অণুগল্পের ডায়েরী : ০২ - দর্শন (তৃতীয় চোখ)

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: রবি, ১১/১০/২০১৫ - ১১:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অণুর নামের মধ্যেই আছে, ও কেমন। ছোট্ট, অতি ছোট্ট। কণার চেয়েও ছোট্ট। এত ছোট্ট যে চোখেই দেখা যায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। আমাদের ছোটবেলায় সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের পাতা থেকে অণুর সংজ্ঞা শিখেছিলাম। অণু হলো -কোন বস্তুর সেই ক্ষুদ্রতম একক, যার মধ্যে বস্তুর ধর্ম রয়েছে। যা ভাঙলে তখন সে আর ঐ বস্তু থাকে না। তার ভেতরকার বস্তু ধর্মটা লোপ পায়। গল্পও একটা বস্তু বটে। গল্পের শরীর আছে। গল্পের একটা গুণাগুণ আছে। পদার্থবিদ্যার সংজ্ঞা থেকে আমরা কিন্তু অণুগল্পের একটা চেহারা আঁকতে পারছি। গল্পের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক যার মধ্যে গল্পটা আছে। একে আরও ছোট করা গেলে আর গল্পটা আর গল্প থাকে না। জ্যামিতির ভাষায় অণুগল্প হচ্ছে লম্ব। প্রকাশের লক্ষ্যে পৌঁছানোর সংক্ষিপ্ততম রাস্তা।
একটা অণুগল্প ভাবার চেষ্টা করি। যেকোন ভাবনাই খোলা জানালার মত। সেই জানালা দিয়ে অনেকগুলো অণুগল্প ভেসে আসে। হাওয়ার মত উড়তে শুরু করে।
প্রতিটা গল্প আলাদা। জীবনের মত। জীবনে জন্মের প্রক্রিয়া এক। কিন্তু প্রতিটা জন্মের গল্প আলাদা। অনেকটা তেমন। আমি একটাকে মুঠোয় পুরে নেই।
একটা কথোপকথন। স্মৃতি থেকে অনুগল্পের সাজে বেড়াতে এসেছে।

…………………………………
- ভাল আছো?
সে উঠে আসলো।
- আমরা কেউই ভাল নেই। ভালই যদি থাকতাম আমরা কেউই আমাদের কাছে আসতাম না।”
……………………………………….
কেন এই কথোপকথন অণু-গল্প সেজে এসেছে?
কেন? কী আছে এর মধ্যে?
কথোকপথনটার ভেতরে একটা কিছু বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।
একটা সম্পর্ক।
দুজনের দুটো অবস্থান। খুব ব্যক্তিগত। অভিযোগ নেই। অভিমান মেশানো অনুযোগ আছে।
একটা প্রত্যাশা আছে, দাবী নেই।
খুবই ব্যক্তিগত একটা আলাপ। কিন্তু সেই ব্যক্তির সাথে পৃথিবীও জড়িয়ে আছে।

আমার মনে হয়, এটা ঘটেছে এইে কথোকথনে- একটা দর্শনের পরিচয় আমরা পেতে পারি। যার কারণে, এটা অণুগল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে।
‘দর্শন (Philosophy)’ শব্দটার অর্থ দেখা।
প্রত্যেকেই নিজের মত করে দেখে। আমরা কী দেখি? আমরা অনেক কিছুই দেখি।
এই দেখাকে বুঝতে গেলে, আমাদের একটা ট্র্যাজিডির মুখোমুখি হতে হয়।
ট্র্যাজিডিটা হলো, আমরা সব দেখতে পাই, শুধু নিজেকে ছাড়া। কেউই নিজের চোখে নিজেকে দেখতে পাই না।
অন্যদের দিকে তাকিয়ে আমাদের নিজেদের চিনে নিতে হয়। আয়নার মতন।
সেই আয়নায় নিজের নানা রকম ছায়া পড়ে। তাই দেখে নিজেকে অনুমান করা যায় মাত্র। কিন্তু দেখা যায় না। তাহলে নিজেকে দেখার উপায় কী?
এটাই হলো দর্শন।
এই দর্শন হচ্ছে দুই চোখের মানুষের তৃতীয় চোখ দিয়ে দেখা। যেই চোখটা আমাদের শরীরের মধ্যে থাকে না।
এই চোখ এমন এক জায়গায় থাকে, যেখান থেকে পৃথিবী আর প্রকৃতির সঙ্গেে আমরা নিজেকে যুক্ত করে সে নিজেকে দেখতে পাই।এই দর্শন ক্ষমতা যিনি অর্জন করেছেন, তিনি সকল কিছুকে বিশ্ব প্রকৃতির সাথে যুক্ত করে দেখতে পারেন।
তখন তিনি একটি গাছের পাতার ভেতরে প্রকৃতির নিয়ম দেখেন।
একটি চলে যাওয়ার মধ্যে মানব স্বভাবকে অবলোকন করেন।
একটি চাউনির ভেতরে পৃথিবীর সমস্ত মনকে পড়তে পারেন।
উড়ে যাওয়া পাখিটির মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাস এবং ভবিষ্যতকে দেখতে পারেন।

আমার কাছে অণুগল্পগুলোকে দর্শনের মত লাগে। যাদের দর্শন শক্তি যত স্পষ্ট তিনি তত ক্ষুদ্রের মধ্য দিয়ে বৃহৎকে প্রকাশ করতে পারবেন।
একটি অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমাদের যেমন মনে হয়, গোটা পৃথিবীকে বুঝতে পেরেছি।
তেমনি তাদের লেখা একটি অণুগল্প পড়ার পরার পরে মনে হবে, লা মিজারেবল, প্রেপস অব র‌্যাথ বা আনা কারেনিনা’র মত বিশাল একটা উপন্যাস পড়ে ফেলেছি।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনুগল্প সম্পর্কে ভাবনাগুলো চমৎকার হাসি

দেবদ্যুতি

তাহসিন রেজা এর ছবি

লেখা গুলি পড়ছি। ভালো লাগছে। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

শিশিরকণা এর ছবি

প্রতিটা অণুগল্প অনেকটা বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় ভাবসম্প্রসারণের প্রশ্নের মতন।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

শিশিরকণা এর ছবি

দর্শন ভিত্তিক অণুগল্পের চেয়ে যে অণুগল্পে জমজমাট কোন কাহিনীর আভাস পাওয়া যায় সেগুলিতে বেশি আগ্রহ পাচ্ছি। ঠিক যেন ঘনাদা বা অন্য কারু গল্প বলার আভাস এর শুরু, চুম্বকের মতো টেনে এনে শূন্যে ছেড়ে দিচ্ছে।

দর্শন ভিত্তিক গুলো এই ফেসবুকের যুগের বাহারি ছবির উপর আবেগঘন ফন্টে লেখা বাণী দিয়ে "শেয়ার করে অশেষ নেকি হাসিল করুন" টাইপ পোস্ট এর ভিড়ে মিশে যায় অনেক সময়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

কর্ণজয় এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে। শিশিরকণা অণুগল্পের বর্ণিল একটা দৃষ্টিকোণকে তুলে নিয়ে এসেছেন।ঘটণার জমজমাট হয়ে ওঠার পেছনে অনেকগুলো রসায়ন কাজ করে।ঘটণাকে দেখার ভঙ্গি, ঘটমান স্রোত থেকে ঠিক ঘটণাকে বাছাই এবং বিন্যাসের এই রসায়ন নানাভাবে ঘটে থাকে। শিশিরকণা বিষয়গুলো তুলে ধরলে আমার বিশ্বাস, আমরা একটা সুন্দর জগৎের স্বাদ পাবো।
প্রতিটা অণুগল্প অনেকটা বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় ভাবসম্প্রসারণের প্রশ্নের মতন- যথার্থ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।