এ কার পাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০২/২০১২ - ৪:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মনটা বড়ই বিষন্ন। গত সন্ধ্যায় টিভিতে দেখলাম, গুলশান লেকপাড়ের বস্তি ভাঙার দৃশ্য আর বস্তিবাসীদের হা-হুতাশ। বস্তি ভাঙার সময় টিভি ক্যামেরার সামনে বস্তিবাসীদের কেউ কেউ অনুযোগ করে বলছেন, এইযে লেকের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলো কেন ভাঙা হচ্ছেনা ? সেগুলো আগে ভাঙা হোক তারপরে নাহয় আমাদেরগুলো...।

জানিনা গোলাপজানের ঘর এখনো অক্ষত আছে কিনা ! কদিন ধরেই সে খুব উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সেদিন বলছিল, 'রাজউক' থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে, জায়গা খালি করে দেবার জন্য।

গোলাপজান, আমার বাসার ঠিকা কাজের লোক। তেইশ বছর ধরে আমার বাসায় কাজ করছে। পুরনো লোক হিসাবে একটা দাবিও তৈরি হয়েছে। মায়াও বটে।

সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সাথে ভোলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছিল। সেও প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে। তার বিয়ে হয়েছিল একজন ভ্যান চালকের সাথে। দুজনে মিলে মোটামুটি ভাবে সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছিল। বাচ্চাদেরকে লেখাপড়াও শেখাচ্ছিল। তিন বছর আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীটি মারা যায়। চারটি ছেলেমেয়ে নিয়ে কায়ক্লেশে দিন কাটছে তার। এ পর্যন্ত বস্তি ভাঙার কবলে পড়ে ছয়-সাত বার জায়গা বদল করেছে। ইদানিং অতি পরিশ্রম ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে শরীর-মন দুই-ই ভেঙে পড়েছে। তাই নতুন করে ধকল সহ্য করা কষ্টকর।

বস্তি ভাঙার কার্যক্রম চলছিল, ম্যাজিস্ট্রেট রোকনউদ্দৌলার তত্ত্বাবধানে। টিভি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, হাইকোর্টের আদেশে এই বস্তি ভাঙা হচ্ছে। 'রাজউক' এর জমি পুনরুদ্ধারের নিমিত্তে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আদেশ চেয়ে 'রাজউক' এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই আদেশ দেয়। বহুতল ভবনগুলোর প্রভাবশালী বিত্তবান মালিকেরা ঐ আদেশের কার্যকারিতা বন্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ লাভ করে। রোকনউদ্দৌলার ভাষ্য মতে সে কারনেই বহুতল ভবনগুলো ভাঙা যাচ্ছেনা।

টিভিতে আরও যে সব দৃশ্য দেখা গেল, তাতে পতিহীনা এক নারীর আহাজারির দৃশ্যটি সত্যিই হৃদয় বিদারক। সে তার তিনটি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে ঐ বস্তিঘরে বাস করতেন। তার প্রতিবন্ধী সন্তানদেরকেও টিভি পর্দায় দেখান হলো।

এদের প্রতি রাষ্ট্রের, সমাজের কোন দায় কী নেই ?

'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান' এর দ্বিতীয় ভাগের ১৫ নং ধারায় লেখা আছে ;

'রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন ও জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায় :

(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা ;
(খ) ....;
(গ) ....;
(ঘ) ....; ।

এইযে এই বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হর-হামেশাই 'রাজউক' এর জমি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় এদেরকে বারবার গৃহহীন করা হয়, চরম দুর্ভোগ, দুর্গতির মধ্যে ফেলা হয়, এসব দেখে-শুনে, 'দাউদ হায়দার' এর কথা ধার করে বলতে হয়, 'জন্মই এদের আজন্ম পাপ'।

'রাজউক' এর এ ধরনের কার্যকলাপে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের প্রতিও এই আহ্বানই রইল।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

'রাজউক' এর এ ধরনের কার্যকলাপে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

রাজউক এ যারা বসে থাকেন তাদের বিবেক বোধ হয় তালা দিয়ে রাখা।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

থাকলে না তবে তালা দেবার প্রশ্ন।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

মরুদ্যান এর ছবি

মন খারাপ তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

সহমত। দেশে যে প্রক্রিয়ায় (রাজনৈতিক) বস্তি তৈরি হয় তা যেমন মানা যায়না; ঠিক তেমনি এই বস্তিতে থাকা অসহায় লোকদের কে নিয়ে কোনও সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই এই উচ্ছেদটাও মানা যায়না। এঁদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাসস্থান এর ব্যবস্থা শুরুতেই থাকলে আজ আর এই উচ্ছেদ এর প্রক্রিয়ায় যেতে হতোনা। আমিও আপনার সাথে গলা মিলিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

পৌঢ় ভাবনা এর ছবি

রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নয় বরং সরকারের উদ্দোগেই এই গৃহহীন মানুষদের আবাসনের ব্যবস্থা করা উচিৎ।
ধন্যবাদ, আপনার বিস্তারিত মতামতের জন্য।

তাপস শর্মা এর ছবি

ছিঃ। ধিক্কার। দেখতে দেখতে আর ভালোলাগেনা এইসব। এখানেও একই অবস্থা, বড় বড় প্রমোটাররা টাকার জোরে বেআইনি জায়গায় বেআইনি ভাবে কাজ করে জাচ্ছে, সব তখন চুপ, কারো কিছু করার ক্ষমতা নাই। শুধু বস্তি উচ্ছেদ করে শহর সাফ করার বেলায় উনারা ওস্তাদ।

বস্তি থেকে যদি উচ্ছেদ করতেই হয় তাহলে ওদের জন্য পুনর্বাসন থাকাটা একান্ত আবশ্যক। সরকারের দায় কি শুধু এলিট ধান্দাবাজ প্রোমোটারদের পাছায় তেল মাখার ????

পৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সকল অবৈধতার সীমা ছাড়িয়ে এখনও মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে, বি,জি,এম,ই,এ, ভবন। 'রাজউক' এর কাছে এমন কোন বুলডজার নেই যা দিয়ে ঐ ভবনটি ভাঙা যায়। আইনও ঐ ভবনের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে অকার্যকর হয়ে যায়।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

শামীমা রিমা এর ছবি

রাজউকে যারা আছে তারা সহৃদয়বান নি:সন্দেহে!! আর দেশ পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা নিয়োজিত তারাতো .......
অথচ তার নাকি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের সরকার !!

এসব জঘন্য কাজের প্রতি তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।

পৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য এবং মন্তব্যের জন্যও।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ভূমিহীন নাগরিকদের ভূমি দেয়ার পরিবর্তে, মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়ার পরিবর্তে সেই ঠাঁই বা ভূমি কেড়ে নেয়ার জন্য রাস্ট্র উদ্বেলিত হয় কেমনে? সংবিধানের কথাগুলো কেবলই দুই টাকার মুড়ির ঠোঙা আমাদের রাস্ট্র তথা সরকারগুলোর কাছে?

পৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সংবিধানের কথাগুলো অনেকটা মানপত্রের মত। সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে শুধু ভাল ভাল কথা। বাস্তবায়নের কোন দায় নেই।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

উচ্ছলা এর ছবি

একটি আবজাব প্রশ্নঃ যাদেরকে আমরা অসীম উত্তেজনা নিয়ে দিনমান লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে গদিতে বসাই, তারা সবাই কি বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী? অশিক্ষিত? বেকুব? বেহায়া? ফটকাবাজ? নির্লজ্জ? গুন্ডা? ফাকটার্ড?

নইলে এমন একেকটা কির্তীকলাপ এরা করে কোন্ হিসেবে?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার এই আবজাব প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। তবে আমরা যে রাজনীতির নেশার বড়িতে আসক্ত সেটা বুঝতে পারি।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

চরম উদাস এর ছবি

মন খারাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

অরফিয়াস এর ছবি

রাষ্ট্রের নিয়ম দুর্বল আর দরিদ্রদের জন্য প্রযোজ্য, উঁচুতলার মানুষের কাছে রাষ্ট্রের সব সংস্থাই খেলার পুতুল, বস্তি উচ্ছেদের এই আড়ম্বর অনেক পুরনো, রাষ্ট্রযন্ত্র এইসব নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেনা ঠিকই, কিন্তু পারে তাদের উপর জুলুম দেখাতে|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

পৌঢ় ভাবনা এর ছবি

রাষ্ট্রের নিয়ম দুর্বল নাকি প্রয়োগের দুর্বলতা। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বৈষম্য দৃষ্টিকটু ভাবেই নজরে পড়ে।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

'রাজউক' এর এ ধরনের কার্যকলাপে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মতামত জানাবার জন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।