কারিগরনাম-৯৮

অম্লান অভি এর ছবি
লিখেছেন অম্লান অভি [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৫/১২/২০০৮ - ৭:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিন ভর কাজ করতে করতে পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে ফিরে চলে কাবিল। কাবিল কাজ করে একজন উকিল এর সাথে সহযোগী হিসেবে। দিনান্তে কোট থেকে ফিরে। সন্ধ্যায় আবার যেতে হয় উকিল স্যারের বাসায়। তারপর রাতে ঘরে এসে সেই নিরালা নিবাস। আবার সকাল কাজের তাড়া আর তাড়াহুড়া তৈরী হওয়া। এই চলে বছর জুড়ে। এখন ডিসেম্বর মাস.........তাই ছুটির আমেজ। নিজ বাড়ীতে সংসার নিয়ে। এক বিকালে চায়ের দোকানে বসে মনের অজান্তেই তার জীবন চলার গল্প শুনি তার একটি উপাংশ-'বিচারক'
নরু মিয়া প্রধান জজ ভালো মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। দিনের কাজ প্রায়ই শেষ করে ঘরে ফেরেন। এমন সৎ যাকে দেখলে আর দশজন শ্রদ্ধায় অবনত হয়। সেই নরু মিয়া বাবা মায়ের সাধ ও সাধ্যে মিলন ঘটিয়ে এই আসনে বসেছেন। নৈতিকতা আর কর্মনিষ্ঠ জীবন যাপন। এরই মধ্যে তার ঘোরা হয়েছে অনেক জেলা। দেখা হয়েছে অনেক মানুষ। জানা হয়েছে প্রাণ আর প্রাণ প্রিয় অনেক রসনা। কিন্তু তার খ্যাতি অন্য খানে তার বিচারিক কাজে সে সত্যি পার্থিব্য আল্লাহর প্রমাণ সাক্ষি। কথায় বলে উপরে আল্লাহ-ভগবান আর নিচে যার কাছে দাঁড়িয়ে সেই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ গুলি নিজ নিজ ধর্মানুসারে ছুঁয়ে শপথ করা হয়, তিনি তাঁরই পরে। সেই মহান কাজ তিনি করেছেন প্রায় জীবন জুড়ে একটি বিচার ছাড়া।
ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকায় তখন তার কার্য্যালয়। জীবনের শেষ প্রায় এরপর বদলী আর পদন্নতি-যাবে রাজধানীতে তাই মনের অজান্তে পুষে রাখা রাজা হওয়ার ইচ্ছা আর সাধ ও সাধ্যে মিলন হাতের নাগালে আসতেই তুলে নিলেন হাতে।
ভাওয়াল রাজার সম্পত্তি। এখন সরকারী জমি, বন বিভাগের আওতায়। কিন্তু কিছু ভূমি দর্স্যু প্রথমে জন স্বার্থে কিছু গরীব মানুষকে আশ্রয় দেয় সেই পতিত বন ভূমিতে। তারপর জোড়পূর্বক জমির ভোগদখলি মালিক দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কিনে নেয়। বলতে গেলে পানির দামে, কখনো চোখ গরমে- নিজের পরম যতনে লালন করা ভিটা মাটিটুকুর প্রাপ্ত স্বাদ ছাড়তে হয় ওই অসহায় মানুষগুলোকে। যারা ভেবেছিল একদিন আমাদের নিজেদের আশ্রয় হলো।.............
কি হবে এখানে? প্রথমে একটা সাইন বোড ঝুলিয়ে দেয়া হয়-"........কোম্পানী লিঃ"। কিছু দিন পরে ছোট একটি মামলা সরকার বাদী হয়ে বন বিভাগের পক্ষে করে। তারপরই আখেরে গোছানোর বাগানে বীজ তলা হয়- সেই ভূমি দর্স্যু আর আল্লাহ-ভগবানের পরে কালো পোষাকে ঢাকা ওই মানুষটির জন্য। এতদিনের বর্মে ঢাকা মানুষটি ফানুস হয়ে যায় তার রাজা হওয়ার স্বপ্নের কাছে। আইনের ফাঁক গলিয়ে সরকারী জমি হরে যায়-'কানঝুন ফ্যাশান ওয়্যার হাউজ লিঃ'। কয়েক লক্ষটাকায় কেনা জমি কোটি খানেক টাকা বিচারিক উপঢৌকন দিয়ে কয়েক কোটি টাকায় হাত বদল করে বিক্রি হয়।
কাবিল তার কথার শেষে স্টার সিগেরেটে টান দেয় কিন্তু আগুন তখন নিভে গেছে। ধুস শালা-এই উচ্চারণে ঘৃণা আর ধিক্কার নিজের উপর- আমরা ঘুষ খাই মক্কেলকে সাবের কাছে নিয়ে যাই দশ-বিশ আর পঞ্চাশ টাকা চাই।?।

(কাবিলকে প্রশ্ন করেছিলাম-তোমরা মানুষকে শুধু ভুল পথ দেখাও আর সেই উকিল দিয়ে বিচারকদের বিভ্রান্ত কর কেন।?। উত্তর গুলো ছিল তার আঞ্চলিক ভাষাতে। কিছুটা সাজিয়ে সারমর্ম তুলে ধরলাম মাত্র। এই সময় কাটানোর পর থেকে শ্রদ্ধাবোধ আর একবার শান দিতে হবে। ইচ্ছা থাকল 'এ্যাভোকেট' নিয়ে বাক্য গুলো সংকলন করব)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।