পরবাসে পাকমন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: রবি, ০৩/০৬/২০০৭ - ১০:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্ট্রাফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটির ফাইন আর্টস বিভাগের ছাত্র, বাংলাদেশের ছেলে জিয়াউল আবেদীন পলাশ 'জেনোসাইড ৭১' শিল্পপ্রদর্শনীর 'অপরাধে' শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। জানা গেছে, 'বাংলাদেশী-পাকিস্তানী সহাবস্থানকে' সুদৃঢ় রাখার জন্য 'মিটমাটের' চেষ্টাও হয়েছে। আসুন এ সহাবস্থান-সহবাসকে অভিনন্দন জানাই। চিয়ার্স!!!
__________________________
___________________
____________

এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরুটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো। ইন্ডিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ দারুণ সূচনা করলেও কম্যুনিটির মাথা বাংলাদেশের মকসুদ আলী খুব বেশী উচ্ছ্বসিত হতে পারেনি। পারেনি, কারণ খেলার পর যার সাথে আনন্দটা শেয়ার করার কথা ছিল, পাশের ফ্ল্যাটের মুসলিম ব্রাদার, সালিম নাওয়াজ ওরফে সালিম ভাই তখন ভীষণ বিষণ্ন। পাকিস্তান হেরে গেছে আয়ারল্যান্ডের কাছে।

ফয়সালাবাদ থেকে আরো বিশ বছর আগে এই পরবাসে এসে শেঁকড় গাঁড়ার সময় নি:স্ব সালিম ভাই খুব বেশী কিছু না আনলেও ক্রিকেটের জন্য বিশাল এক মন নিয়ে এসেছিলেন। জাভেদ মিয়াদাঁদ, ওয়াসিম আকরাম আর ইমরান খাঁনের বিশাল বিশাল পোস্টার তার ড্রয়িং রুমে। অন্যদিকে দেশের বাইরে এসে নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মকসুদ যখন কিছু একটা করবো করবো ভাবছে তখন সালিম ভাই ছিলেন বড় ভাইয়ের মতো। কত্তোদিন দুপুরে-রাতে সালিম ভাই ডেকে ডেকে খাইয়েছে, হালাল মুরগীর ডানাটা কিংবা স্যামন ফিশের লেজটা প্লেটে তুলে দিয়েছে যত্ন করে। আলাপ জমেছে ক্রিকেট নিয়ে। ক্রিকেট মানেই সালিম ভাইয়ের টিভি রুম। ইনজামামের ছক্কা দেখে মকসুদ যখন চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে চিৎকার দেয়, সালিম ভাই তখন মকসুদের গ্লাসে আরেকটু ব্ল্যাক লেভেল ঢেলে দেয়।

ক্রিকেট কিংবা তলানীর শরাবের চেয়েও আরেকটি কারণে সালিম ভাইয়ের বাসা মকসুদের কাছে এক অদম্য আকর্ষণ, সালিম ভাইয়ের বৌ। আফসানা ভাবী পেশোয়ারের মেয়ে। ভাবীকে দেখলে মকসুদ নিজের মাঝে অন্য রকম এক শিহরণ অনুভব করে, বুকের ভেতরের শিরশির করা ঢেউটা তলপেট - হাঁটু ছাড়িয়ে যায় পায়ের তালুতে। সালিম ভাইয়ের গোলগোল চোখ দুটোকে ফাঁকি দিয়ে মকসুদের চোখ তখন আফসানা ভাবীর রেডরোজ মাখা কপাল, খাড়া নাক, নাকের দু'পাশে হাসির ভাঁজ পেরিয়ে ধারালো চিবুকে গিয়ে থামে। উঠতি কৈশোরে যাত্রাপালার এক্সট্রা ড্যান্স দেখে মনের ভেতর জন্ম নেয়া অনুভূতিটা জেগে উঠে আবার। নাকে তখন কাশ্মির বনস্পতির চিকেন টিক্কা মাসালা আর আলু পারাটার ঘ্রাণ আসলে মকসুদ স্বাভাবিক জগতে ফিরে আসে।

এবারও সেরকম উল্লাস হতে পারতো, ওল্ড স্ম্যাগলারের ফোর ফিফটি এমএল বোতল শেষ হয়ে যেতো নিমিষে। পাকিস্তান হেরে সব ওলট-পালট হয়ে গেলো। সালিম ভাইয়ের সাথে দেখা করার সাহস পায় না মকসুদ। অনেকদিন আফসানা ভাবীকেও দেখে না। মকসুদের অপেক্ষাটা খুব দীর্ঘ অবশ্য হলো না। বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ার পর সালিম ভাই নিজেই টোকা দেয় মকসুদের দরজায় - 'য়্যূ নো, আয়ারল্যান্ড ইস অ্যা স্ট্রং টীম'।

সপ্তাহ কয়েক পর শারজায় পাকিস্তান-শ্রী লংকা সিরিজ জমে উঠলে সালিম ভাইয়ের টিভি রুম পুরনো আমেজ ফিরে পায়। শহীদ আফ্রিদির দুই চার আর চার ছক্কা দেখে উল্লাসে আপ্লুত হয় দু'জন। ফ্রিজ থেকে চিকেন বিরিয়ানী বের করে ওভেনে গরম করে সালিম ভাই। আফসানা ভাবী মাস খানেকের জন্য পেশোয়ার গেছে শুনে মকসুদের মন কিছুটা খারাপ হয়ে আসলেও টেবিলে চিভাস রিগ্যালের বোতল ফিরতি ভালোলাগা এনে দেয়। সালিম ভাই আজ খানিকটা বেশী পান করছে। মাঝে মাঝে সোডা পানি ছাড়াই গলায় ঢেলে দিচ্ছে ঢকঢক করে। মকসুদও সমান তালে চলার চেষ্টা করছে। সালিম ভাইয়ের মাঝে তখন প্রবল ইতিহাসবোধ জাগ্রত হয় - 'দোজ অয়্যার বাস্টার্ড পলিটিসিয়ানস... ডিভাইডেড আস। উই ব্রাদার, ব্রাদা-র' - বলতে বলতে সালিম ভাইয়ের গলায় শব্দ আঁটকে যায়। খানিকটা অস্থির মনে হয়। মকসুদ পাশে গিয়ে বসে, এসি-টা কমিয়ে দেয়। সালিম ভাই আবারও বকাবকি করে - 'স্টিল, স্টিল দেয়ার মাইট বি অ্যা কনফেডারেশন। স্টিল উই ক্যান বি ইউনাইটেড'। এই ফাঁকে মকসুদ বাকী বোতল সাবাড় করে দেয়। সোফা ছেড়ে উঠতে পারে না, নেশাটা আজ বড্ড বেশী হয়ে গেছে। চোখের পাতা জোড়া লেগে আসে।

...উপুড় মাথায় যখন বালিশে দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে, তখন মকসুদ টের পায় তার পিঠের উপর ভর করেছে সালিম ভাই। বিশাল পেশীর সাথে লড়াইয়ে হেরে মকসুদ যখন বিধ্বস্ত, সালিম ভাই তখন ডিওরেক্সের প্যাকেট ছিড়ে বলে - 'স্টিল, দেয়ার মাইট বি অ্যা কনফেডারেশন'।

২৮.০৫.২০০৭
_______________________

পলাশ সংক্রান্ত তথ্যসূত্রের জন্য কৃতজ্ঞতা - হাসান মোরশেদ।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই পোস্টের বাকি মন্তব্যগুলা কই?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।