চাচা কাহিনী

হাসিব জামান এর ছবি
লিখেছেন হাসিব জামান [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৫/২০০৯ - ৪:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার দাদা খুব কড়া টাইপের মানুষ ছিলেন, দাদী সারাক্ষন ভয়ে তটস্থ থাকতেন। বড়চাচা তার মাকে গিয়ে বলেন,
“মা তোমার এত কষ্ট আমি তো আর সইতে পারি না।”
দাদী পুত্রের মনের কথা বুঝতে পারেন, পুত্র বিবাহ করতে চায়। তিনি বলেন,
“বাবা, তুই তো চাকরী-বাকরী কিছু করলি না। এখন ব্যবসা-বানিজ্য কিছু কর। নাইলে বিয়ে করাই ক্যামতে?”
“মা, আপনে খালি কিছু পয়সা দেন আমারে। দেখবেন কয়দিনের মধ্যেই বস্তায় বস্তায় টাকা আইনা আপনার পায়ের কাছে ফালামু।”
দাদী সেই জামানায় পয়সা পাবেন কই? তিনি তার অতি আদরের পুত্রকে কিছু সোনাদানা দিলেন। বড়চাচা সত্যি সত্যি রাতারাতি আদম ব্যবসা করে ভালো টাকা বানালেন, বিয়ে করে বউ নিয়ে শহরে স্থায়ী হলেন। নবাবী কায়দায় চলাফেরা শুরু করলেন। নামকরা লোকজনের সাথে তার ওঠাবসা, চেহারাও মাশাল্লা ভাল। কবরীর বিপরীতে সিনেমার অফার পেয়ে গেলেন, শুধু সিনেমা বানানোর কিছু খরচ চাচাকে দিতে হবে এই যা। কি কারনে জানি পরে আর চাচার হিরো হওয়া হয়নি, তবে হিরো হাবভাবে চলাফেরা চলতে থাকল। কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যবসায় মার খেয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসলো। দাদীর দুঃখ-কষ্টের কোন গতি হল না।

বড়চাচার অর্থকড়ি কমে গেলেও আরাম আয়েশে কোন কমতি হলনা, বরং আরো জেঁকে বসল। স্থানীয় কলেজে লাইব্রেরীয়ান এর দায়িত্ব নিলেন, শুয়ে বসে যে চাকরী করা যায়। তবে একটা ব্যাপারে পরিবর্তন আসল। বেশ ধার্মিক হয়ে গেলেন তিনি। সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে প্রতিদিন ফযরের নামাজ আদায় করেন এবং এ সিস্টেমে কোন সমস্যা নেই বলেও সবাইকে জ্ঞানদান করেন।
বড়চাচা নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান লোক বলে মনে করেন। তিনি তার ছেলেমেয়েদের সবসময় বলেন, “আমি তোদের টাকা-পয়সা ধন-সম্পদ তেমন কিছুই দিতে পারবনা। তবে আমি তোদের ভাল ভাল বুদ্ধি দিতে পারব।”

একবার তার বুদ্ধির খেসারত দিতে হল বাবাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা ছিলেন ক্লাশ নাইনের ছাত্র। যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে চাচার হঠাৎ ধারনা হল দেশের সব ভাল ভাল চাকরী সবাই পেয়ে যাচ্ছে। তাই তার ছোটভাইকে উপদেশ দিলেন সেবারেই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে দিতে। কারন তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ না করলে দেশে কোন চাকরী আর বাকী থাকবে না। বড়ভাইয়ের কথা শুনতে গিয়ে বাবা খারাপ রেজাল্ট করে বসলেন। এখনো সুযোগ পেলেই বাবা সেই আফসোস করেন।

খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে চাচার খ্যাতি দারুন, এই প্রায় ষাট বছর বয়সে তিনি আমাদের মত দু-তিনজন ইয়াং যুবকদের চেয়ে বেশী খেতে পারেন। কুরবানীর ঈদের পরদিন দুপুরে পারিবারিক আড্ডায় হঠাৎ বললেন, “আজ সকালে খাসীর পায়া দিয়ে যে নাস্তাটা করলাম এত সুস্বাদু হইসে যে কি আর বলবো! বেহেস্তেও এই খাবার পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।”

ড্রিঙ্কসের উপর তার মারাত্মক টান, একসময় অনেক রকমের পানীয় খেয়েছেন বলেই হয়ত। এখন সেভেন-আপ দিয়ে চাহিদা মেটাতে হয়, একদিন আমাকে দিয়ে টাইগার এনার্জি ড্রিংক আনিয়ে খেলেন, বললেন,
“শরীরটা তো আগে ঠিক রাখতে হবে, কি বলিস?” হাসি


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভাইরে, আপনে লেখেন জোশ করে। সেই যে ডেঙ্গু কাহিনী পড়ে আপনার লেখার ফ্যান হইছি, এখন তা আরো জোরে বনবন করে ঘুরতেয়াছে। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসিব জামান এর ছবি

ধূগোদা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। হাসি
কি কন এইসব !! আমি তো আপনার পাংখা চোখ টিপি
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

মজাক পাইলাম হাসি
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

হাসিব জামান এর ছবি

মজাক দিতে পেরে ধইন্য হাসি
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেখাটা অসম্পূর্ণ মনে হলো। আপনি ফাঁকি মেরেছেন।

হাসিব জামান এর ছবি

ফাঁকি মারার মত বড় লেখক যদি হইতে পারতাম !!
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

মূলত পাঠক এর ছবি

হচ্ছিলো চমৎকার, কিন্তু মাঝপথে মনে হলো সেই চা-বৃত্তান্ত, এবং লেখক ফুরুৎ!

হাসিব জামান এর ছবি

ঘুম আসতেছিল। লেখাটা দিয়েই ঘুমিয়ে গেলাম। গরমকালে খালি ঘুম পায় রে ভাই। মন খারাপ
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

এত ফাঁকি দিতাচস ক্যান? ব্লগও ল্যাখস না, কিলাসের(সিভির পেটেন্ট) পড়াও পড়স না , তুই করিসটা কি সারাদিন? এই সামনের দুই দিনের বন্ধের পরদিন মানে শনিবারে সচলে আইসা য্যান দেখি মস্ত বড় একটা ব্লগ ফাঁইন্দা বসচস। নাইলে কিন্তুক খবর আছে কয়া দিলাম।
......................................................
পতিত হাওয়া

হাসিব জামান এর ছবি

কিলাস!!! খেক খেক খেক। তোর মতন পিছনের বেঞ্চে বসে ফাকতালে সটকে পড়ি না, এখনো সামনের দিকে বসে কিলাসটেস্টের পড়া পড়ি, কাজ না থাকলে ঘুমাই। হাসি

বড়লেখা কি তোর উইং এর পাশের আমগাছে ধরে যে চাইলেই দিয়া দিবো।
অটঃ সব্যসাচী লেখক ইম্রুল্কায়েস শেষ লেখা দিয়েছেন মাস খানেক আগে।
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

কিলাসে যে একেকজন মহাগুরু "উত্তরাধুনিক" ক্লাস নেন তাতে সটকে না পইড়া কোন উপায় আছে? সটকে পড়তে বুকে বল লাগে, বুঝলি?

বড়লেখা উইং এর পাশের আমগাছে ধরে না। পাঠক বা ভক্ত চাইলে ধরবে বলে আশা করা যায়।

অটঃ ইম্রুল্কায়েস ইনি কিডা?
উনি বোধহয় শ্যাস! মাথায় জিনিস কম ছিল তো, তাড়াতাড়ি বোধহয় সব ফুরায়ে গ্যাচে । ইনারে গুঁতায়ে আর লাব নাই, নিজের লিকা লিজে লিকেন।

আরেকটা পিরাইভেট কতা: আপনে যে সাত ঘন্টা ধইরা সচলে বইসা আছেন নাসিফ জানে? ক্যামেরা বানাইবো কিডা? মামুতো ইম্রুল্কায়েসরে কাজকাম দিয়া ভাগছে।
......................................................
পতিত হাওয়া

হাসিব জামান এর ছবি

ইম্রুল্কায়েস শান্তিতে ভল্গিং করতে দিলো না। ওরে বান মারা হউক।

নাসিফ কি জানে, লেখক মাত্রই প্রোগ্রামার চোখ টিপি
ইম্রুল্কায়েসের ক্যামেরা মাইরা দেয়ার তালে আছি। উনি কি হেল্পাইবেন?

অটঃ কাচাবাজারে রেগুলার গেলে মাথাত কিছু তো আসার কথা।
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ লাগল। কিন্তু অসম্পূর্ণ মনে হলো। হঠাৎ করে থামলেন কেন? বেশ ভালো চলছিল তো...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনের চাচার সাথে একবারে পানাসরে বসা দরকার । অভিজ্ঞ মানুষ ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।