তারা আমার বোনটিকে খুন করে ফেলেছে

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ২০/০৬/২০০৭ - ১১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার আরেকজন বোন আজ খুন হয়ে গেছেন।
চট্টগ্রামের এক বেনিয়া পরিবারের যে সন্তানটি লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়েছিল বলে ধারনা করেছিল পাড়ার লোকজন সেই মানুষটি যে তার নরম ফতুয়ার নিচে,সাদামাটা মুখের আড়ালে এক বিষাক্ত সাপ জন্ম দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে এই দেশের গ্রামে গঞ্জে,সেটি বুঝতে পারে নি এই দেশের সাধারন মানুষ।আজ সেই সাপ ছোবল দিচ্ছে এখানে ওখানে,সেই ছোবলে নীল হয়ে যাচ্ছে আমার গ্রাম,গঞ্জ,জনপদ।মরে যাচ্ছে মান্নান মিয়া,ফুলবানু,আফতেরা,ছমির আলি।

আজকের ইত্তেফাক পত্রিকার দুটি খবর দেখুন।
ঋনের টাকার মাত্র দুই হাজার টাকা বাকি থাকার কারনে আমাদের মহান ইসলামী ব্যাংক পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন মেহেরপুরের এক অজপাড়াগাঁয়ের অসহায় গৃহবধু সানোয়ারার কাছে।প্রখর রোদে মাঠে কামলা খেটে এসে পুলিশের খবর পেয়ে লজ্জায়,অপমানে,ভয়ে,দুশ্চিন্তায় মারা গেছেন সানোয়ারা।তিনি তো মরেছেন,কিন্তু পেছনে রেখে গেছেন ৮টি এন.জি.ও’র ঋনের বোঝা।আশাকরি আর কয়েকদিনের মাঝেই সানোয়ারা স্বামী,তার দুই সন্তান মরে গিয়ে বেচেঁ যাবেন।

একজন সানোয়ারার মাত্র দুই হাজার টাকার মৃত্যু আমাদের কাদাঁবে না।আমার দুই কোটি টাকার ঋন আছে র্গামেন্টসের নামে,আমাকে ঘাটানোর সাহস পায় না কোন ইসলামী,হিন্দু কি ক্রিশ্চান ব্যাংক!অফিসের দরজায় বেধে রেখে দেব দেখি কোন শুওরের বাচ্চার সাহস হয় ঋন পরিশোধ না করায় আমার চেয়ার টেবিল নিতে আসে।

তাদের যতো বাহাদুরি সানোয়ারা মনোয়ারাদের সাথেই।নবীজি সুদকে করেছিলেন হারাম,তাই আমাদের ইসলামী ব্যাংক সুদমুক্ত ব্যবসা করে,আর মেরে ফেলে সানোয়ারাদের।আমাদের ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদ সাহেব কেড়ে নিয়ে আসেন সরাইলের পেয়ারা বেগমের ছাগলটি।

আমাদের ভুল শেখানো হচ্ছে।আমাদের ভুল জানানো হচ্ছে।
আমাদের গ্রাম কে গ্রামকে উজাড় করে লুটপাট করছে ড.ইউনূস,ফজলে হাসান আবেদ আর মওলানাদের ইসলামী ব্যাংক।চক্রবৃদ্ধি সুদের ফাদেঁ জড়িয়ে দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মহিলাদের শেষ সম্পদটুকু কেড়ে নিচ্ছে এই সব বেনিয়া জারজেরা।
আর আমাদের মিডিয়া,আমাদের সুশিল সমাজ,আমাদের বুদ্ধিজীবি,আমাদের রাজনীতিবিদ আর আমাদের আরো যতো শহরের কৃমির দল সেই খবর রাখছে না।

ঋন পাওয়া গরীবের অধিকার,এই স্বস্তা স্লোগান দিয়ে তারা তাদের পূজিঁ ঢুকিয়ে দিচ্ছে আমাদের মা বোনদের হেসেলে।মহাজনী অফিসকে মানবতার খোলসে জড়িয়ে তারা কেড়ে নিচ্ছে আমার উঠোনের ফসল,ঘরের ছাগল-হাস-মুরগি,ঘরের ছাউনি,বাড়ির কোনের ছায়া দেয়া গাছ।

কে বলেছে ঋণ পাওয়া গরীবের অধিকার?সুশীল কথার মোড়কে এই কথাটি হচ্ছে লুটপাটের হাতিয়ার।সত্যি কথা হচ্ছে গরীব না থাকাই গরীবের অধিকার।অসহায় গরীব মানুষ কাজ চায়,শরীর খাটিয়ে খেতে চায়,শরীরই তার একমাত্র সম্বল এই কালে।তাকে ডেভিট ক্রেডিটের জটিল হিসেবে ব্যবসায়ী বানানোর নামে লুটে নেবার অধিকার কোন শুওরের বাচ্চার নেই।

হে সুশীল সমাজের বেনিয়া বরাহকূল,গুলশান আর মতিঝিলের কুড়িতলা অট্টালিকা বানানোর জন্য ,শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দামী গাড়ি চড়ার জন্য,কুশন মোড়া বিছানায় তোমাদের স্ত্রী আর রক্ষিতাদের সাথে লীলা করার জন্য আমার মা বোনদের লুটপাট করার খেলা বন্ধ করো।তোমাদের করতেই হবে।

না হলে একদিন গ্রামের এই অসহায় মানুষের ফুসে ওঠা স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তোমাদের আর তোমাদের বংশধরদের।

আর ড.মুহম্মদ ইউনূস,আমাদের গর্বের ধন,আমাদের একমাত্র নোবেল বিজয়ী সন্তান,আপনি একটা কথা মনে রাখুন।

আজকের ইত্তেফাকের পেপার কাটিং আমি এই জমিয়ে রাখলাম।
আপনার সাথে দেখা হবে আমার কোন একদিন।
সে দিন আপনি আমাকে আপনার থিওরিটা ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে।
আপনাকে ব্যাখ্যা করে দিতে হবে কেন ৮টি এন.জি.ও’র ঋণ নিয়েও আমার বোন সানোয়ারা তার দারিদ্র ঘুচাতে পারলো না?
কেন আমার বোনটি ৩৪ বছর বয়েসেই অকালে প্রান দিল?
যদি বুঝিয়ে দিতে না পারেন,আমি তবে আপনার মুখে থু থু ছিটিয়ে আসবো নির্ঘাত।
সেই সময়ের অপেক্ষায় এই আমি দিনগোনা শুরু করলাম।
-----------------------------------------------
ইত্তেফাকের লিংক-১
ইত্তেফাকের লিংক-২


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

ঠিক আছে, বাংলাদেশেও একদিন এই জার-বাজীর মূল উৎপাটন হবে ইনশাল্লাহ

************************
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

ঝরাপাতা এর ছবি

কিছু বলার নেই, অনুভবে রাজ্যের বিষণ্ণতা।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।