সভ্য হতে কত দেরী পাঞ্জেরী?

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ৩০/০৪/২০১৪ - ৩:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

riot

কনফেশন :
কতিপয় কারণে লম্বা একটা ডুব মেরে উঠলাম, নামের আগে ফাঁকিবাজ বিশেষণটি খুব সহজেই যোগ করা যায় এখন। পরিবারে কয়েকটি মৃত্যুজনিত কারণ, কাজের ব্যাস্ততা, শারিরিক অসুস্থতা আর বেঠিক (পড়ালেখার নির্দিষ্ট কোনো বয়েস না থাকলেও, এই চল্লিশে এসে সংসার যন্ত্র চালানো অবস্থায় জাভা, এসকিউএল, নেটওয়ার্কিং-এর জ্ঞানাহোরণ খুব একটা সঠিক বোধ হচ্ছে না) বয়েসে পড়ালেখার চাপ- সবকিছু মিলে লেখালিখি, এমনকি নিয়মিত ভাবে বন্ধুদের পোস্ট পড়াও হয়ে ওঠেনি। এতে করে কেউ কিছুই হারায়নি, যা কিছু ক্ষতি সে আমারই।

এই অনিচ্ছুক সাময়িক বিরতির মাঝে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে তার কক্ষপথের এক চতুর্থাংশ পেরিয়ে গেছে, কোমরের ব্যাথা কাটিয়ে উঠে ‘বড় গণতন্ত্র’ ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ করেছে, আব্বু-আম্মুর কথোপকথন আড়ি পেতে শুনে শুনে রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আইসিটি ৫৭ ধারায় ফেঁসেছে কিশোরেরা, ইসলামী ব্যাংক ধুয়ে মুছে নিচ্ছে তার গাত্রের যত কালিমা, ভেঙ্গে যাচ্ছে স্বপ্নের মঞ্চ, দলে ভিড়িয়ে জামাতীদের শুদ্ধিকরণ চলছে, বন্ধু সুবাদে ফুরফুরে মেজাজে আছে তেঁতুলখোর হুজুর, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পাশ করে তৈরি হতে যাচ্ছে শত শত গাধা, এই ক’মাসে শুয়ে বসে আঙ্গুর নাস্পাতি আর মুরগীর ঠ্যাং চিবিয়ে তিন থেকে চার কেজি ওজন বেড়েছে অধ্যাপক সাহেবের। আরো কত শত ব্রেকিং নিউজের মাঝে অন দ্যা টপ অফ অল- হিন্দু নিগ্রহের সামাজিক দায়বদ্ধতা সুষ্ঠু রুপেই পালিত হচ্ছে।

ব্যাপারটা হয়েছে এমন- নাই কাজ তো খই ভাজ। থুক্কু; কাম কাজ নাই, চল মালু পিটাই।

ইয়ার্কি ফাজলামো করে বলছি ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি অন্তর থেকে ভেবে দেখুনতো। ধরুন, নন্দা মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছে, তার মা মালতীবালা গরম ভাতে এক চামচ ঘি ঢেলে তাকে খেতে দিচ্ছে। পাঁচফোড়নে বাগার দেয়া সবজির ছক্কা থেকে অমৃতের গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাবা নিরঞ্জন একটু বাদেই ফিরবে কাজ থেকে। ভাই অলক মাঠে ফুটবল খেলতে গেছে বন্ধুদের সঙ্গে। বইয়ের পাতার ভাজ থেকে চিরকুটটি বের করে নন্দা আরেকবার পড়ে নিল। তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা- ‘তুমি এত সুন্দর কেন?’ পড়তেই বুকের ভেতর থেকে এক ঝাক টিয়া উড়ে গেল আকাশের দিকে। পঙ্কজ কলেজে পড়ে। স্কুলে যাতায়াতের পথে রোজই নন্দা তাকে দেখে পাড়ার মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকতে। কখনও কোনো কথা হয়ে ওঠেনি, সাহস করে ছেলেটি আজ ছোট্ট অথচ ভয়ঙ্কর সুন্দর এই চিঠিটি নন্দাকে দিয়েছে। আজ বিকেলটা অন্যান্য দিনের মতই স্বাভাবিক তবে একটু বেশী স্নিগ্ধ। হঠাৎ কি জানি কি হল, বলা নেই কওয়া নেই, পাশের পাড়ার মাদ্রাসার মাইকে কি সব শুনে শত শত দস্যু ছুটে এল নন্দাদের পাড়ায়। ঘিয়ে মাখা গরম ভাত ছড়িয়ে পড়লো মেঝেতে, ঘর বাড়ি লণ্ডভণ্ড, চতুর্দিকে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার, কোনো কোনো বাড়ীর উপর আগুনের শিখা, উঠোনের তুলসি গাছটির গোঁড়ায় প্রস্রাব করছে এক সুঠাম যুবক, আলমারি ভেঙ্গে গয়না গাটি নিয়ে দৌড় দিল কে যেন, বাধা দিতে গিয়ে মালতীবালার কপালে পড়েছে চ্যালা কাঠের প্রচণ্ড আঘাত, সংজ্ঞাহীন তিনি পড়ে আছেন মেঝেতে, সুন্দর নন্দাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে উন্মত্ত দুই কৃষক। তাদের মাঝে একজনের বয়েস নিরঞ্জনের চাইতেও বেশী। মন্দিরে পুড়ছে প্রতিমা, পুড়ছে পুরোহিত আর পুড়ছে নৈবেদ্যের জবাফুল।

কি দোষ ছিল এই গ্রামবাসীর? ফেসবুকে নবীকে নিয়ে কটাক্ষ? ইসলাম অবমাননা? ধুর, সেসব ছুতো মাত্র। মোদ্দা কথা হল, সংখ্যালঘু মানেই নিধনযোগ্য। উপমহাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে পৌনঃপুনিক বিদ্বেষ গত কয়েক শতক ধরেই চলমান। ভারতে সংখ্যালঘু হবার দায় পোহাতে হয় মুসলমানদের আর আমাদের দেশে সেই দায় পোহানর অধিকার হিন্দু ও বৌদ্ধদের। আমি আমার দেশের কথাই বলবো। মূল সমস্যাটি কোথায়? প্রশাসনের উদাসীনতা? ধর্মান্ধ ধর্মব্যাবসায়িদের উস্কানি? শত শত কখনও হাজারে হাজার নররুপী পশু এসে একটি গ্রামে কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই আক্রমন করবে; কতজন পুলিশই আর থাকে সেখানকার থানায়? কিভাবেই বা প্রতিরোধ করবে তারা? আক্রমনের পর অজ্ঞাত পরিচয়ে কয়েক হাজার মানুষের নামে মামলা হয়। আমাদের দেশে জ্ঞাত নামের আসামীর বিচার কালেভদ্রে ঘটলেও ঘটতে পারে, কিন্তু অজ্ঞাত! মসজিদ, মাদ্রাসার মাইকে নামাজ পড়ার আহ্বান জানালে মসজিদে ৫০ জনকে একত্র করা না গেলেও হিন্দু বাড়ি আক্রমনের ক্ষেত্রে হাজার খানেক মুসল্লিকে হাজির করানো যায়। মসজিদ, মাদ্রাসার মাইকের সকল আহ্বানই অনুল্লঙ্ঘ্য নয় তাদের কাছে; আহ্বান হতে হবে এমন যেখানে একশন আছে, লুট করবার উপায় আছে, নন্দাদের ছিঁড়ে খাবার সুযোগ আছে। তাই ধর্মীয় উস্কানিদাতাদের বড় একটি ভুমিকা থাকলেও সাম্প্রদায়িক উন্মাদনায় সেটি অণুঘটক হতে পারে কিন্তু প্রধান হেতু নয়।

আমার দৃষ্টিতে মূল সমস্যাটি আমাদের প্রাপ্ত শিক্ষায়, সে শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক, সে শিক্ষা সামাজিক, সে শিক্ষা পারিবারিক। খুব ছোটবেলায় আমরা জানতে শিখি লাল পিঁপড়ারা হিন্দু আর কালোগুলো মুসলমান। লাল পিঁপড়া দেখলেই আমরা পায়ের ডলায় পিষে ফেলতাম। ছোটবেলায় কেন, এখনও অনেক কাছের আত্মীয় কিংবা বন্ধুদের মুখেই সেই শ্লোকটি শোনা যায়- ‘মালাউনকি বাচ্চা কাভি নেহি আচ্ছা’। কৈশোরের টুল বেঞ্চির দিনগুলোতে আমি, শঙ্কর, রোজারিও আর বড়ুয়া একই শ্রেণীতে পড়তাম; বাংলা অংক ইংরেজি ক্লাসে এক সঙ্গে বসলেও ধর্ম ক্লাসে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন কামড়ায় বসতে হত। মুসলমান হবার সুবাদে বাই ডিফল্ট আমাকে ইসলামিয়াত পড়তে হয়েছে; শঙ্কর, রোজারিও আর বড়ুয়াকে পড়তে হয়েছে তাদের নিজস্ব ধর্মশিক্ষা। আমাদের কোনো অধিকার ছিল না অন্য ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানাহোরণের। শঙ্কর একবার আমাদের বাড়ীতে ভাত খেয়েছিল বলে তার ঠাকুরদা তাকে গোবর টোবর কি সব খাইয়ে নাকি শুদ্ধ করতে উদ্ধত হয়েছিলেন। শঙ্করের বাবা সে যাত্রা কঠোর হয়ে ঠাকুরদার সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে তাকে গোবর খাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আমাদের বাড়ি আসবার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জুড়ে দিয়েছিলেন। সে গল্প শুনে এমন ভয় পেয়েছিলাম যে, আমি যে মাঝেমধ্যে শঙ্করের টিফিন বাক্স থেকে এটা ওটা নাড়ু সন্দেশ কেড়ে খেতাম সে কথা ঘুণাক্ষরেও আমার বাড়ীর কাউকে জানতে দিইনি। সেই শৈশব অর্থাৎ নরম কাদার দিনগুলো থেকেই আমাদের বৈষম্যের ছাঁচে ফেলে ভিন্ন ভিন্ন মানসিক আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয়। দিনে দিনে আমরা বড় অথচ অমানুষ হতে থাকি। শৈশবে আমাদের সেই ভ্রান্ত ধারণায় প্রতিষ্ঠিত ভিত বড্ড মজবুত। মালাউন দেখলেই আমাদের রক্ত আজো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এইতো সেদিন এক বন্ধুবাড়ী নেমন্তন্নে আহারান্তে গসিপিং আড্ডায় একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলো-
- ভাই, আপনের ছেলেটাতো খুব কিউট; কি নাম রাখছেন?
অপরজন বললেন- জীবনানন্দ।
প্রশ্নকারী হেঁকে উঠলো- মানে?
জীবনানন্দের বাবা বললেন-‘মানে’ মানে?
হাঁকতে হাঁকতে সেই লোক বললেন- আপনের ফ্যামিলি নেমতো সাঈদ, নাকি?
- বিলক্ষণ।
- তাইলে পোলার পুরা নাম কি জীবনানন্দ সাঈদ?
- হ্যা। তাইতো হবার কথা।
- কি কন এইসব? জীবনানন্দ আবার সাঈদ হয় ক্যামনে? জীবনানন্দ একটা হিন্দু নাম আর সাঈদ হইল মুসলমান নাম। আপনে মুসলমান হইয়া আপনের পোলার একটা হিন্দু নাম রাখলেন কি বুইঝা?
আমরা উপস্থিত অনেকেই কথার মাঝে যুক্তি খুঁজে পেলাম। তবে ব্যক্তিগত আক্রমনের পর্যায়ে যাচ্ছিল বলে আমি বলে উঠলাম- বাদ দিন না। তবে জীবনানন্দের বাবা মোটেও বিচলিত হলেন না। শান্ত ভাবে বললেন-
- দেখুন, নাম সব সময় আঞ্চলিক আর ভাষা ভিত্তিক হয়; ধর্মীয় নয়। যেমন আমার সুদানী এক বন্ধু আছে, যার নার কাশিম; সে একজন খ্রিস্টান। আমার এক ইরাকী বন্ধুপত্নীর নাম জোহরা, তারাও খ্রিস্টান। মুলত আরবী ভাষাভাষী বলে ওদের নামগুলো আরবী। আমার ছেলের নাম দুটি বাংলা শব্দের মিশ্রণ। তাছাড়া জীবনানন্দ আমার প্রিয় কবি, সে কারনেই ছেলের এই নামকরণ। তবে হ্যা, আমরা সকলেই ধর্মীয় নাম রাখি বটে, তার মানে এই নয় আমার নিজ ভাষার একটি নামে আমার ছেলে পরিচিত হতে পারবে না।
- আরে ভাই, বাংলা নাম রাখবেন ভাল কথা। ডাক নামটা বাংলা রাখেন, হাশরের দিন আল্লাহ সবাইরে আসল নাম ধইরা ডাকবো। ডাক নাম রাখলেও এমন রাখেন যেইটায় হিন্দু হিন্দু গন্ধ নাই, কিন্তু বাংলা। যেমন ধরেন রবি কিংবা আদিত্য, এইগুলির মানে হইল সূর্য। বাংলাও হইল আবার মালউনও হইল না। আবার ধরেন ভাস্কর মানেও সূর্য, কিন্তু এইটা ডাইরেক্ট মালুগো নাম।

আমরা আবারো ঝাঁঝালো যুক্তির উপস্থাপন দেখতে পেলাম। ভেবেছিলাম, জীবনানন্দের বাবা এই যাত্রা চুপসে যাবে। না, তিনি বললেন-
- আদিত্য মানে সূর্য? নাকি আদিত্য সূর্যদেবতার একটি নাম। আদিত্য মানে হচ্ছে অদিতির সন্তান। যেমন কুন্তীর সন্তান কৌন্তেয়, রাধার সন্তান রাধেয়, তেমনি অদিতির সন্তান আদিত্য। এই অদিতি নাম্নী মহিলা কে জানেন? হিন্দুদের দেবতা ব্রহ্মার আঙ্গুল থেকে জন্ম নেয় দক্ষ আর দুই চোখ থেকে জন্ম নেয় মরীচি। এই মরীচির ছেলে কশ্যপ আর দক্ষের মেয়ে অদিতি পৃথিবীর প্রথম স্বামী স্ত্রী- অবশ্যই তা হিন্দুধর্মমতে। এই কশ্যপ-অদিতি জুটি থেকে বংশ পরম্পরায় বহু দেবতা এবং পৃথিবীর বহু বংশের মানুষের জন্ম। অনেকটা আমাদের আদম-হাওয়ার জুটির মতন। সূর্যদেবতার; খেয়াল করবেন এটি শুধুমাত্র সূর্য নয় বরং হিন্দুমতে সূর্যদেবতা, সেই সূর্যদেবতার জন্ম এই অদিতির গর্ভে হয় বলেই সূর্যের আরেক নাম আদিত্য।
- কন কি?
- আরেকটু শুনুন; অদিতির গর্ভে বারোজন সন্তান জন্ম নেয় আর তাদের সবাইকেই আদিত্য বলে ডাকা যায়। এই বারোজনের লিস্টে ইন্দ্র এবং বিষ্ণুও আছেন। আপনার ‘ডাইরেক্ট মালু’ নামক আপত্তিকর বিশেষণটির ক্ষেত্রে জীবনানন্দ কিংবা ভাস্করের তুলনায় বরঞ্চ আদিত্যই অগ্রাধিকার পায়। আমরা যা বলি তা জেনে বললে সকলের জন্যেই সেটি ভাল। আর হ্যা, আদিত্য কিংবা রবি নামেও আমার কিন্তু আপত্তি নেই। শুধুমাত্র আপনার নাজানা বিষয়গুলো উল্লেখ করতেই এতকিছু বলতে হল।
আমিতো তাজ্জব; যুক্তিতো জীবনানন্দের বাবার কথাতেও আছে! প্রথমজনতো পুরো চুপসে গেলেন। বারবার স্ত্রীকে তাড়া দিতে থাকলেন- রাত হইছে অনেক, বাসায় যাইবা না?

আমাদের ধর্মীয় বৈষম্যমূলক শিক্ষাই আমাদের মস্তিস্কে এই কালকূটসম বিষ ছড়িয়েছে। প্রশাসনকে শক্তিশালী এবং কার্যকর করে, ধর্মীয় উস্কানিদাতাদের শায়েস্তা করেই কেবল এর নিরাময় সম্ভব নয়। তাতে সমস্যার সাময়িক সমাধান হতে পারে মাত্র। প্রয়োজন সু এবং সঠিক শিক্ষার, সেই সাথে তার ব্যাপক বিজৃম্ভণ। আমাদের গেছে যে দিন তা হয়তো একেবারেই গেছে, কিছুই নেই বাকী। তবু চেষ্টা করতে দোষ কি? এই শিক্ষার পন্থা বিভিন্ন হতে পারে, তা নিয়ে চলতে থাকুক আমাদের ঐকান্তিক পরিকল্পনা আর তার সঠিক রুপায়ন। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই বিষ হতে মুক্ত একটি সুস্থ সমাজে বিচরন করতে পারে! ক্ষেত্রবিশেষে আমরা কেউ মুসলমান হয়েছি, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ আর কেউ খ্রিস্টান; সভ্য হতে পারিনি, মানুষ হতে পারিনি। সভ্য হওয়ার মাঝেই নিহিত চরম সার্থকতা।

(ছবিটি নেট থেকে সংগৃহীত।)


মন্তব্য

নির্ঝর অলয় এর ছবি

পরিস্থিতি অত্যন্ত গম্ভীর। আপাতত সভ্য হওয়ার কোন লক্ষণ দেখছি না। হিন্দুদের শিক্ষা ও বিত্তে পিছিয়ে থাকা অংশটি এ যাত্রায় একেবারে না খেয়ে মারা পড়বে। তাদের বসতবাটি লুটে নেবে পশুরা। ভারতীয় সরকার কোনকালেও বাংলাদেশি রিফিউজিদের ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি। ৪৭ এ পাঞ্জাবী মুহাজিররা দিল্লীতে সুন্দরভাবে পুনর্বাসিত হলেও বাংলাদেশিদের কপালে জুটেছিল দণ্ডকারণ্য।

শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অংশটিও আর পালাতে পারবে না। য়োরোপের দুয়ার মোটামুটি বন্ধই হয়ে গেছে। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াও নিজেদের শ্রম-বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ফেলে শিগগিরই অভিবাসন বন্ধ করে দেবে। তাছাড়া ওই লাইনে তো খালি সংখ্যালঘুরা নেই! কাজেই ধুঁকে মরাই বোধহয় বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সংখ্যালঘুদের একমাত্র পরিণতি। মন খারাপ মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

-আনন্দময়ী মজুমদার

ঈয়াসীন এর ছবি

বড্ড অন্ধকার

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

এই বিষয়ে উদাসীনতাও এক ধরণের মেনে নেওয়া, সায় দেওয়া । আপনার লেখায় মতামতের মৌনতাই তো অনেক কিছু বলে

-আনন্দময়ী মজুমদার

ঈয়াসীন এর ছবি

যথার্থ, উদাসীনতা নিসন্দেহেই মেনে নেয়া। এই চলমান সমস্যার সমাধান কি? তা ভাবতে গেলে সমুখে শুধু অন্ধকারই দেখি।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

মূল গলদটা শিক্ষা ব্যবস্থায়, এরপর পরিবার আর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। আর সবচেয়ে দু:খজনক হলো রাষ্ট্রের উদাসীনতা। তারা জানে দুই চারদিন একটু লেখালেখি হবে এ নিয়ে, তারপর সবাই ভুলে যাবে এবং আসলেও যাচ্ছে। ফলে এর কোন সমাধান নেই, হবে ও না এইদেশে। রাজনীতির মাঠে এটি বিশেষ উপকারী, এটি দিয়ে চলবে ব্লেম গেম।

(অনেক দিন পর লেখলেন, নিয়মিত পাওয়ার আশা করছি)

মাসুদ সজীব

আয়নামতি এর ছবি

ভিসামুক্ত একপৃথিবীর স্বপ্নের মত একটাই ধর্ম মানব ধর্মে যেদিন দীক্ষা নিতে পারবো, বোধকরি সেদিন সভ্য হবার একটা সুযোগ পাওয়া সম্ভব হবে।

বিজৃম্ভণ।

এ শব্দের মানে কী ভাইয়া?
ভালো থাকুন, সচলও হাসি

ঈয়াসীন এর ছবি

বিজৃম্ভণ এর অর্থ 'বিস্তার'; এই খটমটে শব্দটি ব্যবহার না করলেই বোধহয় ভাল হত। এর চেয়ে বিস্তার শ্রুতিমধুর। থাক নতুন একটি শব্দ জানলাম, তার একটু প্রয়োগ হল আর কি!

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

‘সভ্য’ হতে মানুষের আদৌ আর দেরী আছে কিনা জানিনা। মানে বলতে চাচ্ছি, মানুষ হিসেবে আমরা তো অনেক সময়, অনেক সুযোগ পেলাম। গত ১২০০০ বছর থেকে প্রস্তর যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ, লৌহ যুগ... ক্রমে মধ্য যুগ, রেনেসাঁ, ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ পার করে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এমন এক উন্নত পৃথিবীতে, যেখানে মানুষ কৃত্রিম প্রাণের জন্ম দিতে পারে; আকাশের যে গ্রহ নক্ষত্রে আঁকিবুঁকি কেটে রাশির জন্ম, সে গ্রহে জমি কিনে বাড়ি বানানোর কথা ভাবতে পারে। সভ্যতার এত চরম শিখরে আমরা যে এত উঁচু থেকে পৃথিবীর আর্তি শোনা যায়না, দেখা যায়না তার বুকের ফাটল। যে পৃথিবীতে পোলার ক্যাপ গলতে শুরু করেছে, ওজন স্তর ছিঁড়ে খুঁড়ে যাচ্ছে; সে তো আমাদেরই সভ্যতার রিরংসার অনাকাঙ্খিত ফল। এতকিছুর পর ও আমরা ধর্মের নামে মসজিদ ভাঙ্গি, মন্দির ভাঙ্গি... ধর্মের নামে কেউ কি করে উপাসনালয় ভাঙ্গে আমি জানিনা; হয়ত অতটা ধর্মপ্রাণ হয়ে ওঠার সৌভাগ্য আমার হয়নি কখনো। আমার এক্টাই প্রশ্ন, “মানুষ আর কত সভ্য হবে; এটুকুই কি যথেষ্ট না?”
নিশাচর জীব

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সভ্য হতে কত দেরী পাঞ্জেরী?

বহু দেরি আছে আমাদের মন খারাপ

আর নামের বিষয়ে আমাদের কেরামতি একটু বেশিই।
ইরাকের তারিক আজিজ ছিল খৃষ্টান, আবার ইন্দোনেশিয়া (সবচেয়ে বেশি মুসলমানের দেশ) এর সাবেক বর্তমান প্রধানদের নাম দেখি: মেঘাওয়াতি (নাকি মেঘবতী?) সুকর্নপুত্রি; সিসিলো বামবাং (Susilo Bambang Yudhoyono )
কই, তাদের দেশেতো তাদের কেউ নাম নিয়ে কটর মটর করে না?
আমাদের সমস্যাটা কি?

আর, মানুষের ভেতর 'লুট' করার একটা আকাঙ্ক্ষা সুপ্ত আছে সবসময়, সেটা প্রায় পুরো পৃথিবীতেই আমরা দেখতে পাই। মন খারাপ

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

এক লহমা এর ছবি

চলুক
ধর্মের নামে হোক, কি বর্ণের নামে, কি রাজনৈতিক বিশ্বাস বা দলের নামে, যে কোন দাঙ্গার-ই মূল উদ্দেশ্য - লুঠতরাজ। যেটা ভীষণভাবে দরকার, একটা একটা করে সব ক'টা অপরাধীকে ধরা এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেয়া। পরিবর্ত্তে যা দেখতে পাই, বিশেষ করে আমাদের তৃতীয় বিশ্বে, অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং আমরা নিজেদের সভ্য বলে দাবী করতে কোন দ্বিধাবোধ করি না!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দেশীছেলে এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।