গ্লানিপর্ব-২

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ১৩/০৬/২০০৭ - ৪:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
ইকবাল সাহেব প্রশ্নকর্তার মুখের দিকে আরেকবার চাইলেন।অফিসে এই ছেলেটার বদনাম আছে।বোর্ডরুমের মিটিঙে অধিকাংশ সময় গন্ডগোল লাগায় ছেলেটি।শুরু হয় আপাত: নিরীহ প্রশ্ন দিয়ে।তারপর প্ল্যানমতো ফাদে ফেলে দেয়।বিরক্তিকর। ইদানিং এই নতুন স্টাইল শুরু হয়েছে।দেশী কোম্পানিগুলো বড়ো হচ্ছে,সেগুলোকে এটা কর্পোরেট আদল দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।এইচ.আর ডিপার্টমেন্ট হয়েছে।লোক নিতে হলে দস্তুরমতো ইন্টারভিউ নিয়ে লোক নিতে হয়।ছোট শালা,ফুফাতো ভাই,বোনের অকম্মা স্বামী এদেরকে চট করে নিয়োগ দেয়া যায় না। দেশী কোম্পানিতে এতো ঢং কিসের।খাল নাই কুত্তা,নাম তার বাঘা। "আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন আমরা ৩ নাম্বার ক্যান্ডিডেটকে নিচ্ছি না।"ছেলেটি প্রশ্নটি আবার মৃদুস্বরে উচ্চারন করে। উত্তর দেন বজলু সাহেব।ঠিক উত্তর দেয়া নয়,পাল্টা প্রশ্ন।"১২ নাম্বারে আপনার আপত্তি কোথায়?" "কোন আপত্তি নেই।কিন্তু স্কোর করেছে বেশি ৩ নাম্বার।'ছেলেটির উত্তর। আহমেদ সাহেব অবাক হয়ে বলেন,"আপনি কি সত্যি ফ্যাক্টরিতে একটা মেয়েকে চাকরি দিতে চান?"তার কন্ঠে স্পষ্ট অবিশ্বাস। ছেলেটি মুচকি হেসে বলে,"ও!৩ নাম্বার মেয়ে নাকি?খেয়াল করিনি তো।"গলায় বিদ্রুপের সুর। ইকবাল সাহেব বুঝেন,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে একটু পরে।তিনি সামাল দিতে চেষ্টা করেন।"দেখুন,আমাদের প্র্যাকটিক্যাল হতে হবে।রোজ রোজ গাজীপুর যেতে পারবে একটা মেয়ে?" "কেন পারবে না।অফিস কিন্তু গ্রেড ১ থেকে ৫ পর্যন্ত সবার জন্য মাইক্রোবাসে পিক ড্রপের ব্যবস্থা করবে।আর আমরা নিয়োগ দিচ্ছি গ্রেড ৩ এ।" আহমেদ সাহেবেরও মাথা গরম বলে বদনাম আছে।তিনি একটা কদর্য ইঙিত দিতে চেষ্টা করেন।"তা,মেয়েটি কিন্তু সুন্দর।" ছেলেটি পিছলে যায়।"সেটা অবশ্য আপনি খেয়াল করেন রে ভাই।এই ক্যান্ডিডেটের থিসিস আছে প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে,প্রজেক্ট রিপোর্টে ভালো কিছু সাজেশান আছে,ইন্টারভিউ ফেস করেছে ভালো,আই.কিউ নিয়ে করা তিনটি প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিয়েছে।সিজিপিএ উপরের দিকে।আমি তো কোন সমস্যা দেখছি না।" বজলু সাহেব আবার মুখ খুলেন,"কিন্তু সে তো একজন মহিলা।তার পক্ষে কি ফ্যাক্টরিতে কাজ করা সম্ভব?অফিস হলে একটা কথা ছিলো।' ছেলেটি হাসি চাপতে পারে না।"হায়ার করব প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার,আর কাজ করবে হেড অফিসে?" আহমেদ সাহেব আবার বলেন,'আপনি বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন না।১২ নম্বর ছেলেটিও কিন্তু ভালো।' ছেলেটি আবার হাসে।"খারাপ বলিনি তো।কিন্তু সে সেকেন্ড হয়েছে।কোম্পানির জন্য আমরা হায়ার করব বেস্ট পারসন।এটাই নিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব।" তারপর ক্রমাগত কিছুক্ষন কথা চালাচালি।কে কি বলেছে নাম ধরে স্মনণ আসে না আর। :মেয়ে মানুষ বেশি কামাই করবে। :কামাই করলে নিয়মমতো একশন হবে।শো কজ,ওয়ার্ণিং ,চাকরি খতম।আগেই কেমনে জানেন কামাই করবে? :কয়দিন পরে বিয়ে করবে ।তারপর বাচ্চাকাচ্চা।চাকরি ছেড়ে পালাবে। :যে কেউ চাকরি ছাড়তে পারে।তখন আরেকজন নেব। :ফ্যাক্টরিতে কাজ চলে গড়ে ১২ ঘন্টা।এতো পরিশ্রম করতে পারবে না। :পরিশ্রম করে যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারে,তাইলে চাকরিও করতে পারবে। :ওয়ার্কারদের নিয়ে কাজ।সামলাতে পারবে না। :ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট দিলে পারবে।খালেদা হাসিনা যদি পুরো দেশটা চালাতে পারে,সে কেন এক হাজার ওয়ার্কার সামলাতে পারবে না। :তাই বলে একজন মেয়েকে নেবার জন্য গো ধরবেন? :গো ধরিনি।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি মেয়েরা এপ্লাই করবেন না।এপ্লাই করেছে।আমি সিভি সর্ট আউট করে ইন্টারভিউ নেবার ব্যবস্থা করেছি,আপনারা সবাই ইন্টারভিউ নিয়েছেন।এখন চাকরি দেবেন না কেন ? ------------------ ক্রমাগত বিষন্ন সময়।ফালতু এই তর্ক।ছেলেটি জানে।বোর্ডে তার পক্ষে কেউ নেই।ভোট হবে ৩ জনের বিরুদ্ধে ১ জন। এই তিনজন মানুষই উচ্চ শিক্ষিত।দুজনের বিদেশী ডিগ্রী আছে ।ছেলেমেয়েগুলো ভালো ভালো স্কুলে পড়ছে,নিজেরা পহেলা বৈশাখে আর বর্ষায় ঘটা করে পার্টি দেন,বেঙল গ্যালারি থেকে দাম দিয়ে ছবি কেনেন,আলিয়াসেঁ শর্টফিল্ম দেখেন।এরা সংস্কৃতিবান,এরা সমজদার,এদের দৃষ্টিভঙি স্বচ্ছ। এদের সঙ্গে তর্ক করে সে কোনদিন জিতবে না।তার চেয়ে ভালো চুপ করে থাকা।যা ইচ্ছা হোক। সবসময়ই এ কথা ভাবে,তারর্পও বোকার মতো তর্কে জড়ায়।সবাই বলে ভাই প্র্যাকটিকাল হোন।জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেটির প্র্যাকটিক্যাল হ্ওয়া আর হয়ে উঠে না... (ফুটনোট:সত্য ঘটনা অবলম্বনে।অকারনেই চরিত্রদের নামধাম পাল্টে দেয়া হয়েছে।)

মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি
ডিসক্লেইমার :গ্লানিপর্ব এখানে শুরু করতে যাচ্ছি।এজন্য গ্লানিপর্ব-২ কে আনলাম।এই লেখাটি সামহোয়্যারে লিখেছিলাম কিন্তু বিরক্ত হয়ে প্রথম পাতায় দেই নি।তখন সামহোয়্যারের পরিবেশ অসহ্য হয়েছিল বলেই শুধু নিজের জন্যই লিখা।তারপরও অল্প কয়েকজন পড়ে কমেন্ট দিয়েছেন।যাই হোক একটু পিছন থেকে টেনেই না হয় শুরু করলাম। (মুরুব্বি :ছবি আসে না কেন?)
ভাস্কর এর ছবি
এইটাতো আমি পড়ছি আগে... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

অরূপ এর ছবি
ঠিকাছে ------------------------------------- রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
ভাস্কর এর ছবি
আপনের ফোনটা একটু খুলেন... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
তাইতো এ্যাটাচমেন্টে নাম দেখা যায়, কিন্তু ছবি দেখা যায় না। ইকবাল ছেলেটা ত্যান্দড়। আমি একসময় এইচআর-এ কাজ করতাম। এক সেকশনে মহিলা টাইপিস্ট পোস্টিং দিলাম। অফিসার না না ওজর আপত্তি তুললেন। বল্লাম, পোস্টিং-এর কাগজের পেছনে লিখে দেন আপনার আপত্তি আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। তো তিনি সাথে সাথে লিখে পাঠালেন, কেন মহিলা টাইপিস্টে তার হবে না। লেখা পেয়েই আমি আধঘন্টার মধ্যে তার নামে বিভাগীয় মামলার প্রস্তাব করে ফাইল দিলাম। নারী কর্মীর প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাবের কারণে অসদাচরণের মামলা। ফাইল উপরে যাওয়া মাত্র ভদ্রলোক দৌড়ে আসলেন আমার রুমে। জানতে চাইলেন, এই রকম কোনো আইন আছে কিনা। আমি দেখালাম। তারপর করজোড়ে মিনতি; ভাই মাফ করেন। ঘরে মহিলা, অফিসে মহিলা; ভালো লাগেনা। তাই বলছিলাম।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি
সব নামধাম কি আসলেই পাল্টেছে? -------------------------- আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি
আপনি না বললেও বুঝতাম, ঘটনা সত্যি। এইটাই বাস্তব। ------ooo0------ বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ..

আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।