হুমায়ূন আহমেদের চোখ -১

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: বুধ, ২২/০৮/২০১২ - ৬:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘুমটা আসি আসি করছে - এই মুহূর্তটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। শরীরটা আইসক্রীমের মত গলে যেতে শুরু করে। চারপাশটা মনে হয় মেঘের মত। নরম নরম। তুলো তুলো। চিন্তাগুলো - যেগুলো মাথার মধ্যে জট পাকিয়ে একটা গোলমাল পাকানোর তালে থাকে সেগুলো পর্যন্ত স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে। একটা কুয়াঁশা এসে সবকিছু ডুবিয়ে দিয়ে যায়।
ঠিক এরকম একটা সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। প্রথমে মনে হয়েছিল বুঝি স্বপ্নের মধ্যে বাজছে। একটা টুংটাং টুংটাং মিষ্টি শব্দ। ততক্ষনে সবকিছু কুঁয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেছে। সেই কুঁয়াশার মধ্যে আমি একটা হাওয়াই মিঠাইওয়ালাকে হেটে যেতে দেখি। গোলাপী রঙের মেঠাই ভর্তি কাঁচের বাক্স গলায় ঝুলিয়ে সে হেঁটে যাচ্ছে। তার হাতে ছোট্ট একটা ঘন্টা। একটু পর হাতটা দুলিয়ে দুলিয়ে টুংটাং টুংটাং আওয়াজ তুলছে। বেশ লাগছিল। কিন্তু একটু পরেই শব্দটা এরকম আর মিঠে থাকলো না। মগজের মধ্যে আওয়াজটা জোরালো হয়ে বাজতে শুরু করল। প্রথমেই মনে হলো - কে? এতরাতে কে আসলো?
ঘুটঘুট্টি অন্ধকার ঘরে আমার ঘুম আসে না। দমবন্ধ লাগে। ছোটবেলায় মাকে জড়িয়ে অন্ধকারটা তাড়ানোর চেষ্টা করতাম। বড় হওয়ার পর থেকে যেদিন একলা শোয়ার দিন এলো - সেদিন থেকেই একটা জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বালিয়ে ঘুমোতে যাই। একটা নীলচে আলোয় ঘরটা ডুবে থাকে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় না। আবার বেলটা বাজলো। ঘড়ির দিকে তাকাই। নীলচে আলোয় ঘড়িটা বেশ স্পষ্ট দেখা যায়। আড়াইটে বাজে। এত রাত! এ সময় আবার কে এলো? কোন দূর্ঘটনা? দুশ্চিন্তার সাথে তাল দিয়ে কলিং বেলটা আবার ক্যা ক্যা করে বেজে উঠলো। দরজার ওপাশের মানুষটা মনে হয় অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে।
গায়ে কোনমতে একটা জামা চাপিয়ে দরজাটা খূলে দাড়াই।
দরজার ওপাশে একজন মাঝবয়সী মানুষ। চশমার আড়ালে হাসি হাসি মুখ করে চেয়ে আছে। যাক! কোন দূর্ঘটনা ঘটে নি অন্তত। দূর্ঘটনার খবর নিয়ে আসলে কেউ এমন হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে থাকতো না। আমি লোকটার মুখের দিকে তাকাই। চেহারাটা একটু চেনা চেনা লাগে। কিন্তু চিনতে পারি না।
কাকে চাচ্ছেন?
গলার আওয়াজটা নিজের কানেই একটু কড়া শোনায়। আমি অবশ্য এমনিতে এমন না। বাসার কাজের ছেলেটার সাথেও কড়া গলায় কথা বলতে গেলে একটু পরেই তাল হারিয়ে ফেলি। যাকে কড়া কথা বলছি সে ফিক করে হেসে ফেলে। বাড়ির সবাই এই নিয়ে বিস্তর বকাবকি করে। এই যুগে এত মিনমিনে হলে নাকি চলে না। সেই আমার গলায়ও কড়া কড়া একটা ব্যাপার চলে এসেছে। সম্ভবত ঘুম ভাঙার কারনেই।
ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম, না?
গম্ভীর মুখে পরিষ্কার একটা ঝকঝকে হাসি। হাসি দেখেই তাকে চিনতে পারলাম। সাথে সাথে বিরক্তিটা জল হয়ে গলে গেল। যাক কেউ আসে নি তাহলে। আমি একটা স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ এসেছেন। কিন্তু তবুও ব্যাপারটা ঠিকঠাক বুঝতে পারি না।
স্বপ্নের মধ্যেও আমার কাছে হুমায়ূন আহমেদের আসার কথা নয়। আমি বইটই বললে হুমায়ূন আহমেদের বইই বুঝি, এটা ঠিক - কিন্তু ওনার ভক্ত বলতে যেটা বোঝায় আমি সেটা নই। আমি পয়সা দিয়ে ওনার একটা বইও কিনেছি কি না মনে পড়ে না। আসলে তার বলে না, বই ব্যাপারটার সাথেই আমার যোগটা কম। কালে ভদ্রে সময় কাটানোর অন্য কোন উপায় কিছু না পেলে বইয়ের পাতা উল্টে পাল্টে দেখি। কিন্তু দুই এক পাতা পড়ার পর থেকেই অক্ষরগুলো ঝাপসা হতে শুরু করে। তারপর একটা সময় হাতের মধ্যে ধরা বইটার ওজনটা কেন জানি বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত হাত আর তাল রাখতে পারে না, একসময় ধপাস করে হাত থেকে পড়ে যায়। প্রত্যেকবার বই পড়তে গিয়ে আমার এই একই অবস্থা। তারপরও কিভাবে জানি না হুমায়ূন আহমেদের অনেকগুলো বইই আমার পড়া হয়ে গিয়েছিল। বেশিরভাগ বইই পড়া হয়েছিল অন্যের বাসায়। কিংবা বেড়াতে গিয়ে। বাইরে গেলে ঘুম আসতে আমার একটু দেরীই হয়। সেই সময় বই ঘুমের ওষুধের মতো কাজ করে। হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো সত্যি সত্যি ভাল ঘুমের ওষুধ। রিলাক্সেন কিংবা সেডিলের চেয়ে ভাল। ওর বই হাতে নিলেই একটা ফুরফুরে হাওয়া আসে। ওজনটা কমতে থাকে। বেশ তরতর করে কয়েক পাতা এগিয়ে যাওয়া যায়। এমনকি পুরনো বইয়ের বেলায়ও একই। অনেকক্ষন ধরে পড়ার পরও মনে হয় না আগে পড়া হয়েছে। একটু চেনা চেনা লাগে, এই আর কি। তবুও ঠিক ঠিক মনে পড়ে না। অনেকটা অচেনা লাগে। অনেক পরে এসে বুঝতে পারি - বইটা আগে পড়েছি। ততক্ষনে পড়া প্রায় শেষ। ঘুমটাও জাকিয়ে এসছে। নতুন বইয়ের বেলায়ও ঘটনাটা প্রায় একই। বইটা শেষ হওয়ার পরে বুঝতে পারি, বইটা আগে পড়ি নি।
ঘুম আসা বলি কিংবা সময় কাটানো বলি - হুমায়ূনের এই চেনা চেনা কিন্তু অচেনা ব্যাপারটিই আমার মধ্যে টনিকের কাজ করে। নতুবা আমার কখনও বই পড়া হতো কিনা সন্দেহ। এরকম একজন বাজে পাঠকের কাছে কোন লেখকের স্বপ্নেও আসবার কথা নয়। গোটা দেশটাই যখন তার ভক্ত বলা যেতে পারে।
তিনি মারা যাওয়ার খবরটা দিয়েছিল বজলু। আমাদের পাড়ার চায়েল দোকানদার। আমি চা খেতে গিয়েছি। সে গম্ভীর মুখে চা বানাতে বানাতে বললো - ভাইজান, খবর শুনেছেন?
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, কি খবর?
কিছুদিন থেকে বজলুর এই একটা ভং উঠেছে। নাটকের মত করে কথা বলে। এটাও হুমায়ূন আহমেদের নাটকের থেকে শিখেছে। ওর দোকানে একটা ছোট্ট টিভি লাগিয়েছে। সেখানে রাতদিন বাংলা হিন্দী সিনেমা আর হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখায়। সেখানে চরিত্রগুলো এভাবে নাটকীয় ঢঙে কথা বলে। এগুলো দেখে দেখে সে এগুলো রপ্ত করেছে। তার ধারণা একদিন হুমায়ূন আহমেদ একদিন তার দোকানে চা খেতে আসবেন। সে তখন তাকে খুব যতœ করে এক কাপ চা খাওয়াবে। চা খেয়ে হুমায়ন আহমেদ চমৎকৃত হয়ে বলবেন, বা তোমার চায়েরতো বড়ই সৌন্দর্য্য।এত সুন্দর চা আমি কখনই পান করি নাই। চা মুখে দেওয়অ মাত্রই শরীর আর মন চাঙা হয়ে ওঠে। মনে হয় এখনই পৃথিবী দেখতে বেরিয়ে পড়ি।
বজলু খুব গদগদ স্বরে বলবে, স্যার! আমারে আপনের লগে লন। আপনি যেখানে যেখানে যাইবেন আমিও আপনার পেছনে পেছনে সেইখানে সেইখানে যামু। আপনার চা খাইতে ইচ্ছা করলে চা বানায়ে খাওয়ামু।
হুমায়ূন আহমেদ বজলুর ভক্তিতে প্রীত হবেন। তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। তারকাছে মনে হবে, এই লোকটা তার সাথে থাকলে আসলে তিনি পৃথিবী জয় করে ফেলতে পারবেন। হটাৎ তখন তার মনে হবে, তিনি যে বজলুকে নিয়ে পৃথিবী ঘুরতে বের হবেন, সে বিবাহ করে নাই তো।
হুমায়ূন আহমেদ গম্ভীর হয়ে বজলুকে জিজ্ঞাসা করবেন, দেখ - তুমি পৃথিবীর পথে বাহির হইবা ভাল কথা। কিন্তু তুমি বিবাহ কর নাইতো। বিবাহ করিলেতো সমস্যা।
বজলুর দাতগুলো সব বের হয়ে আসবে। না - স্যার। আমি এই দিনের কথা ভাবিয়াই বিবাহ করি নাই। না হা হইলে কত কত আগেই...
বজলু এখন সবকিছুতেই এ্যাকটিং শুরু করেছে। এবারও সে কোন একটা কথা রয়ে সয়ে দিতে শুরু করবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে কোন কথা না বলেই বজলু চা বানাতে শুরু করলো। আমি সিগারেটটা ধরিয়েছি মাত্র। চা বানিয়ে কাপটা হাতে দিতেই তার দিকে আমার চোখ পড়লো। কাঁদছে। কি হলো? জিজ্ঞাসা করলেও বজলু কিছু বলে না। চুপচাপ কাজ করে যায়। আমি আবার চেপে ধরতেই খবরটা দেয় ও।
স্যারের অবস্থা নাকি ভাল না।
কোন স্যার? আমার মাথায় আসে না।
হুমায়ূন আহমেদ। উনি নাকি মারা যাচ্ছেন?
বলো কি? আরে না।
আমি বলি ঠিকই, কিন্তু আন্দাজে। এ ব্যাপারে আসলে আমি জানিই না। পরে জানতে পারি সত্যি সত্যি মারা গেছেন। পেপার পত্রিকাগুলোতে তাকে কোথায় কবর দেয়া হবে এই নিয়ে নাকি বেশ নাটকও হয়েছিল। আমার অতটা আগ্রহ হয় নি। দুই বিয়ের ঝামেলা মরার পরও থাকে। তাকে নিয়ে বজলুর যতটা উচ্ছ্বাস আমার ততটাও নেই। বজলুও তার জানাযায় একটা কদম ফুল নিয়ে গিয়েছিল শুনেছি। তিনি যদি স্বপ্নে আসেনও তাহলে বজলুর কাছে যাওয়ার কথা। আমার কাছে আসার মানে কি?
সবকিছুর মানেতো আমরা পরেই বের করি, তাই না?
আমি চমকে যাই। তিনি আমার মনের কথা পড়তে পারছেন। অবশ্য সেটা পারারই কথা। তিনি এখন মৃত। মৃত মানুষরা মনের কথা পড়তে পারবে এটাই স্বাভাবিক। স্বপ্নটা একটু কেমন কেমন লাগছে। এটাকে আর একটু স্বাপ্নিক জায়গায় নিয়ে যেতে ভাল লাগতো। এই পৃথিবীর বাইরে। মহাশূন্যের কোথাও।
হুমায়ূন আহমেদ একটু এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলেন। আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি এবার ভয় পেলাম। সত্যি সত্যি ভয়। প্রচন্ড ভয়। এতটা ভয় আমি নড়তেও ভুলে গেলাম।
হুমায়ন আহমেদ সত্যি সত্যি দাড়িয়ে আছেন। আমার কব্জিজোড়া তার মুঠোর মধ্যে। কি ঠান্ডা! বরফের মত।
আমি কোনদিন লাশ ছুঁয়ে দেখি নি। কেন জানি না, মৃত্যু ব্যাপারটা আমি সহ্য করতে পারি না। পরিচিত কেউ মারা গেলে ছোয়াতো দুরের কথা, ঘরে লাশ থাকা পর্যন্ত আমি সেই বাড়ির কাছে পিঠে পর্যন্ত যাই না। আমি বুঝতে পারি হুমায়ূন আহমেদ সত্যি সত্যি এসেছেন। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি। কিন্তু কেউ যেন আমার পাদুটো যেন আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছে। জোর করেও নড়াতে পারি না। মূর্তির মত দাড়িয়ে থাকি। এতক্ষনে আমি বুঝতে পারি, আমি স্বপ্ন দেখছি না। আমি জেগে আছি। স্বপ্ন দেখলে এতক্ষনে ঘুম ভেঙে যেত। আমি বুঝতে পারি, আমার গা দরদর করে ঘামছে।
তুমি ভয় পেয়েছো? ঠিক কি না?
আমি মাথা নাড়ার চেষ্টা করি। হুমায়ূন আহমেদ হাসেন। এতক্ষনে খেয়াল করি, তিনি লাশ হয়ে আসলেও ক্যান্সার হওয়ার পরে তার চেহারা যেমন ফুলে উঠেছিল, তার মুখটা সেরকম নয়। বেশ কয়েকবছর আগের মত তরতাজা লাগছে। কোথাও একটা বাচ্চাদের ঢঙ আছে তার মুখের মধ্যে।
কি বললে না?
আমি এবার বলি। হ্যা সত্যি ভয় পেয়েছি।
তুমি ভয় পেয়েছো কেন জানো?
আমি বুঝতে পারি তিনি কি বলবেন। মনে মনে তার উত্তরটা কেউ যেন বলে দেয়।
তুমি ভয় পেয়েছো কারন আগে কোন মৃত মানুষ তোমার কাছে আসে নি।
আমি অবশ্য তাকে তারে উত্তরটা বলি না। আমি মাথা নেড়ে তাকে বলি আমি জানি না।
তিনি হেসে বললেন
তুমি ভয় পেয়েছো কারন আগে কোন মৃত মানুষ তোমার কাছে আসে নি। এরপর থেকে কোন মৃত মানুষ আসতে দেখলে তুমি ভয় পাবে না। কারন তুমি জানলে মৃত মানুষ আসতে পারে। এটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কি তাই না?
আমি উত্তর দেয়অর চেষ্টা করলাম। গলার স্বর বের হলো না। হৃদপিন্ডটা ধুকপুক করতেই লাগলো। একটা মৃত মানুষ আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন। ব্যাপারটা ভয়ংকর।
দেখো - মানুষ হলো আশরাফুল মকলুকাত। সৃষ্টিজগৎের সেরা জীব। সেই মানুষ হয়ে যদি তুমি অজানার সামনে এসে ভয় পাও- এ বড়ই দুঃখের কথা।
তিনি আমাকে অভয় দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। আমার মনে হতে থাকে, আমি মারা যাচ্ছি।
যাক। এবার শোন, আমি কেন তোমার কাছে এসেছি। -
হুমায়ূন আহ্মেদ একটু গম্ভীর হলেন।
- আমি তোমাকে আমার চোখ জোড়া দিয়ে যেতে চাই।
আমি বোকার মত তাকিয়ে থাকি। হুমায়ূন কি বলেন বুঝতে পারি না। তিনি চোখ দিয়ে যাবেন আমাকে! চোখ লাগে যাদেও চোখ নেই। আমারতো চোখ আছে। তাছাড়া একজন মৃত মানুষের চোখ কাজে লাগাতে গেলে সেই চোখ একদিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়। তার মৃত্যুর এতদিন পরে তার চোখ কোন কাজে আসবে।
হুমায়ূন আহমেদ আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
তুমি নিয়েই দেখো। এই চোখ জোড়া তোমার ভালই লাগবে।
আমার নিজের উপর সমস্ত নিয়ন্ত্রন মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে ফেলছি। বুঝতে পারছি এক্ষুনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবো। আমি মনের মধ্যে সমস্ত শক্তি জড়ো করে মনে মনে উচ্চারন করে বলি আপনি যান। আপনিতো আমার কথা বুঝতে পারছেন। তাহলে আপনি চলে যান।
হুমায়ূন আহমেদ আবার হাসলেন। বললেন - তুমি যদি একবার শব্দ করে আমাকে চলে যেতে বলো, আমি চলে যাবো। মনে মনে বললেও অনেক সময় কাজ হয় না। শব্দের একটা পাওয়ার আছে। এই জন্য জোরে জোরে মোনাজাত করতে হয়। আর আল্লাহকেও কুন শব্দটা বলতে হয়েছিল। তিনি মনে মনে উচ্চারন করলে চলতো কিনা জানি না, কিন্তু তিনি উচ্চারন করেছিলেন। যাক। তুমি এখন আমার কথাটা এখন বুঝতে পারবে না। কিন্তু কালকে থেকে তমি বুঝতে পারবে, এই চোখ দুটো কি - তা তুমি কালকে বুঝতে পারবে।
তিনি হাত দিয়ে তার চোখ দুটো খুলে আনলেন। আমার মাথায় কোন কিচ্ছু কাজ করছিল না। বোকার মত তাকিয়ে আছি। তার চোখের মণি দুটো দুটো হাতের তালুতে রেখে একবার আমাকে দেখালেন। তারপর ঐ হাতদুটো দিয়ে আমার চোখদুটো চেপে ধরলেন।
সঙ্গে সঙ্গে বরফের মত- শীতল একটা স্রোত মাথার মধ্য দিয়ে বয়ে গেল। আমি তাকাতে চেষ্টা করি কিন্তু পারি না।পাপড়িগুলো একটার সাথে একটা এটে আছে। অদ্ভুত একটা অবস্থা।
পায়ের আওয়াজ পেলাম। শব্দ শুনে বুঝতে পারি, তিনি চলে যাচ্ছেন। হটাৎ পায়েল শব্দটা থেমে গেল। আমি দেখতে পাচ্ছি না ঠিকই কিন্তু টের পেলাম তিনি ঘুরে দাড়িয়েছেন।
শোন - এই চোখদুটো আমি তোমাকে সবসময়ের জন্য দেই নি। আমি আবার এটা নিতে আসবো।
আমি হুমায়ূন আহমেদকে ডাকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন শব্দই বের হলো না। শুধু নিঃশ্বাসের মত এক টুকরো বাতাস বুকের মধ্য থেকে বাইরে ছুটে গেল। কিভাবে জানি না, মনের জোরেই আমি বিছানা পর্যন্ত নিজেকে টেনে নিয়ে ফেলে দিলাম।
আমার আর কিছুই মনে পড়লো না। আমি কি স্বপ্ন দেখেছিলাম না কি কোন স্বপ্নই দেখি নি - তাও না।
যখন ঘুম থেকে ঊঠলাম পাখি ডাকছে। তখনও মনে পড়ে নি কিছু। যতক্ষন পর্যন্ত না মা এসে নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাক দিলেন।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন! এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। একটা অজানা রহস্য আমাকে সামনের দিকে নিয়ে গেল আর আমি পুরো গল্পটা পড়ে ফেললাম, আরেকটু বড় হলে কি হত ভাইয়া!? এতো সুন্দর গল্প এতো ছোট হলে চলে? নাকি সুন্দর গল্প বলে ছোট মনে হলো!! যাক ভালো একটা গল্প পড়ে মনটা ফুরফুরা হয়ে গেল।

ধন্যবাদ।

কামরুজ্জামান স্বাধীন

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

উস্তাদ ভাল আছেন?
অনেক দিন আপনার লিখা পড়িনা

চরম উদাস এর ছবি

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ুনের চোখে দেখতে থাকুন দুনিয়াটা, যতদিন না ফেরত দিতে হয়!!

মনের রাজা টারজান,

তারেক অণু এর ছবি

আপনার লেখা মিস করছিলাম।
অফটপিক- হুমায়ূন আহমেদ মরণোত্তর চক্ষুদান করেছিলেন অনেক অনেক আগে, এই নিয়ে তার শর্ত ছিল চোখ দিতে হবে একজন অন্ধ যুবককে, যার একটি প্রেমিকা থাকবে।

সেটির কি কিছু হয়েছে? নাকি আমেরিকায় মারা যাওয়ায় আর কিছু হয় নি?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গল্পটা অসাধারণ এগুচ্ছিল, গল্পের শেষটা বোধকরি আরেক্টু এটেন্শন চাইছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

guest writer এর ছবি

শেষটায় এসে কেমন যেন মিইয়ে গেল।
তবুও অভিনবত্বে অসাধারণ।

অতিথি লেখক এর ছবি

খানিকটা হুমায়ুন আহমেদীয় ধাঁচ আছে। ভালোই লেগেছে। (একাউন্টঃ অপহত)

অবনীল এর ছবি

ইস, চোখ দিতে পারসে ব্রেন কেটে লেখনী প্রতিভা দান করে যেতে পারলো না। চিন্তিত

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

মেম্বর সাব  এর ছবি

কিছু মনে করবেন না। আমার বিরক্তি লেগেছে। আপনি মাঝখানে কাহিনী না বলে অতীতে চলে গেলেন কেন! দরজা খুলেই আপনি হুমায়ুন কে দেখলেন আর তারপরই তার লেখা আপনার কি রকম লাগে কোন বই পরেছেন কখন মরার খবর পেয়েছেন এই সব বলা শুরু করলেন। আপনার গল্পটি "আমি" স্টাইল এ লেখা। তাই আপনি নিজেই চিন্তা করুন, যখন আপনাকে কেউ কোন একটা অভিজ্ঞতা বলবে তখন যদি সে গল্পের গুরুত্ব পূর্ণ সময়ে আসল কথা না বলে কোন একজনের সাথে তার পরিচয় কিভাবে ও তার বিস্তারিত বলতে শুরু করে তখন কেমন লাগবে।
দরজা খুলার পর হুমায়ুনের সাথে আপনার আর কিছু কথা বার্তার বিবরণ দিয়ে, তার পর তার লেখা আপনার কেমন লাগে তা বর্ণনা করা উচিত ছিল। দরজা খুললেন। হুমায়ূনকে দেখলেন। আর বর্ণনা শুরু করলেন তার সম্পর্কে আপনি কি ভাবেন।
ভাল লাগলো না।
বরং যদি এমন হত। দরজা খুললেন। কাউকে দেখলেন। কথা বললেন। অবাক হলেন কিনা জানালেন। কেন এসেছে জানবেন। তারপর অন্য কিছু।
যাই হোক। আমার ভাল লাগে নি। বাট ক্যারি অন। সুনার অর লেটার।

শাব্দিক এর ছবি

ঐ চোখ জোড়ার কারণেই কি লেখার স্টাইল এতটা হুমায়ুনীয়?
বেশ ভাল লেগেছে। চাইলেই কারো মত লেখা যায় না। হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে উনার স্টাইলে লেখার আইডিয়াটা চমৎকার।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

কর্ণজয় এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।