চুপকথা : উপন্যাসের খসড়া (পর্ব ১৮)

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: বুধ, ১৮/০৭/২০০৭ - ১০:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১১

ঘরে ফিরে দিনু ভাইকে ফোন করি। দিনু ভাই থাকেন কানাডায় নায়াগ্রার কাছে একটি ছোটো শহরে। মন-মেজাজ ঠিক না থাকলে মাঝেমধ্যে তাঁকে ফোন করি, অনেক কথা বলি। যুদ্ধের সময় মিলিটারি তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ছোটো ভাই লিনু ও দুলাভাই আলতাফ মাহমুদসহ। দুই ভাই অর্ধমৃত অবস্থায় ফিরে এলেও আলতাফ মাহমুদের খোঁজ কোনোদিন আর পাওয়া যায়নি। মিলিটারির সেই নির্যাতনের চিহ্ন আজও দিনু ভাই তার শরীরে বহন করেন।

সন্ধ্যায় অযথা তর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি জানিয়ে বলি, আরেকটা যুদ্ধ সত্যি দরকার, দিনু ভাই।

কিন্তু আমরা যে বুড়া হয়া গেলাম রে, পাগলা। আমাদের কতোজন মারা গেলো, অনেকরে মাইরা ফেললো। যারা আছে তাদের হাল তো জানিস। সাদী শুনি ডায়াবেটিসের রুগী। মণ্টুর প্যাটে আয়েশের চর্বি। শাজাহান ব্যবসা ছাড়া কিছু বোঝেই না।

আমি যোগ করি, মুনির ভাইয়ের কিছু মনেই নাই।

দিনু ভাই পরম হতাশায় বলেন, একসময় ভাবতাম, আশাও করতাম, পরের জেনারেশন কিছু একটা হয়তো কইরা ফেলবে। কিন্তু এখন যা দেখি-শুনি, ক্যামনে আর সে ভরসা করি? যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবের নামে নফল রোজা রাখে নাই, এইরকম বাড়ি বাংলাদেশে ছিলো? আজ পোলাপানরা ইস্কুলের বইয়ে যেই গল্প পড়তেছে সেইখানে শেখ মুজিব বইলা তো কেউ নাই। তাহলে? আজকাল তো আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, লোকটা কি আসলেই ছিলো? তারে কি আমরা স্বপ্নে পাইছিলাম? রূপকথার রাজপুত্র নাকি সে? এই পোলাপানরা যুদ্ধ দেখে নাই, সেইটা তাদের দোষ না, হয়তো গল্পটল্প শুনছে। এইসব তো তাদের কাছে রূপকথার মতো লাগবে।

তবু কিছু একটা তো হইতে হবে, দিনু ভাই। এইভাবে আর কতোদিন?

দিনু ভাই বলেন, আশা করতে আমারও ইচ্ছা করে, কিন্তু সম্ভব মনে হয় না। জামাতীরা রাজাকাররা দলেবলে ভারী হইছে, তাদের দাপট বাড়ছে। খালি দাপট না, এখন তো মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে জানে মাইরা ফেলে। হুমায়ূন আজাদরে কী করলো দেখলি তো। বাংলাদেশে একাত্তরের কথা বলার মানুষ দিন দিন খালি কমতেছে। যারা আছে, তাদের গলায়ও আর জোর নাই দেখি।

দিনু ভাই নতুন কিছু বলেননি, আমিও না। জানা কথা, সবই বুঝি। এইসব আশা শূন্যে ঘর বানানোর অলীক কল্পনা, আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখা শুধু।

গলা নামিয়ে বলি, অস্ত্র জমা দিছি, ট্রেনিং জমা দিই নাই - এগুলি এখন খালি কথার কথা। আমরা তো খরচ হয়া গেলাম, দিনু ভাই।

Now we are old and grey, Fernando
And since many years I haven’t seen a rifle in your hand
Can you hear the drums, Fernando?
Do you still recall that fateful night we crossed the Rio Grande?
I can see it in your eyes
How proud you were to fight for freedom in this land.


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

Now we are old and grey, Fernando
And since many years I haven’t seen a rifle in your hand
Can you hear the drums, Fernando?
Do you still recall that fateful night we crossed the Rio Grande?
I can see it in your eyes
How proud you were to fight for freedom in this land.


কি মাঝি? ডরাইলা?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মহোদয়, হা হা। আপনার এ অনুভূতির সাথে আমার পরিচয় আছে। সেজন্য এবার কিছু দিন গ্যাপ দিয়েছি। কয়েক পর্ব একটানা পড়ে যাচ্ছি হাসি
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

দ্রোহী এর ছবি

গুরু, এখন আমার ক্ষুধা মিটবে কি করে? ১৮টাই শেষ করে ফেললাম। প্রতিদিন এক/দুই পর্বে পেট ভরবে না।


কি মাঝি? ডরাইলা?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আর বাকি আছে ছয় পর্ব। আপনি যে গতিতে পড়লেন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেখে কার সাধ্য! হাসি

সচলায়তনে ভালো লেখার অভাব নেই। খিদে বেশি হলে এদিক-ওদিক একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন সুখাদ্য। এবং বিবিধ স্বাদের।

আপনার মন্তব্যগুলির উত্তর আলাদা আলাদা লিখতে গেলে আরেক দফা ফ্লাডিং হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। দু'একটা বাছাই করে বলা যাবে হয়তো।

কৃতজ্ঞতা জানবেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি এর ছবি

আমিও বন্দী লেখাটার কাছে। ইচ্ছে কয়েকদিন পরপর জমিয়ে পড়বার, কিন্তু প্রতিদিনই পড়ে ফেলি।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার নাম-পরিচয় জানা যাচ্ছে না, তবু কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাই। আপনি জানতে পারবেন কি না, কে জানে!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অপালা এর ছবি

অপেক্ষা

হাসান মোরশেদ এর ছবি

Now we are old and grey, Fernando
And since many years I haven’t seen a rifle in your hand
Can you hear the drums, Fernando?
Do you still recall that fateful night we crossed the Rio Grande?
I can see it in your eyes
How proud you were to fight for freedom in this land.

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অপালা ও হাসান মোরশেদ, পড়ছেন তাই শেষ পর্যন্ত যাওয়ার ভরসা হচ্ছে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।