হায় পাহাড়! হায় বাঙালিপনা!!!

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: শুক্র, ২৬/০২/২০১০ - ৭:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্লগের ব্যানারে 'পাকিপনা' দেখে খুবই আমোদ অনুভব করলাম। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং ডিসেম্বরে পাকিস্তান-বিরোধিতা করাই উচিৎ। নইলে আর বাঙালি কিসের? লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত যে স্বাধীনতা, এইসব রসিকতার মধ্য দিয়েই তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সুতরাং সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন, আধিপত্য এবং বৈষম্যকে পাকিপনা বলার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন অত্যন্ত জরুরি। অভিনন্দন মডারেটরবৃন্দ! অভিনন্দন ব্যানারশিল্পী হিমু!! পাহাড়ের এই দুর্দিনে আপনাদের এই মহান কীর্তি বেদনা লাঘবে পূর্ণ টনিকের কাজ করবে!!!

ভাবছেন রসিকতা করছি? একদম না। সত্যিই আমি প্রীত। সত্যিকার অর্থেই একাত্তরের পাকিস্তানীদেরকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ে। বুকের বাম দিকে একটা সবুজ সবুজ আয়তাকার কাপড়ের মধ্যে একটা লাল লাল বৃত্তাকার চিহ্ন দেয়া। কাধে পেতলের ইংরেজি অক্ষরের লেখা এ আর এম ওয়াই। এরা হলো হানাদার বাহিনী। হায়, ক্যামেরা চালাতে পারলে দেখাতে পারতাম, কয়েকজন হানাদার পাহাড়ি মেয়ের দিকে তাকিয়ে যেভাবে জিভ বের করে অশ্লীল ইঙ্গিত করলো, তাতে আমি নিশ্চিত, এরা একাত্তরের পাকিস্তানীই। ওই জলপাই বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হত্যা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, উচ্ছেদ, দখল ও নিপীড়নের ঘটনার সত্যিই কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছিলো না।

সংবিধানে স্বীকৃতি নেই। বিশেষ করে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তো অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি পড়ে গেছে। এই অবস্থায় বোঝাই যাচ্ছিলো না, এরা আমাদের আত্মীয়, এরা আমাদের স্ব-দেশীয় কিনা?

প্রিয় মডারেটরবৃন্দ এবং প্রিয় হিমু! ধন্যবাদ হে!! এক্ষণে বোঝা গেলো- এরা হানাদার। এরা আসলে পাকি। এরা বিজাতীয়, বিদেশীয়। সুতরাং নিজের দেশ, সার্বভৌমত্ব এবং মানুষকে রক্ষার জন্য এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একাত্তরের প্রেরণায় উজ্জীবিত হতেই হবে। আপনাদের ইঙ্গিতেই বোঝা গেল- এই হানাদারদের রুখতেই হবে।

পাদটীকা: পাহাড়ে গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় কিছু কর্মসূচি চলছে; ময়মনসিংহ, সিলেট এবং খুলনাতেও। নিজ নিজ শহরের কর্মসূচিগুলোতে যোগ দিন। আগামীকাল শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় বাংলা একাডেমীর সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি আছে, বিকেল ৪ টায়, জমায়েত বিকেল সাড়ে ৩ টায় বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে। অন্য শহরের কর্মসূচিগুলোর খবর জানান। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য কফিল আহমেদের (০১৭৪৫৮৬৪১৯১) সাথে যোগাযোগ করুন।
৩ মার্চ বুধবার টিএসসি সড়কদ্বীপে সমাবেশ।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

পোস্টের মূল সুরে শ্লেষ নাকি ক্ষোভ, ঠিক নিশ্চিত হতে না পারলেও -

সত্যিকার অর্থেই একাত্তরের পাকিস্তানীদেরকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ে। বুকের বাম দিকে একটা সবুজ সবুজ আয়তাকার কাপড়ের মধ্যে একটা লাল লাল বৃত্তাকার চিহ্ন দেয়া। কাধে পেতলের ইংরেজি অক্ষরের লেখা এ আর এম ওয়াই। এরা হলো হানাদার বাহিনী। হায়, ক্যামেরা চালাতে পারলে দেখাতে পারতাম, কয়েকজন হানাদার পাহাড়ি মেয়ের দিকে তাকিয়ে যেভাবে জিভ বের করে অশ্লীল ইঙ্গিত করলো, তাতে আমি নিশ্চিত, এরা একাত্তরের পাকিস্তানীই। ওই জলপাই বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হত্যা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, উচ্ছেদ, দখল ও নিপীড়নের ঘটনার সত্যিই কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছিলো না।
এটা নিয়ে আমারও কোন দ্বিমত নেই।

মানুষ জাতটার তুলনা হয় না!!

যূথচারী এর ছবি

আমার ভাষা এতো দুর্বোধ্য কেনোওওওওওওওও? মিশেল ফুকোর প্রেতাত্মা ভর করেছে কিনা বুঝতেছি না।

এই পোস্টের সারমর্ম হচ্ছে- এক. পাকিপনা বলার মধ্য দিয়ে বাঙালির আধিপত্যশীল ঐতিহ্য ও নির্যাতনের মানসিকতাকে আড়াল করা হয় যে, সেটিকে একটু খোঁচা মারা। দুটি উদাহরণ দেই, ক্যারম্যান নামে আমার এক পাহাড়ি বন্ধুর সাথে কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী মহলে ঘুরঘুর করলাম, অধিকাংশ লোক-ই তার কাছে জানতে চায়- পাহাড়ে এখন জমির দাম কেমন? পাহাড় কেনা বা লীজ নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা, ইত্যাদি। সেদিন কফিল ভাইয়ের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে জানা গেলো- চলমান আন্দোলনে সক্রিয় অনেক বুদ্ধিজীবী ও কর্মীরই পাহাড়ে ব্যবসা আছে, অনেকেই সেখানে পাহাড় লীজ নিয়েছেন। এই যে দখলের প্রবণতা এটা বাঙালির মজ্জাগত (ঐতিহ্যবাহী)। এই প্রবণতা কমবেশি সব জাতিরই আছে। কিন্তু চলমান এবং আমার পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায়, বাঙালিই এখানে ভিলেন। সুতরাং বাঙালির পাকিপনা মানে, আমার কাছে মনে হয়েছে, বাঙালি আসলে পাকি না, মনের ভুলে পাকি হয়ে গেছে; থুক্কু বলে আবার শুরু করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে- এই অবস্থানটির আমি বিরোধিতা করি। এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক তাৎপর্য এর মাধ্যমে আড়াল হয়ে যায়।

দুই. সত্যিকার অর্থেই আমি আবার খুশিও। কারণ এর মধ্য দিয়ে বাঙালি যে পাকি (মানে পাহাড়ে অন্তত), সেটা খোলাসা হয়। এখানে একদল যে হানাদার, এটা এই ব্যানারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, কবি এই পোস্টের মাধ্যমে এক খুশিমিশ্রিত শ্লেষের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

অমিত এর ছবি

পাহাড়ে জমি কেনা খারাপ কেন ? দখল না, কেনা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পাহাড়ে জমি কেনা যায় না, পাহাড় ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়ার সিস্টেম আছে। তবু কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। পাহাড় সবাই লিজ পাবে না, পাহাড়ি সংশ্লিষ্ট কারো রেফারেন্সেই এটা পাওয়া সম্ভব। এরকমই জানি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যূথচারী এর ছবি

@ অমিত > একি কথা শুনি তব মুখে? পাহাড়ে জমি কিনবেন কিভাবে? জমির মালিকানা বিষয়ে বাংলাদেশের আইন কি বলে? বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও মুসলিম ও হিন্দু পারিবারিক আইনে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য করা হয়েছে, রাষ্ট্র সেটিকে মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ সম্পত্তির মালিকানা, বণ্টন ও বিক্রির ক্ষেত্রে আইনকানুন আছে। মুসলিমদের ক্ষেত্রে তা মুসলিম পারিবারিক আইন ও মুসলিম সম্পত্তি আইন; হিন্দুদের ক্ষেত্রে হিন্দু পারিবারিক আইন ও হিন্দু সম্পত্তি আইন। পাহাড়িদের ক্ষেত্রেও (এবং সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও) তাদের নিজস্ব সম্পত্তি আইন আছে, পারিবারিক আইন আছে। ব্রিটিশ সরকার সেটি মেনেও নিয়েছিলো। সেখানে জমির মালিকানা ছিল সামাজিক (প্রকারান্তরে জাতীয়, মানে আদিবাসীদের জাতীয়)। কিন্তু সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদ ফরমান জারি করে সেটি বাতিল করে। কিন্তু ভূমি সংস্কার বা ভূমি বিন্যাস না করে সেখানে সেটলার প্রবেশ করায়; এবং জমি ও পাহাড়গুলোকে রাষ্ট্রীয় অথবা খাস সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। সেটলাররাও অনেক জমি ও পাহাড় নিজেদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে নেয়। এর ফলে আদিবাসীদের অনেকেই জমি ও পাহাড় থেকে বঞ্চিত হয়। মুসলমানদের ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় নীতি চলবে, হিন্দুদের ক্ষেত্রে তাদের জাতীয় নীতি চলবে; কেবল আদিবাসীদের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই থাকবে না; এটা কি করে চলে?

নিচে নজরুল ভাই যে মন্তব্যটি করেছেন, তার সাথে একমত পোষণ করে বলছি, এই কথা কিভাবে উঠতে পারে যে- বাংলাদেশের পাহাড়ে বাঙালি থাকবে না বা যাবে না বা অধিকার থাকবে না কেন? যারা এই প্রশ্ন করছেন, তারা কি তাদের নিজের পারিবারিক সম্পত্তিও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি মনে করেন? এক হাতিরঝিল প্রকল্প করতে যে আন্দোলন হলো, তাতেই বোঝা যায়, পুরো ঢাকাকে যদি কোনো কোম্পানী বা ব্যক্তির কাছে লীজ দেয়া হয়, চিত্রটা কেমন হবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের মোট ভূমি তো ঢাকার থেকে অনেক বড়ো। রাষ্ট্র অবশ্যই এই ভূখণ্ডের সকল সম্পত্তির অধিকারী। কিন্তু জমির মালিকানা বলে একটি ব্যাপার যেহেতু এখনো টিকে আছে, সুতরাং সেটিকে সেই নির্দিষ্ট নিয়মেই প্রতিপালন করতে হবে।

কাজে কাজেই, আদিবাসীদের সম্পত্তি আপনি কিনতে বা লীজ নিতে পারেন না। কেননা, আদিবাসীরা তা বিক্রি করতে চায় না। আমার বা আপনার পৈত্রিক বাড়িটি কেউ যদি ৯৯ বছরের জন্য লীজ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে এবং কিছু ঘুষটুষ নিয়ে স্থানীয় ভূমি অফিস যদি সেটি অনুমোদন করে দেয়, আপনার কেমন লাগবে? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একদল লোক লাঠিসোটা নিয়ে এসে বলছে, ওঠো তোমাদের বাড়ি ও জমি আমি লীজ নিয়েছি। তোমরা বিদেয় হও। আর আপনি আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলবেন- স্বাগতম, হে মহান অতিথি!???


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ব্যাখ্যা থেকে অনেক কিছু জানতে পারা গেল। পাহাড়িদের ভূমি বন্টন ব্যবস্থা যেটা বললেন সেটা কি সব ক্ষেত্রেই একই রকম? সমাজতন্ত্রের মত মনে হল।
----------
সংযোজনঃ
পাহাড়ি বা আদিবাসিদের মধ্যেও তো রকম ফের আছে। নানা জাতিগোষ্ঠী পাওয়া যাবে এদের মধ্যেই। এদের সবার সাথে বসে এসব জাতিগোষ্ঠীর ভেতরের আইন-কানুন আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য বা এক্সেম্পশনের সীমারেখাগুলো নির্ধারনের কোন প্রয়াসকি ছিল? যদি না থাকে তাহলে প্রশ্নঃ
পাহাড়িদের মধ্যে যদি চুরি-ডাকাতি-খুন ইত্যকার অপরাধ হলে সেগুলো কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে হবে নাকি তাদের আভ্যন্তরীন আইনে। যদি কোন বাঙালী পাহাড়িদের এলাকায় গিয়ে কোন অপরাধ করে সেটার বিচার কিভাবে? পাহাড়ীরা কি চাইলে তাদের আইনে একজন বাঙালীকে শাস্তি দিতে পারেন নিজেদের আইনে? এই বিষয়ে যদি আইন সুস্পষ্ট না থাকে তাহলে কিন্তু কেবল মানবতার কথা বলে নির্যাতন ঠেকান যাবে না। পাকিরা আমাদের মাটিতে যেটা করেছে সেটা যেমন দানবিয় বাঙালীরা পাহাড়ে যেটা করেছে সেটাও তেমন। কেবল পাকিদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মন্দ কাজকে পাকিপনা বললেই দায় শেষ হয়না। পাহাড়িদের অধিকার কি, কেমন সেগুলো সুস্পষ্ট এবং স্বচ্ছভাবে লিপিবদ্ধ থাকুক। এমন যাতে সবাই সেগুলো জানতে পারে। আর পাহাড়িদের সেগুলোতে সম্মতি আছে কিনা সেটাও যেন নিশ্চিত করা হয়। তাদের নির্ধারিত প্রতিনিধিরাই যেন তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন সেটাও দেখা দরকার। কেবল অধিকার দেবার কথা বললেই চলছে না। সেটা কেন বার বার খর্ব হচ্ছে তার উৎসগু্লোও খতিয়ে দেখা দরকার মনে করি।

যূথচারী এর ছবি

মূল মন্তব্য প্রসঙ্গে: সমাজতন্ত্রের মতোই, তবে ঠিক সমাজতন্ত্র না। আর সব জাতিসত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এক রকমও না।

সংযোজন প্রসঙ্গে: হায় হায়! ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য ছিল না, আমি বলেছি পারিবারিক ও সম্পত্তির অধিকার বিষয়ক আইনের কথা। বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাদের ধর্ম অনুযায়ী পারিবারিক ও সম্পত্তির অধিকার, বণ্টন ও ক্রয়বিক্রয় নিষ্পত্তি করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই নানা ধরনের আইনের বিরোধী, কিন্তু কারো জন্য অনেক সুবিধা, কারো জন্য কিছুই না, এই ব্যাপারটা মানতে পারছি না। আর তা ছাড়া, আদিবাসীদের জন্য বিশেষায়িত ব্যবস্থাটা বাতিল করার প্রেক্ষিতে বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা তো করতে হবে, তাই না? ধরুন, মুসলিম পারিবারিক আইন বাতিল করা হলে, তার বিকল্প আইন তৈরি করতে হবে। মুসলিম সম্পত্তি আইন বাতিল করা হলেও তার বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আদিবাসীদের বিশেষ ব্যবস্থা বাতিল করার সময় রাষ্ট্র কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই অবস্থাটার সুযোগ নিয়েছে, সেটলার-রা (অথবা বলা যায়, রাষ্ট্র তাদেরকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে)। তবে, হ্যা, সংঘাতের সূচনা কিন্তু তারো অনেক আগে থেকেই। মূলত আইয়ুব খানের আমল থেকে এই সংঘাত গুরুতর হয়ে ওঠে এবং তার কারণও এই সেটেলমেন্ট।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

নানাধরনের আইন সবক্ষেত্রে খারাপ নয়। কারন রাষ্ট্রীয় আইনের গড়ের পরিসরে রাষ্ট্রে বসবাস কারি নানা ধর্ম আর জাতীয়তায় বিশ্বাস করা সম্প্রদায়গুলোর বিশ্বাসকে যায়গা দেয়া কঠিন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন এসে যায় সীমারেখা নির্ধারনের। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষুদ্র জাতীগোষ্ঠিদের আভ্যন্তরীন নিয়ম থাকতে পারে (আমার বিশ্বাস, আছে)। পাহাড়িদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ থেকে শুরু করে ছোট বড় অপরাধের বিচার বা মিমাংসার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে বলেই আমার ধারনা। কারন অপরাধ আর তার বিচার সম্পর্কের এদের বিশ্বাস একটা গুরুতর নিয়ামক হতে পারে বলে মনে করি। আমার ধারনা আইনে অস্বচ্ছতা আর প্রয়োগে দুর্বলতা থাকার দরুনই পাহাড়িদের সাথে বার বার বাঙালীপনা করা সম্ভব হচ্ছে। আর সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে আইনকে বাস্তবানুগ করা এবং আইনের প্রয়োগের ব্যপারে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে না। তাদের আভ্যন্তরীন সংস্কার আর বিশ্বাসকে যতটুকু সম্ভব মূল্য দিয়ে তাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে প্রচলিত আইনে বড় ধরনের সংস্কার করে হলেও পাহাড়িদের ঘিরে তৈরি সমস্যার টেকসই সমাধান দরকার।

অমিত এর ছবি

আপনি যেটা বললেন সেটা দখল, কেনা নয়। জমির মালিক যদি কেউ থাকে, তাহলে বিক্রি অথবা লীজ দেয়ার অধিকার তার, সরকারের না।অবৈধ দখলকে সমর্থন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।তবে পাহাড়ে বিক্রয়যোগ্য জমি কেনার অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের একই রকম হওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হল পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় জমি কি একেবারেই নেই ?

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আপনি যেটা বললেন সেটা দখল, কেনা নয়। জমির মালিক যদি কেউ থাকে, তাহলে বিক্রি অথবা লীজ দেয়ার অধিকার তার, সরকারের না।

এইটাত কথা ঠিকই আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনে কি তাদের মালিকানার অধিকার স্বিকার করা আছে? তাদের কাছে তো কাগজ পত্র নাই। যদি এখানে অস্পষ্টতা থাকে তাহলেই কিন্তু শক্তিমানেরা সেখানে গিয়ে ছড়ি ঘোরাবে আর তাদের অধিকার খর্ব হতে থাকবে (যেমনটা হচ্ছে আরকি!)। মানবতার নামে মিছিল হবে মানববন্ধন হবে, লোকদেখান শান্তিচুক্তি হবে আবার দুইদিন পরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। আইনে অস্পষ্টতা থাকলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুর্বলেরা। আর রাজনীতির কলকাঠি যারা নারেন এরা কেউত দুর্বলদের দলে পড়েননা। এরা হলেন শক্তিমান। কাজেই নিজেদের স্বার্থেই আইন-কনুনের মধ্যে ফাঁক রেখে দিলে এদের সুবিধা হয়। ডলা খায় দুর্বলেরা, শক্তিমানেরা আর তাদের ক্যাডাররাই সবচেয়ে বেশি বলে মানবতার কথা! কেউ আইন কানুন আর প্রয়োগের কথা বললেই বলে হাইকোর্ট দেখাইওনা আমরা বঙ্গাল হাইকোর্ট বুঝিনা। আবার গরীবের পেটে লাথি মারার দরকার হলেও হাইকোর্টকে ব্যবহার করতেও হয়ত তারাই আগে যাবে। এইটা হইল শক্তির সমীকরন।

তানভীর এর ছবি

তবে পাহাড়ে বিক্রয়যোগ্য জমি কেনার অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের একই রকম হওয়া উচিত।

আমেরিকার ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশনে নেটিভ আমেরিকান আর সাধারণ নাগরিকদের জমি কেনার অধিকার কি একই রকম? অবশ্যই না। আম্রিকার প্রেসিডেন্টেরও ক্ষমতা নাই ইন্ডিয়ানদের পারমিশন ছাড়া ওইখানে জমি কেনার। তবে বাংলাদেশে পাহাড়ে সব নাগরিকের জমি কেনার অধিকার একই রকম হওয়া উচিত কেন?

অমিত এর ছবি

আমেরিকায় নেটিভ আমেরিকান আর বাংলাদেশে পাহাড়িদের যে অবস্থান আর ইতিহাস, দুটোকে কি একই পাল্লায় মাপা যায় ?
মনে করেন পাশের দেশ ভারতের কথা। একজন পান্জাবী শিখ যদি চায় যে দার্জিলিং-এ একটি বাংলো বানিয়ে থাকবে, তাহলে কি সেটাতে তার অধিকার নেই ? তবে সিকিম/কাশ্মীর/লাদাখে যে সে সেটা সহজে পারবে সেটা বলাই বাহুল্য।এখন প্রশ্ন হল, পার্বত্য চট্টগ্রামকে আমরা কোন দলে ফেলব ?

আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি জানতে চাওয়া হয়, তাহলে বলব যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা বা ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরেই, কিছু কিছু জায়গা লীজ বা বিক্রির বাইরে রাখা উচিত। এখন কোন জায়গা বা কতখানি জায়গা আর সেটা কারাই বা ঠিক করবে, সেই সম্পর্কে কোনও আইন আছে কি না, সেটা আমার জানা নেই।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অমিত,
উত্তর-পূর্ব ভারতের আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে এখন আর অন্য অঞ্চলের ভারতীয়রা গিয়ে জায়গা জমি কিনতে পারেননা। ( স ম্ভবতঃ) '৭৯ এর আগে এটি পারা যেতো। এর ফলে দেখা গেলো ঐ অঞ্চলের বেশীর ভাগ জমির মালিক হয়ে যাচ্ছে অনাদিবাসীরা যারা ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের সাথে একাত্ব না।

পরবর্তীতে ব্যাপক আন্দোলনের ফলে ঐ আইন কার্যকর হয়। শুধু আদিবাসী নয়, অনাদিবাসী স্থায়ী মালিকরা ও নিজেদের ভূমি বাইরের কারো কাছে বিক্রী করতে পারবেনা।

পৃথিবীর বহুদেশেই আদিবাসীদের এই সুযোগ দেয়া হয় তাদের টিকে থাকার প্রয়োজনে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সংবিধানে স্বীকৃতি নেই। বিশেষ করে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তো অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি পড়ে গেছে।

পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ার আগে পাহাড়বাসীদের অস্তিত্ব খুব টিকে ছিলো কি?
সেনা তত্বাবধানে সমতল থেকে কয়েক লাখ মানুষ নিয়ে পাহাড়বাসীদের উদ্বাস্তু বানানো হয়েছে কি পঞ্চম সংশোধনীর আগে না তার সময়েই?

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলনের পেছনে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ একটা প্রধান নিয়ামক ছিলো- এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। সে হিসেবে সংবিধানে তার উল্লেখ ও থাকতে পারতো কিন্তু অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি না দেয়া আদি সংবিধান প্রণেতাদের বিরাট অন্যায়। এটি সংশোধনের দরকার ছিলো , এখনো আছে।

কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী এই অন্যায়ের সংশোধন হলো কি করে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকের জাতীয়তা বাংলাদেশী ঘোষনা করে তো বরং- বাঙ্গালী, চাকমা, মারমা, মনিপুরী, গারো, হাজং সহ সকল জাতিগোষ্ঠীর জাতি পরিচয়ই বিলীন করে দেয়া হয়েছে।

পঞ্চম সংশোধনীর আগে কেবল বাঙ্গালী জাতির স্বীকৃতি ছিলো, অন্যদের ছিলোনা- পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাঙ্গালীর স্বীকৃতি ও গেলো অন্যদের সাথে, সবার স্বকীয়তা দুমড়ে মুছড়ে সামরিক ফরমানে নতুন জাতি তৈরী হয়ে গেলো- এই যদি হয় স্বান্তনা তাহলে কিছু বলার নেই।

সংবিধানে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

যূথচারী এর ছবি

পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের ভালো দিক হলো- ধর্মের জায়গাটা অন্ততপক্ষে গ্যাছে। তবে পুরা মুছে ফেলতে পারলে আরো ভালো হতো। তবে জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে আপনি যে সান্ত্বনার কথা বললেন, ওই সান্ত্বনার জায়গাটি নয়, আমি এর বিরোধী জাতীয়তাবাদ বিরোধী আমার অবস্থানের কারণে। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে একটি জাতিকেই কেবল স্বীকার করা হয়েছে, এই ভয়াবহতাটাই নজরে আনতে চেয়েছি। (এর আগে, মানে পঞ্চম সংশোধনীর আগের অবস্থা, এর চেয়েও খারাপ, সেখানে কোনো জাতিরই স্বীকৃতি নেই, এমনকি অধিপতি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরও ছিল না; কিন্তু বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে অধিপতিকে আধিপত্য করার যে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, আমি তার-ও বিরোধী)।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদ- এই উভয় বিরোধী লোক। বিশেষ অবস্থায়, জাতীয়তাবাদ সেই পর্যন্ত মানতে রাজি, যতোক্ষণ অন্য জাতকেও সম্মান প্রদর্শন করা হয়। বাঙালি জাতির বিকাশের সাথে এই সম্মানবোধের কোনো ব্যাপার ছিল না। ব্যাপারটা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে এমন নয়, তবে বাঙালি জাতির বিকাশ আধিপত্যের মাধ্যমেই। (অধিকাংশ ধর্মত্যাগী মানুষকে নতুন একটি জাতীয় পরিচয়ে পরিচিত করানো হয়েছে, উপনিবেশ থাকার কারণে, উপনিবেশিক শাসকের মতি এবং তাদের করা সেন্সাসগুলোতে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। না হলে, শুধু ধর্মত্যাগ করার কারণেই আমি কেন ম্রাইনমা (ভুল বানানে মারমা) নই? পাহাড় ছেড়ে সমতলে এলাম এবং মুসলিম হলাম- সুতরাং জাত বদলে হয়ে গেলাম- বাঙালি। যেন জার্মানি গিয়ে খ্রিস্টান হলেই বাঙালি হয়ে যাবে- জার্মান!)

একটু ইতিহাস দেখুন। কয়েকশ' বছর আগেও এই অঞ্চলে বাঙালি বলে কোনো জাতি ছিল না। বাংলা ভাষার যে প্রাচীন নিদর্শনগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো আদতে বাঙালির বা বাংলায় নয়। আঞ্চলিক ভাষা ও বিভিন্ন ছোট ছোট জাতীয় পরিচয়ে নির্মিত ও রচিত সেই কর্ম। ইউরোপ কিন্তু এই জাতগুলোকে প্রতিটিকেই আলাদা আলাদা জাত (ন্যাশন) হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে এরা হয় উপজাতি বা গোত্র বা গোষ্ঠী।

রাষ্ট্র বা জাতীয়তাবাদ যে ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরই হতে হবে, তেমন নয়। ইউরোপ, প্যাসিফিক এবং ক্যারিবিয়ান বহু রাষ্ট্র আমাদের দেশের শত, এমনকি হাজার ভাগেরও এক ভাগ হবে না। এই বিশ্লেষণ নিয়ে আমি সচলায়তনে বরাবর সমস্যায় পড়েছি। কারণ এখানকার অনেকেই (এমনকি সুমন ভাই-ও) জাতিত্ব ও জাতীয়তাবাদ প্রত্যয়দুটিকে আলাদাভাবে বিবেচনা করেন। ইউরোপের আধিপত্যশীল ইতিহাস ও রাষ্ট্রচিন্তার কারণে আমাদের মনে এই ধরনের একটি পূর্ব-রাগের (প্রি-কনসেপ্ট) সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপের মানচিত্রের দিকে তাকান, সেখানে এথনিসিটি মানেই ন্যাশনালিটি এবং একটি আলাদা ন্যাশন। কিন্তু এশিয়া (ওরিয়েন্ট) বিশ্লেষণে তারা বেছে নিয়েছে স্বাধীন স্বেচ্ছাচারিতা; এখানে কাউকে তারা বলছে ন্যাশন, কাউকে বলছে এথিনক গ্রুপ। সিয়ান জোন্সের বইটির কথা বার বার বলি। উনি প্রায় ৩০ টির মতো লক্ষণ বিশ্লেষণ করেছেন, আমি নিজে আরো প্রায় ২০ টির মতো লক্ষণ বিশ্লেষণ করেছি। কোনো লক্ষণ দিয়েই এটা প্রমাণ করা যায়নি, জাতিত্ব এবং জাতীয়তাবাদ আলাদা এবং কোনো ভাবেই জাতিত্ব বা জাতীয়তার একটি নির্দিষ্ট লক্ষণও নির্ধারণ করা যায় নি। ভাষা বা ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদ তো একদম শুরুতেই বাদ পড়ে, কেননা একই ধর্মাবলম্বী বা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে বহু জাতের দেখা যেমন মেলে, তেমনি একই জাতের মধ্যেও বহু ভাষা ও বহু ধর্মের দেখা মেলে। এই ব্যাপারটি মেনে না নিলে আপনার সাথে আমার কোনোদিন-ও মিলবে না। আর প্রত্যেকবারই আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন।

যাই হোক, এই তর্ক থাক। কাজের কথায় আসি। পাহাড়ে নিপীড়নের প্রতিবাদে কি করা যায়, একটু ভাবেন। এবং কর্মসূচিগুলোতে আসেন এবং অন্যদের আসতে বলেন।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাক ভুল বুঝা আপাততঃ শিকেয় তুলে রাখা হোক।
সংজ্ঞা টংজ্ঞা পরে পাওয়া যাবে।

মানুষের অপমান হচ্ছে বারবার। এটি বন্ধ হওয়া জরুরী।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

মানুষের অপমান হচ্ছে বারবার। এটি বন্ধ হওয়া জরুরী।

এইটাই বটমলাইন

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তোমার কমেন্টের শেষ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে বলতে পারি যারা সশরিরে দেশে নাই ভার্চুয়াল জগত থেকে অন্তত কী-বোর্ড চালিয়ে পাহাড়ে চলমান বর্বরতার প্রতিবাদ করতে পারি। যারা সশরিরে যোগ দিতে পারেন তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকলো সম্ভব হলে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে।



অজ্ঞাতবাস

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকের জাতীয়তা বাংলাদেশী ঘোষনা করে তো বরং- বাঙ্গালী, চাকমা, মারমা, মনিপুরী, গারো, হাজং সহ সকল জাতিগোষ্ঠীর জাতি পরিচয়ই বিলীন করে দেয়া হয়েছে

এই কথাটুকু বুঝি নাই হাসান ভাই। ব্যক্তি হিসাবে সবাই কিন্তু সবাইর থেকে আলাদা। কোন না কোন ভাবে। তাইলে আমাকে বা আপনাকে বাঙালি বললে কি আমাদের মন খারাপ করা উচিত? আমাদের ব্যক্তি স্বকিয়তা এই সম্প্রদায়ের পরিচয়ের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে! বকা ঝকা না করে এই ব্যপারটা যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন! পাহাড়িকে তাহলে বাঙালী হওয়ার চেষ্টা করা উচিত কি?

----------------
সংযোজনঃ বাংলাদেশের রাষ্ট্রের নাগরিকের জাতীয়তা আসলে কি হওয়া দরকার বলে মনে করেন?

যূথচারী এর ছবি

হ্যা, মূল প্রশ্নটি এবং সংযোজন উভয়ই খুবই গুরুতর প্রশ্ন। কিন্তু দুইটাকে একসাথে যুক্ত করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

উল্টো থেকে শুরু করি, বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয়তার দরকারটা কি? মানে জাতীয়তা ব্যাপারটারই বা কি দরকার? আচ্ছা ধরলাম, পৃথিবীর সব দেশের মানুষের একেকটা পরিচয় আছে, বাংলাদেশের মানুষের-ও একটা পরিচিতি থাকা দরকার। সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, বকবক, এটাসেটা, নানাকথা, মারপ্যাচ ইত্যাদি নানা বিষয় মিলে যে স্বতন্ত্র পরিচয়, তার একটা নামকরণ করা দরকার। তাহলে, দ্বিতীয় প্রশ্ন, সেটি কেবল অধিপতিশীল মানুষদেরই দরকার কেন? অথবা অধিপতির পরিচয়েই কেন সকলকে পরিচিত হতে হবে। স্বাতন্ত্র্য বললে তো অন্যদের স্বাতন্ত্র্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ একটি বহুজাতিরাষ্ট্র [তা এই জাতিগঠন প্রক্রিয়া যেভাবেই হোক না কেন, এবং এই জাতিগঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা কিংবা সংবিধানে জাতিগঠন প্রক্রিয়ার সূত্র তৈরি করা (যা বাংলাদেশের সংবিধানে করা হয়েছে) রাষ্ট্রের কাজ নয়, রাষ্ট্রের কাজ হলো, হয় সকল জাতিকেই স্বীকৃতি দেওয়া অথবা জাতীয়তা ব্যাপারটি সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালা থেকে ছেড়ে দেওয়া]। বাঙালি একটি স্বতন্ত্র জাতি বটে, তবে তা কেবল ভাষাভিত্তিক নয়; ভাষা ধরলে সিলেটীদেরকে অবাঙালি বলতে হবে, কেননা গুরুত্বপূর্ণ কিছু গবেষণা যে তাদের ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশের ধারাকে পুরো অ-বাংলীয় (মানে বাংলার মতো নয়) প্রমাণ করেছে! যাই হোক, যেভাবেই হোক, বাঙালি একটি জাতি এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রায় একশত অন্য (পুরনো সরকারি হিসেবে ষাট) জাতিগুলোও স্বতন্ত্র জাতি। ব্যক্তি হিসেবে আমরা যেমন আলাদা, তেমনি সম্প্রদায়গতভাবেও। আপনি হয়তো এক ভাষায় কথা বলেন, আমি অন্য ভাষায়; আপনি হয়তো এক ধর্ম পালন করেন, আমি অন্য ইত্যাদি ইত্যাদি। তেমনি জাতিগঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও তৈরি জাতিসত্তাগত স্বাতন্ত্র্যও আছে। এবং জাতিগত পরিচয় যদি নির্ধারণ ও স্বীকৃতি যদি করা হয়, তবে তা প্রত্যেকেরই থাকা উচিৎ। আপনার রাইফেল আছে বলে অথবা আপনার দলভারী বলে কেবল আপনার পরিচয়ই থাকবে, আর আমার থাকবে না, আপনার পরিচয়ে আমাকে পরিচিত হতে হবে, সেটি হতে পারে না। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুকের মতো, বাবার নাম ভালো না বলে অন্য কারো বাবার নামে পরিচিত হওয়ার মতো ব্যাপার।

বাংলাদেশের নাগরিকদের আসলে ১ টি জাতীয়তার কোনোই দরকার নেই। ১ টি নাগরিকত্ব (নাগরিক পরিচয়) দরকার। জাতিগত পরিচয়, যার যার তার তার। একসময় হতো এটাও দরকার হবে না। এবং তখন এমন একটি প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে আপনাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হতে পারে, আর এই প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য অন্য ব্লগারদের সাথে আমাকেও মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হতে পারে। সেই সম্মানের অপেক্ষায় থাকলাম।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

বাংলাদেশের নাগরিকদের আসলে ১ টি জাতীয়তার কোনোই দরকার নেই। ১ টি নাগরিকত্ব (নাগরিক পরিচয়) দরকার। জাতিগত পরিচয়, যার যার তার তার।

আপনার উত্তর ভাল্লাগল। ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রিয়াজ ভাই,
আমি কি বেশী বকাঝকা করি নাকি হাসি
আচ্ছা বকাঝকা না করেই বুঝানোর চেষ্টা করি আবার , আমি কি বলতে চাইছিঃ-

আমি যতোটুকু বুঝি জাতি ধারনাটা রাষ্ট্র নিরপেক্ষ অর্থ্যাৎ রাষ্ট্র জাতি তৈরী করেনা। রাষ্ট্র যা তৈরী করে সেটা নাগরিকত্ব। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ফলে যদি বাঙ্গালী, চাকমা, মারমা, মনিপুরী সহ এই ভূ-খন্ডের সকল জাতিগোষ্ঠীর জাতীয় পরিচয় হয়ে যায় বাংলাদেশী, তাহলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সময়ে আমাদের জাতীয়তা ছিলো পাকিস্তানী, বাংলাদেশ রাষ্ট্র বদলে যদি অন্য কিছু হয় কোনদিন তাহলে সেদিন আবার নতুন জাতীয়তা!

আসলে কিন্তু তা হচ্ছেনা। বাংলাদেশ আদি সংবিধান যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক মানেই বাঙ্গালী জাতি বলে থাকে সেটা ঘোরতর অন্যায়- তেমনি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয়তা বদলে যখন বাংলাদেশী করা হয়েছে সেটা ও অন্যায়। কারন এর মাধ্যমে বাঙ্গালী, অবাঙ্গালী সকল জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় অস্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অধিবাসীদের নাগরিক পরিচয় মাত্র। এই পরিচয় একজন বাঙ্গালী, চাকমা, মনিপুরীর জাতীয় পরিচয়কে প্রতিস্থাপিত করতে পারেনা। গর্ডন গ্রীনিজকে দেয়া নাগরিকত্বের বিনিময়ে তিনি বাংলাদেশী হন- বাঙ্গালী হন না।

যুক্তরাজ্যের উদাহরন দেই। যুক্তরাজ্যের সকল নাগরিক মাত্র বৃটিশ। এই বৃটিশদের মধ্যে জাতিগত ইংরেজ আছে, স্কটিশ আছে, আইরিশ আছে। রাষ্ট্রের কোন অধিকার নেই কারো জাতীয়তা বদলে দেয়ার কারন রাষ্ট্র তৈরীর আগে ও জাতীয়তা ছিলো, রাষ্ট্র না থাকলে ও থাকবে।

জাতি পরিচয় গড়ে উঠে একটি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের ভাষা, আচরন, সংস্কৃতিগত সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে। অপরদিকে রাষ্ট্র একটি লৌকিক ও রাজনৈতিক সংগঠন মাত্র। রাষ্ট্র বা নাগরিক পরিচয় যতো সহজে বদলে যায় জাতি পরিচয় অতো সহজে বদলযোগ্য নয়।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ঠিক আছে। জাতীয়তা আর নাগরিকত্বের পার্থক্যটা গ্রহনযোগ্য। যুথচারি ভাইও এই কথাই বলেছেন। তবে একটা বিষয় যোগ করতে চাই, বলা উচিত প্রশ্ন করতে চাই। এইযে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা এত রকম জাতিসত্ত্বার সমন্বয়ে তৈরি সেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংহতির বুনিয়াদ হিসাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রগত ধারনাই কিন্তু আমার কাছে বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। একজন ব্যক্তি চাইলে নিজেকে নানাভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারে - বাঙ্গালি, মুসলিম, হিন্দু, বামপন্থী, ডানপন্থী, ...। একজন বাঙ্গালি কিন্তু চাইলে ভাবতেই পারে তার কাছে এই জাতীয়তা বোধের চেয়ে তার কাছে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থেকে উৎপন্ন আইডেন্টিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আবার অন্যরকমও হতে পারে। কারুর কাছে তার ধর্মভিত্তিক পরিচয়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে। আবার কেউ কেউ আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বেও ভুগতে পারে। বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের ছাতার তলে যখন সবাইকে একসাথে দেখতে চান তখন কোন ব্যপারটাকে বুনিয়াদি মনে হয়? দেশটাইত নাকি? এখানে যদি হঠাৎ করে একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা জাতিয়তাবোধকে সার্বজনীনতা দেবার চেষ্টা করা হয় সেটাকি আরোপিত আর কৃত্রিম হয়ে পড়ে না? আমার তো মনে হয় জাতিয়তাবাদের পাশাপাশি জাতীয়তা বোধের ব্যপারটাও অনেকটা মৌলিক এবং ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বাধীনতার একটা বড় উপকরন। সেখানে কি আরোপিত কিছু ঢেলে দেয়া কি সাজে? আমি মনে করি জাতিয়তার সংজ্ঞার চেয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে নিজেকে আইডেন্টিফাই করার স্বাধীনতা থাকাটা জরুরী। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংহতির দরকারটাও ফেলনা নয়। সেই প্রয়োজনকে যদি আপনি জাতীয়তার সংজ্ঞায় বাঁধতে নাও চান তবু সেটাকে কোননা কোন ভাবে সনাক্ত করা দরকার। সেক্ষেত্রে দেশ/রাষ্ট্র কি কাজে আসতে পারেনা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনি একটার সাথে আরেকটাকে কেনো সাংঘর্ষিক ভাবছেন?
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হতে হলে কেনো আমাকে আমার বাঙ্গালীত্ব বিসর্জন দিতে হবে, কেনো একজন চাকমা'কে তার জুম্ম জাতিস্বত্বা বিসর্জন দিতে হবে?

নাগরিকত্ব বজায় রাখতে যদি ধর্ম বিসর্জন দিতে হয় মানবেন নাকি? মানুষ রোবট নয় যে সে একটা কোড নেমেই তার আইডেনটিটি। মানুষ একই সাথে অনেকগুলো আইডেনটিটি ধারন করে।
একটা আইডেনটিটি বজায় রাখার জন্য অন্যটি বিসর্জন দিতে হয় তখন ব্যাপক 'হেজিমনি' হয় রিয়াজুদ্দিন ভাই।

নাগরিকত্ব, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তা( যেমন বাঙ্গালী, জুম্ম) এদের মধ্যে যদি তুলনা করা হয়- নাগরিক পরিচয় সবচেয়ে টুনকো। ৩৯ বছর আগে ও আমাদের নাগরিক পরিচয় ভিন্ন ছিলো, ৩৯ বছর পরে যদি আবার ভিন্ন হবেনা এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে?
ধর্ম এমন এক পরিচয় যে কেউ চাইলে যে কোন মুহুর্তে বদলে ফেলতে পারে।

কিন্তু ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তা ও বদলায় কিন্তু অনেক দীর্ঘকালে কারন এটি এক্সপ্লিসিটলি গড়ে উঠেনা, গড়ে উঠে একটা জনগোষ্ঠি বহুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে।

রাষ্ট্রীয় সংহতি টংহতির নামে যখন মানুষের অন্যান্য পরিচয় আক্রান্ত হয় তখন ঐ রাষ্ট্র কাঠামো ক্রমশঃ ঠুনকো হতে থাকে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

একটা আইডেনটিটি বজায় রাখার জন্য অন্যটি বিসর্জন দিতে হয় তখন ব্যাপক 'হেজিমনি' হয় রিয়াজুদ্দিন ভাই।

শতভাগ সহমত। আর আমি একটার সাথে আরেকটাকে সাংঘর্ষিক বলেও মনে করছিনা।

রাষ্ট্রীয় সংহতি টংহতির নামে যখন মানুষের অন্যান্য পরিচয় আক্রান্ত হয় তখন ঐ রাষ্ট্র কাঠামো ক্রমশঃ ঠুনকো হতে থাকে।

এইব্যপারেও সহমত। আসলে সহমত না হবার মত কিছু নেই। ধৈর্য ধরে উত্তর দেবার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টের আলোকে বলব বাঙালিরা বাঙালিয়ানার নামে যখন বাঙালিপনা শুরু করে তখনই গোলযোগ (বা হেজিমনি) হয় আর কি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একটা ব্যাপারে আমি খুব অবাক হইছি। পাহাড়ে যখন আবার সহিংসতা বৃদ্ধি পাইলো, কার্ফ্যু জারি হইলো... আমি উচাটন... এ তো ভয়াবহ পরিস্থিতি...
এইটা নিয়া আমি অনেক কথা কইতে লাগলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে টের পাইলাম সেটা ধোপে টিকতেছে না। কারণ 'আমাদের' কোনো অসুবিধা হইতেছে না!
আমরা এখনো আগের মতোই হাঁটতে চলতে পারতেছি, বাজার কইরা খাইতে পারতেছি, গান শুনতেছি, সিনেমা দেখতেছি, ব্লগাইতে পারতেছি... তাইলে এতো উচাটন হওনের কী আছে?
পাহাড়ে একটা ঘটনা ঘটছে, এটা সাময়িক... মিইটা যাইবো... এইরকম একটা মানসিকতা দেখি চারদিকে... উল্টা দেখি বিরুদ্ধাচরণ... পাহাড়গুলাতো বাংলাদেশের... সেখানে আমাদের অধিকার কেন থাকবে না?

ভেবে ভেবে ব্যথা পাই। আমরা বোধহয় কখনোই পারবো না পাহাড়িদের উপরে এই যে বছরের পর বছর অত্যাচার চলতেছে... তা অনুধাবন করতে। কারণ আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না!

এই জায়গা থেকে আমি একাত্তরে পাকি জনগনরে দেখি... তারাও হয়তো আজকের আমাদের মতোই ভাবতো...

তাইলে তখনকার বা এখনকার পাকি জনগনরে দোষ দিয়া লাভ কী? আমরা কি একই আচরণ করতেছি না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

লেখাটা আরেকটু গুছিয়ে লেখা যেতে পারত - এরকম একটা সিরিয়াস টপিকে ফাইজলামি ভরা পোস্ট দেখতে চোখে লাগে

পাহাড়ে একটা ঘটনা ঘটছে, এটা সাময়িক... মিইটা যাইবো...

ঘটনা মোটেই সাময়িক না - একটু পেছন থেকে জানতে হলে "কর্ণফুলির কান্না" দেখুন - ইউটিউবে ৭টি আলাদা ভাগে আপলোড করা আছে - না দেখে থাকলে একটু কষ্ট করে দেখুন:

অফটপিক: হানাদাররা কিন্তু মেয়েদের দিকে চোখ দিয়ে তাকিয়ে থেকেই ক্ষান্ত হয়নি - আরো কিছু করেছে - "এই ক্ষেত্রে" হানাদারদের সাথে তুলনা দেয়াটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পড়ে। মানুষ হত্যা করেছে - জঘন্য অপরাধ করেছে - কিন্তু যা করেনি সেইটাও টেনে আনা ঠিক হলো না।

যূথচারী এর ছবি

"আরো কিছু" বলতে কি আপনি ধর্ষণ ব্যাপারটিকে বোঝাচ্ছেন?

[ভিসি আলাউদ্দীন (বর্তমানে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা) একদিন আমাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা ধর্ষণ শব্দটি বলো না, শব্দটা খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি।]

পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি নারী হত্যা, অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগ আছে। এমনকি দৈনিক খবরের কাগজগুলোতে সেগুলো ছাপাও হয় নিয়মিত। বাঙালি কর্তৃক আদিবাসী নারীদের ওপর হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা তো নিত্যদিনকার ঘটনা। গুগলে "পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা কর্তৃক ধর্ষণ" লিখে সার্চ দিলে ১৭২০ টি পাতা হাজির হলো, সেখানেই দেখুন- গত নভেম্বরেও নানিয়ারচরে সেনা কর্তৃক আদিবাসী নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন হয়ে গেছে। এমন ঘটনা একটি দুটি নয়, শত শত।

হানাদাররা যা কিছু করেছে, তার কোনটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাঙালিরা আদিবাসীদের ক্ষেত্রে করছে না, বলুন?

বাঙালি হিসেবে সাফাই গাওয়ার কোনো জায়গাই নেই। লজ্জা ও অপরাধবোধে আনত হওয়া ছাড়া আর কোনো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই আমাদের।

ভালো কথা, সিরিয়াস টপিকে ফাইজলামি ভরা পোস্ট বলতে যে কথাটা বলেছেন, সেটা একদম সত্যি। সত্যি কথা বলতে কি, ফাইজলামিই করতে চেয়েছিলাম। স্নিগ্ধা এবং হাসান মোরশেদ-এর মতো দুইজন সিরিয়াস লেখক সিরিয়াস দুটি মন্তব্য করে ফেলাতে, আমাকেও কিছুটা সিরিয়াস ব্যাখ্যা দিতে হলো। একটু খোঁচাখুচি করতেই চেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যর্থ জোকারের মতো সেটা করতে পারলাম না। ফাইজলামি ভরা পোস্টটা সিরিয়াস টপিকে টার্ন নিলো।

যাই হোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

গুগলে "পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা কর্তৃক ধর্ষণ" লিখে সার্চ দিলে ১৭২০ টি পাতা হাজির হলো

কোটসহ সার্চ দিলে তো একটাও গুগুলে আসে না - আর কোট ছাড়া সার্চ দিলে অনেক কিছুই আসে যার বেশিভাগই অবান্তর। ভালো মতন সার্চ দিযে কিছু পরিসংখ্যান অবশ্য পাওয়া গেল। দুঃখজনক।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ওয়াইল্ড-স্কোপ ভাই,
আপনার দেয়া ডকুমেন্টারি থেকে অনেক কিছু জানা গেল। আমার ধারনা বাঙালীদের একটা বড় অংশ পাহাড়িদের সংগ্রাম সম্পর্কে জানেনা। এই দূরত্বটা দূর করা দরকার। এক্ষেত্রে একটিভিস্টদের এগিয়ে আসা দরকার। শান্তি বাহিনী বিষয়ে কিছু অজানা বিষয় জানতে পারলাম এই প্রামান্য ভিডিও থেকে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

সমতলের লোক পাহাড়ে জমি কিনতে পারবে কি পারবেনা -- বাস্তবতার দিকে তাকালে এই নিয়ে প্রশ্ন জাগাটা এই যুগে স্বাভাবিক। এর সাথে যেমন "দেশের সবকিছুতে সব নাগরিকের সমঅধিকার" টাইপের চিন্তাধারা কাজ করতে পারে, তেমনি জনসংখ্যার ভারে আক্রান্ত বাংলাদেশের বাস্তবতাটিও প্রভাবক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ব্যাপারটা এভাবে বলা যায়, সমতলের একজন ভাবতেই পারে যে, ৭১ এ আমরা সারাদেশের মানুষেরা মিলে (পাহাড়ী/সমতলী নির্বিশেষে) অসংখ্য রকমের অত্যাচার সহ্য করে ফাইট করে দেশটা পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন করলাম যাতে দেশটা কোন বিশেষ ধর্ম বা জাতিভিত্তিক না হয়, তাই এখন তো সারাদেশের সব জমিতেই সবার সমান অধিকার থাকার কথা!

আবার বর্তমান জনবহুলতার বাস্তবতায় একজন ভাবতেই পারেন যে অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকা, যেখানে প্রতি বর্গকিমিতে লোকের বাস শ'য়ের নিচে, সেখানে রেড ইন্ডিয়ান বা এ্যাবোরিজিনিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে সেটা কতটা সম্ভব? যেমন প্রশ্ন করা যায় যে, আজ যদি কোন গবেষক প্রমাণ করেন যে নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানেই প্রথম রেডইন্ডিয়ানরা বসতি গড়েছিলো, সূতরাং নিউইয়র্ক শহরটি রেড ইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত করে দেয়া হোক -- তখন কিন্তু বাস্তবতার তোপে ঐতিহ্য রক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারটিকে "বিলাসিতা" বলে অভিহিত করা হবে।
আবার বলা যায় যে বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েই চলছে, সাথে পাল্লা দিয়ে জমির দাম, তাতে একজন বাঙালী মনে করতেই পারে যে অন্ততঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে সস্তায় একটুকরো জমি কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবার অধিকার তার আছে। এই মুদ্রার উল্টোপিঠটাও দেখি, পাহাড়ী একজনেরও মনে হতে পারে যে এই কালেকটিভ জমিব্যবস্থা না থেকে যদি সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া যেতো, তাহলে সেই জমি বেচে আমি অমুক ব্যবসা করতে পারতাম! সূতরাং আদিবাসী ঐতিহ্য রক্ষার জন্য জমি সংরক্ষণের ব্যাপারটিকে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় একজনের কাছে বাহুল্য মনে হতেই পারে।
যেমন, ঢাকা আর দক্ষিণবঙ্গের কালচার নিশ্চিতভাবেই আলাদা ছিলো একশো বছর আগে; এখন ঢাকায় বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা প্লাস সারাদেশের লোক জড়ো হয়ে সেই কালচারকে পুরান ঢাকায় বন্দী করে ফেলেছে -- এটা বাস্তবতা। সেজন্য এখন পুরান ঢাকার কালচার রক্ষার নামে ঢাকায় বা এমনকি পুরান ঢাকাতেও জমির কেনাবেচা বন্ধ করাটাকে সম্ভবতঃ কেউ মেনে নেবেনা।

সমতলে জমির মালিকানা বইষয়ক এখনকার প্রচলিত রীতি সবাই মেনে নিয়েছে, কারণ, আমাদের অঞ্চলে জমিদারপ্রথা লুপ্ত হবার পর সবার মধ্যে জমির মালিকানা বন্টন হয়েছে, আবার কিছু জমি সরকারী জমি হিসেবে কাউন্ট হয়েছে। সব জমি সরকারী হয়ে যায়নি, যেখানে সেখানে সরকার উদ্বাস্তু পূনর্বাসন করেনি বলে।

সূতরাং যে প্রশ্নটা এসে দাঁড়ায়, তা হলো, পাহাড়ীদের জমির মালিকানার স্বরূপটা কেমন হওয়া উচিত ছিলো? যেমন জমিদারপ্রথা লুপ্ত হবার পর মালিকানা বন্টনের মতো কোন রূপরেখা পাহাড়িইদের মধ্যে চালু করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা?

বাস্তবে যা হয়েছে, যতটুকু বুঝছি তা হলো, এব্যাপারে আসলে বৃটিশরা চলে যাবার পর থেকে শাসক শ্রেনীর অবহেলা (ইচ্ছাকৃতই হয়তো) জিনিসটা পুরো বিষয়টিকে এতটা গোলমেলে করে ফেলেছে। বৃটিশরা যখন অন্যায়ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়ে যায়, তখন থেকেই পাহাড়ীরা এটা মেনে নেয়নি, বিরোধিতা করেছে;

কিন্তু তার সাপেক্ষে সরকারগুলো কি করেছে? তারা এই অঞ্চলকে কাগজে কলমে দেশের অন্য অঞ্চলের মতোই সরকারী জমি ধরে নিয়ে বাঁধ/বসতি স্থাপন এসব জোর করে চালিয়ে গেছে; অন্যদিকে পাহাড়ীরা কখনোই এসব জমিকে সরকারের জমি হিসেবে দখল করার অনুমতি দেয়নি, দেয়ার কথাও না, তাদের কাছে পুরো অঞ্চলটাই জাতিভিত্তিক, শুধুই তাদের। এখানে তারাও কিছুটা রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেছে।
এখানে হয়তো একটা সমাধান ছিলো জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হবার সময়ের মতো কোন প্রস্তাবনা চালু করা; যেমন দেশের অন্যান্য অঞ্চলে জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পর সাধারণ জনগণ আর সরকারের মাঝে যে অনুপাতে জমির বন্টন হয়েছে একই অনুপাতে পাহাড়ের জমি সরকার আর জনগণের মাঝে বন্টনের একটা লিখিত চুক্তি হওয়া, তারপর যে যে যার যার জমি নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা (মানে পাহাড়ীরা যদি সেগুলোকে ব্যক্তি পর্যায়ে ভাগ না করে সামাজিকভাবে ব্যবহার করতে চায় তো করবে), সরকার যদি সরকারের নামে এ্যালট হওয়া জমিতে উদ্বাস্তু পূনর্বাসন করতে চায় করবে। কিন্তু বাস্তবে দুই পক্ষই পুরোটা পেতে চেয়েছে, চাচ্ছে; সেখানে পাহাড়ীরা যেমন বাস্তবতাকে উপেক্ষা করছে, সরকার তেমনি সুযোগমতো ছড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, এবং সেখানে যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় ঠ্যাঙারে বাহিনী আছে, কাজেই এই চাওয়ার যুদ্ধে কারা নিরংকুশভাবে আধিপত্য বিরাজ করে রেখেছে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে।

তবে লেখকের সাথে আমার দ্বিমত, আমি এই প্রশ্নে বাঙালী জাতিকে দোষ দেইনা; বাঙালী জাতি হিসাবে এখানে লজ্জা বোধ করার কিছু নেই, বরং সেটা বোধ করাও এক ধরনের রেসিজমকে মনে লালন করারই প্রকাশ বলে মনে করি। এটা আমাদের মধ্যে প্রোথিত, বিদেশে একজন বাঙালী চুরি করে ধরা পড়ে সেটা নিউজে আসলে আমরা লজ্জিত বোধ করতে পছন্দ করি, বাঙালীর ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি। অথচ এর সাথে আমার বা আমার জাতির আসলে কিসম্পর্ক আছে? ব্যাটা তো শুধুই একটা চোর!

আমার মতে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অত্যাচার চলছে এটা বাঙালী জাতি আর পাহাড়ী জাতিদের যুদ্ধ না।
এটা ৭১ পর্যন্ত পাকিস্তান এবং তারপর থেকে বাংলাদেশ সরকারের পাহাড়ীদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস, যেখানে সরকারের আসলে উচিত ছিলো পাহাড়ী জমির একটি গ্রহনবযোগ্য ভূমিবন্টন কার্যকর করা।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

রাগিব এর ছবি

জমির ব্যাখ্যাটা পড়ে আরেকটা চিন্তা মাথায় আসলো। ধরাযাক, "অমুক" জেলায় প্রচুর গ্যাস আছে। সেখানকার অধিবাসীরা অতো অবস্থাপন্ন না। এখন যদি বাংলাদেশ সরকার "অমুক" জেলা হতে গ্যাস তুলে সেটা জাতীয় গ্রিডে দেয়, অর্থাৎ "অমুক" জেলার সম্পদ সারা দেশের লোকের ব্যবহারে যায়, তাতে কি "অমুক" জেলার লোকেরা নিপীড়িত হয়"?

প্রশ্নটা তাত্ত্বিক গোছের, কাজেই আবেগের বশে না দিয়ে একটু চিন্তা করে জবাব দিন। আমি নিজে এই প্রশ্নের জবাব জানি না, সবাই কী মনে করেন তাই জানতে আগ্রহী। আমাদের স্কুলের একজন স্যার প্রায়ই তত্ত্ব পেশ করতেন, বাইরের লোকেরা ("বইঙ্গা") এসে চট্টগ্রামে ঘাঁটি গেড়ে বসছে, আর চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সম্পদকে সারা দেশের লোকেরা লুটে পুটে খাচ্ছে। তাই তার পাগলাটে প্রস্তাবনা ছিলো, শুভপুর ব্রিজটা উড়িয়ে দেয়া, আর তারপর চট্টগ্রামকে স্বাধীন রাষ্ট্র বানানো, যাতে করে বইঙ্গাদের আগ্রাসন থেকে বাঁচা যায়, আর বন্দরের কোটি টাকা চট্টগ্রামেই থেকে যায়।

পাহাড়ে বাঙালিদের যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। এটা এড়ানোর উপায় নাই। দেশের লোকসংখ্যা যা, তাতে করে এটা হবেই। এখানে একটাই করণীয় -- কারো অধিকার খর্ব করে, কাউকে মেরে ধরে অত্যাচার করে যাতে কিছু করা না হয়।

ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখা যেতে পারে। পাহাড়ের জমি একটা সম্পদ। এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীগুলোকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে পারে। পাহাড়ের মানুষদের উন্নয়নের জন্যই তাদের এই সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে, আর সেনাবাহিনী ও বসতিস্থাপনকারী বাঙালিদের বেআইনী অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। যেমনটা (আংশিকভাবে) হয়েছে ফুলবাড়িতে।

(বাঙালি জাতি বলে কিছু ছিলোনা অল্প কিছুদিন আগেও, লেখকের এই কথাটার সাথে একমত হতে পারলাম না। ইংল্যান্ডেও একগাদা স্থানীয় ডায়ালেক্ট ছিলো, প্রমিত ইংরেজির সাথে তাদের আকাশ পাতাল পার্থক্য। তাই বলে ইংরেজ জাতি বলে কিছুই ছিলো না, এমনটা কি কেউ বলে? বাঙালি জাতিসত্ত্বা বলে কিছু ছিলো না, এবং দেশের ক্ষুদ্রতর জাতিগোষ্ঠীরাই প্রকৃত ও আদি জাতি আর বাঙালিরা ভুঁইফোড়, এই রকমের কথার ভিত্তি/রেফারেন্স কী? সেনাবাহিনীর অত্যাচারের জন্য অ্যাপলোজেটিক না) হতে গিয়ে বাঙালির নিজেদের ইতিহাস বাদ দিতে হবে, এমন ভাবার কারণ কী?)

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | টুইটার

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

পাহাড়ে বাঙালিদের যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। এটা এড়ানোর উপায় নাই। দেশের লোকসংখ্যা যা, তাতে করে এটা হবেই। এখানে একটাই করণীয় -- কারো অধিকার খর্ব করে, কাউকে মেরে ধরে অত্যাচার করে যাতে কিছু করা না হয়।

এটাই, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর পিটিয়ে-ঠেঙিয়ে ঠান্ডা করার বৃটিশ/পাকিস্তান আমলের মাইন্ডসেট না বদলানো পর্যন্ত কিছু সম্ভব না ....সেনাবাহিনীতে কর্ণেল তাহের যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, সেটার প্রয়োজনীয়তা কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

যূথচারী এর ছবি

প্রিয় রাগিব ভাই, গ্যাস বিষয়ক উদাহরণটি অত্যন্ত চমৎকার দিয়েছেন। এই ধরনের উদাহরণ-ই দেয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য পূর্ব বাংলার সম্পদ লুণ্ঠন করার সময়।

জমির প্রসঙ্গে অমিত যে কথা বার বার বলছেন, সেই একই যুক্তি পাকিস্তানীরাও বলতো, পাকিস্তানের যে কোনো জায়গায় যাওয়ার, জমি কেনার অধিকার আছে; শেষাবধি এই উভয় (গ্যাস ও জমি কেনা) প্রকরণের চূড়ান্ত পরিণতি দাঁড়ায়- বাঙালকা মাট্টি চাহিয়ে... যেমন- আমরা এখন কেবল পাহাড় চাচ্ছি, পাহাড়িদের মেরে কেটে। উন্নয়নের তত্ত্বটা শুনতে ভালো, কিন্তু এর চূড়ান্ত প্রকাশ যে ভালো নয়, তা আমরা পাকিস্তানেও দেখেছি, এখন পাহাড়েও দেখছি।

বাঙালি জাতির উৎপত্তি বিষয়ে আমার কথাটি ছিল কথাটি ছিলো "কয়েকশ' বছর আগেও", "অল্প কিছুদিন আগেও" না। বাঙালি ভূঁইফোড় জাতিও না। আদ্যবাদী তত্ত্বটি ধরলে বাঙালির উৎপত্তি কমসেকম এক লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত যাওয়া যাবে। (সেই রকম একটি প্রবন্ধ খাড়া করে ইউনিভার্সিটিতে কতিপয় পণ্ডিত (!) মহলে কিঞ্চিৎ প্রশংসিত হয়েছিলুম।) কিন্তু সত্যি কথা হলো, জাতি হিসেবে বাঙালির বিকাশ কয়েকশ' বছরের ইতিহাস মাত্র। নীহার, রমেশ, দীনেশ বাবুদের বাঙ্গালীর ইতিহাস পড়ে যতোই প্রমোদ অনুভব করি না কেন, উহা বাঙ্গালার ইতিহাস বটে, বাঙ্গালির নহে। ধরুন মহাস্থানগড়, এটি তো পুণ্ড্রজ বলে এক জাতির কীর্তি। অথবা উয়ারী-বটেশ্বর, তা-ও তো মান্দি (ভুল করে গারো) নামক এক জাতির কীর্তি। এইসব বিষয়ে আমার বক্তব্যগুলোই চূড়ান্ত কথা নয়, তবে এখন অবধি যে গবেষণা হয়েছে, তাতে এমনটিই বোঝা যায়। রমেশবাবুদের সময় গবেষণা ততো হয়নি, প্রযুক্তি ততো ছিলো না, উনারা সবকিছুকেই বাঙালির হাজার বছরের মহান কীর্তি বলে চালিয়ে দিয়েছেন। (তবে তারা যা করেছেন, সেগুলোই আমাদের কাজের ভিত্তি।) এখন তো দেখাই যাচ্ছে, বাঙালির সাথে এই জাতিগুলোর রীতিমতো সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক। বাঙালির নিজেদের ইতিহাস জিনিসটা ততো প্রাচীনকালে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলার ইতিহাস আর বাঙালির ইতিহাস এক নয়। বঙ্গ এবং বঙ্গজ বলে যে জাতিটি পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও মুসলিম সময়কালে রচিত গ্রন্থগুলোতে, যার বেশিরভাগই আবার আমাদের এখানে রচিত গ্রন্থ নয়। তিব্বতের সঙ্ঘগুলোতে এই বিষয়ে কিছু বইপত্র আছে, সেগুলোই ভরসা। পরবর্তীতে যা রচিত হয়েছে, তা ওইগুলোকে ভিত্তি করে, অথবা তার মতোই। তিব্বত ও নেপালের গ্রন্থাগারগুলো বিস্তর অধ্যয়ন করলে, আরো কিছু তথ্যাদি হয়তো পাওয়া যেতে পারে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, বঙ্গজনের কোনো কীর্তি সেখানে তেমন একটা উল্লিখিত নেই। শশাঙ্ক, গোপাল প্রমুখ-কে বাঙালি বলে যে প্রচারণা আছে, সেগুলোকে শত্রুর মুখে বিশ্লেষণ করলে ভিন্ন ধারণা পাওয়া যায়। (যেমন- ধর্মপালের খালিমপুর লিপিতে ধর্মপালের উজ্জয়নী বিজয়ের কাহিনী পাওয়া যায়, উজ্জয়নী লিপিমালাতে আবার ধর্মপালকে পরাস্ত করার কাহিনী আছে)। নিজেদের লেখনীগুলোতে যেমন বাংলার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি শত্রু সূত্রগুলোতেও তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। আগেই যেমন বললাম, প্রচুর অধ্যয়ন করলে, বাঙালির দেখা মিলেও যেতে পারে। তবে তার আগ পর্যন্ত, এটিই তো সত্যি যে, বাঙালি ভিন্ন অপর জাতিগুলোকে কিন্তু সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

পুণ্ড্রজ, বঙ্গজ, মান্দি (গারো), কোল, সানতাল (সাঁওতাল), চাঙমা (চাকমা), শবর, মুণ্ডা, হাজং, ম্রাইনমা (মারমা) ইত্যাদি সবগুলো জাতিকে যদি বাঙালির একেকটি উপ (ডিস্ট্রিবিউটর) ধরি, তবে অবশ্য বলার কিছুই নেই। সেক্ষেত্রে বাঙালির ইতিহাস হাজার কেনো লাখো বছর পর্যন্ত টানা যাবে, সে তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে আছে।

জ্বিনের বাদশা ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। যেখানে গিয়ে আপনি আমার সাথে একমত হতে পারলেন না, ওখানে আমিও আমার সাথে একমত না। জাতি হিসেবে বাঙালিকে দোষী করার পক্ষপাতী না। পাকিপনা শব্দটা আমার আবিষ্কার নয়, আমি শুধু আমার প্রতিবেশে শব্দটির প্রতিস্থাপিত রূপটি ব্যবহার করেছি মাত্র। নজরুল ভাই বিষয়টির ভালো ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পাকিস্তান আমলে শোষণনিপীড়নের জন্য পাকিস্তানি জাতিকে দায়ী করার যে যুক্তিতে জায়েজ, ওই যুক্তিতেই পাহাড়ে বাঙালিকে দায়ী করা জায়েজ।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

আলমগীর এর ছবি

হাসান মোরশেদ লিখেছেন:
মানুষের অপমান হচ্ছে বারবার। এটি বন্ধ হওয়া জরুরী।

আপাতত এ কথাই।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

................................................

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।