অভিমত চাই : ঐতিহ্যবাহী গণযোগাযোগমাধ্যম কী ছিল?

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৩/২০০৯ - ১১:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গণযোগাযোগ মাধ্যম বলতে এখন তো আমরা বুঝি- টিভি, ফিল্ম, রেডিও, নিউজপেপার, থিয়েটার, পোস্টার, ইন্টারনেট ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এগুলো খুব তড়িৎ ও প্রভাববিস্তারকারীও। আমি জানতে চাইছি, যখন এই বিষয়গুলো ছিল না, অর্থাৎ ইউরোপের বাত্তি জ্বলেনি (এনলাইটমেন্ট), আমরা যখন আধুনিক (!) ছিলাম না, তখন কিভাবে আমরা যোগাযোগ করতাম? অর্থাৎ গণযোগযোগের জন্য তখন কি মাধ্যম ব্যবহৃত হতো?

এটা স্রেফ আমার জিজ্ঞাসা, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছি না। আমি ব্লগের সহচারীদের কাছে তথ্য ও আলোচনা প্রত্যাশা করছি। তবে আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর জন্য এই বিষয়টি নিয়ে পাভেল পার্থ ও শাওন আকন্দের সাথে আমার যে আলাপচারিতা হয়েছে, তা খানিকটা বলে রাখতে পারি।

পাভেল তার চিরাচরিত নিয়মে জানিয়ে দিলো, এখন সংবাদপত্র যে সংবাদ পরিবেশন করছে, তার সবকিছুই বাত্তি জ্বলার আগেও পরিবেশিত ও প্রচারিত হতো- "ধর, প্রথম আলো তো প্রতি সপ্তাহেই নতুন/বিশেষ একটা রান্না শেখায়, যখন প্রথম আলো অথবা কোনো খবরের কাগজ ছিলো না, তখন কি নতুন একটি রান্নাপদ্ধতি প্রচারিত হতো না? যে মেয়েটি নতুন একটা রান্না আবিষ্কার করলো, তার আশেপাশের মানুষ তো তা শিখলোই, এমনকি বিয়ের পর যখন সে নতুন একটা জায়গায় গেলো, সেখানেও সে ঐ রান্নার পদ্ধতিটাকে ছড়িয়ে দিলো।" চলমান খবরগুলো কিভাবে প্রচারিত হতো, তার-ও একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালো পাভেল- "ধর, এখন যে যুদ্ধের খবর তুই পাচ্ছিস, ইরাক-মার্কিন যুদ্ধ অথবা যে কোনো যুদ্ধের কথাই বলিস, এখনকার যুদ্ধের খবর যেমন প্রচারিত হচ্ছে, তখনকার যুদ্ধের কথাও যেমন প্রচারিত হতো; কারবালার যুদ্ধ কিংবা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কি প্রচারিত হয়নি? মিল হলো- উভয় যুদ্ধের খবরই ক্ষমতাসীনরা তাদের মতো করে তৈরি করেছে, আর অমিল হলো- এখন তুই দ্রুত খবর পাচ্ছিস, তখন খবর পেতি একটু দেরিতে। আর তখনকার বাত্তিবিহীন যুগে, দু'তিনশো বছর পর খবর পেলে, তাতে কিছু যেতো আসতো না।" তা খবরটা প্রচার করতো কারা? পাভেলের জবাব খাড়া- "পরিব্রাজক। যাযাবর বলে একটা সম্প্রদায় তো ছিল, তাদের অন্যতম কাজ ছিল খবর ছড়ানো, আর বণিকেরাও খবর ছড়াতো, শ্রমণরাও বয়ে নিয়ে যেত খবর, ঘরছাড়া বাউলেরাই বা খবর ছড়ানোতে কম কিসে?"

শাওন আকন্দের জবাবটা পাভেল পার্থের মতোই, তবে শাওন যোগ করলো- "অশোকের স্তম্ভগুলোতে যে নির্দেশিকাগুলো পাই, সেগুলোকে পোস্টারের একটা আদিরূপ বলে ধরে নেয়া যায়। আর বণিক, শ্রমণদের পাশাপাশি ভূত থেকে ভূতে খবর ছড়ানো-ও একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। বিশেষ করে পরিবহনকর্মীরা অর্থাৎ মাঝি, চালক, খবর ছড়ানোতে এদের একটা ভূমিকা ছিল। পালাগান ও পুঁথির মাধ্যমেও খবর ছড়াতো বটে, তবে সেটিকে ঠিক খবর না বলে সংবাদ-পর্যালোচনা বলা যায়।"

দুই বিশিষ্ট চিন্তকের কাছ থেকে পাওয়া অভিমত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও পাভেল পার্থ, শাওন আকন্দ এবং আমি, আমরা তিনজনেই একমত, ঐতিহ্যবাহী গণযোগাযোগমাধ্যম আর কি ধরনের ছিল সে সম্পর্কে কথা বলার জন্য আরো অনেক জানা ও আলোচনা করা দরকার। সেই সূত্র ধরেই ব্লগে এই পোস্টিং। আপনার অভিমত প্রত্যাশা করছি।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নিউজ আর ভিউজ-এর মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা আমাদের মিডিয়া এখনও বোঝে না। বিদেশি একেক এজেন্সি একেক ফরম্যাটে সংবাদ পরিবেশন করে। আমাদের মিডিয়া যে আদৌ কোন পথের অনুসারী, তা নিজেরাও জানে না।

আমি মনে করি অভাবটা শিক্ষার, সদিচ্ছার না। সংবাদ যারা পরিবেশন করে, তাদের সবাইকে দেখে মনে হয় না যে তারা এই কাজটার জন্য উপযুক্ত।

রেজওয়ান এর ছবি

এসম্পর্কে একটু গবেষণা করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।

গুগলের নিউজ আর্কাইভ সার্চে যান। ধরুন ইন্ডিয়া কি ওয়ার্ড দিয়ে ১৯০০ -১৯০৫ সময়কার সার্চ করুন। তখনকার কিছু পত্রিকার খবর পাবেন।
http://news.google.com/archivesearch

আমার জানামতে ৫০ কি ৬০ এর দশক পর্যন্ত অনেক দেশে সিনেমা হলে সংবাদ পরিবেশন হত।

রেডিওর ইতিহাস পড়তে পারেন:
http://earlyradiohistory.us/
http://home.luna.nl/~arjan-muil/radio/history.html

যোগাযোগের ইতিহাস:
http://inventors.about.com/library/inventors/bl_history_of_communication.htm
http://www.nathan.com/projects/current/comtimeline.html

তবে একটি বিষয়, আমরা যে এত গল্পগাথা রামায়ন, মহাভারত ইলিয়াড অডিসি এগুলো পড়েছি সেগুলোও কিন্তু "বিজয়ী ও ক্ষমতাসীনদের মতো করেই তৈরি করা"। বরঞ্চ বর্তমান সিটিজেন জার্নালিজমের যুগে এই প্রাকটিসটা অনেকক্ষেত্রেই হুমকির সম্মুখীন।

আমাদের অনেকেরই হয়ত এই স্বাধীনতা পছন্দ না তাই এ নিয়ে শোরগোল মাচাই। সংবাদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। কারন অজান্তেই আমরা সেই ক্ষমতাসীনদের বীরত্ব গাথাই পছন্দ করি।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

চলুক চমৎকার বলেছেন
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

প্রাচীন যুগে জনপদে বিপদের সংকেত (ব্রেকিং নিউজ চোখ টিপি) দেয়া হতো উঁচু জায়গা থেকে ধোঁয়া সৃষ্টির মাধ্যমে
দূরে কোথাও সংবাদ পাঠাতে দূতের মাধ্যমে চিঠির ভূমিকা থাকার কথা
আর খুব আগেনা, হয়ত শ'খানেক বছর আগেও ছিলো আমাদের দেশে ...এলাকাভিত্তিক বিশেষ সংবাদ বা ঘোষণা প্রচারের জন্য শিঙ্গা বাজিয়ে (এখনও যেমন ভোটের সময় রিক্সায় মাইক বাজিয়ে নানা ধরনের ভাইদের সালাম জানানো হয়) জানানো হতো ... একাজের জন্য নির্দিষ্ট লোকই থাকতো অনেক জায়গায়

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

ঐতিহ্যবাহী মনে হয় এক কথায় ইনফরমেশন অন ডিমান্ড ভিয়া লিমিঢেড মিনস। আমার মনে হয় সভ্যতা এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, ইনফরমেশান ওভারলোডেড হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর একাংশ। ঠিকমত হ্যন্ডল না করতে পারলে সামনে আরো সমস্যা আছে

Arman

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।