুর্যোগ অনেক কমিয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক আপদ আসন্ন হলে আমরা শুধু তৃতীয় ধাপটি দেখি- উদ্ধার এবং ত্রাণ বিতরণ। বাকী তিন ধাপের কখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় আমরা আর কী আশা করতে পারি!

হিমু এর ছবি

তানভীর ভাই, আমার কিছু জিজ্ঞাসা ছিলো।

কক্সবাজার উপকূল (কক্সবাজার থেকে শাহপুরীর দ্বীপ পর্যন্তই ধরা যাক) এর পেছনে, অর্থাৎ পূর্বদিকে আরাকান রেঞ্জ রয়েছে। এই পাহাড়সারি কি পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থেকে আগত ঘূর্ণিঝড়কে কোনভাবে প্রভাবিত করে না? রাফনেস ফ্যাক্টরের দিকে যদি তাকাই, এই পাহাড় তো খুব দ্রুত ঝড়কে মন্থর করে দেয়ার কথা।

আর অগভীর ব্যাদিমেট্রির সাথে ঝড়ের সম্পর্কের ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝিনি। আপনি যদি পরবর্তী কোন পর্বে জলস্তরের তাপমাত্রা আর পানির গভীরতার সাথে ঝড়ের নির্মাণপর্বটিকে একটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করতেন, তাহলে আমি অন্তত খুব উপকৃত হতাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানভীর এর ছবি

ঘূর্ণিঝড়ের পাওয়ার হাউস হল সমুদ্র। সমুদ্রের তাপ থেকেই ঘূর্ণিঝড় শক্তি সঞ্চয় করে। যে মূহুর্তে ঝড় ভূমিতে উঠে যায়, তখন থেকেই এর শক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে, কারণ শক্তির উৎস থেকে এটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া ভূমির সাথে ঘর্ষণ ফ্যাক্টর তো আছেই। কাজেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আগত ঘূর্ণিঝড় যদি আরাকান রেঞ্জ অভিমুখী হয় তবে এতে আঘাত প্রাপ্ত হলে অবশ্যই দুর্বল হয়ে যাবার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বেশীরভাগ ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণ-পূর্বে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি সৃষ্টি হয়ে (নীচে ছবি) একদম ফ্রি রাইডের মত উত্তর-পশ্চিম নাক বরাবর খুলনা-বরিশাল, না হলে কিছুদূর উত্তর-পশ্চিমে এসে তারপর পূর্ব দিকে বেঁকে গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের সোজা এসে তারপর বাঁক নেয়ার এ বৈশিষ্ট্যকে বলে recurvature. এগুলো সোজাসুজি আসতে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে আরো বেশী শক্তিশালী হয়।

auto

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হল সমুদ্রের গভীরতা বা উপকূলের মহীসোপানের সাথে ঝড়ের নয়, ঝড় থেকে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে। গভীরতা যত কম হবে জলোচ্ছ্বাসের উচচতা তত বেশী হবে। নীচের এনিমেশন দুটিতে এটা বোঝা আরো সহজ হবে।
auto

auto

বাংলাদেশের উপকূল হল প্রথম চিত্রটার মত, তাই জলোচ্ছ্বাসের উচচতা এখানে বেশী হয়।

অন্য প্রশ্নের আংশিক উত্তর হল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে হলে প্রকৃতির কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে একটা হল সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ন্যূনতম ২৬.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকতে হয়। এর কম তাপমাত্রায় সমুদ্রে ঘূর্নিঝড় সৃষ্টি হতে পারে না এবং এই তাপমাত্রা ন্যূনতম ৫০ মিটার অবধি থাকতে হয়। এরকম আরো কিছু শর্ত আছে; ঘূর্ণিঝড় পর্বে বিস্তারিত লিখব আশা করছি (যদিও আমি এগুলি বাদ দিতে চাই, কারণ এটা আসলে নাদানদের ঝড়-তুফান বিষয়ক বিজ্ঞান সিরিজ, হিমুর মত প্যাচানো কোশ্চেনওয়ালাদের জন্য না দেঁতো হাসি )

হিমু এর ছবি

আমি কিছু কাজ করতে যাচ্ছি অচিরেই। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ব্যাপক তুলা ধুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছি। এই ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কাম্য।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানভীর এর ছবি

দেঁতো হাসি

রাতুল এর ছবি

আমার দেশের বাড়ী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানায়। এবার সিডরে ব্যাপকভাবে ক্ষক্তিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম। আমি যেটা দেখেছি সেটা হলো আমার এলাকার চারিদিকে যে বাধ আছে তা স্বাধীনতার আগে তৈ্রী। পরে তেমন কোনই সংস্কার হয়নি।
এবং যা ঘটার তাই ঘটেছে।
যারা বাধের বাইরে ছিলেন তারা তো এক ধাক্কায় ভেসে গেছেন। যেসব যায়গায় বাধ ভেংগে গিয়েছে সেখানে প্রানহানি আরও বেশী।
সামনে আবার সিডর আসতেই পারে। কিন্তু তার পুর্বপ্রস্তুতি আমাদের খুবই কম। সুন্দরবনের বিশাল ভুমিকা আছে কিন্তু ভেবে দেখুন সুন্দরবনের অবস্হানে খুব কম লোক বাস করে।সুতরাং তা আংশিক সমাধান হতে পারে যা খুব বেশি ব্যয়সাপেক্ষ।

তানভীর এর ছবি

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ঘনবসতি কম রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ নয় কী?

রাগিব এর ছবি

তানভীর ভাই,

এটা একটু বলুন, স্মরণতাতিত কালের লিখিতি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম ১০টি ঝড়ের ৬টিই কেনো বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে? আমি সম্ভবত এই তালিকাটা গিনেস রেকর্ডস অথবা অন্য কোনো লিস্ট বিষয়ক বইতে দেখলাম। সেই ১৬ শতক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ১০টা ভয়াবহতম ঝড়ের ৬টাই এই এলাকাতে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের ফানেলাকৃতির গঠনই কি এর কারণ?

আরেকটা প্রশ্ন হলো, আপনার মহিসোপানের কমেন্টটা দেখলাম ... জলোচ্ছাস এতে বেশি হয়, কিন্তু ২০০৪ এর সেই ভয়াল সুনামি ভারত/শ্রীলংকাতে আঘাত করলেও বাংলাদেশে আঘাত হানেনি কেনো?
----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

তানভীর এর ছবি

ভয়াবহতম আসলে ধ্বংসের বিচারে, শক্তির বিচারে না। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছাড়াও মূলত ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের চাপ (central pressure) অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বিচার করা হয়। যত কম চাপ, তত বেশী শক্তিশালী। উইকিপিডিয়াতেই পৃথিবীর শক্তিশালী ঝড়গুলোর একটা তালিকা দেয়া আছে। সে বিচারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুনগুলোই হয় বেশী শক্তিশালী, তারপর আটলান্টিকের হারিকেন। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়গুলোকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল বলতে হবে। সিডরে সর্বনিম্ন সেন্ট্রাল প্রেশার ছিল মাত্র ৯৪৪ মিলি বার, ১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা একটু সম্মানজনক ৮৯৮ এমবি। পক্ষান্তরে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে ১৯৭৯ সালে সৃষ্ট টাইফুন টিপ যার সর্বনিম্ন সেন্ট্রাল প্রেশার ছিল ৮৭০ এম বি। আটলান্টিকের সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন ২০০৫ সালে সৃষ্ট উইলমা, যার প্রেশার ৮৮২ এম বি। আমরা উইলমার নাম তেমন না শুনলেও ক্ষয় ক্ষতির হিসেবে এটা যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় মহাখরুচে ঝড় (ক্যাটরিনা এবং এন্ড্রুর পর)।

এখন বাংলাদেশের ঝড়গুলো তুলনামূলকভাবে দুর্বল হলেও এত হতাহতের কারণ হচ্ছে ১। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাই দুর্যোগের সাথে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাও (coping capacity) কম; যে যত সবল তার নিরাপত্তা তত বেশী ২। অধিক জনসংখ্যা ৩। উপকূলে মহিসোপান অগভীর হওয়ায় জলোচ্ছ্বাসের উচচতা বেশী এবং এ থেকে নিহতের সংখ্যাও বেশী। ৪। ভূ-প্রকৃতি তথা ফানেল আকৃতিরও ভূমিকা রয়েছে, অন্য এলাকায় সাইক্লোন হলে সেটা অনেক দিক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে, ফানেলে একবার ঢুকে পড়লে আঘাত হানা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

সুনামি এবং ঝড় থেকে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একটা সমুদ্র তলদেশে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট, অন্যটা বায়ুপ্রবাহ থেকে। ঘূর্ণিঝড় মূলত সমুদ্রের উপরিভাগের পানিকে প্রভাবিত করে আর সুনামি করে সমুদ্র তলদেশকে। সুনামি বিষয়ে খুব বেশী জানি না, তবে আমার ধারণা এই দুই ক্ষেত্রেই সমুদ্র অগভীর থাকলে ঢেউ অনেক বেশী হবার কথা। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হল এর মহিসোপান অগভীর হলেও এটা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। মহিসোপান অগভীর হলে ঢেউর উচচতা বেশী হলেও কম্পনের শক্তি কমে আসে। তাই বিস্তৃত অগভীর মহিসোপান থাকলে উপকূলে সুনামির শক্তি কম অনুভূত হবার কথা। তাই হয়ত অনেকে বলছেন বাংলাদেশে সুনামিতে ক্ষয়-ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম।

২০০৪ সালের সুনামিতে বাংলাদেশ কেন আক্রান্ত হয় নি, তার কারণ অবশ্য ভিন্ন। এই সুনামি যে ভূকম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল তার ফাটল ছিল উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। এখন কোন ফাটল যেদিক বরাবর থাকে, তার এপিসেন্টার থেকে ভূ-কম্পন উলম্ব বরাবর ছড়িয়ে পড়ে এবং সুনামিও সেদিকে আঘাত হানে। ২০০৪ সুনামির ভূ-কম্পনের ফাটল উত্তর-দক্ষিণ বরারর থাকায় এর কম্পন ছড়িয়ে পড়েছিল এপিসেন্টার থেকে লম্ব অর্থাৎ পশ্চিম বরাবর। ফলে পশ্চিমে অবস্থিত অনেক দূরের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে আঘাত হানলেও বাংলাদেশ উত্তরে অবস্থান করায় ভাগ্যক্রমে এ পর্যন্ত কম্পন এসে পৌঁছায় নি। আর মহিসোপান অনেক দূর বিস্তৃত থাকায় হয়ত কম্পন তেমন একটা বোঝা যায় নি। উইকির নীচের ছবিটা থেকে সুনামির এই কম্পনের দিক বোঝা যাবে। (এ ছবিটা আংশিক যদিও, তবু বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমে থাকার কারণে সুনামি ভারত/শ্রীলংকায় আঘাত হেনেছে এবং বাংলাদেশ কাছাকাছি থাকলেও শুধুমাত্র উত্তরে ফাটল বরাবর অবস্থান করায় আঘাত হানে নি)
auto

রাগিব এর ছবি

ধন্যবাদ, চমৎকার ব্যাখ্যার জন্য।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

দ্রোহী (কোটামুক্ত মন্তব্য আন্দোলনের উদ্দ্যোক্তা) এর ছবি

হুম ঠিকাছে। আপনে ঝড়-তুফান নিয়ে লেখা শুরু করেছেন। আমি কি ভুমিকম্প নিয়ে কিছু লেখা ছাড়ুম নাকি?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হায়, পৃথিবীর কতোকিছু বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও ধারণ করি না।

চলুক। নাদান-পাঠক হিসেবে হাজির থাকবো। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তানভীর এর ছবি

হাসি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করলে নিজের জান বাঁচানোর জন্যও আসলে এসব বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান জরুরী; অন্তত কি করণীয় সে সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশে বজ্রপাতে, ঝড়ে লঞ্চডুবিতে প্রচুর লোক মারা যায়, বলা যায় ঝড় সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানের অভাবেই। ডালাসও কিন্তু টর্নেডোপ্রবণ এলাকা। আচমকা টর্নেডোর কবলে পড়লে কি করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে আশা করি পরের পর্বে লিখব।

শিক্ষানবিস এর ছবি

উইকিপিডিয়াতে আপনার টর্নেডো নিবন্ধের অগ্রগতি অনেক দিন থেকেই দেখছি। চমৎকার এগুচ্ছে সেটি।
ব্লগটা পড়েও ভাল লাগল। আশাকরি চালিয়ে যাবেন এবং সেই সাথে উইকির নিবন্ধটা নির্বাচিত করার উপযোগী করে ফেলবেন।

---------------------------------
মুহাম্মদ

তানভীর এর ছবি

ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একটা ছুটি আছে। ছুটির মধ্যে নিবন্ধটা শেষ করে ফেলতে এবং সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব নামাতে চেষ্টা করব।

অতিথি লেখক এর ছবি

তানভীর ভাই,

অনেক অনেক তথ্য ভিত্তিক লেখা। এই বিষয়ে প্রথম এত গভীরভাবে ব্যাখা্যা পেলাম। আমরা মহিসোপানের কারনে তাহলে উপকৃত এবং অপকৃত দুটোই হয়ে থাকি (যদি ঠিক বুঝে থাকি)??

কল্পনা আক্তার

kalponaakter@hotmail.com
......................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

তানভীর এর ছবি

ধন্যবাদ। ঠিক বুঝেছেন। ছবি সহকারে নীচে আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখা করলাম।

ঢেউ হচ্ছে আসলে পানিতে শক্তির সঞ্চালন। ডানের ছবিটি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সমুদ্রে শক্তি সঞ্চালন, বামেরটি সুনামির। বৃত্তের মত বুদবুদগুলি দিয়ে শক্তির পরিমাণ বোঝানো হচ্ছে, বৃত্তের গাঢ় নীল অংশটি হচ্ছে ঢেউয়ের উচচতা। ঘূর্ণিঝড়ে বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রের উপরিভাগের অংশকে মূলত প্রবাহিত করে, ডানের ছবিতে দেখছেন কেবল উপরিভাগ দিয়ে শক্তি সঞ্চালিত হচ্ছে। কাজেই সমুদ্রের উপরিভাগ যত উপরে থাকে অর্থাৎ সমুদ্র যত অগভীর হয়, ঘূর্ণিঝড় থেকে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসও উপকূলে বেশী উচচতায় আসে। আর উপকূল যদি বাংলাদেশের মত প্রায় সমুদ্র সমতলে থাকে তবে তো কথাই নেই।

অন্যদিকে সুনামি হয় ভূকম্পনের ফলে এবং সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে শক্তি সঞ্চালিত হয়। বামের ছবিতে দেখছেন সমুদ্র যত গভীর, বুদবুদের সাইজ বড় তথা শক্তির পরিমাণও বেশী, কিন্তু ঢেউয়ের উচচতা কম। এজন্য মাঝ-সমুদ্রে যেখানে সমুদ্রের গভীরতা অনেক বেশী, সেখানে জাহাজের নীচ দিয়ে সুনামি গেলেও টের পাওয়া যায় না, কারণ ঢেউ বলতে গেলে নাই বললেই চলে। কিন্তু উপকূলের দিকে যেখানে সমুদ্রের গভীরতা কমতে থাকে, সেখানে বুদবুদের সাইজ ছোট হয়ে গেলেও অর্থাৎ শক্তির পরিমাণ কমে গেলেও ঢেউয়ের উচচতা বেড়ে যায় (গাঢ় নীল অংশটি লক্ষ্য করুন)। এজন্যই বিগত সুনামিতে আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশের উপকূলে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে।

এখন বাংলাদেশের মহিসোপান যদি শুধু অগভীর হত, কিন্তু বিস্তৃত না হত তাহলে আমরা হয়ত সুনামির ক্ষেত্রে অপকৃত হতাম। কারণ, আগের ব্যাখায় বলেছি অগভীর অংশে শক্তি কমে আসলেও ঢেউয়ের উচচতা বেড়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মহিসোপান শুধু অগভীর নয়, অগভীরভাবে অনেক দূর বিস্তৃত। তাই সুনামি হলে মহিসোপানের কাছে বুদবুদের আকার ছোট হতে হতে অর্থাৎ শক্তি কমতে কমতে ঢেউয়ের উচচতাও একসময় ছোট হয়ে আসার কথা। তাই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে আমাদের মহিসোপান ক্ষতিকারক হলেও, সুনামির ক্ষেত্রে অনেকটা আশীর্বাদ। তবে যেহেতু ২০০৪-এর সুনামি বাংলাদেশ বরাবর আসে নি, তাই বাংলাদেশে সুনামির ক্ষেত্রে এ তত্ত্ব একেবারে পরীক্ষিত এমনটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

উদাস এর ছবি

চমতকার! অনেক কিছু জানা গেল। বিশেষ করে ছবিগুলো আসাধারন। অনেক জটিল জিনিষের সহজ ব্যখ্যা পেলাম। আমি USA তে দুটি বড় ঝড় আইভান এবং ক্যাটরিনা বেশ কাছে থেকে দেখেছি। দুটোতই আমার শহরের লোকজন প্রায় অর্ধেকই শহর ছেড়ে পালিয়েছিল। ক্যাটরিনা এর প্রথম ধাক্কা কেটে যাবার পর আমরা ঝড়ের মধ্যেই বাইরে বের হয়ে পুলিশের ঝাড়ি খেয়েছিলাম, কারফিউ ছিল, ঘরে না গেলে শ্রীঘরে নিয়ে যাবে বলেছিল। মোটকথা এদের যা ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় সবই অর্থনৈতিক, মানুষ হয়ত মারা যায় হাতে গোনা কয়েকজন।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আরো বিস্তারত ভাবে বোঝনানোর জন্য হাসি

কল্পনা আক্তার

...........................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

শামীম এর ছবি

মন্তব্য-আলোচনাটাও দারুন আকর্ষনীয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।