Coolness factor

উৎস এর ছবি
লিখেছেন উৎস (তারিখ: বুধ, ১৩/০৬/২০০৭ - ১১:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
[ভয়ের কিছু নেই, এইলেখাটা সাবধানে লেখা হয়েছে, কোন ব্লগারের নাম নেয়া হয় নি] গত বছর ক্রিসমাসের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার কম্পানী মাইক্রোসফট একটা পোর্টেবল মিডিয়া ডিভাইস নিয়ে আসে বাজারে৷ আমি জানি না আপনারা নাম শুনেছেন কি না, Zune৷ এই মার্কেট টা আগে থেকেই এপল তার আইপড দিয়ে দখল করে রেখেছিল৷ সম্ভবত মাইক্রোসফটের একটা চেষ্টা ছিল এপলের শেয়ারে ভাগ বসানোর৷ কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে এমনিতেই প্রতিযোগিতা মারাত্মক৷ মাইক্রোসফটের দুর্ভাগ্য জুন সুবিধা করতে পারে নি, যদিও দামের তুলনায়, একই ধরনের অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে সুযোগ সুবিধা খানিকটা বেশীই ছিল জুনে৷ বিশেষ করে Wi-fi কানেক্টিভিটি৷ ইলেকট্রনিক্স নিয়ে ম্যাগাজিন, ব্লগ বা নানারকম টেক ফোরামে জানুয়ারীর দিকে আলোচনা চলতো জুন এতটা ফ্লপ করলো কেন৷ বিশাল পরিমান মিডিয়া ক্যাম্পেইন করা হয়েছিল জুনের জন্য, রিলিজের আগে, কিন্তু কাজ হয় নি৷ আসলে মব সাইকোলজি বেশ জটিল৷ ভালো হওয়াটাই যথেষ্ট নয় (জুন ভালো কিনা সেটা উহ্য রেখে)৷ পাব্লিক এডপশনের জন্য আরেকটা গুরুত্বপুর্ন উপাদান আছে৷ আমি ঠিক মনে করতে পারছি না Cool এর যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ কি হতে পারে? কোন কনজিউমার আইটেম থেকে শুরু করে গান, টিভি সিরিজ, মতবাদ এসবের জনপ্রিয়তার পেছনে coolness factor কে ঠিক উপেক্ষা করা যায় না৷ ভালো হলেই আসলে ভালোবাসা পাওয়া যায় না৷ ভালো হওয়ার সাথে সাথে ফ্যাশনেবল হওয়া জরুরী৷ এই যেমন ব্লগে এরকম আলোচনা দেখেছি শিবিরের attrition এত বেশী কেন৷ ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে কেন শিবির ছেড়ে যায়, এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও৷ হয়তো প্রত্যেকের জন্য আলাদা কারন দেখানো যেতে পারে৷ কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়, শিবির নানাভাবে বাচ্চাদেরকে সাহায্য করলেও শিবিরের coolness এর বড় অভাব৷ স্রেফ একটা জিন্স প্যান্টের coolness-ও শিবিরের চেয়ে বেশী৷ হয়তো প্রচ্ছন্ন এই coolness এর ঘাটতি শিবির ছাড়তে সাহায্য করে (? মতামত দিন)৷ আরেকটা কৌতুহল আমার, ঢাকায় একদশক আগে আমরা বিদায় নেয়ার সময় বলতাম “খোদা হাফেজ”, কিভাবে যেন এখন “আল্লাহ হাফেজ” টাই বেশী প্রচলিত মনে হয়৷ আল্লাহ হাফেজ কি বেশী cool? স্কার্ফ পড়া মেয়েদের সংখ্যা যে বেড়েছে এটা আরো অনেকের মুখে শুনেছি, coolness anyone? তবে এর বাইরেও আছে৷ আমাদের সময় মেটাল গান শোনা ছিল কুল৷ হিন্দী শব্দ “ঝাক্কাস” বা বন্ধুদের আড্ডায় এসবের ব্যবহার হয়তো cool? ঝাক্কাস মানেই মনে হয় cool৷ যখন যেটা ফ্যাশনেবল, দোষের কিছু নেই৷ “মুক্তিযুদ্ধ” কি তার coolness হারিয়েছে কোনভাবে? মুক্তিযুদ্ধের সাথে আদৌ coolness এর সম্পর্ক আছে কি না৷ ওইদিন তো একজনের প্রশ্নের উত্তরে জানালাম আমাদের পরিবারের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা, আগারতলা মামলার আসামীসহ৷ কিন্তু আরো আত্মীয় স্বজন আছে৷ দক্ষিনবঙ্গের তখনকার একজন নামকরা মুসলিম লীগ নেতা, রাস্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও আমাদের আত্মীয়৷ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মারা না পড়লে এতদিনে বিএনপির উপরের সারির নেতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ তো তার ১৮-১৯ বছরের ভাতিজা ৭১ এর জুন-জুলাইয়ের দিকে পাক বাহিনীর লঞ্চ রেইডের সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে ধরা পড়ে৷ পাক আর্মির সাথে থাকা রাজাকারদের কারনে বাকী মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের তখনই মেরে ফেলা হলেও ভাতিজা তখনকার মতো বেচে যান, কয়েক ঘন্টার জন্য আসলে৷ লঞ্চের কোথাও লুকানো অস্ত্র ছিল, ভাতিজা ওখান থেকে অস্ত্র এনে আর্মির যে কমান্ডার (ক্যাপ্টেন, মেজর এরকম কিছু) ছিল তাকে গুলি করে পানিতে ঝাপ দেয়৷ তবে কতক্ষন আর ডুবে থাকা যায়, লঞ্চে ওপর থেকে সৈন্যদের গুলিতে ভাতিজা নিহত হন৷ বহুবার নানা বাড়ীতে গিয়ে এই কাহিনী শুনেছি, নানাজনে নানাভাবে এদিক সেদিক করে বলেছে৷ গোড়া পাকিস্তান পন্থী পরিবারে বড় হওয়া ১৮-১৯ বছরের যে ছেলে এই কান্ড করলো, সে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশের জন্য মহান দ্বায়িত্ববোধ থেকে একাজ করেছে, আমার কাছে একটু বেশী বেশী মনে হয়৷ ১৫-২০ বছর বয়সী আর যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি, তাদের সবার ক্ষেত্রেই আমার গাঢ় বিশ্বাস মুক্তিবাহিনীর coolness টাই বড় ছিল৷ এখন যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মরচে ধরেছে৷ জোর করে গিলিয়ে দিতে হচ্ছে লোকজনকে, তখন সন্দেহ হয় মুক্তিযুদ্ধ বোধ হয় আর ফ্যাশনেবল নেই, সামি ইউসুফের গান এখন মুক্তিযুদ্ধের ডাকের চেয়ে বেশী cool৷ এই সমস্যা সমাধানের দায় আমাদেরই৷ মুক্তিযুদ্ধকে ফ্যাশন হিসেবে ধরে রাখতে পারি নি এজন্য মুক্তিযুদ্ধ পিছনে পড়ে গিয়েছে, ঠিক এজন্যই অনেকে বলার সুযোগ পায় ৩০ বছর পেছনে গিয়ে লাভ কি, আসুন সামনে তাকাই৷ গাছের পাতা দেখে বোঝা মুষ্কিল তার মুলটা কোথায়, কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যার মুলে যাওয়ার চেষ্টাটা বোধ হয় করা উচিত৷

মন্তব্য

অরূপ এর ছবি
এই উৎস কোথায় ছিল? ------------------------------------- রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
হযবরল এর ছবি
Zune এর কথা যেটা বললেন, এটা আদৌ কি শুধু Coolness factor? মার্কেট যখন আই-পড ক্রেজি তখন যত ভাল জিনিসই বাজারে আসুক, লোকে খায় না। মানুষ অনেকবেশী পছন্দ করে ট্রেন্ড এ ঢুকতে। সবার কাছে আই-পড, আমার ও একটা থাকতে হবে। অন্য ভালো একটা কিছু পেলেও চলবে না। কুলনেস ফ্যাক্টরটা বেশী লক্ষ্য করা যায় উঠতি বয়েসী(পূর্ণ বয়েসী ও আছে কিছু)ছেলে-মেয়েদের পাঠাভ্যাসে। সবাই দেখা যায় একটা নির্দিষ্ট বয়সে, নির্দিষ্ট বই পড়ছে। কলেজে সবাই পড়া শুরু করলো সমরেশ,এখন কেউ সমরেশ না পড়লে ডি-ক্লাসড হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টা এখন খুব বেশী রকেমের ব্যাকগ্রাউন্ডে। এর পিছনে বাংলাদেশের রাজনীতির অবদান অনেকখানি। লোকজন এখন I hate politics and politicians বলতে সাবলীল বোধ করে। এক ধরণের দায়মুক্তির মতো। কারণ কোন দল করি বললেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কি বিপক্ষের এই ইস্যু চলে আসে। অথচ একটা স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবারই সহমত থাকবার কথা ছিল। এইটা আমার মতে একটা বড় ফ্যাক্টর যে কারণে, কুলনেস/আবেদন হারাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ।
আরিফ জেবতিক এর ছবি
মুক্তিযুদ্ধের কুলনেস?ভালো ভেবেছেন তো!দেন,পিঠটা এগিয়ে দেন..। শিবিরের ব্যাপারে আপনার কথা ঠিক আছে।নব্বই দশকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ব্যাপক আধিপত্যের কারনগুলোর একটা হচ্ছে নেতাদের ড্যাশিং ইমেজ।অভি,নীরু, এদের চার্ম ছিল,এরা হেলাল বেলাল মার্ক ম্যন্দা মানুষ ছিল না।আর তাই দেখা যায় মেয়েদের হলে সুপরিচিত নেত্রীদের বিপরীতে একজন শিরিন সুলতানা নামে অখ্যাত ছাত্রীও ছাত্রদলের প্রার্থী হিসেবে ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। মুক্তিযুদ্ধের চার্ম বা কুলনেস নষ্ট হয়েছে ৯৬ থেকে ২০০১ সালের মাঝে।জাহানারা ইমাম যে কুলনেস সৃষ্টি করেছিলেন,সেটি এসে হোচট খায় আওয়ামী শাষন আমলে।যে কোন কারনেই হোক আওয়ামীলীগ এটি প্রমান করতে চায় যে মুক্তিযুদ্ধ তাদের একার সম্পত্তি,কিন্তু দূ:খজনক ভাবেই তাদের কাজকর্মে সে ছাপ পাওয়া যায় নি। জোর করে মুক্তিযুদ্ধ গেলানো হচ্ছে না,তবে সময়ের সাথে চেতনাও হয়তো প্রকাশ ভঙ্গিতে আলাদা হয়।তবে মুল সুর ঠিকই আছে।মুক্তিযুদ্ধ এখন মানুষ ধারন করে হৃদয়ে,সেটা নিয়ে চেচামেচিতে যোগ দেয় না।কারন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কুলনেস না হারালেও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নকারীদের কেউই তাদের সততা,নিষ্ঠা,দেশপ্রেম আর উদ্যোগের মাঝ দিয়ে নিজেদের কুলনেস প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন না।মানুষ আর এই ভন্ডদের বিশ্বাস করে না।
উৎস এর ছবি
আওয়ামী লীগের জন্য মুক্তিযুদ্ধ একটা বড় মুলধন, কারন দেশ স্বাধিন হওয়ার পরে এমন কোন সাফল্য নেই যেটা নিয়ে ভোটের রাজনীতি করা সম্ভব। একবার শুনলাম এবার নাকি মুজিব-জিয়ার ছবি ব্যবহার নিষিদ্ধ হবে, সেক্ষেত্রে বিএনপি-র চেয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষতি বেশী হবে বলে মনে হয়।
ভাস্কর এর ছবি
coolness'এর একটা basic ধর্ম আছে...সেইটা হইলো তার ধরণ কয়দিন পরপরই পাল্টায়। কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ যেমন cool হয় আবার অনেক যুদ্ধে অংশ নেওয়াটা অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত হইছে ইতিহাসে...ঐসব যুদ্ধরে প্রতিবাদ করনটাই cool। একসময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধরে এমনে coolness'এর দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা হইছে বইলাই এর মাজেজাটা এখন এইরম হইছে বইলা আমার মনে হয়। coolness দিয়া না, বরং চেতনার একটা সঠিক পঠনই পারে ইতিহাসের সার্বজনীনতা আর চিরকালীনতা দিতে। আমাগো মুক্তিযুদ্ধ যেইটার ক্ষমতা হারাইছে আসলে ৭৩'এই, আওয়ামি মালিকানা চাপাইয়া দেওনের ফ্যাশনের লেইগা। ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হিমু এর ছবি
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি অনীহা তৈরির কাজ আসলে চলছে বহুদিন ধরে। আমি আস্তমেয়েকে এই কাজে নিয়োজিত একজন বলে ভাবি। সামহোয়্যারের শুরুর দিকে অরুণিমা বলে একজন মন্তব্য করতো টুকটাক। মন্তব্যগুলি পাকমনপেয়ার ঘরানার। কিছু ত্যাঁদড় ব্লগারের দুষ্টুমিতে অরুণিমা অভিমান করে ব্লগ ছাড়ে। কিছুদিন পর যোগ দেয় আস্তমেয়ে। কেন যেন অরুণিমার সাথে অনেক মিল খুঁজে পাই তার। আস্তমেয়ে কিন্তু শুরুতে হিজাবি সংস্কৃতি নিয়ে তেমন একটা বাড়াবাড়ি করেনি। একটা সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা দেখি তার লেখায়। ব্লগে কিছু বলার চেয়ে ব্লগারদের সাথে খাতির তৈরির কাজেই তাকে বেশি মনোযোগী বলে মনে হতো। একটা সময় পর আস্তমেয়ে তার "কনফিউজড নতুন প্রজন্ম" ১.০ ভার্সন বাজারে ছাড়ে। সেখানে সে নিজেকে বিভিন্ন ব্যাপারে কনফিউজড বলে দাবি করতে থাকে, এবং সেই কনফিউশন ছড়াতে থাকে। আপনারা হয়তো জানবেন, কনফিউশনের গতি প্রকৃত তথ্যের চেয়ে বেশি। কারণ যিনি প্রকৃত তথ্য জানেন তিনি সেটা সারাক্ষণ ব্রডকাস্ট করে বেড়ান না, কনফিউশন সহজে ছড়িয়ে পড়ে যারা জানে না তাদের মধ্যে। যারা জেনেও না জানার ভান করে বা ভুল জানতে চায়, তারা সেই কনফিউশনের রিপিটার হিসেবে কাজ করেন, অর্থাৎ কনফিউশন (বারবার এই শব্দটা ব্যবহার করছি বলে লজ্জিত, যুতমতো বাংলা পাচ্ছি না) যদি কখনো দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে তার গোড়া বেঁধে আবার ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি সারেন। আস্তমেয়ের কনফিউশনের আযানে খুব দ্রুত সাড়া দিতে দেখা যায় তেলাপোকা, ছাগুরাম, ওয়ালি এরকম আরো কয়েকজনকে। আস্তমেয়ে বেশ কয়েকটি টেকনিক সামনে নিয়ে এসেছিলো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবেগের অসারতা প্রমাণের সপক্ষে সে নিজের বন্ধুদের উদাহরণ প্রায়ই দেয়। তার যেসব বন্ধুর বাবা মুক্তিযোদ্ধা, তারাও নাকি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ক্লান্ত --- এটি তার খুব প্রিয় একটি কথা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ক্লান্তি যে এই প্রজন্মের "ফ্যাশন", এটিই আস্তমেয়ে প্রমাণে উদ্যোগী হয়। ব্লগে তখনই একটা প্রতিরোধ তৈরি হয় এর বিরুদ্ধে। কেউ আস্তর "কনফিউশন" দূর করার জন্য নরম গলায় বলেন, কেউ তাকে চিনে ফেলে গরম কথা শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ক্লান্তি, অনীহা বা বীতস্পৃহাকে একটা কুলনেস দেয়ার কাজটা করে যাচ্ছে প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধেরচেতনাবিরোধীরা। খুব রয়েসয়ে। ধারণা করা যায় এর পেছনে সাংগঠনিক মদদও রয়েছে। আজ প্রায় এক বছর ধরে চলছে এই প্রচেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার ওপরে কোমল প্রলেপ মাখানো হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনাগুলোকে ভুল বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, এবং আওয়ামী লীগের সাথে সমীকৃত করে একে সরাসরি খাটো করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকে একটা ভুল-দ্বিধা-সংশয়ের স্ট্রেইট জ্যাকেট পরানোর কাজ চলছে এই প্রতিক্রিয়াশীল শিবিরে, এক কথায় বলা যায়। কারণ একটাই, এরা মুক্তিযুদ্ধকে এখনও ভয় পায়।
হিমু এর ছবি
"আজ প্রায় এক বছর ধরে চলছে এ প্রচেষ্টা", এ কথাটা আসলে সামহোয়্যার ইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যুদ্ধ শুরু হবার পর পরই।
হিমু এর ছবি
কুল বা কুলনেস এর বাংলা কী করা যায়? আমি সাধারণত কুল বোঝাতে "জট্টিল!" কথাটা ব্যবহার করি। একটু মোচড় দেওয়া যায় শব্দটায়, যেমন, ঝটিল বা ঝটিলতা ... :)।
উৎস এর ছবি
"কঠিন" ও বলে অনেকে।
ভাস্কর এর ছবি
ঝাক্কাসটাও ভালো মনে হয়... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
সবকিছু সময়ের প্রয়োজন। মানুষের পেটে ভাত থাকাটা বেশি দরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যবসা করেছে, বিএনপি ব্যবসা করেছে, জামাতও ব্যবসা করেছে। একেক জনের ব্যবসায়ের স্টাইল একেক রকম। তাদের সবার ব্যবসায়ের সম্মিলিত ফল হিসেবে মানুষ বিরক্ত হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষের মাঝ থেকে আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় নি বলেই আমি বিশ্বাস করি। ইন্টারনেট বা মিডিয়ায় মত প্রকাশের সুযোগ পাওয়া মানুষদের অনেক বড় একটি অংশ আসে সমাজের সুবিধাবাদী শ্রেণী থেকে। এদের অধিকাংশের পিতা-পিতামহেরা 50 বছর আগেও সুবিধাবাদী ছিলেন, 71-এ ও সুবিধা খুঁজেছেন (শুধু রাজাকার হওয়াটাই সুবিধাবাদিতা না) এবং এখনো অবস্থার পরিবর্তন হয় নি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চিন্তা করে নষ্ট করার মত সময় এদের নেই। কিন্তু মাস লেভেলে বাংলাদেশের মানুষ আজও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এবং যথেষ্ট প্রগাঢ়ভাবেই ধারণ করে। নৌকা যে ভোটগুলো পায়, তা হাসিনার জন্য না, মুক্তিযুদ্ধের জন্য। ধানের শীষ যে ভোটগুলো পায়, তা হাসিনার আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের বিরক্তি থেকে আসে। জামাতের ভোটগুলোর সিংহভাগ আসে এই দুইদলের ওপরই আশাহত হওয়ার কারণে। এরশাদের উত্তর বঙ্গের সিটগুলো আসে কৃতঞ্জতাস্বরূপ। সময়ের প্রয়োজনটাই মানুষ আগে দেখে। কিন্তু তাই বলে অতীতের গৌরবগাঁথা মানুষ ভুলবে কেন?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাধক শঙ্কু এর ছবি
coolness factor বিষয়টা এমনেও কওয়া যায় যে একেক সময় "লোকে" একেকটা বিষয় খায়। এই খাওয়া খাওয়ির ব্যাপারটা একেক মার্কেটে একেক রকম। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা শুরু থিকাই ষড়যন্ত্র করছে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া বাজার ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা তাগো হাতে। পণ্য হিসাবে জিনিসটার ইউটিলিটি কমানোর জন্যই জিনিসটারে কনজিউমার গুডস বানানো হইছে। আওয়ামী লীগ যে স্টাইলে শুরু করছিল তাতে তারা তখনই ধরা খাইতেছিল। তাতে মুক্তিযুদ্ধের অন্য ক্রেডিবিলিটি বাড়তাছিল। কারণ ঐ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা রাজনীতিতে ছিল না। ১৯৭৫-৯০এর সামরিক সরকারগুলা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের রাজনীতিতে হালাল করছে একদিকে, আরেকদিকে দূর্নীতির প্রাতিষ্ঠাণিক টোপ দিয়া মধ্যবিত্তের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ফাঙ্কি ক্রেতা তৈরী করছে। এই ক্রেতারা পণ্যের কোয়ালিটির বদলে লেভেলের দিকে বেশী আগ্রহী। যতগুলা একচেটিয়া বাজারে নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া ঠেকানো হইছে তার সবগুলাতে এই টাইপ ক্রেতারা সংখ্যাগরিষ্ট। এরা পশ্চিমের বাজারেও আছে। কিন্তু সেইখানে তারাই প্রডিউসার বইলা কোয়ালিটি কম্পিটিশানের একটা জায়গা থাইকা গেছে। (এই ব্যাপারে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের ক্রেতাদের মধ্যে হালকা পার্থক্য আছে।) একচেটিয়া বাজারে বাজার দখল কইরা ক্রেতা বানাইয়া তারপর পণ্য খাওয়ানোর একটা বিষয় থাকে। ইতিহাসের যেই ইভেন্ট এই প্রক্রিয়ারে ডিষ্টার্ব করে সেইটা অরা বেচবো ক্যান?

গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা

উৎস এর ছবি
মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হালাল করার প্রক্রিয়াটায় দোষ অনেকের। এনায়েতুল্লাহ খান, বা বদরুদ্দিন উমরের মতো মনোভাবের লোকজনকে আমার বেশী দায়ী মনে হয়, সামরিক শাসকদের চেয়ে। এরশাদ বা জিয়ার দরকার ছিল অবলম্বন, সে অর্থে আমি বলবো বুদ্ধিজীবিদেরই একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধের অসম্পুর্ন বা অনেকসময় ছোট অংশকে বড় করে দেখানোর মাধ্যমে বিকতিটা (রি-কার দিতে পারছি না) শুরু করেছেন। এগুলো ঠিক জামাতি ভার্শনের ইতিহাস যে তা নয়, বরং ইচ্ছাকরে গুরুত্বপুর্ন অংশে বাদ দেয়া। একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের ব্র্যান্ডিংটা নষ্ট হয়ে যায়। এক অর্থে ভুলের শুরুটা বঙ্গবন্ধুর কারনেই। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযু্দ্ধের পরের ভুমিকা নেলসন ম্যান্ডেলার চেয়ে অনেকটা জিম্বাবুয়ের মুগাবের কাছাকাছি।
সাধক শঙ্কু এর ছবি
বদরুদ্দিন উমররে এনাতুল্লাহ খানের লাইনে আনাটা মনে হয় ঠিক হইল না। এনায়েতুল্লাহ রা পাকিস্তান আমল থিকা সিআইএর দালালী করতাছে পারিবারিকভাবে। বদরুদ্দিন উমরের বইগুলা কিন্তু বরং আমার কাছে মনে হইছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সারবস্তুটা বাইর করার চেষ্টা করছে। উমর সাহেবের অনেক আজেবাজে লেখা আছে ঠিক। কিন্তু তার গুরুত্ব সেইখানে না। তারে বিচার কতে হইবো উন্নয়নশীল বিশ্বে সামরিক বাহিনির ভুমিকা জাতীয় লেখা দিয়া।

গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা

সাধক শঙ্কু এর ছবি
মুক্তিযুদ্ধ যে আওয়ামী যুদ্ধ না, সেইটা যে পিপলস ওয়ার ছিল এই বিষয়টারে আড়াল করার চেষ্টারেই আমি দায়ী করি।

গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা

হযবরল এর ছবি
আওয়ামী লীগই তো কামটা করলো। ৩৫ বছর বাদে ক্ষমতায় আইসা সকাল-সন্ধ্যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ। নাম পল্টানো। পাবলিকের নাক জ্যাম কইরা দিছে।
উৎস এর ছবি
বদরুদ্দিন, ফরহাদ মজহার এদের নিয়ে একটা লেখা দেও না সাধক।
এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
জোশ একটা লেখা। আমি আজকে একটা দূর থেকে পিঠচুলকানির চাইনীজ হাতা কিনলাম। তাই দিয়ে দূর থেকেই এট্টু চুলকে দিলাম। ==== মানুষ চেনা দায়!
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
এই নিয়ে আজ দ্বিতীয়বার। মন্তব্য লিখে শেষ করে এনেছি, তখনি রিফ্রেশ জাতীয় কিছু একটা হলো। তারপর সব ফর্সা। এতো হতাশ লাগে তখন! ব্লগাধিপতিরা একটু নজর দেবেন? ============================= অসাধারণ এই লেখাটি এবং সঙ্গে দুর্মূল্য কিছু বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য নিয়ে আমার দু'পয়সা আজ আর দেওয়া হলো না। পরে লিখতে হবে। উৎসকে ধন্যবাদ এই বিশ্লেষেণের অবতারণা করার জন্যে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
এই ব্যাপারটা তো হবার কথা না! অরূপকে গুঁতাই দাঁড়ান। ==== মানুষ চেনা দায়!
শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
কুল শব্দটা এই অর্থে মনে হয় চালু হয়েছে ১৯৯০ এর দিকে। মানে এর চালু হওয়াটা দেখেছি বলা যায়। কিন্তু এই কুল শব্দটা ছাড়া অনেক কিছু প্রকাশ করা যায় না। হাহ॥

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।