ডায়ালগ - এক আবিস্কারের জিনিষ - ০১

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৬/২০০৭ - ৯:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
যা ডায়ালগ না ! ...আমাদের ছোটবেলায় কোন ছবি দেখে এসে তৃপ্ত বড়ভাইদের মুখে প্রায়ই শুনতাম এ কথাটি। ডায়ালগ মানে আমাদের কাছে তখন সিনেমা । সিনেমা যে ঠিক রূপকথার না আবার বাস্তবজীবনের গল্পও না, এর ভেতরে যে এক বানানো অতিরঞ্জন লেগে আছে এটা বুঝে ওঠার পর সজ্জন বন্ধুদের বিরাট কোন দাবীকে অনায়াসে উড়িয়ে দিতে বলে উঠি -ম্যালা ডায়ালগ ঝাড়িস না। ডায়ালগ শব্দটির আভিধানিক অর্থ আলাপন/ আলোচনা / কথপোকথন। পূর্ণেন্দু পত্রীর শুভংকরেরা ছাড়াও আমরা সারানই কথপোকথন করি, আলাপনে ব্যস্ত থাকি, আলোচনায় মগ্ন থাকি। কিন্তু আমরা সেটার কোনটাকেই ঠিক ডায়ালগ ভাবি না... ডায়ালগ শব্দটি আমাদের কাছে দৈনন্দিনতার সীমার বাইরেই ভাবতে অভ্যস্ত। ডায়ালগ শব্দটির একটা বাস্তব প্রয়োগের ত্রে আবিস্কার করি রাজনৈতিক ময়দানে - রাজনীতির মধ্যে বেশ মারপ্যাচের কসরত আছে, যার বদৌলতে তাদের প্রায়ই অগোপনে এবং স্বগোপনে আলোচনায় বসতে হয় সেটিকে আমরা ডায়ালগ হিসেবে চিনে নেই। এটিও সিনেমার মতোই রূপকথার এক গল্প। আমরা বড় হয়ে বেকার হয়ে যাই। বাসা জমাই পার্কে, রাস্তার রকে কিংবা কারো বাড়ির ছাদে। দুটাকার চিনেবাদাম ধ্বংস করতে করতে যে গুলতানে মেতে উঠি সেখানে কিন্তু ঠিকই জন্ম নেয় বিরাট বিরাট সব ভাব, ছোটবেলার ডায়ালগের মতো কিন্তু আমরা এটা বলি না। বেকারের আত্মসম্মানবোধ প্রখর, কোনভাবে আঘাত লেগে গেলে কোন শিং এর গুতায় ফুটো হয়ে যেতে হবে কে জানে। বেকারের কাজ সন্ধান করা। অন্তত কাজের একটা ভাব ভাব নিয়ে না চললে চলা দায়। এসময় এথিকসের একটা বাড়তি প্রকোপ পড়ে অনেকের মধ্যে। দেশ, দশের কথা নিজেকে ছাপিয়ে ওঠে – এবং কথাবার্তায় অবজিক্টিভিটি, সোশ্যাল সোশ্যাল গন্ধ থাকে। ডায়ালগের অন্তর্নিহিত আর একটা প্যাটার্ণ আমরা আবিস্কার করি। আমরা ডায়ালগ আবিস্কার করি বাসের ভিড়ে, টিকিটের লাইনে, আত্মপ্রসাদে তৃপ্ত মানুষের পরামর্শের সুবচনের টুকরো টুকরো কথায়। এই ডায়ালগের একটা মজা হচ্ছে যে ডায়ালগটা দিচ্ছে সে ঠিক ঐ মূহূর্তে ডায়ালগটা টের পায় না। পায় অন্য লোকে - যে কিনা শোনে। শোনে অনেকে বটে কিন্তু চিনতে পারে অল্পেই। যে চিনতে পারে সে মানিক রতন পায়। দুনিয়াটা এক রসগোল্লা - একটা গান আছে - আমাদের খুব ছোটবেলায় রেডিওর যুগে খুব বাজতো। যে ডায়ালগের মজাটা আবিস্কার করে ফেলে দুনিয়াটা তার কাছে ওই গানের মতোই। আমাদের এক বন্ধু হটাৎ প্রায় ভবঘুরে হয়ে গেল। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বোকার মত বনবন করে চরকির মতো সারা শহর ঘুরে বেড়ায়। হেটে, বাসে দাড়িয়ে, মিনিবাসে ঝুলে রোদ জল মাথায় নিয়ে সে চলেছে- চেপে ধরলে সে হাসে কিছু বলে না। চাদনী রাত খুবই উপাদেয়, বিশেষ করে কারো পেট থেকে গোপন কথা বের করার থাকলে তার সাথে একলা কাটানো গেলে। ধরলাম সেই ক’ট পথ- চাদ উঠেছে মাথার উপর.. টুকরো টুকরো মেঘ উড়ে যাচ্ছে... হু হু বাতাস... আমি ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করি : আচ্ছা তুই সারাদিন কোথায় কোথায় কেন ঘুরিস ? - মানুষের কথা শুনি : মানুষের কথা .. - কত মজার কথাই না মানুষ বলে আমি হা করে ওর দিকে তাকাই। ওর চিলেকোঠায় নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের সমান উচু ছোট ছোট কাগজের স্তুপের মধ্যে আমাকে ছুড়ে দিয়ে বলে - দেখ একটাও বানানো কথা না- সব মাইনষ্যে কইছে আমি পড়ি আর অবাক হই। সাধারন কথার মধ্যেও এত ডায়ালগ থাকে। ডায়ালগকে এরপর থেকে দেখি অন্যরকম করে। ডায়ালগ সত্যিই আবিস্কারের জিনিস- কি বলার ব্যাপারে, কি বোঝার ব্যাপারে

মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি
বহুত ডায়লগ দিয়া দিলেন চামে...
সৌরভ এর ছবি
দারুণ - কেমন যেন শব্দ নিয়া খেলা করছেন ! ------ooo0------ অনুভূতিশূন্য কেউ একজন

আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি
ভালো লাগলো।
সুমন চৌধুরী এর ছবি
এইবার ডায়লগ গুলা দিতে থাকো....

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।