এ ও সে ও : ০১ রঙের পৃথিবীর সংযোজিত অংশ

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৪/২০১২ - ৬:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভারতবর্ষ - সে এক কল্পনার দেশ। তাকে নিয়ে কতই না উপকথা ইউরোপের বাতাসে বাতাসে উড়ে বেড়ায়। তন্ত্র, মন্ত্র আর ঐশ্বর্য্যের গল্পগুলো একেবারে রূপকথার মত। ভারতবর্ষের আকাশে যে পাখিরা উড়ে বেড়ায় তাদের চোখগুলো দ্যূতিময় হীরায় তৈরী। গাছের পাতাগুলো রূপোর - আর সেই রূপোলী পাতার মধ্যে ফুটে থাকে খাঁটি সোনার আপেল। পথের ধুলোয় স্বর্ণরেণু চিকমিকিয়ে ওঠে। পাহাড়ের গা বেয়ে পথ চলতে গেলে নুড়ি গড়িয়ে পড়ে। সে নুড়ি সাধারন পাথরের না। মণি, মাণিক্য আর জহরতের তৈরী সেইসব নুড়ির টুকরোগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে সারা পৃথিবীকে।
কলম্বাসের স্বপ্ন, এই অলৌকিক দেশটা তিনি খুঁজে বের করবেন।
ভারতবর্ষের মতই - তার যাত্রাপথটাও রহস্যে মোড়া। শেষ নেই। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। আকাশের মত বিস্তৃত দিনের নীল আর রাতের অন্ধকারের মধ্য দিয়ে শুধু ভেসে চলা। সমুদ্র এমনই। নিঃসীমতার মধ্য দিয়ে এগিয়েই চলা শুধু। তবু স্বপ্নের অচিনদেশের কোন চিহ্নই মিললো না। কলম্বাসের স্বপ্ন অবশ্য তার চেয়ে অনেক বড়। সারা জীবন পাড়ি দিয়ে আরো অনেকদুর এই অচিনযাত্রায় মেতে উঠতে পারে সে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তার সহযাত্রীদের কাছে ঐ স্বপ্ন হয়ে উঠেছে অসম্ভব। অসম্ভব থেকে অবাস্তব। অবাস্তব থেকে অলীক।
: ওরা এখন আমাকে পাগল ভাবতে শুরু করেছে। আসলে কি আমি পাগল? এই স্বপ্ন কি পাগলামী? কিন্তু আমি তো তা মনে করি না। নিশ্চয় এই সমুদ্রের শেষে নিশ্চয়ই আছে সেই দেশ...
কলম্বাস এ কথাগুলোই বলছিলেন নিজেকে নিজে। কথাগুলো ঘিরে ঢেউয়ের লুটোপুটি আর একটানা বাতাসের শব্দ - একটা রাগিনী সঙ্গীতের মতো বেজেই চলেছে... যা মনে হয়, কোনদিনও শেষ হবে না।
: ওদের আর কি দোষ। সুদীর্ঘ স্বপ্ন নিয়ে সবাই বেঁচে থাকতে পারে না। আমাকে না হয় আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
শব্দগুলো নিরীহ, শান্ত, কোমল। কিন্তু এর পেছনে যে অসম্ভব হতাশা, ক্ষুদ্ধতা, নৈরাশ্য ও কান্না খেলা করছে - তা আকাশের চেয়েও বিশাল। সমুদ্রের চেয়েও গভীর। আমাদের এই এক পৃথিবী সেটা ধরে রাখতে পারে না।
সেই একই অভিমান। মানুষের প্রতি। পৃথিবীর প্রতি। সেই অভিমানের অশ্রুবিন্দু আদিগন্ত নীল সমুদ্র হয়ে জেগে আছে।
এই নীল সমুদ্রের ওপারে আছে সেই দেশ। বিভ্রান্ত জাহাজের মাস্তুলে পরাজয়ের পতাকা হয়ে আকাশের নীলে জেগে থাকা পাল, মাটির মায়ায় আটকে যাওয়া নাবিকের স্বপ্ন ভূলে গিয়ে তিনি ছোট্ট বালকের মত এই সমুদ্রের নীল জলের ওপারে জেগে ওঠা রুপকথার ভারতবর্ষের স্বপ্নে ডুবে যান। মণিমাণিক্য হীরা জহরতে আকীর্ণ এক ঝলমলে যাদুর রাজ্য তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তিনি কখনই জানতে পারবেন না - ঠিক তখনই পৃথিবীতে একটি গোপন প্রেমের গল্প জন্ম নিচ্ছে। এই প্রেম - সবকিছু পাল্টে দেবে।

উম্বুসাপুত্র আমে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। গতরাতের ঘটনাটা তার মনে বারবার ভেসে উঠছে। কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা, তবু তার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না। আসলেই কি তার জীবনে এটা ঘটেছে? নাকি নিছক কল্পনা? কিন্তু কল্পনা হলেও এই কল্পনা থেকে তার মুক্তি নেই। 'আমিতো'কে ভোলা সম্ভব না।
তার 'আমিতো'র চোখ দুটি মনে পড়ে। বড় বড় চোখ দুটোতে কি কামনা মাখানো। হাত দিয়ে ঠোট স্পর্শ করে আমে। সেখানে এখনও আমিতোর ঠোটজোড়ার উষ্ণতা মেখে আছে। বুকের কাছটায় একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে। সে বুঝতে পারে না কি করবে সে। সমুদ্র দেবতা ওদলু তার প্রার্থনা শুনেছেন। এখন তিনিই পারেন তাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে ওদলুকে খুজে।
সকালের সূর্যের সোনালী আভা সমুদ্রের উপর দিগন্ত জুড়ে চিকমিক করছে। এই দিগন্ত রেখার ঠিক ওপারে সমুদ্র হটাৎ করে অনেকটা গভীর হয়ে গিয়েছে। নীল জলগুলো ওখানে আরও গভীর নীল। ওখানেই কোথাও জলের নিচে সমুদ্র দেবতা ওদলুর প্রাসাদ। প্রভাময় রত্নমণি আচ্ছাদিত মাছকুমারীরা সেখানে বর্ণিল বাগানে ঘুরে বেড়ায়। আর যে প্রাসাদ ভবনটিতে ওদলু স্বয়ং থাকেন তার কথা - বলা যায় না, কওয়া যায় না। এত তার রূপ। হীরের তৈরী সেই প্রাসাদ আলো করে আছে ওদলুর একশত তেরো কন্যা। গভীর রাত্রে ওরা সমুদ্রের উপরে উঠে আসলে পূর্ণিমা নামে। অকাতরে চাঁদ ওদের জন্য জ্যোৎস্না বর্ষন করে। কি সুন্দর তাদের চেহারা, গোটা পৃথিবীতে তাদের মতো কেউ নেই। একবার যে তাদের দেখেছে সে কখনো কোন মেয়েকে ভালবাসতে পারে না।
ওদলু তাদের নতুন গোত্র দেবতা। বিশাল সমুদ্রের মধ্যে মণিমালার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দ্বীপপুঞ্জের বেশ কয়েকটি গোত্রের মধ্যে শুধুমাত্র তাদের গোত্রই ওদলুর উপাসনা করতে শুরু করেছে।
ওদলুর গল্প তারা জানতে পেরেছে এই সেদিন, আমে'র বাবা উম্বুসার কাছ থেকে।
এই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা গাছের তৈরী এক ধরণের ছোট ছোট ভেলায় চড়ে সমুদ্রের এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে চলাচল করে। আমে'র বাবা উম্বুসা একদিন ভেলায় চেপে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন। সবাই ধরে নিয়েছিল সাগরেই তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার একশত তেরদিন পর, একশত চৌদ্দদিনের মাথায় গভীর সমুদ্রে কয়েকজন তাকে ভাসতে দেখে। উম্বুসা তাদের দেখে হাত নেড়েছিল কিন্তু তারা তাকে দানো মনে করে ভয়ে তীরে ফিরে এসেছিল। এর তিনদিন পর উম্বুসা ফিরে আসেন। ভয়পাওয়া ভেলা জলে যে রেখা রেখে গিয়েছিল - সেই পথ ধরে উম্বুসা সাতরে সাতরে ফিরে এসেছে। সবার বিমূঢ়, ভীত, হতবাক দৃষ্টির সামনে উম্বুসা ধীরে ধীরে দরিয়ার এক নতুন দেবতার গল্প আরম্ভ করে। উম্বুসা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায় না। একশত তেরোদিন ওদলু আর তার একশত তেরো কন্যার গল্প বলে। একশত চৌদ্দদিনের মাথায় পূর্ণিমার রাত্রে জ্যোৎস্নার মধ্যে দাড়িয়ে সে চিৎকার বলে -
তোমরা কামনা করো তোমরা বাসনা করো
প্রভূ ওদলু আসছেন
তিনি তোমাদের প্রার্থনা পূরণ করবেন।

সেই থেকে ওদলু একশত তের রাত্রি পর পর উম্বুসার উত্তরপুরুষদের বাসনা পূরনে এই দ্বীপাঞ্চলে আসেন। তার তুষ্টিতে সে দিন সবাই মৌনতা অবলম্বন করে মনপ্রান ঢেলে আরাধ্য জিনিষের জন্য প্রার্থনা করে।
সময়ের হিসেব করলে ওদলু পূজার বয়স আমে'র বয়সের সমান। উম্বুসা যখন ওদলুর আশ্রয়ে তখন আমে মায়ের পেটে। উম্বুসা ফিরে আসার পর কোনদিন স্ত্রীকে মুখ তুলে দেখেননি। বাড়িতেও ঠিকমত ফিরতেন না। বিমর্ষ হয়ে সারাদিন রাত সমুদ্রের পাড়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দূর্যোগের চি‎‎হ্ন খুজে বেড়াতেন। সমুদ্র উত্তাল হতে শুরু করলে একাই ভেলা ভাসিয়ে ক্ষ্যাপাটের মতো সমুদ্রে দাবড়িয়ে ওদলু কন্যাদের তিনি খুজে বেড়াতেন।
ওদলু কন্যাদের প্রতি স্বামীর অনুরাগ আমে'র মাও একদিন মেনে নিয়েছিলেন। সবধার বেশ ছেড়ে বিধবার পোশাকে পাচটি গর্ভ বছর*১ কাটিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। এর পর আরও বেশ কিছুদিন কেটে গেল। হটাৎ একদিন বিমর্ষ উম্বুসাকে অনেক হাসিখুশি দেখে গ্রামের সবাই অবাক হয়ে যায়। কিন্তু তার এই উৎফুল্লতার কারণ কি এ বিষয়ে তিনি কাউকেই কিছু বলেন না। সারাদিন সবার সাথে রঙ্গ তামাসায় কাটিয়ে মাঝরাত্রে উম্বুসা ভেলা নিয়ে উধাও হয়ে যান। আর কখনোই তিনি ফিরে আসে নি। এরপর থেকেই সমাজে ওদলু পূজার আরম্ভ হয়।
নতুন দেবতা ওদলুর পাশাপাশি ওদের পুরানো দেবতা কিনানের পূজোরও প্রচলন আছে। তবে কিনানের চেয়েও ওদলুর পূজা অনেক বৈচিত্র্যময়। ভক্তির সাথে এখানে মেশে রহস্য, নিবেদনের বদলে এখানে জেগে ওঠে অপূর্ণ কামনার চিত্র। ফলে কিনান বেচে থাকলেও ওদলু এখানে অনেক জনপ্রিয়, বিশেষত বাড়ন্ত্ম যুবাদের কাছে। তাদের সামনের বিস্ত্মীর্ণ জীবন অনেক অপূর্ণ কামনা আর বাসনার রসে সিক্ত। ২১ বছরের যুবক মঙলু গেলবার ওদলু পূজা থেকে এক নতুন রঙ যোগ করেছে।
ওদলুর উৎসবে বরাবরই মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সবাই। রঙীন ফুরফুরে যুবক যুবতীরা রঙে আর তামাসায় মশগুল হয়ে পড়ে। বিবাহিতরা এই পূজায় আসে ঠিকই, কিন্তু অংশগ্রহনটা অত থাকে না। মঙলু বিবাহিত নয়। তাই তার বেশামাল ভাবটা খুব স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু মধ্যরাত্রে তারমধ্যে অস্বাভাবিক কিছু একটা ভর করে। তার চিকন সরু গলার স্বর পাল্টে গম্ভীর গমগমে রূপ নেয়, কিন্তু তখনও কেউ কিছু মনে করেনি। এ কথাটা পরে তার অনুসঙ্গী কয়েকজন স্মরন করতে পারে। কিন্তু গরম সুরার বুদ নেশায় সবার মনে তখন কল্পনা আর ইচ্ছের ফোয়ারা সমুদ্রের ঢেউ এর সাথে পাল্লা দিয়ে অবিরাম ফুলঝুরি ছোটাচ্ছে। কার কথা কে মাথায় নেয়। কিন্তু সে হটাৎ এমন জোরে চিৎকার করে ওঠে, প্রথমে সবাই শব্দের প্রচন্ডতায় চমকে ওঠে নিরব হয়ে যায়। দুই এক মূহূর্ত সমুদ্রের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অবিরাম গর্জন ছাড়া আর কোন ধ্বনি শোনা যায় না। প্রত্যেকেরই দুই এক মূহূর্তকে অনন্ত্ম বলে মনে হয়। তারা খুব ভয় পেয়ে যায়। তারা ভেবে বসে দেবতার অভিশাপ লেগেছে এবং তার এই অভিশাপের কারণে এই নিরবতা আর কখনও ভাঙবে না। ঠিক তখনই একটি শিশু কেদে ওঠে। এই কান্না নিরবতা ভাঙার বদলে আরও গাঢ়ো করে তোলে। সবাই তখনও বুঝে উঠতে পারে নি কি হচ্ছে। এটা কি ওদলুর আশীর্বাদ নাকি কিনানের অভিসম্পাত। এসময় মঙলু আবার চিৎকার করে ওঠে। এত সুতীব্র চিৎকার তারা কখনও প্রত্যক্ষ করে নি। তারা আবার বিমূঢ় হয়ে ওঠে। মঙলু কেবল ফিস ফিস করে কি জানি বলে, এবার তার গলার আওয়াজ বাতাসে ফোটে না। বন্ধু যুবকরা কাছেই ছিল, দ্রুত কয়েকজন তার মুখের কাছে মাথাটা নিয়ে যায়। দুর থেকে মঙলুর ঠোটদুটো নড়ে উঠতে দেখা যায় মাত্র আর এরপর সে গভীর ঘুমের মধ্যে ঢলে পড়ে। বন্ধুরা নিরবে মাথা তোলে, তাদের চোখ দেখে বোঝা যায়, মঙলুর কোন কথা তারা উদ্ধার করতে পারে নি। বন্ধুদের মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় সহচর চন্দ মঙলুর দেহ জড়িয়ে থাকে, নিস্পন্দ মঙলু আর তার দেহকে মায়ের মমতায় জড়িয়ে থাকা চন্দকে এই মর্ত্যের মনে হয় না। অনেকে এই দৃশ্যের প্রতি আনত হয়ে ওঠার তাগিদ অনুভব করে ঠিক এই সময় চন্দ মঙলুকে আলতো করে মাটিতে শুইয়ে দেয়। ঘোর মাখা কণ্ঠে সে ঘোষণা করে - 'স্বয়ং ওদলু মঙলুকে নিয়ে গেছেন। তোমরা কেউ শোক করো না।'
চন্দ নিজের হাতে মঙলুকে সমুদ্রের কোলে দিয়ে আসে। ফেরার পথে সে তার অনুগামীদের কাছে আজব একটা কথা বলে। চন্দ নাকি মঙলুকে যখন সমুদ্রের নীল পানিতে শুইয়ে দেয়, তার দেহটা ঠিক এক মূহূর্ত বেশি ভেসে ছিল। একুশ বছরের মায়া। তারপর নীল জলের তলে ডুবে যেতে মঙলু চন্দকে ফিসফিস করে বলেছিল উম্বুসা যে কদিন ওদলুর আশ্রয়ে ছিলেন সেই একশত তেরোদিন ওদলুর একশত তের কন্যার সাথে প্রেম বিনিময় করে অমরত্ব লাভ করেছেন। সে এখন সেই রাজ্যে ফিরে যাচ্ছে। যেখানে প্রেম অমরত্বের জন্ম দেয়।
প্রেম। এটা কে নিশ্চয় প্রেম বলে। আমিতোর চোখ দুটো আবার মনে পড়ে। গতকাল ছিল ওদলু পূজার রাত। সমবেত প্রশস্তির ধ্বনি সাগরের শব্দের সঙ্গে মিলে চারিদিক এক স্বর্গীয় মহিমায় ঢেকে ফেলে। এরপরে আসে উদলুর কাছে সেই ব্যক্তিগত কামনা প্রকাশের ক্ষণ। ঠিক এই সময়ে তার দৃষ্টি কেন জানি আমিতো'র দিকে চলে যায়। ঠিক সেই মূহূর্তেও কেন জানি আমিতোও তার দিকে ফেরে। ও সে কি দৃষ্টি! এমন চোখ আর কখনও দেখেনি আগে আমে। সারা শরীরের গোপন আগুন যেন বিশাল গভীর চোখ জোড়ায় ভর করেছে। পাতাজোড়া কাপছে থরথর করে। যদিও সে জানে আমিতোকে পাওয়া সহজ নয়। তাদের গোত্রপ্রধানের ছেলে রোগেগোর বধূ আমিতো। তার উপর আমে'র অনুরাগের কথা জানতে পারলে তাকে নিশ্চিত হত্যা করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবে রোগেগো। তবুও যখন ওদলুর কাছে কামনা প্রকাশের ক্ষণ আসে সে নিরবে আমিতোকে পাবার প্রার্থনা করে। এরপরে সে আর উৎসবে থাকে নি। প্রার্থনা শেষ হলে সে সমুদ্র তীরে চলে আসে।
তীর ধরে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো। অনাদি অনন্তকাল ধরে শূয়ে আছে। তারই একটার উপরে বসে পড়ে। একটা একাকীত্ব তাকে শূন্য করে দেয়। ঢেউগুলো ভেঙে পড়ার শব্দ বেজেই চলে। একটানা। বাতাসের শো শো গর্জন। আমিতোর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়ে টেরও পায় না। সে যখন টের পেল, তার ঠোটের উপর কোমল এবং কামুক এক জোড়া ঠোটের স্পর্শ। ঘোরের মত। স্বপ্নের মত। খুব দ্রুতই কেটে যায়। সে যখন জেগে উঠলো - সে শুধু বালিয়ারী ধরে তাদের গ্রামের দিকে একটা অস্পষ্ট একটা নারী মূর্তিকে দৌড়ে যেতে দেখল। সে মূর্তির মত বসে থাকে অনেকক্ষন। সে বুঝতে পারে না এটা কি স্বপ্ন নাকি তার কল্পনা। এটা যে সত্যি সে ভাবতেই পারে না। কিন্তু একটু পরেই তার চোখে পড়ে গাছের ডালটা। কচি কচি পাতা বেরিয়েছে গাছটার ডাল থেকে। সে বুঝতে পারে ওদলু তার প্রার্থনা শূনেছেন। তাদের গোত্রে কেউ যদি কাউকে কামনা করে তবে তাকে গাছের একটা ডাল ভেঙে উপহার দেওয়ার নিয়ম। আমিতো তার জন্য সেই ভাঙা ডাল রেখে গেছে। কিন্তু কি করে সে আমিতোকে সে পাবে এটা সে বুঝতেই পারে না। একদৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকে সে। শেষ পর্যন্ত গাছের ডালটা নৈবেদ্য হিসেবে দেবতা ওদলুর সাহায্য প্রার্থনা করে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেয়। স্রোতের টানে ভাসতে ভাসতে ডালটা গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমে তাকিয়ে থাকে। আমে জানতেও পারে না তাদের প্রেমের এই নৈবেদ্য শুধু তাদের নয় গোটা পৃথিবীকে কেমন পাল্টে দিতে চলেছে।

সূর্যের আলোয় চারদিক ঝকমকে। সান্তা মারিয়ার নাবিকেরা ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি মনে মনে নিয়ে ফেলেছে। শুধু জাহাজের মুখটা ঘোরাতে হবে। কলম্বাসকে বেধে দেয়া সময়টার আর কয়েক ঘন্টা মাত্র বাকি। ঠিক সেই সময় চিৎকারটা উঠলো। একটা গাছের ডাল। সমুদ্রের নীল জলে ভেসে ভেসে চলেছে। মানে কাছেই ডাঙা। নাবিকেরা বাধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে। কিন্তু কলম্বাসের মধ্যে সেই উচ্ছ্বাসের ছিটেফোটা কোন চিহ্ন নেই। তাকে মনে হয় আরও শান্ত আরও স্থির। আমে'কে দেওয়া আমিতোর প্রেমের চিহ্ন সেই নিরীহ ডালটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন। ভাববেন - 'আমার স্বপ্ন পূরণ হলো।'
সেই ডালটার দিকে তিনি আরেকবার তাকাবেন। ঢেউ ভেঙে ডালটা লাফিয়ে লাফিয়ে দুরে চলে যাচ্ছে। তার কাছে মনে হবে - এই গাছের শাখাটার মধ্য দিয়ে একটা ইতিহাস ভেসে চলেছে। নিয়তি চিহ্নের মতন।
সেই চিহ্ন ধরে কলম্বাস পৌছে গেলেন অচিন দেশের উপকূলে। তার জাহাজ যখন তীরের দিকে এগুচ্ছিল তখন এই জাহাজকে প্রথম চোখে দেখেন এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধ এই আজব বস্তুকে দেখে ছুটে যায় গোত্রপ্রধান মিগোর কাছে। মিগো তার সন্তান রোগেগোসহ কয়েকজন সহচরকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে হাজির সমুদ্র পাড়ে চলে আসেন। কলম্বাসের জাহাজ ততক্ষনে তীরের আরও কাছে চলে এসেছে। উপস্থিত সবাইই বিষ্ময়ে নত হয়ে যায়। একটা বিশাল রাজহাস যেন ডানা উচিয়ে ভেসে আসছে। নিশ্চয় দেবতাদের বাহন। এতক্ষনে রাজহাসের পেটের মধ্যে তারা কয়েকজন মানুষকে দেখতে পারে। এমন মানুষও তারা আগে কখনও দেখে নি। আকাশের সাদা মেঘের মত তাদের গায়ের রঙ। নিশ্চয় দেবলোক থেকে নেমে এসেছে ওরা। দেবতাপুত্র। সবার কণ্ঠে বেজে ওঠে প্রার্থনা স্তব। দেবতারা আশীর্বাদ পাঠিয়েছেন।
কলম্বাস ডেকে দাড়িয়ে স্থানীয় মানুষের জটলা হওয়া দেখছিলেন। ওদেরকে পদানত করে এই ভূমিকে তার নিজের কওে নিতে হবে। তিনি ইশারা করা মাত্র জাহাজ থেকে আগুনে গোলা উড়ে যায়। প্রচন্ড শব্দে কানে তালা ধরানো ঐ আগুনে গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়ে উপস্থিত বেশিরভাগের শরীর। কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য করে আরেকটা আগুনে গোলা ছুটে যায়। পোড়া গন্ধে চারদিক ভরে ওঠে। নৌকায় চেপে অস্ত্র সজ্জিত নাবিকরা রওনা দিল তীরের দিকে। স্বপ্নের ভারতবর্ষে পা রেখে কলম্বাস অস্ফুট স্বরে নিজেকে নিজে বললেন - 'অবশেষে'। তিনি তখনও জানেন না, তিনি যে অচিনদেশের সন্ধানে বেরিয়েছেন এটা সেই ভূমি নয়। আরও অনেক পরে এই ভূমি পরিচিত হবে আমেরিকা নামে। ততক্ষনে তার সহচর নাবিকরা হিংস্র উল্লাসে ঝাপিয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষদের উপর। তলোয়ার, ছুরির আঘাতে মাটি লাল হয়ে উঠেছে।
উপকূল জুড়ে যখন হত্যাযজ্ঞ চলেছে আমে তখন দৌড়ে গ্রামে চলে আসে। বজ্রপাতের মত কানে তালা লাগানো ভয়ানক শব্দ গ্রাম পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছে। এরকম শব্দ তারা আগে শোনে নি। বেশিরভাগই প্রথমে হতভম্ব হয়ে বসে এর ওর দিকে তাকায়। এরপর যখন পরপর কয়েকবার এই ভয়ংকর শব্দ হয় তখন তাদের মধ্যে কেউ একজন চিৎকার করে ওঠে - 'দেবতার রোষ নেমে এসেছে।' গ্রামে থেকে যাওয়া বুড়োদের বেশিরভাগই কাঁপতে কাঁপতে ভূমিতে শুয়ে পড়ে মন্ত্র উচ্চারণ করতে শুরু করে। সমবেত মন্ত্রধ্বনি, শিশু এবং ভীত নারীদের কান্নার শব্দের মধ্যে 'দেবতা পুত্ররা আমাদের হত্যা করছে, তোমরা পালাও...' চিৎকার করতে করতে সোজা হাজির হয় রোগেগোর বাড়িতে।
আমিতো ঘরের দাওয়ায় বসে। চুপচাপ। ভীত হরিণীর মত নির্বাক বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। আমে দৌড়ে সোজা আমিতোর কাছে এসে ওর কাধে হাত রাখে। ভাবার কোন সময় নেই। ওর চোখে চোখ রাখে সে। সেদিনের কামুকতার চিহ্নমাত্র নেই। ভয়বিহ্বল বাঁচার আকুতি সেখানে দাউদাউ করে জ্বলছে। আমে আমিতোর হাত ধরে উঠিয়ে বলে- চলো।
সবাই তখন যেদিকে পারে ছুটছে। আমে জঙ্গলের পথ ধরে। এই দ্বীপে থাকলে যে তারা বাচতে পারবে না - এটা সে জানতো। দ্বীপের অন্য দিকটায় হয়তো দেবতাপুত্ররা নেই। সেখানে পৌছাতে পারলে একটা আশা আছে। ওখানে বিভিন্ন কাজে সমুদ্রে চলাচলের জন্য কয়েকটটা ভেলা পড়ে থাকে। কোনভাবে তার একটাতে চড়ে এই দ্বীপটা ত্যাগ করতে পারলেই বেঁচে যাওয়া যাবে। শেষ পর্যন্ত জঙ্গলের চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে তারা উপকূলে পৌছায় আমে আর আমিতো। একটাই ভেলা। শুকনো বালিতে পড়ে আছে। দুজনে ধরাধরি করে ভেলাটাকে সমুদ্রে ভাসিয়ে তারা এতে চড়ে বসলো। গাছের একটা ডাল ভেঙে সেটাকে দাড় বানিয়েছিল আমে। প্রাণপন শক্তিতে ভেলাটাকে চালিয়ে দ্বীপ ছেড়ে চলে আসে ওরা।
যতদুর চোখ যায় সমুদ্র। ওখানে কোথাও ওদলুর প্রাসাদ লুকিয়ে আছে। আমে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবে। এত ভয়ের মধ্যেও গত রাতের কথা মনে পড়ে। উৎসবে আনন্দরাঙা মুখগুলোর বেশিরভাগই আজ মৃত। আমিতো এখন তার সাথে। আমে আমিতোর দিকে চেয়ে দেখে। কাঁদছে সে। আমে চোখ সরিয়ে নেয়। এভাবে প্রার্থনা পূরণ হবে তা সে ভাবে নি। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। মনে হয় সবকিছুর জন্য সে দায়ী। এই সময় তার চোখে ধরা পড়ে দৃশ্যটা।
দেবতাপুত্রদের জলযান। আকাশে নিশান উড়িয়ে ছুটে আসছে। আড়চোখে তাকিয়ে বোঝে আমিতো এখনও জলযানটা দেখে নি। তার চোখে আশা জমতে শুরু করেছে। দ্রুত হাত চালাতে থাকে সে। কিন্তু জলযানটার আকার ক্রমেই বড় হতে থাকে। কিছুক্ষন তাও চেষ্টা করে আমে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বুঝে ফেলে - সম্ভব না। নিজেকে ছেড়ে দেয় সে। আমের হটাৎ নিজেকে ছেড়ে দেয়ার অন্য মানে বোঝে আমিতো। সে মনে করে - বিপদ কেটে গেছে। তার মুখে একটু রঙ ফিরে আসে। আমে কখনও কেদেছে বলে মনে পড়ে না, কিন্তু এই মূহূর্তে আমিতোর মুখে স্বস্তির চিহ্ন দেখে কান্না পায়। ঠিক তখনই সে আবিষ্কার করে জলের রঙটা এখানে একটু অন্যরকম। আমে বুঝতে পারে, ওদলুর সীমানায় পৌছে গেছে ওরা। দেবতাদের জলযানটা তখন দৈত্যের মত বিশাল। তরতরিয়ে ছুটে আসছে। আমের নির্ভার লাগে, তার কাছে মনে হয় এটাই দেবতার ইচ্ছে।
সে হাতের গাছের ডালটাকে রেখে আমিতোর কাছে উঠে যায়। ভিজে ওঠা চোখের পাতায় আলতো করে ঠোট রাখে। গভীর আবেশে ঠোটে ঠোট চেপে ধরে। আমিতো দেখে না, চুম্বনরত অবস্থাতেই আমে'র মুখে একটা রহস্যময় হাসি খেলা করে যায়। সে আমিতোকে আলিঙ্গনে পিষে ফেলে শুয়ে পড়ে। এটা যে ছোট্ট একটা ভেলা, খেয়াল থাকে কি থাকে না - গড়িয়ে ওরা দুজনে নীল জলের অতলে ডুবে যায়। আমে আর আমিতো এবং তাদের স্বজাতি যাদের আগামী পৃথিবী রেড ইন্ডিয়ান নামে চিনবে - তাদের রক্তের উপর দাড়িয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হলো।
লুণ্ঠন, হত্যা আর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের কাজ চলতে থাকবে জোরেসোরে। এই উপনিবেশ তৈরীর ইতিহাস ছড়িয়ে যাবে আফ্রিকায়। সাদা মানুষদের সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য সেখান থেকে কালো কালো মানুষেরা ক্রীতদাস হয়ে আসবে জাহাজ বোঝাই হয়ে। তারও অনেকদিন পরে এই শ্বেতাঙ্গ মানুষের বংশধরেরা দুটো অংশে ভাগ হয়ে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করবে। এক পক্ষ বলবে - এটা ইউরোপের কোন অংশ নয়। এটাই আমাদের দেশ। আকাশে মশাল জ্বেলে আগামী পৃথিবীর সবাইকে স্বাধীনতার গল্প শোনাবে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে দেশটা এগিয়ে যাবে নতুন পথে। ব্যক্তিগত মানুষের স্বাধীনতার গল্প সেই দেশটায় জঁমাট বাধবে। অর্থনৈতিক শক্তি, জ্ঞানময় বিজ্ঞান আর সামরিক শৌর্য্যে তারা আবির্ভূত হবে বিশ্বের পরাক্রমশালী এক জাতি হিসেবে। তাদের ঔজ্জ্বল্যে হিরোশিমা আর নাগাসাকি ঝলসে উঠবে পোড়া মানুষের গন্ধে। আকাশের মায়াবী চাঁদে মানুষ পা দেবে। ভিয়েতনামে আগুন জ্বলবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে নিগৃহীত একক মানুষের চিন্তার মুক্তির স্বপ্ন হয়ে উঠবে। সুদূর মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন জনপদে বোমা পড়বে বৃষ্টির মত। আফগানিস্তানের পাথুরে উপত্যকা মানুষ বিহীন বোমারু বিমান থেকে ছোড়া মারণাস্ত্রের আঘাতে পোড়া বারুদের গন্ধে ভরে উঠবে। আর চারিদিকে নেচে উঠবে মৃত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যু।
সৃষ্টির অভিযান মানুষের বিশ্বাসকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়। কিন্তু সেই সৃষ্টির হাত ধরেই যখন মানুষের মৃত্যু, ধ্বংশ আর বিনাশ আসে - তখন কোন বিশ্বাসকে, কি করে ধরে রাখবে সে?


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

অসাধারন! এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। কী অসাধারন বর্ণনা। কী অসাধারন! আমার নিজেকে মনে হচ্ছিল, আমিও সেখানে একজন দর্শক। আগুনের হলকা লাগল আমার গায়ে। আমিও ছুটছি বাঁচার জন্য। আর শেষের দুই অনুচ্ছেদ এর রেশ মাথা থেকে সহজে যাবেনা।

"সৃষ্টির অভিযান মানুষের বিশ্বাসকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়। কিন্তু সেই সৃষ্টির হাত ধরেই এক্যখন মানুষের মৃত্যু, ধবংস আর বিনাশ আসে-তখন কোন বিশ্বাসকে, কী করে ধরে রাখবে সে?"
শেষের প্রশ্নটা একেবারে ভেতরে যেয়ে নাড়া দেয়।

(কোন ইমো দিলামনা ইচ্ছা করেই। কেন জানি, ইমো দিতে মন চাইছে না)

তারেক অণু এর ছবি

দুর্দান্ত!

যেমন ভেবেছিলাম কলম্বাসের কাহিনী ঠিক তেমনটাই লিখেছেন , আরো ছোট গল্প পাব আশা করি !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইয়াসির এর ছবি

সাধু সাধু! হাততালি

সত্যপীর এর ছবি

কি অসাধারন একটা লিখা হাততালি

..................................................................
#Banshibir.

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

খুব ভাল লিখেছেন । চলুক

কর্ণজয় এর ছবি

কৃতজ্ঞতা ...

আসমা খান, অটোয়া এর ছবি

বার বার পড়ার মত অসাধারন একটি লেখা। খুব ভালো লেগেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।