ধাঁধার খেলা

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৯/০৫/২০১৩ - ১২:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের পাড়ার সোবহান সাহেব একবার হজে গেলেন। ফিরে আসবার পর তিনি বহু হিতকর কর্মে নিজেকে নিমজ্জিত করলেন, পাড়ার টিনশেড মসজিদটি পাকা করে দিলেন, এলাকায় সবাই মধ্যবিত্ত বিধায় সাহায্য করবার জন্যে গরীব দুখী খুঁজে পেলেন না বটে; কিন্ত প্রতি জুম্মাবারে নামায শেষে তাঁর দান খয়রাত এলাকাবাসীর দৃষ্টি এড়ালো না। বছর ঘুরে কোরবানি ঈদ এলে পেল্লাই সাইজের আটটি গরু জবেহ দিয়ে মহল্লার বাড়ী বাড়ী গোশত পাঠালেন। আরো কয়েক মাস যেতেই দেখি তাঁর বছর দেড়েক ধরে রাখা দাড়িতে মেহেদীর ছোপ লেগেছে। তাঁর অবয়বে নুরানীর ঝলকানি। পাড়ার সকলে তাঁকে সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে দেখে, সকলে তাকে এক নামে চেনে- হাজী সোবহান, এলাকার সবাই তাঁর নাম নিতে একদম বিগলিত হয়ে পড়ে। এরপরের তিনটি বছর দেশে ছিলাম না। বিদেশবাড়ীর পর্ব চুকিয়ে দেশে ফিরে দেখি পাড়াটি আমার আগের মতই আছে, তিন বছরে কতটুকুই আর বদলাবে? কিছুই বদলায়নি, এক হাজী সোবহান ছাড়া। এরই মাঝে তিনি কমিশনার ইলেকশন করেছেন, জিতেছেন, এলাকার উন্নয়নে বরাদ্দ সরকারী টাকায় পাঞ্জাবির পকেট ফাঁপিয়েছেন। আরো আছে- এলাকার এক মধ্যবয়স্কা ভাবী, যার স্বামী বিদেশবিভুই, তাকে এখন সবাই সোবহান সাহেবের রক্ষিতা বলেই জানে; সাধনায় অর্জিত আবক্ষ নুরানী দাড়ি কায়দা করে ছেঁটেছুঁটে ফ্রেঞ্চকাট বানিয়েছেন; সর্বোপরি কমিশনার অফিসে রোজ রাতে আসর বসে, স্কচ ছাড়া তাঁর চলেই না। পাড়ার সকলে তাকে এখন এক নামে চেনে- পাজী সোবহান। হজ করলেই সারাটি জীবন হাজী সম্বোধন পাওয়া যায় না, দ্বীনকে সর্বদা সমুন্নত রাখতে হয়; যেমনটা মুক্তিযুদ্ধ করলেই সারাটি জীবন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব ধরে রাখা যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রদীপকে সর্বদা প্রজ্বলিত রাখতে হয়। আরে বাবা আপনি ৭১ এ রণাঙ্গন কাঁপিয়ে যুদ্ধ করবেন আর ২০১৩ তে এসে রাজাকারের পোষা তোতা হবেন, আর তাতে যদি কেউ আপনাকে নব্য রাজাকার বা রাজাকারের দোসর বলে দু’একটা গালমন্দ করেই ফেলে তাতে বক্তাকে আর কতটুকু দোষারোপ করা যায়, বলুন?
এবার বলেন পাঠক, খোঁচাটা কোথায় মারা হচ্ছে? একটি ক্ল্যু দেয়া যাক- এই সুসন্তান শ্মশ্রুমণ্ডিত। কি বললেন? লোকটি এখনও মুজিব কোট পড়ে? হয়েছে, তবে কেন শুধু তারই দাঁড়ি আর কোট ধরেই টানাটানি? দাঁড়ি কি আর কোনো জামাতী তোতাপাখির নেই, নাকি সে বাচ্চা খোকা বলে সাত খুন মাফ?

আমার বন্ধু শাহিন গিয়েছিল সিনেমা দেখতে, জোনাকি হলে। ওর অভিজ্ঞতা ওর বয়ানেই হুবুহু তুলে দিচ্ছি- “হলে ঠাসা ভিড়, চারিদিকে ঘাম আর পেট্রোল পোড়া গন্ধ। আজ কি পরিবহন ধর্মঘট? রাজ্যের বাস-ট্রাকের ড্রাইভার আর হেল্পার ভাইয়েরা আজ হল দখলে নিয়েছে। নায়ক নায়িকা কালের হিট জুটি রিয়াজ-শাবনুর; তিন ঘণ্টার সিনেমায় মোট ছয়টি গানে তাদের মন মাতানো নাচ দর্শকের মন কোনো মতেই আন্দোলিত করতে পারেনি। কিন্তু একটি গান ছিল নায়িকার বান্ধবী আর নায়কের বন্ধু কে নিয়ে। বৃষ্টিস্নাত দৃশ্য; ওরে বাবা সে কি খ্যামটা! চর্বিতে চর্বিতে সে কি বিভঙ্গ! অমন বড় গলার ব্লাউজ আমি জীবনে দেখিনি। আর শুধু ঐ গানে নয়, পুরো সিনেমাতেই মেয়েটি অকৃপণ ধারায় সুধা ঢেলেছে- ডায়লগে, মোচরে, ভ্রূভঙ্গিতে, প্রতিটি চলনে বলনে। এটিই মেয়েটির প্রথম ছবি। পয়সা উসুল করে বাড়ী ফিরলাম। পরদিন চলতি পথে ফুটপাতে ম্যাগাজিন আর পত্রিকার পসরা থেকে একটি কভার পেজ আমার চোখ দুটোকে চুম্বকের মত টেনে নিল। ম্যাগাজিনের নাম ‘সাপ্তাহিক রঙ্গলীলা’, আর কভার পেজে সেই মেয়েটিরই ছবি যার দয়ায় আগের দিন পয়সা উসুল সিনেমা দেখেছিলাম। আর ঐ যে বললাম চোখ দুটো টেনে নিল, টানবে না? সামটাইমস সাইজ রিয়ালি ডাজ মেটার।“

রগরগে সেই ম্যাগাজিন হাতে শাহিন এখন আমাদের সঙ্গে আড্ডায়। মেয়টির নাম জেসি; নামটি মন্দ নয়, বেশ আধুনিকতা আছে। তা এই জেসিকে নিয়ে যা ছাপা হয়েছে তাতে জানা গেল এই মেয়ে অতি মাত্রায় উচ্চাভিলাষী। পরবর্তী চলচিত্রে আরো বড় রোল পেতে প্রযোজক-পরিচালকের কোনো আবদারই সে প্রত্যাখ্যান করেনি। সাক্ষাতকারে সে এও বলেছে পরিচালক চাইলে প্রয়োজনে সে বাংলাদেশের চলচিত্রে প্রথম টপলেস শুট করতেও পিছপা হবে না। একদম শেষে সে এও প্রতিজ্ঞা করেছে একদিন সে সানি লিওনকে ছাড়িয়ে যাবেই যাবে। যে কোনো ত্যাগেই হোক না কেন, একটা প্রধান চরিত্রের আসন তার চাইই চাই। ব্যাপারটা যেন অনেকটা বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গন আর টক শো-র মাইক ফাটানো সেই চুইট ছেলেটির মতন; যে ভবিষ্যতে মন্ত্রিত্ব পেতে জোট প্রধানের মন রাখতে, রাজাকারদের হেফাজত করতে, প্রলাপ বকতে বকতে নিজেকে বিকিয়ে দিতে দিতে পশ্চাৎদেশের কাপড় কিছুই আর অবশিষ্ট রাখেনি।

ধুর পাঠক, আপনারা বড্ড এডভান্স; আপনাদের সাথে ধাঁধার খেলায় কোনো মজা নেই। এখনও প্রশ্নটিই করা হয়নি, আর এরই মধ্যে সবাই পার্থ পার্থ বলে ইস্টনাম জপছেন। ধুর মশাই, ঘাঁট হয়েছে, আর খেলবো না ধাঁধার খেলা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন গড়াগড়ি দিয়া হাসি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

ঈয়াসীন এর ছবি

চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

তারেক অণু এর ছবি

চিন্তিত হি ইজ রাইট শয়তানী হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো

সুবোধ অবোধ

বটতলার উকিল এর ছবি

জটিল বলেছেন!

বটতলার উকিল

মরুদ্যান এর ছবি

গুল্লি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।