বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উচ্চগলনশীল নাসিকা

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: রবি, ২৮/০৯/২০০৮ - ১২:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভিক্ষা চাই না, কুকুর সামলাও
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে একমাত্র স্বীকৃত সরকারি প্রতিষ্ঠান। দেশে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ে আইন আছে এবং সে আইনে কোনটি প্রত্নসম্পদ আর কোনটি প্রত্নসম্পদ নয় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। আইনে স্পষ্ট ভাষায় বলা আছে, একশ’ বছরের বেশি বয়সী যেকোনো বস্তু বা স্থান বা স্থাপনাকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক সংরক্ষিত বলে ঘোষণা দিতে পারবেন। বাংলাদেশে একশ’ বছরের বেশি বয়সী বস্তু বা স্থাপনা আছে হাজার হাজার। তার মধ্যে বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধিন। আইনে এ-ও বলা আছে, পরিচালক মনে করলে ব্যক্তি মালিকানাধিন বস্তু, স্থান বা স্থাপনা “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী” অধিগ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত স্থাপনার সংখ্যা ৩৫৬ টি। প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী ও সচেতন অনেকে মনে করেন, এই তালিকাতে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তারা বিষয়টিতে অসন্তুষ্ট এবং ক্ষুব্ধও। কিন্তু আমরা যারা প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে মাঠে কাজ করি, তারা অবশ্য এই না থাকার ব্যাপারটিতে খুবই সন্তুষ্ট। কারণ সরকারের ‘সংরক্ষিত’ সীল আছে, এমন প্রত্নস্থানে কাজ করা খুবই জটিল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে অজ্ঞ অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদেরকে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার তাৎপর্য আর পদ্ধতি বোঝাতে আমাদের অনেক সময়, শ্রম আর অর্থ নষ্ট হয়। স্বভাবতই প্রত্নস্থান বা বস্তুটি যতই মূল্যবান বা গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, সেটি অধিদপ্তরের তালিকায় না থাকলে কাজের পথে প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা এড়ানোর সুবিধার কারণে আমরা বরং খুশিই হই।

যত্রতত্র গলনশীল নাসিকা
কাজেই আমরা যখন ঠাকুরগাঁওয়ের প্রাচীন মসজিদ এবং মন্দিরের সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের কাজে হাত দিলাম, তখন স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় না দেখে আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের মনে কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়াতেই এই লেখার অবতারণা। অ্যান্টিক্যুইটি অ্যাক্টে সুস্পষ্টভাবে কেবল সংরক্ষিত প্রত্নস্থানের ক্ষেত্রেই অধিদপ্তরের খবরদারির কথা বলা থাকলেও অসংরক্ষিত (তখন পর্যন্ত) একটি প্রত্নস্থানে খনন করতে গিয়ে আমরা যে ঝামেলায় পড়েছিলাম, সেটি আমাদের মনে পড়ে গেল। উয়ারী-বটেশ্বরে ২০০৫ সালে আমরা যখন খনন করতে যাই, তখন অধিদপ্তরের পরিচালকের বরাবরে আমরা একটি চিঠি দেই, যুগ্ম-সচিব মর্যাদার পরিচালক সাহেব সিদ্ধান্ত চেয়ে চিঠি পাঠান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবের মর্যাদার একজন কর্মকর্তার কাছে। আইনে যেখানে অধিদপ্তরের পরিচালককে এই বিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কিভাবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে? একই ঘটনা ঘটেছিল, গিমে জাদুঘরে নিদর্শন পাঠানোর ক্ষেত্রেও (তখন বিষয়টি নিয়ে ব্লগে লিখেছিলাম)। উয়ারী-বটেশ্বরে খনন চলাকালে খনন বন্ধ করার জন্য অধিদপ্তরের পরিচালক চিঠি দেন। উয়ারী-বটেশ্বর তখন পর্যন্ত অধিদপ্তরের সংরক্ষিত প্রত্নস্থানসমূহের তালিকায় ছিল না (এখনও নেই, শুধু একটি পরিত্যক্ত ভিটাকে তারা সম্প্রতি সংরক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন)। উয়ারী-বটেশ্বরে খননের পরিচালক অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানকে আমি তখন প্রশ্ন করেছিলাম, যে স্থানটিকে তারা সরকারিভাবে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা দেননি, সেই স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে তারা এতো নাক গলাচ্ছেন কেন? সুফি স্যার যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, এক কথায় তর্জমা করলে সেটি দাঁড়ায়- ঈর্ষা। সুফি স্যারকে আমি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, তারা তো নিজেদের সংরক্ষিত স্থানগুলোর সংরক্ষণের নামে দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন, ফরাসিরা ফি বছর তাদেরকে ঢাকা-প্যারিস-ঢাকা টিকেট দিচ্ছেন, উনারা নাক উঁচু করে গিমে জাদুঘরে প্রদর্শনী দেখে বেড়াচ্ছেন, তা সত্ত্বেও একটি অরক্ষিত প্রত্নস্থানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের নেতৃত্বে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ব্যাপারে তাদের এতো নাক চুলকানি কেন? সুফি স্যার এর জবাবে যা বলেছিলেন তার তর্জমা এরূপ- মহাস্থানে ফরাসিদের খনন এখন ইউরোপেই প্রশ্নের মুখোমুখি। ফরাসি দলের পরিচালক জ্যাঁ ফ্রাঁসোয়া শালে খননোত্তর যে গ্রন্থপ্রকাশ করেছেন, সেই গ্রন্থে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেই বিষয়ে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অপর একটি গ্রন্থে যে তথ্যপ্রমাণ হাজির করেছেন, তা ফরাসি খনক দল এবং তার বাংলাদেশি অংশীদার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমতাবস্থায় তারা দৃষ্টি স্থানান্তর করার জন্য এবং উয়ারী খনন বিষয়ে “গণমাধ্যমিক আলোকচ্ছটা” গায়ে মাখার জন্য উয়ারীতে খনন করতে আগ্রহী। আমরা সেই সময় স্যারকে বলেছিলাম, তা অধিদপ্তরকে উয়ারীতে খনন করতে বলুন না! অধিদপ্তর আমাদের প্রস্তাবটি রেখেছিল। ঐ বছরই তারা উয়ারীতে খনন করতে আসেন।

কাক বলে ময়ূর হবো
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর উয়ারী বটেশ্বরে খনন করলো এবং উল্লেখযোগ্য কিছুই পেল না। একটি সম্ভাব্য স্থাপনাকে তারা চিহ্নিত করলেন মধ্যযুগীয় বলে। স্বভাবতই তারা উয়ারীতে খননের চেয়ে প্যারিসের টিকেটের লাইনে দাঁড়ানোকে বেশি লাভজনক মনে করে ঢাকা চলে এলেন। আমাদের ট্রেঞ্চগুলো ছিল অধিদপ্তরের ট্রেঞ্চের কয়েক মাত্র কয়েক গজ দুরেই। আমরা খননে পেলাম- আদি ঐতিহাসিক রাস্তা, তাম্রপ্রস্তর যুগের বসতি, বিপুল পরিমাণে পাথরের পুঁতি, কিছু পোড়ামাটির শিল্পকর্ম, রৌপ্যমুদ্রা ভর্তি একটি ছোট কলস ইত্যাদি। সুতরাং যাবার আগে অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা আমাদের কাছে এলেন, আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন- আমরা খনন করে কিছুই পেলাম না, আর আপনারা খনন করলেই পাচ্ছেন, ব্যাপারটা কী? সুফি স্যার তাদেরকে সাময়িকভাবে এড়িয়ে যাবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমার এখানে য়্যুনিভার্সিটির কচি ছেলেমেয়েরা কাজ করে তো, ছোট বাচ্চাদের ভাগ্য ভাল, তাই ওরা পাচ্ছে। আসল ব্যাপারটা আমরা সবাই জানতাম, আমাদের কাছে ছবিও আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খননকারীরা প্রত্নস্থানটিতে পুকুর কাটার মতো “নৃশংস”ভাবে খনন করেছেন। হাজার হাজার মৃৎপাত্রের অংশ তারা ফরাসি দলের মতোই অপ্রয়োজনীয় এবং মূল্যহীন মনে করে ফেলে দিয়েছেন। অধিদপ্তরের ট্রেঞ্চের পাশে একটি নীল সাইনবোর্ড “এই স্থানটি সংরক্ষিত, এখান থেকে কিছু নেয়া, এখানকার কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ইত্যাদি”র পেছনে অসহায় প্রত্নবস্তুগুলো আজও অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে।

সিঁদুরে মেঘেও ডরায় ঘরপোড়া সিংহ
ঠাকুরগাঁওয়ে আমরা দু’টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সংরক্ষণ ও পুনরায়নের কাজ করছি। স্থাপনা দু’টির একটিও অধিদপ্তরের তালিকাতে কস্মিনকালেও ছিল না। তার পরেও আমরা এই স্থাপনাদু’টির কাজ নিয়ে শঙ্কিত। তিনশ’ বছরের পুরনো রেনেঁসা-উত্তর রীতিতে তৈরি টংকনাথের অনন্যসাধারণ রাজবাড়ি কিংবা দৃষ্টিনন্দন পোড়ামাটির শিল্পসমৃদ্ধ তিনশ’ বছর প্রাচীন রাধামাধব মন্দির অথবা তিনশ’ বছর পুরনো স্থানীয় শিল্প ও স্থাপনারীতির পরিচয়বাহী গোবিন্দ জিউ-র মন্দির অথবা মুঘল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি বালিয়া মসজিদ ইত্যাদি স্থাপনাগুলো কেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় উঠলো না, সেই প্রশ্ন আমরা একদমই তুলতে চাই না। বরং অনন্তকাল ধরে স্থাপনাগুলো অ-তালিকাভুক্ত থাকুক, সেটাই আমাদের প্রার্থনা। আজকের লেখার প্রাসঙ্গিকতা যেটি আগেই বলেছি- উচ্চ গলনশীল নাসিকা। ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় সাংবাদিকরা আমাদেরকে এতোটাই আন্তরিকতা, সহমর্মিতা এবং আথিতেয়তা দেখাচ্ছেন যে, আমরা ভয় পাচ্ছি অচিরেই দু’একটি গণমাধ্যম আমাদের কাজের ব্যাপারটি প্রচার করে দিবেন। এবং ফল হিসেবে তৈরি হবে ঈর্ষা আর “আলো”র ভাগিদার হবার কামনা। পরিণতি- নিজের নাসিকা কর্তন করে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা অথবা অন্যের কর্তব্যে অপ্রয়োজনীয় নাসিকা গলন।

কাজীর গরু কিতাবেও নেই, গোয়ালেও নেই
বাংলাদেশের প্রচলিত প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইন বিষয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন আছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন লেখায় সেই বিষয়টি আমরা উত্থাপনও করেছি। আজকে আমরা আরেকটি বিষয় একটু খোলাখুলি বলতে চাই। সেটি হলো যে গরুটি কিতাবেও নাই, গোয়ালেও নাই সেই গরু দিয়ে হাল বওয়ানোর স্বপ্ন দেখা ঠিক হবে না। যে বিষয়টি আইনে নাই, সেই বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করলে তার পরিণতি কখনো ভালো হবে না। আমাদের সর্বশেষ অভিজ্ঞতা হলো এই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর। দিনাজপুর জেলায় একটি প্রত্নস্থানে খনন করেছেন জনাব স্বাধীন সেন। স্থানটি অধিদপ্তরের তালিকা-বহির্ভুত। সুতরাং এই প্রত্নস্থানটি থেকে প্রাপ্ত যে কোনো প্রত্ননির্দশন পরিবহন, হস্তান্তর, ক্রয়বিক্রয় ইত্যাদি সবকিছুই প্রচলিত প্রত্নসম্পদ আইন অনুসারে বৈধ (যদিও আইনের এই ধারাটি আমরা সমর্থন করি না)। এই প্রত্নস্থানের তারিখ নির্ণয়ের জন্য প্রত্নস্থান থেকে প্রাপ্ত ২০ গ্রাম কাঠকয়লা লন্ডন ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে দেয়া চিঠির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব মর্যাদাসম্পন্ন) যদি মন্ত্রণালয়ে পাঠান (যেটি আইন অনুসারে হতে পারে না, আগেই বলেছি), তা হলে তার চেয়ে দুঃখজনক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর কী হতে পারে? আমাদের অতীত-অভিজ্ঞতা হলো- এর পর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব চিঠি দেবেন এই লিখে- “যেহেতু এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অধিদপ্তরের পরিচালকের এখতিয়ারাধিন, সেহেতু এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কিছুই বলার নেই ইত্যাদি ইত্যাদি”। কিন্তু ক্ষতিটা বাংলাদেশের। যে সংস্থা তারিখ নির্ণয়ের জন্য অর্থায়ন করবে, যিনি এটি বহন করবেন এবং যে ল্যাবরেটরি এটি পরীক্ষা করবেন, দীর্ঘসূত্রিতারা কারণে তারা পিছিয়ে পড়বেন। এবং হয়তো কাজটি শেষাবধি হবে না। এই অলিখিত এবং অবাস্তব মোষের আক্রমণ থেকে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিকরা রেহাই চান।

মোষ তাড়ানো সহজ নাকি?
প্রত্নতত্ত্ব থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে কাজ করতে চান না। বেতনভাতার ব্যাপারটি আছে, তা ছাড়া আরেকটি কারণও আছে, সেটি হলো- ছাত্রাবস্থায়ই অধিদপ্তরের কাজের যে নমুনা তারা বিভিন্নভাবে দেখেন, কর্মক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিগুলোর অধীনে ঐ রকমভাবেই দেশের প্রত্নসম্পদ ধ্বংসের হাতিয়ার হতে চায় না প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থীরা। দেশে প্রত্নতত্ত্ব থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চারশ’, শিক্ষক আছেন প্রায় বিশ জন। অথচ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শীর্ষ পদ থেকে সর্বনিম্ন স্তরে তাদের একজনও নিযুক্ত নেই। অধিদপ্তরে যারা কাজ করেন, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। অন্য বিভিন্ন পেশায় হয়তো তারা ভাল করতেন, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পেশায় তারা যে দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাশাব্যঞ্জক। অধিদপ্তরে যে দু’চারজন শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তি আছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের চাপে তারাও অসহায়। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে আমরা যারা প্রত্নতত্ত্ব চর্চা করছি, আমরা জানি, কেবল গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং তথ্যপ্রকাশের কারণেই আমরা তা করতে পারছি। না হলে, অনাকাঙ্খিত মোষের আক্রমণ ঠেকানো সহজ হতো না। কিন্তু আমরা আর মোষ ঠেকাতে চাই না, এই মুহূর্তে প্রয়োজন মোষ তাড়ানো। দেশের অন্য সব সেক্টরের মতোই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরেও যেসব মোষ বসে আছেন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমাদের আহ্বান, এই মোষগুলোকে তাড়ানোর জন্য একটু উদ্যোগ নিন।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আপনাদের বিতৃষ্ণাটুকু অনুভব করতে পারছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রণদীপম বসু এর ছবি

দেশে প্রত্নতত্ত্ব থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চারশ’, শিক্ষক আছেন প্রায় বিশ জন। অথচ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শীর্ষ পদ থেকে সর্বনিম্ন স্তরে তাদের একজনও নিযুক্ত নেই। অধিদপ্তরে যারা কাজ করেন, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। অন্য বিভিন্ন পেশায় হয়তো তারা ভাল করতেন, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পেশায় তারা যে দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাশাব্যঞ্জক। অধিদপ্তরে যে দু’চারজন শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তি আছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের চাপে তারাও অসহায়।

একেবারে আমাদের মহান সংসদ ভবনের ভেতরের চেহারা। যেখানে আইন কানুন তৈরি হয়। অতএব মোষ তাড়ানোর যে বিষয়টি বললেন, তা ঐ ভবনের বড় বড় মোষগুলোকে না তাড়ানো পর্যন্ত আদৌ কি বাস্তবায়ন সম্ভব ? খুব বেশি আশাবাদী মানুষ বলেই হয়তো এসব দেখে শুনে প্রতিনিয়ত বেশি বেশি হতাশায় আক্রান্ত হই।

প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আপনার কাছ থেকে এমন আরো বেশি বেশি লেখা চাই। ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

Johurul Islam Prince  এর ছবি

প্রত্নতত্ত্বের ভান্ডার আমাদের এই বাংলার উৎকর্ষা বিশ্বের স্বর্ণদ্বাড় প্রান্তে পৌছে যাক।
সরকারি ও বেসরকারি সর্বস্তরের যৌথ উদ্দ্যোগ হোক আরও সফল।
উপরোক্ত যূথচারীর লেখাটি পরে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর হোক আরও আন্তরিক ....

কামনান্তে-
প্রিন্স, পাবনা থেকে।
মোবাঃ ০১৮১৮ ৫০০০০৪

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।