স্বপ্ন-জাগরণের মাঝখানে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: রবি, ২৭/০৭/২০০৮ - ১২:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পিতৃপুরুষের গ্রামের বাড়ি দোগাছি থেকে ফোন। কান্না-জড়ানো গলায় খোকা ভাই জানালেন, দাদা এইমাত্র মারা গেলেন।

কী বলবো, কী করবো বুঝতে না পেরে হতভম্বের মতো ফোন ধরে আছি। ভাবছি, সবাইকে খবরটা কীভাবে দেওয়া উচিত। ফোনে খোকা ভাই কীসব যেন বলে যাচ্ছেন, আমার মস্তিষ্কে তার কিছুই প্রবেশ করে না। না শোক, না দুঃখবোধ – কিছুই টের পাই না। শুধু মনে হয়, দাদা মারা গেলেন!

ঘুম ভেঙে যায়। ভোর হতে এখনো ঢের বাকি। বিছানায় উঠে বসি। বুঝি, স্বপ্ন দেখছিলাম। তখনো মনে মনে ভাবছি, দাদা মারা গেলেন!

বিছানা থেকে নামি। বাথরুমে যাই ঘুমচোখে। ফিরে ঘুমিয়ে পড়ার আগেও ভাবছি, দাদা মারা গেছেন।

সকালে অ্যালার্মের কর্কশ শব্দে ঘুম ভাঙলে প্রথমেই মনে আসে, দাদা মারা গেছেন।

দাঁত মাজা শেষে চোখেমুখে পানি দিয়ে ঘোর কাটে। মনে পড়ে, দাদা মারা গেছেন আজ নয়, প্রায় তিরিশ বছর আগে!

অক্টোবর ১৩, ২০০৫


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

হুমম। কষ্ট।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হ। (স্বত্ব: সুমন চৌধুরী)

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই জিনিসটা খুব কষ্টের। শৈশবে যার হাত ধরে, যার আদরে বেড়ে উঠি, বড় হয়ে দেখি সেই লোকটার সময় শেষ। তাকে নিয়ে বোনা কৈশোরের স্বপ্নগুলো দীর্ঘশ্বাস হয়ে জড়িয়ে যায় সারাটা জীবনে। আপনার দাদা ওই আকাশে ভালো থাকুন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

শৈশবে যার হাত ধরে, যার আদরে বেড়ে উঠি, বড় হয়ে দেখি সেই লোকটার সময় শেষ।

আমাদের জীবনেই আবার একটা সময় আসবে যখন আরেকদল ক্ষুদে মানুষ আমাদের হাত ধরে, আমাদের আদরে বেড়ে উঠবে, বড়ো হয়ে দেখবে আমাদের সময় শেষ! জীবনচক্র।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কীর্তিনাশা এর ছবি

জুবায়ের ভাই ভালো লিখেছেন। পড়ে মনটা কেমন বিষাদে ভরে গেল।
-----------------------------
সচল আছি, থাকবো সচল!!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যের জন্যে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেল।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

মন খারাপ করার কিছু নেই। আসলে সেই রাতে স্বপ্ন ও বাস্তব কীভাবে যেন মিলেমিশে গিয়েছিলো, আলাদা করা যাচ্ছিলো না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

জুবায়ের ভাইয়ের লেখা পড়ে আমারও এইরকম একটা অবস্থার কথা মনে পড়ে গেলো।
তখন অনেক অনেক ছোটবেলা। বিটিভিতে দেখাতো ম্যান ফ্রম আটলান্টিক। পানির ভেতরে নায়কের অনায়াস চলাফেরা মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি, আর ভাবি, আহা, আমিও যদি...
একরাতে স্বপ্ন দেখছি, আমি নায়কের মতোই সাগরের অতলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কি যে দারুণ অনুভূতি !
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। ওটা কি স্বপ্ন ছিলো, না সত্যি। সত্যির আবহ তখনো স্ট্রঙ্গার। ঠিক করলাম, পরীক্ষা করে দেখা দরকার। বাথটাবে পানি কানায় কানায় ভরলাম। ডুবিয়ে দিলাম নিজেকে। আরে ! পারছি তো আমি ! পানির ভেতরেও নিশ্বাস নিতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না তো। আমাকে আর পায় কে?
সকালে ঘুম ভেঙে যাবার পর ভীষন মন খারাপ।
ওটা কি তাহলে স্বপ্নের ভেতর আরেকটা স্বপ্ন ছিলো?
নাকি মাঝখানের সময়টা ছিলো স্বপ্ন আর জাগরনের মাঝামাঝি কোনো অবস্থা?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার এই অভিজ্ঞতাটি জীবনে একমাত্র। এর আগে বা পরে কখনো এতো দীর্ঘ সময় ধরে স্বপ্ন আর বাস্তব (তা-ও প্রায় তিরিশ বছরের পুরনো) জড়াজড়ি করে থাকেনি। কীভাবে সম্ভব হয়েছিলো, আজও সে রহস্য বুঝে উঠতে পারিনি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শেখ জলিল এর ছবি

শৈশবে জড়িয়ে আছে যে দাদার স্মৃতি তাঁকে কি ভোলা যায়?
...আমার বুঝ হবার পর নানা-নানী-দাদা-দাদীর মধ্যে শুধু দাদাকেই দেখেছি। দাদার স্মৃতি তাই আমার খুব কষ্টের।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার এই অকিঞ্চিৎকর লেখা যদি আপনার কিছু স্মরণের কারণ হয়, হোক তা কষ্টের, তাতেই ধন্য বোধ করি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জিফরান খালেদ এর ছবি

চমতকার... আপনার প্যারা ভাগ করাটুকু উপভোগ করলাম।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার প্যারা ভাগ করাটুকু উপভোগ করলাম।

ব্যাকরণে ভুল হলো কি? আপনার মন্তব্যটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। বুঝিয়ে বলবেন? হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাহাহা... দাদাভাই, মজা লন?

নাহ, আপনার প্যারা ভাগগুলো যেভাবে থামালো, যতিচিহ্ন যতটুকু বিরতি নিল, তারপর আবার, নতুন প্যারা, বাক্য, আবেশ...

আপনার এই লিখার আঙ্গিকটা পছন্দ হইসে... মাঝখানের শুন্য স্পেইসও একটা ভাষা তৈয়ার করে।

এই-ই বলতে চাইসি... আপনে আজকাল আমার কথায় বড্ড ভুল ধরেন, আপনারে পাইয়া লই, তারপর সবগুলা ভুল একসাথে উসুল করমু খানাপিনায়...

কবে যে আপনারে পাওন যাইবো...?

হুমম...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভাই রে, আমি যে নেহাত গদ্য, কবিদের কথা মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না। আপনি তো আবার সেই তরিকার মানুষ। হাসি

এই যে এখন গদ্যে বললেন, একদম সব পরিষ্কার।

উসুল করার জন্যে আটলান্টিকটা একলাফে পার হতে হবে, আমি তৈরি আছি। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

কি বলা উচিত ঠিক বুঝতে পারছিনা। অনুভূতিরও এতোটা মিল কি করে হয়! দাদা-দাদী কাউকেই পাইনি, নানু ভাইকে হারিয়েছি অনেক ছোটকালে। আর নানুভাইয়ের কারনেই নানু (নানী)-র সাথে কখনো অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠলো, তিনি কখন গেলেন ঠেরও পেলাম না! একমাত্র যে মানুষটিকে ঘিরে আমার আপনার মতো ফিলিংস হয়, তিনি আমার বাবা। এই লোকটার ভালবাসার প্রভাব এমন তীব্র ছিলো যে, যার কারনে বেশ কয়েকবার আমাকে তার সাথে মসজিদে যেতে হয়েছিলো; যদিও তিনি জানতেন আমিও জানতাম আমাদের দু'জনের পথ ও লক্ষ্য ভিন্ন। তাও কি করে এতোটা ভালবাসি এই লোকটাকে? কই মাকে বা অন্য কাউকেই তো এতোটা ভালবাসতে পারিনি কখনো! বাবা চলে গেলেন তিন বছর হতে চললো; এখনো ঘুমে, ঘুম থেকে উঠে, মদ্য পান কিংবা চুরান্ত নেশাগ্রস্ত অবস্থায়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে, সচেতন চিন্তারও আগে তার ছবি ভেসে উঠে কেবলি! আর আমার ছোট্ট ভাইটা, বাবার যাষ্ট ডুপ্লিকেট কপি, ওর সাথে কথাই বলতে পারিনা কান্নার ঠেলায়! এ কি রকম টান? শুধু রক্তের সম্পর্কের কারনেই কি এরকম ঘটা সম্ভব?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার পিতা গত হয়েছেন ছ'বছর। এখনো তিনি আমার স্বপ্নে উপস্থিত হন প্রায় নিয়মিত।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দাদাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি... আমার জন্মের আগেই তিনি গত হয়েছিলেন...
_____________________________________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমারও দাদীকে চেনা হয়নি কখনো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্নিগ্ধা এর ছবি

ঠিক তোমার মত এত লম্বা সময় ধরে নয়, কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতা একাকার হয়ে গ্যাছে আমার অনেকবার! এবং প্রতিবার একই ঘটনা নিয়ে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

প্রতিবার একই ঘটনা নিয়ে স্বপ্ন! কৌতূহল হচ্ছে। খুব ব্যক্তিগত কিছু না হলে একটা পোস্ট লিখে ফেলো। তুমি অনেকদিনের পোস্ট-খেলাপী। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তানবীরা এর ছবি

আমার জীবনে আমার দাদীর প্রভাব সবচেয়ে বেশী। তিনি মারা গেছেন আজ প্রায় নয় বছর। দিনের বেলায় বেশী মনে পড়ে না অথচ রাত হলেই তাকে স্বপ্নে দেখি, খুব বেশী দেখি। ঘুম ভাংলেই একটা হারানোনুভূতি নিয়ে দিনটা শুরু হয়।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

প্রিয় মুখগুলিকে কখনো ভোলা যায়! না-ই বা তাঁরা চোখের সামনে উপস্থিত থাকলেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কল্যাণ এর ছবি

গুরু গুরু

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।