সান্ধ্য আইন

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: শুক্র, ২৮/০৫/২০১০ - ৭:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাইওয়ে উত্তরদক্ষিণে যায়। জমি যায় পূর্বপশ্চিমে। ছোটাছুটি করে শান্ত হয়। রাস্তা যায়। ঐ নতুন রাস্তা। সাইদ তখন ছোট ছিল। তার বাপ দেখাতে তাকে। আজ তারা কেউ নাই। জমিনের নিচে (প্রায়) শান্তিতে। কেবল একটা দূরাগত বাইপাস বেঁকে আসছে তাদের দিকে। তারা হাত নাড়ে, পাও নাড়ে। কিন্তু যাবে কই?

গ্রাম্য গোরস্তানে সাইদের সঙ্গে আলাপ। মাগরিবের ঠিক আগে আগে। আমি বসে ছিলাম একটা বিরাট গাছের নিচে। খানিকটা ছায়া তখনো অন্ধকারের থেকে আলাদা।

বুঝলেন? না বুঝি নাই। আমি বলি। সেও বলে। মেট্রিক। ইন্টার। ডিগ্রি। ঢাকা শহর। আমিই ফার্স্ট। এই গ্রামে। সাইদ বলে। আর কখনো ফিরতে চাই নাই। যাইতেই চাইসি শুধু। আরো দূরে। দুবাই। লন্ডন। নিউইয়র্ক। পারি নাই। কিন্তু ব্যাংকক যাইতাম আসতাম। লাগেজের ব্যবসা। লটের ব্যবসা। সবই লট। সবাইকেই ফিরতে হয়। বুঝলেন?

সাইদ এসে পাশে বসে। ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা। এই করতে করতে মাটির কথা আমি ভুলি নাই। টাকা করসি। কিন্তু মাটিই তো কিনসি । আর কিসু না। অনেক টাকার লোভ আমি দেখি নাই। তাই কি? অনেকটা স্মৃতি সম্ভবত সে কবরে রেখে এসেছে। অনেক কিছুই মনে পড়ছে না । বাইপাসের খবরটা সে জানত। তাই আগেভাগে কিনেছে। সরকার নিলে ডাবল টাকা। ঝামেলা কম।

শহরের লোক শহরের লোকের সাথে কথা বলে। আপনি তো বুঝেন আমার লিমিটেশনটা। মেয়েটাকে বিদেশি স্কুলে দিসি। ভালো স্কুলে। লিগাল ব্যবসা। সেইটাও করতে চাই। গার্মেন্টস দিতে পারতাম। কিন্তু একা পারতাম না। কাউকে ট্রাস্ট করা কঠিন। তাই জমির ব্যবসা। লিগাল। কিনে কিনে সরকারকে বেঁচি। আগে খালি জানতে হয় সরকার কোনটা কিনবে। লিগাল হইল কিনা? আমি অবশ্য ছোট মাছ। হে হে । হাসি হঠাৎ থেমে যায়। সাইদের মনে পড়ে সে মৃত। আর জীবিতরা বোঝে মৃতদের সীমাবদ্ধতা। এই দুপক্ষে বস্তুত কোনো লেনদেন হয়না।

শহরের জ্যাতা লোক শহরের মরা লোকের সাথে তবুও কথা বলে। নাগরিক ভদ্রতা। এখন সমস্যা কী? মৃত্যুই কি সকল সমস্যার শেষ না? কবরে কী আছে? আপনি তো পুরোটাই এইখানে। এই যে কথা বলেন । হাসেন। ভালোই তো। মরা লোক হাসে। বড়ভাই, সন্ধ্যা নামলে কবরেই যাইতে হবে। কোনো উপায় নাই। কবর।

আমি দূরে কবরটা দেখি। আগরবাতিগুলা মাটির আধা ইঞ্চি উপরে জ্বলছে। ঠিক আধা ইঞ্চি। মেপে দেখতে পারেন। মাপজোকটাই আমার কারবার। সড়ক বিভাগের মেজো প্রকৌশলী আমি। প্রধানত রাস্তা মাপি। তারপরও সারাদিন ধরে কতগুলো মার্কিংয়ের ঝামেলা মিটাতে পারলাম না। বাইপাসটা এই গ্রাম দিয়ে যাবে। সন্দেহ নাই। কিন্তু কোথাও তো একটা ভেজাল হয়ে থাকবে। গোরস্তানের উপরে রাস্তা নেয়ার কথা না।

ধুর। একটা সিগারেট ধরাই। দেখি কোনটা আগে শেষ হয়। আগরবাতি না সিগারেট।


মন্তব্য

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ। এই গল্পটা আবার অন্যভাবে লেখার ইচ্ছা আছে।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অনিন্দ্য,

আপনি নিয়মিত লিখছেন দেখে ভাল লাগছে। লেখালেখির ব্যায়াম চালু থাকুক।

হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

'ব্যারাম' লাগে নাই তো বদ্দা চোখ টিপি
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মামুন হক এর ছবি

মুগ্ধ হলাম!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চমৎকার!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভাল্লেগেছে ... বেশ ভালো

_________________________________________

সেরিওজা

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বেশ ধন্যবাদ হাসি
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

ভাল লাগল।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কথা ছিল। যোগাযোগ ?
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

বইখাতা এর ছবি

আপনার এর আগের দু'টা গল্পও পড়লাম। ভালো লাগলো। তবে জানিনা কেন এটার চেয়ে আগের দুইটা বেশি ভালো লেগেছে। প্রথমটা সবচে ভালো।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এই গল্পটা নিয়ে আমার ভাবনাটা ভিন্ন ছিল। কিন্তু লিখতে গেলে প্ল্যান অনুযায়ী আগানো মুশকিল।

গল্প পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

বাহ্‌ !!
পড়তে বেশ লাগলো ভাইয়া... হাসি

------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

শেষ লাইনটা দিয়ে লেখক কী বোঝাতে চাইলেন জানিনা। কিন্তু শেষ লাইনটার জন্য গল্পটা কখনোই আর ভুলবনা।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কিসু আর বুঝাইতে পারতেসিলাম না, তাই এই লাইনটা লিখে শেষ করে দিলাম আরকি ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ ! দারুন লিখেছেন তো ....
ভালো লাগলো হাসি

সাবরিনা সুলতানা

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।