অনিক

কারুবাসনা এর ছবি
লিখেছেন কারুবাসনা (তারিখ: রবি, ১২/০৪/২০০৯ - ১২:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি দেওয়ালএকটি দেওয়াল
মাটি খুঁড়ে যে সব সভ্যতা পাওয়া যায়, দুই-আড়াই হাজার বছরের পুরানো, তাতে পাওয়া যায় মাটির পাত্র, পাথরের অলঙ্কার, ইঁট আর কবিদের হাড়। হাড়ের তো এতদিন বেঁচে থাকার কথা না, কবিদের হাড় না কি হেব্বি শক্ত, তাই টিকে যায়, মানে কবিরা তো অমর হওয়ার চেষ্টা করে, এই আর কি। প্রচুর ঝগড়া-ঝাটি অশান্তির পর অধ্যাপক প্রমাণ করলেন সেই গোটা সভ্যতাটা জুড়েই আছে কেবল কবি। তা কি করে হয়? সব কবি? ছাপ্পা ভোটের মত? কবি কসাই। কবি ভিখারি। কবি চোর। কবি মৌলভী! অধ্যাপক বললেন, আমাদের ভাবতে অবাক লাগলেও সেটাই ঠিক।

সাবাই গেল স্পিলবার্গের কাছে, স্যার আপনি একটু ছুঁয়ে না দিলে তো এটা দাঁড়াচ্ছে না! স্পিলবার্গের আগামী দশ বছরে কোন ডেট খালি ছিল না, এমন কি মরার পরের দুই বৎসরে ষাটজন নায়িকা নিয়ে যা হোক কিছু একটা করার বরাত তখন তার কাছে, খুবই ঈর্ষনীয় ব্যাপার। স্পিলবার্গ বললেন, আপনারা শাহরুখ খানের সাথে কথা বলুন। সে ব্যাচারি ছিল আই পি এল নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। তার শোনার সময় ছিল না। তাকে পুরো বক্তব্য রেকর্ড করে ডিভিডি বানিয়ে দেওয়া হল। একদিন শাহরুখ যখন শুটিং করতে লোকাল ট্রেনে চেপে বোরেভেলি থেকে সান্তাক্রুজ যাচ্ছিলেন তখন তার কাছ থেকে সেই ডিভিডি পকেটমারি হয়ে গেল।

দাউদ ডিভিডিটা পেয়ে খুবই এক্সাইটেড হয়ে গেল, সাথে সাথে চার জন লোককে গুলি করে মেরে ফেলল। ঠিক হল এটা কোন এক কবিকে দিয়েই লেখাতে হবে। দাউদ বলেলেন, তাহলে একটা মহিলা কবি স্যাটি দেখে উঠিয়ে আন। রাইট হ্যান্ড বলল, স্যার এত বড় কাজ একজন মহিলায় হবে না, চার-পাঁচ হালি উঠিয়ে আনি। দাউদ খুশি হয়ে পাঁচজন লোককে গুলি করে মেরে ফেলল। দেশ-বিদেশ থেকে ডজন দুয়েক মহিলা কবি ট্রাই করা হল কিন্তু স্ক্রিপ্ট একলাইনও এগোল না। কবিরা স্যারের সঙ্গে নিভৃতে আলোচনা করে আর লেখার সময় পায় না, না আদতেই আলস তা বোঝার জন্য দাউদ কিছু বাঘা বাঘা গবেষক উঠিয়ে আনতে বললেন।

গবেষকরা চারপাশের বালি, পাথর ও পানি পরীক্ষা করে রায় দিল, কবিদের কেবল অলস হলেই চলবে না, তাদের হতে হবে খুব নির্লজ্জ। গবেষকরা দাউদের মনের কথা বলে দেওয়ায় তিনি বেদম খুশি হয়ে ছয় জন লোককে গুলি করে মেরে ফেললেন।দাউদ বললেন, তাহলে হিজড়া টাইপ কবি আন, হেভি নির্লজ্জ হবে।সোর্স চারদিকে জাল বিছালো, উকুন মারার মত করে খোঁজা শুরু হল হিজড়া কবি। রাস্তা ঘাটে হিজড়া দেখলেই লজ্জাবতী পাতা ছুঁইয়ে দেখা হয়, বিষে বিষে বিষক্ষয় হয় কি না।পাতাগুটালে প্রমাণিত সে নির্লজ্জ নয় আর তখন তার ছুটি। আর না গুটালে সে অবশ্যই নির্লজ্জ আর তখন এয়ারবাসে স্ট্রেট দুবাই। মুম্বাইতে সকলকে টেষ্ট করা হল, দেখা গেল সবাই লজ্জা পায় এক ঐশ্বর্য রাই ছাড়া। সমস্ত দেশবাসী তাকে রিকোয়েস্ট করতে লাগলো কবিতা লেখার জন্য।

অভিষেক বচ্চনের দুইহাত দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে বেঁধে ভাঙা কাঁচের উপর অ্যাশকে বলা হল কবিতা লিখতে। অ্যাশ কাঁচের উপর মেহেন্দী দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করতে লাগলো আর পাথরের উপর পা ঝুলিয়ে বসে দাউদ মনের আনন্দে সাতজনকে গুলি করে মেরে ফেললেন। এই সিন চলতে চলতেই ব্রেকিং নিউজ এল বাংলাদেশের এক অখ্যাত কবি নাকি খুবই নির্লজ্জ আর অ্যাশের কষ্ট তার একদম সহ্য হচ্ছে না। সে গত ৬ মিনিট এমন কেঁদেছে পুরো ঢাকা এখন জলের তলায়, সেনা ও বিডিআর অনেকদিন পর হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।ইস্পেশাল রেসক্যু টিম গেল সেই কবির কাছে, সারা গায়ে লজ্জাবতী পাতা ঘসে দেখা গেল সে সত্যই নির্লজ্জ।

খারিজ মার্কেটে তার ছিল পাঁউরুটির দোকান। পাঁউরুটি দেখলেই তার ভেতর রোদনভারা কবিত্বের জন্ম নিত। দাউদের নির্দেশে তার জন্য বানিয়ে দেওয়া হল পাঁউরুটির ঘর। সেই ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হল কবিকে, স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য। দিন যায়, মাস যায় কবি এক লাইনও লেখেন না। সে শুধু ঘুমায়, ঘুম থেকে উঠে সাজগোজ করে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সে যে খুবই অলস তাতে আর কারুরই মনে সন্দেহ রইল না। দাউদ খুব আশা পেলেন একে দিয়েই হবে, গুলি করে আটজনকে স্যাটাস্যাট মেরে দিলেন।কয়েকবছর কটে গেল সেইখানে সেইভাবে। কবি পাঁউরুটির ঘরে ঘুম থেকে উঠে সাজগোজ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন কিন্তু একটা শব্দও লেখেন না।

কবির হাড্ডি কেটে বিদেশ থেকে পরীক্ষা করানো হল। জানা গেল এই হাড্ডি নাকি ২৫০০ বছরের পুরানো।রিপোর্টে লেখা ছিল, খাপে খাপ মনতাইজ্যার বাপ। বাংলাদেশ থেকে এসএমএসে ব্রেকিং নিউজ এল, দেশে মমতাজ ও মন্তাজ নামে এইমাত্র তার দুইকন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। দাউদ খুব ভয় পেয়ে পিস্তল ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তার নির্দেশে কবিকে পাঁউরুটির ঘর থেকে টানতে টানতে বার করে পুরানো সভ্যতার খোঁড়াখুড়ি যেখানে চলছিল সেখানে পুঁতে ফেলা হল। দাউদ, ঐশ্বর্য রাই, শাহরুখ খান, ইস্পিলবার্গ, বিডিআর, সেনা ও তামাম বিশ্ববাসী হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সেই অলস-নির্লজ্জ-কবির নামে অধ্যাপক সেই সভ্যতার নাম দিলেন অনিক সভ্যতা।


মন্তব্য

অনীক আন্দালিব এর ছবি

বানানে একটু বদলালেই আমার নাম! লেখার এক একটা ঘটনা এত চমৎকার লিখেছেন! মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। পুরাটাই অ্যাবসার্ড, নাকি আসলেই অনিক সভ্যতা নামে কিছু আছে?

কারুবাসনা এর ছবি

থাকলেও আমার জানা নেই।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

শ্যাজা এর ছবি
কারুবাসনা এর ছবি

ভালো লেগেছে?


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখায় ৫+
---
ঊন স্বপ্নায়তন: সেদিন বাগানে কোঁচো খুড়তে গিয়ে দেখি ছোট্ট এক শক্তপোক্ত হাড়। ল্যাব টেস্টে ধরা পড়লো সেটা অনিক সভ্যতার অলস-নির্লজ্জ কোনো কবির মেরুদণ্ডের হাড়ের একটি গিট।

এই খবর খোমাখাতায় জানান দিতেই খারিজ মার্কেটের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টেলুন পরা এক ভাঁড় কাম কবি কপিরাইট দাবি করে বসলেন। বললেন, হাড়টি আমার; বিশ্বাস না হলে জিন-পরীক্ষা করে দেখুন!

আমি স্বত্ব ছাড়তে রাজি না হওয়ায় খোমাখাতায় ভাঁড় কাম কবির নামে ফ্যান-ক্লাব খোলা হলো। আর বার বার তাতে যোগ দেওয়ার জন্য আসতে লাগলো বর্ণিল সব নিমন্ত্রণ। সেই থেকে মেরুদণ্ডীর খণ্ডাংশ নিয়ে খুব বিপদে আছি। ড়্যাব তলব করবো কী না ভাবছি।... চোখ টিপি


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

কারুবাসনা এর ছবি

দূর আপনি মজা করতেসেন। ব্যাপারটা সত্যি কিন্তু।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।