এ ও সে ও: ০৩ - একটি অর্কেস্ট্রা মিউজিক ও বৃষ্টির লাল ফোঁটা 'র সংযোজিত অংশ

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: শনি, ০৭/০৪/২০১২ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কি বলিষ্ঠ আর আশ্চর্য টান টান ভঙ্গিমা। ঠিক যেন অর্কেস্ট্র্রার কোন জাদুকর বাজিয়ে। চঞ্চল হাতের তর্জনীর ইশারায় যে সঙ্গীত বেজে উঠেছে, সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর হৃদয় তাতে নাচতে থাকে। গুনগুন রিনিঝিনি তাক ধিনাধিন ঝনক ঝনক ধুন ওঠে - ছয় দফা, এগারো দফা, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম .. ...। প্রতিটি শব্দে যেন আগুনের পালক বসানো। শব্দগুলো শেষ পর্যন্ত আর শব্দ থাকে না, একটা ধ্বনি হয়ে বাজতে থাকে - আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি .. .। হাওয়ারা চমকে ওঠে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো সেই হুকুম নিয়ে তারা ছুট তো দে ছুট । কোথা থেকে উড়ে আসে একটা দোয়েল পাখি। মিষ্টি সুরে গান জুড়েছে
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি
লেজ দুলিয়ে আসে বাঘ। মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ওরাও গাইতে শুরু করেছে। নাচ আর গানের তালে তালে কুয়াশা কেটে যায়। দিগন্তে স্বাধীনতা উঁকি দেয়, টকটকে লাল একটা সূর্যের মত। লাল সূর্যের নিচে ঝক্মক্ করছে একটা সবুজ ক্ষেত। পাশেই পুকুরের টলটলে জলে গানের সুরে নাচ ধরেছে এক দল শাপলা ফুল।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। হটাৎ টের পাই আমি একা নই। এই অলৌকিক দৃশ্যে সামিল হতে একে একে আরও অনেকে জড়ো হচ্ছেন । আমার ঠিক পাশে একজন ভদ্রলোক দাড়িয়ে আছেন। দেখে মনে হয় শিক্ষক। আসলেই তাই। তার হাতে বাধাই করা একটা খাতা। উপরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ছাপানো। তার নিচে প্যাচানো অক্ষরে লেখা - 'ডঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ... ইতিহাস বিভাগ।' একমনে দোয়েল পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছেন। 'চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস - আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ...' দোয়েল পাখিটা তখন গাইছে। তার চোখ দেখে মনে হয়, তিনি এখানে নেই। দোয়েল পাখিটার গান শুনতে শুনতে মনে মনে কোথায় জানি হারিয়ে গেছেন।
মন! একটা দীঘির মত। সেখানে শ্যাওলা-সবুজ জলের তলায় লাল নীল সবুজ রঙের স্মৃতি, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মাছগুলো অনাদি অনন্ত কাল ধরে খেলা করতে করতে হটাৎ ঘাই দিয়ে শূন্যে লাফিয়ে ওঠে। বিকালের নরম সোনালী আলোয় ১৯৪১ সাল চিকচিক করে।
তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। এর ঠিক এক বছর আগে পাকিস্তান তৈরীর বীজ মাটিতে পড়েছে। লাহোর প্রস্তাব মুসলমানদের ভেতরে ভেতরে শেকড় ছড়াতে শুরু করেছে।
কলকাতার রাস্তায় এক বিকেল। দিনের আলো সবে নিভতে শুরু করেছে। ষ্ট্রীট ল্যাম্পগুলো জ্বলার সময় হয়ে গেছে. এখনও জ্বলে ওঠে নি বলে এলাকাটা একটু ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগে। টুং টাং টুং টুং ঘন্টার শব্দ বাজিয়ে একটা টাঙ্গা দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। বিকেল বেলা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। রাস্তার এখানে ওখানে এবড়ো থেবেড়ো গর্ত - তাতে জল জমে আছে। টাঙ্গাটার একটা চাকা হুমড়ি খেয়ে পড়ে গর্তের উপর, জমে থাকা জলকাদা ছিটকে পড়ে।
এই এই টাঙ্গা - টাঙ্গা
কে শোনে। টাঙ্গাটা রাস্তা ফাকা পেয়ে ততক্ষনে বেশখানিকটা চলে গেছে। শূন্যের ভেতর দিয়ে পাক খেয়ে নিজের ডাকটা নিজের কানেই ফেরত আসলে মেজাজটাই খাট্টা হয়ে ওঠে। গজগজ করা ছাড়া কিছু করার থাকে না। নতুন সাদা পাজামা আর সার্টে কাদার কালো কালো ছিট লেগে গেছে। রাগে সালাহউদ্দিনের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে। তার অবস্থা দেখে জহুর হাসি চাপতে পারে না। যদিও এই মূহূর্তে ব্যাপারটা আসলেই বাজে হয়ে গেছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ আর জহুর হোসেন চৌধুরী দুই বন্ধু মিলে যাচ্ছিলো বিনোদদের বাসায়। বিনোদ তাদের সাথে একই কলেজে পড়ে। সন্ধ্যার পর আজকে বিনোদদের বাসায় একটা ফাংশন আছে। সেখানে সুচিত্রা মিত্র গান গাইবেন। বিনোদের কেমন এক আত্মীয় হন, মাঝে মধ্যেই ওদের বাসায় এসে গান করেন। বিনোদ আজকে ওদের নেমতন্ন করেছে। দুই বন্ধু মিলে তাই পরিপাটি বেশে রওনা দিয়েছে, পথিমধ্যে এই বিপত্তি। সবাই সেখানে সূচি শুভ্র সুন্দর হয়ে আসবেন, এই কাদা মাখা দেহে সেখানে যাওয়া চলে না। কি করা যায় এখন? বাড়ি গিয়ে আর ফেরার সময় নেই।
হাসি থামিয়ে জহুর গজগজানির তুবড়ি ওঠায়। তোর সাথে বের হওয়াই উচিৎ হয় নি। বামুনের সাথে কেউ চাঁদ ধরতে বের হয়....এমনিতে ওর ভাষা সরেস। ইদানিং আবার পত্রিকায় লেখালেখি করে ভাষার ধারও বেড়েছে - কারো পেছনে যদি লাগে তখন ওর এই ভাষাই গায়ে বিছুটি লাগায়। কিন্তু এখন আর এসবের সময় নেই। অনুষ্ঠান অনেক রাত পর্যন্ত চলবে ঠিক, কিন্তু সেই বাড়ি গিয়ে পোশাক পাল্টে আর আসা যাবে না। কি করা যায় তাহলে? সত্যর কথা মনে হয়।
সত্যর বাড়ি কালিঘাটে, জায়গাটা দুরে নয় - ওর ওখানে গিয়ে ধুতি কি পাজামা যা হয় একটা কিছু ধার করে পড়া যেতে পারে। কালিঘাট থেকে বিনোদের বাড়ি যেতেও তেমন বেশি সময় লাগবে না। তাড়াতাড়ি সারলে খুব বেশি দেরী হবে না। সালাহউদ্দিন মনস্থির করে, সত্যের বাড়িতেই যাবে। - 'তোর যে ঢ্যাঙা লোকটা কাদার মধ্যে পয়সা উঠানোর জন্য ঝুকে পড়ছে সে কিন্তু উচ্চতায় এই বামুনের চেয়ে অনেক নীচু' - জহুরের এলেবেলে গজগজানি বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে সালাহউদ্দিন কালিঘাটের দিকে এগোয়। জহুর কোথায় যাচ্ছিস কোথায় যাচ্ছিস বলে ঠিকই- কিন্তু উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করেই সালাহউদ্দিনের সাথে পা মেলায়।
সত্যর বাড়ি গিয়ে তারা দেখে হাকিমভাই এসেছেন। হাকিমভাই ফরিদপুরের অধিবাসী, নানা কাজে কিংবা বেড়াতে কলকাতায় আসলে বরাবরই সত্যর বাড়িতে ওঠেন। কলকাতায় আসলে হাকিমভাইয়ের সব ভার, তার ন্যাওটা সত্যর।
৪৬ রায়টের আগে মুসলমান হিন্দু পোষাকে তেমন পার্থক্য ছিল না। মুসলমানরা ধুতি পড়তো, হিন্দুরাও লুঙ্গি পায়জামা পরতো। কিন্তু হাকিমভাই যে ধর্মপ্রান মুসলমান সেটা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। মাথার উপরে একটা টুপি সবসময় শোভা পায়। থুতনিতে দাড়ির গোছাটা তার মুখে একটা পরহেজগার আভা যোগ করেছে। তার মধ্যে ধর্ম বাস করে কিন্তু মানুষে মানুষে পার্থক্য করেন না। তিনি বলতেন আমার আল্লাহ সুন্দর - তিনি ভেদ শেখান নাই। তিনি আমাকে সর্বাঙ্গে সুন্দর হতে শিখিয়েছেন।
'এই সালাউদ্দিন হাকিম ভাই বিয়ে করেছেন - এই উপলক্ষ্যে তোমাদের দ্বারিকের চা সিঙ্গাড়া খাওয়াবো' - সালাহউদ্দিন আর জহুরকে দেখেই সত্য হৈ হৈ করে ওঠে। কিন্তু তাদের মোটেই এখন অন্য কোথাও নষ্ট করার মত সময় হাতে নেই। হোক না যতই ভূবন বিখ্যাত দ্বারিকের সিঙ্গাড়া। সুচিত্রা মিত্র ওদিকে হয়ত এখনই গান শুরু করে দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন সত্যকে ডেকে আড়ালে ডেকে নিয়ে তার সমস্যার কথা বলে। কিন্তু সত্য নাছোড়বান্দা। এখন যদি তারা তার আমন্ত্রন না গ্রহণ করে তাহলে হাকিমভাইয়ের সন্মান আর থাকে না। বাধ্য হয়ে সালাহউদ্দিনকে সত্যর কথা মেনে নিতে হয়। কোনমতে সত্যর সাদা শার্ট আর পাজামা গায়ে গলিয়ে নিয়েই হনহনিয়ে বের হয়ে পড়ে। চা সিঙ্গাড়া সাবড়ে দ্রুত তাদের ছুটতে হবে। কলেজ ষ্ট্রীটের মোড়ে দ্বারিকের দোকান। হিন্দু পাড়া উজিয়ে দ্বারিকের দোকানে ঢুকেই একটা টেবিল দখল করে নিয়ে চারজনে বসে পড়ে।
'এই চা সিঙ্গাড়া দাও'- সত্য অর্ডারটা বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে হাকিম ভাইয়ের বিয়ের আদ্যপান্ত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হাকিমভাই একটু লজ্জ্বা পান। সালাহউদ্দিন আর জহুরের ভেতরটা সুচিত্রা মিত্রের জন্য খচ খচ করে। বারবার মনে হচ্ছে সুচিত্রা মিত্রের গান বুঝি আর আজ শোনা গেল না।
: কিরে সত্য চা দেরী হচ্ছে তো
সত্য চিৎকার করে উঠল।
: কিরে - দিচ্ছিস না কেন - কখন কয়েচি। অ্যা - কতক্ষন লাগে -
বেয়ারা ছেলেটা সে এসে কানে কানে বললো - 'বাবু আপনাদের দিতে তো সমস্যা নেই কিন্তু ...' থমকে গিয়ে হাকিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বলে, 'ইনাকে দিতে তো অসুবিধা আচে।'
: কি অসুবিধা, সত্যর চোখ কুড়মুড় করে।
ছেলেটা একটা ম্যানেজারের মাথার উপরে একটা দেয়ালে ইঙ্গিত করে।
প্রথমে কিছুই চোখে পড়ে না। নোংরা একটা দেয়াল। ঝুল - ময়লা আর ধোঁয়া- কালিতে দেয়ালটা ঢেকে আছে। ছেলেটা এবার আঙ্গুল দিয়ে দেখালে তবেই নজরে আসে। কিছু একটা ছোট্ট করে কিছু একটা লেখা ছিল এখন ঠিকঠাক পড়া যায় না। সময়ের তোড়ে রঙ ধুয়ে অক্ষরগুলো পর্যন্ত অস্পষ্ট হয়ে গেছে। একটু ভাল করে চেষ্টা চরিত্র লেখাটা কোনমতে পড়া যায়। 'কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য।'
১০০ বছরের দ্বারিকের পুরনো দোকান। সেই তখন থেকে লেখাটা আছে। 'কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য' - তারমানে মুসলমানদের জন্য নয়। সংস্কৃতির স্বাভাবিক বিভাজনটা দীর্ঘ সময় সবাই মেনে নিয়েছে। কেউ কোন প্রশ্ন করে নি। কিন্তু এখন সময়টা যেন অন্যরকম।
সত্য ব্যানার্জি এমনিতেই খুব রগচটা- সূর্যসেনের ভক্ত। সবাই তাকে রেবেল লিডার বলে ডাকে। সাদা শার্ট, সবসময় হাতার আস্তিন গুটানো। টেবিলে সজোরে একটা ঘুষি মেরে শুরু করে সে। কথাতো নয় রীতিমত বক্তৃতা -
: আমি এতদিন বুঝতে পারিনি মুসলমানরা কেন পাকিস্তান চায়। এইজন্য তারা পাকিস্তান চায়। আমিও এই মূহূর্তে পাকিস্তান চাই।
এই বলেই টেবিলে আর একটা ঘুষি মারলে আর একটা গ্লাস ঝনঝন করে ভেঙ্গে পড়ে। রেগে চুর হয়ে দ্বারিকের দোকান থেকে বের হয়ে গেলে - দুর থেকে ম্যানেজারের গলা ভেসে আসে,
: বাবু , আজকেই লেখা উঠিয়ে দেবো। কাল এসে দেখবেন ...
রাস্তায় তখন অন্ধকার নেমেছে। ওরা চারজন হাটছে। কেউ কোন কথা বলছে না। 'পাকিস্তান' - মাথার মধ্যে কেমন একটা হিম হিম ভাব গোটা শরীরে বইয়ে দেয়। পাকিস্তান ভাবনাটা অনেকগুলো ব্যাপার সামনে নিয়ে এসেছে। সবাই সবার মিত্র এমন একটা ভাব বজায় রাখলেও - ভেতরে ভেতরে সেখানেও আসলে দুটো পক্ষ তৈরী হয়ে গিয়েছে। এই বাঙলার কথাই ধরা যাক না, হিন্দুরাই বেশিরভাগ ধন সম্পদের মালিক। জমিদার। মুসলমানরা শিক্ষায় অশিক্ষিত, ধনে সম্পদে গরীব, চিন্তায় পশ্চাৎপদ, সংস্কৃতিতে অশালীন। এই হিন্দু আর মুসলমান সমান হয় কি করে? অনেক হিন্দুতো মুসলমানদের বাঙ্গালী ভাবতেই কুণ্ঠা বোধ করেন।
এসব ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত বিনোদদের বাড়ি যখন ওরা পৌছুতে পারে তখন রীতিমত অনেক রাত।
বিশাল বাড়ির সামনে একটুকরো বাগানে গানের ব্যবস্থা হয়েছে। একটা উচু বেদীতে সুচিত্রা মিত্র বসে আছেন। মনে হয় মাত্র কোন গান শেষ হলো, এখনই পরেরটা ধরবেন। কিন্তু পরের গানটা ধরতে এতক্ষন লাগার কথা না। বিনোদ ওদের দুর থেকে দেখে ছুটে আসে - 'এত দেরী হলো। গানতো শেষ' ।
টাঙ্গাওয়ালা, দ্বারিকের দোকান সালাউদ্দিনের মাথার মধ্যে জ্বলে ওঠে। গান শেষ? ঈশ!! বিনোদ বলে, 'ভাগ্য ভাল থাকলে আর একটা গান গাইতে পারে। এমনিতে আর গাওয়ার কথা না।'
বলতে বলতেই সুচিত্রা মিত্র মাইক্রোফোনে মুখ রাখেন।
: গানের পালা আসলে সাঙ্গ হয়েছে। কিন্তু শেষ হইয়াও হইল না শেষ - এরকম একটা ব্যাপার ঘটে গেল। বিশেষ একটি গানের অনুরোধ এসেছে। এই গানটি আমি এখন আপনাদের সামনে পরিবেশন করছি। কিন্তু তার আগে গানটি সম্পর্কে দুটো কথা । গুরুদেবের অনেক গানের মতই - এই গানটিও শুরুতে গান ছিল না, ছিল কবিতা। গুরুদেব যখন এই কবিতাটি লিখেছিলেন, তখন দেশে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের কমর্ীরা এই কবিতাটির মধ্যে বাংলার প্রতি তাদের ভালবাসা, প্রেরণা এবং শক্তিকে খুজে পেয়েছিলেন। এই স্বদেশপ্রেমী যোদ্ধারা এই কবিতাটিকে এতই আপন করে নিয়েছিলেন যে - তারা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন মিছিল করার সময় কবিতাটিকে গানের মত করে নানাভাবে গাইতেন। এইভাবে তারা এই গানটির মধ্য দিয়ে সাবাইকে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কবিগুরু - তিনি নিজেও পরে এই গানে সুর দিয়েছেন। কিন্তু এই একটি গানের ক্ষেত্রে কবিগুরু ছাড়া অন্যসৃষ্ঠ সুরগুলিও কিন্তু মানুষের বাংলার প্রতি সম্মিলিত ভালবাসার শক্তির প্রেরণা হয়ে থেকেছে। আমি যেই সুরে এখন গানটি গাইছি সেটা ঠাকুর বাড়ীর ইন্দিরা দেবীর কাছ থেকে তুলেছি ...
সুচিত্রা মিত্র গান গাইতে শুরু করলেন।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ...
ঐ রাতে গানটি কিন্তু সবার মধ্যে সমান রেখাপাত করে নি। ভেতরে ভাঙন ছিল। বাংলা'র চেয়ে ভারত আর পাকিস্তান বড় হয়ে উঠেছিল। সে দিনের কথার রেশ ধরে সালাহউদ্দিনের আহমদ এর কাছে মনে হয় ৬০ বছর পর বাংলার এক নতুন অস্তিত্ব ঘোষনা করতে এই গানটি আবার পুরো বাঙ্গালীর হয়ে জেগে উঠেছে। এই গান শুধু রবীন্দ্রনাথের নয়, তা আর শুধূ একটি আন্দোলনের প্রেরণা নয় - তা একটি জাতির পরিচয় হতে চলেছে। একটি দেশ। একটি জাতি। বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খৃষ্টান, বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান - আমরা সবাই বাঙ্গালী। বাঙ্গালী। বাংলাদেশ। আমার সোনার বাংলা। কোত্থেকে ঝিরঝিরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। দ্বারিকের দোকানে সাইনবোর্ডে ঝুলে থাকা হিন্দু মুসলমান মানস এবং আচারের পার্থক্যের যে বাতাবরন শত শত বছর ধরে মনের কোনায় শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যেন - তার একটা উত্তর। হাজার হাজার মানুষের রক্ত, লক্ষ লক্ষ মানুষের দেশত্যাগের উপর দাড়িয়ে ১৯৪৭ যে সীমানা হারিয়ে ফেলেছিল ১৯৭১ সেই সীমানায় এসে দাড়িয়েছে।
এই একই সীমানায় অনেকের সাথে পা মিলিয়ে হাজির হয়েছে বছর বিশ বাইশের এক তরতাজা তরুণ। দোয়েল পাখির সাথে কণ্ঠ মেলায় সে।
গান গাইতে গাইতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের পানিটা সামলানোর জন্যই বোধহয়, সে আকাশের দিকে তাকায়। এই দিনের বেলায়ও সেই আকাশে অনেক তারা ফুটেছে। একসাথে গিজগিজ করছে টলটলে বিন্দুগুলো। তারাগুলোর দিকে চেয়ে এক সময় একটা ঘোর লাগে। ঘোরের মধ্যে তার কাছে আকাশটাকে একটা boxing রিং এর মত মত মনে হয়। সেই রিং - এ দুটো মানুষ লড়াই করছে। মানুষ দুটোও তারার তৈরী। অন্য তারাগুলো ভিড় করে ওদের লড়াই দেখছে। কি ভয়ানক সেই লড়াই। আকাশ জুড়ে দাপিয়ে দাপিয়ে ওরা লড়াই করে যায়।
ওর কান্না পায়।
মাথা নিচু করে ফুপিয়ে ওঠে ও।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। এই আনন্দের দিনে কান্না! ওর দিকে এগিয়ে যাই।
রাজু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মফস্বল শহর থেকে এেেসছে। দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। পড়াশোনাটা করে কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে ওর ভাল লাগে boxing। স্বপ্ন বলতে যদি কিছু থাকে - সেটাও boxing নিয়ে। সময়টা এরকমই- চারদিকে সবাই রাজনীতি নিয়ে গরম হয়ে আছে। কিন্তু ওকে এর উত্তাপ কিছুইতেই ছোয় না। ও দেখে রিং এর ভেতরে প্রজাপতির নাচ। বন্ধুরা এই নিয়ে ওকে মৃদুমন্দ গালমন্দও করে - কিন্তু জবাবে ও খালি হাসে। আর একটা স্বপ্ন আছে অবশ্য রাজুর। খুব গোপন একটা স্বপ্ন। যখন খুব একলা থাকে, স্বপ্নটা ওকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
নীরা।
মেয়েটাকে ভীষণ ভাল লাগে ওর। কিন্তু মেয়েটার সাথে যেন ওর যোজন যোজন দূরত্ব।
শানবাধানো ঝকঝকে বাড়ির মেয়ে ও। কোন একটা প্রোগ্রামে একদিন সে নীরাকে সেতার বাজাতে দেখেছিল রাজু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীতে পড়ে। খুব ফুরফুরে। ছবির মত। ওর সামনে নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগে রাজুর। প্রেম করার কথা ভাবাই যায় না।
ও আবার boxing এর কথা ভাবে।
ও স্বপ্ন দেখে- প্রজাপতির মত নাচতে নাচতে দেশ বিদেশের সব নামকরা হারিয়ে দিচ্ছে। সবাইকে সে কুপোকাৎ করে ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। নীরা অবাক চোখে ওকে দেখছে। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না- রাজু এত ভাল বঙ্ার।
এই বয়সটার মতই কল্পনাটা ওর প্রায় সময়ের সঙ্গী। এর পুরোটাই যে আকাশকুসুম একটা কল্পনা - এটা বলা যাবে না। তার কল্পনাকে চাঁদের সমান দুরের মনে হয় তবে সে ঐ পথে এক পা হলেও ফেলতে পেরেছিল সে।
অল পাকিস্তান ব টুনার্মেন্টে ওর পারফরমেন্স দেখে সবাইই মনে করছিল ওই চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে। যদিও এ ব্যাপারটাযে সহজ হবে না, এ ব্যাপারটা নিয়ে কোচ আগেই সতর্ক করেছিলেন। টুর্ণামেন্টের শুরু হওয়ার আগে কোচ ওকে ডেকে বলেছিলেন- 'পশ্চিম পাকিস্তানী বঙ্ারদের নক আউট করেই হারাতে হবে। পয়েন্টে ওদের সাথে জেতার আশা করা কঠিন।'
টুর্ণামেন্টের ফেভারেট বঙ্ার যে দুইজন - তাদের একজন সিন্ধী আর একজন বেলুচ। ওদেরই কেউ একজন টুর্ণামেন্টটা জিতবে- এটাই সবার ধারণা ছিল। সেই ওদেরকে কি সহজেই না নকআউট করে টুনার্মেন্ট থেকে বিদায় করে দিল রাজুু। একজনতো তিন রাউন্ডই টিকতে পারলো না। কোচ এবং রাজু দুজনেই ভাবতে শুরু করেছিল - ওই এবার চ্যাম্পিয়নটা হতে যাচ্ছে।
অন্য যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আর যে বঙ্ারগুলো ছিল তারা তেমন জাকালো না। সেমিফাইনালে পাঞ্জাবের বঙ্ারটার সামনে যখন ও নামলো, প্রথম পাঁচ মিনিটেই রাজু টের পেয়ে গিয়েছিল - শক্তি কিংবা টেকনিক, কোনদিক থেকেই ও যুৎসই না। ওকে সহজেই হারিয়ে দেয়া যাবে- ভাবছিল ও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন লড়াইই হলো না। পুরো লড়াইটা জুড়ে রিং এর মধ্যে পাঞ্জাবের লোকটা পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালো। আর ও একটু চড়াও হলেই রেফারী এসে খেলাটা থামিয়ে দিচ্ছিল। সে নাকি নিয়ম ভঙ্গ করছে। শেষপর্যন্ত পালিয়ে পালিয়েই পাঞ্জাবীটা লড়াইয়ের সময়টা পার করে দিয়েছিল। নক আউট করতে না পারলেও - এবার পয়েন্টেও এই পাঞ্জাবীকে জেতানো সম্ভব না। সবাই নিশ্চিত ছিল রাজুই জিতছে। কিন্তু অবাক করে দিয়ে রেফারী পাঞ্জাবী বঙ্ারটিকেই জয়ী ঘোষণা করলো।
রাজুর কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। রিং এর মধ্যে খেলা শেষ হওয়ার পরও অনেকক্ষন পর্যন্ত সে বোকার মত দাড়িয়ে ছিল। কোচ এসে তার কাধে হাত রেখে যা বলেছিলেন সেই কথাটা এখনও সে বারবার শুনতে পায় -'এই দেশটা থাকলে তোমার আর বঙ্ার হওয়া হবে না।'
সে জলভরা চোখে কোচের দিকে তাকিয়েছিল।
জলের ভেতর দিয়ে সবকিছ্থ কেমন ছায়াছায়া- কোচের অবয়বটা শুধূ দেখা যাচ্ছিল।
'বাঙ্গালীদের ওরা জিততে দেবে না।' কোচের কণ্ঠে স্পষ্ট ক্ষোভ।
এরপর অনেক রাত সে দুঃস্বপ্ন দেখে কাটিয়েছে।
সেই পাঞ্জাবী বঙ্ার। হাত উচিয়ে তার দিকে তেড়ে আসছে। গ্লাভসের ভেতরে কাটার মত অনেকগুলো ছুরি বসানো। ফলাগুলো ঝিকমিক করছে। সে হাত উঠিয়ে ওকে ঠেকাতে যায়, ছুরির ফলাগুলো তার শরীর কেটে ভিতরে বসে যায়। এরপর সে দেখে সে একটা গলি ধরে দৌড়াচ্ছে। হটাৎ গলিটা বাঁক নিলে দেখা যায় বাঁকের মুখে সেই পাঞ্জাবী boxer। পাঁচজন। একই চেহারা। নিষ্ঠুর। চাঁদের আলো পড়ে তাদের হাতে চকমকিয়ে উঠছে লম্বা তলোয়ার। তাদেও গা থেকে টপটপ করে রক্ত ঝরছে। ওকে দেখে বুনো উল্লাসে ঝাপিয়ে পড়ে ওরা...
এইসব দুঃস্বপ্নের মুখে কিছু ভাল লাগে না রাজুর। বুঝতে পারে - তার আর বঙ্ার হবে না। মেনে নিতে কষ্ট হয় খুব। চারপাশটা অসহ্য ঠেকে। বাড়ি ফিরে আসে রাজু। উড়ে যাওয়া বক, খালের পাড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ, রেলব্রীজে দাড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকা.. গলির দোকানে ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে গল্পে মত্ত হয়ে ভুলে যেতে চায় সবকিছু।
রাজুর বাবা ছিলেন মফস্বল শহরের স্কুল মাষ্টার। তার নেশা পুরনো পুথি সংগ্রহ করা। প্রতিদিন ভোরবেলা মানুষ যেমন কোরান শরীফ পাঠ করে তেমনি তার বাবা পুথি পাঠ করেন। তার ঘুম ভাঙতো বাবার পুথি পাঠের সুরেলা কণ্ঠে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে ডুবে যায় পুথি পাঠের গল্পে। চোখে ভেসে ওঠে বিচিত্র সব দৃশ্য। সেই সব দৃশ্য পৃথিবীতে থাকে না। সেই দৃশ্যগুলো জন্ম হয় তার মনের মধ্যে। ছোটবেলা থেকেই এরকম। এই করে করেই ছেলেটা এইরকম কল্পনাবিলাসী হয়ে উঠেছিল। বাবার কথা মনে হয়। ছোটবেলার কথা মনে হয়। মায়ের বুকে মাথা রেখে সব ভুলে যেতে চায় রাজু।
বাবলু আসে। বাবলু আর সে একসাথে বঙ্ংি শুরু করেছিল খেয়ালের বসে। সামাদ চাচা নামে একজন boxer পাগল লোক ভূলিয়ে ভালিয়ে boxing ধরিয়েছিল। শুনে বাবার কি রাগ। boxing! মারামারি - সে আবার কেমন খেলা হলো।
কিন্তু দুই তিনদিন খেলেই boxingটা ভাল লেগে গিয়েছিল। একটা নাচের ব্যাপার আছে। লাফিয়ে লাফিয়ে প্রজাপতির মত। বঙ্ংি খেলার ছন্দে সে বাবার পুথিপাঠের ছন্দ টের পায়। সেই থেকে বঙ্ংিটাকে ভালবেসে ফেলে রাজু। বাবলু আর সেই এই খেলাটা চালিয়ে এসেছিল। রাজু শহরে চলে যাওয়ার পর সঙ্গীর অভাবে বাবলুও খেলাটা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। রাজু আসলেই দু বন্ধু মিলে boxingটা একসাথে নেড়েচেড়ে দেখে। রাজু শহরে থাকে। ওখানে বঙ্ংি চর্চার কিছু সুযোগটা আছে। রাজু যেন খেলাটা ধরে রাখে সে ব্যাপারে নিজের চেয়ে বাবলুরই উৎসাহ বেশি।
রাজু জানে সে যে- খেলাটা ছেড়ে দেয়ার কথা বললে বাবলু খুব দুঃখ পাবে। কিন্তু সে আসলে সিদ্ধানত্দ নিয়ে ফেলেছে। boxer হওয়ার স্বপ্নটা সে ঝেড়ে ফেলে দেবে। বাবুলকে সে কথাটা বলে। সে ভেবেছিল বাবলু রাগে ফেটে পড়বে। না হয়তো হতাশায় কষ্টে কোন কথাই বলতে পারবে না। শ্রেফ চুপ হয়ে যাবে। কিন্তু সে এর কোনটাই করে না। সে রাজুর কথাগুলো - শুকনো বালির মত এক ফুয়ে বাতাসে উড়িয়ে দেয়। 'ধুর - এইসব ভাবার আর দরকার নাই। এবার পাকিসত্দানের ক্ষমতায় যাচ্ছে বাঙ্গালীরা। আওয়ামী লীগ ভোটে জিতেছে। এবার ক্ষমতায় গেলে অবাঙ্গালীদের সব জারিজুরী শেষ হয়ে যাবে। তখন নিশ্চয়ই রাজু বাঙ্গালী বলে তাকে হারাতে পারবে না।
রাজুর কখনই রাজনীতিতে উৎসাহ ছিল না। কিন্তু বাবলুর কথায় সে রোমাঞ্চিত হয়। মনে মনে নানা কথা ভাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কি তবে সে আবার lorai -e জিততে পারবে? পশ্চিমের অবাঙ্গালীগুলো তাকে ঠকিয়ে হারিয়ে দেবে না। সে উত্তেজনা বোধ করে।
দুঃখবোধ একটা স্বপ্নে পরিণত হয়।
কিন্তু সে সুখ আর বেশিদিন থাকে না। বাঙ্গালীরা গণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই সময় পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করলেন। সবাই বুঝে গেল - ওরা বাঙ্গালীদের হাতে ক্ষমতা দেবে না। ঢাকায় আগুন জ্বলে ওঠে। সেই আগুনের আঁচ লাগে মফস্বলেও। চারদিকে সবার তখন একটাই ভাবনা, কি হতে যাচ্ছে? বঙ্গবন্ধু কি ক্ষমতায় যেতে পারবেন? কেউ কেউ বলছে এবার নাকি দেশটা স্বাধীন হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু সবার স্বপ্ন বুকে জড়িয়ে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মুক্তির ঘোষণা দিলেন। ফুরফুরে হাওয়ারা তাই ছড়িয়ে দিলো পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
রাজুর চোখে আবার boxing রিং হাতছানি দেয়। বাংলাদেশ হলে সে আবার লড়তে নামবে। রক্তে আবার পুরনো উন্মাদনা টের পায় সে। লড়াইয়ে নামার আগে এরকম লাগে ওর।
চারদিকে এরকম স্বপ্ন, জেদ, উত্তেজনা থৈ থৈ করে। মেলার মতন। রাজুকে দেখি আনমনা হয়ে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাউনি দেখেই বুঝি - নীরা। সেও এসেছে এখানে। কে আসে নি?
মেলা ভাঙতেই কি না হঠাৎ বৃষ্টি নামে। প্রথমে ফোটায় ফোটায়, তারপর মুষলধারে। বৃষ্টি মানেই রূপালী সাদা- কিন্তু এই বৃষ্টির রঙটা টকটকে লাল। রক্তের মত। লাল লাল বড় বড় বৃষ্টির ফোটা, মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। মুষলধারে বৃষ্টির লাল রঙে সব দৃশ্য ঢাকা পড়ে যায়। একটা পোড়া গন্ধ নাকে ঝাপটা মারে। কোথাও কি আগুন ধরেছে? বৃষ্টির লাল স্রোতের মধ্যে ঝাপসা চোখে দেখি - তাজউদ্দীন আহমেদ হেঁটে চলেছেন। সেই চিন্তামগ্ন মুখ। শঙ্কার ছায়া দুইচোখে। হাঁটতে হাঁটতেই তিনি বুক পকেটে হাত দিয়ে একটা ছবি বের করে দেখেন। ছবির মধ্যে বঙ্গবন্ধু হাসছেন। সেই হাসিতে সব শঙ্কা যেন কেটে যায়। ছবিটা বুকে চেপে তিনি অন্ধকারের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন। চোখে মাটির মত এক সৌম্য সরলতা, চলার পায়ে পায়ে দৃঢ়তা। অন্ধকারে তাকে ধ্রুবতারার মত লাগে।


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

অসাধারণ। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল পড়তে পড়তে। যেন আয়নার মত স্পষ্ট। চলুক

মুক্ত এর ছবি

গল্পটা সত্যিই অসাধারণ। কিন্তু শুধু গল্প লিখে কি কিছু হয়। আমি সচলের সবাইকে একটা সহজ প্রশ্ন করতে চাই। কিছুদিন আগে হাটহাজারীতে এবং সম্প্রতি সাতক্ষীরায় মিথ্যা কারণে হিন্দু পাড়াতে আক্রমণ করে সবকিছু লুটতরাজ ধ্বংস করল ইসলামী মানসিকতার মুসল্লীরা। আমার প্রশ্ন এর প্রতিবাদে আপনারা সক্রিয়ভাবে কি কিছু করার কথা ভাবছেন?

কর্ণজয় এর ছবি

আমি আমার লজ্জ্বাহীন অক্ষমতা স্বীকার করছি...
এবং এটা স্বীকার করে আমার দায় এড়ানোর জন্য আবারো লজ্জ্বাহীনভাবে ক্ষমা চাইছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।