তোমায় আমি ভালবাসিগো, মা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১১/০৫/২০১৫ - ১:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক চা-বিক্রেতা মহিলা কথা প্রসঙ্গে আমায় বলেছিলেন, 'সন্তান কী কখনও মায়ের চেয়ে বেশী ভালবাসতে পারে! মায়ের কাছ থেকেইতো সে ভালবাসতে শেখে।

আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, বাংলাদেশে 'মা' দিবস। মা'কে ভালবাসা জানাবার জন্য কর্পোরেট বিশ্ব দ্বারা নির্দিষ্ট দিনক্ষণ।

আজকের দিনে সন্তানেরা তাঁদের মা'কে ফুল, উপহার সামগ্রী ইত্যাদি দিয়ে মায়ের প্রতি তাঁদের ভালবাসা প্রকাশ করবেন।

আমার ছোটবেলায় কিন্তু এরকম কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ছিলোনা, মায়ের প্রতি ভালবাসা জানাবার। আমার মনেও পড়েনা কোন দিনক্ষণ হিসাব করে মাকে ভালবাসা জানাবার কোন স্মৃতি।

কী বোকা ছিলাম আমি! মাকেও যে ফুল, উপহারসামগ্রী ইত্যাদি দিয়ে নির্দিষ্ট করে ভালবাসা জানাতে হয় সেটাই জানতাম না। নাকি মাকে ভালই বাসতাম না!

প্রায়ই মাকে বড্ড বিরক্তিকর মনে হতো। খেলাধুলো সেরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে না ফিরতেই শুরু হতো ঘ্যানঘ্যানানি। এই তোরা সবাই হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস্। একটু দেরি হলে আবারও সেই কথা, এখনও পড়তে বসলিনা, তোদের আব্বা এসে দেখলে রাগ করবে। আরে বাবা, একদিন না হয় আব্বা রাগই করুন না, আমরা অন্তত বুঝি। তা না সবসময় আম্মা আমাদের সামলে-সুমলে রাখতেন।

পড়তে বসার একটু পরেই আবার এক গ্লাস দুধ সামনে দিয়ে বলতেন, নে দুধটা ঢকঢক করে গিলে ফেল। আমার কিন্তু দুধ ক্ষেতে মোটেও ভাল লাগতোনা। না খাওয়া পর্যন্ত সেই ঘ্যানঘ্যানানি।

সকালে আবার স্কুলে যাবার জন্য শুরু করলো,যাও গোসল করে তৈরি হয়ে নাও, স্কুলের সময় হয়ে এলো। ইত্যাকার সব অত্যাচার।

হ্যাঁ, তবে মাকে কখনও সখনও জড়িয়ে ধরে আদর করেছি, আদর নিয়েছিও বটে। এই যেমন স্কুলে যাবার সময় হয়তো মাকে বললাম, মা, চার আনা পয়সা দেবে ? মা হয়তো জিজ্ঞাসা করতেন, কি করবি ? উত্তর দিতাম, বন্ধুদের সাথে আইসক্রিম খাবো। তখনকার দিনে, দু-পয়সা, এক আনায় আইসক্রিম পাওয়া যেতো। মা তাঁর টিনের ট্রাঙ্ক থেকে বার করে পয়সাটা দিয়ে মাথার চুলে একটু হাত বুলিয়ে দিতেন। তখন মায়ের কোমর পর্যন্ত উচ্চতার এই ছোট্ট আমি হয়তো মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে মায়ের শরীরে মাথা ঘসছি।

সেসব সেই কবেকার কথা ! আর আমিওতো তখন ছোট ছিলাম তাই এখন আর অত কিছু মনে করতে পারিনা।

এই আমিই দুজন মাকে নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি, নিজের মাকে আর আমার সন্তানের মাকে। সেই একই ঘ্যানঘ্যানানি যখন আমার সন্তানের মা করতো তখন মনে হতো, আহা, সত্যিই একজন দায়িত্ববান আদর্শ মা। সময় ও বয়সের সাথে সাথে কত কিছুই না পাল্টে যায়!

গত ৩৩ বছর যাবত আমার মা আমার সাথেই থাকতেন। প্রতিদিনই তাঁর খোঁজখবর নিতে হতো। তাঁর সমস্যাগুলো সমাধান করতে হতো। রাতের খাবারটা খাওয়া হয়েছে কিনা, ওষুধটা ঠিকমতো খেলেন কিনা, বাথরুম ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, এই সব আরকি!

এই এতদিনেও কেন জানি মাকে বলা হয়ে ওঠেনি, 'মা, তোমায় আমি ভালবাসি'।

আর কোনদিন বলা হবেওনা। গত ২৬-০৪-২০১৫ এ তিনি মারা গিয়েছেন। ঐ দিন আমার জন্মদিনও ছিল বটে।

জীবনের এতগুলো বছরের অভীজ্ঞতার আলোকে আজ মনে হচ্ছে, এরকম একটা নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন সত্যিই আছে।

কামনা করবো, যেন কোন মাকেই বৃদ্ধাশ্রমে না থাকতে হয়।

পৃথিবীর সকল মা'য়ের প্রতি রইলো অফুরান ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। প্রাণীকুলের মাতৃশ্রেণীর প্রতিও ভালবাসা।


মন্তব্য

মাসুদ সজীব এর ছবি

স্মৃতি বড় বেদনাদায়ক সুখকর অনুভূতির নাম।সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জননী ও জন্মভূমি কবিতার চরণ পৃথিবীর সব সন্তানের জন্যে বোধহয় চিরন্তন সত্য।

আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে
-কখনও মুখ ফুটে বলি নি।
টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে
কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু
-শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠত
আমার ভালাবাসার কথা
মা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যাদ।

আয়নামতি এর ছবি

কেমন বোকার মতো কথা হলো রে! এখনই বলে দেয়া যাক না সে কথা।
বুকের খোপে বসে মা ঠিক শুনে নেবেন।
আশাদির খোমাবইতে সেদিন তবে আপনার মায়ের খবরটা পড়েছিলাম! বুঝেনি রে ভাইয়া।
পৃথিবীর সকল মা'য়ের প্রতি রইলো অফুরান ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জী।

মরণ তোমার হার হলো যে মনের কাছে।
ভাবলে যারে কেড়ে নিলে সে যে দেখি মনেই আছে,
মনের মাঝেই বসে আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জীবনের শুরুর সময়টা সবাই মায়ের কাছে থাকে, কিন্তু পরে খুব কম জনেই মায়ের কাছে থাকতে পারে বা মাকে কাছে রাখতে পারে। আপনি সৌভাগ্যবান যে মাকে তাঁর শেষ ৩৩ বছর আপনার কাছে পেয়েছেন। আপনার মা যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমার মায়ের প্রতি শুভ কামনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সব মায়েদের জন্য ভালোবাসা।

স্বয়ম

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ।

এক লহমা এর ছবি

শ্রদ্ধা
"অভিজ্ঞতার আলোকে আজ মনে হচ্ছে, এরকম একটা নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন সত্যিই আছে।" চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

সঙ্কোচ ভেঙে কখনো বাবা মা কে বলা হলো না "অনেক ভালোবাসি"
মন খারাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সঙ্কোচ ভেঙে কখনো বাবা মা কে বলা হলো না "অনেক ভালোবাসি"

সময় থাকে বলে ফেলুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই এতদিনেও কেন জানি মাকে বলা হয়ে ওঠেনি, 'মা, তোমায় আমি ভালবাসি'।

আসলেই কখনো বলিনি তো! আমিও! জানি, এ কথাটা বললেই মা হেসে উঠে বলবে, 'পাগল ছেলে!', কিন্তু সেই হাসিটি দেখার জন্যই তো অন্তত মাকে জড়িয়ে ধরে একবার বলতে পারি "'মা, তোমায় আমি ভালবাসি'! মধুর আমার মায়ের হাসি - কে আরেকবার দুচোখ ভরে দেখার জন্য না হয় হলাম পাগল!

মায়ের জন্য শ্রদ্ধা, প্রৌঢ়দা!
।।।।।।
অন্ধকূপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হাস্যকর মনে হলেও বলে ফেলুন। হয়তো...

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

২৬-৪ আমার মায়ের জন্মদিন।
আপনার মায়ের জন্য দোয়া রইল। মা, মা, মা, মা, মা, মা, ডাকতেই ইচ্ছে করে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

তাইলেতো আপনার মা আর আমি 'যমজ' হাসি
আমার মায়ের প্রতি শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

মা.............। প্রথমদিক থেকে পড়ছিলাম ভালই কিন্তু শেষের দিকে মনটাই খারাপ করে দিলেন।।

-----------
রাধাকান্ত

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

শুরু থেকেই প্যানপ্যানানি কী ভাল লাগতো! শেষে এসে বাস্তবতাটাকেই স্বীকার করা আরকী!
ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।