গল্প কি উপন্যাস নাকি অন্য কিছুঃ সুপাঠ্য 'জাহাজী যাযাবর'

অম্লান অভি এর ছবি
লিখেছেন অম্লান অভি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২০/০৩/২০১০ - ৮:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উপহারের একটা অন্য রকম অনুভূতি আছে। তাই বই মেলা থেকে কেনা বইগুলো পাশে সরিয়ে রেখেই গোগ্রাসে খাচ্ছি উপহারের বই। তবে যে বইটা গত পরশু রাতে শেষ করলাম তার আবেশ রাখতে ইচ্ছে করছে এই আন্তজালিক অবয়বে। কিন্তু তাতে বাঁধা অনেক আমার আইডিনটিটিটা খুব একটা শক্ত না। তাই প্রায়ই লেখা মুছে যায়। তার উপরে লেখার ধরন অনেকটা ঠিক না বোঝার মতন (সুকুমার সহাঃ)
বেশ কিছু দিন আগ থেকে একটা তাড়া অনুভব করছিলাম। সেটা বই নিয়ে আসার। লাবণ্য আপার সাথে দেখা করার কিন্তু তা হয় কালে ভদ্রে। ব্যস্ততা আর দূরত্ব দুই বাঁধ সাধে দেখা না হওয়ায়। এবারও তাই একুশের বই মেলার তাড়ায় দেখা হলো গত ১১ মার্চ। মনে হলো চলচ্চিত্র ধাচে প্যাকেট দেয়া নেয়ার একটি দৃশ্য রুপায়িত হলো কনকর্ড আর্কেডিয়ার সিড়ির শেষের রাস্তার ধারে। একটি প্লাষ্টিক মোড়ানো প্যাকেট। হাতে দিলেন লাবণ্যআপা আর তাতে দুইটি বইয়ের চারটি কপি। বই দুটির লেখক আনিস হক। দুটো আমার বাকি দু'টা জুলফিকার ভাইয়ের। আমার দু’টির একটায় লেখা অভিকে শুভেচ্ছা লাবণ্য আপা। অন্যটিতে অভিকে বইমেলার শুভেচ্ছা লাবণ্য আপা।
আমি বেশ কিছু বই কিনতে পারিনি তার মধ্যে আনিস হক একজন। যার লেখার পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হয়ে উঠেনি। বলা যায় মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। তারচেয়ে বড় চমক চোখ ধাঁধালো বইয়ের পাতা উল্টিয়ে। কৃতঞ্জতা স্বীকার করা হয়েছে পরিচিত দুই জনকে মাহবুব লীলেন এবং শাজাহান চাকলাদার (জনান্তিকে বলে রাখি তিনিও লেখক-চৌপরদিনভর একটি ভ্রমণ না জীবনকাহীনির)। আসলে কি বলতে এসে কি বলছি।
বইগুলো পেয়েই বেশ কিছুদিন অন্য সব কাজে বেশী ব্যস্ত ছিলাম। তাই সেভাবে পড়ার আমেজ তৈরী করতে পারছিলাম না। কিন্তু হাতে কেন জানি ‘জাহাজী যাযাবর’ বই তুলে নিলাম। মনের কোন সু্প্ত চিন্তায়। কোন রকমের তাগিদ ছাড়াই। আমার ভূমিকা ছাড়া কোন কিছু শরু করতে ভালো লাগে না। তাই বই পড়ার সময়ও ভূমিকা পড়ি আগে।
ভূমিকা প্রায়শঃ অতি বক্তব্য থাকে অথবা অন্য কথার ফুলঝুড়ি। তবে 'জাহাজী যাযাবর' তার থেকে একটু ভিন্ন। বেশ সাদা মাঠা কথায় সূচনা। ভূকিকার চৌম্বুক অংশ বলতে এককথায় ভূমিকাটাই। ভূমিকা যে নিয়ে যেতে পারে পাঠককে ভিতরের দিকে লেখার রস উপভোগে- পৃথিবীর অবয়ব হাতড়ে দেখার এক অনিরুদ্ধ শপথ দৃপ্ত চার যুবক। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তাদের ভেতর মুক্তির যে উদগ্র আগুনর উচ্ছাস উসকে দিয়েছিল, সেটাই ছিল তাদের মূল পাথেয়।......সে স্মৃতির উপর ভরসা রেখেই সেসব কাহিনী গল্পের মত একনাগাড়ে সাজিয়ে দিলাম সুহৃদ পাঠকের কাছে।
এই ভূমিকা পার হয়ে চোখে পড়বে সূচি ষোলটি পর্বের নাম থরে থরে সাজানো। পর্ব শুরু হয়েছে 'ঢাকা নগরের কোন এক ব্যস্ত দিনে পাড়ার ছোটবেলা বন্ধু শাজাহান আর আমি কাওয়াসাকিতে শহরেই আরেক বন্ধুর বাড়িতে আড্ডার পথে। হঠাৎ পেছন ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- মোটর সাইকেল একবার পৃথিবী ঘুরে বেড়ালে কেমন হয়?’
গল্প না বলে পর্ব বললাম কারণ প্রথম পর্বে উসকে দেয়া চেতনার স্বপ্ন শেষ পর্বে-....এক সময় একবছরের স্থায়ী ঠিকানা পেলাম। শুরুতে এই এক বছরের স্থায়ীত্বেই আমাদের মতো বিদেশীদের জন্য স্বপ্নের মতো। দেড় বছর ধরে শহরে বন্দরে ঘোরাফেরা আমার। এই ঘোরাফেরা ও স্রোতে ভাসার মাঝে রোমাঞ্চ আর আনন্দ থাকলেও একটি স্থায়ী ঠিকানার জন্য উন্মুখ থাকত মন। এই স্থায়ী একটা ঠিকানার সাথে নায়কের দেখা হওয়ার মাঝে কত বার কত রকম সাহায়্য-আশ্বাসের বাণী আলেয়ার দেখা মিলেছে। কেউবা বারি ভাই হয়ে, কেউবা বন্ধুর বান্ধুবী আর স্বামী হয়ে, থার্ড আর সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হয়ে, কেউবা সহৃদ সহযাত্রী হয়ে শীতের রাতে কম্বলের ওম শরীরের সাথে ভাগাভাগি করে।
মলাট বন্দি ভ্রমণকাহিনীর বইটিতে পরতে পরতে শুধুই চকম আর চকম গুলি পর্বাকারে এক একটি নাম দিয়ে সাজানো হয়েছে 'অচেনা মাটির গন্ধ' থেকে মিউনিখে নোঙর' মোট ষোল পর্বের ষোল নাম। নাম গুলিও বেশ সাযুজ্যপূর্ণ মনকাড়া।
পর্ব গুলি বেশ তাড়িত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অর্থাৎ শেষ খুঁজে পেতে। অনেক দিন পর আপনি চল ধাচের একটা বই পড়লাম। কখনও হাসলাম, কখনও সভ্যতার বাঁক দেখলাম, কখনও আচার আর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট। বেশ ভালো বর্ণনার এক প্রান্থ থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার স্রোতাবেগ যাত্রার নোঙর করার বর্ণনা।
বেশি কথা বলছি তাই না? আর একটু বলি-অভিযাত্রী হিসেবে লেখক যখন ছিলেন তখন লক্ষ্য ছিল গন্তব্য পৌচ্ছানো। ঠিক তেমনি লেখক হিসেবে তার অর্জন পাঠকে সহযাত্রী করে সাথে নিয়ে যাওয়া। সেখানে আনিস হক এই ক্ষুদ্র পাঠকের কাছে বেশ মহিয়সী ও সাবলীল। উপন্যাস বা গল্পের সঙ্গার সংঘাতে না গিয়ে বলি একটি গল্পমালার রচনা সম্ভার 'জাহাজী যাযাবর' যাকে 'মালা' হিসেবে পূর্ণাঙ্গভাবে পড়েই তৃপ্ত হবে পাঠক।

বই- জাহাজী যাযাবর
লেখক- আনিস হক
প্রকাশক- আসরার মাসুদ, প্রগতি পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ-ধ্রুব এষ
প্রকাশকাল-২০১০, মূল্য-১২০টাকা

(হাতে আছে তার লেখা অন্য আর একটি বই যা উপহারের অংশ 'অন্ধরাতের ঘোড়া' অনেক মিল আঙ্গিক সজ্জার ও গঠনের ষোড়শের মোহ এখানেও বিদ্যমান তাই ষোলটি গল্প এখানে বর্তমান। এটি একটি গল্পের বই প্রতিটি আলাদা আমেজে সক্রিয় অন্য জগৎ। পড়েছি খানিক এখন বন্ধ 'জাহাজী যাযাবর' এর আবেশিত চোখে পড়লে প্রকৃতি রস থেকে বঞ্চিত হব তাই।)


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

এখনো পড়া হয়নি বইটি! পড়ে মিলিয়ে নিবো আপনার অনুভূতির সঙ্গে!
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

তিথীডোর এর ছবি

এ বইটা কিনতে ভুলে গিয়েছিলাম.. মন খারাপ

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

টাইপো!

পড়েছি...লেখকের সাথে অনুভূতি ভাগাভাগি করেছি খানিকটা...বাকিটা কোনও একদিন...

দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।