প্রবাস প্যাচালী - ০৪

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: শনি, ১৮/১০/২০০৮ - ৩:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কলেজ স্টেশনের দিনলিপি

‘ওয়েলকাম টু এগিল্যান্ড’।

আমার রুম দেখিয়ে দিয়ে সেক্রেটারি স্বাগতম জানাল।

সেপ্টেম্বরে ঝড়ের পর থেকে মেরিন ক্যাম্পাসের আমরা প্রায় ২০০০ সি এগি (Sea Aggies) এখন মূল এগিল্যান্ড কলেজ স্টেশনে। এগিল্যান্ড আরো একটা আছে, মধ্যপ্রাচ্যে- টেক্সাস এ এন্ড এম এট কাতার।

কলেজ স্টেশন মূল শহর হলেও পাশাপাশি আরেকটা শহর আছে- ব্রায়ান (Bryan) নাম। আমাদের যখন ইউনিভার্সিটি থেকে বাসা দেয়া হচ্ছিল, তখন জিজ্ঞেস করল- ব্রায়ান থাকতে চাও, নাকি কলেজ স্টেশনে। আমি ভাবলাম ব্রায়ান হয়তো দূরে কোথাও, প্রতিদিন হাইওয়ে দিয়ে ড্রাইভ করে আসা লাগবে। মাথা নেড়ে বললাম, কলেজ স্টেশনেই থাকতে চাই। পরে দেখি, কলেজ স্টেশনে ক্যাম্পাস যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক সেখান থেকেই ব্রায়ান শহরটা শুরু আর আমাদের বাসা পড়েছে কলেজ স্টেশনের অন্য প্রান্তে। ধূর, ব্রায়ানে থাকলেই ভালো হতো।

আমেরিকার সব ছোট শহরগুলোতে প্রধান একটা রাস্তা থাকে, যার দু’ধারেই মোটামুটি পুরো শহর গড়ে ওঠে। সাধারণত এগুলোর নাম হয় ব্রডওয়ে, মেইন স্ট্রিট বা এজাতীয়। এখানে এই রাস্তার নাম টেক্সাস এভিনিউ। এই টেক্সাস এভিনিউর পাশেই সব ঝকঝকে দোকান-পাট, টেক্সাস এ এন্ড এম-এর ক্যাম্পাস ইত্যাদি ইত্যাদি। রাস্তায় এক চক্কর দিলেই কলেজ স্টেশন, ব্রায়ান দেখা শেষ, যদিও ব্রায়ানের ওদিকটায় এখনো তেমন যাওয়া হয় নি।

আমার রুম পেয়েছি এডমিন বিল্ডিং-এ, একেবারে ভাইস-প্রেসিডেন্টের অফিসের পাশে। এর আগে কখনো এডমিনে আমার অফিস ছিলো না। এখন আমি বুঝতে পারছি এডমিনের সেক্রেটারীগুলো কেন এত থলথলে মোটা হয়। প্রতিদিন দশটা নাগাদ ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে নানা সুস্বাদু খাবার কিচেনে আসে, যত পারো খাও। এখানে সবাই দেখি তাদের কিচেন নিয়ে খুব গর্বিত! আমার সাথে যারই পরিচয় হয়, সে-ই বলে ‘ডু ইউ নো হোয়ের আওয়ার কিচেন ইজ?’ ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, চিনি’- কিচেনে দুই দিন গিয়েই বুঝেছি, এখানে প্রতিদিন আসলে কিছুদিন পর আমারো গড়িয়ে গড়িয়ে চলতে হবে।

সবচেয়ে খারাপ যেটার অবস্থা সেটা হলো ক্লাসরুম। আমার ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রীই ফিরে এসেছে এখানে, শুধু একজন ছাড়া। সেই একজন আবার অন্য একটা শহর থেকে স্কাইপে (Skype) দিয়ে ক্লাস করে! কিন্তু মুশকিল যেটা, তা হল ক্লাসরুম দেয়া হয়েছে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটা চার্চে! এমনিতে কলেজ স্টেশন ক্যাম্পাসে ছাত্রসংখ্যা ৫০ হাজারের ওপরে। তারওপর আবার এই ফলে রেকর্ডসংখ্যক স্টুডেন্ট ভর্তি হয়েছে। কোথাও কোন ক্লাসরুম খালি নেই। চার্চে কোন অসুবিধা ছিল না। কিন্তু ল্যাব কোর্স। কম্পিউটারে হাতে-কলমে ব্যবহার ছাড়া কেউ মনে হয় না, কিছু শিখতে পারছে।

ক্লাস শুরু হওয়ার আগে রুমের বাইরে চার্চ থেকে একটা ঝুড়িতে কে যেন অনেক জুসের প্যাকেট, চকলেট মিল্ক, কুকিজ এসব রেখে যায়। চার্চগুলো এদেশে মনে হয় বেশ পয়সাওয়ালা। চার্চের নীচে একটা কফিশপ আছে। সেখানে ফ্রি কফি, স্ন্যাকসের ব্যবস্থা। আমরা রাতের খাবার সেরে মাঝে মাঝে এখানে কফি খেতে আসি। একবার দেশে কারা যেন কোথায় ফ্রি কিছু খাওয়াবে। আমার এক পেটুক বন্ধুর ডায়লগ ছিলো এই রকম- ‘ফ্রি খাওয়াইবো! খাইয়া সব পোঁতাইয়া ফালামু না দেঁতো হাসি !’। ফ্রি কিছু দেখলে আমার সেই বন্ধুর কথাই আগে মনে পড়ে।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এখানে খাওয়ার লোভ না দেখালে তো কেউ কোথায় আসতে চায়না, সেটা চার্চই হোক বা কোন মিটিং হোক বা আর কিছুই হোক। দিনলিপি এগিয়ে চলুক।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমরা বলতাম, "আইজকা হোতায়ালামু বাল"। তবে সবসময় না, কেবল ফ্রী খাওয়ার সুযোগ পেলেই! হো হো হো
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

বিনি পয়সার আলকাতরা-খাদক হিসেবে বাঙালির দুর্নামটি বেজায় অন্যায্য বলেই মনে হয় আমার। আপনার বর্ণনায় এডমিনের থলথলে সেক্রেটারীর গল্পে সেই ধারণারই সমর্থন মিললো চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।