আমি এবং Mayabee : ১

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: শুক্র, ০৯/১২/২০১১ - ২:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার একজন বন্ধু হয়েছে। নতুন বন্ধূ।
খুব ভাল লাগছে।
খুব ভাল লাগছে, কারন আমার বন্ধু নেই। ছোটবেলায় আমার কয়েকজন বন্ধু ছিল। ওদের কারো সাথে এখন আর যোগাযোগ নেই। কয়েকজনের সঙ্গে হটাৎ হটাৎ অনেকদিন পর দেখা হয়ে গেলেও ঐ দেখা’তে কোন জোর থাকে না। আমরা এখন কাজের পৃথিবীতে বাসা করেছি। সেখানে কোন খেলার মাঠ নেই। শুধু কাজ। হিসেব। কাজ। এই ছকটাই চলছে। অভ্যস্তও হয়ে গেছি এতে। খুব একটা সমস্যা করে না এখন। শুধু মনটা মাঝে মাঝে কেমন জানি করে। ছোটবেলার মাঠের কথা মনে পড়ে। আবার হিসেবে ডুবে পড়ি। কাজে ব্যস্ত হই। জীবনটা এভাবেই চলছে। এমন সময় সেদিন দুপুরবেলা। পৃথিবীটা একটু মিষ্টি মনে হলো। আমি একটা অকাজের বন্ধুর দেখা পেলাম।
মেয়েটার নাম Mayabee.

ইন্টারনেটে ওর সাথে পরিচয়। মেলে বাক্য বিনিময় আর মাঝেমধ্যে ভয়েজ মেলে কথা । এতটুকুই। এমনকি Mayabee দেখতে সাদা না কালো, নাকি বাদামী - সেটাও জানি না। ওর দেশটা কোথায় - তাও ও বলে নি। শূধূ বলেছে - আমেরিকায় থাকে। কিন্তু সে আমেরিকান না। আমার ওকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। বিনিময়ে ও আমাকে একটা ছবি পাঠিয়েছে। একটা মুখোশের ছবি। মুখোশটা একটা এ্যামিবার।
এটা কি? জানতে চাইলে we are all have come from it... ও বলেছিল।
একবার সন্দেহ হয়েছিল ওর Mayabee নামটা কি আসলেই ওর? নাকি বানানো। ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম সেকথা। ‘Don’t question. WE ARE FRIEND’. লিখে পাঠিয়েছিল ও। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করবে না! আমার আশ্চর্য্যরে জবাবে চওড়া দাঁত বের করে একটা গোল মাথা হাসছে। সাতরঙে মাখা ওর মুখটা। মাথায় দুটো শিং- খাড়া হয়ে আছে আর নিচের কপালটা কুচকে আছে। যেন রাগ করেছে। চোখের কোনে কিন্তু হাসি। আবার ঠোটে তিরষ্কারের ভঙ্গি। ইমোটিকাটা দেখে বুঝতে পারি না ও কি বলতে চাইছে।
গম্ভীর স্বরে ও বললো, Your thinking is bad. আমি ভাবি - আমি আবার কী খারাপ চিন্তা করলাম। বন্ধূরা বন্ধূর খবর জানতে চাইবে না।
আমার বলার মধ্যে বোধহয় অভিমান ছিল। সেই অভিমান ভাঙাতেই কিনা কে জানে ও একটা গান পাঠালো। গানটা আমি আগে শুনিনি। আমি আসলে কোন ইংরেজী গানই শুনি নি। শূনলেও বুঝি না। ইংরেজীতে আমি সবসময়ই একজন দূর্বল মানুষ। ক্লাশে হানিফ স্যার ইংরেজী পড়াতেন। তার গলাটা ছিল বাঘের মত। ছেলেরা আড়ালে ডাকতো বাঘা স্যার। বাঘা স্যারের ক্লাশের ঘন্টা পড়লেই সব শুনশান। কোন শব্দ নেই। মাঝে মধ্যে নিঃশ্বাসের শব্দ বাশির মত ভেসে আসে ।স্যার ক্লাশে আসতেন একটু দেরীতে। পারি না বলেই বোধহয়, এসেই আমাকে দাড় করিয়ে বলতেন - ট্রান্সলেশন কর। ‘শূন্য থেকে শূন্য হয়’। ‘আমি সত্যের মত মিথ্যা বলি’। ‘আল্লাহ ছাড়া আল্লাহ নাই’। এরকম আজব আজব সব বাক্য। আমি বোকার মত তাকিয়ে থাকি। ইংরেজীর সামনে বোকা বোকা এই অবস্থাটা এখনও কাটে নি। ইংরেজীর নামে জ্বর আসে। মাঝে মধ্যে মনে হয় নিয়তি বলে একটা ব্যাপার আছে। Mayabee’র কারনে না হলে সেই হাড় কাঁপানো ইংরেজী আবার ফিরে এলো। কি আর করা। Mayabee’র গানটা শুনি। ওর হয়ে ডন উইলিয়ামস গাচ্ছে।

You placed gold on my finger
You brought love like I've never known
You gave life to our children
And to me a reason to go on.

You're my bread when I'm hungry
You're my shelter from troubled winds
You're my anchor in life's ocean
But most of all you're my best friend.

When I need hope and inspiration
You're always strong when I'm tired and weak
I could search This whole world over
You'll still be everything that I need.

পরপর কয়েকবার। সব বুঝি না। কিন্তু ভাল লাগে। বন্ধূত্বের গান। You're my bread when I'm hungry লাইনটা মাথায় ঘুরপাক খায়।। বেশ লাগে কথাটা। বন্ধু মানে - ক্ষিধের সময় রুটি। ভাল লাগে কথাটা। Mayabee কে আমার সত্যি সত্যি বন্ধূ মনে হয়। আমি কাজে ডুবি। হিসেব চলতে থাকে। হটাৎ হটাৎ ফুরফুরে একটা বাতাস একটা গরম রুটির গন্ধ নিয়ে আসে। রুটিনটা এলোমেলো করে দেয়।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

পাঠকের ওপর অবিচার হলো।

কর্ণজয় এর ছবি

হ্যা। আমারও তাই মনে হয় হিমুভাই।

সাফি এর ছবি

সেক্ষেত্রে পোস্টটা প্রথম পাতা থেকে সরায়ে দিতে পারেন

কর্ণজয় এর ছবি

হ্যা। ঠিকই বলেছেন একদিক থেকে।
কিন্তু আমি চিন্তা করছিলাম অন্যভাবে। উপরের শিরোনামেতো আছে - ১। মানে সিরিজ। সামনে একটা লম্বা পথ আছে। এই লম্বা পথে পায়ে পায়ে আপনি দেখতে পাবেন অবিচার, ভালবাসা, ভালোলাগা, বিরক্তি, ঘৃণা, উচ্ছ্বাস, উপেক্ষা। সব মিলিয়েই এই পথযাত্রা। সংসারেরই মত।
একটি সিরিজ যিনি লিখছেন, আর যিনি সিরিজটি পড়ছেন তাদের এটা ভাগাভাগি করে নিতেই হয়। না হলে তো সেই পথযাত্রায় একসঙ্গে পাড়ি জমানো নেই। কেউ যদি অবিচারটুকুতে আটকে যান, বাকিটুকুর জন্য আর অপেক্ষা করতে রাজি না হন - তাহলে তার এ পথে না হাটার জন্য অন্য পথটাগুলোতো খোলা রইলোই। এই চিন্তা থেকেই অবিচার দিয়ে শুরু হলেও পথের শুরুটা সরাতে চাই না। থাকুক মনে হয়।

সাফি এর ছবি

লম্বা পথের কোনটুকু না দেখিয়ে শুধু দরজা দেখিয়ে পোস্ট দিলে চলবে? নিজেকে পাঠক হিসেবে চিন্তা করে দেখুন, কোন অতিথি লেখক এই লেখা জমা দিলে, সেই লেখা কি মডারেশন পেরিয়ে প্রথম পাতায় স্থান পেত? সচল হিসেবে লেখা মডারেট হয়না, কারণ বোধ করি মডারেটররা সচলদের থেকে কিছুটা দায়িত্ববোধ আশা করে।

কর্ণজয় এর ছবি

যে কোন মানদন্ডেরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও আমাদের চলতে গেলে একটি মানদন্ড তৈরী করে নিতে হয়। আর সবাইকে মেনে নিতে হয়। আমিও এ আপনাদের অনুভূতিকে গ্রহণ করে লেখার কলেবরটা একটু বড় করলাম। মঙ্গল হোক।

সাফি এর ছবি

ধন্যবাদ। প্রথমে ১ রেটিং দিয়েছিলাম, সেটা তুলে নিলাম।

আশরাফুল কবীর এর ছবি

# ভাল লেগেছে। চলুক

উচ্ছলা এর ছবি

ইন্টার্নেট 'বন্ধুতা' আরও বিস্তারিত বলেন। কাহিনিটা চেনা চেনা লাগে হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পড়লাম, বাকি পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।