আসুন একটু হাসাহাসি করি : প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তালিকা

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: শুক্র, ২১/০৮/২০০৯ - ২:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তাদের সকল কর্মকর্তাদের নাম, পদবী, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ছবি দেওয়া আছে। সেই তালিকাটি হুবুহু তুলে দিলাম। খুব হাসি পাচ্ছে কয়েকটি ব্যাপার ভেবে-
প্রথমত, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তালিকায় প্রত্নতত্ত্ব থেকে পাস করা কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নাই (যদিও দেশে প্রত্নতত্ত্ব পড়ানো হয় ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে)।
দ্বিতীয়ত, পুরো বাংলাদেশে তাদের মাত্র ১৯ জন কমর্কর্তা (দেশে প্রত্নস্থানের সংখ্যা তাদের হিসেবে সাড়ে তিনশো, প্রকৃতপক্ষে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি)।
তৃতীয়ত, প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের জন্য অবশ্যপ্রয়োজনীয় অনেকগুলো বিষয়েই তাদের কোনো মনোযোগ নাই, যেমন- কনজারভেশন থেকে পাস করা কোন কনজারভেটর তাদের নাই, স্থপতি নাই, কোনো চারু বা কারুশিল্পী নাই।
চতুর্থত, সরকারী টাকার এবং দেশের প্রত্নসম্পদের **** মারার পরেও এদের কোনো লজ্জা নাই।

আপনারাও তালিকাটা দেখেন, হাসির আর কোনো খোরাক পেলে জানাবেন।

-ক্রম-কর্মকর্তার নাম-পদবী-শিক্ষাগত যোগ্যতা-বিষয়-
১. মোঃ শফিকুল ইসলাম, মহাপরিচালক, এম এ, ইংরেজি
২. আব্দুল খালেক, আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা), এম এ, ইতিহাস
৩. শিহাবুদ্দিন মোঃ আকবর, আঞ্চলিক পরিচালক (খুলনা), এম এ, ইতিহাস
৪. সামিউল হক, উপ-পরিচালক, এম এ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৫. বদরুল আলম, আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী), এম এ, ইতিহাস
৬. মিজানুর রহমান, আঞ্চলিক পরিচালক (চট্টগ্রাম), এম এ, ইতিহাস
৭. আব্দুল লতিফ প্রামাণিক, কাস্টোডিয়ান, এম এ, প্রাচীন ইতিহাস
৮. জহিরুল হক, কাস্টোডিয়ান, রংপুর জাদুঘর, এম এ, ইতিহাস
৯. লাভলী ইয়াসমিন, কাস্টোডিয়ান, বাগেরহাট জাদুঘর, এম এ, ভূগোল
১০. নাহিদ সুলতানা, কাস্টোডিয়ান, রবীন্দ্র কাচারি বাড়ি, এম এ, ইসলামের ইতিহাস
১১. মাহবুব-উল-আলম, কাস্টোডিয়ান, মহাস্থান জাদুঘর, এম এ, ইতিহাস
১২. খন্দকার জাহিদুল করিম, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকৌশলী, বিএসসি, প্রকৌশল (?)
১৩. মোঃ মাহবুবুল হক, গবেষণা কর্মকর্তা, এম এ (ডাবল), এল এল বি, ইসলামের ইতিহাস, বাংলা
১৪. মোঃ গোলাম সারোয়ার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, এম কম, ব্যবস্থাপনা
১৫. এ কে এম সাখাওয়াত হোসেন, সহকারী পরিচালক, এম কম, ?
১৬. লিয়াকত আলী, কনিষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক রসায়নবিদ, বিএসসি, রসায়ন
১৭. নাসিমা শাহীন, কাস্টোডিয়ান, লালবাগ জাদুঘর, এম এ, ?
১৮. মোঃ মইনুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ), ডিপ্লোমা, তড়িৎ কৌশল
১৯. তৌহিদুন্নবী, প্রধান আলোকচিত্রী, বি এ, -


মন্তব্য

যূথচারী এর ছবি

আরো একটা জিনিস খেয়াল করেন, এই তালিকায় কোনো অমুসলিম অথবা অন্য কোনো জাতিসত্তার কেউ নাই।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

প্রত্নতত্ত্ব থেকে পাস করা প্রত্নতাত্ত্বিক নেয়ার পরামর্শটা বেশ ভালো লাগলো। খুবই সময়োপযোগী পরামর্শ. তবে মনে হয় আমার মধ্যে রসকষ একটু কম - হাসি পেলো না। আমার মতে বাংলাদেশের মতো জায়গায় - যেখানে কোনো বেসিক সিস্টেমই যথাযথ ভাবে এখনো দাঁড়া হয়নি - সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতন গরিবের ঘোড়া রোগ টাইপের জায়গায় সবকিছু সিস্টেম মতন দাঁড়া হয়ে যাবে - এই চিন্তাটা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি। কারো নামে স্পেসিফিক "টাকা মারার" অভিযোগ থাকলে ব্যাপার না - কিন্তু কারণ ছাড়াই এভাবে অপরাধীর মতন নামসহ উল্লেখ করাটা একটু চোখে লাগলো। ওয়েব সাইটের লিঙ্ক আর কর্মকর্তাদের সাবজেক্টের তালিকাই যথেষ্ট ছিলো।
আর মুসলিম হলেই হাসাহাসির পাত্র - এমনটি কেন তা আমার কাছে ঠিক স্পষ্ট না। মনে রাখতে হবে আমরা মাত্র ১৯ জনের কথা বলছি। এমন কোনো অভিযোগ কি পেয়েছেন যে অমুসলিমদের ইচ্ছা প্রুশুত বাদ দেয়া হয়েছে?

ফরিদ এর ছবি

তাও মন্দের ভাল যে ইতিহাসের মানুষজন আছে কিছু। আমি ভেবেছিলাম দেখব সব বিবিএ এমবিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। কোথায় কি জিনিষ কি দামে ছাড়লে ভাল মার্জিন হবে সেগুলোর হিসেব কষার জন্যি।

গৌতম এর ছবি

হাসাহাসি করার কিছু নাই। প্রায় প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টেরই এই অবস্থা। শিক্ষা ডিপার্টমেন্টেরটা জানি, প্রায় সবাই এইরকম ইসলামের ইতিহাস বা পরিসংখ্যান বা এ ধরনের সেক্টর থেকে এসেছেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হাসি
অবশ্য ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে লালবাগ কেল্লার একটা সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। সেইদিক থেকেই মনে হয়, 'হোলেও হোতে পারে' ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হইছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মির্জা এর ছবি

(Banglay likhte parchhina, khoma cheye nichchi)

few year s ago I went to their office to make a documentary to promote Bangladesh in Europe. We didn;t have any fund from anyone except our very own initiative.

After almost a week we end up giving some adviceon how to come to UK! No interest from anyone (except one single person) to do anything positive about promoting what we have. I was repeatedly told people in UK-USA have so much to see they will not be interested to see 'relics' from Bangladesh!!!!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যূথচারী ভাই,

এই অবস্থা সর্বত্র। তবে আপনার এ্যপ্রোচটা ভালো হলনা। বিশেষ করে টাকা মারার ব্যাপারটা। এভাবে নাম ধান টাঙিয়ে গণহারে অভিযোগ করাটাকে দুই বছরের মঈন-শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ফকির লালন এর ছবি

বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্বের উপর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হবার আগে থেকেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগটি বিদ্যমান, অতএব এরকমটি হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়।

প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষন তো একটা মাল্টি ডিসিপ্লিনারী ব্যাপার বলেই বুঝি - অতএব অন্য পেশার লোকদের সেখানে কাজ করাও অস্বাভাবিক নয়। আমি স্থপতিদের প্রত্ন সম্পদের ডকুমেন্টেশনে কাজ করতে দেখেছি, প্রকৌশলীদের সংরক্ষন কাজে নিয়োজিত হতে দেখেছি।

তবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের উপস্থিতি কাম্য নিশ্চয়ই।

দুর্দান্ত এর ছবি

এটি দুঃখের কথা যে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ব বিভাগের কেউ প্রত্নতত্ব নিয়ে পড়াশুনো করে আসেননি। চাকরিতে আসার পর যদিনা তারা প্রত্নতত্বে কোন প্রশিক্ষন না পেয়ে থাকেন তাহলে সেটা ভাল কথা নয়। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই যে সেই বিভাগ ঠিকমত কাজ করবে আর আর **** মারা বন্ধ হয়ে যাবে সেটা কতটা নিশ্চিত?

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

@ ফরিদ: আপনি বলেছেন-"আমি ভেবেছিলাম দেখব সব বিবিএ এমবিএ নিয়োগ করা হয়েছে। কোথায় কি জিনিষ কি দামে ছাড়লে ভাল মার্জিন হবে সেগুলোর হিসেব কষার জন্যি"। লেখাটি পড়ে মজা পাইনি তবে আপনার দূরদর্শী মন্তব্য মজা দিয়েছে।

আসলে একসময় ইতিহাস বিভাগের লোকজনই এখানে নিয়োগ পেতেন সেই বিচারে তালিকা যথাযথই মনে হল। এখানে আপনি কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার ডিগ্রি উল্লেখ করেছেন। দেশে হয় ১৭ বছর প্রত্নতত্ত্ব পড়ানো হয় ঠিকই কিন্তু সেখান থেকে পাশ করে এই পদে আসার সময় বোধহয় তাদের এখনও হয়নি।
আমাদের দেশে আসলে job specialization নেই। দেখবেন অনেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে পাশ করে হোমিওপ্যাথ ডাক্তার হয়েছে আবার বাংলায় পড়ে ব্যাংকের উর্ধতন পদ দখল করে বসে আছে। এদেশে সবই হয়।

রাগিব এর ছবি

পরিসংখ্যানের হিসাবে যেকোনো র‌্যান্ডম স্যাম্পলে ১০% এর মতো অমুসলিম থাকার কথা। আপনার স্যাম্পল সাইজ অত্যন্ত কম, (১৯ জন), কাজেই সেখানে অমুসলিম কেউ না থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কে কী টাকা মেরেছে, তার বিস্তারিত তালিকা এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রের রেফারেন্স (মুখের কথা নয়) দিলে এরকম দাবী জনসমক্ষে করা চলে।

আর আপনিই বলেছেন, দেশে প্রত্নতত্ত্ব পড়ানো হয় ১৭ বছর। তার মানে এখানে এ বিষয়ের প্রথম স্নাতক ব্যাচ পাস করেছে ১২/১৩ বছর মাত্র আগে। এই অবস্থায় আপনি কীভাবে আসা করেন যে মহাপরিচালকের মতো পোস্টে প্রত্নতত্ত্বে পড়া কেউ থাকবে? হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এম কম পাস করা হবেন নাতো কী হবেন? কিংবা রসায়নবিদ -- তাকেও কি রসায়নের বদলে প্রত্নতত্ত্বে পড়তে হবে? কিংবা তড়িৎ প্রকৌশলীর পদটি -- তাকেও কি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ হতে হবে?

আপনি বরং এক কাজ করুন, বিভাগের কোন কোন পদের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা থাকা দরকার, তা বলুন। ১৯ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের কাজের জন্য যথাযোগ্য শিক্ষা তাদের আছেই দেখতে পাচ্ছি। আর সিনিয়র পোস্টে যাওয়ার মতো সিনিয়রিটি প্রত্নতত্ত্বের স্নাতক/মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা এখনো পায়নি বলেই মনে হয়।

সব শেষে, এই তালিকাতে হাসির মতো কিছু পেলাম না। দুঃখিত।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।