ধূলো উড়তেছে প্রান্তিকে...

জাহামজেদ এর ছবি
লিখেছেন জাহামজেদ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৯/২০১০ - ৩:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কই থাইকা শুরু করি, কিভাবে শুরু করি, এইটা নিয়া নিজের মধ্যেই একটা সংশয় বিরাজ করতেছে বেশ কিছুদিন ধইরা। তারপর মনে হইলো রিকাবীবাজারের রথের মেলার কথা, ওইখান থাইকা তো শুরু করা যায়, এবং আমি তখনই স্বজ্ঞানে সুস্থ মস্তিস্কে এই সিদ্ধান্তে নিয়া ফেলি, অথবা কইতে পারেন মনস্থির কইরা ফালাই, লেখাটা আমি ওইখান থাইকা-ই শুরু করব।

রথের মেলা, আমরা গেছলাম খরগোশ কিনতে...

নোমান তখন নতুন একটা মোটরসাইকেল কিনছে, লাল রঙের হিরো এসপ্লেন্ডার। ইংলিশ স্যারের বাসার ক্লাশ শেষ কইরা নোমান আমারে আইসা কইল, দোস্ত যাবি নাকি ? আমি তারে জিগাইলাম, কই? সে আমারে কইল, রথের মেলায়। আমি রাজি হইয়া গেলাম। তারপর উইটা বসলাম নোমানের লাল রঙের মোটরসাইকেলের পেছনে, মোটর সাইকেলরে নোমান তার নিজস্ব ভাষায় সাইকেল কইতো, নোমানের মতো সিলেটে আমি আরো অনেকরেই মোটরসাইকেলরে সাইকেল কইতে শুনছি, আবার দেখছি, অনেকে মোটরসাইকেলরে গাড়িও কয়। নোমান তার সাইকেল চালাইতে চালাইতে যাইতেছে, পেছনে বইসা আমি হুড ওঠানো রিকশাগুলার ভিতরে চোখ দিয়া উঁকিঝুঁকি মারতেছি, তখন সিলেট শহরে আইজ কাইলকার মতো এত আধুনিক হয় নাই, খুব বেশি একটা মডার্নও হয় নাই, মেয়েরা রিকশা চড়িত হুড ওঠাইয়া, আর আমরা মেয়েদেরকে দেখতাম রিকশার হুডের ভিতরে চোখটারে ডেলিভারি দিয়া, তো আমি হুড ওঠানো রিকশাগুলার ভিতরে চাইয়া চাইয়া যাইতে থাকলাম, নোমান আমার মতলব যখন বুঝতে পারল, তখন তার সাইকেলের গতি বাড়াইয়া দিলো। আর চোখের নিমিষেই আমরা পৌছে গেলাম রিকাবীবাজারে রথের মেলায়। নোমান একটা জায়গায় নিয়া তার মোটরসাইকেল পার্কিং কইরা রাখল, সেইখানে আমাদের বন্ধু অপুরে দেখলাম, তানভীররে দেখলাম, হাসানরে দেখলাম, তিনটারেই জিগাইলাম, তোমরা এইখানে কি করো, অপু আর তানভীর কইল নাটক করি, হাসান কইল আড্ডা দিতে আইছি। তখন আমাদের মাথায় নাটক না, খরগোশের বাচ্চা মাথার ভিতরে পাঙ্খার মতো ঘুরতেছে, তাই অপু আর তানভীররে রাইখা আমি, হাসান আর নোমান মিলা মেলায় খরগোশের বাচ্চা খুঁজতে লাগলাম, সুন্দর বাচ্চা পাইলে তখন দেখলাম নোমানের দামে হইতেছে না, আর দামে হইলে দেখা গেল একজোড়ার মধ্যে দুইটাই বেটা, অথবা দুইটাই বেটি, নোমান নিবে একটা বেটা আর একটা বেটি, আমি তারে জিগাইলাম, একটা বেটা একটা বেটি নিয়া কি করবি, সে আমারে কইল, ওই বেটা, বেটা বেটি যদি না কিনি তাইলে বাইচ্চা হইব কি কইরা ? আমি আর কথা বাড়াইলাম না, বোঝলাম এই বিষয়ে নোমানের অগাধ জ্ঞান, তাই এক জোড়া বেটা বেটির খুঁজে আমি আর হাসান তার পেছনে পেছনে হাটতে থাকলাম। হটাৎ কইরা এক জায়গায়, যেখানে সামনে খাবারের দোকান আর পেছনে অনেক মানুষের জটলা, সেইখানে গিয়া নোমান দাঁড়াইয়া পড়ল, সাথে আমি আর হাসানও গিয়া দাঁড়াইয়া পড়ি, দেখিতে পাই গোল একটা চাক্কা ঘুরতেছে, আর মানুষ চাক্কার মাঝে বিভিন্ন ধরণের ছবিতে টাকা রাখতেছে, আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই এইটা কি, হাসানও বুঝে নাই, কিন্তু নোমান আমাদেরকে কানে কানে চাক্কিটার মাহাত্য বুঝাইয়া দেয়, কয়, এইটা হইতাছে জুয়ার বোর্ড, এইখানে জুয়া খেলা যায়, তখন আমরা সবে স্কুল পাশ কইরা বের হইছি, কানের মধ্যে এখনো লেগে আছে সেই নীতিবাক্য- জুয়া খেলা মহাপাপ, আমি আর হাসান মিলা সিদ্ধান্ত নিয়া ফালাই, ওইখানে আর দাঁড়াইয়া থাকব না, কিন্তু নোমান আমাদের সিদ্ধান্তের মধ্যে বুড়ি আঙুল ঢুকাইয়া জুয়ার বোর্ডের পাশে দাঁড়াইয়া থাকে, তারপর আমাদেরকে অবাক কইরা দিয়া নোমান বোর্ডে আঁকা একটা মার্কায় বিশ টাকা লাগায়, আমরা চউখ বড় বড় কইরা তার দিকে একবার তাকাই আর বোর্ডের দিকে একবার তাকাই, ততক্ষণে বোর্ড ঘুরতে শুরু করছে, তারপর দেখি নোমান বোর্ডের সাথে সাথে নিজেও ঘুরতেছে, সেইদিন নোমানের কপাল ভালো আছিলো, সে জুয়ার বোর্ড থাইকা বারো শো সত্তর টাকা নিয়া আইতে পারছিলো, তারপর আমরা তারে, আমি আর হাসান চাইপা ধরছি টাকার ভাগ দেওয়ার জন্য, সে কয়, তোদের ভাগ দিমু কেন, তোরা কি করছস ? হাসান নোমানের কথা শুইনা ফুঁসতে থাকে, কয়, আমাদের কারণেই তো তুই এত টাকা নিয়া ওইখান থাইকা আইতে পারছস, নাইলে তো জুয়ার বোর্ডের লোকজন তরে ওইখান থাইকা এত টাকা নিয়া আইতে দিত না, আমি তখন হাসান আর নোমানের জুয়া বিষয়ক জ্ঞানে মুগ্ধ হইয়া আছি, মুগ্ধতা কাটে নোমানের একটা ঘোষণায়, সে কয়, ঠিকাছে, আমি তোমরা দুইজনরে দুইশ টাকা দিমু, আমি কথাটা শুইনাই খুশি হই, কিন্তু হাসান দুইশ টাকায় রাজি হয় না, সে আরো কিছু চায়, আরো বেশি চায়, শেষে নোমান কয়, ঠিকাছে যা আমি তোমরারে আলপাইনে খাওয়ামু, আলপাইন তখন আমাদের শহরের সবচেয়ে আধুনিক রেস্তোরা, ওইটার সামনে দিয়া গেলেই কাবাবের তীব্র গন্ধ নাকে আইসা একেবারে চান্দিটারে গরম কইরা দিত, আর রাস্তার উপরে আলপাইনের কাবাব ঘরে দাঁড়াইয়া বৃদ্ধ এক লোক, যার অনেক লম্বা দাড়ি আছিলো, আলপাইনের কাবাবের গল্প কইতে গিয়া নোমান প্রথমে এই লোকটার কথা কইতো, আর কইতো, এই লোকটার আদি পুরুষরা নাকি কাবাব আছিলো, তখন আমরা নোমানরে জিগাইতাম, কাবাব আছিলো মানে কি, তখন নোমান কইতো, আরে বেটা কাবাব আছিলো না, কাবাবের কারিগর আছিলো। তখন আমরা বোঝতাম আলপাইনের যে লোকটা পাকিস্তানি, পাকিস্তান নামের যে দেশটারে তখন আমরা ঘৃণা করতাম মনে প্রাণে, সেই দেশের একটা মানুষের হাতে কাবাব এত মজা হয় কি কইরা, কারণটাও তখন আমরা জানতাম, নোমান কইতো, পূর্বপুরুষ যদি কাবাবের কারিগর থাকে, তাইলে কাবাব খাইতে মজাক হয়। আমরা তখন মজারে মজাক কইতাম। আলপাইনে সেই দাড়িওয়ালা লোকের হাতে তৈরি কাবাব খাওয়ানোর আশ্বাস দিয়া নোমান হাসানরে ম্যানেজ কইরা ফালায়, আর আমি তো আগে থাইকা ম্যানেজ হইয়া আছি। তারপর নোমান আমাদেরকে কয়, চল একটা জায়গা থাইকা আসি, আমরা জিগাই কই, নোমান কয়, প্রান্তিকের ভিতরে, আমি জীবনে এই প্রথম নোমানের সাথে হাইটা হাইটা প্রান্তিকের ভিতরে যাই, আসলে জায়গাটার নাম প্রান্তিক আছিলো না, ওই জায়গাটারে সিলেটের মানুষ কইতো প্রান্তিক, কিন্তু আসলে নাম আছিলো প্রান্তিক চত্বর।

প্রান্তিক, এই প্রথম প্রান্তিকে...

প্রান্তিকে নোমানের সাথে আসাটা এখানে আমার জীবনের প্রথম আসা না, এর আগেও এইখানে আরো অনেকবারই আসছি, নানা কারণে আসছি, মেলায় আসছি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে আসছি, আরো অনেক ইতিহাস আছিলো প্রান্তিকে, যেগুলো আমার নিজের সাথে গড়াগড়ি খাইতো না ঠিকই কিন্তু এই আসাটাও যেন তেন আসা ছিলো না। পার্থক্য শুধু এটাই আছিলো, আগে আসতাম বন্ধুদের সাথে আড্ডাইতে আর এখন আসছি আর্ট কালচারের খোঁজে। প্রান্তিকই তখন সিলেটের আর্ট কালচারের হার্ট আছিলো, মস্তিস্ক আছিলো, শিরা উপশিরা আছিলো। আমি আর হাসান, আমরা দুইজন কিছুই জানি না, কিছুই চিনি না এমন ভাব নিয়া নোমানের পিছু পিছু আর্ট কালচার খুঁজতে লাগলাম। নোমান আমাগো দুইজনরে একবার খুইলাও কইল না, আসলে সে কার খোঁজ করতেছে। তারপর হঠাৎ কইরা সে চন্দন নামের এক মহা ভূড়িওয়ালা সম্পন্ন লোকের সামনে আমাদেরকে দাঁড় করাইলো, আমি আর হাসান চন্দনরে দেইখা গন্ধ মনে করলাম। তার মুখভর্তি দাড়ি আমাদেরকে ভয় পাইয়ে দিলো। আমরা তার অমায়িক হাস্যোজ্বল কথাবার্তায় মোটামুটি নিশ্চিত হইয়া গেলাম, চন্দন নামের এই লোকটা আর্ট কালচারের কেউ না, সে আসলে একটা গন্ধ! এখন আসি গন্ধ প্রসঙ্গে, সিলেট শহরে আমরা বন্ধুরা বিশেষ একটা রাজনৈতিক ( শিবির ) দলের মানুষরে গন্ধ কইয়া ডাকতাম, গন্ধ বলতেই আমরা বুঝতাম, এনারাই হচ্ছেন তেনারা, এনারা মানে গন্ধ, তেনারাও মানে গন্ধ।

চন্দনের সাথে কথা কইতে কইতে নোমান আমারে কইল, চন্দনরে সে অনেক দিন থাইকা চিনে। কোন একটা পত্রিকার কুইজে দুইজনে একসঙ্গে নাকি সবসময় পার্টিসিপেট করে। পত্রিকার নাম শুইনা আশ্বস্ত হই, তেনারা তো এই পত্রিকার কুইজে অংশগ্রহণ করার কথা না, মারা গেলেও এনারা তা করবেন না, এনারা তো এই পত্রিকা পড়েনই না। তার মানে চন্দন নামের এই ভদ্রলোক গন্ধ না, আর যেহেতু তিনি গন্ধ না, তাই নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভালো মানুষ, তাই আমরা দুইজন, আমি আর হাসান, চন্দনের সাথে আমাদের সখ্যতা গড়ে খুব অল্প সময়েই। নোমানের সখ্যতা তো আগে থাইকাই ছিলো। তারপর শুনছিলাম, এই পত্রিকার যত কুইজ হতো, সেগুলোতে নোমান ছাতা পাইলে চন্দন পাইতো ট্রানজিস্টর, নোমান ঘড়ি পাইলে মাইক্রোওয়েভ ওভেন পাইতো চন্দন। এখানে আরেকটা কথা কইয়া রাখি চন্দনদা একবার বসুন্ধরার কুইজে একটা মোটরসাইকেল পাইয়া গেছিলো, আর এখনো সে অনেক বাচ্চার বাপ হইয়াও বাচ্চাগো মতো কুইজ খেলায়। এটা আমি দেখি নাই, নোমান সেদিন আফসোস কইরা ফেসবুকে লিখছে, চন্দনদা কালেরকন্ঠের কুইজের সব পুরস্কার নিয়া গেলো !

আমরা প্রান্তিকে, প্রান্তিকে মানে সমাজকল্যাণ দফতরের একটা অফিস আছে ওইখানে, সাদা রঙের একটা ঘর, ওইটার বারান্দায় বইসা কথা বলতেছি, তখন এক্সেল মোটরসাইকেল মাইরা আরেক ভদ্রলোক উদয় হইলেন, মুখ ভর্তি দাঁড়ি, কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো, আমি আবার দুঃচিন্তায় পড়ে গেলাম, কারণ এই সংগঠনের দুইজন মানুষের সাথে দেখা হইলো, আর দুইজনের মুখেই কিনা দাঁড়ি, আবার একজন চালাইতেছেন এক্সেল মোটরসাইকেল ! তখন বাংলা এবং হিন্দি সিনেমার বদৌলতে এক্সেল মোটরসাইকেলকে আমরা গুন্ডাদের বাহন মনে করতাম, মনে হইতে লাগল এরা আসলে গন্ধ! কিন্তু উনি যখন আমাগোরে উনার নাম কইলেন, নীলাঞ্জন দাশ টুকু, তখন সব ভয় কাইটা গেলো, নিজের বকা দিলাম, বারবার ভালো মানুষগুলারে গন্ধ ভাবনের লাইগা। তারপর একে একে ওইখানে আসতে লাগলেন মিতুল আপা, রানা আপা (রানা মেহের), রিয়াদ ভাই (রিয়াদ আউয়াল ), অপু ভাই ( নজমুল আলবাব ), মান্না দা ( অর্জুন মান্না ), উজ্জল দা ( উজ্জল রায় ), রিপন দা ( রিপন চৌধুরী, আরসি কোলা জনপ্রিয় হওয়ার পর নিজেরে যিনি আরসি নামে পরিচয় দিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন), অর্ণা আপা ( অর্ণা রহমান ), মুনা আপা, সুমি, শাহ আলম ( চা আলম নামেই যিনি বেশি পরিচিত ) সহ আরো অনেকেই। সবার সাথে সেইদিন আমাগো অনেক আড্ডা হইলো, আমাগোরে গন্ধ বিরোধী কিছু কথা শুনাইলো কেউ একজন, সিলেট শহরে আমাগো সমবয়সী মুক্তিযোদ্ধা বাবার ছেলে কন আর আর্ট কালচারের ঘরের ছেলেই কন, অনেকরেই চোখের সামনে গন্ধ হইয়া যাইতে দেখছি, কিন্তু আমরা গন্ধ হই নাই, হয়তো সেইদিনের সেই বাণীগুলা আমাগো কানে সবসময় বাজতো, আমরাও তখন রাজনীতি করতাম, আর হাসান তো এখন ছাত্রদলের অনেক বড় নেতা হইয়া গেছে, আমরা কেউই কিন্তু রাজনীতির ময়দানে হোক আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গায়ই হোক, গন্ধদের সাথে কোনো আপষ করি নাই, হাসান এখনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে অগ্রগামী সৈনিক, চিল্লাইতাছে নিজের অবস্থান থাইকা, যদিও সে ছাত্রদলের পোষ্টেড নেতা। এই যে গন্ধ বিরোধী অবস্থানে আমরা এখন এত কঠোর, এই বীজ আমাগো মনে কই থাইকা ঢুকছিলো, প্রান্তিক থাইকা, প্রান্তিকের বারান্দার ওই আড্ডা থাইকা।

প্রান্তিকে যাইতে যাইতে আড্ডাইতে আড্ডাইতে আমরা অনেক কিছু শিখা ফালাইলাম। এরমধ্যে উজ্জলদা আমাদের প্রাণের মণি হইয়া গেছেন, রিপনদার দোকান টেকনিক্যাল রোডে আমাগো ধানের মিলের পাশে আছিলো, আমি তারে আগে থাইকাই চিনতাম, চন্দনদা অনেক মজা কইরা কথা কইতো, অপু ভাই অনেক মজা করতো, মনে আছে সে তখন একটা পত্রিকায় দিনের শিফটে কাজ করতো, আমাগো কাছে আইসা পত্রিকার গল্প করতো, অফিসে কি হয় না হয় এই গল্পগুলা করতো, তার একটা বাজাজ ৮০ মোটরসাইকেল আছিলো, নোমান ওইটারে বেবিট্যাক্সি কইয়া ডাকতো, আমরা মাঝে মধ্যে মজা কইরা সেই বেবিট্যাক্সি চালাইতাম, সেই বেবিট্যাক্মির পিছনে টিফিন ঝুলানো থাকতো, আমরা টিফিনের বাটি খুইলা নাড়াচাড়া করতাম, যদি কিছু পাওয়া যায়, কিছুই পাওয়া যাইতো না, তখন অপু ভাই আমাগোরে বাসায় নিয়া খাওনের আশ্বাস দিতো, অপু ভাইয়ের বাসায় অনেক গেছি, খালাম্মার হাতে বানানো পিঠা খাইছি, অনেক দিন অপু ভাইরে দেখি না, খালাম্মার কথাও জানিনা, অথচ একটা সময় এই অপু ভাই’র কাছ থাইকাই লেখালেখির তালিম নিছি, তারে দেইখাই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন প্রথম মনে জাগছিলো।

তারপর আমার পরিচয় হইয়া গেল মোরশেদ ভাই’র ( হাসান মোরশেদ )সাথে, আমরা যখন প্রান্তিকে যাই, তখন উনি ইন্ডিয়াতে ছিলেন, আমরা তার গল্প শুনতাম, তার গল্প পড়তাম, মনে মনে স্বপ্ন আঁকতাম, কোনোদিন মোরশেদ ভাইয়ের মতো লেখক হইতে না পারি, কিন্তু লেখক হইতে পারব! মোরশেদ ভাই দেশের আসার পর আমার সাথে তার ভালো একটা সম্পর্ক হইয়া গেলো, অনুজের মতো আমি তার কাছে গিয়া উপদেশ চাইতাম, তখন উনি এনআইআইটিতে চাকরি করেন, আমারে চা বিস্কুট খাওয়াইতেন, আমি বইসা বইসা তার সাথে কথা কইতাম, তিনি আমারে নানা কথা শুনাইতেন, ভালো ভালো বই পড়ার উপদেশ দিতেন, মোরশেদ ভাই এখন বিলেতে থাকেন, সচলায়তনে লেখালেখি করেন, তার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ আছে, প্রায়ই তার ছবি দেখি, তার ছেলেটাও বড় হয়ে যাচ্ছে এটা দেখি, কিন্তু ভুলতে পারি না সেই দিনগুলার কথা, তার ভালোবাসার কথা। মান্না দা আর রানা আপাও বিলেতে থাকেন, দেশে থাকতে মান্না দার সাথে যোগাযোগ আছিলো। এখানে বাপ্পাদা’র কথাও কইতে হয়, বাপ্পা দা পাফো করতো, কিন্তু আমার সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক আছিলো,বয়সে বড় হইলেও আমি তারে নিজের ভালো বন্ধু মনে করতাম, এখনো তার সাথে ব্যক্তিপর্যায়ে সেই যোগাযোগ আছে, দেখা সাক্ষাৎ মাঝে মধ্যেই হয় । পাফোর চয়নদা’র সাথেও আমার প্রান্তিকে গিয়া পরিচয়, অথবা তিলোত্তমা দিদি, সেই পরিচয় এখনো বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মতো বাইচা আছে। মণি ভাই’র কথা মনে আছে, মণি ভাই’র পুরা নাম আমার মনে নাই, তবে এটা মনে আছে উনি তোপখানায় থাকতেন, এখন মনে হয় একটা জাহাজ কার্গো কোম্পানিতে চাকরি করেন, একবার আমি চাটগাঁ গেছি শুইনা দৌড়াইয়া আসছিলেন। তার কোনো খবর এখন আমি জানি না। আরিফ ভাইয়ের ( আরিফ জেবতিক ) সাথে একবার কি দুইবার প্রান্তিকে আড্ডা মারছি, তিনি আমাদের কলেজে একটা ছাত্র সংগঠনের বড় নেতা আছিলেন, আমাগো মধ্যে তখন তার প্রতি একটা ভয় কাজ করতো, আমরা যখন প্রান্তিকে আড্ডাইতাম তখন তিনি ঢাকা হইতে মাঝেমধ্যে প্রান্তিকে আসতেন, তখন তারে আমরা বড় সাংবাদিক হিসেবে চিনতাম অথবা জানতাম। তখন সম্পর্ক খুব একটা কাছাকাছি না থাকলেও এখন আরিফ ভাই’র লেখাগুলা উনারে আমাগো খুব কাছাকাছি নিয়া আসছে। লেখালেখির সব মাধ্যমেই এখন তার সাথে দেখা হয়, ব্লগে দেখা হয়, ফেসবুকে দেখা হয়, পত্রিকা অফিসেও মাঝে মধ্যে দেখা হয়। আরিফ ভাই’র লেখাগুলা আমারে খুব টানে। সুহেদ ভাই স্পেনে থাকে, প্রান্তিকে তার সাথে পরিচয়, কিন্তু প্রান্তিক ছাড়াইয়া আমার বাসা সুহেদ ভাই’র বাড়ি অথবা এমসি কলেজ হোস্টেলের ১০১ নাম্বার রুম পর্যন্ত দৌড়ায়...এখনো দৌড়াইতেছে, সুহেদ ভাই মেইল পাঠায়, জাকির কেমন আছিস, আমি কই ভালা, ফেসবুকে তার ছবি দেখি, সে বার্সেলোনায় তার দোকানে বইসা শুটকি বেঁচতেছে, বিজিতের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ হয় অন্তর্জালে, সুমি বা মিতুল আপার কোনো খবর আমার কাছে নাই, আমাদের একজনের মহা আলুর সমস্যা আছিলো, তার নাম শাহ আলম, মেয়ে দেখলেই সে চা খাওয়াইতো, আমাগো বন্ধু কান্তা আর কলিরে সে কয়বার প্রেমের প্রস্তাব দিছে, এইটা ক্যালকুলেটর মাইরা বাইর করতে হইবো! টুকুদা’র সাথে আমার প্রায়ই রাস্তাঘাটে দেখা হয়, তাও চলমান অবস্থায়, উনি মোটরসাইকেলে আমিও মোটরসাইকেলে। রিপনদা’র সাথে দেখা হয়, সে সিটি কর্পোরেশনে আছে, বাচ্চার বাপ হইছে, আর মাশাল্লাহ অনেক মোটা হইছে ! রিয়াদ ভাই বিয়া করছে, প্রাইম ব্যাংকে চাকরি করে, একদিন আমারে ফোন দিয়া কয়, জাকির ভাই, আপনের একাউন্টে তো ৮৭ লাখ টাকা, শুইনা আমার মাথা আউলাইয়া যায়, পরে সে তার ভুল বুঝে, আমারে কয়, আমি জাকির না, সে আরেক জাকিররে ফোন করছিলো, তার সাথে সিলেট গেলে প্রায়ই দেখা হয় , তার বউ নিয়া রিকশা কইরা সে পুরা সিলেট ঘুইরা বেড়ায়, কিন্তু অবাক হইয়া দেখি, সে এখনো হাফপ্যান্ট পইড়া মাঝে মধ্যে রাস্তায় বাইর হয় আগের মতোই!!!

এখন আসি আমাগো সমবয়সী বন্ধুদের কথায়। অমিত জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলতে গিয়া হারাইয়া গেলো, তারে টিভিতে দেখব এই আশায় বইসা থাকলাম, সে আর টিভিতে ক্রিকেট খেলতে পারল না। হাসানের সাথে আমার যোগাযোগ প্রতিরাতেই হয়, ফেসবুকে মেসেঞ্জারে অথবা ফোনে, ঈদের আগের দিন দেশে আসছে, প্ল্যান করতাছে আমারে নিয়া সুন্দরবন যাওয়ার, ঈদের আগের রাতে একসাথে আড্ডাইলাম। হাসানের কাছ থাইকা জানলাম, কান্তার বিয়া হইয়া গেছে। কলির কোনো খবর আমার মতো সেও জানে না। । দেবাশীষ দেবু, যে আমার কলেজ বন্ধু আছিলো, তারে একদিন আমি কিনব্রীজ থাইকা ধইরা নিয়া প্রান্তিকে আসছিলাম আমাগো সাথে আড্ডা দেওয়ার লাইগা, সে প্রান্তিক পর্ষদ নামে একটা সংগঠন কইরা এখনো প্রান্তিক নামটারে বাঁচাইয়া রাখছে, নোমান ব্যস্ত হইয়া পড়ছে শেয়ার বাণিজ্য নিয়া, হাসান রাজনীতি নিয়া, দেবু ( দেবোজ্যোতি দেবু) কি করে জানি না, শুধু শহরে হাঁটাহাঁটি করে এইটা দেখি, আর পড়ালেখার প্রতি অদম্য ভালোবাসার টানে এখনো নাকি পড়তাছে ! জামান ( একুশ তাপাদার ) তার সফটওয়্যার প্রতিষ্টান নিয়া ব্যস্ত, ফিল্ম নিয়া চিন্তা করে, প্রান্তিক পর্ষদ নামে সংগঠনে আছে, আবার অনেকে তারে দেখছি এখন বিপ্লবীও কয়, আমার বড় জানতে ইচ্ছে করে, একুশ কি বিপ্লব করতেছে! সজল যুগভেরী আর চ্যানেল এস এ কাজ করে, দেবাশীষ দেবু আর সৈয়দ রাসেলও যুগভেরীতে, কবির য়াহমদ মতিঝিলে বসে স্যুট টাই পইড়া কবিতা লেখেন, বইমেলার সময়ে তারে বাংলা একাডেমী বা শাহবাগে দেখা যায়, রাসেল আহমেদ, আমরা যারে আড়ালে কানা রাসেল কইয়া ডাকতাম, সে কি করে জানিনা, তবে দেখা হয় মাঝেমধ্যে। রুবেল যার নাম আছিলো যার, সে নাকি এখন কুয়াশা হয়ে গেছে! তার সৌজন্যে আমরা এখন গ্রীষ্ম অথবা বর্ষায়ও সিলেটের রাস্তায় কুয়াশা হাঁটতেছে এইটা দেখতে পাই।

খালেদ, আমার কলেজ বন্ধু, ইউনিভার্সিটি বন্ধু, প্রান্তিক বন্ধু... সে বড় অসময়ে পৃথিবী ছাইড়া গেল। তারে আমি শেষবার দেখতেও পারি নাই। এই দুঃখটা আমার সারাজীবন নিজের মাঝে থেকে যাবে। আরেকজন চলে গেলেন অসময়ে, তিনি সচল ছিলেন, সিলেটে নাটকের প্রিয়মুখ, আমাদের সাথে কোরাসে গান গাইতেন, স্বপনের দোকানে বসে আড্ডা মারতেন, রাজীব দেব মান্না, দাদা তোমারে ভুলি কেমনে ?

প্রান্তিকে গেলে এখন দুঃখ হয়, এখানে এখন বিশাল সব বিল্ডিং, ছাত্রদলের পান্ডারা আড্ডা মারে, একদিকে মাটি ফেলে রাখা, একদিকে স্তুপ করে রাখা ইট... স্বপনের দোকানের কোনো অস্তিত্ব নাই, স্বপনও যে পৃথিবীতে আর নাই! নাটকের মহড়া নাই, পাইলটের দাঁত কেলানো হাসি দেখিনা, খুব সময়েই বুঝি বড় হয়ে গেছি ! প্রান্তিক নিয়া আর ভাবতে ইচ্ছে করে না, ভাবলেই খারাপ লাগে, কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়, কিন্তু আমি জাগাইলাম, মাঝে মাঝে একটু বেদনা জাগাইতেও যে বড় ভালো লাগে, আনন্দ লাগে !

আমরা বন্ধুরা মিলে ঈদের পরদিন প্রান্তিকে গেছলাম, কেমন যেনো ঘুমিয়ে আছে প্রান্তিক, নাটকের মহড়া নাই, স্বপনের দোকানের আড্ডা নাই, ধূলো উড়তাছে শুধু...


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

সিলেটিদের হিংসাই!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জাহামজেদ এর ছবি

হিংসান কেন, আই নো জানি, আন্নে কন দিহি ?

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তিথীডোর এর ছবি

এক জাফলং-ই তো যথেষ্ট...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

বাউলিয়ানা এর ছবি

হ! রিকাবি বাজার- আল্পাইন চৌহাট্টা থেকে টিলাগড় এমসি কলেজ সবই আমাব মনে করায়া দিলেন।

ভাইজানের পড়াশুনা কি এমসি কলেজে? আমি অবশ্য বেংগলী, কাজের খাতিরে যাইতাম মাঝে মাঝে। আর আড্ডাইতাম এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে-সে বড়ই সৌন্দর্যের দিন আছিল।

জাহামজেদ এর ছবি

কোনো এক কালে ছিলাম ! কিন্তু ঐ সময়টাকে আর মনে করতে চাই না, স্মৃতি এসে কষ্ট দেয়, মনের ভিতরে জ্বালাপোড়া করে !

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ভাইরে, তোমার এ লেখা অনেক ধূলো উড়ালো নাকি ধূলোপড়া অনেক স্মৃতিতে ঝড় তুললো বুঝতে পারছিনা।
শহর সিলেটের কয়েক প্রজন্মের মানুষের সংস্কৃতিবোধের জন্ম এই ছোট্ট জায়গাতে। জায়গাটা নেই আর, হয়তো একটা শহরের সংস্কৃতির মরে যাওয়ার মেটাফোরও এটা।
দেশ থেকে বেরুনোর পর গত ছয়বছরে অনেকগুলো চেনামুখ হারিয়ে গেছে, যাদের এতো তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা ছিলোনা। নাট্যগুরু শফিক আহমেদ জুয়েল, তরুন শিল্পী শাহ আলম, আড্ডার কেন্দ্র স্বপন, বন্ধু রাজিব দে মান্না- কোন মানে ছিলোনা এদের এভাবে চলে যাওয়ার।
আমরা যারা বেঁচে আছি তারা ও আসলে এখন আর নেই কিছুতে, অন্ততঃ যেরকম থাকার কথা ছিলো।

মনি'র কথা লিখেছো, ওর পুরো নাম আসিফ মনি। চট্রগ্রামে আছে এখন, নামকরা শিপিং লাইনে। কাজী নজরুলের মতো ঝাঁকড়া চুল নিয়ে ও শহর সিলেটে হেঁটে বেড়াতো। তোপখানা থেকে শিবগঞ্জ, শিবগঞ্জ থেকে প্রান্তিক। ইন্সোমনিয়া আক্রান্ত রাতগুলোতে গিটার থাকতো সঙ্গী। এখন ঐসব বহু দূরের গল্প।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জাহামজেদ এর ছবি

শিবগঞ্জের কথা লেখায়, আপনাদের আশার আলো'র আড্ডার কথা মনে পড়লো, আশার আলো, মণি ভাই একবার বলছিলো, আমাদের বিউটি বোর্ডিং !

লীলেন ভাই'র কথা লিখি নাই, লীলেন ভাই তখন প্রান্তিকে নাটকের মহড়া ঘরগুলোর বাইরে
হাঁটাহাঁটি করতেন আর অনবরত সিগারেট ফুঁকতেন, আমরা একটা আরেকটারে কইতাম, ঐ দেখ্, জয়নাল হাজারীর ফটোকপি !

প্রান্তিক ধূলোয় মিশে যাওয়ার সাথে সাথেই সবাই যেনো আলাদা আলাদা দ্বীপ, শহর সিলেটের সংস্কৃতি পুরোপুরি নির্বাসনে।

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

মির্জা এর ছবি

এ শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু
পালাতে চাই যত সে আসে
আমার পিছু-পিছু

জাহামজেদ এর ছবি

এ শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু
পালাতে চাই যত সে আসে
আমার পিছু-পিছু

এ শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু
পালাতে চাই যত সে আসে
আমার পিছু-পিছু
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

দেবজ্যোতি দাস দেবু এর ছবি

"পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভুলা যায় "।জাকির সত্যি তুই আমাকে নস্টালজিক করে দিলি ।

প্রান্তিকের সেই বড় ক্যারাম বোর্ডটির কথা তোর মনে আছে ? আমার দেখা সবচেয়ে বড় বোর্ড । তুই একজন মানুষের কথা মিস করে ফেলেছিস, সে হচ্ছে আমাদের সেলিম ভাই । যাকে অনেকে পাগলা বলে ডাকতো । চন্দন দা'র সেই আলাল ও দুলাল গান, মান্না দা'র সময় দেখতে মোবাইল বের করা, নীলু দা'র আঁকা সেই অদ্ভুত সুন্দর ছবিগুলো, সুরঞ্জিত সুমন, অলি ভাই, বাবু ভাই(নাহিদ পারভেজ), হিমেল দা, কাকাবাবু (সুজন), হোসেন ভাই, নন্দিনি দেব, পপি আপু, আমাদের সর্ব কনিষ্ঠ বন্ধু রেখা, সন্তুষ দা, সুজাত ভাই, মির্জা সোহেল, মাছুম ভাই, সহ আরো কতো অগ্রজ বন্ধু ।
সে এক দিন ছিলো বটে । ১৫ দিনে ১ বার বসা সেই আড্ডা আস্তে আস্তে ৭ দিনে একবার বসা শুরু করলো । তোর মনে আছে সেই কঠিন কঠিন বইগুলো পড়ে মুখস্থ করে আসা ? সাহিত্য কি জিনিস তা প্রান্তিকে না গেলে হয়তো জানতেই পারতাম না ।
রাকেশ দা'র সেই গ্লাস,প্লেট,কাঠি,টেবিল ইত্যাদি দিয়ে নাটকের মিউজিক করা, চায়ের বিল দেয়া নিয়ে টানা হেচরা । অবশ্য প্রতি বারই বিলটা উজ্জ্বল দা'র উপর গিয়ে পরতো । সবাই মিলে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে দিতে এমন অবস্থা হল, সিলেটের অনেকেই জানত প্রান্তিকে আসলে কিছু ছেলে মেয়েকে পাওয়া যাবে যারা রক্ত দান করে । এখনো মনে আছে, যখন শাহাজালালের মাজারে বোমা হামলা হল তখন কোথা থেকে একদল লোক দৌড়ে এসে বললো প্রচুর রক্ত প্রয়োজন । সাথে সাথে রক্ত দিতে দৌড় । এসিড দগ্ধ একটি মেয়েকে নিয়ে টানা দু'দিন দু'রাত সে কি ছুটাছুটি ! প্রান্তিকের মেলা, সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে কতো মধুর স্মৃতি !
পাইলট ভাইয়ের সাথে কয়েক দিন আগেও দেখা হয়েছিলো,এখনো সেই আগের মতো নতুন কিছু করার স্পৃহা নিয়ে বাবু ভাইদের সাথে আছেন । সংস্কৃতির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার এক জলন্ত উদাহরণ আমাদের এই পাইলট ভাই ।
স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ করে দেয়ায় ধন্যবাদ বন্ধু ।

জাহামজেদ এর ছবি

রক্ত দেয়ার কাহিনী আর বলিস না, মানুষ এখনো ঢাকাতেও আমাকে রক্তের জন্য এসে ফোন করে। আমিও অভ্যাসবশত ছুটে যাই, তারপর জিজ্ঞেস করি, আমার নাম্বার কই পাইছেন, জানায় প্রান্তিকের কেউ একজনের কথা !

তবে আমাদেরকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত খাওয়ানোর জন্য উজ্জলদা আজ এক ইতিহাস !

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

রাফি এর ছবি

আপনার লেখা খুব ভালো পাই।
লেখালেখি চলুক নিয়মিত।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।