খোলা চিঠিঃ সুখ ও অসুখের

অম্লান অভি এর ছবি
লিখেছেন অম্লান অভি [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৮/০২/২০১০ - ৯:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি কাজে ভিড়ে হারিয়েও নিজের কাছ থেকে এমন দূরে গিয়েছিলাম স্মরণ যোগ্য অতীতে ২০০৭ সালে। যে সালে ভাগ্যবান সাত আমার জন্য উপহার নিয়ে এসেছিল- এক মৃত্যুর। গতকাল আমার দিদির মৃত্যুর সেই দিন গেল। ফেব্রুয়ারীর সাত তারিখ আমার কান্নার স্মারক দিবস। কিন্তু প্রতিটি সুখে-অসুখে আমার দিদি আমার প্রেরণা আর খাকতির মাঝে শক্তির আর সাহসের প্রতিছবি।
হঠাৎ হাত বাড়িয়ে না পেয়ে ফিরে আসার সময় মনে হয়েছে যদি দিদি থাকত। ক্লান্ত সময়ে মনের অজান্তেই মুঠোফোনে ওর একটু শব্দের আশায় কানে উঠে এসেছে জামাইবাবুর শব্দ যা আমাকে ফিরেয়ে দিয়েছে সম্বিত।হারিয়ে যাওয়া শুন্যতায় আমাকে গুনতে হয় প্রতিটি প্রহর। কখনও হারিয়েছি অনুভুতির সুখস্মুতি, কখনও স্মৃতির অনুষ্ঠান মালা আর কখনও অনেক কষ্টে পাওয়া সম্পদের আকড় বই। এত হারানোর মাঝে জীবন হারানোর কষ্টের আর অনুভবের কিছুই নেই।
এই ফেব্রুয়ারী আমি তো হাসি, হাসে আমার চর্তুদিক। তবুও মনের ক্লান্ত সময়ে নিজের অবসরে আমাকে কাঁদায় যে আমাকে হাসিয়েছে তার সারাটা জীবন। এখন 'ছিন্ন পাতায় সাজাই তরনী একা একা করি খেলা' গান গাইতে ইচ্ছে করে। তবুও আমি একা নই, নই একা আত্মীয়ে, নই একা বন্ধুতে, নই একা অফিসে। আমিই কি শুধু খুজি তাকে, যে তার সাহচয়্যের প্রতিটি সত্তাকে সমান ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখত সারা সময় তারাও খোজেঁ। তারাও কাঁদে, কাঁদে সে যে হয়তো তাকে কাঁদিয়েছে জানতে বা অজানতে।
তাই হারিয়ে যাওয়ার ভয় আমাকে আর তাড়িয়ে বেড়ায় না তবু গত কয়টি দিন আমি ছিলাম এক ভিত সন্ত্রস্ত মানুষ-খুঁজতে গিয়ে আমার ভাগ্নাকে যে হারিয়ে গিয়েছিল অফিস শেষে। অবশেষে তাকে পাওয়া গেল তিন রাত শেষে। রাজধানী থেকে দূরে অন্য এক শহরে। আছে অক্ষত মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে। গতকাল তাকে মেডিক্যাল পরীক্ষায় সুস্থ বলা হয়েছ। স্বস্তির এক বার্তা আমার স্মারক কাঁন্নার দিনে হাসির। ও বেঁচে থাকলে এমনি উৎকন্ঠায় কাটাত সেই তিনটি রাত এবং প্রাপ্তির উচ্ছ্বাসে সবাইকে জানাতো যারা জেনেছিল রনি হারিয়ে গেছে।
হায়! দিদি আমি আজ তোকে জানাই- গত মাস দুই আমি ছিলাম তোর ভাই আর আমার দাদার নতুন জীবনে মাঙ্গলিকতায় ব্যাতিব্যস্ত সংসারী মানুষ।ওর বিয়ে হয়েছে গত ২১ জানুয়ারী'১০। গা ঝাড়া দিয়ে আবার যোগ দিচ্ছিলাম সামাজিকতায় সেই সময় আমাদের রনি অফিস থেকে ফিরতে গিয়ে ফিরল শেষে অনেক গুলো প্রশ্ন নিয়ে। তিন তারিখ রাত থেকে ছয় তারিখ ভোর আমরা ছিলাম এক ঘোরে মধ্যে। কি যে অকৃত্রিম সহযোগিতা করেছে আমাদের পরিচিত ও ঘটনায় পরিচিত জনেরা তার ধন্যবাদ দেয়ার সময়টুকুও পাইনি এখনও।
ভালো আছি দিদি বেশ ভালো আছি। আষাঢ়ের ত্রিশ অথবা ছাবিশ এখন আর ঘটা করে আসে না তোর রেখে যাওয়া দিনাজপুরের ঘরে। আমার জন্মদিন এসেছে গত তিনটি বছর যাবার দিন কয়েক আগে যে স্নেহের হাতে আঠারোকে পালন করেছিলি তুই তা আর পাব না। তোর মত আদর সোহাগে কেউ বেঁধে রাখেনি তাতে কি তোর ভাইসোনা এখনও আছে তোর রেখে যাওয়া পৃথিবীতে। ভাবতে পারে না দেখা বাণিজ্য মেলা'১০, কম্পিউটার মেলা'১০ আর চলে যাওয়া সাত দিনের বই মেলা;১০ এর কথা। দিদি ভালো থাকিস সেইখানে যেখানের ভালো বা খারাপের কোন অভিব্যক্তি পাব না আমার সত্তায়। শুভ অনেক বড় হয়েছে চাকরী করে আর দীপ এখন ভেটেনারীর ছাত্র- তোর দুই নয়নের মনি। আমি তোর তৃতীয় নয়ন কান্নার অশ্রু ধারা যে নয়নে বয় না কখন।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

প্রকাশিত
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।